আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

হা-মীম আস সাজদাহ

৫৪ আয়াত

আয়াত
-
১ ) হা-মীম।
حمٓ ١
২ ) এটা পরম দয়ালু ও মেহেরবান আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত জিনিস।
تَنزِيلٌۭ مِّنَ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٢
৩ ) এটি এমন এক গ্রন্থ যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আরবী ভাষার কুরআন। সেই সব লোকদের জন্য যারা জ্ঞানের অধিকারী,
كِتَـٰبٌۭ فُصِّلَتْ ءَايَـٰتُهُۥ قُرْءَانًا عَرَبِيًّۭا لِّقَوْمٍۢ يَعْلَمُونَ ٣
৪ ) সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী। কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা শুনতেই পায় না।
بَشِيرًۭا وَنَذِيرًۭا فَأَعْرَضَ أَكْثَرُهُمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ ٤
৫ ) তারা বলেঃ তুমি আমাদের যে জিনিসের দিকে আহবান জানাচ্ছো সে জিনিসের ব্যাপারে আমাদের মনের ওপর পর্দা পড়ে আছে, আমাদের কান বধির হয়ে আছে এবং তোমার ও আমাদের মাঝে একটি পর্দা আড়াল করে আছে। তুমি তোমার কাজ করতে থাকো আমরাও আমাদের কাজ করে যাবো।
وَقَالُوا۟ قُلُوبُنَا فِىٓ أَكِنَّةٍۢ مِّمَّا تَدْعُونَآ إِلَيْهِ وَفِىٓ ءَاذَانِنَا وَقْرٌۭ وَمِنۢ بَيْنِنَا وَبَيْنِكَ حِجَابٌۭ فَٱعْمَلْ إِنَّنَا عَـٰمِلُونَ ٥
৬ ) হে নবী, এদের বলে দাও, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমাকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয় যে, একজনই মাত্র তোমাদের ইলাহ কাজেই সোজা তাঁর প্রতি নিবিষ্ট হও এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। মুশরিকদের জন্য ধ্বংস,
قُلْ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٌۭ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰٓ إِلَىَّ أَنَّمَآ إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌۭ وَٰحِدٌۭ فَٱسْتَقِيمُوٓا۟ إِلَيْهِ وَٱسْتَغْفِرُوهُ ۗ وَوَيْلٌۭ لِّلْمُشْرِكِينَ ٦
৭ ) যারা যাকাত দেয় না। এবং আখেরাত অস্বীকার করে।
ٱلَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُم بِٱلْـَٔاخِرَةِ هُمْ كَـٰفِرُونَ ٧
৮ ) যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে, নিশ্চিতভাবে তাদের জন্য এমন পুরস্কার রয়েছে যার ধারাবাহিকতা কখনো ছিন্ন হবে না। ১০
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍۢ ٨
৯ ) হে নবী, এদের বলো, তোমরা কী সেই আল্লাহ‌র সাথে কুফরী করছো এবং অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করছো যিনি দু’দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন? তিনিই বিশ্ব-জাহানের সবার রব।
۞ قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْأَرْضَ فِى يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُۥٓ أَندَادًۭا ۚ ذَٰلِكَ رَبُّ ٱلْعَـٰلَمِينَ ٩
১০ ) তিনি (পৃথিবীকে অস্তিত্ব দানের পর) ওপর থেকে তার ওপর পাহাড় স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দান করেছেন। ১১ আর তার মধ্যে সব প্রার্থীর জন্য প্রত্যেকের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে সঠিক পরিমাপে খাদ্য সরবরাহ করেছেন। ১২ এসব কাজ চার দিনে হয়েছে। ১৩
وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِىَ مِن فَوْقِهَا وَبَـٰرَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَآ أَقْوَٰتَهَا فِىٓ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍۢ سَوَآءًۭ لِّلسَّآئِلِينَ ١٠
১.
এটা এই সূরার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা। পরবর্তী বক্তব্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে এ ভূমিকায় আলোচিত বিষয়বস্তুর পরবর্তী বিষয়বস্তুর সাথে যে সাদৃশ্য আছে তা বুঝা যেতে পারে।

প্রথমে বলা হয়েছে, এ বাণী আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ যতদিন ইচ্ছা তোমরা এ অপপ্রচার চালাতে থাকো যে, মুহাম্মাদ ﷺ নিজে এ সব কথা রচনা করছেন। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, এ বাণী বিশ্ব-জাহানের রবের পক্ষ থেকে এসেছে। তাছাড়া এ কথা বলে শ্রোতাদেরকে এ ব্যাপারে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, এ বাণী শুনে যদি তোমরা অসন্তুষ্ট হও তাহলে তোমাদের সেই অসন্তুষ্টি মুহাম্মাদ ﷺ এর বিরুদ্ধে নয়, আল্লাহ‌র বিরুদ্ধে। যদি তা প্রত্যাখ্যান করো তাহলে কোন মানুষের কথা করছো না, আল্লাহ‌র নিজের কথা প্রত্যাখ্যান করছো। আর যদি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকো তাহলে কোন মানুষ থেকে মুখ ফিরাচ্ছো না বরং খোদ আল্লাহ‌ তায়ালা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো।

দ্বিতীয় যে কথাটি বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, এ বাণী নাযিলকারী মহান আল্লাহ‌ তাঁর সৃষ্টির প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান (রাহমান ও রাহীম)। এ বাণী নাযিলকারী আল্লাহ‌র আর সব গুণাবলীর পরিবর্তে ‘রহমত’ গুণটি এ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে, তিনি তাঁর দয়ার দাবী অনুসারে এ বাণী নাযিল করেছেন। এর দ্বারা শ্রোতাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কেউ যদি এ বাণীর প্রতি রুষ্ট হয় বা একে প্রত্যাখ্যান করে কিংবা ভ্রুকুঞ্চিত করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে নিজের সাথেই শত্রুতা করে। এটা বিরাট এক নিয়ামত যা আল্লাহ‌ মানুষকে পথ প্রদর্শন এবং তার সাফল্য ও সৌভাগ্যের জন্য সরাসরি নাযিল করেছেন। আল্লাহ‌ যদি মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন তাহলে তাদেরকে অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরার জন্য পরিত্যাগ করতেন এবং তারা কোন গর্তে গিয়ে পতিত হবে তার কোন পরোয়াই করতেন না। কিন্তু সৃষ্টি করা ও খাদ্য সরবরাহ করার সাথে সাথে তার জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর জন্য জ্ঞানের আলো দান করাও তিনি তাঁর কর্তব্য বলে মনে করেন এবং সে কারণেই তাঁর এক বান্দার কাছে এ বাণী নাযিল করছেন, এটা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ। সুতরাং যে ব্যক্তি এই রহমত দ্বারা উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অগ্রসর হয় তার চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ এবং নিজেই নিজের দুশমন আর কে হতে পারে?

তৃতীয় কথাটি বলা হয়েছে এই যে, এই কিতাবের আয়াত সমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এর কোন কথাই অস্পষ্ট ও জটিল নয়, যার ফলে এ কিতাবের বিষয়বস্তু কারো বোধগম্য হয় না বলে সে তা গ্রহণ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করতে পারে না। হক ও বাতিল কি, সত্য সঠিক আকীদা-বিশ্বাস ও ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস কি, ভাল ও মন্দ নৈতিক চরিত্র কি, সৎ কাজ ও নেক কাজ কি, কোন পথের অনুসরণে মানুষের কল্যাণ এবং কোন পথ অবলম্বনে তার নিজের ক্ষতি এ গ্রন্থে তা পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে। কেউ যদি এরূপ সুস্পষ্ট ও খোলামেলা হিদায়াত প্রত্যাখ্যান করে কিংবা সে দিকে মনযোগ না দেয় তাহলে সে কোন ওজর ও অক্ষমতা পেশ করতে পারে না। তার এই আচরণের সুস্পষ্ট অর্থ হচ্ছে সে ভুলকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়।

চতুর্থ কথাটি বলা হয়েছে এই যে, এটা আরবী ভাষার কুরআন। অর্থাৎ এ কুরআন যদি অন্য কোন ভাষায় নাযিল হতো তাহলে আরবরা অন্তত এ ওজর পেশ করতে পারতো যে, আল্লাহ‌ যে ভাষায় তাঁর কিতাব নাযিল করেছেন আমরা সে ভাষার সাথেই পরিচিত নই। কিন্তু এ গ্রন্থ তাদের নিজের ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তারা না বুঝার অজুহাত পেশ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। (এখানে সূরার ৪৪ আয়াতটিও সামনে থাকা দরকার। এ আয়াতে এই বিষয়টিই অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনারবদের জন্য কুরআনের দাওয়াত গ্রহণ না করার যে যুক্তিসঙ্গত ওজর বিদ্যমান আমরা ইতিপূর্বে তার জবাব দিয়েছি। দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইউসুফ, টীকা ৫; রাসায়েল ও মাসায়েল, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯ থেকে ২৩)

পঞ্চম কথাটি বলা হয়েছে এই যে, কিতাব তাদের জন্য যারা জ্ঞানের অধিকারী। অর্থাৎ কেবল জ্ঞানী লোকেরাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। অজ্ঞ লোকদের কাছে তা ঠিক তেমনি মূল্যহীন যেমন একটি মূল্যবান হীরক খণ্ড এমন ব্যক্তির কাছে মূল্যহীন যে সাধারণ পাথর ও হীরক খণ্ডের পার্থক্য জানে না।

ষষ্ঠ কথাটি বলা হয়েছে এই যে, এ কিতাব সু-সংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী। অর্থাৎ এটা শুধু এমন নয় যে, শুধু এক কল্পনাচারিতা, একটি দর্শন এবং একটি আদর্শ রচনা শৈলী পেশ করে, যা মানা না মানায় কোন ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। এ গ্রন্থ বরং চিৎকার করে ডেকে ডেকে গোটা দুনিয়াকে সাবধান করে দিচ্ছে যে, একে মেনে চলার ফলাফল অত্যন্ত শুভ ও মহিমাময় এবং না মানার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও ধ্বংসকর। এ ধরনের গ্রন্থকে কেবল কোন নির্বোধই অবলীলাক্রমে উপেক্ষা করতে পারে।

২.
অর্থাৎ আমাদের মন পর্যন্ত তার পৌঁছার কোন পথই খোলা নেই।
৩.
অর্থাৎ এই আন্দোলন আমাদের ও তোমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তা আমাদের ও তোমাদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এটা এমন এক বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা আমাদের ও তোমাদেরকে এক হতে দেয় না।
৪.
এর দু’টি অর্থ। একটি অর্থ হচ্ছে, তোমার সাথে আমাদের এবং আমাদের সাথে তোমার কোন সংঘাত নেই। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তুমি যদি তোমার আন্দোলন থেকে বিরত না হও তাহলে নিজের কাজ করে যেতে থাকো। আমরাও তোমার বিরোধিতা পরিত্যাগ করবো না এবং তোমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আমরা সাধ্যমত সব কিছুই করবো।
৫.
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের মনের ওপরের পর্দা উন্মোচন করা, বধির কানকে শ্রবণ শক্তি দান করার এবং যে পর্দা দিয়ে তোমরা নিজেরা আমার ও তোমাদের মধ্যে আড়াল সৃষ্টি করেছো তা সরিয়ে দেয়ার সাধ্য আমার নেই। আমিতো মানুষ। যে বুঝার জন্য প্রস্তুত আমি কেবল তাকেই বুঝাতে পারি, যে শোনার জন্য প্রস্তুত কেবল তাকেই শোনাতে পারি এবং যে মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত কেবল তার সাথেই মিলতে পারি।
৬.
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের মনের দুয়ারে পর্দা টাঙ্গিয়ে দাও আর কান বধির করে নাও। প্রকৃত সত্য হলো তোমাদের আল্লাহ‌ অনেক নয়, বরং শুধুমাত্র একজনই। আর তোমরা সেই আল্লাহ‌রই বান্দা। এটা আমার চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-ধারণা প্রসূত কোন দর্শন নয় যে, তার সঠিক ও ভ্রান্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা রয়েছে। আমার কাছে অহী পাঠিয়ে এ সত্য তুলে ধরা হয়েছে, যার ভুল-ত্রুটির লেশমাত্র থাকার সম্ভাবনা নেই।
৭.
অর্থাৎ অন্য কাউকে আল্লাহ‌ হিসেবে গ্রহণ করবে না, অন্য কারো দাসত্ব ও পূজা-অর্চনা করবে না, অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকবে না। আর কারো সামনে আনুগত্যের মাথা নত করো না এবং অন্য কারো রীতি ও নিয়ম-কানুনকে অবশ্য অনুসরণীয় বিধান হিসেবে মেনে নিও না।
৮.
আজ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের আল্লাহ‌র সাথে যে বিশ্বাস হীনতার কাজ করে এসেছো এবং আল্লাহ‌কে ভুলে যাওয়ার কারণে শিরক, কুফরী, নাফরমানি ও গোনাহ করে এসেছো তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা।
৯.
এখানে ‘যাকাত’ শব্দের অর্থ কি তা নিয়ে তাফসীরকারদের মধ্যে মতভেদ আছে। ইবনে আব্বাস ও তাঁর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ছাত্র ইকরিমা ও মুজাহিদ বলেনঃ এখানে ‘যাকাত’ অর্থ আত্মার সেই পবিত্রতা যা তাওহীদের আকীদা এবং আল্লাহ‌র আনুগত্য দ্বারা অর্জিত হয়। এই তাফসীর অনুসারে আয়াতের অনুবাদ হবে, যেসব মুশরিক পবিত্রতা অবলম্বন করে না তাদের জন্য ধ্বংস। তাফসীরকারদের আরেকটি গোষ্ঠী যার মধ্যে কাতাদা, সুদ্দী, হাসান বাসারী, দাহহাক, মুকাতিল ও ইবনুস সাইয়েবের মত তাফসীরকারক আছেন তাঁরা এখানে ‘যাকাত’ শব্দটিকে অর্থ-সম্পদের যাকাত অর্থ গ্রহণ করেন। এ ব্যাখ্যা অনুসারে আয়াতের অর্থ হবে, ‘যারা শিরক করে আল্লাহ‌র হক এবং যাকাত না দিয়ে বান্দার হক মারে তাদের জন্য ধ্বংস।’
১০.
মূল আয়াতে أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। এ কথাটির আরো দু’টি অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে, তা হবে এমন পুরস্কার যা কখনো হ্রাস পাবে না। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তা হবে এমন পুরস্কার যা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে না বা সেজন্য খোঁটা দেয়া হবে না, যেমন কোন কৃপণ হিম্মত করে কোন কিছু দিলেও সে দানের কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়।
১১.
পৃথিবীর বরকতসমূহ অর্থ অঢেল ও সীমা সংখ্যাহীন উপকরণ যা কোটি কোটি বছর ধরে ক্রমাগত পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে বেরিছে আসছে এবং শুধু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেই দেখা যায় এমন ক্ষুদ্র কীট থেকে শুরু করে মানুষের উন্নত সভ্যতার দৈনন্দিন চাহিদাসমূহ পূরণ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বরকত হচ্ছে বাতাস ও পানি। কারণ, পানির বদৌলতেই ভূ-পৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবকূল ও মানুষের জীবন সম্ভব হয়েছে।
১২.
মূল আয়াতের বাক্য হচ্ছে وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ এ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ কতিপয় স্বতন্ত্র মতামত পেশ করেছেন। কিছু সংখ্যক মুফাসসিরগণ এর অর্থ বর্ণনা করেছেনঃ “পৃথিবীতে প্রার্থীদের সঠিক হিসাব অনুসারে তাদের সমুদয় রিযিক পুরা চার দিনে রাখা হয়েছে।” অর্থাৎ পুরো চার দিনে রাখা হয়েছে এর কম বা বেশী নয়।

ইবনে আব্বাস (রাঃ), কাতাদা ও সুদ্দী এর অর্থ করেনঃ “পৃথিবীতে তার রিযিকসমূহ চার দিনে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞেসকারীদের জবাব সম্পূর্ণ হয়েছে।” অর্থাৎ কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, এ কাজ কতদিনে সম্পন্ন হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ জবাব হচ্ছে চার দিনে সম্পন্ন হয়েছে। ইবনে যায়েদ এর বর্ণনা করেনঃ “প্রার্থীদের জন্য পৃথিবীতে চার দিনের মধ্যে তাদের রিযিকসমূহ সঠিক পরিমাণে প্রত্যেকের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে রেখেছেন।”

ভাষার ব্যাকরণগত নিয়ম অনুসারে আয়াতের বাক্যাংশে এ তিনটি অর্থই গ্রহণ করার অবকাশ আছে। তবে আমাদের মতে প্রথমোক্ত অর্থ দু’টিতে গুণগত কোন বিষয় নেই। স্থান-কাল অনুসারে বিচার করলে এ কথা এমন কি গুরুত্ব বহন করে যে, কাজটি চার দিনের এক ঘণ্টা কমে বা বেশীতে নয় বরং পূর্ণ চার দিনে সম্পন্ন হয়েছে। আল্লাহ‌র কুদরত, রবুবিয়াত ও হিকমতে কি অপূর্ণতা ছিল যা পূরণ করার জন্য এ ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে? আয়াতের পূর্বের ও পরের বিষয়ের মধ্যে কোথাও এমন কোন ইঙ্গিত নেই যা দ্বারা বুঝা যায় তখন কোন জিজ্ঞেসকারী এ প্রশ্ন করেছিলো যে এসব কাজ কতদিনে সম্পন্ন হয়েছিলো যার জবাব দিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছিলো। এসব কারণে আমরা অনুবাদের মধ্যে তৃতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছি। আমাদের মতে আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে, সৃষ্টির সূচনাকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত প্রকারের যত মাখলুক আল্লাহ‌ সৃষ্টি করবেন তাদের প্রত্যেকের সঠিক চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে খাদ্যের সব সরঞ্জাম হিসাব করে তিনি পৃথিবীর বুকে রেখে দিয়েছেন। স্থলভাগে ও পানিতে অসংখ্য প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে। এদের প্রতিটি শ্রেণীর খাদ্য সংক্রান্ত প্রয়োজন অন্য সব শ্রেণী থেকে ভিন্ন। আল্লাহ‌ বায়ুমণ্ডল, স্থল ও পানিতে অসংখ্য প্রজাতির জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি প্রজাতিরই স্বতন্ত্র ধরনের খাদ্য প্রয়োজন। তাছাড়া এসব প্রজাতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের সৃষ্টি মানুষ। মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন শুধু দেহের লালন ও পরিপুষ্টি সাধনের জন্যই নয়, তার রুচির পরিতৃপ্তির জন্যও নানা রকম খাদ্যের প্রয়োজন। আল্লাহ‌ ছাড়া আর কার পক্ষে জানা সম্ভব ছিল মাটির তৈরী এই গ্রহটির ওপরে জীবনের উৎপত্তি থেকে শুরু করে তার পরিসমাপ্তি পর্যন্ত কোন্‌ কোন্‌ শ্রেণীর সৃষ্টিকুল কত সংখ্যায় কোথায় কোথায় এবং কোন্‌ কোন্‌ সময় অস্তিত্বলাভ করবে এবং তাদের প্রতিপালনের জন্য কোন্‌ প্রকারের খাদ্য কত পরিমাণে দরকার হবে। নিজের সৃষ্টি পরিকল্পনা অনুসারে যেভাবে তিনি খাদ্যের মুখাপেক্ষী এসব মাখলুককে সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেছিলেন অনুরূপভাবে তাদের চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য সরবরাহেরও পূর্ণ ব্যবস্থা করেছেন।

বর্তমান যুগে যেসব লোক মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক চিন্তার ইসলামী সংস্করণ কুরআনী নেজামে রবুবিয়াতের নামে বের করেছেন তারা سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ এর অনুবাদ করেন “সমস্ত প্রার্থীর জন্য সমান” আর এর ওপর যুক্তি প্রমাণের প্রাসাদ নির্মাণ করেন এই বলে যে, আল্লাহ‌ পৃথিবীতে সব মানুষের জন্য সমপরিমাণে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। কাজেই আয়াতের উদ্দেশ্য পূরণার্থে এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজন যা সবাইকে খাদ্যের সমান রেশন সরবরাহ করবে। কারণ, এই কুরআন যে সাম্য দাবী করে ব্যক্তি মালিকানা ব্যবস্থায় তা কায়েম হতে পারে না। কিন্তু কুরআনের দ্বারা নিজেদের মতবাদসমূহের খেদমত করানোর অতি আগ্রহে তারা এ কথা ভুলে যান যে سائِلِينَ বা প্রার্থী বলে এ আয়াতে যাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে শুধু মানুষ নয় বিভিন্ন শ্রেণীর অন্যান্য সৃষ্টিও রয়েছে, জীবন ধারণের জন্য যাদের খাদ্যের প্রয়োজন। আল্লাহ‌ কি প্রকৃতই এসব সৃষ্টির মধ্যে কিংবা তাদের এক একটি শ্রেণীর সবার মধ্যে জীবনোপকরণের ক্ষেত্রে সাম্যের ব্যবস্থা রেখেছেন। প্রকৃতির গোটা ব্যবস্থাপনায় কোথাও কি আপনি সমানভাবে খাদ্য বন্টনের ব্যবস্থা দেখতে পান? প্রকৃত ব্যাপার যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে তার অর্থ হচ্ছে, উদ্ভিদ এবং জীবজগতের মধ্যে, যেখানে মানুষের পরিচালিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা নেই, বরং আল্লাহ‌র রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা সরাসরি রিযিক বন্টনের ব্যবস্থা করেছে সেখানে আল্লাহ‌ নিজেই এই “কুরআনী বিধান” লংঘন করেছেন--- এমনকি (নাউযুবিল্লাহ) বে-ইনসাফী করেছেন? তারা এ কথাও ভুলে যায়, মানুষ যে সব জীবজন্তু পালন করে এবং যাদের খাদ্য যোগানোর দায়িত্ব মানুষেরই তারাও سائِلِينَ এর অন্তর্ভূক্ত। যেমনঃ ভেড়া, বকরী, গরু, মোষ, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর ও উট প্রভৃতি। সব প্রার্থীকে সমান খাদ্য দিতে হবে এটাই যদি কুরআনী বিধান হয় এবং এ বিধান চালু করার জন্য “নেজামে রবুবিয়াত” পরিচালনাকারী একটি রাষ্ট্রের প্রয়োজন থাকে তাহলে সেই রাষ্ট্র কি মানুষ এবং এসব জীবজন্তুর মধ্যেও আর্থিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত করবে?

১৩.
এ স্থানের ব্যাখ্যায় সাধারণভাবে মুফাস্‌সিরদেরকে একটি জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। জটিলতাটি হচ্ছে, যদি পৃথিবী সৃষ্টির দুই দিন এবং সেখানে পাহাড় স্থাপন, বরকত দান এবং খাদ্যোপকরণ সৃষ্টির জন্য চার দিন ধরা হয় সেক্ষেত্রে পরে আসমান সৃষ্টির জন্য যে দুই দিনের কথা বলা হয়েছে সেই দুই দিনসহ মোট আট দিন হয়। কিন্তু আল্লাহ‌ কুরআন মজীদের বেশ কিছু জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, পৃথিবী ও আসমান সর্বমোট ছয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে (উদাহরণস্বরূপ দেখুন, তাফহীমুল কুরআন--- সূরা আল আরাফ ৫৪, সূরা ইউনুস ৩, সূরা হুদ ৭ এবং সূরা আল ফুরকান ৫৯ আয়াতসমূহ।)

এ কারণে প্রায় সমস্ত মুফাস্‌সিরই বলেনঃ এই চার দিন পৃথিবী সৃষ্টির দু’দিন সহ। অর্থাৎ পৃথিবী সৃষ্টির দু’দিন এবং উপরে যেসব জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে পৃথিবীতে সেসব জিনিস সৃষ্টির জন্য আরো দু’দিন। এভাবে মোট চার দিনে পৃথিবী তার সব রকম উপায়-উপকরণসহ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কিন্তু একদিকে এটা কুরআন মজীদের বাহ্যিক বক্তব্যের পরিপন্থী আর মূলত যে জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই ব্যাখ্যার প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে তা একান্তই কাল্পনিক। যে দু'দিনে সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করা হয়েছে মূলত পৃথিবী সৃষ্টির দু’দিন তা থেকে ভিন্ন নয়। পরবর্তী আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করুন দেখতে পাবেন সেখানে একসাথে পৃথিবী ও আসমান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, আল্লাহ‌ দু’দিনে সাত আসমান নির্মাণ করেছেন। এই সাত আসমান বলে বুঝানো হয়েছে গোটা বিশ্ব-জাহান, আমাদের এই পৃথিবীও যার একটা অংশ। তারপর যখন বিশ্ব-জাহানের অন্যান্য অসংখ্য তারকা ও গ্রহের মত এই পৃথিবীও উক্ত দু’দিনে একটি গ্রহের আকৃতি ধারণ করলো। তখন আল্লাহ‌ সেটিকে জীবকুলের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করলেন এবং চার দিনের মধ্যে সেখানে সেই সব উপকরণ সৃষ্টি করলেন পূর্বোক্ত আয়াতে যার উল্লেখ করা হয়েছে। এ চার দিনে অন্যান্য তারকা ও গ্রহের কি উন্নয়ন সাধন হয়েছে আল্লাহ‌ এখানে তা উল্লেখ করেননি। কারণ যে যুগে কুরআন নাযিল হয়েছিলো সেই যুগের মানুষ তো দূরের কথা এ যুগের মানুষও সে সব তথ্য হজম করার সামর্থ্য রাখে না।

অনুবাদ: