পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

১৯০ আয়াত

৭১ ) আর আমি তাঁকে ও লূতকে ৬৩ বাঁচিয়ে এমন দেশের দিকে নিয়ে গেলাম যেখানে আমি দুনিয়াবাসীদের জন্য বরকত রেখেছিলাম। ৬৪
وَنَجَّيْنَـٰهُ وَلُوطًا إِلَى ٱلْأَرْضِ ٱلَّتِى بَـٰرَكْنَا فِيهَا لِلْعَـٰلَمِينَ ٧١
৭২ ) আর তাঁকে আমি ইসহাক দান করলাম এবং এর ওপর অতিরিক্ত ইয়াকুব ৬৫ এবং প্রত্যেককে করলাম সৎকর্মশীল।
وَوَهَبْنَا لَهُۥٓ إِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةًۭ ۖ وَكُلًّۭا جَعَلْنَا صَـٰلِحِينَ ٧٢
৭৩ ) আর আমি তাঁদেরকে নেতা বানিয়ে দিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথনির্দেশনা দিতো এবং আমি তাঁদেরকে অহীর মাধ্যমে সৎকাজের, নামায কায়েম করার ও যাকাত দেবার নির্দেশ দিয়েছিলাম এবং তারা আমার ইবাদাত করতো। ৬৬
وَجَعَلْنَـٰهُمْ أَئِمَّةًۭ يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَآ إِلَيْهِمْ فِعْلَ ٱلْخَيْرَٰتِ وَإِقَامَ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِيتَآءَ ٱلزَّكَوٰةِ ۖ وَكَانُوا۟ لَنَا عَـٰبِدِينَ ٧٣
৭৪ ) আর লূতকে আমি প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম ৬৭ এবং তাকে এমন জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম যার অধিবাসীরা বদ কাজে লিপ্ত ছিল--- আসলে তারা ছিল বড়ই দুরাচারী পাপিষ্ঠ জাতি---
وَلُوطًا ءَاتَيْنَـٰهُ حُكْمًۭا وَعِلْمًۭا وَنَجَّيْنَـٰهُ مِنَ ٱلْقَرْيَةِ ٱلَّتِى كَانَت تَّعْمَلُ ٱلْخَبَـٰٓئِثَ ۗ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمَ سَوْءٍۢ فَـٰسِقِينَ ٧٤
৭৫ ) আর লূতকে আমি নিজের রহমতের আওতায় নিয়ে নিয়েছিলাম, সে ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
وَأَدْخَلْنَـٰهُ فِى رَحْمَتِنَآ ۖ إِنَّهُۥ مِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ٧٥
৭৬ ) আর এ একই নিয়ামত আমি নূহকে দান করেছিলাম। স্মরণ করো যখন এদের সবার আগে সে আমাকে ডেকেছিল, ৬৮ আমি তাঁর দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে মহাবিপদ ৬৯ থেকে বাঁচিয়েছিলাম।
وَنُوحًا إِذْ نَادَىٰ مِن قَبْلُ فَٱسْتَجَبْنَا لَهُۥ فَنَجَّيْنَـٰهُ وَأَهْلَهُۥ مِنَ ٱلْكَرْبِ ٱلْعَظِيمِ ٧٦
৭৭ ) আর এমন সম্প্রদায়ের মুকাবিলায় তাঁকে সাহায্য করেছিলাম যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছিল। তারা খুবই খারাপ লোক ছিল, কাজেই আমি তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।
وَنَصَرْنَـٰهُ مِنَ ٱلْقَوْمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمَ سَوْءٍۢ فَأَغْرَقْنَـٰهُمْ أَجْمَعِينَ ٧٧
৭৮ ) আর এ নিয়ামতই আমি দাউদ ও সুলাইমানকে দান করেছিলাম। স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন তারা উভয়ই একটি শস্য ক্ষেতের মোকদ্দমার ফায়সালা করছিল, যেখানে রাতের বেলা ছড়িয়ে পড়েছিল অন্য লোকদের ছাগল এবং আমি নিজেই দেখছিলাম তাদের বিচার।
وَدَاوُۥدَ وَسُلَيْمَـٰنَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِى ٱلْحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ فِيهِ غَنَمُ ٱلْقَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَـٰهِدِينَ ٧٨
৭৯ ) সে সময় আমি সুলাইমানকে সঠিক ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, অথচ প্রজ্ঞা ও জ্ঞান আমি উভয়কেই দান করেছিলাম। ৭০ দাউদের সাথে আমি পর্বতরাজী ও পক্ষীকূলকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যারা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো, ৭১ এ কাজের কর্তা আমিই ছিলাম।
فَفَهَّمْنَـٰهَا سُلَيْمَـٰنَ ۚ وَكُلًّا ءَاتَيْنَا حُكْمًۭا وَعِلْمًۭا ۚ وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُۥدَ ٱلْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَٱلطَّيْرَ ۚ وَكُنَّا فَـٰعِلِينَ ٧٩
৮০ ) আর আমি তাঁকে তোমাদের উপকারার্থে বর্ম নির্মাণ শিল্প শিখিয়েছিলাম, যাতে তোমাদেরকে পরস্পরের আঘাত থেকে রক্ষা করে, ৭২ তাহলে কি তোমরা কৃতজ্ঞ হবে? ৭৩
وَعَلَّمْنَـٰهُ صَنْعَةَ لَبُوسٍۢ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُم مِّنۢ بَأْسِكُمْ ۖ فَهَلْ أَنتُمْ شَـٰكِرُونَ ٨٠
৬৩.
বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী নাহূরা ও হারান নামে হযরত ইবরাহীমের দুই ভাই ছিল। হযরত লূত ছিল হারানের ছেলে। (আদি পুস্তক ১১:২৬) সূরা আনকাবুতে হযরত ইবরাহীমের যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তা থেকে বাহ্যত একথাই জানা যায় যে, তাঁদের সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে একমাত্র হযরত লূতই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। (দেখুন ২৬ আয়াত)
৬৪.
অর্থাৎ সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে। তার বরকত তথা সমৃদ্ধি বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উভয় ধরনেরই। বস্তুগত দিক দিয়ে তা দুনিয়ার উর্বরতম এলাকাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দু’হাজার বছর থেকে তা থেকেছে আল্লাহর নবীগণের কর্মক্ষেত্র। দুনিয়ার কোন এলাকায় এতো বিপুল সংখ্যক নবী আবির্ভূত হয়নি।
৬৫.
অর্থাৎ ছেলের পরে পৌত্রকেও নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিসিক্ত করেছি।
.
৬৬.
বাইবেলে হযরত ইবরাহীমের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটির কোন উল্লেখ নেই। বরং তাঁর জীবনের ইরাকী যুগের কোন ঘটনাই এ গ্রন্থে স্থান পেতে পারেনি। নমরূদের সাথে তাঁর মুখোমুখি সংঘাত, পিতা ও সম্প্রদায়ের সাথে সংঘর্ষ, মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সংগ্রাম, অগ্নিতে নিক্ষেপের ঘটনা এবং সবশেষে দেশ ত্যাগে বাধ্য হওয়া--- এসবের কোনটিই বাইবেলের আদিপুস্তক লেখকের দৃষ্টিগ্রাহ্য হবার যোগ্যতা লাভ করেনি। তিনি কেবলমাত্র তাঁর দেশ ত্যাগের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাও এমন ভংগীতে যেমন একটি পরিবার পেটের ধান্দায় এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে বসতি গড়ে তোলে। কুরআর ও বাইবেলের বর্ণনায় এর চাইতেও মজার যে পার্থক্য তা হচ্ছে এই যে, কুরআনের বর্ণনা মতে হযরত ইবরাহীমের মুশরিক পিতা তাঁর প্রতি জুলুম করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে বাইবেল বলে, তাঁর পিতা নিজেই পুত্র, পৌত্র ও পুত্রবধূদেরকে নিয়ে হারানে গিয়ে বসতি গড়ে তোলে। (আদি পুস্তক ১১: ৭-৩২) তারপর অকস্মাৎ একদিন আল্লাহ হযরত ইবরাহীমকে বলেন, তুমি হারান ত্যাগ করে কেনানে গিয়ে বসবাস করো এবং “আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব এবং তোমাকে আশীর্বাদ করিয়া তোমার নাম মহৎ করিব, তাহাতে তুমি আশির্বাদের আকর হইবে। যাহারা তোমাকে আশীর্বাদ করিবে, তাহাদিগকে আমি আশীর্বাদ করিব, যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দিবে তাহাকে আমি অভিশাপ দিব; এবং তোমাতে ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (১২: ১-৩) বুঝতে পারলাম না, হঠাৎ হযরত ইবরাহীমের প্রতি বাইবেল প্রণেতার এমন অনুগ্রহ দৃষ্টি কেমন করে হলো?

অবশ্য কুরআনের বিভিন্ন স্থানে হযরত ইবরাহীমের জীবনের ইরাকী যুগের যে বিস্তারিত ঘটনাবলী বিকৃত হয়েছে তালমূদে তার বেশীর ভাগ আলোচনা পাওয়া যায়। কিন্তু উভয় বর্ণনা একত্র করলে শুধুমাত্র কাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশেই পার্থক্য দেখা যাবে না বরং একথা পরিষ্কার অনুভব করা যাবে যে, তালমূদের বর্ণনা বহু স্থানে বেখাপ্পা এবং বাস্তবতা ও যুক্তি বিরোধী। অন্যদিকে কুরআন একদম পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীনভাবে হযরত ইবরাহীমের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী পেশ করে। সেখানে কোন অর্থহীন ও আজেবাজে কথা নেই। বক্তব্য সুস্পষ্ট করার জন্য আমি এখানে তালমূদের কাহিনীর সংক্ষিপ্তসার পেশ করছি। এর ফলে যারা কুরআনকে বাইবেল ও ইহুদীবাদী সাহিত্যের চর্বিত চর্বন গণ্য করে থাকেন তাদের বিভ্রান্তির ধুম্রজাল বিদীর্ণ হয়ে যাবে।

তালমূদের বর্ণনা মতে হযরত ইবরাহীমের জন্মদিনে জ্যোতিষীরা আকাশে একটি আলামত দেখে তারেহ ---এর গৃহে যে শিশুর জন্ম হয়েছে তাকে হত্যা করার পরামর্শ দিয়েছিল। তদনুসারে সে তাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু তারেহ নিজের ক্রীতদাসের পুত্রকে তার বিনিময়ে প্রদান করে তাকে বাঁচায়। এরপর তারেহ নিজের স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে একটি পর্বত গুহায় লুকিয়ে রাখে। সেখানে তারা দশ বছর অবস্থান করে। এগার বছর বয়সে হযরত ইবরাহীমকে সে হযরত নূহের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে উনচল্লিশ বছর পর্যন্ত তিনি হযরত নূহ ও তাঁর পুত্র সামের তত্বাবধানে বাস করতে থাকেন। এ সময়ে হযরত ইবরাহীম তাঁর আপন ভাইয়ের মেয়ে সারাহকে বিয়ে করেন। সারাহ তাঁর চেয়ে ৪২ বছরের ছোট ছিল। (বাইবেল একথা সুস্পষ্ট করে বলেনি যে, সারাহ হযরত ইবরাহীমের ভ্রাতুষ্পুত্রী ছিলেন। তাছাড়া বাইবেলের বর্ণনা মতে তাদের উভয়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল দশ বছরের। আদি পুস্তক ১১: ২৯ এবং ১৭: ১৭)

তারপর তালমূদ বলছে, হযরত ইবরাহীম পঞ্চাশ বছর বয়সে হযরত নূহের গৃহ ত্যাগ করে নিজের পিতার গৃহে চলে আসেন। এখানে তিনি দেখেন পিতা মূর্তিপূজারী এবং গৃহে বারো মাসের হিসেবে বারোটি মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। তিনি প্রথমে পিতাকে বুঝাবার চেষ্টা করেন। তাকে বুঝাতে অক্ষম হয়ে একদিন ঘরোয়া মূর্তি মন্দিরের মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলেন। তারেহ গৃহে এসে নিজের দেবতাদের এ অবস্থা দেখে সোজা নমরূদের কাছে চলে যায়। সেখানে অভিযোগ করে, পঞ্চাশ বছর আগে আমার গৃহে যে সন্তান জন্মেছিল আজ সে আমার ঘরে এ কাজ করেছে, আপনি এর বিহিত ব্যবস্থা করুন। নমরূদ হযরত ইবরাহীমকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি কঠোর জবাব দেন। নমরূদ তখনই তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। তারপর শলা-পরামর্শ করে ব্যাপারটির নিষ্পত্তির জন্য নিজের পরিষদের সামনে পেশ করে। পরিষদের সদস্যরা পরামর্শ দেয় এ ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হোক। তাই একটি বিরাট আগুনের কুণ্ড তৈরী করা হয় এবং হযরত ইবরাহীমকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়। হযরত ইবরাহীমের সাথে তাঁর ভাই ও শ্বশুর হারানকেও নিক্ষেপ করা হয়। কারণ নমরূদ যখন তারেহকে জিজ্ঞেস করে, তোমার এ ছেলেকে তো আমি এর জন্মের দিনেই হত্যা করতে চেয়েছিলাম, তুমি তখন একে বাঁচিয়ে এর বিনিময়ে অন্য শিশু হত্যা করিয়েছিলে কেন? এর জবাবে তারেহ বলে, আমি হারানের কথায় এ কাজ করেছিলাম। তাই এ কাজ যে করেছিল তাকে ছেড়ে দিয়ে পরামর্শদাতাকে হযরত ইবরাহীমের সাথে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার সাথে সাথেই হারান জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে যায় কিন্তু হযরত ইবরাহীমকে লোকেরা দেখে তিনি তার মধ্যে নিশ্চিন্তে আরামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নমরূদকে এ ব্যাপারে জানানো হয়। সে এসে স্বচক্ষে এ দৃশ্য দেখে চিৎকার করে বলে, “ওহে আসমানের ইলাহর বান্দা! আগুন থেকে বের হয়ে এসো এবং আমার সামনে দাড়াও।” হযরত ইবরাহীম বাইরে আসেন। নমরূদ তাঁর ভক্ত হয়ে পড়ে। তাঁকে বহু মূল্যবান নজরানা দিয়ে বিদায় করে।

এরপর তালমূদের বর্ণনা মতে হযরত ইবরাহীম দু’বছর পর্যন্ত সেখানে থাকেন। তারপর নমরূদ একটি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে। তার জ্যোতিষীরা এর তাবীর বর্ণনা করে বলে, ইবরাহীম আপনার সাম্রাজ্য ধ্বংসের কারণ হবে কাজেই তাঁকে হত্যা করুন। সে তাঁকে হত্যা করার জন্য লোক পাঠায়। কিন্তু স্বয়ং নমরূদের প্রদত্ত একজন গোলাম আল ইয়াযার পূর্বাহ্নেই তাঁকে এ পরিকল্পনার খবর দেয়। ফলে হযরত ইবরাহীম পালিয়ে হযরত নূহের কাছে আশ্রয় নেন। সেখানে তারেহ এসে তাঁর সাথে গোপনে দেখা করতে থাকে। শেষে পিতা-পুত্র পরামর্শ করে দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত করা হয়। হযরত নূহ ও সামও এ পরিকল্পনা সমর্থন করেন। এভাবে তারেহ স্বীয় পুত্র ইবরাহীম, পৌত্র লূত এবং পৌত্রী ও পুত্রবধূ সারাহকে নিয়ে উর থেকে হারান চলে আসে। (তালমূদ নির্বাচিত অংশ, এইচ, পোলানো লন্ডন, পৃষ্ঠা ৩০-৪২)

এ বর্ণনা দেখে কোন বিবেকবান ব্যক্তি কি একথা বলতে পারে যে, এটি কুরআনের উৎস হতে পারে?

৬৭.
মূলে “হুকুম ও ইলম” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনে সাধারণত হুকুম ও ইলম দান নবুওয়াদ দান করার সমার্থক হয়। “হুকম” অর্থ প্রজ্ঞাও হয়, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতাও হয়, আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে কর্তৃত্ব করার বিধিসঙ্গত অনুমতি (Authority) লাভও হয়। আর “ইলম” --এর অর্থ হচ্ছে এমন সত্য ও যথার্থ ইলম যা অহীর মাধ্যমে দান করা হয়েছে। হযরত লূতের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আ’রাফ ৮০-৮৪, সূরা হূদ, ৬৯-৮৪ এবং সূরা আল হিজর, ৫৭-৭৬ আয়াত।
.
.
৬৮.
হযরত নূহের দোয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সুদীর্ঘকাল নিজের জাতির সংশোধনের অবিরাম প্রচেষ্টা চালাবার পর শেষে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে তিনি দোয়া করেছিলেন أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ “পরওয়ারদিগার। আমি হেরে গেছি আমাকে সাহায্য করো।” (আল কামারঃ ১০) এবং رَبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا “হে আমার রব! পৃথিবী পৃষ্ঠে একজন কাফেরকেও ছেড়ে দিয়ো না।” (সূরা নূহঃ ২৬)
৬৯.
“মহাবিপদ” অর্থ একটি অসৎ কর্মশীল জাতির মধ্যে জীবন যাপন করার বিপদ অথবা মহাপ্লাবন। হযরত নূহের কাহিনী বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আল আ’রাফ ৫৯ থেকে ৬৪, সূরা ইউনূস, ৭১ থেকে ৭৩, সূরা হূদ ২৫ থেকে ৪৮ এবং বনী ইসরাঈল ৩ আয়াতসমূহ।
.
.
.
৭০.
বাইবেলে এ ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়নি। ইহুদী সাহিত্যেও আমরা এর কোন চিহ্ন দেখি না। মুসলমান তাফসীরকারগণ এর যে ব্যাখ্যা করেছেন তা হচ্ছে এই যে, এক ব্যক্তির শস্যক্ষেতে অন্য এক ব্যক্তির ছাগলগুলো রাতের বেলা ঢুকে পড়ে। সে হযরত দাউদের কাছে অভিযোগ করে। তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তির ছাগলগুলো ছিনিয়ে নিয়ে প্রথম ব্যক্তিকে দিয়ে দেবার ফায়সালা শুনিয়ে দেন। হযরত সুলায়মান এ ব্যাপারে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তিনি রায় দেন, ছাগলগুলো ততদিন পর্যন্ত ক্ষেতের মালিকের কাছে থাকবে যতদিন না সে আবার নিজের ক্ষেত শস্যে পূর্ণ করে নিতে পারে। এ সম্পর্কেই আল্লাহ বলছেন, সুলায়মানকে এ ফায়সালাটি আমিই বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু মোকাদ্দামার এ বিস্তারিত বিবরণ কুরআনে বর্ণিত হয়নি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন হাদীসেও এ বিবরণ আসেনি তাই একথা বলা যেতে পারে না যে, এ ধরনের মামলায় এটিই ইসলামী শরীয়াতের প্রমাণ্য আইন। এ কারণেই হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী ও অন্যান্য ইসলামী ফকীহগণের মধ্যে এ ব্যাপারে মতবিরোধ হয়েছে যে, যদি কারো ক্ষেত অন্যের পশু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কিনা এবং দিতে হলে কোন অবস্থায় হবে এবং কোন অবস্থায় হবে না তাছাড়া কিভাবে এ ক্ষতিপূরণ করা হবে?

এ প্রেক্ষাপটে হযরত দাউদ (আ) ও হযরত সুলায়মানের (আ) এ বিশেষ ঘটনাটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বুঝিয়ে দেয়া যে, নবীগণ নবী হবার এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে অসাধারণ শক্তি ও যোগ্যতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মানুষই হতেন। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সামান্যতম গন্ধও তাদের মধ্যে থাকতো না। এ মোকাদ্দমার ব্যাপারে অহীর মাধ্যমে হযরত দাউদকে সাহায্য করা হয়নি। ফলে তিনি ফায়সালা করার ব্যাপারে ভুলের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে হযরত সুলায়মানকে অহীর মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছে, ফলে তিনি সঠিক ফায়সালা দিয়েছেন। অথচ দু’জনই নবী ছিলেন। সামনের দিকে এ উভয় নবীর যেসব দক্ষতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাও একথা বুঝাবার জন্য যে, এসব আল্লাহ প্রদত্ত দক্ষতা এবং এ ধরনের দক্ষতার কারণে কেউ আল্লাহর সমকক্ষ হয়ে যায় না।

এ আয়াত থেকে পরোক্ষভাবে ন্যায়বিচারের এ মূলনীতিও জানা যায় যে, দু’জন বিচারপতি যদি একটি মোকাদ্দমার ফায়সালা করে এবং দু’জনের ফায়সালা বিভিন্ন হয়, তাহলে যদিও একজনের ফায়সালাই সঠিক হবে তবুও দু’জনেই ন্যায়বিচারক বিবেচিত হবেন। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে বিচার করার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা উভয়ের মধ্যে থাকতে হবে। তাদের কেউ যেন অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতা সহকারে বিচারকের আসনে বসে না যান। নবী ﷺ হাদীসে একথা আরো বেশী সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করে দিয়েছেন। বুখারীতে আমর ইবনুল আস (রা) বর্ণনা করেছেন, নবী ﷺ বলেছেনঃ

إِذَا اجْتَهَدَ الْحَاكِمُ فَأَصَابَ فله اجران و إِذَا اجْتَهَدَ فأَخْطَأَ فله اجر

“যদি বিচারক নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ফায়সালা করার পূর্ণ প্রচেষ্টা চালান, তাহলে সঠিক ফায়সালা করার ক্ষেত্রে তিনি দু’টি প্রতিদান পাবেন এবং ভুল ফায়সালা করলে পাবেন একটি প্রতিদান।”

আবু দাউদ ও ইবনে মাজায় বুরাইদার (রা.) রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে। সেখানে নবী (সা.) বলেছেনঃ “বিচারক তিন প্রকারের। এদের একজন জান্নাতী এবং দু’জন জাহান্নামী। জান্নাতের অধিকারী হচ্ছেন এমন বিচারক, যিনি সত্য চিহ্নিত করতে পারলে সে অনুযায়ী ফায়সালা দেন। কিন্তু যে ব্যক্তি সত্য চিহ্নিত করার পরও সত্য বিরোধী ফায়সালা দেয় সে জাহান্নামী। আর অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি জ্ঞান ছাড়াই লোকদের মোকদ্দমার ফায়সালা করতে বসে যায় সেও জাহান্নামী।

৭১.
মূলে مَعَ دَاوُودَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, لداؤد বলা হয়নি। অর্থাৎ “দাউদ আলাইহিস সালামের জন্য” নয় বরং “তাঁর সাথে” পাহাড় ও পাখীদেরকে অনুগত করা হয়েছিল এবং সে কারণে তারাও হযরত দাউদের (আ) সাথে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতো। একথাটিই সূরা সাদ-এ বলা হয়েছেঃ

إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ - وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً كُلٌّ لَهُ أَوَّابٌ

“আমি তার সাথে পাহাড়গুলোকে অনুগত করে দিয়েছিলাম। সকাল-সাঁঝে তারা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো। আর পাখিদেরকেও অনুগত করা হয়েছিল। তারা একত্র হতো, সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করতো।”

সূরা সাবায় এর ওপর অতিরিক্ত বলা হয়েছেঃ يَا جِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُ وَالطَّيْرَ “পাহাড়গুলোকে আমি হুকুম দিয়েছিলাম যে, তাঁর সাথে সাথে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করো এবং এই একই হুকুম পাখিদেরকেও দিয়েছিলাম।” এ বক্তব্যগুলো থেকে যে কথা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, হযরত দাউদ যখন আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা গীতি গাইতেন তখন তাঁর উচ্চতর ও সুরেলা আওয়াজে পাহাড় গুঞ্জরিত হতো, পাখিরা থেমে যেতো এবং একটা অপূর্ব মূর্ছনার সৃষ্টি হতো। এ অর্থের সমর্থন একটি হাদীস থেকে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একবার হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রা.) কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল অসাধারণ সুরেলা। নবী ﷺ সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার আওয়াজ শুনে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং অনেকক্ষণ শুনতে থাকলেন। তার পড়া শেষ হলে তিনি বললেনঃ لَقَدْ أُوتِيَ مِزْمَارًا مِنْ مَزَامِيرِ آلِ دَاوُدَ অর্থাৎ এ ব্যক্তি দাউদের সুরেলা কণ্ঠের একটি অংশ পেয়েছে।

.
৭২.
সূরা সাবায় এর ওপর আরো বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছেঃ

وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيدَ - أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ

“আর আমি তার জন্য লোহা নরম করে দিয়েছি (এবং তাকে নির্দেশ দিয়েছি) যে, পূর্ণমাপের বর্ম তৈরী করো এবং বুনন করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিমাণ রক্ষা করো।”

এ থেকে জানা যায়, আল্লাহ হযরত দাউদকে লোহা ব্যবহার করার ক্ষমতা দান করেছিলেন। বিশেষ করে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বর্ম নির্মাণের কায়দা-কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান যুগের ঐতিহাসিক ও প্রত্মতাত্বিক গবেষণা ও অনুসন্ধান থেকে এ আয়াতের অর্থের ওপর যে আলোকপাত হয় তা হচ্ছে এই যে, পৃথিবীতে লৌহ যুগ (Iron age) শুরু হয় খৃস্টপূর্ব ১২০০ ও ১০০০ অব্দের মাঝামাঝি সময়ে। আর এটিই ছিল হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের যুগ। প্রথম দিকে সিরিয়া ও এশিয়া মাইনরের হিত্তী (Hittites) জাতি লোহা ব্যবহার করে। ২০০০ থেকে ১২০০ খৃস্ট পূবাব্দ পর্যন্ত এ জাতির উত্থান দেখা যায়। তারা লোহা গলাবার ও নির্মাণের একটা জটিল পদ্ধতি জানতো। সারা দুনিয়ার দৃষ্টি থেকে তারা একে কঠোরভাবে গোপন রাখে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে যে লোহা তৈরী করা হতো তা সোনা রূপার মতো এত বেশী মূল্যবান হতো যে, তা সাধারণ কাজে ব্যবহার করা যেতো না। পরে ফিলিস্তিনীরা এ পদ্ধতি জেনে নেয় এবং তারাও আকে গোপন রাখে। তালূতের রাজত্বের পূর্বে হিত্তী ও ফিলিস্তিনীরা বনী ইসরাঈলকে যেভাবে উপর্যুপরি পরাজিত করে ফিলিস্তীন থেকে প্রায় বেদখল করে দিয়েছিল বাইবেলের বর্ণনা মতে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল এই যে, তারা লোহার রথ ব্যবহার করতো এবং তাদের কাছে লোহার তৈরী অন্যান্য অস্ত্রও থাকতো। (যিহোশূয় ১৭: ১৬ বিচারকর্তৃগণ ১: ১৯, ৪: ২-৩) খৃস্টপূর্ব ১০২০ অব্দে তালূত যখন আল্লাহর হুকুমে বনী ইসরাঈলদের শাসক পদে অধিষ্ঠিত হন তখন তিনি তাদেরকে পরপর কয়েকবার পরাজিত করে ফিলিস্তীনের বেশীর ভাগ অংশ তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন। তারপর হযরত দাউদ (১০০৪-৯৬৫ খৃঃ পূঃ) শুধুমাত্র ফিলিস্তীন ও ট্রান্স জর্দানই নয় বরং সিরিয়ারও বড় অংশে ইসরাঈলী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় লৌহ নির্মাণ শিল্পের যে গোপন কলাকৌশল হিত্তী ও ফিলিস্তীনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা উন্মোচিত হয়ে যায় এবং কেবলমাত্র উন্মোচিত হয়েই থেমে যায়নি বরং লৌহ নির্মাণের এমন পদ্ধতিও উদ্ভাবিত হয় যার ফলে সাধারণ ব্যবহারের জন্য লোহার কম দামের জিনিসপত্রও তৈরী হতে থাকে। ফিলিস্তীনের দক্ষিণে আদূম এলাকা আকরিক লোহায় (Iron Ore) সমৃদ্ধ ছিল। সম্প্রতি এ এলাকায় যে প্রত্মতাত্বিক খননকার্য চালানো হয় তার ফলে এমন অনেক জায়গার প্রত্মতাত্বিক নিদর্শনসমূহ পাওয়া গেছে যেখানে লোহা গলাবার চুল্লী বসানো ছিল। আকাবা ও আইলার সাথে সংযুক্ত হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের জামানার বন্দর ইসয়ুন জাবেরের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে যে চুল্লী পাওয়া গেছে তা পর্যবেক্ষণের পরে অনুমান করা হয়েছে যে, তার মধ্যে এমনসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো যা আজকের অত্যাধুনিক যুগের Blast Furnace এ প্রয়োগ করা হয়। এখন স্বাভাবিকভাবেই হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম সবার আগে ও সবচেয়ে বেশী করে এ নতুন আবিষ্কারকে যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকবেন। কারণ কিছুকাল আগেই আশপাশের শত্রু জাতিরা এ লোহার অস্ত্র ব্যবহার করে তাঁর জাতির জীবন ধারণ কঠিন করে দিয়েছিল।

৭৩.
হযরত দাউদ সম্পর্কে আরো বেশী জানার জন্য দেখুন সূরা আল-বাকারাহ ২৫১ আয়াত ও বনী ইসরাঈল ৭, ৬৩ টীকা)
অনুবাদ: