পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

১৩১ আয়াত

৯৩ ) এসব খাদ্যবস্তু (শরীয়াতে মুহাম্মাদীতে যেগুলো হালাল) বনী ইসরাঈলদের জন্যও হালাল ছিল। ৭৬ তবে এমন কিছু বস্তু ছিল যেগুলোকে তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈল ৭৭ নিজেই নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিল। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা (নিজেদের আপত্তির ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তার কোন বাক্য পেশ করো।
۞ كُلُّ ٱلطَّعَامِ كَانَ حِلًّۭا لِّبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَٰٓءِيلُ عَلَىٰ نَفْسِهِۦ مِن قَبْلِ أَن تُنَزَّلَ ٱلتَّوْرَىٰةُ ۗ قُلْ فَأْتُوا۟ بِٱلتَّوْرَىٰةِ فَٱتْلُوهَآ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ ٩٣
৯৪ ) এরপরও যারা নিজেদের মিথ্যা মনগড়া কথা আল্লাহ‌র প্রতি আরোপ করতে থাকবে তারাই আসলে জালেম।
فَمَنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ٩٤
৯৫ ) বলে দাও, আল্লাহ‌ যা কিছু বলেছেন, সত্য বলেছেন। কাজেই তোমাদের একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের পদ্ধতির অনুসরণ করা উচিত। আর ইব্রাহীম শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ৭৮
قُلْ صَدَقَ ٱللَّهُ ۗ فَٱتَّبِعُوا۟ مِلَّةَ إِبْرَٰهِيمَ حَنِيفًۭا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ٩٥
৯৬ ) নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ইবাদাত গৃহটি নির্মিত হয় সেটি মক্কায় অবস্থিত। তাকে কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছিল এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াতের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল। ৭৯
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍۢ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِى بِبَكَّةَ مُبَارَكًۭا وَهُدًۭى لِّلْعَـٰلَمِينَ ٩٦
৯৭ ) তার মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ৮০ এবং ইব্রাহীমের ইবাদাতের স্থান। আর তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, যে তার মধ্যে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। ৮১ মানুষের মধ্য থেকে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন এই গৃহের হজ্জ্ব সম্পন্ন করে, এটি তাদের ওপর আল্লাহ‌র অধিকার। আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ‌ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।
فِيهِ ءَايَـٰتٌۢ بَيِّنَـٰتٌۭ مَّقَامُ إِبْرَٰهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنًۭا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًۭا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ ٱلْعَـٰلَمِينَ ٩٧
৯৮ ) বলো, হে আহলি কিতাব! তোমরা কেন আল্লাহ‌র কথা মানতে অস্বীকার করছো? তোমরা যেসব কাজ কারবার করছো, আল্লাহ‌ তা সবই দেখছেন।
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَٱللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا تَعْمَلُونَ ٩٨
৯৯ ) বলো, হে আহলি কিতাব! তোমরা এ কেমন কর্মনীতি অবলম্বন করেছো, যে ব্যক্তি আল্লাহ‌র কথা মানে তাকে তোমরা আল্লাহ‌র পথ থেকে বিরত রাখো এবং সে যেন বাঁকা পথে চলে এই কামনা করে থাকো? অথচ তোমরা নিজেরাই তার (সত্য পথাশ্রয়ী হবার) সাক্ষী। তোমরা যা কিছু করছো সে সম্পর্কে আল্লাহ‌ গাফিল নন।
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لِمَ تَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ تَبْغُونَهَا عِوَجًۭا وَأَنتُمْ شُهَدَآءُ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ٩٩
১০০ ) হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা এই আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে একটি দলের কথা মানো, তাহলে তারা তোমাদের ঈমান থেকে কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تُطِيعُوا۟ فَرِيقًۭا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ يَرُدُّوكُم بَعْدَ إِيمَـٰنِكُمْ كَـٰفِرِينَ ١٠٠
১০১ ) তোমাদের জন্যে কুফরীর দিকে ফিরে যাবার এখন আর কোন্‌ সুযোগটি আছে, যখন তোমাদের শুনানো হচ্ছে আল্লাহ‌র আয়াত এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ‌র রসূল? যে ব্যক্তি আল্লাহ‌কে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে, সে অবশ্যই সত্য সঠিক পথ লাভ করবে।
وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ ءَايَـٰتُ ٱللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُۥ ۗ وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ١٠١
১০২ ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহ‌কে ভয় করো। মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়। ৮২
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ ١٠٢
৭৬.
ইহুদী আলেমরা কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার বিরুদ্ধে যখন কোন নীতিগত আপত্তি জানাতে পারলো না (কারণ যেসব বিষয়ের ওপর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপিত ছিল, তার ব্যাপারে পূর্ববর্তী নবীদের শিক্ষা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার মধ্যে সামান্য চুল পরিমাণ পার্থক্যও ছিল না) তখন তারা ফিকাহ্ ভিত্তিক আপত্তি উত্থাপন করতে লাগলো। এ প্রসঙ্গে তারা এই বলে আপত্তি জানালো-আপনি পানাহার সামগ্রীর মধ্যে এমন কিছুকে হালাল গণ্য করেছেন, যা পূর্ববর্তী নবীদের সময় থেকে হারাম হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। এখানে এই আপত্তিটির জবাব দেয়া হয়েছে।
৭৭.
ইসরাঈল বলতে যদি এখানে বনী ইসরাঈল বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে এর অর্থ হবে, তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈলরা কিছু জিনিস নিছক প্রথাগতভাবে নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছিল। আর একথায় যদি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে এর অর্থ হবে, নিজের প্রকৃতিগত অপছন্দ অথবা কোন রোগের কারণে তিনি কোন কোন জিনিস পরিহার করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সন্তানরা সেগুলো নিষিদ্ধ মনে করে নিয়েছিল। এ শেষোক্ত বক্তব্যটি বেশী প্রচলিত। পরবর্তী আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, বাইবেলে উট ও খরগোশ হারাম হবার যে বিধান লিখিত হয়েছে তা মূল তাওরাতের বিধান নয়। বরং ইহুদী আলেমরাই পরবর্তীকালে এ বিধান কিতাবের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। (বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন সূরা আন’আম-এর ১২২ টীকা)।
.
.
৭৮.
এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা ফিকাহর এ সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ের বিতর্ক আলোচনায় জড়িয়ে পড়েছো, অথচ এক আল্লাহর বন্দেগী করাই হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তি। আর এ ভিত্তিকে বাদ দিয়ে তোমরা শিরকের পুতিগন্ধময় আবর্জনা গায়ে মেখে চলছো। আবার এখন ফিকাহর বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো। অথচ এগুলো আইনের অহেতুক চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তোমাদের উলামা সম্প্রদায়ের নিজেদের তৈরী। অধঃপতনের বিগত শতাব্দীগুলোতে আসল ইবরাহিমী মিল্লাত থেকে সরে গিয়ে তারা এগুলো তৈরী করেছিল।
৭৯.
ইহুদীদের দ্বিতীয় আপত্তি ছিল এই-তোমরা বাইতুল মাকদিসকে বাদ দিয়ে কাবাকে কিবলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছো কেন? অথচ এ বাইতুল মাকদিসই ছিল পূর্ববর্তী নবীদের কিবলাহ। সূরা বাকারায় এ আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইহুদীরা এরপরও নিজেদের আপত্তির ওপর জোর দিয়ে আসছিল। তাই এখানে আবার এর জবাব দেয়া হয়েছে। বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে বাইবেল নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাড়ে চারশো বছর পর হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এটি নির্মাণ করেছিলেন। (১-রাজাবলী, ৬: ১) আর হযরত সুলাইমানের (আ) আমলেই এটি তাওহীদবাদীদের কিবলাহ গণ্য হয়। (১-রাজাবলী, ৮: ২৯-৩০) বিপরীত পক্ষে সমগ্র আরববাসীর একযোগে সুদীর্ঘকালীন ধারাবাহিক বর্ণনায় একথা প্রমাণিত যে, কাবা নির্মাণ করেছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি হযরত মূসার (আ) আট নয়শো বছর আগে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। কাজেই কাবার অগ্রবর্তী অবস্থান ও নির্মাণ সন্দেহাতীতভাবে সত্য।
৮০.
অর্থাৎ এর মধ্যে কিছু সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়, যা থেকে একথা প্রমাণ হয় যে, এ ঘরটি আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়েছে এবং আল্লাহ‌ একে নিজের ঘর হিসেবে পছন্দ করে নিয়েছেন। ধূ ধূ মরুর বুকে এ ঘরটি তৈরী করা হয়। তারপর মহান আল্লাহ‌ এর আশপাশের অধিবাসীদের আহার্য সরবরাহের চমৎকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। জাহেলিয়াতের কারণে আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত সমগ্র আরব ভূখণ্ডে চরম অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছিল। কিন্তু এই বিপর্যয়ে পরিপূর্ণ দেশটিতে একমাত্র কাবাঘরও তার আশেপাশের এলাকাটি এমন ছিল যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিল। বরং এই কাবার বদৌলতেই সমগ্র দেশটি বছরে চার মাস শান্তি ও নিরাপত্তা ভোগ করতো। তারপর এই মাত্র অর্ধ শতাব্দী আগে সবাই প্রত্যক্ষ করেছিল কাবা আক্রমণকারী আবরাহার সেনাবাহিনী কিভাবে আল্লাহর রোষানলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। আরবের সে সময়ের শিশু-বৃদ্ধ-যুবক সবাই এ ঘটনা জানতো। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরাও কুরআন নাযিলের সময় জীবিত ছিল।
৮১.
এ ঘরটির মর্যাদা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, মারাত্মক প্রাণঘাতী শত্রুকে এখানে ঘোরাফেরা করতে দেখেও শত্রুর রক্তে হাত রঞ্জিত করার আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী ব্যক্তিরা পরস্পরের ওপর হাত ওঠাবার সাহস করতো না।
.
.
.
.
.
৮২.
অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহ‌র প্রতি অনুগ্রহ ও বিশ্বস্ত থাকো।
অনুবাদ: