আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

ফাতের

৪৫ আয়াত

আয়াত
-
১ ) প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর নির্মাতা এবং ফেরেশতাদেরকে বাণীবাহক নিয়োগকারী (এমন সব ফেরেশতা) যাদের দুই দুই তিন তিন ও চার চারটি ডানা আছে। নিজের সৃষ্টির কাঠামোয় তিনি যেমনটি চান বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ‌ সব জিনিসের ওপর শক্তিমান।
ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ جَاعِلِ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ رُسُلًا أُو۟لِىٓ أَجْنِحَةٍۢ مَّثْنَىٰ وَثُلَـٰثَ وَرُبَـٰعَ ۚ يَزِيدُ فِى ٱلْخَلْقِ مَا يَشَآءُ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ١
২ ) আল্লাহ যে রহমতের দরজা মানুষের জন্য খুলে দেন তা রুদ্ধ করার কেউ নেই এবং যা তিনি রুদ্ধ করে দেন তা আল্লাহর পরে আর কেউ খোলার নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী।
مَّا يَفْتَحِ ٱللَّهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحْمَةٍۢ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۖ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُۥ مِنۢ بَعْدِهِۦ ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ٢
৩ ) হে লোকেরা! তোমাদের প্রতি আল্লাহর যেসব অনুগ্রহ রয়েছে সেগুলো স্মরণ করো। আল্লাহ ছাড়া কি আর কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা কোথা থেকে প্রতারিত হচ্ছো?
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ هَلْ مِنْ خَـٰلِقٍ غَيْرُ ٱللَّهِ يَرْزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ ۚ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ ٣
৪ ) এখন যদি (হে নবী!) এরা তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে থাকে (তাহলে এটা কোন নতুন কথা নয়) তোমার পূর্বেও বহু রসূলের প্রতি মিথ্যা আরোপিত হয়েছে এবং সমস্ত বিষয় শেষ পর্যন্ত আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
وَإِن يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌۭ مِّن قَبْلِكَ ۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ ٤
৫ ) হে লোকেরা! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতভাবেই সত্য, ১০ কাজেই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে ১১ এবং সেই বড় প্রতারক যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকা দিতে না পারে। ১২
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّۭ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا ۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلْغَرُورُ ٥
৬ ) আসলে শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তোমরাও তাকে নিজেদের শত্রুই মনে করো। সে তো নিজের অনুসারীদেরকে নিজের পথে এজন্য ডাকছে যাতে তারা দোজখীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ لَكُمْ عَدُوٌّۭ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُوا۟ حِزْبَهُۥ لِيَكُونُوا۟ مِنْ أَصْحَـٰبِ ٱلسَّعِيرِ ٦
৭ ) যারা কুফরী করবে ১৩ তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি আর যারা ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও বড় পুরস্কার। ১৪
ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَهُمْ عَذَابٌۭ شَدِيدٌۭ ۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَهُم مَّغْفِرَةٌۭ وَأَجْرٌۭ كَبِيرٌ ٧
৮ ) (এমন ১৫ ব্যক্তির বিভ্রান্তির কোন শেষ আছে কি) যার জন্য তার খারাপ কাজকে শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং সে তাকে ভালো মনে করছে? ১৬ আসলে আল্লাহ‌ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্তিতে লিপ্ত করেন এবং যাকে চান সঠিক পথ দেখিয়ে দেন। কাজেই (হে নবী!) অযথা ওদের জন্য দুঃখে ও শোকে তুমি প্রাণপাত করো না। ১৭ ওরা যা কিছু করছে আল্লাহ‌ তা ভালোভাবে জানেন। ১৮
أَفَمَن زُيِّنَ لَهُۥ سُوٓءُ عَمَلِهِۦ فَرَءَاهُ حَسَنًۭا ۖ فَإِنَّ ٱللَّهَ يُضِلُّ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِى مَن يَشَآءُ ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَٰتٍ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ ٨
৯ ) আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন তারপর তা মেঘমালা উঠায় এরপর আমি তাকে নিয়ে যাই একটি জনমানবহীন এলাকার দিকে এবং মৃত পতিত যমীনকে সঞ্জীবিত করে তুলি। মৃত মানুষদের বেঁচে ওঠাও তেমনি ধরনের হবে। ১৯
وَٱللَّهُ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ ٱلرِّيَـٰحَ فَتُثِيرُ سَحَابًۭا فَسُقْنَـٰهُ إِلَىٰ بَلَدٍۢ مَّيِّتٍۢ فَأَحْيَيْنَا بِهِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ كَذَٰلِكَ ٱلنُّشُورُ ٩
১০ ) যে সম্মান চায় তার জানা উচিত সমস্ত সম্মান একমাত্র আল্লাহরই। ২০ তাঁর কাছে শুধুমাত্র পবিত্র কথাই ওপরের দিকে আরোহণ করে এবং সৎকাজ তাকে ওপরে ওঠায়। ২১ আর যারা অনর্থক চালবাজী করে ২২ তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি এবং তাদের চালবাজী নিজেই ধ্বংস হবে।
مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلْعِزَّةَ فَلِلَّهِ ٱلْعِزَّةُ جَمِيعًا ۚ إِلَيْهِ يَصْعَدُ ٱلْكَلِمُ ٱلطَّيِّبُ وَٱلْعَمَلُ ٱلصَّـٰلِحُ يَرْفَعُهُۥ ۚ وَٱلَّذِينَ يَمْكُرُونَ ٱلسَّيِّـَٔاتِ لَهُمْ عَذَابٌۭ شَدِيدٌۭ ۖ وَمَكْرُ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُوَ يَبُورُ ١٠
১.
এর অর্থ এও হতে পারে যে, ফেরেশতারা মহান আল্লাহ‌ ও আম্বিয়া (আ) এর মধ্যে বার্তা পৌঁছাবার কাজ করেন আবার এ অর্থও হতে পারে যে, সমগ্র বিশ্ব-জাহানে মহাশক্তির অধিকারী আল্লাহর বিধান নিয়ে যাওয়া এবং সেগুলো প্রবর্তন করা এ ফেরেশতাদেরই কাজ। একথা উল্লেখ করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, এ ফেরেশতাদেরকে মুশরিকরা দেব-দেবীতে পরিণত করেছিল অথচ এদের মর্যাদা এক ও লা-শরীক আল্লাহর একান্ত অনুগত খাদেমের চেয়ে মোটেই বেশী কিছু নয়। একজন বাদশাহর খাদেমরা যেমন তাঁর হুকুম তামিল করার জন্য দৌড়াদৌড়ি করে থাকে ঠিক তেমনি এ ফেরেশতারাও বিশ্ব-জাহানের প্রকৃত শাসনকর্তার হুকুম পালন করার জন্যও উড়ে চলতে থাকেন। এ খাদেমদের কোন ক্ষমতা নেই। সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে আসল শাসনকর্তার হাতে।
২.
এ ফেরেশতাদের হাত ও ডানার অবস্থা ও ধরন জানার কোন মাধ্যম আমাদের কাছে নেই। কিন্তু এ অবস্থা ও ধরন বর্ণনা করার জন্য আল্লাহ‌ যখন এমন শব্দ ব্যবহার করেছেন যা মানুষের ভাষায় পাখিদের হাত ও ডানার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তখন অবশ্যই আমাদের ভাষার এ শব্দকেই আসল অবস্থা ও ধরন বর্ণনার নিকটতর বলে ধারণা করা যেতে পারে। দুই দুই, তিন তিন ও চার চার ডানার কথা বলা থেকে বুঝা যায় যে, বিভিন্ন ফেরেশতাকে আল্লাহ‌ বিভিন্ন পর্যায়ের শক্তি দান করেছেন এবং যাকে দিয়ে যেমন কাজ করাতে চান তাকে ঠিক তেমনই দ্রুতগতি ও কর্মশক্তি দান করেছেন।
৩.
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ফেরেশতাদের ডানার সংখ্যা চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং কোন কোন ফেরেশতাকে আল্লাহ‌ এর চেয়েও বেশী ডানা দিয়েছেন। হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) বর্ণনায় বলা হয়েছে নবী করীম ﷺ একবার জিব্রীল (আ) কে এমন অবস্থায় দেখেন যখন তাঁর ডানার সংখ্যা ছিল ছ’শো। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী) হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করীম ﷺ দু’বার জিব্রীলকে তাঁর আসল চেহারায় দেখেন। তখন তাঁর ছ’শো ডানা ছিল এবং তিনি সারা আকাশে ছেয়ে ছিলেন। (তিরমিযী)
৪.
মুশরিকরা যে মনে করে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেউ তাদের রিযিকদাতা, কেউ সন্তানদাতা এবং কেউ রোগ নিরাময়কারী, তাদের এ ভুল ধারণা দূর করাও এর উদ্দেশ্য। শিরকের এ সমস্ত ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন এবং নির্ভেজাল সত্য শুধুমাত্র এতটুকু যে, বান্দাদের কাছে যে ধরনের রহমতই আসে নিছক মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ‌র অনুগ্রহেই আসে। অন্য কারো এ রহমত দান করার ক্ষমতাও নেই এবং একে রোধ করার শক্তিও কারো নেই। এ বিষয়টি কুরআন মজীদ ও হাদীসের বহু স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এভাবে মানুষ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াবার এবং সবার কাছে হাত পাতার গ্লানি থেকে রেহাই পাবে। এই সঙ্গে সে এ বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝে নেবে যে, তার ভাগ্য ভাংগা গড়া এক আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ারে নেই।
৫.
পরাক্রমশালী অর্থাৎ সবার ওপর প্রাধান্য বিস্তারকারী ও পূর্ণ সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী। তাঁর সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করার পথে কেউ বাঁধা দিতে পারে না। আবার এই সঙ্গে তিনি জ্ঞানীও। যে ফায়সালাই তিনি করেন পুরোপুরি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতেই করেন। কাউকে দিলে সেটিই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দাবী বলেই দেন এবং কাউকে না দিলে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দাবী বলেই দেন না।
৬.
অর্থাৎ অকৃতজ্ঞ ও নিমকহারাম হয়ো না। তোমরা যা কিছু লাভ করেছো তা আল্লাহরই দেয়া, এ সত্যটি ভুলে যেয়ো না। অন্য কথায় এ বাক্যটি এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছে যে, যে ব্যক্তিই আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও পূজা-উপাসনা করে অথবা কোন নিয়ামতকে আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কোন সত্তার দান মনে করে কিংবা কোন নিয়ামত লাভ করার জন্য আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অথবা কোন নিয়ামত চাওয়ার জন্য আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে দোয়া করে সে বড়ই অকৃতজ্ঞ।
৭.
প্রথম বাক্যাংশ ও দ্বিতীয় বাক্যাংশের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ফাঁক রয়েছে। কথার স্থান ও কাল নিজেই এ ফাঁক ভরে দিচ্ছে। একথা অনুবাধন করার জন্য কল্পনার চোখের সামনে একটি চিত্র মেলে ধরুন। অর্থাৎ মুশরিকদের সামনে বক্তৃতা চলছে। বক্তা শ্রোতাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ‌ ছাড়া কি আর কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছে এবং পৃথিবী ও আকাশ থেকে তোমাদের জীবিকা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে? এ প্রশ্ন করে বক্তা কয়েক মুহূর্ত জবাবের অপেক্ষা করেন। কিন্তু দেখেন সমাবেশের সমগ্র জনতা নিরব। কেউ বলে না, আল্লাহ‌ ছাড়া আর কেউ জীবিকা দানকারী ও স্রষ্টাও আছে। এ থেকে আপনা আপনিই এ ফল প্রকাশিত হয় যে, আল্লাহ‌ ছাড়া আর কোন স্রষ্টা ও রিযিকদাতা নেই, শ্রোতাগণও একথা পুরোপুরি স্বীকার করে। এরপরই বক্তা বলেন, তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ মাবুদও হতে পারে না। তোমরা কেমন করে এ প্রতারণার শিকার হলে যে, স্রষ্টা ও রিযিকদাতা হবেন তো একমাত্র আল্লাহ‌ কিন্তু মাবুদ হবেন তিনি ছাড়া অন্য কেউ?
৮.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ ছাড়া আর কেউ ইবাদাত লাভের অধিকারী নেই, তোমার একথা মানে না এবং তুমি নবুওয়াতের মিথ্যা দাবী করছো, এ অভিযোগ তোমার বিরুদ্ধে আনে।
৯.
অর্থাৎ ফায়সালা লোকদের হাতে নেই। তারা যাকে মিথ্যুক বলবে সে যথার্থই মিথ্যাবাদী হয়ে যাবে না। ফায়সালা তো রয়েছে আল্লাহরই হাতে। মিথ্যুক কে ছিল তা তিনি শেষ পর্যন্ত জানিয়ে দেবেন এবং প্রকৃতই যে মিথ্যুক তার পরিণতিও দেখিয়ে দেবেন।
১০.
প্রতিশ্রুতি বলতে আখেরাতের প্রতিশ্রুতি বুঝানো হয়েছে যেদিকে ওপরের এ বাক্য ইঙ্গিত করে বলা হয়েছিল যে, সমস্ত বিষয় শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সামনে উপস্থাপিত হবে।
১১.
অর্থাৎ এ দুনিয়াই সবকিছু এবং এরপর আর কোন আখেরাত নেই যেখানে কৃতকর্মের হিসেব নেয়া হবে, এ প্রতারণা জালে আবদ্ধ না করে। অথবা এভাবে প্রতারিত না করে যে, যদি কোন আখেরাত থেকেও থাকে, তাহলে যে ব্যক্তি এ দুনিয়ায় আরাম আয়েশে জীবন যাপন করেছে সে সেখানেও আরাম আয়েশ করবে।
১২.
“বড় প্রতারক” এখানে হচ্ছে শয়তান যেমন সামনের বাক্য বলছে। আর “আল্লাহর ব্যাপারে” ধোঁকা দেয়ার মানে হচ্ছে, শয়তান লোকদেরকে একথা বুঝায় যে, আসলে আল্লাহ‌ বলে কিছুই নেই এবং কিছু লোককে এ বিভ্রান্তির শিকার করে যে, আল্লাহ‌ একবার দুনিয়াটা চালিয়ে দিয়ে তারপর বসে আরাম করছেন, এখন তাঁর সৃষ্ট এ বিশ্ব-জাহানের সাথে কার্যত তাঁর কোন সম্পর্ক নেই। আবার কিছু লোককে সে এভাবে ধোঁকা দেয় যে আল্লাহ‌ অবশ্যই এ বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনা করে যাচ্ছেন কিন্তু তিনি মানুষকে পথ দেখাবার কোন দায়িত্ব নেননি। কাজেই এ অহী ও রিসালাত নিছক একটি ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়। সে কিছু লোককে এ মিথ্যা আশ্বাসও দিয়ে চলছে যে, আল্লাহ‌ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান, তোমরা যতই গোনাহ কর না কেন তিনি সব মাফ করে দেবেন এবং তাঁর এমন কিছু পিয়ারা বান্দা আছে যাদেরকে আঁকড়ে ধরলেই তোমরা কামিয়াব হয়ে যাবে।
১৩.
অর্থাৎ আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রসূলের এ দাওয়াত মেনে নিতে অস্বীকার করবে।
১৪.
অর্থাৎ তাদের ভুল-ভ্রান্তি ও অপরাধ মাফ করে দেবেন এবং তারা যেসব সৎকাজ করবে সেগুলোর কেবল সমান সমান প্রতিদান দেবেন না বরং বড় ও বিপুল প্রতিদান দেবেন।
১৫.
ওপরের দু’টি প্যারাগ্রাফ সাধারণ জনগণকে সম্বোধন করে বলা হয়েছিল। এখন এ প্যারাগ্রাফে যেসব বিভ্রান্তির নায়করা নবী করীম ﷺ এর দাওয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল তাদের কথা বলা হচ্ছে।
১৬.
অর্থাৎ এমন এক ধরনের বিভ্রান্ত ও দুস্কৃতকারী লোক আছে যে খারাপ কাজ করে ঠিকই কিন্তু সে জানে এবং স্বীকার করে যে সে যা কিছু করছে খারাপই করছে। এ ধরনের লোককে বুঝালেও ঠিক হয়ে যেতে পারে এবং কখনো নিজের বিবেকের তাড়নায়ও সে সঠিক পথে চলে আসতে পারে। কারণ তার শুধুমাত্র অভ্যাসই বিগড়েছে, মন-মানসিকতা বিগড়ে যায়নি। কিন্তু আর এক ধরনের দুস্কৃতকারী আছে, যার মন-মানসিকতাই বিগড়ে গেছে। তার ভালো-মন্দের পার্থক্যবোধই খতম হয়ে গেছে। গোনাহের জীবন তার কাছে প্রিয় ও গৌরবময়। সৎকাজকে সে ঘৃনা করে এবং অসৎকাজকে যথার্থ সভ্যতা ও সংস্কৃতি মনে করে। সৎবৃত্তি ও তাকওয়াকে সে প্রাচীনত্ব এবং আল্লাহর হুকুম অমান্য করা ও অশ্লীল কাজ করাকে প্রগতিশীলতা মনে করে। তার দৃষ্টিতে হিদায়াত গোমরাহীতে এবং গোমরাহ হিদায়াতে পরিণত হয়। এ ধরনের লোকের ওপর কোন উপদেশ কার্যকর হয় না। সে নিজের নির্বুদ্ধিতার ওপর নিজেই সতর্ক হয় না এবং কেউ তাকে বোঝালেও বোঝে না। এ ধরনের লোকের পেছনে লেগে থাকা অর্থহীন। তাকে সৎপথে আনার চিন্তায় প্রাণপাত না করে সত্যের আহবায়ককে এমন সব লোকের প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন যাদের বিবেক এখনো বেঁচে আছে এবং যারা সত্যের আহবানের জন্য নিজেদের মনের দুয়ার বন্ধ করে দেয়নি।
১৭.
আগের বাক্য এবং এ বাক্যের মাঝখানে “আল্লাহ‌ যাকে চান গোমরাহীতে লিপ্ত করেন এবং যাকে চান সঠিক পথ দেখান”--একথা বলা পরিষ্কারভাবে এ অর্থই প্রকাশ করছে যে, যারা এতদূর মানবিক বিকৃতির শিকার হয় আল্লাহ‌ তাদেরকে হিদায়াতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন এবং পথহারা হয়ে এমন সব পথে ঘুরে বেড়াবার জন্য তাদেরকে ছেড়ে দেন যেসব ভুল পথে ঘুরে বেড়ানোর জন্য তারা নিজেরাই জিদ ধরে। এ সত্যটি বুঝিয়ে দেবার পর মহান আল্লাহ‌ নবী করীম ﷺ কে বলেন এ ধরনের লোকদেরকে সঠিক পথে আনার সামর্থ্য তোমার নেই কাজেই তাদের ব্যাপারে সবর করো এবং আল্লাহ‌ যেমন তাদের পরোয়া করছেন না তেমনি তোমরাও তাদের অবস্থা দেখে দুঃখিত ও শোকাভিভূত হয়ো না।

এক্ষেত্রে দু’টি কথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এক, এখানে যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা সাধারণ লোক ছিল না। তারা ছিল মক্কা মু’আযযমার সরদার। তারা নবী করীম ﷺ এর দাওয়াতকে ব্যর্থ করে দেবার জন্য সব রকমের মিথ্যা প্রতারণা ও ফন্দি-ফিকিরের আশ্রয় নিয়ে চলছিল। তারা আসলে নবী করীম ﷺ সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা করতো না। তিনি কিসের দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন এবং তাঁর মোকাবিলায় তারা নিজেরা কোন ধরনের মূর্খতা ও নৈতিক দুষ্কৃতির প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রয়েছে তা তারা ভালোভাবে জানতো। এসব কিছু জানার ও বুঝার পর ঠাণ্ডা মাথায় তাদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ এর কথা চলতে দেয়া যাবে না। এ উদ্দেশ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অস্ত্র এবং সবচেয়ে হীন হাতিয়ার ব্যবহার করতে তারা একটুও কুন্ঠিত ছিল না। এখন একথা সুস্পষ্ট, যারা জেনে বুঝে এবং নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে প্রতিদিন একটি নতুন মিথ্যা রচনা করে এবং কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তা ছড়িয়ে বেড়ায় তারা সারা দুনিয়ার মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে কিন্তু নিজেকে তো তারা মিথ্যুক বলে জানে এবং তাদের নিজেদের কাছে একথা গোপন থাকে না যে, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারাএকটি অপবাদ দিয়েছে সে তা থেকে মুক্ত। তারপর যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ মিথ্যা হাতিয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে সে যদি এর জবাবে কখনো সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে সরে গিয়ে কোন কথা না বলে তাহলে এ জালেমদের কাছেও একথা কখনো গোপন থাকতে পারে না যে, তাদের মোকাবিলায় যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি একজন সত্যবাদী ও নিখাদ পুরুষ। এরপরও নিজেদের কৃতকর্মের জন্য যারা এতটুকু লজ্জিত হয় না এবং অনবরত মিথ্যার মাধ্যমে সত্যের মোকাবিলা করে যেতে থাকে, তাদের এ নীতি নিজেই একথার সাক্ষ্য বহন করে যে, আল্লাহ‌র লানত তাদের ওপর পড়েছে এবং ভালোমন্দের কোন পার্থক্য বোধ তাদের মধ্যে নেই।

দ্বিতীয় যে কথাটি এ প্রসঙ্গে বুঝে নিতে হবে সেটি হচ্ছে এই যে, নিছক স্বীয় রসূল পাককে কাফেরদের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করানোই যদি আল্লাহর লক্ষ্য হতো, তাহলে তিনি গোপনে কেবলমাত্র তাঁকেই একথা বুঝাতে পারতেন। এ উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে সুস্পষ্ট অহীর মাধ্যমে তার উল্লেখের প্রয়োজন ছিল না। কুরআন মজীদে একথা বর্ণনা করবার এবং সারা দুনিয়ার মানুষকে তা শুনিয়ে দেবার উদ্দেশ্যই ছিল আসলে সাধারণ মানুষকে এই মর্মে সতর্ক করে দেয়া যে, যেসব নেতার পেছনে তোমরা চোখ বন্ধ করে ছুটে চলছো তারা কতখানি বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন লোক এবং তাদের বেহুদা কাজকর্ম কেমন চিৎকার করে করে বলছে যে, তাদের ওপর আল্লাহর লানত পড়েছে।

১৮.
আলোচ্য বাক্যটির মধ্যে এ স্বতস্ফূর্ত হুমকি প্রচ্ছন্ন রয়েছে যে, এমন একটি সময় আসবে যখন আল্লাহ‌ তাদেরকে এসব কৃতকর্মের শাস্তি দেবেন। কোন শাসক যখন কোন অপরাধী সম্পর্কে বলেন, তার কাজ কর্মের আমি সব খবর রাখি তখন তার অর্থ কেবল এতটুকুই হয় না যে, শাসক তার কাজকর্ম সব জানেন বরং তার মধ্যে এ সতর্কবাণীও নিহিত থাকে যে, আমি তাকে শাস্তি দেবোই।
১৯.
অর্থাৎ এ মূর্খের দল আখেরাতকে অসম্ভব মনে করছে। তাই তারা নিজস্বভাবে এ চিন্তায় নিমগ্ন হয়েছে যে, দুনিয়ায় তারা যাই কিছু করতে থাকুক না কেন, তাদের জবাবদিহি করার জন্য আল্লাহর সামনে হাজির হবার সময়টি কখনো আসবে না। কিন্তু তারা যার মধ্যে নিমগ্ন আছে সেটি নিছক একটি খামখেয়ালি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিয়ামতের দিন সামনের পেছনের সমস্ত মরা মানুষ মহান আল্লাহ‌র একটিমাত্র ইশারায় সহসা ঠিক তেমনিভাবে জীবিত হয়ে উঠবে যেমন একবার বৃষ্টি হবার পর শুকনো জমি অকস্মাৎ সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে এবং দীর্ঘকালের মৃত শিকড়গুলো সবুজ চারাগাছে রূপান্তরিত হয়ে মাটির বুক থেকে মাথা উঁচু করতে থাকে।
২০.
মনে রাখতে হবে, কুরাইশ সরদাররা নবী করীম ﷺ কে মোকাবিলায় যা কিছু করছিল সবই ছিল তাদের নিজেদের ইজ্জত ও মর্যাদার খাতিরে। তাদের ধারণা ছিল, যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর কথা গৃহীত হয়ে যায় তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব তামাম আরব মুল্লুকে আমাদের যে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত আছে তা মাটিতে মিশে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও কুফরী করে তোমরা নিজেদের যে মর্যাদা তৈরি করে রেখেছো এ তো একটি মিথ্যা ও ঠুনকো মর্যাদা। মাটিতে মিশে যাওয়াই এর ভাগ্যের লিখন। আসল ও চিরস্থায়ী মর্যাদা, দুনিয়া থেকে নিয়ে আখেরাত পর্যন্ত যা কখনো হীনতা ও লাঞ্ছনার শিকার হতে পারে না, তা বেবলমাত্র আল্লাহর বন্দেগীর মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। তুমি যদি তাঁর হয়ে যাও, তাহলে তাঁকে পেয়ে যাবে এবং যদি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরয়ে নাও, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।
২১.
এ হচ্ছে মর্যাদা লাভ করার আসল উপায়। আল্লাহর কাছে মিথ্যা, কলুষিত ও ক্ষতিকারক কথা কখনো উচ্চ মর্যাদা লাভ করে না। তাঁর কাছে একমাত্র এমন কথা উচ্চ মর্যাদা লাভ করে যা হয় সত্য, পবিত্র-পরিচ্ছন্ন, বাস্তব ভিত্তিক, যার মধ্যে সদিচ্ছা সহকারে একটি ন্যয়নিষ্ঠ আকিদা-বিশ্বাস ও একটি সঠিক চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে। তারপর একটি পবিত্র কথাকে যে জিনিসটি উচ্চ মর্যাদার দিকে নিয়ে যায় সেটি হচ্ছে কথা অনুযায়ী কাজ। যেখানে কথা খুবই পবিত্র কিন্তু কাজ তার বিপরীত সেখানে কথার পবিত্রতা নিস্তেজ ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র মুখে কথার খই ফুটালে কোন কথা উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হয় না বরং এজন্য সৎকাজের শক্তিমত্তার প্রয়োজন হয়।

এখানে একথাও অনুধাবন করতে হবে যে, কুরআন মজীদ ভালো কথা ও ভালো কাজকে পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য বিষয় হিসেবে পেশ করে। কোন কাজ নিছক ভালো হতে পারে না যতক্ষন না তার পেছনে থাকে ভালো আকীদা-বিশ্বাস। আর কোন ভালো আকীদা-বিশ্বাস এমন অবস্থায় মোটেই নির্ভরযোগ্য হতে পারে না যতক্ষন না মানুষের কাজ তার প্রতি সমর্থন যোগায় এবং তার সত্যতা প্রমাণ করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে বলতে থাকে, আমি এক ও লা-শরীক আল্লাহকে মাবুদ বলে মানি কিন্তু কার্যত সে গাইরুল্লাহর ইবাদাত করে, তাহলে এ কাজ তার কথাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে মদ হারাম বলতে থাকে এবং কার্যত মদ পান করে চলে, তাহলে শুধুমাত্র তার কথা মানুষের দৃষ্টিতেও গৃহীত হতে পারে না, আর আল্লাহর কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

২২.
অর্থাৎ বাতিল ও ক্ষতিকর কথা নিয়ে এগিয়ে আসে তারপর শঠতা, প্রতারণা ও মনোমুদ্ধকর যুক্তির মাধ্যমে তাকে সামনের দিকে এগিয়ে দেবার চেষ্টা করে এবং তার মোকাবেলায় সত্য ও হক কথাকে ব্যর্থ করার জন্য সবচেয়ে খারাপ ব্যবস্থা আবলম্বন করতেও পিছপা হয় না।
অনুবাদ: