أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
“আমি রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছি এবং তুমি পরম করুণাময়।”
কোন কোন ফকীহ এ রেওয়ায়াতটিকে একমাত্র হযরত আইয়ূবের জন্য নির্ধারিত মনে করেন। আবার কতিপয় ফকীহের মতে অন্য লোকেরাও এ সুবিধাদান থেকে লাভবান হতে পারে। প্রথম অভিমতটি উদ্ধৃত করেছেন ইবনে আসাকির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এবং আবু বকর জাসসাস মুজাহিদ থেকে। ইমাম মালেকেরও অভিমত এটিই। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম যুফার ও ইমাম শাফেঈ দ্বিতীয় অভিমতটি অবলম্বন করেছেন। তাঁরা বলেন, কোন ব্যক্তি যদি তার খাদেমকে দশ ঘা কোড়া মারার কসম খেয়ে বসে এবং পরে দশটি কোড়া মিলিয়ে তাকে এমনভাবে কেবলমাত্র একটি আঘাত করে যার ফলে কোড়াগুলোর প্রত্যেকটির কিছু অংশ তার গায়ে ছুঁড়ে যায় তাহলে তার কসম পুরো হয়ে যাবে।
বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়, নবী ﷺ বেশী রোগগ্রস্ত বা দুর্বল হবার কারণে যে যিনাকারী একশো দোররার আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা রাখতো না তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি প্রয়োগ করার ব্যাপারে এ আয়াতে বিবৃত পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। আল্লামা আবু বকর জাসসাস হযরত সাঈদ ইবনে সা’দ ইবনে উবাদাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, বনী সা ’য়েদে এক ব্যক্তি যিনা করে। সে এমন রুগ্ন ছিল যে, তাকে অস্থি-চর্মসার বলা যেতো। এ কারণে নবী ﷺ হুকুম দিলেনঃ
خذوا عثقالا فيه ماة شمراخ فاضربوه بها ضرية واحدة
“খেজুরের একটি ডাল, নাও, যার একশোটি শাখা রয়েছে এবং তা দিয়ে একবার এ ব্যাক্তিকে আঘাত করো।” (আহকামূল কুরআন)
মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ ইবনে মাজাহ, তাবারানী, আবদুল রাজ্জাক ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থসমূহেও এ সমর্থক কতিপয় হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে একথা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় যে, নবী ﷺ রোগী ও দুর্বলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিলেন। তবে ফকীহগণ এক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করেছেন যে, প্রত্যেকটি শাখা বা পাতার কিছু না কিছু অংশ অপরাধীর গায়ে অবশ্যই লাগা উচিত এবং একটি আঘাতই যথেষ্ট হলেও অপরাধীকে তা যেন কোন না কোন পর্যায়ে আহত করে। অর্থাৎ কেবল স্পর্শ করা যথেষ্ট নয় বরং আঘাত অবশ্যই করতে হবে।
এখানে এ প্রশ্নও দেখা দেয় যে, যদি কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেয়ে বসে এবং পরে জানা যায় যে, সে বিষয়টি অসঙ্গত, তাহলে তার কি করা উচিত। নবী ﷺ প্রত্যেকে এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, এ অবস্থায় মানুষের পক্ষে যা ভালো, তাই করা উচিত এবং এটিই তার কাফফারা। অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে, এ অসঙ্গত কাজের পরিবর্তে মানুষের ভাল কাজ করা এবং নিজের কসমের কাফফারা আদায় করে দেয়া উচিত। এ আয়াতটি এ দ্বিতীয় হাদীসটিকে সমর্থন করে। কারণ একটি অসঙ্গত কাজ না করাই যদি কসমের কাফফরা হতো তাহলে আল্লাহ আইয়ূবকে একথা বলতেন না যে, তুমি একটি ঝাড়ু দিয়ে আঘাত করে নিজের কসম পুরা করে নাও। বরং বলতেন, তুমি এমন অসঙ্গত কাজ করো না এবং এটা না করাই তোমার কসমের কাফফরা। (আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আন নূর, ২০ টীকা)
এ আয়াত থেকে একথাও জানা যায় যে, কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেলে সঙ্গে সঙ্গেই তা পুরা করা অপরিহার্য হয় না। হযরত আইয়ূব রোগগ্রস্ত অবস্থায় কসম খেয়েছিলেন এবং তা পূর্ণ করেন পুরোপুরি সুস্থ হবার পর এবং সুস্থ হবার পরও তাও সঙ্গে সঙ্গেই পুরা করেননি।
কেউ কেউ এ আয়াতকে শরয়ী বাহানাবাজীর সপক্ষে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। সন্দেহ নেই, হযরত আইয়ূবকে যা করতে বলা হয়েছিল তা একটি বাহানা ও ফন্দিই ছিল। কিন্তু তা কোন ফরয থেকে বাঁচার জন্য করতে বলা হয়নি বরং বলা হয়েছিল একটি খারাপ কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কাজেই শরীয়াতে একমাত্র এমন বাহানা ও ফন্দি জায়েয যা মানুষের নিজের সত্তা থেকে অথবা অন্য কোন ব্যক্তি থেকে জুলুম, গোনাহ ও অসৎ প্রবণতা দূর করার জন্য করা হয়ে থাকে। নয়তো হারামকে হালাল বা ফরয বাতিল অথবা সৎকাজ থেকে রেহাই পাবার জন্য বাহানাবাজি করা বা ফন্দি আঁটা গোনাহর উপরি গোনাহ। বরং এর সূত্র গিয়ে কুফরীর সাথে মেলে।
কারণ এসব অপবিত্র উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি বাহানা করে সে যেন অন্য কথায় আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়। যেমন যে ব্যক্তি যাকাত দেয়া থেকে রেহাই পাবার জন্য বছর শেষ হবার আগে নিজের সম্পদ অন্য কারো কাছে স্থানান্তর করে সে নিছক একটি ফরয থেকেই পালায়ন করে না বরং সে একথাও মনে করে যে, আল্লাহ তার এ প্রকাশ্য কাজ দেখে প্রতারিত হবে এবং তাকে ফরযের আওতাভুক্ত মনে করবে না। এ ধরনের ‘হীলা’ বা বাহানার বিষয়সমূহ যেসব ফকীহ তাদের কিতাবের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, শরীয়াতের বিধান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করার জন্য এসব বাহানাবাজীর আশ্রয় নিতে উদ্বুদ্ধ করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয় বরং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি কোন ব্যাক্তি গোনাহকে আইনের রূপ দান করে গা বাঁচিয়ে বের হয়ে আসে, তাহলে কাযী বা শাসক তাকে পাকড়াও করতে পারেন না। তার শাস্তির ভার আল্লাহর হাতে সোপর্দ হয়ে যায়।
حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ
“এমনকি যখন তারা সেখানে পৌঁছবে এবং তার দরোজা আগে থেকেই খোলা থাকবে, তখন জান্নাতের ব্যবস্থাপকরা তাদেরকে বলবে, ‘সালামুন আলাইকুম, শুভ আগমন,’ চিরকালের জন্য এর মধ্যে প্রবেশ করুন।” (আয যুমার, ৭৩)