পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

৩৫৭ আয়াত

২৮ ) এরপর তার সম্প্রদায়ের ওপর আমি আকাশ থেকে কোন সেনাদল পাঠাইনি, সেনাদল পাঠাবার কোন দরকারও আমার ছিল না।
۞ وَمَآ أَنزَلْنَا عَلَىٰ قَوْمِهِۦ مِنۢ بَعْدِهِۦ مِن جُندٍۢ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَمَا كُنَّا مُنزِلِينَ ٢٨
২৯ ) ব্যস, একটি বিস্ফোরণের শব্দ হলো এবং সহসা তারা সব নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। ২৪
إِن كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةًۭ وَٰحِدَةًۭ فَإِذَا هُمْ خَـٰمِدُونَ ٢٩
৩০ ) বান্দাদের অবস্থার প্রতি আফসোস, যে রসূলই তাদের কাছে এসেছে তাঁকেই তারা বিদ্রূপ করতে থেকেছে।
يَـٰحَسْرَةً عَلَى ٱلْعِبَادِ ۚ مَا يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا كَانُوا۟ بِهِۦ يَسْتَهْزِءُونَ ٣٠
৩১ ) তারা কি দেখেনি তাদের পূর্বে কত মানব সম্প্রদায়কে আমি ধ্বংস করেছি এবং তারপর তারা আর কখনো তাদের কাছে ফিরে আসবে না? ২৫
أَلَمْ يَرَوْا۟ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنَ ٱلْقُرُونِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لَا يَرْجِعُونَ ٣١
৩২ ) তাদের সবাইকে একদিন আমার সামনে হাজির করা হবে।
وَإِن كُلٌّۭ لَّمَّا جَمِيعٌۭ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ ٣٢
৩৩ ) এদের ২৬ জন্য নিষ্প্রাণ ভূমি একটি নিদর্শন। ২৭ আমি তাকে জীবন দান করেছি এবং তা থেকে শস্য উৎপন্ন করেছি, যা এরা খায়।
وَءَايَةٌۭ لَّهُمُ ٱلْأَرْضُ ٱلْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَـٰهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّۭا فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ ٣٣
৩৪ ) আমি তার মধ্যে খেজুর ও আংগুরের বাগান সৃষ্টি করেছি এবং তার মধ্যে থেকে ঝরণাধারা উৎসারিত করেছি,
وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّـٰتٍۢ مِّن نَّخِيلٍۢ وَأَعْنَـٰبٍۢ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنَ ٱلْعُيُونِ ٣٤
৩৫ ) যাতে এরা তার ফল ভক্ষণ করে। এসব কিছু এদের নিজেদের হাতের সৃষ্ট নয়। ২৮ তারপরও কি এরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না? ২৯
لِيَأْكُلُوا۟ مِن ثَمَرِهِۦ وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ ۖ أَفَلَا يَشْكُرُونَ ٣٥
৩৬ ) পাক-পবিত্র সে সত্ত্বা ৩০ যিনি সব রকমের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, তা ভূমিজাত উদ্ভিদের মধ্য থেকে হোক অথবা স্বয়ং এদের নিজেদের প্রজাতির (অর্থাৎ মানব জাতি) মধ্য থেকে হোক কিংবা এমন জিনিসের মধ্য থেকে হোক যাদেরকে এরা জানেও না। ৩১
سُبْحَـٰنَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْأَزْوَٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ ٱلْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ ٣٦
৩৭ ) এদের জন্য রাত হচ্ছে আর একটি নিদর্শন। আমি তার উপর থেকে দিনকে সরিয়ে দেই তখন এদের ওপর অন্ধকার ছেয়ে যায়। ৩২
وَءَايَةٌۭ لَّهُمُ ٱلَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ ٱلنَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ ٣٧
.
২৪.
মুল শব্দটি হচ্ছে “নিভে গেল”। এ শব্দের মধ্যে রয়েছে একটি সূক্ষ্ম ব্যাঙ্গ। নিজেদের শক্তির জন্য তাদের অহংকার এবং সত্যদ্বীনের বিরুদ্ধে তাদের সমস্ত ক্ষোভ ও আক্রোশ ছিল যেন একটি জলন্ত অগ্নিশিখা। তারা মনে করছিল, এটি ঐ তিন জন নবী ও তাঁদের অনুসারীদেরকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেবে। কিন্তু আল্লাহ‌র আযাবের একটি আঘাতেই এ অগ্নিশিখা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।
.
২৫.
অর্থাৎ এমন ভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে যে, কোথাও তাদের সামান্যতম চিহ্নও নেই। যে একবার পড়ে গেছে সে আর ওঠেনি। দুনিয়ায় আজ তাদের নাম নেবার মতো একজন লোকও বেঁচে নেই। তাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিই নয়, তাদের বংশধারাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
.
২৬.
মক্কার কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোকাবিলায় অস্বীকার, মিথ্যা আরোপ ও সত্য বিরোধিতার যে কর্মনীতি অবলম্বন করে, পিছনের দু’রুকু’তে তার নিন্দা করা হয়েছে। আর এখন ভাষণের মোড় ফিরে যাচ্ছে মুল বিবাদের দিকে, যা তাদের ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আসল কারণ ছিল। অর্থাৎ তাওহীদ ও আখেরাতের বিশ্বাস, যা নবী করীম ﷺ পেশ করছিলেন এবং কাফেররা মেনে নিতে অস্বীকার করছিল। এ প্রসঙ্গে একের পর এক কয়েকটি যুক্তি উপস্থাপন করে লোকদেরকে এ মর্মে চিন্তা-ভাবনা করার দাওয়াত দেয়া হচ্ছে যে, তোমাদের চোখের সামনে বিশ্ব-জাহানের এই যে, নিদর্শনাবলী প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে, এগুলো কি সত্যটির প্রতি পরিষ্কার অংগুলি নিদর্শন করছে না, যা এ নবী তোমাদের সামনে পেশ করছেন?
২৭.
অর্থাৎ তাওহীদই সত্য এবং শিরক পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
.
.
২৮.
এ বাক্যটির দ্বিতীয় অনুবাদ এও হতে পারে, “যাতে এরা খেতে পারে তার ফল এবং সে জিনিসগুলো, যা এদের নিজেদের হাত তৈরী করে।” অর্থাৎ প্রাকৃতিক উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে এরা নিজেরা যেসব কৃত্রিম খাদ্য তৈরী করে যেমন রুটি, তরকারী, মুরব্বা, আচার চাটনি এবং অন্যান্য অসংখ্য জিনিস।
২৯.
এ সংক্ষিপ্ত বাক্যগুলোতে ভূমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতাকে যুক্তি হিসেবে পেশ করা হয়েছে। মানুষ দিনরাত ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য-ফলমূল খাচ্ছে। তারা নিজেরা একে একটি মামুলি ব্যাপার মনে করে থাকে। কিন্তু গাফলতির পর্দা ছিন্ন করে গভীর দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করলে তারা জানতে পারবে, এ ভূমির আস্তরণ ভেদ করে সবুজ শ্যামল ফসল ও বন-বনানীর সৃষ্টি এবং তার মধ্যে নদ-নদী ও স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হওয়া এমন কোন খেলা নয় যা নিজে নিজেই চলছে। বরং এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি বিরাট জ্ঞান, শক্তি এবং প্রতিপালন ও পরিচালন ব্যবস্থা। পৃথিবীর প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে যেসব উপাদানের সাহায্যে এটি গঠিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আপনা-আপনি বিকাশ, বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি লাভ করার কোন ক্ষমতা নেই। এসব উপাদান এককভাবেও এবং সব রকমের মিশ্রণ ও সংগঠনের পরও থাকে একেবারেই অকেজো ও অনুপযোগী। এ কারণে এদের মধ্যে জীবনের নামমাত্রও নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ নিষ্প্রাণ যমীনের বুক চিরে উদ্ভিদ জীবনের উন্মেষ সম্ভব হলো কেমন করে? এ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালালে জানা যাবে, পূর্বাহ্নেই কয়েকটি বড় বড় কার্যকারণ সংগৃহীত না হলে এ জীবনধারা আদৌ অস্তিত্বলাভই করতে পারতো না।

প্রথমত, পৃথিবীর বিশেষ অংশসমূহে তার উপরিভাগের ভুপৃষ্ঠে এমন অনেক জৈবিক উপাদানের আস্তরণ বিছানো হয়েছে যা উদ্ভিদের খাদ্যে পরিণত হবার উপযোগী হতে পারতো। এ আস্তরণকে নরম রাখা হয়েছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড় তার মধ্যে বিস্তার লাভ করে নিজের খাদ্য আহরণ করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, যমীনের ওপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি সিঞ্চনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে খাদ্য উপাদানসমূহ তার মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এমন পর্যায়ে উপনীত হতে পারে যার ফলে উদ্ভিদের শিকড়সমূহ তা চূষে নিতে সক্ষম হয়।

তৃতীয়ত, ওপরের শূন্যলোকের বায়ু সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বায়ু ঊর্ধ্বলোকের বিপদ-আপদ থেকে যমীনের হেফাজত করে এবং বৃষ্টি পরিবহনের কাজ সম্পাদন করে। এ সঙ্গে এর মধ্যে এমন সব গ্যাসের সমাবেশ ঘটে যা উদ্ভিদের জীবন এবং তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশলাভের জন্য প্রয়োজন।

চতুর্থত, সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এমনভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে যার ফলে উদ্ভিদ তাদের জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় হারে উষ্ণতা এবং অনুকূল পরিবেশ ও মওসূম লাভ করতে পারে।

এ চারটি বড় বড় কার্যকরণ (যেগুলো মূলগতভাবে অসংখ্য আনুষঙ্গিক কার্যকারণের সমষ্টি) সৃষ্টি করে দেয়ার পর উদ্ভিদের অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভবপর হয়। তারপর এ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবার পর উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের বীজ এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যার ফলে যখনই তা উপযোগী জমি, পানি, বাতাস ও মৌসুমের সংস্পর্শে আসে তখনই তার মধ্যে উদ্ভিদ সুলভ জীবনের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও এ বীজের মধ্যে এমন ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে যার ফলে প্রত্যেক উদ্ভিদ প্রজাতির বীজ থেকে অনিবার্যভাবে একই প্রজাতির চারা তার যাবতীয় শ্রেনী স্বাতন্ত্র ও উত্তরাধিকার বৈশিষ্ট্য সহকারে জন্ম নেয়। এর ওপর বাড়তি যে সৃজন কুশলতার অবতারণা করা হয় তা হচ্ছে এই যে, দশ-বিশ বা পঞ্চাশ শ্রেণীর নয় বরং অসংখ্য শ্রেণীর উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয় এবং সেগুলোকে এমনভাবে তৈরী করা হয় যার ফলে তারা অসংখ্য শ্রেণীর পশু ও মানবকূলের খাদ্য, ঔষুধ, পোশাক ও অন্যান্য অগণিত প্রয়োজন পূর্ণ করতে সক্ষম হয়, উদ্ভিদের পরে পৃথিবীর বুকে এ প্রয়োজনগুলো অস্তিত্বলাভের অপেক্ষায় ছিল।

এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা করবে সে যদি হঠকারিতা ও সংকীর্ণ স্বার্থপ্রীতির শিকার না হয় তাহলে তার অন্তর সাক্ষ্য দেবে, এসব কিছু আপনা-আপনি হতে পারে না। এর মধ্যে সুস্পষ্টভাবে একটি জ্ঞানদীপ্ত পরিকল্পনা কাজ করছে। এক্ষেত্রে মওসূমের সম্পর্ক উদ্ভিদের সাথে এবং উদ্ভিদের সম্পর্ক জীব-জন্তু ও মানুষের প্রয়োজনের সাথে চরম স্পর্শকাতরতা ও সূক্ষতা বজায় রেখে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। কোন বুদ্ধি বিবেকবান মানুষ ধারণা করতে পারে না এ ধরনের সর্বব্যাপী সম্পর্ক নিছক ঘটনাক্রমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তারপর এ ব্যবস্থাপনা আবার একথাও প্রমাণ করে যে, এটি বহু প্রভুর কৃতিত্ব হতে পারে না। এটি এমন একজন মাত্র ইলাহর ব্যবস্থাধীনে সম্পাদিত হচ্ছে এবং হতে পারে যিনি মাটি, বাতাস, পানি, সূর্য, উদ্ভিদ, জীব-জন্তু ও মানবজাতি সবার স্রষ্টা ও রব। এদের প্রত্যেকের প্রভু যদি আলাদা আলাদা হতো তাহলে কেমন করে এমনি ধরনের একটি সর্বব্যাপী ও গভীর জ্ঞানময় সম্পর্ক রক্ষাকারী পরিকল্পনা তৈরী হয়ে যাওয়ার এবং লাখো-লাখো কোটি-কোটি বছর পর্যন্ত এমন সুশৃংখলভাবে যথানিয়মে পরিচালিত হবার কথা কল্পনা করা যেতে পারে।

তাওহীদের সপক্ষে এ যুক্তি পেশ করার পর মহান আল্লাহ‌ বলেনঃأَفَلَا يَشْكُرُونَ অর্থাৎ এরা কি এমনই অকৃতজ্ঞ ও নিমকহারাম হয়ে গেছে যে, যে আল্লাহ‌ এদের জীবনের জন্য এ সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করে দিয়েছেন এরা তাঁর শোকরগুজারী করে না এবং তাঁর নিয়ামতগুলো উদরস্থ করে অন্যের শোকরগুজারী করে? তাঁর সামনে মাথা নত করে না এবং তাদের জন্য যে মিথ্যা উপাস্যরা একটি ঘাসও সৃষ্টি করেনি তাদের সামনে মাথা নত করে যষ্ঠাঙ্গ প্রণিপাত করে?

৩০.
অর্থাৎ সব রকমের দোষ-ত্রুটির আবিলতামূক্ত, সব রকমের দুর্বলতা ও ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে তাঁর কোন শরীক ও ভাগীদার আছে এ ধরনের চিন্তা-ভাবনার কোন অবকাশই নেই। মুশরিকদের আকীদা-বিশ্বাস খণ্ডন করে সাধারণভাবে কুরআন মজীদে এ শব্দগুলো এজন্য ব্যবহার করা হয় যে, শিরকের প্রতিটি আকীদা প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ‌র প্রতি কোন না কোন দোষ-ত্রুটি, দুর্বলতা ও ভ্রান্তির অপবাদ। আল্লাহ‌র জন্য শরীক নির্ধারণ করার অর্থই হচ্ছে এই যে, এ ধরনের কথা যে বলে সে আসলে মনে করে আল্লাহ‌ একা তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব পরিচালনার যোগ্যতা রাখেন না অথবা তিনি নিজে তাঁর প্রভুত্বের কর্তৃত্ব পরিচালনায় কাউকে শরীক করতে বাধ্য কিংবা অন্য কতিপয় সত্তা আপনা আপনিই এত বেশী শক্তির অধিকারী হয়ে গেছে যে, তারা প্রভুত্বের ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করছে এবং আল্লাহ‌ তাদের হস্তক্ষেপ বরদাশত করছেন অথবা নাউযুবিল্লাহ তিনি মানব বংশজাত রাজা-বাদশাহদের মতো দুর্বলতার অধিকারী, যে কারণে মন্ত্রী, পরিষদবর্গ, মোসাহেব ও প্রিয় শাহজাদা ও শাহজাদীদের একটি বিরাট দলের দ্বারা তিনি ঘেরাও হয়ে আছেন এবং আল্লাহ‌র সার্বভৌম কর্তৃত্বের বহু ক্ষমতা তাদের মধ্যে বন্টিত হয়ে গেছে। আল্লাহ‌ সম্পর্কে এ জাহেলী ধ্যান-ধারণা যদি চিন্তা-চেতনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকতো, তাহলে আদতে শিরকের চিন্তার জন্মই হতে পারতো না। তাই কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে, মুশরিকরা আল্লাহ‌র সাথে যেসব দোষ, অভাব ও দুর্বলতা সম্পৃক্ত করে, আল্লাহ‌ তা থেকে মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র।
৩১.
এটি তাওহীদের সপক্ষে আরো একটি যুক্তি। এখানে আবার পূর্ব থেকে উপস্থিত সত্যগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটিকে নিয়ে একথা বলা হচ্ছে যে, দিনরাত তোমরা যেসব জিনিস স্বচক্ষে দেখে চলছো এবং কোন প্রকার ভাবনা-চিন্তা না করেই এমনিই সামনের দিকে এগিয়ে চলে যেতে থাকো সেগুলোর মধ্যেই সত্যের সন্ধান দেবার মতো নিদর্শনাবলী রয়ে গেছে। নারী ও পুরুষের জুটি তো মানুষের নিজের জন্মের উৎস। জীব-জন্তুর বংশধারাও পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় পশুর মিলনের সাহায্যেই এগিয়ে চলছে। উদ্ভিদ সম্পর্কেও মানুষ জানে, তাদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের জুড়ি বাঁধার নীতি কার্যকর রয়েছে। এমনকি নিষ্প্রাণ জড় বস্তুর মধ্যেও দেখা যায় বিভিন্ন বস্তু যখন একটা অন্যটার সাথে যুথবদ্ধ হয় তখনই তাদের থেকে নানা প্রকার যৌগিক পদার্থ অস্তিত্ব লাভ করে। স্বয়ং পদার্থের মৌলিক গঠন ঋণাত্মক ও ধনাত্মক বৈদ্যুতিক শক্তির সংযোগেই সম্পন্ন হয়েছে। এ যুথিবদ্ধতা, যার মধ্যে এ সমগ্র বিশ্ব-জাহান অস্তিত্ব লাভ করেছে, প্রজ্ঞা ও সৃষ্টি কুশলতার এমন সব সূক্ষ্মতা ও জটিলতার অধিকারী এবং তার মধ্যে প্রতিটি জোড়ায় সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষের মধ্যে এমনসব সম্পর্ক পাওয়া যায়, যার ফলে স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী কোন ব্যক্তি এ জিনিসটিকে একটি আকস্মিক ঘটনাচক্র বলতে পারেন না। আবার একথা মেনেও নিতে পারেন না যে, বিভিন্ন ইলাহ এসব অসংখ্য জোট সৃষ্টি করে এদের মধ্যে এ ধরনের বুদ্ধিমত্তা সহকারে জুড়ি বেঁধে দিয়ে থাকবেন। পুরুষ ও স্ত্রীর পরস্পরের জুড়ি হওয়া এবং তাদের জুড়ি হবার ফলে নতুন জিনিসের সৃষ্টি হওয়া স্বয়ং স্রষ্টার একত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ।
৩২.
দিন-রাত্রির আসা-যাওয়াও পূর্ব থেকে উপস্থিত সত্যগুলোর অন্যতম। স্বাভাবিকভাবে দুনিয়ায় এগুলো নিয়মিত ঘটে চলেছে বলে নিছক এজন্য মানুষ এগুলোর প্রতি মনোযোগ দেবার প্রয়োজন বোধ করে না। অথচ যদি দিন কেমন করে আসে, রাত কেমন করে অতিবাহিত হয় এবং দিনের চলে যাওয়ার ও রাতের ফিরে আসার মধ্যে কি কি বিজ্ঞতা ও কৌশল সক্রিয় রয়েছে সে সম্পর্কে সে চিন্তা-ভাবনা করতো তাহলে নিজেই অনুভব করতো যে, এটি একজন শক্তিশালী ও জ্ঞানবান রবের অস্তিত্ব এবং তাঁর একত্বের উজ্জ্বল প্রমাণ। পৃথিবীর সামনে থেকে সূর্যের সরে না যাওয়া পর্যন্ত কখনো দিনের বিদায় ও রাতের আগমন হতে পারে না। দিনের সরে যাওয়া এবং রাতের আগমনের মধ্যে যে চরম নিয়মানুবর্তিতা পাওয়া যায় তা সূর্য ও পৃথিবীকে একই অপরিবর্তনশীল বিধানের আওতায় আবদ্ধ না রেখে সম্ভবপর ছিল না। তারপর এ রাত ও দিনের আসা-যাওয়ার যে গভীর সম্পর্ক পৃথিবীর সৃষ্ট জীবকুলের সাথে পাওয়া যায় তা পরিষ্কারভাবে একথাই প্রমাণ করে যে, চরম বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা সহকারে কোন সত্ত্বা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পৃথিবীর বুকে মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব, বরং এখানে পানি, হাওয়া ও বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যের অস্তিত্বও আসলে পৃথিবীকে সূর্য থেকে একটি বিশেষ দূরত্বে অবস্থান করাবার এবং তারপর পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের একটি ধারাবাহিকতা সহকারে নির্ধারিত বিরতির পর সূর্যের সামনে আসার এবং তার সামনে থেকে সরে যেতে থাকার ফল। যদি পৃথিবীর দূরত্ব সূর্য থেকে খুব কম বা বেশী হতো অথবা তার এক অংশে সবসময় রাত ও অন্য অংশে সব সময় দিন থাকতো কিংবা দিন-রাত্রির পরিবর্তন অতি দ্রুত বা অতি শ্লথ গতিতে হতো অথবা নিয়ম বহির্ভূতভাবে হঠাৎ কখনো দিনের উদয় হতো আবার কখনো রাত ঢেকে ফেলতো, তাহলে এ পৃথিবীতে কোন জীবনের অস্তিত্ব লাভ সম্ভবপর হতো না। শুধু তাই নয় বরং এ অবস্থায় নিষ্প্রাণ পদার্থসমূহের আকার-আকৃতিও তাদের বর্তমান আকৃতি থেকে ভিন্নতর হতো। অন্তরের চোখ যদি বন্ধ করে না রাখা হয়, তাহলে মানুষ এ ব্যবস্থার মধ্যে এমন এক আল্লাহর কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করতে পারে যিনি এ পৃথিবীর বুকে এ বিশেষ ধরনের সৃষ্ট জীবকুলকে অস্তিত্ব দান করার সংকল্প করেন এবং তাদের যথাযথ প্রয়োজন অনুসারে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন। আল্লাহ‌র অস্তিত্ব ও তাঁর একত্ব যদি কোন ব্যক্তির দৃষ্টিতে বুদ্ধি বিরোধী হয়ে থাকে তাহলে সে নিজেই চিন্তা করে বলুক, এ কলা-কৌশলকে বহু ইলাহর সাথে সংশ্লিষ্ট করা অথবা কোন অন্ধ ও বধির প্রাকৃতিক আইনের আওতায় আপনা-আপনিই এসব কিছু হয়ে গেছে বলে মনে করা কতদূর বুদ্ধি বিরোধী হওয়া উচিত। যে ব্যক্তি কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়াই শুধুমাত্র আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে একেবারেই অযৌক্তিক এ শেষোক্ত ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারে, সে যখন বলে, বিশ্ব-জাহানে আইন-শৃংখলা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও উদ্দেশ্যমুখীনতার সন্ধান পাওয়া আল্লাহ‌র অস্তিত্বের প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়, তখন আমাদের জন্য একথা মেনে নেয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় যে, যথার্থই এ ব্যক্তি কোন মতবাদ বা বিশ্বাসকে স্বীকার করে নেবার জন্য কোন পর্যায়েরও যথেষ্ট বা অযথেষ্ট যৌক্তিক সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন অনুভব করে।
অনুবাদ: