পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

৩৯৯ আয়াত

২১ ) যারা ঈমান গ্রহণ করেছে এবং তাদের সন্তানরাও ঈমানসহ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে আমি তাদের সেসব সন্তানকেও তাদের সাথে (জান্নাতে) একত্রিত করে দেব। আর তাদের আমলের কোন ঘাটতি আমি তাদেরকে দেব না। ১৫ প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জিত কর্মের হাতে জিম্মী রয়েছে। ১৬
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَـٰنٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَآ أَلَتْنَـٰهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَىْءٍۢ ۚ كُلُّ ٱمْرِئٍۭ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌۭ ٢١
২২ ) আমি তাদেরকে সব রকমের ফল, গোশত ১৭ এবং তাদের মন যা চাইবে তাই প্রচুর পরিমাণে দিতে থাকবো।
وَأَمْدَدْنَـٰهُم بِفَـٰكِهَةٍۢ وَلَحْمٍۢ مِّمَّا يَشْتَهُونَ ٢٢
২৩ ) তারা সেখানে পরস্পরের নিকট থেকে ক্ষিপ্রতার সাথে শরাব পাত্র গ্রহণ করতে থাকবে। কিন্তু সেখানে কোন অপ্রয়োজনীয় কথা থাকবে না এবং থাকবে না কোন চরিত্রহীনতা। ১৮
يَتَنَـٰزَعُونَ فِيهَا كَأْسًۭا لَّا لَغْوٌۭ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌۭ ٢٣
২৪ ) তাদের সেবার জন্য সেসব বালকেরা ছুটাছুটি করতে থাকবে যারা কেবল তাদের জন্য নির্দিষ্ট হবে ১৯ তারা এমন সুদর্শন যেন সযত্নে লুকিয়ে রাখা মোতি।
۞ وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌۭ لَّهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌۭ مَّكْنُونٌۭ ٢٤
২৫ ) তারা একে অপরকে (পৃথিবীতে অতিবাহিত) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে।
وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ يَتَسَآءَلُونَ ٢٥
২৬ ) তারা বলবে আমরা প্রথমে নিজের পরিবারের লোকদের মধ্যে ভয়ে ভয়ে জীবন যাপন করতাম। ২০
قَالُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِىٓ أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ ٢٦
২৭ ) পরিশেষে আল্লাহ‌ আমাদের ওপর মেহেরবানী করেছেন এবং দগ্ধকারী ২১ আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন।
فَمَنَّ ٱللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَىٰنَا عَذَابَ ٱلسَّمُومِ ٢٧
২৮ ) অতীত জীবনে আমরা তাঁর কাছেই দোয়া করতাম সত্যিই তিনি অতি বড় উপকারী ও দয়াবান।
إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلُ نَدْعُوهُ ۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْبَرُّ ٱلرَّحِيمُ ٢٨
২৯ ) তাই হে নবী (সা.), তুমি উপদেশ দিতে থাক। আল্লাহর মেহেরবাণীতে তুমি গণকও নও, পাগলও নও। ২২
فَذَكِّرْ فَمَآ أَنتَ بِنِعْمَتِ رَبِّكَ بِكَاهِنٍۢ وَلَا مَجْنُونٍ ٢٩
৩০ ) এসব লোক কি বলে যে, এ ব্যক্তি কবি, যার ব্যাপারে আমরা কালের আবর্তনের অপেক্ষা করছি। ২৩
أَمْ يَقُولُونَ شَاعِرٌۭ نَّتَرَبَّصُ بِهِۦ رَيْبَ ٱلْمَنُونِ ٣٠
১৫.
এ বিষয়টি ইতিপূর্বে সূরা রা’দের ২৩ আয়াত এবং সূরা মু’মিনের ৮ আয়াতেও উল্লেখিত হয়েছে। তবে এখানে পূর্বে দু’টি জায়গায় উল্লেখিত সুখবরের চেয়ে অতিরিক্ত একটি বড় সুখবর শোনানো হয়েছে। সূরা রা’দের আয়াতে শুধু এতটুকু বলা হয়েছিল যে, জান্নাতবাসীদের পিতা-মাতা-সন্তান-সন্তুতি এবং স্ত্রীদের মধ্যে যেসব ব্যক্তি নেককার তারা সবাই তার সাথে জান্নাতে যাবে। আর সূরা মু’মিনে বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর কাছে এ বলে দোয়া করে যে, তাদের সন্তান, স্ত্রী এবং বাপ-দাদার মধ্যে যারা নেককার তাদেরকেও জান্নাতে তাদের সাথে একত্রিত করে দাও। ঐ দু’টি আয়াতের বক্তব্যের চেয়ে অধিক যে কথাটি বলা হয়েছে, তা হচ্ছে সন্তান যদি কোন না কোন পর্যায়ের ঈমানসহ তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে সর্বোত্তম ঈমান ও আমলের কারণে তার পিতা যে মর্যাদা লাভ করেছে, আমলের দিক দিয়ে ঐ মর্যাদার উপযুক্ত না হলেও সন্তানদেরকে পিতার সাথে একত্রিত করা হবে। এই একত্র হওয়া মাঝে মাঝে গিয়ে সাক্ষাত করার মত হবে না। এজন্য اَلْحَقْنَا بِهِمْ কথা ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ হলো জান্নাতে তাদেরকে পিতা-মাতার সাথেই রাখা হবে। এছাড়া আরো সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, সন্তানদের সাথে একত্রিত করার জন্য পিতা-মাতাদের হ্রাস করে পদাবনিত করা হবে না। বরং পিতা-মাতাদের সাথে একত্রিত করার জন্য সন্তানদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরে উঠানো হবে।

এখানে একথাটিও বুঝে নিতে হবে, যে নিজ ইচ্ছায় ও সংকল্পে ঈমান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নেককার মুরুব্বীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে এ বাণী তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু কোন ঈমানদার ব্যক্তির সন্তান যদি ভাল মন্দ উপলব্ধি করার মত বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করে তবে তাদের ব্যাপারে কুফরী ও ঈমান এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাদের তো এমনিতেই জান্নাতে যাওয়ার কথা এবং তাদের পিতা-মাতার চোখ জুড়ানোর জন্য তাদের সাথে একত্রে রাখার কথা।

১৬.
এখানে “জিম্মী” বা “বন্ধক” শব্দটি রূপক ব্যবহার অত্যন্ত অর্থবহ। কোন ব্যক্তি যদি কাউকে কিছু ঋণ দেয় এবং ঋণদাতা তার পাওনা আদায়ের নিশ্চয়তা হিসেবে ঋণ গ্রহীতার কোন জিনিস নিজের কাছে বন্ধক রাখে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধকী বস্তু মুক্ত হবে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি বন্ধকী বস্তু মুক্ত না করে তাহলে বন্ধকী বস্তুটি বাজেয়াপ্ত বা হাতছাড়া হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলাও মানুষের মধ্যকার লেনদেনের বিষয়টিকে এখানে বন্ধকী লেনদেনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে যে সাজ-সরঞ্জাম, যেসব শক্তি, যেসব যোগ্যতা এবং যেসব ইখতিয়ার দিয়েছেন তা যেন মালিক তার বান্দাকে ঋণ দিয়েছেন। এ ঋণের জামানত হিসেবে বান্দা নিজেই আল্লাহর কাছে বন্ধক বা জিম্মী হয়ে রয়েছে। বান্দা যদি এসব সাজ-সরঞ্জাম, শক্তি এবং ইখতিয়ার সঠিক ভাবে ব্যবহার করে নেকী অর্জন করে--- যে নেকী দ্বারা এসব ঋণ পরিশোধ হবে, তাহলে সে বন্ধকী মাল অর্থাৎ নিজেকে মুক্ত করে নেবে। অন্যথায় তা বাজেয়াপ্ত করে নেয়া হবে। পূর্ববর্তী আয়াতের পরপরই একথা বলার কারণ হচ্ছে, সৎকর্মশীল ঈমানদারগণ যত বড় মর্যাদা সম্পন্নই হোক না কেন তাদের সন্তানরা নিজেদের কর্ম দ্বারা নিজেদের সত্তাকে মুক্ত না করলে তাদের বন্ধক মুক্তি হতে পারে না। বাপ-দাদার কর্ম সন্তানদের মুক্ত করতে পারে না। তবে সন্তানরা যদি যে কোন মাত্রার ঈমান ও সৎকর্মশীলদের আনুগত্য দ্বারা নিজেরা নিজেদের মুক্ত করতে পারে তাহলে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তাদেরকে নিম্ন মর্যাদা থেকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে বাপ-দাদার সাথে একত্রিত করে দেবেন। এটা নিছক আল্লাহ তা’আলার মেহেরবানী ও দয়া। সন্তানরা বাপ-দাদার সৎকাজের এ সুফলটুকু অন্তত লাভ করতে পারে। তবে তারা যদি নিজেদের কর্মদ্বারা নিজেরাই নিজেদেরকে দোযখের উপযোগী বানায় তাহলে এটা কোনক্রমেই সম্ভব নয় যে, বাপ-দাদার কারণে তাদেরকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। সাথে সাথে এ আয়াত থেকে একথাও বুঝা যায় যে, নিম্ন মর্যাদার নেক সন্তানদের নিয়ে উচ্চ মর্যাদার নেক পিতা-মাতার সাথে একত্রিত করে দেয়া প্রকৃতপক্ষে সেসব সন্তানের কর্মের ফল নয়, বরং তা ঐসব পিতা-মাতার কর্মের ফল। তারা নিজেদের আমল দ্বারা এ মর্যাদা লাভের উপযুক্ত হবে। তাই তাদের মন খুশী করার জন্য সন্তানদেরকেও তাদের সাথে একত্রিত করা হবে। এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা মর্যাদা হ্রাস করে তাদেরকে তাদের সন্তানদের কাছে নিয়ে যাবেন না। বরং সন্তানদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদের কাছে নিয়ে যাবেন; যাতে নিজ সন্তানদের থেকে দূরে অবস্থানের কারণে মনকষ্ট না হয় এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিয়াতমসমূহ পূর্ণ করে দেয়ার ক্ষেত্রে এ কমতিটুকু না থেকে যায়।
১৭.
এ আয়াতটিতে জান্নাতবাসীদেরকে সব রকমের গোশত সরবরাহ করার কথা উল্লেখ আছে। আর সূরা ওয়াকিয়ার ২১ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে পাখীর গোশত দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। এ গোশত কি প্রকৃতির হবে তা আমরা সঠিক জানি না। কিন্তু কুরআনের কোন কোন আয়াতে এবং কোন কোন হাদীসে জান্নাতের দুধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা জীব-জন্তুর পালন থেকে নির্গত হবে না। জান্নাতের মধু সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা মৌমাছির মধু হবে না। আর জান্নাতের শরাব সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা ফল পচিয়ে তার নির্যাসে তৈরী হবে না। আল্লাহর কুদরতে এগুলো ঝর্ণাসমূহ থেকে নির্গত হবে এবং নদীতে প্রবাহিত হবে। এ থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, জান্নাতের গোশতও জবাইকৃত জীব-জন্তুর গোশত হবে না, বরং কুদরতি পন্থায় তৈরী হবে। যে আল্লাহ মাটির উপাদানসমূহ থেকে সরাসরি দুধ, মধু ও শরাব তৈরী করতে সক্ষম, তিনি এসব উপাদান দিয়েই জীব-জন্তুর গোশতের চেয়েও অধিক সুস্বাদু গোশত তৈরী করে দিতে পারেন। এটা তাঁর ক্ষমতার অসাধ্য নয়। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা সাফ্ফাত টীকা ২৫; সূরা মুহাম্মাদ, টীকা ২১ থেকে ২৩)।
.
১৮.
অর্থাৎ সেই শরাব নেশা সৃষ্টিকারী হবে না। তাই তা পান করে কেউ মাতাল হয়ে বেহুদা ও আবোলতাবোল বকবে না, গালি-গালাজ করবে না, চড় থাপ্পড় দেবে না। কিংবা দুনিয়ার শরাব পানকারীদের মত অশ্লীল ও অশালীন আচরণ করবে না। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা সাফ্ফাত, টীকা ২৭)।
১৯.
এ সূক্ষ্ম বিষয়টি বিশেষ লক্ষণীয় যে, غِلْمَانُهُمْ বলা হয়নি, বরং غِلْمَانٌ لَهُمْ বলা হয়েছে। যদি غِلْمَانُهُمْ বলা হতো তাহলে তা থেকে এ ধারণা করা যেতে পারতো যে, দুনিয়ায় যারা তাদের খাদেম ছিল জান্নাতেও তাদেরকেই তাদের খাদেম বানিয়ে দেয়া হবে। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে দুনিয়ার যে ব্যক্তিই জান্নাতে যাবে সে তার উপযুক্ত পাত্র হিসেবেই যাবে এবং দুনিয়ায় সে যে প্রভুর খেদমত করতো বেহেশতেও তাকে সেই প্রভুর খাদেম বানিয়ে দেয়া হবে তার কোন কারণ নেই। বরং এমনও হতে পারে যে, কোন খাদেম তার নেক আমলের কারণে জান্নাতে প্রভুর চেয়েও উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে। সুতরাং غِلْمَانٌ لَهُمْ বলে এ ধারণা পোষণের কোন অবকাশই রাখা হয়নি। এ শব্দটি এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দেয় যে, এরা হবে সেই সব বালক যাদেরকে জান্নাতে তাদের খেদমতের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা সাফ্ফাত, টীকা ২৬)।
.
.
২০.
অর্থাৎ আমরা সেখানে বিলাসিতায় ডুবে এবং আপন ভূবনে মগ্ন থেকে গাফলতির জীবন যাপন করিনি। সেখানে সবসময়ই আমাদের আশঙ্কা থাকতো যে, কখন যেন আমাদের দ্বারা এমন কোন কাজ হয়ে যায়, যে কারণে আল্লাহ আমাদের পাকড়াও করবেন। এখানে বিশেষ করে নিজের পরিবারের লোকদের মধ্যে ভয়ে ভয়ে জীবন যাপন করার উল্লেখ করার কারণ এই যে, মানুষ বেশীর ভাগ যেজন্য গোনাহে লিপ্ত হয় তা হচ্ছে তার সন্তান-সন্তুতির আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা এবং তাদের দুনিয়া নির্মাণের চিন্তা। এজন্য সে হারাম উপার্জন করে, অন্যদের অধিকার লুণ্ঠন করে এবং নানা রকম অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। এ কারণে জান্নাতের বাসিন্দারা পরস্পর বলবে বিশেষভাবে যে জিনিসটি আমাদেরকে মন্দ পরিণাম থেকে রক্ষা করেছে তা হচ্ছে, নিজের সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে জীবন যাপন করতে গিয়ে তাদের আরাম-আয়েশে রাখার এবং তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার ততটা চিন্তা ছিল না যতটি চিন্তা ছিল এ ব্যাপারে যে, তাদের জন্য আমরা যেন এমন পন্থা অবলম্বন করে না বসি, যার দ্বারা আমাদের আখেরাত বরবাদ হয়ে যাবে, আর নিজের সন্তানদেরকেও আমরা এমন পথে নিয়ে যাবো যা তাদেরকে আল্লাহর আযাবের উপযোগী বানিয়ে দেবে।
২১.
মূল আয়াত سَّمُومِ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ চরম উষ্ণ হওয়া। অর্থাৎ দোযখ থেকে উত্থিত উত্তপ্ত হওয়ার ঝাপটা।
.
.
২২.
মক্কার কাফেররা জুলুম ও হঠকারিতার মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের মোকাবিলা করছিল। ওপরে আখেরাতের চিত্র পেশ করার পর এখন বক্তব্যের মোড় এখানে তাদের জুলুম ও হঠকারিতার দিকে ঘুরে যাচ্ছে। এখানে বাহ্যতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তার মাধ্যমে মক্কার কাফেরদেরকেই এসব কথা শুনানো হচ্ছে। তিনি যখন তাদের সামনে কিয়ামত, হাশর-নশর, হিসেব-নিকেশ, শাস্তি ও পুরস্কার এবং জান্নাত ও জাহান্নামের কথা বলতেন আর এসব বিষয় সম্বলিত কুরআন মজীদের আয়াত শুনিয়ে দাবী করতেন, এসব খবর আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার কাছে এসেছে, এ হচ্ছে আল্লাহর বাণী আল্লাহ তা’আলা অহীর মাধ্যমে এ বাণী নাযিল করেছেন তখন তাদের নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় পুরোহিত গোষ্ঠী এবং তাদের বখাটে লোকেরা তাঁর এ বক্তব্য যেমন কখনো সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবে-চিন্তে দেখতো না, তেমনি এও চাইতো না যে, জনসাধারণ তাঁর বক্তব্যের প্রতি মনোযোগ দিক। তাই তারা কখনো বলতো তিনি গণক, কখনো বলতো তিনি পাগল, কখনো বলতো তিনি কবি, আবার কখনো বলতো তিনি নিজেই এসব অদ্ভূত কথা রচনা করেন এবং নিজের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নাযিলকৃত অহী বলে পেশ করেন। তাদের ধারণা ছিল, এভাবে অপবাদ আরোপ করে মানুষের মনে তাঁর ব্যাপারে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে দিতে পারবে এবং তাঁর সব কথা ব্যর্থ হয়ে যাবে। সূতরাং এখানে বলা হচ্ছে, হে নবী, বাস্তব অবস্থা তো তাই যা সূরার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এসব কারণে এসব লোক যদি তোমাকে গণক এবং পাগল বলে তাহলে তার পরোয়া করো না। আল্লাহর বান্দাদেরকে তাদের গাফলতি সম্পর্ক সতর্ক এবং প্রকৃত সত্য সম্পর্কে সাবধান করার কাজ করতে থাকো। কারণ, আল্লাহর মেহেরবানীতে তুমি গণকও নও, পাগলও নও।

আরবী ভাষায় كاهن শব্দটি জোতিষী, ভবিষ্যৎ বক্তা ও জ্ঞানবান অর্থে ব্যবহৃত হয়। জাহেলী যুগে এটি একটি স্বতন্ত্র পেশা ছিল। গণকরা দাবী করতো এবং দুর্বল আকীদার লোকেরা মনে করতো যে, তারা নক্ষত্র বিশারদ বা আত্মা, শয়তান ও জিনদের সাথে তাদের বিশেষ সম্পর্ক আছে, যার মাধ্যমে তারা গায়েবী খবর জানতে পারে। কোন জিনিস হারিয়ে গেলে তা কোথায় পড়ে আছে তা তারা বলে দিতে পারে। কারো বাড়ীতে চুরি হলে কে চোর তা তারা বলে দিতে পারে। কেউ তার ভাগ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলে দিতে পারে তার ভাগ্যে কি লেখা আছে। মানুষ এসব উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের কাছে যেতো। তারা কিছু নযর-নিয়াজ নিয়ে তাদেরকে গায়েবী কথা বলে দিতো। মানুষ যাতে তাদের কাছে আসে এ উদ্দেশ্যে তারা নিজেরাও অনেক সময় বস্তিতে গিয়ে হাঁক ছেড়ে বেড়াতো। তাদের একটা বিশেষ ঢং হতো, যা দিয়ে তাদের চেনা যেতো। তাদের কথাবার্তাও সাধারণ বোলচাল থেকে ভিন্ন হতো। তারা বিশেষ ভংগীতে কিছুটা গানের সূরে ছন্দবদ্ধ কথা বলতো এবং সাধারণত এমন হেঁয়ালিপূর্ণ কথা বলতো যা থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি তার মনের কথার সন্ধান করে নিতে পারে। জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কুরাইশ নেতারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তারা গণক হওয়ার অপবাদ আরোপ করেছিল। আর তা করেছিল শুধু এ কারণে যে, তিনি এমন সব বিষয়ে কথা বলতেন যা মানুষের দৃষ্টির আড়ালে ছিল, তাছাড়া তিনি দাবী করতেন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা এসে তার কাছে অহী নাযিল করে এবং আল্লাহর যে বাণী তিনি পেশ করেন তাও ছিল ছন্দায়িত। কিন্তু তাদের এ অপবাদের কারণে আরবের কোন মানুষই প্রতারিত হয়নি। কারণ গণকদের পেশা, তাদের চালচলন, তাদের কথাবার্তা এবং তাদের কারবার কারোই অজানা ছিল না। সবাই জানতো, তারা কি কাজ করে, কি উদ্দেশ্যে লোকজন তাদের কাছে যায়, কি কি কথা তারা তাদেরকে বলে, তাদের ছন্দবদ্ধ কথাগুলো কেমন হয় এবং তার বিষয়বস্তু কি থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটা আদৌ কোন গণকের কাজ হতে পারে না যে, জাতির মধ্যে তৎকালে প্রচলিত আকীদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী আকীদা-বিশ্বাস সে তুলে ধরবে, দিনরাত তার প্রচার প্রসারে জীবনপাত করবে এবং সেজন্য গোটা জাতির শত্রুতার ঝুঁকি নেবে। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে গণক হওয়ার এ অপবাদের নাম মাত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং আরবের কোন নিরেট বোকা লোকও এতে প্রতারিত হয়নি।

অনুরূপভাবে মক্কার কাফেররা নিছক তাদের মনের সান্ত্বনার জন্য নবীকে ﷺ পাগল হওয়ার অপবাদ দিতো। যেমন বর্তমান যুগের কোন কোন বেশরম পাশ্চত্য লেখক ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের হিংসা চরিতার্থ করার জন্য দাবী করে যে, নবীর ﷺ ওপর মৃগি রোগের (Epilepsy) আক্রমণ হতো এবং আক্রান্ত অবস্থায় তাঁর মুখ থেকে যেসব কথা বের হতো লোকে তাকেই অহী মনে করতো। সে যুগের কোন জ্ঞানী লোকও এসব বেহুদা অপবাদকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেনি, এ যুগের কোন মানুষও কুরআন মজীদ অধ্যয়ন করে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে সাধিত বিস্ময়কর কীর্তিসমূহ দেখে একথা বিশ্বাস করতে পারে না যে, এসব কিছু মৃগী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফল।

২৩.
অর্থাৎ এ ব্যক্তির ওপর কোন আকস্মিক বিপদ আপতিত হোক এবং আমরা তাঁর জ্বালাতন থেকে রক্ষা পাই, এজন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সম্ভবত তাদের ধারণা ছিল, মুহাম্মাদ ﷺ যেহেতু আমাদের উপাস্যদের বিরোধিতা এবং তাদের অলৌকিক কর্মকাণ্ড অবিশ্বাস করেন, তাই হয় তাঁর ওপরে আমাদের কোন উপাস্য দেব-দেবীর কোপনল পড়বে অথবা কোন দুঃসাহসী বীর তাঁর এসব কথা শুনে ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে এবং তাঁকে হত্যা করবে।
অনুবাদ: