পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

৩৯৯ আয়াত

৫৭ ) আমি তোমাদের ২২ সৃষ্টি করেছি। এরপরও কেন তোমরা মানছো না? ২৩
نَحْنُ خَلَقْنَـٰكُمْ فَلَوْلَا تُصَدِّقُونَ ٥٧
৫৮ ) তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যে শুক্র তোমরা নিক্ষেপ করো
أَفَرَءَيْتُم مَّا تُمْنُونَ ٥٨
৫৯ ) তা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি তোমরা করো, না তার স্রষ্টা আমি? ২৪
ءَأَنتُمْ تَخْلُقُونَهُۥٓ أَمْ نَحْنُ ٱلْخَـٰلِقُونَ ٥٩
৬০ ) আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যুকে বন্টন করেছি। ২৫
نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ ٱلْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوقِينَ ٦٠
৬১ ) তোমাদের আকার আকৃতি পাল্টে দিতে এবং তোমাদের অজানা কোন আকার-আকৃতিতে সৃষ্টি করতে আমি অক্ষম নই। ২৬
عَلَىٰٓ أَن نُّبَدِّلَ أَمْثَـٰلَكُمْ وَنُنشِئَكُمْ فِى مَا لَا تَعْلَمُونَ ٦١
৬২ ) নিজেদের প্রথমবার সৃষ্টি সম্পর্কে তোমরা জান। তবুও কেন শিক্ষা গ্রহণ করোনা। ২৭
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ ٱلنَّشْأَةَ ٱلْأُولَىٰ فَلَوْلَا تَذَكَّرُونَ ٦٢
৬৩ ) তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যে বীজ তোমরা বপন করে থাকো
أَفَرَءَيْتُم مَّا تَحْرُثُونَ ٦٣
৬৪ ) তা থেকে ফসল উৎপন্ন তোমরা করো, না আমি? ২৮
ءَأَنتُمْ تَزْرَعُونَهُۥٓ أَمْ نَحْنُ ٱلزَّٰرِعُونَ ٦٤
৬৫ ) আমি চাইলে এসব ফসলকে দানাবিহীন ভূষি বানিয়ে দিতে পারি। তখন তোমরা নানা রকমের কথা বলতে থাকবে।
لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَـٰهُ حُطَـٰمًۭا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُونَ ٦٥
৬৬ ) বলবে আমাদেরকে তো উল্টা জরিমানা দিতে হলো।
إِنَّا لَمُغْرَمُونَ ٦٦
২২.
এখান থেকে ৭৪ আয়াতে যে যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে তাতে একই সাথে আখেরাত ও তাওহীদ উভয় বিষয়েই যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। মক্কার মানুষেরা যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার এ দু’টি মৌলিক বিষয়ের প্রতিবাদ করেছিলো তাই এখানে এমনভাবে যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে যা দ্বারা আখেরাত প্রমাণিত হয় এবং তাওহীদের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
২৩.
অর্থাৎ আমিই যে তোমাদের রব ও উপাস্য এবং আমি পুনরায় তোমাদের সৃষ্টি করতে পারি এ কথা মেনে নেয়া।
.
২৪.
ছোট্ট এ বাক্যে মানুষের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন রাখা হয়েছে। পৃথিবীর অন্য সব জিনিস বাদ দিয়ে মানুষ যদি শুধু এই একটি বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতো যে, সে নিজে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তাহলে কুরআনের একত্ববাদী শিক্ষায়ও তার কোন সন্দেহ-সংশয় থাকতো না, তার আখেরাত সম্পর্কিত শিক্ষায়ও কোন সন্দেহ-সংশয় থাকতো না। মানুষের জন্ম পদ্ধতি তো এছাড়া আর কিছুই নয় যে, পুরুষ তার শুক্র নারীর গর্ভাশয়ে পৌঁছে দেয় মাত্র। কিন্তু ঐ শুক্রের মধ্যে কি সন্তান সৃষ্টি করার এবং নিশ্চিত রূপে মানুষের সন্তান সৃষ্টি করার যোগ্যতা আপনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে? অথবা মানুষ নিজে সৃষ্টি করেছে? কিংবা আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ সৃষ্টি করেছে? অথবা এই শুক্র দ্বারা গর্ভে মানুষ সৃষ্টি করে দেয়া কি কোন পুরুষ অথবা কোন নারী কিংবা দুনিয়ার কোন শক্তির ইখতিয়ারে? তারপর গর্ভের সূচনা থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত মায়ের পেটে ক্রমান্নয়ে সৃষ্টি ও লালন করা এবং প্রতিটি শিশুকে স্বতন্ত্র আকৃতি দান করা, প্রতিটি শিশুর মধ্যে একটি বিশেষ অনুপাতে মানসিক ও দৈহিক শক্তি দান করা যার সাহায্যে সে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে---এটা কি এক আল্লাহ ছাড়া আর করো কাজ? এতে কি আর কারো সামান্যতম দখলও আছে? পিতা-মাতা নিজে কি একাজ করে থাকে? না কোন ডাক্তার এ কাজ করে? না কি নবী-রসূল ও আওলিয়াগণ এ কাজ করে থাকেন---যারা এই একই পন্থায় জন্মলাভ করেছেন? না কি সূর্য, চাঁদ, তারকারাজি, এ কাজ করে থাকে---যারা নিজেরাই একটি নিয়ম-নীতির নিগড়ে বাঁধা? নাকি সেই প্রকৃতি (Nature) একাজ করে যা নিজে কোন জ্ঞান, কলাকৌশল, ইচ্ছা ও ইখতিয়ার রাখে না? তাছাড়া সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে, সুশ্রী হবে না কদাকার, শক্তিশালী হবে না দুর্বল, অন্ধ, কালা, খোঁড়া ও প্রতিবন্ধী হবে না সুস্থ অংগ-প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট এবং মেধাবী হবে না মেধাহীন---সে সিদ্ধান্ত কি আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ারে? তাছাড়া জাতিসমূহের ইতিহাসে কখন কোন জাতির মধ্যে কোন কোন ভাল বা মন্দ গুণের অধিকারী লোক সৃষ্টি করতে হবে যারা সে জাতিকে উন্নতির শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছিয়ে দেবে কিংবা অধঃপতনের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করবে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কি সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে? কেউ যদি এক গুঁয়েমি ও হঠকারীতায় লিপ্ত না হয় তাহলে সে উপলব্ধি করতে পারবে যে, শিরক ও নাস্তিকতার ভিত্তিতে এসব প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত জওয়াব দেয়া সম্ভব নয়। এর যুক্তিসঙ্গত জওয়াব একটাই। তা হচ্ছে, মানুষ পুরোপুরি আল্লাহর সৃষ্টি। আর প্রকৃত সত্য যখন এই তখন আল্লাহর সৃষ্টি এই মানুষের তার আল্লাহর মোকাবিলায় স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার দাবী করার কিংবা তাঁর ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করার কি অধিকার আছে?

তাওহীদের মত আখেরাতের ব্যাপারেও এ প্রশ্ন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানকারী। এমন একটি ক্ষুদ্র কীট থেকে মানুষের জন্মের সূচনা হয় যা শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখাই যায় না। এক সময় এই কীট নারী দেহের গভীর অন্ধকারে ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয় ঐ ডিম্বানুও আবার অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দৃষ্টিগোচর হওয়ার মত নয়। এ দু’য়ের সংযুক্তি দ্বারা একটি অতি ক্ষুদ্র জীবন্ত কোষ (cell) সৃষ্টি হয়। এটিই মানব জীবনের সূচনা বিন্দু। এ কোষটিও এত ক্ষুদ্র হয় যে, অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া তা দেখা যায় না। মাতৃগর্ভে অতি ক্ষুদ্র এ কোষের প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে আল্লাহ তায়ালা ৯ মাসের কিছু বেশী সময়ের মধ্যে তাকে একটি পূর্ণ মানুষ রূপ দান করেন। তার গঠন ও নির্মাণ পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে হৈ চৈ করে দুনিয়া মাতিয়া তোলার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে মায়ের দেহই তাকে ঠেলে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। সমস্ত মানুষ এভাবেই পৃথিবীতে এসেছে এবং তাদের মত মানুষের জন্ম গ্রহণের এই দৃশ্যই রাত দিন দেখছে। তা সত্ত্বেও কোন বিবেকহীন ব্যক্তিই শুধু বলতে পারে, যে আল্লাহ বর্তমানে এভাবে মানুষকে সৃষ্টি করছেন তিনি তাঁর সৃষ্ট এসব মানুষকে পুনরায় অন্য কোন পদ্ধতিতে সৃষ্টি করতে পারবেন না।

২৫.
অর্থাৎ তোমাদেরকে সৃষ্টি করা যেমন আমার ইখতিয়ারে। তেমনি তোমাদের মৃত্যুও আমার ইখতিয়ারে। কে মাতৃগর্ভে মারা যাবে, কে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র মারা যাবে এবং কে কোন বয়সে উপনীত হয়ে মারা যাবে সে সিদ্ধান্ত আমিই নিয়ে থাকি। যার মৃত্যুর জন্য আমি যে সময় ঠিক করে দিয়েছি তার পূর্বে দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে মারতে পারে না এবং সে সময়ের পর কেউ তাকে এক মুহূর্ত জীবিত রাখতেও পারে না। যাদের মৃত্যুর সময় হাজির হয় তারা বড় বড় হাসপাতালে বড় বড় ডাক্তারের চোখের সামনে মৃত্যুরবণ করে। এমনকি ডাক্তার নিজেও তার মৃত্যুর সময় মরে যায়। কেউ কখনো মৃত্যুর সময় জানতে পারেনি, ঘনিয়ে আসা মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে পারেনি, কার মৃত্যু কিসের মধ্যে কখন কোথায় কিভাবে সংঘটিত হবে তাও কেউ জানে না।
২৬.
অর্থাৎ বর্তমান আকার-আকৃতিতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করতে আমি যেমন অক্ষম হই নাই। তেমনি তোমাদের সৃষ্টি পদ্ধতি পরিবর্তন করে অন্য আকার-আকৃতিতে ভিন্ন প্রকৃতির গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে তোমাদের সৃষ্টি করতেও আমি অক্ষম নই। বর্তমানে আমি তোমাদের সৃষ্টি করি এভাবে যে, তোমাদের শুক্র নারীর গর্ভাশয়ে স্থিতি লাভ করে এবং সেখানে ক্রমান্বয়ে প্রবৃদ্ধি লাভ করে একটি শিশুর আকারে তা বেরিয়ে আসে। সৃষ্টির এই পদ্ধতিও আমার নির্ধারিত। সৃষ্টির ধরাবাঁধা এই একটা নিয়মই শুধু আমার কাছে নেই যে, এটি ছাড়া অন্য কোন নিয়ম-পদ্ধতি আমি জানি না বা কার্যকরী করতে পারি না। যে বয়সে তোমাদের মৃত্যু হয়েছিল কিয়ামতের দিন ঠিক সেই বয়সের মানুষের আকৃতি দিয়েই আমি তোমাদের সৃষ্টি করতে পারি। বর্তমানে আমি তোমাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ শক্তি ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের এক রকমের পরিমাপ রেখেছি। কিন্তু আমার কাছে মানুষের জন্য এই একটি মাত্র পরিমাপই নেই যে, আমি তা পরিবর্তন করতে পারি না। আমি কিয়ামতের দিন তা পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের কিছু করে দেব। ফলে তোমরা এখানে যা দেখতে ও শুনতে পাও না তা দেখতে ও শুনতে পাবে। এখন তোমাদের শরীরের চামড়া, তোমাদের হাত পা এবং তোমাদের চোখের কোন বাক শক্তি নেই। কিন্তু মুখকে বলার শক্তি তো আমিই দিয়েছি। কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং তোমাদের গাত্র চর্মের প্রতিটি অংশ আমার আদেশে কথা বলবে। এ ব্যবস্থা করতে আমি অক্ষম নই। বর্তমানে তোমরা একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাক এবং তারপর মৃত্যুবরণ কর। তোমাদের এ জীবন মৃত্যুও আমার নির্ধারিত একটি বিধানের অধীনে হয়ে থাকে। তোমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যতে আমি অন্য আরেকটি বিধান বানাতে সক্ষম যার অধীনে তোমাদের কখনো মৃত্যু হবে না। বর্তমানে তোমরা একটা বিশেষ মাত্রা পর্যন্ত আযাব সহ্য করতে পার। তার চেয়ে অধিক আযাব দেয়া হলে তোমরা জীবিত থাকতে পার না। এ নিয়ম বিধানও আমারই তৈরী। ভবিষ্যতে আমি তোমাদের জন্য আর একটি আইন-বিধান তৈরী করতে পারি যার অধীনে তোমরা এত দীর্ঘকাল পর্যন্ত এরকম আযাব ভোগ করতে সক্ষম হবে যে, তার কল্পনাও তোমরা করতে পার না। কঠোর থেকে কঠোরতর আযাব ভোগ করেও তোমাদের মৃত্যু হবে না। আজ তোমরা ভাবতেও পার না যে, কোন বৃদ্ধ যুবক হয়ে যেতে পারে, কেউ রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারে কিংবা কেউ মোটেই বার্ধক্যে উপনীত হবে না এবং চিরদিন একই বয়সের যুবক থাকবে। কিন্তু এখানে যৌবনের পরে বার্ধক্য আসে আমার দেয়া নিয়ম বিধান অনুসারেই। ভবিষ্যতে তোমাদের জীবনের জন্য আমি এমন ভিন্ন নিয়ম-বিধান বানাতে সক্ষম, যার আওতায় জান্নাতে প্রবেশ মাত্র বৃদ্ধ যুবকে পরিণত হবে এবং তার যৌবন ও সুস্থতা অটুট ও অবিনশ্বর হবে।
২৭.
অর্থাৎ কিভাবে তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল তা তোমরা অবশ্যই জান। যে শুক্র দ্বারা তোমাদের অস্তিত্বের সূচনা হয়েছে তা পিতার মেরুদণ্ড থেকে কিভাবে স্থানান্তরিত হয়েছিল, মায়ের গর্ভাশয় যা কবরের অন্ধকার থেকে কোন অংশে কম অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল না তার মধ্যে কিভাবে পর্যায়ক্রমে তোমাদের বিকাশ ঘটিয়ে জীবিত মানুষে রূপান্তরিত করা হয়েছে, কিভাবে একটি অতি ক্ষুদ্র পরমাণু সদৃশ কোষের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ সাধন করে এই মন-মগজ, এই চোখ কান ও এই হাত পা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বুদ্ধি ও অনুভূতি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, শিল্প জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তি, ব্যবস্থাপনা ও অধীনস্ত করে নেয়ার মত বিস্ময়কর যোগ্যতাসমূহ দান করা হয়েছে। এটা কি মৃতদের জীবিত করে উঠানোর চেয়ে কম অলৌকিক ও কম বিস্ময়কর? এসব বিস্ময়কর ব্যাপার তোমরা যখন নিজের চোখেই দেখছো এবং নিজেরাই তার জ্বলন্ত সাক্ষী হিসেবে বর্তমান আছ, তখন তা থেকে এ শিক্ষা কেন গ্রহণ করছো না যে, আল্লাহর যে অসীম শক্তিতে দিন রাত এসব মু’জিযা সংঘটিত হচ্ছে তাঁর ক্ষমতাই মৃত্যুর পরের জীবন, হাশর নাশর এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মত মু’জিযাও সংঘটিত হতে পারে?
.
২৮.
উপরে উল্লেখিত প্রশ্ন এ সত্যের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল যে, তোমরা তো আল্লাহ তা’আলার গড়া। তিনি সৃষ্টি করেছেন বলে তোমরা অস্তিত্ব লাভ করছো। এখন এই দ্বিতীয় প্রশ্নটি দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তা হচ্ছে, যে রিযিকে তোমরা প্রতিপালিত হচ্ছো তাও আল্লাহই সৃষ্টি করে থাকেন। তোমাদের সৃষ্টির ক্ষেত্রে মানুষের কর্তৃত্ব ও প্রচেষ্টা এর অধিক আর কিছুই নয় যে, তোমাদের পিতা তোমাদের মায়ের দেহাভ্যন্তরে এক ফোঁটা শুক্র নিক্ষেপ করে। অনুরূপ তোমাদের রিযিক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও মানুষের প্রচেষ্টা জমিতে বীজ বপনের বেশী আর কিছুই নয়। যে জমিতে এই চাষাবাদ করা হয় তাও তোমাদের তৈরী নয়। এই জমিতে উর্বরা শক্তি তোমরা দান কর নাই। ভূমির যে উপাদান দ্বারা তোমাদের খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা হয় তা তোমরা সরবরাহ কর নাই। তোমরা জমিতে যে বীজ বপন কর তাকে প্রবৃদ্ধির উপযুক্ত তোমরা বানাও নাই। ঐগুলো যে গাছের বীজ তার প্রতিটি থেকে ঐ একই প্রজাতির গাছ ফুটে বের হওয়ার যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য তোমরা সৃষ্টি কর নাই। সেই ভূমিকে বাতাসে ঢেউ খেলা শ্যামল শস্য ক্ষেত্রে পরিণত করার জন্য ভূমির অভ্যন্তরে যে ক্রিয়া-প্রক্রিয়া এবং ভূমির উপরিভাগে যে বাতাস, পানি, উষ্ণতা, আর্দ্রতা ও মৌসূমী পরিবেশ প্রয়োজন তার কোনটিই তোমাদের কোন তদবীর বা ব্যবস্থাপনার ফল নয়। এর সব কিছুই আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও প্রতিপালক হওয়ার বিস্ময়কর কীর্তি। অতএব তোমরা যখন তাঁর সৃষ্টি করার কারণে অস্তিত্ব লাভ করছো এবং তাঁরই দেয়া রিযিকে প্রতিপালিত হচ্ছো তখন তাঁর নির্দেশের বাইরে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করার কিংবা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব ও আনুগত্য করার অধিকার তোমরা কি করে লাভ করো?

এ আয়াতের যুক্তি প্রমাণ বাহ্যিকভাবে তাওহীদের স্বপক্ষে। তবে এতে যে বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে সে বিষয়ে কেউ আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলেই এর মধ্যে আখেরাতের প্রমাণও পেয়ে যাবে। জমিতে যে বীজ বপন করা হয় তা মৃত বস্তু ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু কৃষক তাকে মাটির করবে দাফন করার পর আল্লাহ তা’আলা তার মধ্যে জীবন সৃষ্টি করেন। তা থেকে অঙ্কুরোদগম হয় এবং সবুজ-শ্যামল শষ্য ক্ষেত্রের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পরিদৃষ্ট হয়। আমাদের চোখের সামনে প্রতিদিন হাজার হাজার মৃত এভাবে কবর থেকে জীবিত হয়ে উঠছে। এটা কি কোন অংশ কম বিস্ময়কর মু’জিযা যে, মানুষের মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া সম্পর্কে কুরআন আমাদেরকে যে খবর দিচ্ছে সে মু’জিযাকে অসম্ভব মনে করবো?

.
.
অনুবাদ: