পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

১৫৪ আয়াত

৯ ) তোমাদের কাছে কি ১৪ তোমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত জাতিগুলোর বৃত্তান্ত পৌঁছেনি? নূহের জাতি, আদ, সামূদ এবং তাদের পরে আগমনকারী বহু জাতি, যাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ‌ জানেন? তাদের রসূলরা যখন তাদের কাছে দ্ব্যর্থহীন কথা ও সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসেন তখন তারা নিজেদের মুখে হাত চাপা দেয় ১৫ এবং বলে, “যে বার্তা সহকারে তোমাদের পাঠানো হয়েছে আমরা তা মানি না এবং তোমরা আমাদের যে জিনিসের দাওয়াত দিচ্ছো তার ব্যাপারে আমরা যুগপৎ উদ্বেগ ও সংশয়ের মধ্যে আছি।” ১৬
أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَؤُا۟ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍۢ وَعَادٍۢ وَثَمُودَ ۛ وَٱلَّذِينَ مِنۢ بَعْدِهِمْ ۛ لَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا ٱللَّهُ ۚ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَرَدُّوٓا۟ أَيْدِيَهُمْ فِىٓ أَفْوَٰهِهِمْ وَقَالُوٓا۟ إِنَّا كَفَرْنَا بِمَآ أُرْسِلْتُم بِهِۦ وَإِنَّا لَفِى شَكٍّۢ مِّمَّا تَدْعُونَنَآ إِلَيْهِ مُرِيبٍۢ ٩
১০ ) তাদের রসূলরা বলে, “আল্লাহর ব্যাপারে কি সন্দেহ আছে, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা? ১৭ তিনি তোমাদের ডাকছেন তোমাদের গুনাহ মাফ করার এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের অবকাশ দেয়ার জন্য।” ১৮ তারা জবাব দেয়, “তোমরা আমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও। ১৯ বাপ-দাদাদের থেকে যাদের ইবাদাত চলে আসছে তোমরা তাদের ইবাদাত থেকে আমাদের ফেরাতে চাও। ঠিক আছে তাহলে আনো কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ।” ২০
۞ قَالَتْ رُسُلُهُمْ أَفِى ٱللَّهِ شَكٌّۭ فَاطِرِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ يَدْعُوكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ إِلَىٰٓ أَجَلٍۢ مُّسَمًّۭى ۚ قَالُوٓا۟ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا بَشَرٌۭ مِّثْلُنَا تُرِيدُونَ أَن تَصُدُّونَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ ءَابَآؤُنَا فَأْتُونَا بِسُلْطَـٰنٍۢ مُّبِينٍۢ ١٠
১১ ) তাদের রসূলুরা তাদেরকে বলে, “যথার্থই আমরা তোমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নই। কিন্তু আল্লাহ‌ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। ২১ আর তোমাদের কোন প্রমাণ এনে দেবো, এ ক্ষমতা আমাদের নেই। প্রমাণ তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে আসতে পারে এবং ঈমানদারদের আল্লাহরই ওপর ভরসা রাখা উচিত।
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِن نَّحْنُ إِلَّا بَشَرٌۭ مِّثْلُكُمْ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ يَمُنُّ عَلَىٰ مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۖ وَمَا كَانَ لَنَآ أَن نَّأْتِيَكُم بِسُلْطَـٰنٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ١١
১২ ) আর আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করবো না কেন, যখন আমাদের জীবনের পথে তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন? তোমরা আমাদের যে যন্ত্রণা দিচ্ছো তার ওপর আমরা সবর করবো এবং ভরসাকারীদের ভরসা আল্লাহরই ওপর হওয়া উচিত।”
وَمَا لَنَآ أَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى ٱللَّهِ وَقَدْ هَدَىٰنَا سُبُلَنَا ۚ وَلَنَصْبِرَنَّ عَلَىٰ مَآ ءَاذَيْتُمُونَا ۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُتَوَكِّلُونَ ١٢
১৩ ) শেষ পর্যন্ত অস্বীকারকারীরা তাদের রসূলদের বলে দিল, “হয় তোমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের মিল্লাতে ২২ আর নয়তো আমরা তোমাদের বের করে দেবো আমাদের দেশ থেকে।” তখন তাদের রব তাদের কাছে অহী পাঠালেন, “আমি এ জালেমদের ধ্বংস করে দেবো
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُم مِّنْ أَرْضِنَآ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِى مِلَّتِنَا ۖ فَأَوْحَىٰٓ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ ٱلظَّـٰلِمِينَ ١٣
১৪ ) এবং এদের পর পৃথিবীতে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করবো। ২৩ এটা হচ্ছে তার পুরস্কার, যে আমার সামনে জবাবদিহি করার ভয় করে এবং আমার শাস্তির ভয়ে ভীত।”
وَلَنُسْكِنَنَّكُمُ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِهِمْ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَافَ مَقَامِى وَخَافَ وَعِيدِ ١٤
১৫ ) তারা ফায়সালা চেয়েছিল (ফলে এভাবে তাদের ফায়সালা হলো) এবং প্রত্যেক উদ্ধত সত্যের দুশমন ব্যর্থ মনোরথ হলো। ২৪
وَٱسْتَفْتَحُوا۟ وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍۢ ١٥
১৬ ) এরপর সামনে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তাকে পান করতে দেয়া হবে গলিত পুঁজের মতো পানি,
مِّن وَرَآئِهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِن مَّآءٍۢ صَدِيدٍۢ ١٦
১৭ ) যা সে জবরদস্তি গলা দিয়ে নামাবার চেষ্টা করবে এবং বড় কষ্টে নামাতে পারবে। মৃত্যু সকল দিক দিয়ে তার ওপর ছেয়ে থাকবে কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং সামনের দিকে একটি কঠোর শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে।
يَتَجَرَّعُهُۥ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُۥ وَيَأْتِيهِ ٱلْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍۢ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍۢ ۖ وَمِن وَرَآئِهِۦ عَذَابٌ غَلِيظٌۭ ١٧
১৮ ) যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করলো তাদের কার্যক্রমের উপমা হচ্ছে এমন ছাই-এর মতো, যাকে একটি ঝনঝাক্ষুব্ধ দিনের প্রবল বাতাস উড়িয়ে দিয়েছে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের কোনই ফল লাভ করতে পারবে না। ২৫ এটিই চরম বিভ্রান্তি।
مَّثَلُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِرَبِّهِمْ ۖ أَعْمَـٰلُهُمْ كَرَمَادٍ ٱشْتَدَّتْ بِهِ ٱلرِّيحُ فِى يَوْمٍ عَاصِفٍۢ ۖ لَّا يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُوا۟ عَلَىٰ شَىْءٍۢ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلضَّلَـٰلُ ٱلْبَعِيدُ ١٨
১৪.
হযরত মূসার (আ) ভাষণ ওপরে শেষ হয়ে গেছে। এখন সরাসরি মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করা হচ্ছে।
১৫.
এ শব্দগুলোর ব্যাখ্যার তাফসীরকারদের মধ্যে বেশ কিছু মতবিরোধ দেখা গেছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন। আমাদের মতে এর সবচেয়ে নিকবর্তী অর্থ তাই হতে পারে যা প্রকাশ করার জন্য আমরা বলে থাকি, “কানে হাত চাপা দিয়েছে, বা মুখে হাত চাপা দিয়েছে।” কারণ পরবর্তী বাক্যের বক্তব্যের মধ্যে পরিষ্কার অস্বীকৃতি ও এ সাথে হতবাক হয়ে যাওয়ার ভাব প্রকাশ পেয়েছে এবং এর মধ্যে কিছু ক্রোধের ভাবধারাও মিশে আছে।
১৬.
অর্থাৎ এমন সংশয় যার ফলে প্রশান্তি বিদায় নিয়েছে। সত্যের দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এ দাওয়াত যখন শুরু হয় তখন তার কারণে চতুর্দিক ে অবশ্যি একটা ব্যাকুলতা, হৈ চৈ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়ে যায় ঠিকই এবং অস্বীকার ও বিরোধিতাকারীরাও ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে পূর্ণ প্রশান্তির সাথে তা অস্বীকার বা তার বিরোধিতা করতে পারে না। তারা যত প্রবলভাবেই তাকে প্রত্যাখ্যান করুক এবং যতই শক্তি প্রয়োগ করে তার বিরোধিতা করুক না কেন দাওয়াতের সত্যতা, তার ন্যায় সঙ্গত যুক্তি সমূহ, তার সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কথা, তাহার মনোমুগ্ধকর ভাষা, তার আহবায়কের নিখুঁত চরিত্র, তার প্রতি বিশ্বাসীদের জীবনধারায় সূচিত সুস্পষ্ট বিপ্লব এবং তাদের নিজেদের সত্য কথা অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন কার্যাবলী-এসব জিনিস মিলেমিশে অতীব কট্টর বিরোধীর মনেও অস্থিরতার তরংগ সৃষ্টি করে দেয়। সত্যের আহবায়কদেরকে যারা অস্থির ও ব্যাকুল করে দেয় তারা নিজেরাও স্থিরতা ও মানসিক প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
১৭.
রসূলদের একথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক যুগের মুশরিকরা আল্লাহর অস্তিত্ব মানতো এবং আল্লাহ‌ পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা একথাও স্বীকার করতো। এরই ভিত্তিতে রসূলগণ বলেছেন, এরপর তোমাদের সন্দেহ থাকে কিসে? আমরা যে জিনিসের দিকে তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছি তা এছাড়া আর কিছুই নয় যে, পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা আল্লাহ‌ তোমাদের বন্দেগী লাভের যথার্থ হকদার। এরপরও কি আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদের সন্দেহ আছে?
১৮.
নির্দিষ্ট সময় মানে ব্যক্তির মৃত্যুকালও হতে পারে আবার কিয়ামতও হতে পারে। জাতিসমূহের উত্থান ও পতনের ব্যাপারে বলা যেতে পারে, আল্লাহর কাছে তাদের উত্থান-পতনের সময় কাল নির্দিষ্ট হওয়ার বিষয়টি তাদের গুণগত অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। একটি ভালো জাতি যদি তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিকৃতির সৃষ্টি করে তাহলে তার কর্মের অবকাশ কমিয়ে দেয়া হয় এবং তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। আর একটি ভ্রষ্ট জাতি যদি নিজেদের অসৎগুণাবলীকে শুধরে নিয়ে সৎগুণাবলীতে পরিবর্তিত করে তাহলে তার কর্মের অবকাশ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এমনকি তা কিয়ামত পর্যন্তও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এ বিষয়বস্তুর দিকেই সূরা রা’আদের ১১ আয়াতে ইঙ্গিত করে। আল্লাহ‌ বলেছেন, আল্লাহ‌ কোন জাতির অবস্থার ততক্ষন পরিবর্তন ঘটান না যতক্ষণ না সে নিজের গুণাবলীর পরিবর্তন করে।
১৯.
তাদের কথার অর্থ ছিল এই যে, তোমাকে আমরা সব দিক দিয়ে আমাদের মত একজন মানুষই দেখছি। তুমি পানাহার করো, নিদ্রা যাও, তোমার স্ত্রী ও সন্তানাদি আছে তোমার মধ্যে ক্ষুধা, পিপাসা, রোগ, শোক, ঠাণ্ডা ও গরমের তথা সব জিনিসের অনুভূতি আছে। এসব ব্যাপারে এবং সব ধরনের মানবিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে আমাদের সাথে তোমার সাদৃশ্য রয়েছে। তোমার মধ্যে এমন কোন অসাধারণত্ব দেখছি না যার ভিত্তিতে আমরা এ কথা মেনে নিতে পারি যে, তুমি আল্লাহর কাছে পৌঁছে গিয়েছো, আল্লাহ‌ তোমার সাথে কথা বলেন এবং ফেরেশতারা তোমার কাছে আসে।
২০.
অর্থাৎ এমন কোন প্রমাণ যা আমরা চোখে দেখি এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করি। যে প্রমাণ দেখে আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, যথার্থই আল্লাহ‌ তোমাকে পাঠিয়েছেন এবং তুমি এই যে বাণী এনেছো তা আল্লাহর বাণী।
২১.
অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আমি তো মানুষই। তবে আল্লাহ‌ সত্যের তত্বজ্ঞান ও পূর্ণ অন্তরদৃষ্টি দান করে তোমাদের মধ্য থেকে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন। এখানে আমার সামর্থ্যর কোন ব্যাপার নেই। এ তো আল্লাহর পূর্ণ ইখতিয়ারের ব্যাপার। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যা ইচ্ছা দেন। আমার কাছে যা কিছু এসেছে তা আমি তোমাদের কাছে পাঠাতে বলতে পারি না এবং আমার কাছে যে সত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে তা থেকে আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিতেও পারি না।
.
.
২২.
এর মানে এ নয় যে, নবুওয়াতের মর্যাদায় সমাসীন হবার আগে নবী গণ নিজেদের পথভ্রষ্ট সম্প্রদয়ের মিল্লাত বা ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতেন। বরং এর মানে হচ্ছে, নবুওয়াত লাভের পূর্বে যেহেতু তাঁরা এক ধরনের নীরব জীবন যাপন করতেন, কোন ধর্ম প্রচার করতেন না এবং প্রচলিত কোন ধর্মের প্রতিবাদও করতেন না তাই তাঁদের সম্প্রদায় মনে করতো তাঁরা তাদেরই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তারপর নবুওয়াতের কাজ শুরু করে দেয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে দোষারোপ করা হতো যে, তাঁর বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করেছেন। অথচ নবুওয়াত লাভের আগেও তাঁরা কখনো মুশরিকদের ধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। যার ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মচ্যুতির অভিযোগ করা যেতে পারে।
.
২৩.
অর্থাৎ ভীত হয়ো না, এরা বলছে, তোমরা এ দেশে থাকতে পারবে না কিন্তু আমি বলছি এখন আর এরা এ দেশে থাকতে পারবে না। এখন যারা তোমাকে মানবে তারাই এখানে থাকবে।
.
২৪.
মনে রাখা দরকার, এখানে এ ঐতিহাসিক ধারা বিবরণীর আকারে আসলে মক্কার কাফেরদের কথার জবাব দেয়া হচ্ছে, যা তারা নবী (সা.) কে বলতো। আপাতদৃষ্টিতে অতীতের নবীগণ এবং তাঁদের সম্প্রদায়ের ঘটনাবলী উল্লেখ করা হচ্ছে, কিন্তু তা প্রযুক্ত হচ্ছে এ সূরা নাযিলের সময় যেসব ঘটনা ঘটে চলছিল তার ওপর। এ স্থানে মক্কার কাফেরদেরকে বরং আরবের মুশরিকদেরকে যেন পরিষ্কার ভাষায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের ভবিষ্যত এখন নির্ভর করবে তোমরা মুহাম্মাদী দাওয়াতের মোকাবেলায় যে মনোভাব ও কর্মনীতি অবলম্বন করবে তার ওপর। যদি এ দাওয়াত গ্রহণ করো তাহলে আরব ভূখণ্ডে থাকতে পারবে আর যদি তা প্রত্যাখ্যান করো তাহলে এখান থেকে তোমাদের নাম-নিশানা মুছে যাবে। কার্যত ঐতিহাসিক ঘটনাবলী একথাটিকে একটি প্রমাণিত সত্যে পরিণত করে দিয়েছে। এ ভবিষ্যত বাণীর পর পুরো পনের বছর পার হতে না হতেই দেখা গেলো সমগ্র আরব ভূখণ্ডে একজন মুশরিকেরও অস্তিত্ব নেই।
.
.
২৫.
অর্থাৎ যারা নিজেদের রবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, অবিশ্বস্ততা, অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারমূলক আচরণ, নাফরমানী ও বিদ্রোহাত্মক কর্মপন্থা অবলম্বন করলো এবং নবীগণ যে আনুগত্য ও বন্দেগীর পথ অবলম্বন করার দাওয়াত নিয়ে আসেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ড এবং সারা জীবনের সমস্ত আমল শেষ পর্যন্ত এমনি অর্থহীন প্রমাণিত হবে যেমন একটি ছাই-এর স্তূপ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় জমা হতে হতে তা এক সময় একটি বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র একদিনের ঘুর্ণিঝড়ে তা এমনভাবে উড়ে গেলো যে তার প্রত্যেকটি কণা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। তাদের চাকচিক্যময় সভ্যতা, বিপুল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, বিস্ময়কর শিল্প-কল-কারখানা, মহা প্রতাপশালী রাষ্ট্র, বিশালায়তন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চারুকলা-ভাস্কর্য-স্থাপত্যের বিশাল ভাণ্ডার, এমনকি তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, বাহ্যিক সৎকার্যাবলী এবং দান ও জনকল্যাণমূলক এমন সব কাজ-কর্ম যেগুলোর জন্য তারা দুনিয়ায় গর্ব করে বেড়ায়, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ছাই-এর স্তূপে পরিণত হবে। কিয়ামতের দিনের ঘুর্ণিঝড় এ ছাই-এর স্তূপকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং আখেরাতের জীবনে আল্লাহর মীযানে রেখে সামান্যতম ওজন পাওয়ার জন্য তার একটি কণাও তাদের কাছে থাকবে না।
.
অনুবাদ: