আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
দুর্ভাগ্যক্রমে হাদীসের এক বর্ণনায় একথা এসেছে যে, হযরত ইরাহীম (আ) তাঁর জীবনে তিনবার মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে এটি একটি “মিথ্যা।” দ্বিতীয় “মিথ্যা” হচ্ছে সূরা সাফফাতে হযরত ইবরাহীমের إِنِّي سَقِيمٌ কথাটি। আর তৃতীয় “মিথ্যাটি” হচ্ছে তাঁর নিজের স্ত্রীকে বোন বলে পরিচিত করানো। একথাটি কুরআনে নয় বরং বাইবেলের আদি পুস্তকে বলা হয়েছে। এক শ্রেণীর বিদ্বানদের “রেওয়াত” প্রীতির ব্যাপারে সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, তাদের কাছে বুখারী ও মুসলিমের কতিপয় বর্ণনাকারীর সত্যবাদিতাই বেশী প্রিয় এবং এর ফলে যে একজন নবীর ওপর মিথ্যা বলা অভিযোগ আরোপিত হচ্ছে, তার কোন পরোয়াই তাদের নেই। অপর একটি শ্রেনী এই একটিমাত্র হাদীসকে ভিত্তি করে সমগ্র হাদীস শাস্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা শুরু করে দেয় এবং বলতে থাকে, সমস্ত হাদীসের স্তূপ উঠিয়ে দূরে ছুঁড়ে দাও। কারণ এর মধ্যে যতো আজেবাজে ধরনের রেওয়ায়াত পাওয়া যায়। অথচ কোন একটি বা কতিপয় হাদীসের মধ্যে কোন ত্রুটি পাওয়া যাবার কারণে সমস্ত হাদীস অনির্ভরযোগ্য হয়ে যাবে--- এমন কোন কথা হতে পারে না। আর হাদীস শাস্ত্রের দৃষ্টিতে কোন হাদীসের বর্ণনা পরম্পরা মজবুত হওয়ার ফলে এটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে না যে, তার “মতন” (মুল হাদীস) যতই আপত্তিকর হোক না কেন তাকে চোখ বন্ধ করে “সহী” বলে মেনে নিতে হবে। বর্ণনা পরম্পরা সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবার পরও এমন অনেক কারণ থাকতে পারে, যার ফলে এমন “মতন” ত্রুটিপূর্ণ আকারে উদ্ধৃত হয়ে যায় এবং এমন সব বিষয়বস্তু সম্বলিত হয় যে, তা থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, একথাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ নিসৃত হতে পারে না। তাই সনদ তথা বর্ণনা পরম্পরার সাথে সাথে “মতন”ও দেখা অপরিহার্য। যদি মতনের মধ্যে সত্যিই কোন দোষ থেকে থাকে তাহলে এরপরও অযথা তার নির্ভুলতার ওপর জোর দেয়া মোটেই ঠিক নয়।
যে হাদীসটিতে হযরত ইবরাহীমের তিনটি “মিথ্যা কথা” বর্ণনা করা হয়েছে সেটি কেবলমাত্র এ কারণে আপত্তিকর নয় যে, এটি একজন নবীকে মিথ্যাবাদী গণ্য করেছে বরং এ কারণেও এটি ত্রুটিপূর্ণ যে, এখানে যে তিনটি ঘটনার কথার বলা হয়েছে সেগুলো সবই বিতর্কিত। এর মধ্যে “মিথ্যা”র অবস্থা তো পাঠক এইমাত্র দেখলেন। সামান্য বুদ্ধি-জ্ঞানও যার আছে তিনি কখনো এই প্রেক্ষাপটে হযরত ইবরাহীমের এই বক্তব্যকে “মিথ্যা” বলে আখ্যায়িত করতে পারেন না। এক্ষেত্রে নবী ﷺ সম্পর্কে নাউযুবিল্লাহ আমরা এমন ধারণা তো করতেই পারি না যে, তিনি এই বক্তব্যের তাৎপর্য বুঝাবেন না এবং খামাখাই একে মিথ্যা ভাষণ বলে আখ্যায়িত করবেন। আর إِنِّي سَقِيمٌ সংক্রান্ত ঘটনাটির ব্যাপারে বলা যায়, এটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা যেতে পারে না যতক্ষণ না একথা প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইবরাহীম সে সময় সম্পূর্ণ সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত ছিলেন এবং তিনি সামান্যতম অসুস্থতায়ও ভুগছিলেন না। একথা কুরআনে কোথাও বলা হয়নি এবং আলোচ্য হাদীসটি ছাড়া আর কোন নির্ভরযোগ্য হাদীসেও এ আলোচনা আসেনি। এখন বাকী থাকে স্ত্রীকে বোন বলার ঘটনাটি। এ ব্যাপারটি এত বেশী উদ্ভট যে, কাহিনীটি শোনার পর কোন ব্যক্তি প্রথমেই বলে বসবে এটা কোন ঘটনাই হতে পারে না। এটি বলা হচ্ছে তখনকার কাহিনী যখন হযরত ইবরাহীম নিজের স্ত্রী সারাকে নিয়ে মিসরে যান। বাইবেলের বর্ণনামতে তখন হযরত ইবরাহীমের বয়স ৭৫ বছর ও হযরত সারার বয়স ৬৫ বছরের কিছু বেশী ছিল। এ বয়সে হযরত ইবরাহীম ভীত হলেন মিসরের বাদশাহ এ সুন্দরীকে লাভ করার জন্য তাঁকে হত্যা করবেন। কাজেই তিনি স্ত্রীকে বললেন, যখন মিসরীয়রা তোমাকে ধরে বাদশাহর কাছে নিয়ে যেতে থাকবে তখন তুমি আমাকে নিজের ভাই বলবে এবং আমিও তোমাকে বোন বলবো, এর ফলে আমি প্রাণে বেঁচে যাবো। (আদি পুস্তকঃ১২ অধ্যায়) হাদীসে বর্ণিত তৃতীয় মিথ্যাটির ভিত্তি এই সুস্পষ্ট বাজে ও উদ্ভট ইসরাঈলী বর্ণনার ওপর প্রতিষ্ঠিত। যে হাদীসের ‘মতন’ এ ধরনের উদ্ভট বক্তব্য সম্বলিত তাকেও আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি বলে মেনে নেবো কেমন করে--- তা তার ‘সনদ’ যতই ত্রুটিমুক্ত হোক না কেন? এ ধরনের একপেশে চিন্তা বিষয়টিকে বিকৃত করে অন্য এক বিভ্রান্তির উদ্ভব ঘটায় যার প্রকাশ ঘটাচ্ছে হাদীস অস্বীকারকারী গোষ্ঠী। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন আমার লিখিত বই রাসায়েল ও মাসায়েল ২ খণ্ড, কতিপয় হাদীসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তার জবাব নিবন্ধের ১২নং জবাব)