পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

১৫৪ আয়াত

৩২ ) তোমার আগেও অনেক রসূলকে বিদ্রূপ করা হয়েছে। কিন্তু আমি সবসময় অমান্যকারীদেরকে ঢিল দিয়ে এসেছি এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে পাকড়াও করেছি। তাহলে দেখো আমার শাস্তি কেমন কঠোর ছিল।
وَلَقَدِ ٱسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍۢ مِّن قَبْلِكَ فَأَمْلَيْتُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ ٣٢
৩৩ ) তবে কি যিনি প্রত্যেক ব্যক্তির উপার্জনের প্রতি নজর রাখেন ৫০ (তাঁর মোকাবিলায় এ দুঃসাহস করা হচ্ছে যে) ৫১ লোকেরা তাঁর কিছু শরীক ঠিক করে রেখেছে? হে নবী! এদেরকে বলো, (যদি তারা সত্যিই আল্লাহর বানানো শরীক হয়ে থাকে তাহলে) তাদের পরিচয় দাও, তারা কারা? না কি তোমরা আল্লাহকে এমন একটি নতুন খবর দিচ্ছো যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে তাঁর অজানাই রয়ে গেছে? অথবা তোমরা এমনি যা মুখে আসে বলে দাও? ৫২ আসলে যারা সত্যের দাওয়াত মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য তাদের প্রতারণাসমূহকে ৫৩ সুসজ্জিত করে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে সত্য-সঠিক পথ থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। ৫৪ তারপর আল্লাহ যাকে গোমরাহীতে লিপ্ত করেন তাকে পথ দেখাবার কেউ নেই।
أَفَمَنْ هُوَ قَآئِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا۟ لِلَّهِ شُرَكَآءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ تُنَبِّـُٔونَهُۥ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى ٱلْأَرْضِ أَم بِظَـٰهِرٍۢ مِّنَ ٱلْقَوْلِ ۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا۟ عَنِ ٱلسَّبِيلِ ۗ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِنْ هَادٍۢ ٣٣
৩৪ ) এ ধরনের লোকদের জন্য দুনিয়ার জীবনেই রয়েছে আযাব এবং আখেরাতের আযাব এর চেয়েও বেশী কঠিন। তাদেরকে আল্লাহর হাত থেকে বাঁচাবার কেউ নেই।
لَّهُمْ عَذَابٌۭ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ ٱلْـَٔاخِرَةِ أَشَقُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّنَ ٱللَّهِ مِن وَاقٍۢ ٣٤
৩৫ ) যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার পাদদেশে নদী প্রবাহিত হচ্ছে, তার ফলসমূহ চিরস্থায়ী এবং তার ছায়ার বিনাশ নেই। এ হচ্ছে মুত্তাকীদের পরিণাম। অন্যদিকে সত্য অমান্যকারীদের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন।
۞ مَّثَلُ ٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِى وُعِدَ ٱلْمُتَّقُونَ ۖ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ ۖ أُكُلُهَا دَآئِمٌۭ وَظِلُّهَا ۚ تِلْكَ عُقْبَى ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوا۟ ۖ وَّعُقْبَى ٱلْكَـٰفِرِينَ ٱلنَّارُ ٣٥
৩৬ ) হে নবী! যাদেরকে আমি আগে কিতাব দিয়েছিলাম তারা তোমার প্রতি আমি যে কিতাব নাযিল করেছি তাতে আনন্দিত। আর বিভিন্ন দলে এমন কিছু লোক আছে যারা এর কোন কোন কথা মানে না। তুমি পরিষ্কার বলে দাও, “আমাকে তো শুধুমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই আমি তাঁরই দিকে আহবান জানাচ্ছি এবং তাঁরই কাছে আমার প্রত্যাবর্তন।” ৫৫
وَٱلَّذِينَ ءَاتَيْنَـٰهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ يَفْرَحُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ ۖ وَمِنَ ٱلْأَحْزَابِ مَن يُنكِرُ بَعْضَهُۥ ۚ قُلْ إِنَّمَآ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ ٱللَّهَ وَلَآ أُشْرِكَ بِهِۦٓ ۚ إِلَيْهِ أَدْعُوا۟ وَإِلَيْهِ مَـَٔابِ ٣٦
৩৭ ) এ হেদায়াতের সাথে আমি এ আরবী ফরমান তোমার প্রতি নাযিল করেছি। এখন তোমার কাছে যে জ্ঞান এসে গেছে তা সত্ত্বেও যদি তুমি লোকদের খেয়াল খুশীর তাবেদারী করো তাহলে আল্লাহর মোকাবিলায় তোমার কোন সহায়ও থাকবে না, আর কেউ তাঁর পাকড়াও থেকেও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَـٰهُ حُكْمًا عَرَبِيًّۭا ۚ وَلَئِنِ ٱتَّبَعْتَ أَهْوَآءَهُم بَعْدَ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن وَلِىٍّۢ وَلَا وَاقٍۢ ٣٧
৩৮ ) তোমার আগেও আমি অনেক রসূল পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান সন্ততি দিয়েছি। ৫৬ আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া নিজেই কোন নিদর্শন এনে দেখাবার শক্তি কোন রসূলেরও ছিল না। ৫৭ প্রত্যেক যুগের জন্য একটি কিতাব রয়েছে।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًۭا مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَٰجًۭا وَذُرِّيَّةًۭ ۚ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَن يَأْتِىَ بِـَٔايَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۗ لِكُلِّ أَجَلٍۢ كِتَابٌۭ ٣٨
৩৯ ) আল্লাহ যা চান নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং যা চান কায়েম রাখেন। উম্মুল কিতাব তাঁর কাছেই আছে। ৫৮
يَمْحُوا۟ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ وَيُثْبِتُ ۖ وَعِندَهُۥٓ أُمُّ ٱلْكِتَـٰبِ ٣٩
৪০ ) হে নবী! আমি এদেরকে যে অশুভ পরিণামের ভয় দেখাচ্ছি চাই তার কোন অংশ আমি তোমার জীবিতাবস্থায় তোমাকে দেখিয়ে দেই অথবা তা প্রকাশ হবার আগেই তোমাকে উঠিয়ে নিই- সর্বাবস্থায় তোমার কাজই হবে শুধুমাত্র পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া আর হিসেব নেয়া হলো আমার কাজ। ৫৯
وَإِن مَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ ٱلَّذِى نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ ٱلْبَلَـٰغُ وَعَلَيْنَا ٱلْحِسَابُ ٤٠
৪১ ) এরা কি দেখে না আমি এ ভূখণ্ডের ওপর এগিয়ে চলছি এবং এর গণ্ডী চতুরদিক থেকে সংকুচিত করে আনছি? ৬০ আল্লাহ রাজত্ব করছেন, তাঁর সিদ্ধান্ত পুনরবিবেচনা করার কেউ নেই এবং তাঁর হিসেব নিতে একটুও দেরী হয় না।
أَوَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّا نَأْتِى ٱلْأَرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ وَٱللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِۦ ۚ وَهُوَ سَرِيعُ ٱلْحِسَابِ ٤١
.
৫০.
অর্থাৎ যিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকটি লোকের অবস্থা জানেন। কোন সৎলোকের সৎকাজ এবং অসৎলোকের অসৎকাজ যার দৃষ্টির আড়ালে নেই।
৫১.
দুঃসাহস হচ্ছে এই যে, তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ দাঁড় করানো হচ্ছে, তাঁর সত্ত্বা, গুণাবলী ও অধিকারে তাঁর সৃষ্টিকে শরীক করা হচ্ছে এবং তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে অবস্থান করে লোকেরা মনে করছে আমরা যা ইচ্ছা-করবো, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কেউ নেই।
৫২.
অর্থাৎ তোমরা যে তাঁর শরীক দাঁড় করাচ্ছো এ ব্যাপারে তিন ধরনের অবস্থা সম্ভবপরঃ

একঃ আল্লাহ‌ কোন নির্দিষ্ট সত্তাকে তাঁর গুণাবলী, ক্ষমতা বা অধিকারে শরীক গণ্য করেছেন বলে তোমাদের কাছে কোন প্রামান্য ঘোষণা এসেছে কি? যদি এসে থাকে তাহলে মেহেরবানী করে বলো তারা কারা এবং তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করার সংবাদ তোমরা পেয়েছো কিসের মাধ্যমে?

দুইঃ আল্লাহ‌ নিজেই জানেন না পৃথিবীতে কিছু সত্তা তাঁর অংশীদার হয়ে গেছে এবং এখন তোমরা তাঁকে এ খবর দিতে যাচ্ছো যদি এ ব্যাপারেই হয়ে থাকে তাহলে স্পষ্টভাবে নিজেদের এ ভূমিকার কথা স্বীকার করো। তারপর দুনিয়ার কতজন নির্বোধ তোমাদের এ উদ্ভট মতবাদের অনুসারী থাকে তা আমিও দেখে নেবো।

তিনঃ কিন্তু যদি এ দু’টি অবস্থার কোনটি সম্ভবপর না হয়ে থাকে তাহলে তৃতীয় যে অবস্থাটি থাকে সেটি হচ্ছে এই যে, কোন প্রকার যুক্তি প্রমাণ ছাড়াই তোমরা যাকে ইচ্ছা তাকেই আল্লাহর আত্মীয় মনে করে নাও, যাকে ইচ্ছা তাকেই পরম দাতা ও ফরিয়াদ শ্রবণকারী গণ্য করো এবং যার সম্পর্কে ইচ্ছা দাবী করে দাও যে, অমুক এলাকার রাজা অমুক সাহেব এবং অমুক কাজটি অমুক সাহেবের সাহায্য-সহায়তায় সম্পন্ন হয়।

৫৩.
এ শিরককে প্রতারণা বলার একটি কারণ হচ্ছে এই যে, আসলে যেসব নক্ষত্র, ফেরেশতা, আত্মা বা মহামানবকে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার অধিকারী গণ্য করা হয়েছে এবং যাদেরকে আল্লাহর বিশেষ অধিকারে শরীক করা হয়েছে, তাদের কেউই কখনো এসব গুণ, অধিকার ও ক্ষমতার দাবী করেনি এবং কখনো লোকদেরকে এ শিক্ষা দেয়নি যে, তোমরা আমাদের সামনে পূজা অর্চনার অনুষ্ঠানাদি পালন করো, আমরা তোমাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে দেবো। কিছু ধূর্ত লোক সাধারণ মানুষের ওপর নিজেদের প্রভুত্বের দাপট চালাবার এবং তাদের উপার্জনে অংশ নেবার উদ্দেশ্যে কিছু বানোয়াট ইলাহ তৈরী করে নিয়েছে। লোকদেরকে তাদের ভক্তশ্রেণীতে পরিণত করেছে এবং নিজেদেরকে কোন না কোনভাবে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড় করিয়ে আপন আপন স্বার্থোদ্ধারের কাজ শুরু করে দিয়েছে।

শিরককে প্রতারণা বলার দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে এই যে, আসলে এটি একটি আত্মপ্রতারণা এবং এমন একটি গোপন দরজা যেখান দিয়ে মানুষ বৈষয়িক স্বার্থ-পূজা, নৈতিক বিধিনিষেধ থেকে বাঁচা এবং দায়িত্বহীন জীবন যাপন করার জন্য পলায়নের পথ বের করে।

তৃতীয় যে কারণটির ভিত্তিতে মুশরিকদের কর্মপদ্ধতিকে প্রতারণা বলা হয়েছে তা পরে আসছে।

৫৪.
মানুষ যখন একটি জিনিসের মোকাবিলায় অন্য একটি জিনিস গ্রহণ করে তখন মানসিকভাবে নিজেকে নিশ্চিন্ত করার এবং নিজের নির্ভুলতা ও সঠিক পথ অবলম্বনের ব্যাপারে লোকদের কে নিশ্চয়তা দান করার জন্য নিজের গৃহীত জিনিসকে সকল প্রকার যু্‌ক্তি-প্রমাণ পেশ করে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে এবং নিজের প্রত্যাখ্যাত জিনিসটির বিরুদ্ধে সব রকম যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে থাকে। এটাই মানুষের প্রকৃতি। এ কারণে বলা হয়েছেঃ যখন তারা সত্যের আহবান মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তখন প্রকৃতির আইন অনুযায়ী তাদের জন্য তাদের পথভ্রষ্টতাকে এবং এ পথভ্রষ্টতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য তাদের প্রতারণাকে সুদৃশ্য ও সুসজ্জিত করে দেয়া হয়েছে এবং এ প্রাকৃতিক রীতি অনুযায়ী তাদের সত্য সঠিক পথে আসা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
.
.
.
৫৫.
এ সময় বিরোধীদের পক্ষ থেকে যে একটি বিশেষ কথা বলা হচ্ছিল এটি তার জবাব। তারা বলতো, এ ব্যক্তি নিজের দাবী অনুযায়ী যদি সত্যিসত্যিই সেই একই শিক্ষা নিয়ে এসে থাকেন যা ইতিপূর্বেকার সকল নবী এনেছিলেন, তাহলে আগের নবীদের অনুসারী ইহুদী ও খৃস্টানরা অগ্রবর্তী হয়ে এঁকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে না কেন? এর জবাবে বলা হচ্ছে, তাদের মধ্য থেকে কেউ এতে খুশী এবং কেউ অখুশী, কিন্তু হে নবী! কেউ খুশী হোক বা অখুশী, তুমি পরিষ্কার বলে দাও, আমাকে তো আল্লাহর পক্ষ থেকে এ শিক্ষা দান করা হয়েছে এবং আমি সর্বাবস্থায় এর অনুসারী থাকবো।
.
৫৬.
নবী (সা.) এর বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি উত্থাপন করা হতো এটি তার মধ্য থেকে আর একটি আপত্তির জবাব। তারা বলতো, এ আবার কেমন নবী, যার স্ত্রী-সন্তানাদিও আছে! নবী-রসূলদের যৌন কামনার সাথে কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না কি?
৫৭.
এটিও একটি আপত্তির জবাব। বিরোধীরা বলতো, মূসা ‘সূর্য’ করোজ্জ্বল হাত’ ও লাঠি এনেছিলেন ঈসা মসীহ অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতেন এবং কুষ্ঠরোগীদেরকে রোগমুক্ত করতে পারতেন। সালেহ উটনীর নিদর্শন দেখিয়েছিলেন। তুমি কি নিদর্শন নিয়ে এসেছো? এর জবাবে বলা হয়েছে, যে নবী যে জিনিসই দেখিয়েছেন নিজের ক্ষমতা বা শক্তির জোরে দেখাননি। আল্লাহ‌ যে সময় যার মাধ্যমে যে জিনিস প্রকাশ করা সঙ্গত মনে করেছেন তা প্রকাশিত হয়েছে। এখন যদি আল্লাহ‌ প্রয়োজন মনে করেন তাহলে যা তিনি চাইবেন দেখাবেন। নবী নিজে কখনো এমন খোদায়ী ক্ষমতার দাবী করেননি যার ভিত্তিতে তোমরা তাঁর কাছে নিদর্শন দেখাবার দাবী করতে পারো।
.
৫৮.
এটিও বিরোধীদের একটি আপত্তির জবাব। তারা বলতো, ইতিপূর্বে যেসব কিতাব এসেছে সেগুলোর উপস্থিতিতে আবার নতুন কিতাবের কি প্রয়োজন ছিল? তুমি বলছো, সেগুলো বিকৃত হয়ে গেছে, এখন সেগুলো নাকচ করে দেয়া হয়েছে এবং তার পরিবর্তে এ নতুন কিতাবের অনুসারী হবার হুকুম দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কিতাব কেমন করে বিকৃত হতে পারে? তুমি বলছো, এটি সেই আল্লাহর কিতাব যিনি তাওরাত ও ইঞ্জীল নাযিল করেছিলেন। কিন্তু এ কি ব্যাপার, তোমার কোন কোন পদ্ধতি দেখছি তাওরাতের বিধানের বিরোধী? যেমন কোন কোন জিনিস তাওরাত হারাম ঘোষণা করেছে কিন্তু তুমি সেগুলো হালাল মনে করে খাও। এসব আপত্তির জবাব পরবর্তী সূরাগুলোয় বেশী বিস্তারিত আকারে দেয়া হয়েছে। এখানে এগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাংগ জবাব দিয়ে শেষ করে দেয়া হয়েছে।

“উম্মূল কিতাব” মানে আসল কিতাব অর্থাৎ এমন উৎসমূল যা থেকে সমস্ত আসমানী কিতাব উৎসারিত হয়েছে।

৫৯.
অর্থ হচ্ছে, যারা তোমার এ সত্যের দাওয়াতকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয় এবং কবে তা প্রকাশ হয় তা চিন্তা করার প্রয়োজন তোমার নেই। তোমার ওপর যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে তা পালন করে যেতে থাকো এবং ফায়সালা আমার হাতে ছেড়ে দাও। এখানে বাহ্যত নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হলেও মূলত তাঁর বিরোধীদেরকে শুনানোই উদ্দেশ্য। তারা চ্যালেঞ্জের ভংগিতে বার বার তাঁকে বলতো, তুমি আমাদের যে বিপর্যয় ও ধ্বংসের হুমকি দিয়ে আসছো তা আসছে না কেন?
৬০.
অর্থাৎ তোমার বিরোধীরা কি দেখছে না ইসলামের প্রভাব আরব ভূখণ্ডের সর্বত্র দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে? চর্তুরদিকে থেকে তার বেষ্টনী সংকীর্ণতর হয়ে আসছে? এটা এদের বিপর্যয়ের আলামত নয় তো আবার কি?

“আমি এ ভূখণ্ডে এগিয়ে চলছি”-আল্লাহর একথা বলার একটি সূক্ষ্ম তাৎপর্য রয়েছে। যেহেতু হকের দাওয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এবং এ দাওয়াত যারা পেশ করে আল্লাহ‌ তাদের সাথে থাকেন, তাই কোন দেশে এ দাওয়াত ছড়িয়ে পড়াকে আল্লাহ‌ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নিজেই ঐ দেশে এগিয়ে চলছেন।

.
অনুবাদ: