পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

৩৫৭ আয়াত

৫ ) তিনি আসমান ও যমীনকে যুক্তিসঙ্গত ও বিজ্ঞোচিতভাবে সৃষ্টি করেছেন। ১০ তিনিই দিনের প্রান্তসীমায় রাতকে এবং রাতের প্রান্তসীমায় দিনকে জড়িয়ে দেন। তিনি সুর্য ও চাঁদকে এমনভাবে অনুগত করেছেন যে, প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গতিশীল আছে। জেনে রাখো, তিনি মহা পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। ১১
خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ ٱلَّيْلَ عَلَى ٱلنَّهَارِ وَيُكَوِّرُ ٱلنَّهَارَ عَلَى ٱلَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ كُلٌّۭ يَجْرِى لِأَجَلٍۢ مُّسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفَّـٰرُ ٥
৬ ) তিনি তোমাদের একটি প্রাণী থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়াও সৃষ্টি করেছেন। ১২ আর তিনিই তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তুর আট জোড়া নর ও মাদি সৃষ্টি করেছেন। ১৩ তিনি তোমাদেরকে মায়ের গর্ভে তিন তিনটে অন্ধকার পর্দার অভ্যন্তরে একের পর এক আকৃতি দান করে থাকেন। ১৪ এ আল্লাহই (যার এ কাজ) তোমাদের ‘রব’ ১৫ তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, ১৬ তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, ১৭ তা সত্ত্বেও তোমাদেরকে কোন্‌দিকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১৮
خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍۢ وَٰحِدَةٍۢ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ ٱلْأَنْعَـٰمِ ثَمَـٰنِيَةَ أَزْوَٰجٍۢ ۚ يَخْلُقُكُمْ فِى بُطُونِ أُمَّهَـٰتِكُمْ خَلْقًۭا مِّنۢ بَعْدِ خَلْقٍۢ فِى ظُلُمَـٰتٍۢ ثَلَـٰثٍۢ ۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ ٱلْمُلْكُ ۖ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ ٦
৭ ) যদি তোমরা কুফরী করো তাহলে আল্লাহ‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। ১৯ কিন্তু তিনি তাঁর বান্দার জন্য কুফরী আচরণ পছন্দ করেন না। ২০ আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন। ২১ আর কেউ-ই অপর কারো গোনাহের বোঝা বহন করবে না। ২২ অবশেষে তোমাদের সবাইকে তোমাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি জানাবেন তোমরা কি করছিলে। তিনি মনের খবর পর্যন্ত জানেন।
إِن تَكْفُرُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنكُمْ ۖ وَلَا يَرْضَىٰ لِعِبَادِهِ ٱلْكُفْرَ ۖ وَإِن تَشْكُرُوا۟ يَرْضَهُ لَكُمْ ۗ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌۭ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ۚ إِنَّهُۥ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ٧
৮ ) মানুষের ওপর যখন কোন বিপদ আসে ২৩ তখন সে তার রবের দিকে ফিরে যায় এবং তাঁকে ডাকে। ২৪ কিন্তু যখন তার রব তাকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ইতিপূর্বে যে বিপদে পড়ে তাঁকে ডাকছিলো ২৫ তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করতে থাকে ২৬ যাতে তারা আল্লাহর পথ থেকে তাকে গোমরাহ করে। ২৭ (হে নবী! ) তাকে বলো, তোমার কুফরী দ্বারা অল্প কিছুদিন মজা করে নাও। নিশ্চিতভাবেই তুমি দোজখে যাবে।
۞ وَإِذَا مَسَّ ٱلْإِنسَـٰنَ ضُرٌّۭ دَعَا رَبَّهُۥ مُنِيبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهُۥ نِعْمَةًۭ مِّنْهُ نَسِىَ مَا كَانَ يَدْعُوٓا۟ إِلَيْهِ مِن قَبْلُ وَجَعَلَ لِلَّهِ أَندَادًۭا لِّيُضِلَّ عَن سَبِيلِهِۦ ۚ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيلًا ۖ إِنَّكَ مِنْ أَصْحَـٰبِ ٱلنَّارِ ٨
৯ ) (এ ব্যক্তির আচরণই সুন্দর না সে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর) যে অনুগত, রাতের বেলা দাঁড়ায় ও সিজদা করে, আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে? এদের জিজ্ঞেস করো যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে? ২৮ কেবল বিবেক-বুদ্ধির অধিকারীরাই উপদেশ গ্রহণ করে।
أَمَّنْ هُوَ قَـٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيْلِ سَاجِدًۭا وَقَآئِمًۭا يَحْذَرُ ٱلْـَٔاخِرَةَ وَيَرْجُوا۟ رَحْمَةَ رَبِّهِۦ ۗ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى ٱلَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُو۟لُوا۟ ٱلْأَلْبَـٰبِ ٩
১০ ) [হে নবী, (সা.)] বলো, হে আমার সেসব বান্দা যারা ঈমান গ্রহণ করেছো তোমাদের রবকে ভয় করো। ২৯ যারা এ পৃথিবীতে সদাচরণ গ্রহণ করেছে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ ৩০ আর আল্লাহর পৃথিবী তো অনেক বড়। ৩১ ধৈর্যশীলদেরকে তো অঢেল পুরস্কার দেয়া হবে। ৩২
قُلْ يَـٰعِبَادِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ رَبَّكُمْ ۚ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا۟ فِى هَـٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةٌۭ ۗ وَأَرْضُ ٱللَّهِ وَٰسِعَةٌ ۗ إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّـٰبِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍۢ ١٠
১১ ) (হে নবী!) এদের বলো, আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যেন আমি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহরই দাসত্ব করি।
قُلْ إِنِّىٓ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ ٱللَّهَ مُخْلِصًۭا لَّهُ ٱلدِّينَ ١١
১২ ) আমাকে এ আদেশও দেয়া হয়েছে যেন আমি সবার আগে মুসলমান হই। ৩৩
وَأُمِرْتُ لِأَنْ أَكُونَ أَوَّلَ ٱلْمُسْلِمِينَ ١٢
১৩ ) বলো, আমি যদি আমার রবের অবাধ্য হই তাহলে আমার একটি ভয়ানক দিনের ভয় আছে।
قُلْ إِنِّىٓ أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّى عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍۢ ١٣
১৪ ) বলে দাও, আমি আনুগত্যসহ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহরই দাসত্ব করবো।
قُلِ ٱللَّهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًۭا لَّهُۥ دِينِى ١٤
১০.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইবরাহীম, টীকা ২৬ ; আন নাহল ; টীকা ৬ ; আল আনকাবূত, টীকা ৭৫।
১১.
অর্থাৎ এমন মহাপরাক্রমশালী যে, তিনি যদি তোমাদের আযাব দিতে চান তাহলে কোন শক্তিই তা রোধ করতে সক্ষম নয়। কিন্তু এটা তাঁর মেহেরবানী যে তোমরা এসব অপরাধ ও অবমাননা করা সত্ত্বেও তখনই তোমাদের পাকড়াও করছেন না, বরং একের পর এক অবকাশ দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা এবং অবকাশ দেয়াকে ক্ষমা (দেখেও না দেখা) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১২.
একথার অর্থ এ নয় যে, প্রথমে হযরত আদম থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং পরে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে বক্তব্যের মধ্যে সময়ের পরম্পরার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বর্ণনার পরম্পরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভাষায়ই এ ধরনের দৃষ্টান্ত বর্তমান। যেমনঃ আমরা বলি তুমি আজ যা করেছো তা জানি এবং গতকাল যা করেছো তাও আমার জানা আছে। এ ধরনের বর্ণনার অর্থ এ নয় যে, গতকালের ঘটনা আজকের পরে সংঘটিত হয়েছে।
১৩.
গবাদি পশু অর্থ উট, গরু, ভেড়া, বকরী। এ চারটি নর ও চারটি মাদি মিলে মোট আটটি নর ও মাদি হয়।
১৪.
তিনটি পর্দা অর্থ পেট, গর্ভথলি এবং ঝিল্লি (সে ঝিল্লি যার মধ্যে বাচ্চা জড়িয়ে থাকে)।
১৫ .
অর্থাৎ মালিক, শাসক ও পালনকর্তা।
১৬ .
অর্থাৎ সমস্ত ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের মালিক তিনিই। গোটা বিশ্ব-জাহান তার হুকুমেই চলছে।
১৭.
অন্যকথায় এখানে যুক্তি পেশ করা হচ্ছে যে, তিনিই যখন তোমাদের প্রভু এবং সমস্ত রাজত্ব তাঁরই তখন নিশ্চিতভাবে তোমাদের ইলাহও (উপাস্য) তিনিই। অন্য কেউ কি করে ইলাহ হতে পারে যখন প্রতিপালনের ক্ষেত্রে তার কোন অংশ নেই এবং রাজত্বের ক্ষেত্রেও তার কোন দখল নেই। তোমাদের বিবেক-বুদ্ধির কাছে একথা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে যে, যমীন-আসমানের সৃষ্টিকর্তা হবেন আল্লাহ‌ এবং সূর্য ও চন্দ্রকে আনুগত্য গ্রহণকারী আর রাতের পর দিন ও দিনের পর রাত আনায়নকারীও হবেন আল্লাহ। তাছাড়া তোমাদের নিজেদের এবং সমস্ত জীব-জন্তুর স্রষ্টা ও পালনকর্তাও হবেন আল্লাহ‌ অথচ তোমাদের উপাস্য হবে তিনি ছাড়া অন্যরা?
১৮.
একথাটি চিন্তা করে দেখার মত। এখানে একথা বলা হয়নি যে, তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছো? বরং বলা হয়েছে এই যে, তোমাদের কোথায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? অর্থাৎ অন্য কেউ তোমাদের বিপথগামী করছে এবং তোমরা তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সাদামাটা যুক্তিসঙ্গত কথাও বুঝতে পারছো না। এ বর্ণনাভঙ্গি থেকে দ্বিতীয় যে কথাটি প্রতীয়মান হয় তা হচ্ছে ‘তোমরা’ বলে সম্বোধন করে যারা ফিরিয়ে নিচ্ছে তাদেরকে সম্বোধন করা হয়নি, বরং যারা তাদের প্রভাবে পড়ে ফিরে যাচ্ছিলো তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে, কিছুটা চিন্তা-ভাবনা করলে যা সহজেই বোঝা যায়। যারা ফিরিয়ে নিচ্ছিলো তারা সে সমাজে সবার চোখের সামনেই ছিলো এবং সবখানে প্রকাশ্যেই কাজ করছিলো। তাই তাদের নাম নিয়ে বলার প্রয়োজন ছিলো না। তাদের সরাসরি সম্বোধন করাও ছিলো নিরর্থক। কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থের জন্যই মানুষকে এক আল্লাহর দাসত্ব থেকে ফিরতে এবং অন্যদের দাসত্বে শৃঙ্খলিত করতে এবং করিয়ে রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। এটা জানা কথা যে, এ ধরনের লোকদের বুঝালেও তারা তা বুঝতে রাজি ছিল না। কারণ, না বুঝার মধ্যেই তাদের স্বার্থ নিহিত ছিল এবং বুঝার পরও তারা তাদের স্বার্থ ত্যাগ করতে আদৌ প্রস্তুত ছিল না। তবে জনসাধারণ যারা তাদের প্রতারণা ও চতুরতার ফাঁদে পতিত হচ্ছিলো তারা ছিল করুণার পাত্র। এ কারবারে তাদের কোন স্বার্থ ছিল না। তাই তাদেরকে বুঝালে বুঝতে পারতো এবং চোখ কিছুটা খুলে যাওয়ার পরে তারা এও দেখতে পারতো যে, যারা তাদেরকে আল্লাহর নিকট থেকে সরিয়ে অন্যদের আস্তানার পথ দেখাচ্ছে তারা তাদের এ কারবার থেকে কি স্বার্থ হাসিল করছে। এ কারণেই গোমরাহীতে নিক্ষেপকারী মুষ্টিমেয় লোকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে গোমরাহীর দিকে অগ্রসরমান জনসাধারণকে সম্বোধন করা হচ্ছে।
১৯.
অর্থাৎ তোমাদের কুফরীর কারণে তাঁর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। তোমরা মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ‌ আছেন এবং থাকবেন। তাঁর নিজের ক্ষমতায়ই তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। তোমাদের মানা বা না মানাতে কিছু এসে যায় না। হাদীসে নবী ﷺ বলেছেন যে, আল্লাহ‌ বলেনঃ

يَا عِبَادِى لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ مِنْ مُلْكِى شَيْئًا-

“হে আমার বান্দারা, যদি তোমরা আগের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার কোন সর্বাধিক পাপিষ্ঠ ব্যক্তির মত হয়ে যাও তাতেও আমার বাদশাহীর কোন ক্ষতি হবে না।” (মুসলিম)।

২০.
অর্থাৎ নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বান্দার স্বার্থের জন্য তার কুফরী করা পছন্দ করেন না। কেননা, কুফরী তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এখানে একথা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ও অভিপ্রায় এক জিনিস এবং তাঁর সন্তুষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি জিনিস। পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছার পরিপন্থী কোন কাজ হতে পারে না। কিন্তু তাঁর সন্তুষ্টির পরিপন্থী কাজ হতে পারে এবং রাত দিন হয়ে আসছে। উদাহরণস্বরূপঃ পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী ও জালেমদের শাসনকর্তা হওয়া, চোর ও ডাকাতদের অস্তিত্ব থাকা এবং হত্যাকরী ও ব্যভিচারীদের বর্তমান থাকা এ কারণেই সম্ভব যে, আল্লাহ‌ তা’আলা তাঁর রচিত প্রাকৃতিক বিধানে এসব অকল্যাণ ও অপকর্মের অস্তিত্ব লাভের অবকাশ রেখেছেন। তাছাড়া তাদেরকে মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগও তিনিই দেন এবং ঠিক তেমনিভাবে দেন যেমনভাবে সৎকর্মশীলদের সৎকাজ করার সুযোগ দেন। তিনি যদি এসব কাজ করার আদৌ কোন সুযোগ না রাখতেন এবং যারা এসব কাজ করে তাদের আদৌ কোন সুযোগই না দিতেন তাহলে পৃথিবীতে কখনো কোন অকল্যাণ আত্মপ্রকাশ করতো না। এসব কিছুই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে হচ্ছে। কিন্তু ইলাহী ইচ্ছার অধীনে কোন কাজ সংঘটিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তার পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টিও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ একথাটিকে এভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন যে, কেউ যদি হারাম পন্থার মাধ্যমে তার রিযিক লাভের চেষ্টা করে তাহলে আল্লাহ‌ তাকে ঐ পন্থায়ই রিযিক দান করেন। এটা তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার অধীনে চোর ডাকাত বা ঘুষখোরকে রিযিক দেয়া অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ‌ চুরি, ডাকতি এবং ঘুষও পছন্দ করেন। এখানে আল্লাহ‌ তা’আলা একথাটিই বলছেন যে, তোমরা কুফরি করতে চাইলে করো। আমি জোর করে তাতে বাঁধা দিয়ে তোমাদেরকে মু’মিন বানাবো না। তবে তোমরা বান্দা হয়ে স্রষ্টা ও পালনকর্তার সাথে কুফরি করবে তাও আমার পছন্দ নয়। কারণ, তা তোমাদের জন্যই ক্ষতিকর। এতে আমার প্রভুত্বে আদৌ আঁচড়ে লাগে না।
২১.
এখানে ‘কুফর’ এর বিপরীতে ‘ঈমান’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘শোকর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে আপনা থেকেই এ বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কুফরী প্রকৃতপক্ষে অকৃতজ্ঞতা ও নেমক হারামির নাম আর ঈমান প্রকৃতপক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অনিবার্য দাবী। যে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানীর সামান্য অনুভূতিও আছে সে ঈমান ছাড়া অন্য কোন পথ গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণে ‘শোকর’ ও ‘ঈমান’ এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যে, যেখানে শোকর থাকবে সেখানে ঈমানও অবশ্যই থাকবে। অপর দিকে যেখানে কুফরী থাকবে সেখানে শোকর বা কৃতজ্ঞতা থাকার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কারণ কুফরীর সাথে “শোকরের” কোন অর্থ হয় না।
২২.
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যকার প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে তার কাজ কর্মের জন্য দায়ী। কেউ যদি অন্যদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিংবা তার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য কুফরী করে তাহলে সে লোকেরা তার কুফরীর বোঝা নিজেদের মাথায় উঠিয়ে নেবে না। বরং তাকেই তার কাজের পরিণাম ভোগ করার জন্য রেখে দেবে। সুতরাং কুফরীর ভ্রান্তি এবং ঈমানের সত্যতা যার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে তার উচিত ভুল আচরণ পরিত্যাগ করে সঠিক আচরণ গ্রহণ করা এবং নিজের বংশ, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সাথে থেকে নিজেকে আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত না বানানো।
.
২৩ .
মানুষ বলতে এখানে সেসব কাফেরদের বুঝানো হয়েছে যারা অকৃতজ্ঞতার আচরণ করে যাচ্ছে।
২৪.
অর্থাৎ সুদিনে সে যেসব উপাস্যকে ডাকতো সেই সময় তাদের কথা মনে হয় না। সে তখন তাদের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। সে যে তার মনের গভীরে অন্য উপাস্যদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারহীন হওযার অনুভূতি রাখে এবং আল্লাহই যে প্রকৃত ক্ষমতা-ইখতিয়ারের মালিক এ বাস্তবতাবোধও তার মন-মস্তিস্কের কোথাও না কোথাও অবদমিত হয়ে পড়ে আছে এটা যেন তারই প্রমাণ।
২৫.
অর্থাৎ যে সময় সে অন্যসব উপাস্যদের পরিত্যাগ করে কেবল একক ও লা-শরীক আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করছিলো সে দুঃসময়ের কথা তার মনে থাকে না।
২৬.
অর্থাৎ অন্যদের দাসত্ব করতে শুরু করে। তাদেরই আনুগত্য করে। তাদের কাছেই প্রার্থনা করে এবং তাদের সামনেই নযর-নিয়াজ পেশ করতে শুরু করে।
২৭.
অর্থাৎ নিজে পথভ্রষ্ট হয়েই ক্ষান্ত হয় না। অন্যদেরকেও একথা বলে পথভ্রষ্ট করে যে, আমার ওপর যে বিপদ এসেছিলো তা অমুক হযরতের কিংবা অমুক বুযর্গের বা অমুক দেবী ও দেবতাকে নযরানা পেশ করে দূর হয়েছে। এতে আরো অনেক মানুষ আল্লাহ‌ ছাড়া অন্যান্য উপাস্যের ভক্ত ও অনুসারী হয়ে যায় আর প্রত্যেক জাহেল এ ধরনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জনসাধারণের গোমরাহী বাড়িয়ে তুলতে থাকে।
.
২৮.
প্রকাশ থাকে যে, এখানে দুই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে তুলনা করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর মানুষ দুঃসময় আসলে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গায়রুল্লাহর বন্দেগী করে। আরেক শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর দাসত্বকে তাদের স্থায়ী নীতি বানিয়ে নিয়েছে। রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ইবাদাত করা তাদের একনিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ। এর মধ্যে প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে আল্লাহ তা’আলা জ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এক্ষেত্রে তারা বড় বড় গ্রন্থাগার চষে থাকলেও কিছু এসে যায় না। আর দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এক্ষেত্রে একেবারে নিরক্ষর হলেও কিছু এসে যায় না। কারণ, প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর ওপরেই মানুষের সাফল্য নির্ভরশীল। আল্লাহ‌ তা’আলা বলেনঃ এই দুই শ্রেণীর মানুষ কি করে সমান হতে পারে। কি করে সম্ভব যে, তারা দুনিয়ায় মিলে মিশে একই নিয়ম পন্থায় চলবে এবং আখেরাতেও একই পরিণামের সম্মুখীন হবে।
.
২৯.
অর্থাৎ শুধু মেনে নেবে তাই নয়, বরং তার সাথে সাথে তাকওয়াও অবলম্বন করো, আল্লাহ‌ যেসব কাজ করতে আদেশ দিয়েছেন তার ওপর আমল করো, যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকো এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহির কথা মনে রেখে দুনিয়াতে কাজ করো।
৩০.
দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টির কল্যাণ। তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেরই কল্যাণ সাধিত হবে।
৩১.
অর্থাৎ যদি একটি শহর , অঞ্চল বা দেশ আল্লাহর বান্দাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে যেখানে বিপদাপদ নেই সেখানে চলে যাও।
৩২.
যারা আল্লাহভীরুতা ও নেকীর পথে চলার ক্ষেত্রে সব রকমের দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করেছে কিন্তু ন্যায়ের পথ থেকে সরেনি তার মধ্যে সেসব লোক অন্তর্ভুক্ত যারা দীন ও ঈমানের কারনে হিজরত করে দেশান্তরিত হওয়ার দুঃখ-কষ্ট সহ্য করবে এবং সেসব লোকও অন্তর্ভুক্ত যারা জুলুম নির্যাতনে ভরা দেশে থেকে সাহসিকতার সাথে সব বিপদের মোকাবিলা করতে থাকবে।
.
৩৩.
অর্থাৎ আমার কাজ শুধু অন্যদের বলা নয়, নিজে করে দেখানোও। আমি যে পথের দিকে মানুষকে আহবান জানাই সর্বপ্রথম আমিই সে পথে চলি।
.
.
অনুবাদ: