আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

ক্বাফ

৪৫ আয়াত

আয়াত
-
১ ) ক্বাফ, মহিমান্বিত কল্যাণময় কুরআনের শপথ।
قٓ ۚ وَٱلْقُرْءَانِ ٱلْمَجِيدِ ١
২ ) তারা বরং বিস্মিত হয়েছে এজন্য যে, তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারী এসেছে। এরপর অস্বীকারকারীরা বলতে শুরু করলো এটা তো বড় আশ্চর্যজনক কথা,
بَلْ عَجِبُوٓا۟ أَن جَآءَهُم مُّنذِرٌۭ مِّنْهُمْ فَقَالَ ٱلْكَـٰفِرُونَ هَـٰذَا شَىْءٌ عَجِيبٌ ٢
৩ ) আমরা যখন মরে যাব এবং মাটিতে মিশে যাব (তখন কি আমাদের উঠানো হবে)? এ প্রত্যাবর্তন তো যুক্তি-বুদ্ধি বিরোধী।
أَءِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًۭا ۖ ذَٰلِكَ رَجْعٌۢ بَعِيدٌۭ ٣
৪ ) অথচ মাটি তার দেহের যা কিছু খেয়ে ফেলে তা সবই আমার জানা। আমার কাছে একখানা কিতাব আছে। তাতে সবকিছু সংরক্ষিত আছে।
قَدْ عَلِمْنَا مَا تَنقُصُ ٱلْأَرْضُ مِنْهُمْ ۖ وَعِندَنَا كِتَـٰبٌ حَفِيظٌۢ ٤
৫ ) এসব লোকেরা তো এমন যে, যখনই তাদের কাছে সত্য এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যা মনে করেছে। এ কারণেই তারা এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে আছে।
بَلْ كَذَّبُوا۟ بِٱلْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ فَهُمْ فِىٓ أَمْرٍۢ مَّرِيجٍ ٥
৬ ) আচ্ছা, এরা কি কখনো এদের মাথার ওপরের আসমানের দিকে তাকায়নি? আমি কিভাবে তা তৈরী করেছি এবং সজ্জিত করেছি। তাতে কোথাও কোন ফাটল নেই।
أَفَلَمْ يَنظُرُوٓا۟ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَـٰهَا وَزَيَّنَّـٰهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٍۢ ٦
৭ ) ভূপৃ‌ষ্ঠকে আমি বিছিয়ে দিয়েছি, তাতে পাহাড় স্থাপন করেছি এবং তার মধ্যে সব রকম সুদৃশ্য উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন করেছি।
وَٱلْأَرْضَ مَدَدْنَـٰهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَٰسِىَ وَأَنۢبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍۭ بَهِيجٍۢ ٧
৮ ) এসব জিনিসের সবগুলোই দৃষ্টি উন্মুক্তকারী এবং শিক্ষাদানকারী ঐ সব বান্দার জন্য যারা সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
تَبْصِرَةًۭ وَذِكْرَىٰ لِكُلِّ عَبْدٍۢ مُّنِيبٍۢ ٨
৯ ) আমি আসমান থেকে বরকতপূর্ণ পানি নাযিল করেছি। অতঃপর তা দ্বারা বাগান ও খাদ্য শস্য উৎপন্ন করেছি।
وَنَزَّلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ مُّبَـٰرَكًۭا فَأَنۢبَتْنَا بِهِۦ جَنَّـٰتٍۢ وَحَبَّ ٱلْحَصِيدِ ٩
১০ ) তাছাড়া থরে থরে সজ্জিত ফলভর্তি কাঁদি বিশিষ্ট দীর্ঘ সুউচ্চ খেজুর গাছ।
وَٱلنَّخْلَ بَاسِقَـٰتٍۢ لَّهَا طَلْعٌۭ نَّضِيدٌۭ ١٠
১.
مَجِيْدٌ শব্দ আরবী ভাষায় দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক, উচ্চ পদের অধিকারী, শ্রেষ্ঠ মহান এবং সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। দুই, দয়ালু, অধিক দানশীল এবং অতি মাত্রায় উপকারকারী। কুরআনের জন্য এ শব্দটি দু’টি অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। কুরআন মহান এ দিক দিয়ে যে, তার মোকাবিলায় দুনিয়ার আর কোন গ্রন্থই পেশ করা যেতে পারে না। ভাষা ও সাহিত্যিক মূল্যবোধের বিচারেও তা মু’জিযা আবার শিক্ষা ও জ্ঞানের বিচারেও তা মু’জিযা। কুরআন যে সময় নাযিল হয়েছিল সে সময়েও মানুষ কুরআনের বাণীর মত বাণী বানিয়ে পেশ করতে অক্ষম ছিল এবং আজও অক্ষম। তার কোন কথা কখনো কোন যুগে ভুল প্রমাণ করা যায়নি এবং যাবেও না। বাতিল না পারে সামনে থেকে এর মোকাবিলা করতে না পারে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে পরাজিত করতে। কুরআন অধিক দাতা এ দিক দিয়ে যে, মানুষ তার থেকে যত বেশী পথনির্দেশনা পাওয়ার চেষ্টা করে সে তাকে ততটাই পথনির্দেশনা দান করে এবং যত বেশী তা অনুসরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সে ততই বেশী লাভ করতে থাকে। এর উপকার ও কল্যাণের এমন কোন সীমা নেই যেখানে পৌঁছে মানুষ এর মুখাপেক্ষী না হয়েও পারে কিংবা যেখানে পৌঁছার পর এর উপকারিতা শেষ হয়ে যায়।
২.
এ আয়াতাংশটি অলংকারময় ভাষার একটি অতি উত্তম নমুনা। অনেক বড় একটি বিষয়কে এতে কয়েকটি সংক্ষিপ্ত শব্দের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে। যে ব্যাপারে কুরআনের শপথ করা হয়েছে তা বর্ণনা করা হয়নি। এ বিষয়টি উল্লেখ করার পরিবর্তে মাঝে একটি সূক্ষ্ম শূন্যতা রেখে পরবর্তী কথা ‘আসলে’ বা ‘বরং’ শব্দ দিয়ে আরম্ভ করা হয়েছে। কেউ যদি একটু চিন্তা-ভাবনা করে এবং যে পটভূমিতে একথা বলা হয়েছে সেদিকেও খেয়াল রাখে তাহলে শপথ ও ‘বরং’ শব্দের মাঝে যে শূন্যতা রেখে দেয়া হয়েছে তার বিষয়বস্তু কি তা সে জানতে পারবে। এখানে মূলত যে ব্যাপারে শপথ করা হয়েছে তা হচ্ছে, মক্কাবাসীরা কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত মানতে অস্বীকার করেনি বরং একেবারেই একটি অযৌক্তিক কারণে অস্বীকার করেছে। অর্থাৎ তাদের স্বজাতির একজন মানুষ এবং তাদের নিজেদের কওমের এক ব্যক্তির আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্ককারী হয়ে আসা তাদের কাছে অতি আশ্চর্যজনক ব্যাপার। অথচ, বিস্ময়ের ব্যাপার হতে পারতো যদি আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কল্যাণ-অকল্যাণ সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে তাদের সাবধান করার কোন ব্যবস্থা না করতেন, কিংবা মানুষকে সাবধান করার জন্য মানুষ ছাড়া অন্য কিছুকে পাঠাতেন অথবা আরবদের সাবধান করার জন্য কোন চীনাকে পাঠিয়ে দিতেন। তাই অস্বীকৃতির এ কারণ একেবারেই অযৌক্তিক। সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মানুষ নিশ্চিতভাবেই একথা মানতে বাধ্য যে, বান্দাদেরকে হিদায়াতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা হওয়া উচিত এবং সেটা হবে এভাবে যে, যাদের মধ্যে সাবধানকারীকে পাঠানো হয়েছে সে তাদেরই একজন হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই কি সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ এ কাজের জন্য পাঠিয়েছেন? এ বিষয়টি মীমাংসার জন্য আর কোন সাক্ষ্যের প্রয়োজন নেই, যে মহান ও শ্রেষ্ঠ কল্যাণময় কুরআন তিনি পেশ করেছেন সেটিই তার প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।

এ ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় যে, এ আয়াতে কুরআনের শপথ করা হয়েছে একথা বুঝানোর জন্য যে, মুহাম্মাদ ﷺ সত্যিই আল্লাহর রসূল এবং তাঁর রিসালাত সম্পর্কে কাফেরদের বিস্ময় অহেতুক। কুরআনের “মাজীদ” হওয়াকে এ দাবীর প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে।

৩.
এটা ছিল তাদের দ্বিতীয় বিস্ময়। তাদের প্রথম ও প্রকৃত বিস্ময় মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে ছিল না, বরং তা ছিল এ বিষয়ে যে, তাদের নিজেদের কওমের এক ব্যক্তি দাবী করে বসেছে যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সাবধান করার জন্য এসেছেন। তাছাড়া তারা আরো বিস্মিত হয়েছে এ কারণে যে, তিনি যে বিষয়ে তাদেরকে সাবধান করছিলেন তা হচ্ছে, সমস্ত মানুষকে মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবিত করা হবে, তাদেরকে একত্রিত করে আল্লাহর আদালতে হাজির করা হবে এবং সেখানে তাদের সমস্ত কাজ-কর্মের হিসেব নিকেশের পর পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে।
৪.
অর্থাৎ একথা যদি তাদের বিবেক-বুদ্ধিতে না ধরে তাহলে তা তাদের বিবেক-বুদ্ধির সংকীর্ণতা। তাদের বিবেক-বুদ্ধির সংকীর্ণতার কারণে আল্লাহর জ্ঞান ও কুদরতও সংকীর্ণ হতে হবে তা নয়। এরা মনে করে, সৃষ্টির সূচনাকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী অসংখ্য মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ যা মাটিতে মিশে গিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও বিক্ষিপ্ত হয়ে মিশে যাবে তা একত্রিত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, ঐ সব দেহাংশের একেকটি যেখানে যে অবস্থায় আছে আল্লাহ তা’আলা তা সরাসরি জানেন, তাছাড়া আল্লাহর দফতরে তার পূর্ণাংগ রেকর্ডও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একটি ক্ষুদ্র অণুও তা থেকে বাদ পড়ছে না। যখন আল্লাহর নির্দেশ হবে সেই মুহূর্তেই তাঁর ফেরেশতারা উক্ত রেকর্ড দেখে একেকটি অণুকে খুঁজে বের করবে এবং সমস্ত মানুষ যে দেহ নিয়ে দুনিয়াতে কাজ করেছিল সেই দেহ তারা পুনরায় বানিয়ে দেবে।

আখেরাতের জীবন যে কেবল দুনিয়ার জীবনের মত দৈহিক জীবন হবে তাই নয় বরং দুনিয়াতে মানুষের যে দেহ ছিল আখেরাতেও প্রত্যেক মানুষের হুবহু সে একই দেহ হবে। কুরআন মজীদের যেসব আয়াতে একথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে এ আয়াতটিও তার একটি। যদি ব্যাপাটি তা না হতো তাহলে কাফেরদের কথার জবাবে একথা বলা একেবারেই অর্থহীন হতো যে, মাটি তোমাদের দেহের যা কিছু খেয়ে ফেলে তা সবই আমার জানা আছে এবং তার প্রতিটি অণু-পরমাণুর রেকর্ড আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা হা-মীম, আস সাজদা, টীকা ২৫)

৫.
এ সংক্ষিপ্ত বাক্যাংশটিতে একটি অতি বড় বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। এর অর্থ তারা শুধু বিস্ময় প্রকাশ করা এবং বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী ঠাওরানোকেই যথেষ্ট মনে করেনি। বরং যে সময় মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর সত্যের দাওয়াত পেশ করেছেন সে সময় তারা কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই তাকে নির্জলা মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছে। অবশ্যম্ভাবীরূপে তার যে ফল হওয়ার ছিল এবং হয়েছে তা হচ্ছে, এ দাওয়াত এবং এ দাওয়াত পেশকারী রসূলের ব্যাপারে এরা কখনো স্থির ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি। কখনো তাকে কবি বলে, কখনো বলে গণক কিংবা পাগল। কখনো বলে সে যাদুকর আবার কখনো বলে কেউ তাঁর ওপর যাদু করেছে। কখনো বলে নিজের বড়ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সে এ বাণী নিজে বানিয়ে এনেছে আবার কখনো অপবাদ আরোপ করে যে, অন্যকিছু লোক তার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারাই তাকে এসব কথা বানিয়ে দেয়। এসব পরস্পর বিরোধী কথাই প্রকাশ করে যে, তারা নিজেদের দৃষ্টিভংগী সম্পর্কেই পুরোপুরি দ্বিধান্বিত। যদি তারা তাড়াহুড়ো করে একেবারে প্রথমেই নবীকে অস্বীকার না করতো এবং কোন রকম চিন্তা-ভাবনা না করে আগেভাগেই একটি সিদ্ধান্ত দেয়ার পূর্বে ধীরস্থিরভাবে একথা ভেবে দেখতো যে, কে এ দাওয়াত পেশ করছে, কি কথা বলছে এবং তাঁর দাওয়াতের স্বপক্ষে কি দলীল-প্রমাণ পেশ করছে তাহলে তারা কখনো এ দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তো না। এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, তাদের কাছে ঐ ব্যক্তি অপরিচিত কেউ ছিল না। সে অন্য কোনখান থেকে আকস্মিকভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। সে তাদের স্বজাতিরই একজন সদস্য ছিল। তাদের জানা শোনা লোক ছিল। তারা তাঁর চরিত্র ও কর্ম যোগ্যতা সম্পর্কে অনবহিত ছিল না। এমন একজন মানুষের পক্ষ থেকে যখন একটি কথা পেশ করা হয়েছিল তখন সাথে সাথে তা গ্রহণ না করলেও শোনামাত্রই তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মতও ছিল না। তাছাড়া সেটি যুক্তি-প্রমাণহীন কথাও ছিল না। সে তার পক্ষে দলীল-প্রমাণ পেশ করেছিলো। তার প্রমাণাদি কতখানি যুক্তিসঙ্গত তা খোলা কান দিয়ে শোনা এবং পক্ষপাতহীনভাবে যাঁচাই বাছাই করে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু এ নীতি গ্রহণ করার পরিবর্তে যখন তারা জিদের বশবর্তী হয়ে প্রথম পর্যায়েই তাঁকে অস্বীকার করে বসলো তখন তার ফল হলো এই যে, সত্য পর্যন্ত পৌঁছার একটি দরজা তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিল এবং চারদিকে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ানোর অনেক দরজা খুলে নিল। এখন তারা নিজেদের প্রাথমিক ভুলকে যুক্তিসিদ্ধ করার পর পরস্পর বিরোধী আরো অনেক কথা গড়তে পারে। কিন্তু তিনি সত্য নবীও হতে পারেন এবং তার পেশকৃত কথা সত্যও হতে পারে এ একটি কথা চিন্তা করে দেখার জন্যও তারা প্রস্তুত নয়।
৬.
উপরোল্লেখিত পাঁচটি আয়াতে মক্কার কাফেরদের ভূমিকার অযৌক্তিকতা স্পষ্ট করে দেয়ার পর মুহাম্মাদ ﷺ আখেরাতের যে খবর দিয়েছেন তার সত্যতার প্রমাণাদি কি তা বলা হচ্ছে। এখানে একথাটি ভালভাবে বুঝে নেয়া প্রয়োজন যে, কাফেররা যে দু’টি বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলো তার মধ্যে একটি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতা সম্পর্কে প্রারম্ভেই দু’টি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। প্রথম প্রমাণটি হলো, তিনি তোমাদের সামনে কুরআন মজীদ পেশ করেছেন যা তাঁর নবী হওয়ার খোলাখুলি প্রমাণ। দ্বিতীয় প্রমাণ হচ্ছে তিনি তোমাদের নিজদের স্বজাতি ও জ্ঞাতি গোষ্ঠীর লোক। তিনি হঠাৎ আসমান থেকে কিংবা অন্য কোন অঞ্চল থেকে এসে হাজির হননি যে, তিনি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি কিনা আর এ কুরআন তাঁর নিজের রচিত কথা হতে পারে কিনা তা তাঁর জীবন, চরিত্র ও কর্ম যাঁচাই-বাছাই করে বিশ্লেষণ করা কঠিন। অতএব তাঁর নবুওয়াত দাবী সম্পর্কে তোমাদের বিস্ময় অনর্থক। এ যুক্তি-প্রমাণ সবিস্তারে পেশ করার পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত দু’টি ইঙ্গিত আকারে বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা, মুহাম্মাদ ﷺ যে সময় মক্কায় দাঁড়িয়ে নিজে সেসব লোকদের কুরআন শুনাচ্ছিলেন যারা তাঁর শৈশব থেকে শুরু করে যৌবন এবং পৌঢ়ত্ব পর্যন্ত তাঁর গোটা জীবন দেখেছিল, সে সময়ের প্রতিটি ব্যক্তির কাছে এসব ইঙ্গিতের বিস্তারিত পরিবেশ ও পটভূমি আপনা থেকেই সুস্পষ্ট ছিল। তাই তাঁর বর্ণনা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় যে জিনিসটিকে ঐ সব লোক অদ্ভূদ ও বিবেক-বুদ্ধির পরিপন্থী বলছে তার সত্যতার বিস্তারিত যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে।
৭.
এখানে আসমান বলতে পুরো ঊর্ধ্বজগতকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষ রাত-দিন তার মাথার ওপর ছেয়ে থাকতে দেখে। যেখানে দিনের বেলা সূর্য দীপ্তি ছড়ায়, রাতের বেলা চাঁদ এবং অসংখ্য তারকারাজি উজ্জল হয়ে দেখা দেয়। মানুষ যদি এগুলোকে খালি চোখেই দেখে তাহলেও সে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে পড়ে। আর দূরবীন লাগিয়ে দেখলে এমন একটি বিশাল সুবিস্তৃত সৃষ্টিজগত তার সামনে ভেসে ওঠে যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। কোথায় শুরু এবং কোথায় শেষ হয়েছে বুঝা যাবে না। আমাদের পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় বিশালকার গ্রহসমূহ এর মধ্যে বলের মত ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের সূর্যের চেয়ে হাজার হাজার গুণ অধিক উজ্জল তারকা তার মধ্যে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আমাদের এ সৌরজগত তার একটি মাত্র ছায়াপথের এক কোণে পড়ে আছে। এ একটি মাত্র ছায়াপথে আমাদের সূর্যের মত কমপক্ষে আরো ৩ শত কোটি তারকা (স্থির বস্তু) বিদ্যমান এবং মানুষের পর্যবেক্ষণ এ পর্যন্ত এরূপ দশ লাখ ছায়াপথের সন্ধান দিচ্ছে। এ লক্ষ লক্ষ ছায়াপথের আমাদের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী প্রতিবেশী ছায়াপথটি এত দূরে অবস্থিত যে, তার আলো সেকেণ্ডে এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল গতিতে অগ্রসর হয়ে দশ লাখ বছরে আমাদের পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে। এটা হচ্ছে সৃষ্টিজগতের সেই অংশের বিস্তৃতির অবস্থা যা এ পর্যন্ত মানুষের জ্ঞান ও পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে। আল্লাহর কর্তৃত্ব কত ব্যাপক ও বিস্তৃত তার কোন অনুমান আমরা করতে পারি না। হতে পারে, সমুদ্রের তুলনায় এক বিন্দু পানি যতটুকু মানুষের জানা সৃষ্টিজগত গোটা সৃষ্টিজগতের অনুপাতের ততটুকুও নয়। যে আল্লাহ এ বিশাল সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্ব দান করেছেন, ভুপৃষ্ঠের ধীরগতি ও বাকশক্তি সম্পন্ন মানুষ নামে অভিহিত অতি ক্ষুদ্র জীব যদি সেই আল্লাহ সম্পর্কে মত প্রকাশ করে যে, মৃত্যুর পর তিনি তাকে পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না তাহলে সেটা তার নিজের জ্ঞান-বুদ্ধির সংকীর্ণতা মাত্র। তাতে বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা কি করে সীমিত হতে পারে!
৮.
অর্থাৎ এ বিস্ময়কর বিস্তৃতি সত্ত্বেও এ বিশাল ও জাঁকজমকপূর্ণ বিশ্ব ব্যবস্থা এমন সুশৃংখল ও মজবুত এবং তার বন্ধন এমন অটুট যে, তাতে কোথাও কোন চিড় বা ফাটল এবং কোথাও গিয়ে এর ধারাবাহিকতা ছিন্ন হয় না। একটি উদাহরণের সাহায্যে এ বিষয়টি ভালভাবে বুঝা যেতে পারে, আধুনিক যুগের বেতার সংকেত ভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান-গবেষকগণ একটি ছায়াপথ পর্যবক্ষেণ করেছেন যাকে তারা উৎস ৩গ ২৯৫ (Source 3c 295) নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। উক্ত ছায়াপথ সম্পর্কে তাদের ধারণা হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের কাছে তার যে আলো এসে পৌঁছেছে তার চারশ’ কোটি বছরেরও বেশী সময় পূর্বে সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে থাকবে। এত দূর থেকে এসব আলোক রশ্মির পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছা কি করে সম্ভব হতো যদি পৃথিবী এবং উক্ত ছায়াপথের মাঝে বিশ্ব ব্যবস্থার ধারাবাহিকতার কোথাও ছিন্ন থাকতো এবং বন্ধনে ফাটল থাকতো। আল্লাহ তা’আলা এ সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে প্রকৃতপক্ষে মানুষের সামনে এ প্রশ্নই রেখেছেন যে, আমার সৃষ্ট বিশ্ব-জাহানের এ ব্যবস্থাপনায় যখন তোমরা একটি সামান্য ছিদ্রও দেখিয়ে দিতে পারো না তখন তোমাদের মগজে আমার দূর্বলতার এ ধারণা কোথা থেকে আসে যে, তোমাদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর হিসেব-নিকেশ নেয়ার জন্য আমি তোমাদের জীবিত করে আমার সামনে হাজির করতে চাইলে তা করতে পারবো না।

এটা শুধু আখেরাতের সম্ভাবনার প্রমাণই নয় বরং তাওহীদেরও প্রমাণ। চারশত কোটি আলোক বর্ষের (Light Year) দূরত্ব থেকে এসব আলোক রশ্মির পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছা এবং এখানে মানুষের তৈরী যন্ত্রপাতিতে ধরা পড়া খোলাখুলি একথা প্রমাণ করে যে, ঐ ছায়াপথ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত গোটা সৃষ্টিজগত একই বস্তুর তৈরী, তার মধ্যে একই রকম শক্তিসমূহ কর্মতৎপর রয়েছে এবং কোন প্রকার পার্থক্য ও ভিন্নতা ছাড়া তা একই রকম নিয়ম-কানুন অনুসারে কাজ করছে। তা না হলে এসব আলোক রশ্মি এ পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হতো না এবং পৃথিবী ও তার পরিবেশে ক্রিয়াশীল নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে মানুষ যেসব যন্ত্রপাতি তৈরী করেছে তাতেও ধরা পড়তো না। এতে প্রমাণিত হয়, একই আল্লাহ গোটা এ বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা, মালিক, শাসক ও ব্যবস্থাপক।

৯.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আন নাহল, টীকা ১২, ১৩ ও ১৪; আন নামল, টীকা ৭৩, ৭৪; আয যুখরুফ, টীকা ৭।
অনুবাদ: