পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

২০২ আয়াত

১৩ ) তারা (নিজেদের অপবাদের প্রমাণস্বরূপ) চারজন সাক্ষী আনেনি কেন? এখন যখন তারা সাক্ষী আনেনি তখন আল্লাহ‌র কাছে তারাই মিথ্যুক। ১৪
لَّوْلَا جَآءُو عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ ۚ فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا۟ بِٱلشُّهَدَآءِ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ عِندَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلْكَـٰذِبُونَ ١٣
১৪ ) যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়ায় ও আখেরাতে আল্লাহ‌র অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তাহলে যেসব কথায় তোমরা লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলে সেগুলোর কারণে তোমাদের ওপরে মহাশাস্তি নেমে আসতো।
وَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِى مَآ أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ١٤
১৫ ) (একটু ভেবে দেখো তো¸ সে সময় তোমরা কেমন মারাত্মক ভুল করেছিলে) যখন তোমরা এক মুখ থেকে আর এক মুখে এ মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলে এবং তোমরা নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যা সম্পর্কে তোমাদের কিছুই জানা ছিল না। তোমরা একে একটা মামুলি কথা মনে করেছিলে অথচ আল্লাহ‌র কাছে এটা ছিলো গুরুতর বিষয়।
إِذْ تَلَقَّوْنَهُۥ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم مَّا لَيْسَ لَكُم بِهِۦ عِلْمٌۭ وَتَحْسَبُونَهُۥ هَيِّنًۭا وَهُوَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمٌۭ ١٥
১৬ ) একথা শোনার সাথে সাথেই তোমরা বলে দিলে না কেন, “এমন কথা মুখ দিয়ে বের করা আমাদের শোভা পায় না, সুব্‌হানাল্লাহ! এ তো একটি জঘন্য অপবাদ।”
وَلَوْلَآ إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُم مَّا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَـٰذَا سُبْحَـٰنَكَ هَـٰذَا بُهْتَـٰنٌ عَظِيمٌۭ ١٦
১৭ ) আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো,
يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُوا۟ لِمِثْلِهِۦٓ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ١٧
১৮ ) তাহলে ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের কাজ করো না। আল্লাহ তোমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দেন এবং তিনি সবজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়। ১৫
وَيُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ ۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ١٨
১৯ ) যারা চায় মু’মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। ১৬ আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না। ১৭
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلْفَـٰحِشَةُ فِى ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ ۚ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ١٩
২০ ) যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর করুণা তোমাদের প্রতি না হতো এবং আল্লাহ‌ যদি স্নেহশীল ও দয়ার্দ্র না হতেন (তাহলে যে জিনিস এখনই তোমাদের মধ্যে ছড়ানো হয়েছিলো তার পরিণাম হতো অতি ভয়াবহ। )
وَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ وَأَنَّ ٱللَّهَ رَءُوفٌۭ رَّحِيمٌۭ ٢٠
২১ ) হে ঈমানদারগণ! শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে চলো না। যে কেউ তার অনুসরণ করবে তাকে সে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ করার হুকুম দেবে। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না থাকতো তাহলে তোমাদের একজনও পবিত্র হতে পারতো না। ১৮ কিন্তু আল্লাহই যাকে চান তাকে পবিত্র করে দেন এবং আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞাত। ১৯
۞ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَـٰنِ فَإِنَّهُۥ يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِ ۚ وَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًۭا وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ يُزَكِّى مَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌۭ ٢١
২২ ) তোমাদের মধ্য থেকে যারা প্রাচুর্য ও সামর্থের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে কসম খেয়ে না বসে যে, তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, গরীব-মিসকীন ও আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগকারীদেরকে সাহায্য করবে না। তাদেরকে ক্ষমা করা ও তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি চাও না আল্লাহ তোমাদের মাফ করেন? আর আল্লাহ ক্ষমাশীলতা ও দয়া গুণে গুণান্বিত। ২০
وَلَا يَأْتَلِ أُو۟لُوا۟ ٱلْفَضْلِ مِنكُمْ وَٱلسَّعَةِ أَن يُؤْتُوٓا۟ أُو۟لِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْمَسَـٰكِينَ وَٱلْمُهَـٰجِرِينَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ وَلْيَعْفُوا۟ وَلْيَصْفَحُوٓا۟ ۗ أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغْفِرَ ٱللَّهُ لَكُمْ ۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌ ٢٢
১৪.
“আল্লাহর কাছে” অর্থাৎ আল্লাহর আইনে অথবা আল্লাহর আইন অনুযায়ী। নয়তো আল্লাহ তো জানতেন ঐ অপবাদ ছিল মিথ্যা। তারা সাক্ষী আনেনি বলেই তা মিথ্যা, আল্লাহর কাছে তার মিথ্যা হবার জন্য এর প্রয়োজন নেই।

এখানে যেন কেউ এ ভুল ধারণার শিকার না হন যে, এক্ষেত্রে নিছক সাক্ষীদের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিকে অপবাদের মিথ্যা হবার যুক্তি ও ভিত্তি গণ্য করা হচ্ছে এবং মুসলমানদের বলা হচ্ছে যেহেতু অপবাদদাতা চার জন্য সাক্ষী আনেনি তাই তোমরাও শুধুমাত্র এ কারণেই তাকে সুস্পষ্ট মিথ্যা অপবাদ গণ্য করো। বাস্তবে সেখানে যা ঘটেছিল, তার প্রতি দৃষ্টি না দিলে এ ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়। অপবাদদাতারা এ কারণে অপবাদ দেয়নি যে, তারা তাদের মুখ দিয়ে যা কিছু বলে যাচ্ছিল তারা সবাই বা তাদের কোন একজন স্বচক্ষে তা দেখেছিল। বরং হযরত আয়েশা (রাঃ) কাফেলার পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন এবং হযরত সাফ্ওয়ান পরে তাঁকে নিজের উটের পিঠে সওয়ার করে কাফেলার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন শুধুমাত্র এরই ভিত্তিতে তারা এতবড় অপবাদ তৈরী করে ফেলেছিল। কোন বুদ্ধি-বিবেকবান ব্যক্তি এ অবস্থায় হযরত আয়েশার এভাবে পিছনে থেকে যাওয়াকে নাউযুবিল্লাহ্ কোন ষড়ষন্ত্রের ফল ছিল বলে ভাবতে পারতেন না। সেনা প্রধানের স্ত্রী চুপিচুপি কাফেলার পিছনে এ ব্যক্তির সাথে থেকে যাবে তারপর ঐ ব্যক্তিই তাকে নিজের উটের পিঠে বসিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ঠিক দুপুরের সময় সবার চোখের সামনে দিয়ে সেনা ছাউনিতে পৌঁছে যাবে, কোন ষড়যন্ত্রকারী এভাবে ষড়যন্ত্র করে না। স্বয়ং এ অবস্থাটাই তাদের উভয়ের নিরাপরাধ নিষ্পাপ হওয়ার প্রমাণ পেশ করছে। এ অবস্থায় যদি অপবাদদাতারা নিজেদের চোখে কোন ঘটনা দেখতো তাহলে কেবলমাত্র তারই ভিত্তিতে অপবাদ দিতে পারতো। অন্যথায় যেসব লক্ষণের ওপর কুচক্রীরা অপবাদের ভিত্তি রেখেছিল সেগুলোর ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ ছিল না।

.
.
.
.
১৫.
এ আয়াতগুলো এবং বিশেষ করে আল্লাহর এ বাণী “মু’মিন পুরুষ ও নারীরা নিজেদের লোকদের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করে না কেন” থেকে এ মূলনীতির উৎপত্তি হয় যে, মুসলিম সমাজে সকল ব্যবহারিক বিষয়ের ভিত্তি সুধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। কুধারণা কেবলমাত্র এমন অবস্থায় পোষণ করা উচিত যখন তার জন্য কোন ইতিবাচক ও প্রমাণসূচক ভিত্তি থাকবে। এ ব্যাপারে নীতি হচ্ছেঃ প্রত্যেক ব্যক্তি নির্দোষ, যতক্ষণ তার অপরাধী হবার বা তার প্রতি অপরাধের সন্দেহ করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ না থাকে আর প্রত্যেক ব্যক্তিই সত্যবাদী, যতক্ষণ তার অনির্ভরযোগ্য হবার কোন প্রমাণ না থাকে।
১৬.
পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আয়াতের প্রত্যক্ষ অর্থ হচ্ছে, যারা এ ধরনের অপবাদ তৈরী করে ও তা প্রচার করে মুসলিম সমাজে চরিত্রহীনতার প্রসার ঘটাবার এবং উম্মতে মুসলিমার চরিত্র হননের চেষ্টা করছে তারা শাস্তি লাভের যোগ্য। কিন্তু আয়াতের শব্দাবলী অশ্লীলতা ছড়াবার যাবতীয় অবস্থার অর্থবোধক। কার্যত ব্যভিচারে আড্ডা কায়েম করার ওপরও এগুলো প্রযুক্ত হয়। আবার চরিত্রহীনতাকে উৎসাহিত করা এবং সেজন্য আবেগ-অনুভূতিকে উদ্দীপিত ও উত্তেজিতকারী কিস্সা-কাহিনী, কবিতা, গান, ছবি ও খেলাধূলার ওপরও প্রযুক্ত হয়। তাছাড়া এমন ধরনের ক্লাব, হোটেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় এসে যায় যেখানে নারী-পুরুষের মিলিত নৃত্য ও মিলিত আমোদ ফূর্তির ব্যবস্থা করা হয়। কুরআন পরিষ্কার বলছে, এরা সবাই অপরাধী। কেবল আখেরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও এদের শাস্তি পাওয়া উচিত। কাজেই অশ্লীলতার এসব উপায়-উপকরণের পথ রোধ করা একটি ইসলামী রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন এখানে যে সমস্ত কাজকে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ গণ্য করছে এবং যেগুলো সম্পাদনকারীকে শাস্তিলাভের যোগ্য বলে ফায়সালা দিচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের দণ্ডবিধি আইনে সে সমস্ত কাজ শাস্তিযোগ্য ও পুলিশের হস্তক্ষেপ লাভের উপযোগী হতে হবে।
১৭.
অর্থাৎ তোমরা জানো না এ ধরনের এক একটি কাজের প্রভাব সমাজে কোথায় কোথায় পৌঁছে যায়, কত লোক এগুলোতে প্রভাবিত হয় এবং সামষ্টিকভাবে এর কি পরিমাণ ক্ষতি সমাজ জীবনকে বরদাশত করতে হয়। এ বিষয়টি আল্লাহই খুব ভালোভাবে জানেন। কাজেই আল্লাহর ওপর নির্ভর করো ও দাবিয়ে দেবার চেষ্টা কর। এগুলো ছোট ছোট বিষয় নয় যে, এগুলোর প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে হবে। আসলে এগুলো অনেক বড় বিষয়। কাজেই যারা এসব কাজ করবে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।
.
১৮.
অর্থাৎ শয়তান তো তোমাদের গায়ে অসৎকাজের নাপাকী মাখিয়ে দেবার জন্য এমন উন্মুখ হয়ে বসে আছে যে, যদি আল্লাহ নিজেই অনুগ্রহ ও দয়া করে তোমাদের সততা ও অসততার পার্থক্য না শেখান এবং তোমাদের সংশোধনের শিক্ষা ও সুযোগ লাভের সৌভাগ্য দান না করেন, তাহলে তোমাদের একজনও নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের জোরে পবিত্র ও পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্ত হতে পারো না।
১৯.
অর্থাৎ আল্লাহ চোখ বন্ধ করে, আন্দাজে যাকে তাকে পবিত্রতা দান করেন না বরং নিজের নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে দান করেন। আল্লাহ জানেন কে কল্যাণ চায় এবং কে অকল্যাণ আকাংখী। প্রত্যেক ব্যক্তি একান্তে যেসব কথা বলে আল্লাহ তা সবই শুনে থাকেন। প্রত্যেক ব্যক্তি মনে মনে যা চিন্তা করে আল্লাহ তা থেকে মোটেই বেখবর থাকেন না। এ সরাসরি ও প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ ফায়সালা করেন, কাকে পবিত্রতা দান করবেন ও কাকে পবিত্রতা দান করবেন না।
২০.
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ওপরে বর্ণিত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ যখন আমার নির্দোষিতার কথা ঘোষণা করেন তখন হযরত আবু বকর (রা.) কসম খেয়ে বসেন, তিনি আগামীতে মিস্তাহ ইবনে উসাসাকে সাহায্য করা বন্ধ করে দেবেন। কারণ মিস্তাহ আত্মীয়-সম্পর্কের কোন পরোয়া করেননি এবং তিনি সারা জীবন তার ও তার সমগ্র পরিবারের যে উপকার করে এসেছেন সেজন্য একটুও লজ্জা অনুভব করেননি। এ ঘটনায় এ আয়াত নাযিল হয় এবং এ আয়াত শুনেই হযরত আবু বকর (রা.) সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, بلى والله انا نحب ان تغفر لنا يا ربنا ‘আল্লাহর কসম, অবশ্যই আমরা চাই, হে আমাদের রব! তুমি আমাদের ভুল-ভ্রান্তি মাফ করে দেবে।’ কাজেই তিনি আবার মিস্তাহকে সাহায্য করতে থাকেন এবং এবার আগের চেয়ে বেশী করে করতে থাকেন। হযরত আবদুল্লাহু ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনা হচ্ছে, হযরত আবু বকর ছাড়া আর কয়েকজন সাহাবীও এ কসম খেয়েছিলেন যে, যারা মিথ্যা অপবাদ ছড়াতে অংশ নিয়েছিল তাদেরকে তাঁরা আর কোন সাহায্য-সহায়তা দেবেন না। এ আয়াতটি নাযিল হবার পর তারা সবাই নিজেদের কসম ভেঙ্গে ফেলেন। এভাবে এ ফিত্নার ফলে মুসলিম সমাজে যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল তা এক মুহূর্তেই দূর হয়ে যায়।

এখান একটি প্রশ্ন দেখা দেয়, যদি কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেয়ে বসে তারপর সে জানতে পারতো এতে কোন কল্যাণ নেই এবং এর ফলে কসম ভেঙ্গে ফেলে যে বিষয়ে কল্যাণ আছে তা অবলম্বন করে, তাহলে এক্ষেত্রে তাকে কসম ভাঙ্গার কাফ্ফারা আদায় করতে হবে কি না। এক দল ফকীহ বলেন, কল্যাণের পথ অবলম্বন করাই কাফ্ফারা, এছাড়া আর কোন কাফ্ফারার প্রয়োজন নেই। তারা এ আয়াত থেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন যে, আল্লাহ হযরত আবু বকরকে কসম ভেঙ্গে ফেলার হুকুম দেন এবং কাফ্ফারা আদায় করার হুকুম দেননি। এছাড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত উক্তিটিকেও তারা যুক্তি হিসেবে পেশ করেনঃ

مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَذَالِك كَفَّارتُهُ-

“যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেয়ে বসে তারপর সে জানতে পারে অন্য বিষয়টি তার চেয়ে ভালো, এ অবস্থায় তার ভালো বিষয়টি গ্রহণ করা উচিত এবং এই ভালো বিষয়টি গ্রহণ করাই তার কাফ্ফারা।”

অন্য দলটি বলেন, কসম ভাঙ্গার জন্য আল্লাহ কুরআন মজীদে একটি পরিষ্কার ও স্বতন্ত্র হুকুম নাযিল করেছেন (আল বাকারাহ ২২৫ ও আল মায়েদাহ ৮৯ আয়াত)। এ আয়াতটা ঐ হুকুম রহিত করেনি এবং পরিষ্কারভাব এর মধ্যে কোন সংশোধনও করেনি। কাজেই ঐ হুকুম স্বস্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। আল্লাহ এখানে হযরত আবু বকরকে অবশ্যি কসম ভেঙ্গে ফেলতে বলেছেন কিন্তু তাঁকে তো এ কথা বলেননি যে, তোমার ওপর কোন কাফ্ফারা ওয়াজিব নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তিটির অর্থ হচ্ছে, শুধু এই যে, একটি ভুল ও অসঙ্গত বিষয়ের কসম খেয়ে ফেললে যে গুনাহ হয় সঠিক ও সঙ্গত পন্থা অবলম্বন তার অপনোদন হয়ে যায়। কসমের কাফ্ফারা রহিত করা এর উদ্দেশ্য নয়। বস্তুতঃ অন্য একটি হাদীস-এর ব্যাখ্যা করে দেয়। তাতে নবী করীম ﷺ বলেনঃ

مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ , وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ-

“যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেয়ে বসে তারপর সে জানতে পারে অন্য বিষয় তার চেয়ে ভালো, তার যে বিষয়টি ভালো সেটিই করা উচিত এবং নিজের কসমের কাফ্ফারা আদায় করা উচিত।”

এ থেকে জানা যায়, কসম ভাঙ্গার কাফ্ফারা আলাদা জিনিস এবং ভালো কাজ না করার গোনাহের কাফ্ফারা অন্য জিনিস। ভালো কাজ করা হচ্ছে একটি জিনিসের কাফ্ফারা এবং দ্বিতীয় জিনিসের কাফ্ফারা কুরআন নিজেই নির্ধারিত করে দিয়েছে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা সা’দের ব্যাখ্যা, ৪৬ টীকা)।

অনুবাদ: