আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا
“আমি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ আমাকে কিতাব দিয়েছেন ও নবী বানিয়েছেন।”(সূরা মারয়াম, ২য় রুকূ’)
এভাবে ঈসা মসীহ আলাইহিস সালামের জন্ম সম্পর্কে যে সংশয় জমে ওঠার সম্ভাবনা ছিল আল্লাহ নিজেই তার মূলোৎপাটন করেন। এজন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের যৌবনে পদার্পণ করা পর্যন্ত কেউ কোন দিন হযরত মারয়ামের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনেনি এবং হযরত ঈসাকে অবৈধ সন্তানও বলেনি। কিন্তু তিরিশ বছর বয়স হবার পর যখন তিনি নবুওয়াতের কাজের সূচনা করলেন এবং যাবতীয় অসৎকাজের জন্য ইহুদীদের তিরস্কার করতে শুরু করলেন, তাদের আলেমও ফকীহদের রিয়াকারীর সমালোচনা করতে থাকলেন তাদের সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষকে তাদের নৈতিক ও চারিত্রিক অবনতির জন্য সতর্ক করতে লাগলেন এবং আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবে কায়েম করার জন্য নিজের জাতিকে সব রকমের ত্যাগ স্বীকার করার ও সব ক্ষেত্রে শয়তানি শক্তির সাথে লড়াই করার আহবান জানালেন, তখন এই নির্লজ্জ অপরাধীরা সত্য ও সততার কণ্ঠরোধ করার জন্য সব রকমের নিকৃষ্ঠতম অস্ত্র ব্যবহার করতে এগিয়ে এলো। তখন তারা এমন সব কথা বলতে থাকলো যা তারা তিরিশ বছর পর্যন্ত বলেনি। অর্থাৎ মারয়াম আলাইহাস সালাম (নাউযুবিল্লাহ) একজন ব্যভিচারিণী এবং ঈসা ইবনে মারয়াম তার অবৈধ সন্তান। অথচ এই জালেমরা নিশ্চিতভাবেই জানতো, এই মাতা ও পুত্র উভয়েই এই ধরনের কলুষতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। কাজেই তাদের মনে যথার্থই এ ধরনের কোন সন্দেহ পুঞ্জিভূত ছিল না যার ভিত্তিতে তারা এই দোষারোপ করেছিল। এটা ছিল তাদের একটা স্বেচ্ছাকৃত দোষারোপ। জেনে বুঝে নিছক হকের বিরোধিতা করার জন্য তারা তাদের মাতা পুত্রের বিরুদ্ধে এই মিথ্যাটি তৈরী করেছিল। তাই আল্লাহ একে জুলুম ও মিথ্যার পরিবর্তে কুফরী গণ্য করেছেন। কারণ এই দোষারোপের মাধ্যমে তারা আসলে আল্লাহর দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল। একজন নিষ্পাপ ও নিরপরাধ মহিলার বিরুদ্ধে দোষারোপ করা তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না।
কোন জাতি এক ব্যক্তিকে নবী বলে জানার ও মেনে নেয়ার পরও তাকে হত্যা করেছে, আপাতঃ দৃষ্টিতে এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার বলে মনে হয়। কিন্তু দুনিয়ার বিকৃত জাতিদের রীতিনীতি, কাজ-কারবার এমনই বিস্ময়করই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায় ও পাপ কাজের সমালোচনা করে এবং তাদের অবৈধ কাজে বাধা দেয়, এমনকোন ব্যক্তিকে তারা নিজেদের মধ্যে বরদাশ্ত করতে পারে না। নবী হলেও এই ধরনের লোকেরা হামেশা অসৎ, দুশ্চরিত্র ও পাপাচারী জাতিদের হাতে কারাযন্ত্রণা ও মৃত্যুদণ্ড ভোগ করে এসেছেন। তালমুদে লিখিত হয়েছেঃ বখতে নসর বায়তুল মাক্দিস জয় করে সুলাইমানী হাইকেলে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলেন। যে স্থানে কুরবানী করা হয় সে স্থানের ঠিক সামনে দেয়ালে এক জায়গায় তিনি একটি তীরের নিশানী দেখলেন। তিনি ইহুদীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের নিশানী? ইহুদীরা জবাব দিল, “এখানে আমরা যাকারিয়া নবীকে হত্যা করেছিলাম। তিনি আমাদের অসৎকাজের জন্য তিরস্কার করতেন। অবশেষে তার তিরস্কারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা তাকে হত্যা করেছি।” বাইবেলে ইয়ারমিয়াহ নবী সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ বনী ইসরাইলদের অসৎ কর্মসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর হযরত ইয়ারমিয়াহ তাদের এই মর্মে সতর্ক করে দিলেন যে, এসব বদ কাজের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহ অন্য জাতিদের হাতে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন। এর জবাবে তার বিরুদ্ধে দোষারোপ করলোঃ “এই ব্যক্তি ‘কালদানী’ জাতির সাথে হাত মিলিয়েছে, তাদের সাথে যোগসাজশ করেছে। এই ব্যক্তি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” এই অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হলো। এমনকি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের শূলে চড়াবার ঘটনার মাত্র দুই আড়াই বছর পূর্বে হযরত ইয়াহ্ইয়ার (আ) ব্যাপারটি ঘটে গিয়েছিল। ইহুদীরা সাধারণভাবে তাকে নবী বলে জানতো। অন্তত তাকে জাতির সবচাইতে সৎলোক হিসেবে মানতো। কিন্তু যখন তিনি হিরোডিয়াসের (ইহুদী রাষ্ট্র প্রধান) দরবারের অন্যায় ও অসৎকাজের সমালোচনা করলেন তখন আর তাকে বরদাশত করা হলো না। প্রথমে তাকে কারারুদ্ধ করা হলো তারপর রাষ্ট্র প্রধানের প্রেমিকার দাবী অনুযায়ী তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হলো। ইহুদী জাতির এই অতীত রেকর্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর একথা মোটেই বিস্ময়কর মনে হয় না যে, তাদের ধারণা মতে তারা হযরত ঈসা মসীহকে (আ) শূলে চড়াবার পর বুকে ঠুকে একথা বলেছেঃ “আমরা আল্লাহর রসূলকে হত্যা করেছি।”