পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

১৫৪ আয়াত

১০৩ ) কিন্তু তুমি যতই চাওনা কেন অধিকাংশ লোক তা মানবে না। ৭২
وَمَآ أَكْثَرُ ٱلنَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ ١٠٣
১০৪ ) অথচ তুমি এ খেদমতের বিনিময়ে তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিকও চাচ্ছো না। এটা তো দুনিয়াবাসীদের জন্য সাধারণভাবে একটি নসীহত ছাড়া আর কিছুই নয়। ৭৩
وَمَا تَسْـَٔلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌۭ لِّلْعَـٰلَمِينَ ١٠٤
১০৫ ) আকাশসমুহে ৭৪ ও পৃথিবীতে কত নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো তারা অতিক্রম করে যায় কিন্তু সেদিকে একটুও দৃষ্টিপাত করে না। ৭৫
وَكَأَيِّن مِّنْ ءَايَةٍۢ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ ١٠٥
১০৬ ) তাদের বেশীর ভাগ আল্লাহকে মানে কিন্তু তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। ৭৬
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ ١٠٦
১০৭ ) তারা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, আল্লাহর আযাবের কোন আকস্মিক আক্রমণ তাদেরকে গ্রাস করে নেবে না অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে তাদের ওপর সহসা কিয়ামত এসে যাবে না? ৭৭
أَفَأَمِنُوٓا۟ أَن تَأْتِيَهُمْ غَـٰشِيَةٌۭ مِّنْ عَذَابِ ٱللَّهِ أَوْ تَأْتِيَهُمُ ٱلسَّاعَةُ بَغْتَةًۭ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ ١٠٧
১০৮ ) তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাওঃ আমার পথতো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে নিজের পথ দেখছি এবং আমার সাথীরাও। আর আল্লাহ পাক-পবিত্র ৭৮ এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
قُلْ هَـٰذِهِۦ سَبِيلِىٓ أَدْعُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِى ۖ وَسُبْحَـٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ١٠٨
১০৯ ) হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি যে নবীদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাঁরা সবাই মানুষই ছিল, এসব জনবসতিরই অধিবাসী ছিল এবং তাঁদের কাছেই আমি অহী পাঠাতে থেকেছি। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং তাদের পূর্বে যেসব জাতি চলে গেছে তাদের পরিণাম দেখেনি? নিশ্চিতভাবেই আখেরাতের আবাস তাদের জন্য আরো বেশী ভালো যারা (নবীর কথা মেনে নিয়ে) তাকওয়ার পথ অবলম্বন করেছে। এখনো কি তোমরা বুঝবে না? ৭৯
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًۭا نُّوحِىٓ إِلَيْهِم مِّنْ أَهْلِ ٱلْقُرَىٰٓ ۗ أَفَلَمْ يَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۗ وَلَدَارُ ٱلْـَٔاخِرَةِ خَيْرٌۭ لِّلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ١٠٩
১১০ ) (আগের নবীদের সাথেও এমনটি হতে থেকেছে। অর্থাৎ তাঁরা দীর্ঘদিন উপদেশ দিয়ে গেছেন কিন্তু লোকেরা তাঁদের কথা শোনেনি।) এমনকি যখন নবীরা লোকদের থেকে হতাশ হয়ে গেলো এবং লোকেরাও ভাবলো তাদেরকে মিথ্যা বলা হয়েছিল তখন অকস্মাত আমার সাহায্য নবীদের কাছে পৌঁছে গেলো। তারপর এ ধরনের সময় যখন এসে যায় তখন আমার নিয়ম হচ্ছে, যাকে আমি চাই তাকে রক্ষা করি এবং অপরাধীদের প্রতি আমার আযাব তো রদ করা যেতে পারে না।
حَتَّىٰٓ إِذَا ٱسْتَيْـَٔسَ ٱلرُّسُلُ وَظَنُّوٓا۟ أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا۟ جَآءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّىَ مَن نَّشَآءُ ۖ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ ٱلْقَوْمِ ٱلْمُجْرِمِينَ ١١٠
১১১ ) পূর্ববর্তী লোকদের এ কাহিনীর মধ্যে বুদ্ধি ও বিবেচনা সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। কুরআনে এ যা কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে এগুলো বানোয়াট কথা নয় বরং এগুলো ইতিপূর্বে এসে যাওয়া কিতাবগুলোতে বর্ণিত সত্যের সমর্থন এবং সবকিছুর বিশদ বিবরণ, ৮০ আর যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।
لَقَدْ كَانَ فِى قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌۭ لِّأُو۟لِى ٱلْأَلْبَـٰبِ ۗ مَا كَانَ حَدِيثًۭا يُفْتَرَىٰ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ ٱلَّذِى بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَىْءٍۢ وَهُدًۭى وَرَحْمَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ ١١١
১ ) আলিম লাম মীম র। এগুলো আল্লাহর কিতাবের আয়াত। আর তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা কিছু নাযিল হয়েছে তা প্রকৃত সত্য কিন্তু (তোমার কওমের) অধিকাংশ লোক তা বিশ্বাস করে না।
الٓمٓر ۚ تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱلْكِتَـٰبِ ۗ وَٱلَّذِىٓ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ٱلْحَقُّ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ ١
৭২.
অর্থাৎ এরা এক অদ্ভূত ধরনের হটকারিতার রোগে ভুগছে। তোমার নবুওয়াতের বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য অনেক চিন্তা-ভাবনা ও পরামর্শ করে তারা যে দাবী করেছিল তুমি সঙ্গে সঙ্গেই সবার সামনে তা পূরণ করে দিয়েছো। এখন হয়তো তুমি আশা করছো, এ কুরআন তুমি নিজে রচনা কর না বরং সত্যিই তোমার প্রতি অহীর মাধ্যমে নাযিল হয়, একথা মেনে নিতে তারা আর ইতস্তত করবে না। কিন্তু নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, এরা এখনো মানবে না এবং নিজেদের অস্বীকৃতির ওপর অবিচল থাকার জন্য আরেকটি বাহানা খুঁজে বের করবে। কেননা, এদের না মানার আসল কারণ এটা নয় যে, তোমার সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হবার জন্য এরা কোন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ চাচ্ছিল এবং তা এরা এখনো পায়নি। বরং এর কারণ শুধুমাত্র একটিই যে, এরা তোমার কথা মেনে নিতে রাজী নয়। তাই এরা আসলেই মেনে নেবার জন্য কোন প্রমাণ খুঁজে ফিরছে না বরং না মানার জন্য বাহানা খুঁজে বেড়াচ্ছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন ভুল ধারণা দূর করা এ বক্তব্যের উদ্দেশ্য নয়। যদিও বাহ্যত তাঁকেই সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে দলকে সম্বোধন করে তাদের সমাবেশে এ ভাষণ দেয়া হচ্ছিল তাদেরকে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও অলংকারপূর্ণ বাগধারার মাধ্যমে এ হটকারিতা সম্পর্কে সতর্ক করা। তারা নিজেদের মাহফিলে তাঁকে ডেকে এনেছিল পরীক্ষা করার জন্য। সেখানে তারা অকস্মাৎ দাবী করেছিল, যদি আপনি নবী হয়ে থাকেন তাহলে বলুন বনী ইসরাঈলের মিসর যাবার ঘটনাটা কি ছিল? এর জবাবে তাদেরকে তখনই এবং সেখানেই এ সংক্ষিপ্ত কাহিনী শুনিয়ে দেয়া হয়। আর সর্বশেষে এ ছোট্ট বাক্যটি বলে তাদের সামনে একটি আয়নাও তুলে ধরা হয়েছে যে ওহে হঠকারীর দল! এ আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখে নাও, তোমরা কোন মুখে পরীক্ষা নিতে বসে গিয়েছিলে? বিবেকবান ব্যক্তি তো সত্য প্রমাণ হয়ে গেলে তা মেনে নেয়, এজন্যই সে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। কিন্তু তোমরা নিজেদের মনের মতো প্রমাণ পেয়ে গেলেও তা মেনে নাও না।
৭৩.
ওপরের সতর্কীকরণের পর এটি দ্বিতীয় সতর্কীকরণ। তবে ওর তুলনায় এর মধ্যে তিরস্কারের দিকটি কম এবং উপদেশের অংশ বেশী। এ উক্তিটিও বাহ্যত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে করা হয়েছে কিন্তু আসলে এখানে কাফেরদের সমাবেশকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাদেরকে একথা বুঝানোই উদ্দেশ্য যে, আল্লাহর বান্দারা! একটু ভেবে দেখো, তোমাদের এ হঠকারিতার এখানে অবকাশ কোথায়? যদি পয়গম্বর নিজের কোন ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য দাওয়াত ও প্রচারের এ কাজ চালু করে থাকতেন অথবা নিজের জন্য তিনি কিছু চাইতেন তাহলে অবশ্যি তোমাদের জন্য একথা বলার সুযোগ ছিল যে, আমরা এ ধরনের মতলবী লোকের কথা কেন মানবো? কিন্তু তোমরা দেখছো, এ ব্যক্তি নিস্বার্থ, তোমাদের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের ভালোর জন্য নসীহত করে যাচ্ছেন এবং এর মধ্যে তার নিজের কোন স্বার্থ লুকিয়ে নেই। কাজেই এ ধরনের হঠকারিতার সাহায্যে এর মোকাবিলা করার পেছনে কি যুক্তি আছে? যে ব্যক্তি সবার ভালোর জন্য নিস্বার্থভাবে একটি কথা বলে, তার বিরুদ্ধে খামাখা জিদ ধরে বসে থাকা কেন? খোলা মনে তার কথা শোনো। ভালো লাগলে মেনে নাও, ভালো না লাগলে মানবে না।
৭৪.
ওপরের এগারটি রুকূ’তে হযরত ইউসুফের (আ) কাহিনী শেষ হয়েছে। যদি নিছক গল্প বলা আল্লাহর অহীর উদ্দেশ্য হতো তাহলে ভাষণ এখানেই শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু এখানে তো কোন উদ্দেশ্য সামনে রেখেই গল্প বলা হয়। এ উদ্দেশ্য প্রচার করার যে কোন সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করতে মোটেই ইতস্তত করা হয় না। এখন যেহেতু লোকেরা নিজেরাই নবীকে ডেকে এনেছিল এবং গল্প শোনার জন্য কান খাড়া করেছিল, তাই তাদের ফরমায়েশী কথা শেষ হতেই নিজের উদ্দেশ্যমূলক কয়েকটি বাক্যও বলে দেয়া হলো। অতি সংক্ষেপে এ কয়েকটি বাক্যে উপদেশ ও দাওয়াতের সমস্ত বিষয়বস্তু একত্র করে দেয়া হয়েছে।
৭৫.
লোকদেরকে তাদের গাফলতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি জিনিস নিছক একটি জিনিসই নয় বরং সত্যের প্রতি ইঙ্গিতকারী একটি নিদর্শনও। যারা এ জিনিসগুলোকে শুধুমাত্র একটি জিনিস হিসেবে দেখে তারা মানুষের মতো নয় বরং পশুর মতো দেখে। পানিকে পানি, গাছকে গাছ এবং পাহাড়কে পাহাড় তো পশুরাও দেখে থাকে এবং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যেকটি পশু এগুলোর ব্যবহার ক্ষেত্রও জানে। কিন্তু মানুষকে যে উদ্দেশ্যে ইন্দ্রিয়ানুভূতি সহকারে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য মস্তিষ্ক দান করা হয়েছে তা শুধু এজন্য নয় যে, মানুষ সেগুলো দেখবে এবং সেগুলোর ব্যবহার ক্ষেত্র জানবে বরং মানুষ সত্য অনুসন্ধান করবে এবং এ নিদর্শনগুলোর সাহায্যে তাকে চিনে নেবে, এটিই হচ্ছে এর মূল উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ গাফলতির মধ্যে পড়ে আছে। আর এ গাফলতিই তাদেরকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করেছে। যদি মনের দুয়ারে এ তালা না লাগিয়ে নেয়া হতো, তাহলে নবীদের কথা বুঝা এবং তাঁদের নেতৃত্ব থেকে ফায়দা হাসিল করা লোকদের জন্য এত কঠিন হতো না।
৭৬.
ওপরে যে গাফলতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এটা আসলে তার স্বাভাবিক ফল। লোকেরা যখন পথের চিহ্ন থেকে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে তখনই তারা সোজা পথ থেকে সরে গেছে এবং চারপাশের ঝোপঝাড়ের মধ্যে আটকা পড়ে গেছে। এরপরও খুব কম লোকই এমন রয়েছে, যারা গন্তব্য সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেছে এবং আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা হিসেবে চূড়ান্তভাবে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। অধিকাংশ লোক যে গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে তা আল্লাহকে অস্বীকার করার গোমরাহী নয় বরং শিরকের গোমরাহী। অর্থাৎ তারা আল্লাহ‌ নেই একথা বলে না বরং তারা আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা, ইখতিয়ার ও অধিকারে অন্যদেরকে কোন না কোনভাবে অংশীদার করার বিভ্রান্তিতে লিপ্ত। পৃথিবী ও আকাশের বিভিন্ন নিদর্শন, যেগুলো সর্বত্র সর্বক্ষণ আল্লাহর একক সার্বভৌম কর্তৃত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, সেগুলোতে যদি শিক্ষণীয় দৃষ্টিতে দেখা হতো তাহলে কোনদিন এ বিভ্রান্তির জন্ম হতো না।
৭৭.
লোকদেরকে সতর্ক করাই এর উদ্দেশ্য। অর্থাৎ অবকাশ জীবনকে দীর্ঘতর মনে করে এবং বর্তমানের শান্তি ও নিরাপত্তাকে চিরস্থায়ী ভেবে পরিণামের চিন্তাকে ভবিষ্যতের জন্য শিকেয় তুলে রেখো না। কোন ব্যক্তিই নিশ্চয়তা সহকারে একথা বলতে পারে না যে, তার জীবনকাল অমুক সময় পর্যন্ত অবশ্যি স্থায়ী হবে। কাকে হঠাৎ কখন গ্রেফতার করা হবে এবং কোথা থেকে কি অবস্থায় তাকে ধরে আনা হবে তা কেউ জানে না। তোমাদের দিন-রাতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ভবিষ্যতের গর্ভে তোমাদের জন্য কি লুকানো আছে তা এক মুহূর্ত আগেও তোমরা জানতে পার না। কাজেই যা কিছু চিন্তা করার এখনই করে নাও। জীবনের যে পথে এগিয়ে যাচ্ছো তার ওপর সামনে অগ্রসর হবার আগে ঠিক পথে যাচ্ছো কিনা একটু থেমে চিন্তা করে দেখো। এটা যে সঠিক পথ, এর সপক্ষে কোন যথার্থ দলীল তোমাদের কাছে আছে কি? বিশ্ব প্রকৃতির নিদর্শনাবলী থেকে এর সত্য-সঠিক পথ হবার কোন প্রমাণ পাচ্ছো কি? তোমাদের স্বজাতীয় লোকেরা এ পথে চলে ইতিপূর্বে যে ফল লাভ করেছে এবং বর্তমানে তোমাদের সমাজ সংস্কৃতিতে এর যে ফলাফল দেখা যাচ্ছে তা কি একথাই প্রমাণ করে যে, তোমরা সঠিক পথে যাচ্ছো?
৭৮.
অর্থাৎ তাঁর প্রতি যেসব কথা প্রয়োগ করা হচ্ছে তা থেকে তিনি পাক-পবিত্র। যেসব দোষ, ত্রুটি, অভাব ও দুর্বলতা প্রত্যেক মুশরিকী আকীদার ভিত্তিতে তাঁর প্রতি অনিবার্যভাবে আরোপিত হয় তা থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। এমন সব দোষ, ত্রুটি ও ভুল-ভ্রান্তি থেকেও মুক্ত যেগুলো শিরকের ফলশ্রুতি হিসেবে তাঁর সাথে সম্পৃক্ত হয়।
.
৭৯.
এখানে একটি বিরাট বিষয়কে দু’তিনটি বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে। একে যদি কোন বিস্তারিত বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় তাহলে এভাবে বলা যেতে পারেঃ “তারা যে তোমার কথার প্রতি দৃষ্টি দেয় না, তার কারণ হচ্ছে এই যে, কালকে যে ব্যক্তির জন্ম হলো তাদেরই শহরে এবং তাদেরই সামনে সে শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন এবং যৌবন থেকে বার্ধক্যে পৌঁছল, তার ব্যাপারে তারা কেমন করে একথা মেনে নেবে যে, একদিন হঠাৎ আল্লাহ তাকে নিজের দূত হিসেবে নিযুক্ত করেছেন? কিন্তু এটা কোন নতুন কথা নয়। দুনিয়ায় আজ প্রথমবার তাদেরকেই এর মুখোমুখি হতে হয়নি। এর আগেও আল্লাহ দুনিয়ায় নবী পাঠিয়েছেন। তাঁরা সবাই মানুষই ছিলেন। সেখানেও কখনো অকস্মাৎ কোন শহরে কোন অপরিচিত ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেনি এবং তিনি একথা বলেননি যে, তাঁকে নবী নিযুক্ত করে পাঠানো হয়েছে। বরং মানবতার সংস্কার ও সংশোধনের জন্য যাদেরই আবির্ভাব হয়েছে তারা সবাই সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর নিজস্ব এলাকার ও জনবসতির লোকই ছিলেন। ঈসা, মূসা, ইবরাহীম, নূহ আলাইহিমুস সালাম কারা ছিলেন? যেসব জাতি তাঁদের সংস্কারের আহবান গ্রহণ করেনি এবং নিজদের ভিত্তিহীন কল্পনা বিলাসিতা ও নিয়ন্ত্রণহীন কামনা-বাসনার পিছনে দৌঁড়াতে থেকেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে তোমরা নিজেরাই দেখে নাও। তোমরা নিজেদের বাণিজ্যিক সফরসমূহে আদ, সামূদ, মাদয়ান ও লূত জাতির ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকার ওপর দিয়ে যাওয়া আসা করছো। সেখানে কি তোমরা কোন শিক্ষা পাওনি? দুনিয়ায় তারা এই যে পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে এটিই তো এ খবর দিয়ে যাচ্ছে যে, আখেরাতে তাদের পরিণাম হবে এর চেয়ে আরো বেশী ভয়াবহ। আর যারা দুনিয়ায় নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছে তারা কেবল দুনিয়ায়ই ভালো থাকেনি, আখেরাতেও তাদের পরিণতি এর চেয়ে আরো অনেক বেশী ভালো হবে।”
.
৮০.
অর্থাৎ মানুষের হেদায়াত পাওয়া ও পথ দেখার জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার প্রত্যেটির বিস্তারিত বিবরণ। কেউ কেউ “প্রত্যেকটি জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ” শব্দাবলী থেকে অযথা সারা দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ অর্থ করেন এবং এরপর কুরআনে উদ্ভিদ বিদ্যা, চিকিৎসা শাস্ত্র, বিজ্ঞান ও অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ না পেয়ে পেরেশান হয়ে পড়েন।
.
১.
এটাই এ সূরার ভূমিকা। এখানে মাত্র কয়েকটি শব্দে সমগ্র বক্তব্যের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। বক্তব্যের লক্ষ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁকে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ বলছেনঃ হে নবী! তোমার সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক এ শিক্ষা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি এটা তোমার প্রতি নাযিল করেছি এবং লোকেরা মানুক বা না মানুক এটাই সত্য। এ সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর মূল ভাষণ শুরু হয়ে গেছে। তাতে অস্বীকারকারীদেরকে এ শিক্ষা সত্য কেন এবং এর ব্যাপারে তাদের নীতি কতটুকু ভুল-একথা বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ভাষণটি বুঝতে হলে শুরুতেই এ বিষয়টি সামনে থাকা প্রয়োজন যে, নবী ﷺ সে সময় যে জিনিসটির দিকে লোকদেরকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন তা তিনটি মৌলিক বিষয় সমন্বিত ছিল। এক, প্রভুত্বের কর্তৃত্ব সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এ কারণে তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদাত ও বন্দেগী লাভের যোগ্য নয়। দুই, এ জীবনের পরে আর একটি জীবন আছে। সেখানে তোমাদের নিজেদের যাবতীয় কার্যক্রমের জবাবদিহি করতে হবে। তিন, আমি আল্লাহর রসূল এবং আমি যা কিছু পেশ করছি নিজের পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে পেশ করছি। এ তিনটি মৌলিক কথা মানতে লোকেরা অস্বীকার করছিল। এ কথাগুলোকেই এ ভাষণের মধ্যে বার বার বিভিন্ন পদ্ধতিতে বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এগুলো সম্পর্কে লোকদের সন্দেহ ও আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে।
অনুবাদ: