আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
প্রশ্ন উঠতে পারে, এখানে কোন্ প্রসঙ্গে বিশ্ব-জাহানের মালিক মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী আলোচনা করা হয়েছে? এ বিষয়টি বুঝতে হলে ৩২ রুকু’ থেকে যে আলোচনাটি চলছে তার ওপর আর এবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিতে হবে। প্রথমে মুসলমানদের ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ধন-প্রাণ উৎসর্গ করে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বনী ইসরাঈলরা যেসব দুর্বলতার শিকার হয়েছিল তা থেকে দূরে থাকার জন্য তাদের জোর তাগিদ দেয়া হয়। তারপর তাদেরকে এ সত্যটি বুঝানো হয় যে, বিজয় ও সাফল্য সংখ্যা যুদ্ধাস্ত্রের আধিক্যের ওপর নির্ভর করে না বরং ঈমান, সবর, সংযম, নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও সংকল্পের দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে। অতঃপর যুদ্ধের সাথে আল্লাহর যে কর্মনীতি সম্পর্কিত রয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা অক্ষুন্ন রাখার জন্য তিনি সবসময় মানুষদের একটি দলের সাহায্যে আর একটি দলকে দমন করে থাকেন। নয়তো যদি শুধুমাত্র একটি দল স্থায়ীভাবে বিজয় লাভ করে কর্তৃত্ব ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতো তাহলে দুনিয়ায় অন্যদের জীবন ধারা কঠিন হয়ে পড়তো।
আবার এ প্রসঙ্গে অজ্ঞ লোকদের মনে আরো যে একটি প্রশ্ন প্রায়ই জাগে তারও জবাব দেয়া হয়েছে। সে প্রশ্নটি হচ্ছে, আল্লাহ যদি তাঁর নবীদেরকে মতবিরোধ খতম করার ও ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্য পাঠিয়ে থাকেন এবং তাদের আগমনের পরও মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ খতম না হয়ে থাকে তাহলে কি আল্লাহ এতই দুর্বল যে, এই গলদগুলো দূর করতে চাইলেও তিনি দূর করতে পারেননি? এর জবাবে বলা হয়েছে, বলপূর্বক মতবিরোধ বন্ধ করা এবং মানব জাতিকে জোর করে একটি বিশেষ পথে পরিচালনা করা আল্লাহর ইচ্ছা ছিল না। যদি এটা আল্লাহর ইচ্ছা হতো তাহলে তার বিরুদ্ধাচরণ করার কোন ক্ষমতাই মানুষের থাকতো না। আবার যে মূল বিষয়বস্তুর মাধ্যমে আলোচনার সূচনা করা হয়েছিল একটি বাক্যের মধ্যে সেটিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে। এরপর এখন বলা হচ্ছে, মানুষের আকীদা-বিশ্বাস, আদর্শ-মতবাদ ও ধর্ম যতই বিভিন্ন হোক না কেন আসল ও প্রকৃত সত্য যার ওপর আকাশ ও পৃথিবীর সমগ্র ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত, এই আয়াতেই বিবৃত হয়েছে। মানুষ এ সম্পর্কে ভুল ধারণা করলেই বা কি, এজন্য মূল সত্যের তো কোন চেহারা বদল হবে না। কিন্তু লোকদেরকে এটা মানতে বাধ্য করানো আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়।…………..যে ব্যক্তি এটা মেনে নেবে সে নিজেই লাভবান হবে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
একঃ প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মুশরিক সমাজগুলোর এই সম্মিলিত বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে যে, তারা আল্লাহকে সকল খোদার প্রধান খোদা, প্রধান উপাস্য ও পরমেশ্বর হিসেবে মেনে নেয় কিন্তু একমাত্র তাঁকেই আরাধ্য, উপাস্য, মাবুদ ও খোদা হিসেবে মানতে প্রস্তুত হয় না।
দুইঃ আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে মুশরিকরা চিরকাল দু’ভাগে বিভক্ত করে এসেছে। একটি হচ্ছে, অতি প্রাকৃতিক (Super natural) খোদায়ী ক্ষমতা। কার্যকারণ পরম্পরার ওপর এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং মুশরিকরা নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার সংকট উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এর দোহাই দেয়। এই খোদায়ীর ক্ষেত্রে তারা আল্লাহর সাথে অতীতের পুণ্যবান লোকদের আত্মা, ফেরেশতা (দেবতা), জিন, নক্ষত্র এবং আরো অসংখ্য সত্তাকে শরীক করে। তাদের কাছে প্রার্থনা করে। পূজা ও উপাসনার অনুষ্ঠানাদি তাদের সামনে সম্পাদন করে। তাদের আস্তানায় ভেট ও নজরানা দেয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে তামাদ্দুনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের খোদায়ী (অর্থাৎ শাসন কর্তৃত্ব) ক্ষমতা। জীবন বিধান নির্ধারণ করার ও নির্দেশের আনুগত্য লাভ করার অধিকার তার আয়ত্বাধীন থাকে। পার্থিব বিষয়াবলীর ওপর শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্ণ ক্ষমতা তার থাকে। দুনিয়ার সকল মুশরিক সম্প্রদায় প্রায় প্রতি যুগে এই দ্বিতীয় প্রকারের খোদায়ী কর্তৃত্বকে আল্লাহর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অথবা তার সাথে রাজপরিবার, ধর্মীয় পুরোহিত ও সমাজের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কালের মনীষীদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছে। বেশীর ভাগ রাজপরিবার এই দ্বিতীয় অর্থে খোদায়ীর দাবীদার হয়েছে। তাদের এই দাবীকে শক্তিশালী করার জন্য আবার তারা সাধারণভাবে প্রথম অর্থের খোদাদের সন্তান হবার দাবী করেছে। এ ব্যাপারে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো তাদের ষড়যন্ত্রে অংশীদার হয়েছে।
তিনঃ নমরুদের খোদায়ী দাবীও এই দ্বিতীয় ধরনের ছিল। সে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করতো না। নিজেকে পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা ও পরিচালক বলে সে দাবী করতো না। সে একথা বলতো না যে, বিশ্ব-জগতের সমস্ত কার্যাকারণ পরম্পরার ওপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বরং তার দাবী ছিল, আমি এই ইরাক দেশ এবং এর অধিবাসীদের একচ্ছত্র অধিপতি। আমার মুখের কথাই এ দেশের আইন। আমার ওপর আর কারো কর্তৃত্ব নেই। কারো সামনেই আমাকে জবাবদিহি করতে হবে না। ইরাকের যেকোন ব্যক্তি এসব দিক দিয়ে আমাকে রব বলে মেনে নেবে না অথবা আমাকে বাদ দিয়ে আর কাউকে রব বলে মেনে নেবে, সে বিদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক।
চারঃ ইবরাহীম আল্লাইহিস সালাম যখন বললেন, আমি একমাত্র রব্বুল আলামীনকে খোদা, মাবুদ ও রব বলে মানি, তাঁর ছাড়া আর সবার খোদায়ী, প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব অস্বীকার করি, তখন কেবল এতটুকু প্রশ্ন সেখানে দেখা দেয়নি যে, জাতীয় ধর্ম ও ধর্মীয় মাবুদদের ব্যাপারে তাঁর এই নতুন আকীদা ও বিশ্বাস কতটুকু সহনীয়, বরং এই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে যে, জাতীয় রাষ্ট্র ও তার কেন্দ্রীয় ক্ষমতা-কর্তৃত্বের ওপর এই বিশ্বাস যে আঘাত হানছে তাকে উপেক্ষা করা যায় কেমন করে? এ কারণেই হযরত ইবরাহীম (আ) বিদ্রোহের অপরাধে নমরুদের সামনে আনীত হন।
তালমূদের বর্ণনা মতে, তারপর সেই বাদশাহর নির্দেশে হযরত ইবরাহীমকে বন্দী করা হয়। দশ দিন তিনি কারাগারে অবস্থান করেন। অতঃপর বাদশাহর কাউন্সিল তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করার যে ঘটনা ঘটে তা সূরা আম্বিয়ার ৫ম রুকূ’, আনকাবুতের ২য় ও ৩য় রুকূ’ এবং আস সাফ্ফাতের ৪র্থ রুকূ’তে বর্ণিত হয়েছে।