পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

৩৫৭ আয়াত

৮৩ ) তবে একমাত্র যাদেরকে তুমি একনিষ্ঠ করে নিয়েছো তাদেরকে ছাড়া।” ৬৮ বললেন,
إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ ٱلْمُخْلَصِينَ ٨٣
৮৪ ) ৮৪. “তাহলে এটিই সত্য এবং আমি সত্যই বলে থাকি যে,
قَالَ فَٱلْحَقُّ وَٱلْحَقَّ أَقُولُ ٨٤
৮৫ ) আমি তোমাকে ৬৯ এবং এসব লোকদের মধ্য থেকে যারা তোমার আনুগত্য করবে তাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দেবো।” ৭০
لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكَ وَمِمَّن تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ ٨٥
৮৬ ) (হে নবী!) এদেরকে বলো, আমি এ প্রচার কাজের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইছি না ৭১ এবং আমি বানোয়াট লোকদের একজনও নই। ৭২
قُلْ مَآ أَسْـَٔلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍۢ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلْمُتَكَلِّفِينَ ٨٦
৮৭ ) এ তো একটি উপদেশ সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য
إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌۭ لِّلْعَـٰلَمِينَ ٨٧
৮৮ ) এবং সামান্য সময় অতিবাহিত হবার পরই এ সম্পর্কে তোমরা নিজেরাই জানতে পারবে। ৭৩
وَلَتَعْلَمُنَّ نَبَأَهُۥ بَعْدَ حِينٍۭ ٨٨
১ ) এ কিতাব মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।
تَنزِيلُ ٱلْكِتَـٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ ١
২ ) [হে মুহাম্মাদ (সা.) ] আমি তোমার কাছে হকসহ এ কিতাব নাযিল করেছি। তাই তুমি একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর ইবাদাত করো।
إِنَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَـٰبَ بِٱلْحَقِّ فَٱعْبُدِ ٱللَّهَ مُخْلِصًۭا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢
৩ ) সাবধান! একনিষ্ঠ ইবাদাত কেবল আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক বানিয়ে রেখেছে (আর নিজেদের এ কাজের কারণ হিসেবে বলে যে,) আমরা তো তাদের ইবাদাত করি শুধু এই কারণে যে, সে আমাদেরকে আল্লাহ‌ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবে। আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তাদের মধ্যকার সেসব বিষয়ের ফায়সালা করে দেবেন যা নিয়ে তারা মতভেদ করছিলো। আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও হক অস্বীকারকারী।
أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلْخَالِصُ ۚ وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلْفَىٰٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِى مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَنْ هُوَ كَـٰذِبٌۭ كَفَّارٌۭ ٣
৪ ) আল্লাহ্‌ যদি কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে চাইতেন তাহলে তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিতেন। তিনি এ থেকে পবিত্র (যে, কেউ তাঁর পুত্র হবে) । তিনি আল্লাহ। তিনি একক ও সবার ওপর বিজয়ী।
لَّوْ أَرَادَ ٱللَّهُ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًۭا لَّٱصْطَفَىٰ مِمَّا يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ ۚ سُبْحَـٰنَهُۥ ۖ هُوَ ٱللَّهُ ٱلْوَٰحِدُ ٱلْقَهَّارُ ٤
৬৮.
এর অর্থ এ নয় যে, “আমি তোমার নির্বাচিত বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো না।” বরং এর অর্থ হচ্ছে, “তোমার নির্বাচিত বান্দাদের ওপর আমার জারিজুরি খাটবে না।”
.
.
৬৯.
“তোমাকে দিয়ে” শব্দের মাধ্যমে কেবলমাত্র ব্যক্তি ইবলিসকেই সম্বোধন করা হয়নি বরং সমগ্র জিন জাতিকে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ ইবলিস ও তার সমগ্র শয়তান দল যারা তার সাথে মিলে মানুষ জাতিকে গোমরাহ করার কাজে লিপ্ত থাকবে।
৭০.
এ পুরো কাহিনীটি শুনানো হয় কুরাইশ সরদারদের একটি কথার জবাবে। তারা বলেঃ

أَأُنْزِلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ مِنْ بَيْنِنَا

“আমাদের মধ্যে কি এ একজনই লোক রয়ে গিয়েছিল যার ওপর যিকির, নাযিল করা হয়েছে?”

৯ ও ১০ নম্বর আয়াতে যা বলা হয়েছে তাই ছিল এর জবাব। সেখানে বলা হয়েছে, “তোমরা কি আল্লাহর রহমতের ভাণ্ডারের মালিক, তোমরা কি আকাশ ও পৃথিবীর বাদশাহ এবং কাকে আল্লাহ‌ নবী করা হবে ও কাকে করা হবে না এ ফায়সালা করা কি তোমাদের কাজ? ” দ্বিতীয় জবাব এবং এর মধ্যে কুরাইশ সরদারদেরকে যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোকাবিলায় ইবলিসের হিংসা ও অহংকারের সাথে মিলে যায়। ইবলিসও আল্লাহ‌ যাকে চান তাকে খলিফা বা প্রতিনিধি করবেন তাঁর এ অধিকার মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল। সে আদমের সামনে মাথা নত করার হুকুম মানেনি এবং তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করার হুকুম মানছো না। তার সাথে তোমাদের এ সামঞ্জস্য কেবলমাত্র এখানেই শেষ হয়ে যাবে না বরং তোমাদের পরিণামও আবার তাই হবে যা তার জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে অর্থাৎ দুনিয়ায় আল্লাহর লানত এবং আখেরাতে জাহান্নামের আগুন।

এ সঙ্গে এ কাহিনীর আওতায় আরো দু’টি কথাও বুঝানো হয়েছে। এক, এ দুনিয়ায় যে মানুষই আল্লাহর নাফরমানি করছে সে আসলে তার সে চিরন্তন শত্রুর ফাঁদে আটকে যাচ্ছে, যে সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানবজাতিকে ফুসলিয়ে কুপথে পরিচালনা করার স্থির সিদ্ধান্ত করে রেখেছে। দুই, যে ব্যক্তি অহংকারের কারণে আল্লাহর নাফরমানি করে এবং তারপর নিজের এ নাফরমানি করার নীতির ওপর জিদ ধরে থাকে, আল্লাহর দৃষ্টিতে সে চরম ঘৃণিত। আল্লাহর কাছে এ ধরনের মানুষের কোন ক্ষমা নেই।

৭১.
অর্থাৎ আমি একজন নিস্বার্থ ব্যক্তি। নিজের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে আমি এসব কথা প্রচার করছি না।
৭২.
অর্থাৎ আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যা দাবী নিয়ে ওঠে এবং তারপর প্রকৃতপক্ষে তারা যা নয় তাই হয়ে বসে। একথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ দিয়ে শুধুমাত্র মক্কার কাফেরদেরকে জানিয়ে দেবার জন্য বলা হয়নি বরং কাফেরদের মাঝে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের যে চল্লিশটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছিল এর পেছনে তার সবটাই সাক্ষী হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। মক্কার আবালবৃদ্ধবনিতা একথা জানতো যে, মুহাম্মাদ ﷺ কোন বানোয়াট নবী নন। সমগ্র জাতির মধ্যে কোন এক ব্যক্তিও কখনো তাঁর মুখ থেকে এমন কোন কথা শোনেনি যা থেকে এ সন্দেহ করার অবকাশ হয় যে, তিনি কিছু একটা হতে চান এবং তিনি নিজেকে গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠত করার চিন্তা করছেন।
.
৭৩.
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা কয়েক বছরের মধ্যে স্বচক্ষে দেখে নেবে আমি যা বলছি তা সঠিক প্রমাণিত হবেই। আর যারা মরে যাবে তারা মৃত্যুর দুয়ার অতিক্রম করার পরপরই জানতে পারবে, আমি যা কিছু বলছি তা-ই প্রকৃত সত্য।
১.
এটা এ সূরার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা। এতে শুধু এতটুকু বলা হয়েছে যে, এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের কথা নয় যা অস্বীকারকারীরা বলছে। বরং এটা আল্লাহ‌ তা’আলার বাণী। তিনি নিজে এ বাণী নাযিল করেছেন। এর সাথে আল্লাহর দু’টি গুণ উল্লেখ করে শ্রোতাদেরকে দু’টি মহাসত্য সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে যাতে তারা এ বাণীকে মামুলি জিনিস মনে না করে, বরং এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে। বর্ণিত গুণের একটি হচ্ছে, যে আল্লাহ‌ এ বানী নাযিল করেছেন তিনি “আযীয” অর্থাৎ এমন মহা পরাক্রমশালী যে, কোন শক্তিই তাঁর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তাবলী কার্যকরী হওয়া ঠেকাতে পারে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এমন কোন শক্তিও নেই। আরেকটি গুণ হচ্ছে, তিনি ‘হাকীম’ অর্থাৎ এ কিতাবে তিনি যে হিদায়াত দিচ্ছেন তা আগাগোড়া বিজ্ঞোচিত। কেবল কোন অজ্ঞ ও মূর্খই তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আস সাজদা টীকা, ১)
২ .
অর্থাৎ তার মধ্যে যা আছে তা ন্যায় ও সত্য, বাতিলের কোন সংমিশ্রণ তার মধ্যে নেই।
৩.
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এ আয়াতটি পড়ার সময় অমনোযোগী হওয়া উচিত নয়। বরং এর অর্থ ও প্রতিপাদ্য বিষয়টি ভালভাবে বুঝার চেষ্টা করা উচিত। এর মৌলিক বিষয় দু’টি। এ দু’টি বিষয় বুঝে নেয়া ছাড়া আয়াতটির অর্থ অনুধাবন সম্ভব নয়। একটি বিষয় হচ্ছে, এখানে আল্লাহ‌র ইবাদাত করতে বলা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সে ইবাদাত হবে এমন যা আনুগত্যকে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে করা হয়।

ইবাদাত শব্দের শব্দমূল বা ধাতু হচ্ছে عبد । এ শব্দটি আরবী ভাষায় ‘স্বাধীন’ শব্দের বিপরীত শব্দ হিসেবে ‘দাস’ বা ‘ক্রীতদাস’ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এ অর্থের দিক দিয়ে ‘ইবাদাত’ শব্দের মধ্যে দু’টি অর্থ সৃষ্টি হয়েছে। একটি অর্থ হচ্ছে পূজা-অর্চনা। আরবী ভাষার বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য অভিধান ‘লিসানুল আরবে’ আছে عبد الله অর্থাৎ التنسك , والتعبد , تأله له । আরেকটি অর্থ হচ্ছে সবিনয় আনুগত্য এবং সন্তুষ্টি ও সাগ্রহ আদেশ পালন। যেমন “লিসানুল আরবে” বলা হয়েছেঃ

الطاعة – العبادة

ومعنى العبادةِ في اللغة الطاعةُ مع الخُضُوعِ - وكلُّ من دانَ لملك فهو عابد له (وقومهما لنا عابدون) والعابد , الخاضع لربه المستسلم المُنْقاد لأَمره- عبدَ الطاغوتَ , أَطاعه يعني الشيطانَ فيما سَوّلَ له وأَغواه- إِياك نعبد, أَي نُطِيعُ الطاعةَ التي يُخْضَعُ معها- اعبدوا ربكم , أَطيعوا ربكم-

সুতরাং অভিধানের এসব নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা অনুসারে আল্লাহর ইবাদাত করা অর্থ শুধু তাঁর পূজা-অর্চনার দাবী করাই নয়, বরং বিনা বাক্যে তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন, তাঁর শরয়ী আইন-কানুন সন্তুষ্ট চিত্তে সাগ্রহে মেনে চলা এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মনে প্রাণে অনুসরণ করার দাবীও বুঝায়।

আরবী ভাষায় دين (দ্বীন) শব্দ কতিপয় অর্থ ধারণ করেঃ

একটি অর্থ হচ্ছে, আধিপত্য ও ক্ষমতা, মালিকানা ও প্রভুত্বমূলক মালিকানা, ব্যবস্থাপনা ও সার্বভৌম ক্ষমতা এবং অন্যদের ওপর সিদ্ধান্ত কার্যকারী করা। তাই “লিসানুল আরবে” আছেঃ

دان الناسَ أَي قَهَرَهم على الطاعة- دِنْتُهم أَي قَهرْتهم- دِنْتُه ¸ سُسْته و مَلَكْتُه- وفي الحديث : الكيِّس من دانَ نَفْسَه , أَي أَذلها واستعبدها- الديان , القاضى , الحكم , القهار , ولا انت اى لست بقاهرلى فتسوس امرى- ما كان ليأخذ اخاه فى دين الملك , اى فى تضاء الملك-

দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আনুগত্য, আদেশ পালন ও দাসত্ব। লিসানুল আরব অভিধানে আছেঃ

الدين , الطاعة – دنته ودنت له , اى اطعته – والدين الله , انما هو طاعته والتعبد له – فى الحديث اريد من قريش كلمة تدين لهم بها العرب , اى تطيعهم وتخضع لهم – ثم دانت بعد الرباب , اى ذلت له واطاعته – يمرقون من الدين , اى انهم يخرجون من طاعة الامام المفترض الطاعة , المدين , العبد – فلولا ان كنتم غير مدينين , اى غير مملوكين – الدين , العادة والشأن – يقال ما زال ذلك دينى وديدنى , اى عادتى

الدين , الطاعة – دنته ودنت له , اى اطعته – والدين الله , انما هو طاعته والتعبد له – فى الحديث اريد من قريش كلمة تدين لهم بها العرب , اى تطيعهم وتخضع لهم – ثم دانت بعد الرباب , اى ذلت له واطاعته – يمرقون من الدين , اى انهم يخرجون من طاعة الامام المفترض الطاعة , المدين , العبد – فلولا ان كنتم غير مدينين , اى غير مملوكين –

তৃতীয় অর্থ হচ্ছে অভ্যাস ও পন্থা-পদ্ধতি---- মানুষ যা অনুসরণ করে। লিসানুল আরবে আছে,

الدين , العادة والشأن – يقال ما زال ذلك دينى وديدنى , اى عادتى

এ তিনটি অর্থের প্রতি খেয়াল এ আয়াতে ‘দ্বীন’ শব্দটি এমন কর্মপদ্ধতি ও আচরণকে বুঝায় যা মানুষ কারো শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার এবং কারো আনুগত্য গ্রহণ করার মাধ্যমে অবলম্বন করে। আর “দ্বীন”কে শুধু আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে তাঁর দাসত্ব করার অর্থ হলো “আল্লাহর দাসত্বের সাথে মানুষ আর কাউকে শামিল করবে না বরং শুধু তাঁরই পূজা করবে, তাঁরই অনুসরণ এবং তাঁরই হুকুম আহকাম ও আদেশ পালন করবে।”

৪.
এটা একটা বাস্তবসম্মত ও সত্য ব্যাপার। ওপরে বর্ণিত দাবীর সপক্ষে প্রমাণস্বরূপ এটা পেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ তোমার উচিত দ্বীনকে কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে তাঁর বন্দেগী ও দাসত্ব করা। কারণ নির্ভেজাল ও অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহর অধিকার। অন্য কথায় বন্দেগী ও দাসত্ব পাওয়ার মতো অন্য কেউ আদতেই নেই। সুতরাং আল্লাহর সাথে তার পূজা-অর্চনা করা এবং তার হুকুম-আহকাম ও আইন-কানুনের আনুগত্য করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কেউ যদি আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কারো একনিষ্ঠ ও অবিমিশ্র দাসত্ব করে তাহলে সে ভ্রান্ত কাজ করে। অনুরূপভাবে সে যদি আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাথে অন্য কারো দাসত্বের সংমিশ্রণ ঘটায় তাহলে সেটাও সরাসরি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী। ইবনে মারদুইয়া কর্তৃক ইয়াযীদ আর রাকাশী থেকে উদ্ধৃত হাদীসটিই এ আয়াতের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, আমরা নাম ডাক সৃষ্টি করার জন্য আমাদের অর্থ-সম্পদ দেই। এতে কি আমরা কোন পুরস্কার পাব? নবী (সা.) বললেনঃ না। সে জিজ্ঞেস করলোঃ আমাদের নিয়ত যদি আল্লাহর পুরস্কার এবং দুনিয়ার সুনাম অর্জন দু’টিই থাকে? তিনি বললেনঃ

أَنَّ اللهَ تَعَالَىلَا يُقْبَلُ أَلَا مَنْأُخْلِصَ لَهُ

“কোন আমল যতক্ষণ না আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে হবে ততক্ষণ তিনি তা গ্রহণ করেন না।” এরপর নবী (সা.) এ আয়াত পাঠ করলেন।

৫.
মক্কার কাফেররা বলতো, আর সাধারণত দুনিয়ার সব মুশরিকও একথাই বলে থাকে যে, আমরা স্রষ্টা মনে করে অন্যসব সত্তার ইবাদাত করি না। আমরা তো আল্লাহকেই প্রকৃত স্রষ্টা বলে মানি এবং সত্যিকার উপাস্য তাঁকেই মনে করি। যেহেতু তাঁর দরবার অনেক উঁচু। আমরা সেখানে কি করে পৌঁছতে পারি? তাই এসব বোযর্গ সত্তাদেরকে আমরা মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি যাতে তারা আমাদের প্রার্থনা ও আবেদন-নিবেদন আল্লাহর কাছে পৌঁছিয়ে দেন।
৬.
একথা ভালভাবে বুঝে নিতে হবে যে, কেবল তাওহীদের ব্যাপারেই ঐকমত্য হওয়া সম্ভব। শিরকের ব্যাপারে কোন প্রকার ঐকমত্য হতে পারে না। কোন্ কোন্ সত্তা আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম সে ব্যাপারে দুনিয়ার মুশরিকরা কখনো একমত হতে পারেনি। কারো কাছে কোন দেবতা বা দেবীরা এর মাধ্যমে। কিন্তু তাদের মধ্যেও সব দেবতা ও দেবী সম্পর্কে ঐকমত্য নেই। কারো কাছে চাঁদ, সূর্য, মঙ্গল ও বৃহস্পতি এর মাধ্যম। কিন্তু তাদের মধ্যে কার কি মর্যাদা এবং কে আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম সে ব্যাপারে তারাও পরস্পর একমত নয়। কারো মতে মৃত মহাপুরুষগণ এর মাধ্যম। কিন্তু এদের মধ্যেও অসংখ্য ভিন্নমত বিদ্যমান। কেউ একজন মহাপুরুষকে মানলে আরেকজন অপর একজনকে মানছে। এর কারণ হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন এসব মহাপুরুষ সম্পর্কে তাদের এই ধারণা কোন জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেনি কিংবা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে এমন কোন তালিকাও আসেনি যাতে বলা হয়েছে, অমুক ও অমুক ব্যক্তি আমার বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত। সুতরাং আমাকে পেতে হলে তাদেরকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করো। এটা বরং এমন এক আকীদা---যা কেবল কুসংস্কার ও অন্ধভক্তি এবং পুরনো দিনের লোকদেরকে অযৌক্তিক এবং অন্ধ অনুসরণের কারণে মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে। তাই ক্ষেত্রে মতের বিভিন্নতা অবশ্যম্ভাবী।
৭.
আল্লাহ এখানে সেসব লোকের জন্য দু’টি শব্দ ব্যবহার করেছেন। একটি كَاذِبٌ (মিথ্যাবাদী) এবং অপরটি كَفَّارٌ (অস্বীকারকারী)। তাদেরকে كَاذِبٌ বলা হয়েছে এজন্য যে তারা নিজেদের পক্ষ থেকে মিথ্যা এ আকীদা বানিয়ে নিয়েছে এবং অন্যদের মধ্যে এ মিথ্যাই প্রচার করছে। আর ‘কাফফা’ শব্দের দু’টি অর্থ। একটি, ন্যায় ও সত্যের চরম অস্বীকারকারী। অর্থাৎ তাওহীদের শিক্ষা সামনে আসার পর এরা এ ভ্রান্ত আকীদা আঁকড়ে ধরে আছে। আরেকটি, নিয়ামতের অস্বীকারকারী। অর্থাৎ এরা নিয়ামত লাভ করছে আল্লাহর কাছ থেকে আর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছে সেসব সত্তার যাদের সম্পর্কে তারা নিজের থেকেই ধরে নিয়েছে যে, তাদের হস্তক্ষেপের কারণেই তারা এসব নিয়ামত লাভ করছে।
৮.
অর্থাৎ আল্লাহর ছেলে হওয়া একেবারেই অসম্ভব। যা সম্ভব তা হচ্ছে, আল্লাহ‌ কাউকে বাছাই করে নিতে পারেন। আর যাকে তিনি বাছাই করবেন সে অবশ্যই সৃষ্টির মধ্যকার কেউ হবে। কারণ পৃথিবীতে আল্লাহ‌ ছাড়া আর যা কিছু আছে সবই সৃষ্টি। এ কথাও সবার জানা যে, সৃষ্টি যত সম্মানিতই হোক সে কখনো সন্তানের মর্যাদা পেতে পারে না। কারণ স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিরাট মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। কিন্তু সন্তান হওয়াটা পিতা ও সন্তানের মধ্যে মৌলিক ঐক্যের দাবী করে।

সাথে সাথে এ বিষয়টির প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, “আল্লাহ যদি কাউকে ছেলে বানাতে চাইতেন তাহলে এ রকম করতেন” কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। একথা থেকে স্বতই এ অর্থ প্রকাশ পায় যে, আল্লাহ‌ কখনো এরূপ বেটা হিসেবে গ্রহণ করা তো দূরের কথা এরূপ করার ইচ্ছাও আল্লাহ‌ কখনো পোষণ করেননি।

৯.
এসব যুক্তি প্রমাণ দিয়েই সন্তান হওয়ার আকীদা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

প্রথম প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ‌ তা’আলা সব রকমের ত্রুটি, দোষ এবং দুর্বলতা থেকে পবিত্র। একথা সুস্পষ্ট যে, সন্তানের প্রয়োজন হয় অকর্মন্য ও দুর্বলের। যে ব্যক্তি নশ্বর ও ধ্বংসশীল সে-ই সন্তান লাভের মুখাপেক্ষী হয় যাতে তার বংশ ও প্রজন্ম টিকে থাকে। আর কাউকে পালক পুত্রও কেবল সে ব্যক্তিই গ্রহণ করে, যে হয়তো উত্তরাধিকারীহীন হওয়ার কারণে কাউকে উত্তরাধিকারী বানানোর প্রয়োজন অনুভব করে। নয়তো ভালবাসার আবেগে তাড়িত হয়ে কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে। এসব মানবিক দুর্বলতাকে আল্লাহর ওপর আরোপ করা এবং তার ওপর ভিত্তি করে ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস রচনা করে নেয়া মূর্খতা ও সংকীর্ণ দৃষ্টি ছাড়া আর কি?

দ্বিতীয় প্রমাণ হচ্ছে, তিনি এক- অদ্বিতীয় এবং একক সত্তার অধিকারী, কোন বস্তু বা দ্রব্যের কিংবা কোন পুরুষের অংশ নন। আর এ বিষয় সুস্পষ্ট যে, সন্তান সমগোত্রীয় হয়ে থাকে। আর দাম্পত্য জীবন ছাড়া সন্তানের কল্পনাই করা যায় না। আর দাম্পত্য সম্পর্কও কেবল সমগোত্রীয়ের সাথেই হতে পারে। সুতরাং একক ও অদ্বিতীয় সত্তা আল্লাহর‌ সন্তান থাকার কথা যে ব্যক্তি বলে সে চরম মূর্খ ও নির্বোধ।

তৃতীয় প্রমাণ হচ্ছে, তিনি قهار বা অপরাজেয় এক মহাশক্তি। অর্থাৎ পৃথিবীতে সব জিনিসই তাঁর অজেয় আধিপত্যের অধীন। এ বিশ্ব-জাহানের কোন কিছুই কোন পর্যায়েই তাঁর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। তাই কোন জিনিস সম্পর্কেই এ ধারণা করা যেতে পারে না যে, আল্লাহর সাথে তার কোন আত্মীয়তার বন্ধন আছে।

অনুবাদ: