পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

৩৫৭ আয়াত

১৫ ) তোমরা তাঁর ছাড়া আর যাদের ইচ্ছা দাসত্ব করতে থাকো। বলো, প্রকৃত দেউলিয়া তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ভাল করে শুনে নাও, এটিই হচ্ছে স্পষ্ট দেউলিয়াপনা। ৩৪
فَٱعْبُدُوا۟ مَا شِئْتُم مِّن دُونِهِۦ ۗ قُلْ إِنَّ ٱلْخَـٰسِرِينَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۗ أَلَا ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْخُسْرَانُ ٱلْمُبِينُ ١٥
১৬ ) তাদেরকে মাথার ওপর থেকে এবং নীচে থেকে আগুনের স্তর আচ্ছাদিত করে রাখবে। এ পরিণাম সম্পর্কেই আল্লাহ‌ তাঁর বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করেন, হে আমার বান্দারা, আমার গযব থেকে নিজেদের রক্ষা করো।
لَهُم مِّن فَوْقِهِمْ ظُلَلٌۭ مِّنَ ٱلنَّارِ وَمِن تَحْتِهِمْ ظُلَلٌۭ ۚ ذَٰلِكَ يُخَوِّفُ ٱللَّهُ بِهِۦ عِبَادَهُۥ ۚ يَـٰعِبَادِ فَٱتَّقُونِ ١٦
১৭ ) কিন্তু যেসব লোক তাগুতের ৩৫ দাসত্ব বর্জন করেছে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে তাদের জন্য সু-সংবাদ। [হে নবী (সা)] আমার সেসব বান্দাদের সুসংবাদ দিয়ে দাও
وَٱلَّذِينَ ٱجْتَنَبُوا۟ ٱلطَّـٰغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ لَهُمُ ٱلْبُشْرَىٰ ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ ١٧
১৮ ) যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং তার ভাল দিকটি অনুসরণ করে। ৩৬ এরাই সেসব মানুষ যাদের আল্লাহ‌ হিদায়াত দান করেছেন এবং এরাই বুদ্ধিমান।
ٱلَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ ٱلْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُۥٓ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ هَدَىٰهُمُ ٱللَّهُ ۖ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمْ أُو۟لُوا۟ ٱلْأَلْبَـٰبِ ١٨
১৯ ) (হে নবী! ) যে ব্যক্তিকে আযাব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে তাকে কে রক্ষা করতে পারে? ৩৭ যে আগুনের মধ্যে পড়ে আছে তাকে কি তুমি রক্ষা করতে পার?
أَفَمَنْ حَقَّ عَلَيْهِ كَلِمَةُ ٱلْعَذَابِ أَفَأَنتَ تُنقِذُ مَن فِى ٱلنَّارِ ١٩
২০ ) তবে যারা তাদের রবকে ভয় করে চলছে তাদের জন্য রয়েছে বহুতল সু উচ্চ বৃহৎ প্রাসাদ যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ‌ কখনো তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
لَـٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌۭ مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌۭ مَّبْنِيَّةٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ ۖ وَعْدَ ٱللَّهِ ۖ لَا يُخْلِفُ ٱللَّهُ ٱلْمِيعَادَ ٢٠
২১ ) তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ‌ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। তারপর তাকে পৃথিবীর ওপর স্রোত, ঝর্ণাধারা এবং নদীর আকারে ৩৮ প্রবাহিত করেছেন। অতঃপর সেই পানি দ্বারা তিনি নানা রং-এর শস্য উৎপাদন করেন। পরে সে শস্য পেকে শুকিয়ে যায়। তারপর তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। অবশেষে আল্লাহ‌ তা ভূষিতে পরিণত করেন। নিশ্চয়ই জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেক সম্পন্নদের জন্য এর মধ্যে শিক্ষা রয়েছে। ৩৯
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَسَلَكَهُۥ يَنَـٰبِيعَ فِى ٱلْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِۦ زَرْعًۭا مُّخْتَلِفًا أَلْوَٰنُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَىٰهُ مُصْفَرًّۭا ثُمَّ يَجْعَلُهُۥ حُطَـٰمًا ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِأُو۟لِى ٱلْأَلْبَـٰبِ ٢١
২২ ) আল্লাহ তা’আলা যে ব্যক্তির বক্ষ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন ৪০ এবং যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আলোতে চলছে ৪১ সেকি (সে ব্যক্তির মতো হতে পারে যে এসব কথা থেকে কোন শিক্ষাই গ্রহণ করেনি?) ধ্বংস সে লোকদের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহর উপদেশ বাণীতে আরো বেশী কঠোর হয়ে গিয়েছে। ৪২ সে সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ডুবে আছে।
أَفَمَن شَرَحَ ٱللَّهُ صَدْرَهُۥ لِلْإِسْلَـٰمِ فَهُوَ عَلَىٰ نُورٍۢ مِّن رَّبِّهِۦ ۚ فَوَيْلٌۭ لِّلْقَـٰسِيَةِ قُلُوبُهُم مِّن ذِكْرِ ٱللَّهِ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ فِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍ ٢٢
২৩ ) আল্লাহ‌ সর্বোত্তম বাণী নাযিল করেছেন, এমন একটি গ্রন্থ যার সমস্ত অংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ ৪৩ যার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের পূনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এসব শুনে সে লোকদের লোম শিউরে ওঠে যারা তাদের রবকে ভয় করে। তারপর তাদের দেহমন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এটা হচ্ছে আল্লাহর হিদায়াত। এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে নিয়ে আসেন। আর যাকে আল্লাহ‌ নিজেই হিদায়াত দান করেন না তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই।
ٱللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ ٱلْحَدِيثِ كِتَـٰبًۭا مُّتَشَـٰبِهًۭا مَّثَانِىَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُدَى ٱللَّهِ يَهْدِى بِهِۦ مَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِنْ هَادٍ ٢٣
২৪ ) তুমি সে ব্যক্তির দুর্দশা কি করে উপলব্ধি করবে যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আযাবের কঠোর আঘাত তার মুখমণ্ডলের ওপর নেবে? ৪৪ এসব জালেমদের বলে দেয়া হবেঃ এখন সেসব উপার্জনের ফল ভোগ করো যা তোমরা উপার্জন করেছিলে। ৪৫
أَفَمَن يَتَّقِى بِوَجْهِهِۦ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۚ وَقِيلَ لِلظَّـٰلِمِينَ ذُوقُوا۟ مَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ ٢٤
৩৪.
কোন ব্যক্তির কারবারে খাটানো সমস্ত পুঁজি যদি নষ্ট হয়ে যায় এবং বাজারে তার পাওনাদারের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, নিজের সবকিছু দিয়েও সে দায়মুক্ত হতে পারে না তাহলে এরূপ অবস্থাকেই সাধারণভাবে দেউলিয়াত্ব বলে। এখানে আল্লাহ‌ তা’আলা কাফের ও মুশরিকদের জন্য এ রূপক ভাষাটিই ব্যবহার করেছেন। মানুষ এ পৃথিবীতে জীবন, আয়ু, জ্ঞান-বুদ্ধি, শরীর, শক্তি, যোগ্যতা উপায়-উপকরণ এবং সুযোগ-সুবিধা যত জিনিস লাভ করেছে তার সমষ্টি এমন একটি পুঁজি যা সে পার্থিব জীবনের কারবারে খাটায়। কেউ যদি এ পুঁজির সবটাই এই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে খাটায় যে, কোন ইলাহ নেই কিংবা অনেক আছে আর সে তাদের বান্দা। তাকে কারো কাছে হিসেব দিতে হবে না, কিংবা হিসেব-নিকেশের সময় অন্য কেউ এসে তাকে রক্ষা করবে, তাহলে তার অর্থ হচ্ছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এবং নিজের সবকিছু খুইয়ে বসলো। এটা হচ্ছে প্রথম ক্ষতি। দ্বিতীয় ক্ষতি হচ্ছে, এ ভ্রান্ত অনুমানের ভিত্তিতে সে যত কাজই করলো সেসব কাজের ক্ষেত্রে সে নিজেকে সহ দুনিয়ার বহু মানুষ, ভবিষ্যৎ বংশধর এবং আল্লাহর আরো বহু সৃষ্টির ওপর জীবনভর জুলুম করলো। তাই তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দাবী আসলো। কিন্তু তার কাছে এমন কিছুই নেই যে, সে এসব দাবী পূরণ করতে পারে। তাছাড়া আরো একটি ক্ষতি হচ্ছে, সে নিজেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হলো না, বরং নিজের সন্তান-সন্ততি, প্রিয়জন ও আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব ও স্বজাতিকেও তার ভ্রান্ত শিক্ষা-দীক্ষা এবং ভ্রান্ত দৃষ্টান্ত দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করলো। এ তিনটি ক্ষতির সমষ্টিকে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ট ক্ষতি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
.
৩৫.
طَاغُوْتَ শব্দটি طغيان শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ বিদ্রোহ। কাউকে طاغى বিদ্রোহী না বলে যদি ‘তাগুত’ (বিদ্রোহ) বলা হয় তাহলে তার অর্থ হয় চরম মাত্রার বিদ্রোহী। উদাহরণস্বরূপ কাউকে সুন্দর বলার পরিবর্তে যদি সৌন্দর্য বলা হয় তাহলে তার অর্থ হয় সে যারপরনাই সুন্দর। আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য সব উপাস্যদের তাগুত বলার কারণ হলো, আল্লাহ‌ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করা তো নিছক বিদ্রোহ। কিন্তু যে অন্যদের দিয়ে নিজের দাসত্ব করায় সে চরম পর্যায়ের বিদ্রোহী। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল-বাকারাহ, টীকা, ২৮৬ ; আন নাহল, টীকা, ৩২)। এখানে طاغوت শব্দটি طواغيت অর্থাৎ বহু সংখ্যক বিদ্রোহী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই أَنْ يَعْبُدُوهَا বলা হয়েছে। যদি একবচন হতো তাহলে ব্যবহৃত শব্দ হতো يَعْبُدُوْهُ
.
৩৬.
এ আয়াতের দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে, তারা যে কোন কথা শুনলেই তা অনুসরণ করে না। তারা প্রত্যেকের কথা শুনে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেটি ন্যায় ও সত্য কথা তা গ্রহণ করে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা কোন কথা শুনে তার ভুল অর্থ করার চেষ্টা করে না বরং তার ভাল অর্থ গ্রহণ করে।
.
৩৭.
অর্থাৎ যে নিজেই নিজেকে আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত বানিয়ে নিয়েছে এবং আল্লাহও তাকে শাস্তি দানের ফায়সালা করেছেন।
.
.
৩৮.
মূল আয়াতে يَنَابِيعَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা এ তিনটি জিনিস বুঝাতেই ব্যবহার করা হয়।
৩৯.
অর্থাৎ এ থেকে একজন বুদ্ধিমান মানুষ এ শিক্ষা গ্রহণ করে যে, দুনিয়ার এ জীবন ও এর সব সৌন্দর্য ও চাকচিক্য অস্থায়ী। প্রতিটি বসন্তের পরিণামই শরতের মলিনতা এবং যৌবনের পরিণাম বার্ধক্য ও মৃত্যু। প্রতিটি উত্থানই অবশেষে পতনে পরিণতি লাভ করে। সুতরাং এ পৃথিবী এমন জিনিস নয় যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ আল্লাহ‌ ও আখেরাতকে ভুলে যেতে পারে এবং এখানকার ক্ষণস্থায়ী বসন্তের মজা উপভোগ করার জন্য এমন আচরণ করবে যা তার পরিণামকে ধ্বংস করবে। তাছাড়া একজন বুদ্ধিমান লোক এসব দৃশ্য দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে যে, এ দুনিয়ার বসন্ত ও শরত আল্লাহর ইখতিয়ারে। তিনি যাকে ইচ্ছা উত্থান ঘটান এবং যাকে ইচ্ছা দুর্দশাগ্রস্ত করেন। আল্লাহ‌ যাকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করছেন তার বেড়ে ওঠা যেমন কেউ রোধ করতে পারে না। তেমনি আল্লাহ‌ যাকে ধ্বংস করতে চান তাকে মাটিতে মিশে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে এমন শক্তিও কারো নেই।
৪০.
অর্থাৎ এ সমস্ত বাস্তব ব্যাপার দ্বারা শিক্ষা গ্রহণ এবং ইসলামকে অকাট্য ও নির্ভুল সত্য বলে মেনে নেয়ার যোগ্যতা ও সুযোগ আল্লাহ‌ যাকে দিয়েছেন। কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কিংবা সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আভাস বা কোন ক্ষতির আশঙ্কাও তাকে ঐ বিষয় গ্রহণ করতে বাঁধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত করে যে, এ জিনিসটি ন্যায় ও সত্য। তাই যাই ঘটুক না কেন আমাকে এর ওপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে তখন আল্লাহ‌ ও রসূলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসে তা সে অনিচ্ছায় নয় খুশী ও আগ্রহের সাথে মেনে নেয়। কিতাব ও সুন্নাহ থেকে যে আকাইদ ও ধ্যান-ধারণা এবং যে নীতিমালা ও নিয়ম-কানুন তার সামনে আসে তা সে এমনভাবে গ্রহণ করে যেন সেটাই হৃদয়ের প্রতিধ্বনি। কোন অবৈধ সুবিধা পরিত্যাগ করতে তার কোন অনুশোচনা হয় না। সে মনে করে ঐগুলো তার জন্য কল্যাণকর কিছু ছিল না। বরং তা ছিল একটি ক্ষতি যা থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ রক্ষা পেয়েছে। অনুরূপ ন্যায় ও সত্যের ওপর কায়েম থাকার কারণে তার যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে সে সেই জন্য আফসোস করে না, ঠাণ্ডা মাথায় বরদাশত করে এবং আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরিবর্তে তার কাছে ঐ ক্ষতি হালকা মনে হয়। বিপদাপদ আসলে তার এ একই অবস্থা হয়। সে মনে করে, আমার দ্বিতীয় কোন পথই নেই---এ বিপদ থেকে বাঁচার জন্য, যে পথ দিয়ে আমি বের হয়ে যেতে পারি। আল্লাহর সরল-সোজা পথ একটিই। আমাকে সর্বাবস্থায় ঐ পথেই চলতে হবে। বিপদ আসলে আসুক।
৪১.
অর্থাৎ জ্ঞানের আলো হিসেবে সে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাত লাভ করেছে যার উজ্জ্বল আলোতে সে জীবনে চলার অসংখ্য ছোট ছোট পথের মধ্যে কোনটি ন্যায় ও সত্যের সোজা রাস্তা তা প্রতি পদক্ষেপে স্পষ্ট দেখতে পায়।
৪২.
“শরহে সদর” (উন্মুক্ত বক্ষ বা খোলা মন) এর বিপরীতে মানুষের মনের দু’টি অবস্থা হতে পারে। একটি হচ্ছে ‘দ্বীকে সদর’ (বক্ষ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া, মন সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া) এর অবস্থা। এ অবস্থায় মনের মধ্যে ন্যায় ও সত্য প্রবেশের কিছু না কিছু অবকাশ থাকে। দ্বিতীয়টি ‘কাসাওয়াতে ক্বালব’ (মন কঠিন হয়ে যাওয়া) এর অবস্থা। এ অবস্থায় মনের মধ্যে ন্যায় ও সত্য প্রবেশের কোন সুযোগই থাকে না। দ্বিতীয় অবস্থাটি সম্পর্কে আল্লাহ‌ তা’আলা বলছেনঃ যে ব্যক্তি এ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে তার জন্য সর্বাত্মক ধ্বংস ছাড়া আর কিছু নেই। এর অর্থ হচ্ছে, মনের সংকীর্ণতার সাথে হলেও কেউ যদি একবার ন্যায় ও সত্যকে কোনভাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়ে যায় তাহলেও তার জন্য রক্ষা পাওয়ার কিছু না কিছু সম্ভাবনা থাকে। আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি হতে এ দ্বিতীয় বিষয়টি আপনা থেকেই প্রকাশ পায়। কিন্তু আল্লাহ‌ তা’আলা তা সুস্পষ্ট করে বলেননি। কারণ, যারা রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতায় জেদ ও হঠকারিতা করতে একপায়ে দাঁড়িয়ে ছিল এবং এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছিলো যে, কোনমতেই তাঁর কোন কথা মানবে না, আয়াতের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে সাবধান করা। তাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের এ জিদ ও হঠকারিতাকে অত্যন্ত গর্বের বিষয় বলে মনে করে থাকো। কিন্তু আল্লাহর যিকির এবং তাঁর পক্ষ থেকে আসা উপদেশ বাণী শুনে বিনম্র হওয়ার পরিবর্তে কেউ যদি আরো বেশী কঠোর হয়ে যায় তাহলে একজন মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় অযোগ্যতা ও দুর্ভাগ্য আর কিছুই নেই।
.
৪৩.
ঐ সব বাণীর মধ্যে কোন বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কিতাব একই দাবী, একই আকীদা-বিশ্বাস এবং চিন্তা ও কর্মের একই আদর্শ পেশ করে। এর প্রতিটি অংশ অন্য সব অংশের এবং প্রতিটি বিষয় অন্য সব বিষয়ের সত্যায়ন, সমর্থন এবং ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষেণ করে। অর্থ ও বর্ণনা উভয় দিক দিয়েই এ গ্রন্থের পূর্ণ মিল ও সামঞ্জস্য (Consistency) বিদ্যমান।
.
৪৪.
মানুষ মুখমণ্ডলের ওপর কোন আঘাত তখনই করে যখন সে পুরোপুরি অক্ষম ও নিরূপায় হয়ে পড়ে। অন্যথায় যতক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে প্রতিরোধের সামান্যতম শক্তিও থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে শরীরের প্রত্যেকটি অংশে আঘাত সহ্য করতে থাকে কিন্তু মুখের ওপর আঘাত লাগতে দেয় না। তাই এখানে ঐ ব্যক্তির চরম অসহায়ত্বের চিত্র অংকন করা হয়েছে এই বলে যে, সে নিজের মুখের ওপর চরম আঘাত সহ্য করবে।
৪৫.
মূল আয়াতে كسب শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআন মজীদে পরিভাষায় كسب শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যক্তি তার কর্মের ফলশ্রুতি হিসেবে শাস্তি ও পুরস্কার লাভের যে উপযুক্ততা অর্জন করে তাই। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের আসল উপার্জন হচ্ছে এই যে, সে তার কাজের ফলশ্রুতিতে আল্লাহর কাছে পুরস্কারের যোগ্য হয়ে যায়। আর গোমরাহী ও বিপথগামীতা অবলম্বনকারী ব্যক্তিদের প্রকৃত উপার্জন হচ্ছে, সে শাস্তি যা সে আখেরাতে লাভ করবে।
অনুবাদ: