আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
(১) নিজের ভুলের জন্য সে খোঁড়া অজুহাত ও মনগড়া ব্যাখ্যা পেশ করবে না। বরং যে ভুল হয়ে গেছে সহজ সরলভাবে তা মেনে নেবে।
(২) তার আগের কার্যকলাপ দেখা হবে। সে আন্তরিকতাহীনতার দাগী ও অপরাধী কিনা তা যাচাই করা হবে। যদি আগে সে ইসলামের জামায়াতের এক সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে এবং তার জীবনের সমস্ত কার্যকলাপে আন্তরিক সেবা, ত্যাগ, কুরবানী ও ভালো কাজে অগ্রবর্তী থাকার রেকর্ড থেকে থাকে, তাহলে ধরে নেয়া হবে যে, বর্তমানে যে ভুল সে করেছে তা ঈমান ও আন্তরিকতাহীনতার ফল নয় বরং তা নিছক সাময়িক সৃষ্ট একটি দুর্বলতা বা পদস্খলন ছাড়া আর কিছুই নয়।
(৩) তার ভবিষ্যত কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা হবে। দেখতে হবে, তার ভুলের স্বীকৃতি কি নিছক মৌখিক, না তার মধ্যে লজ্জার গভীর অনুভূতি রয়েছে। যদি নিজের ভুল সংশোধনের জন্য তাকে অস্থির ও উৎকণ্ঠিত দেখা যায় এবং তার প্রতিটি কথা থেকে এ কথা প্রকাশ হয় যে, তার জীবনে যে ঈমানী ত্রুটির চিত্র ভেসে উঠেছিল তাকে মুছে ফেলার ও তা সংশোধন করার জন্য সে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে সে যথার্থই লজ্জিত হয়েছে বলে মনে করা হবে। এ লজ্জা ও অনুশোচনাই হবে তার ঈমান ও আন্তরিকতার প্রমাণ।
মুহাদ্দিসগণ এ আয়াতগুলো নাযিলের পটভূমী হিসেবে যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা থেকে এ বিষয়বস্তুটি আয়নার মতো স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। তাঁরা বলেন, এ আয়াতগুলো আবু লুবাবাহ ইবনে আবদুল মুনযির ও তাঁর ছ'জন সাথীর প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছিল। হিজরতের আগে আকাবার বাইআতের সময় যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন আবু লুবাবাহ ছিলেন তাদের একজন। বদর, ওহোদ ও অন্যান্য যুদ্ধে তিনি বরাবর অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের সময় মানসিক দুর্বলতার তার ওপর প্রধান্য বিস্তার করে এবং কোন প্রকার শরয়ী ওযর ছাড়াই তিনি ঘরে বসে থাকেন। তার অন্য সাথীরাও ছিলেন তারই মতো আন্তরিকতা সম্পন্ন। তারাও এ একই প্রকার দুর্বলতার শিকার হন। নবী (সা.) যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন এবং যারা পিছনে থেকে গিয়েছিল তাদের সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের মতামত কি তা তারা জানতে পারলেন তখন তারা ভীষণভাবে অনুতপ্ত হলেন। কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদের আগেই তারা নিজেদেরকে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে নেন এবং বলেন, আমাদের মাফ না করে দেয়া পর্যন্ত আমাদের জন্য আহার নিদ্রা হারাম। এ অবস্থায় আমাদের প্রাণ বায়ু বের হয়ে গেলেও আমরা তার পরোয়া করবো না। কয়েক দিন পর্যন্ত এভাবেই তারা বাঁধা অবস্থায় অনাহার অনিদ্রায় কাটান। এমনকি একদিন তারা বেহুশ হয়ে পড়ে যান। শেষে তাদের জানানো হলো, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন। তারা নবী (সা.) কে বলেন, ঘরের যে আরাম আয়েশ আমাদের ফরয থেকে গাফেল করে দিয়েছিল তা এবং নিজেদের সমস্ত ধন-সম্পদ আমরা আল্লাহর পথে দান করে দেবো, এটাও আমাদের তাওবার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নবী (সা.) বলেন, সমস্ত ধন-সম্পদ দান করে দেবার দরকার নেই, শুধুমাত্র এক তৃতীয়াংশই যথেষ্ট। তদনুসারে তখনই তারা সেগুলো আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দেন। এ ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার জানা যায়, কোন ধরনের দুর্বলতা আল্লাহ মাফ করেন। উল্লিখিত মহান সাহাবীগণ এ ধরনের আন্তরিকতাহীন আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন না। বরং তাদের বিগত জীবনের কার্যকলাপ তাদের ঈমানী নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার দৃষ্টান্তে পরিপূর্ণ ছিল। এবারেও রসূল ﷺ এর নিকট তাদের কেউ মিথ্যা অজুহাত পেশ করেননি। বরং নিজেদের ভুলকে নিজেরাই অকপটে ভুল হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তাঁরা ভুলের স্বীকারোক্তি সহকারে নিজেদের কার্য ধারার মাধ্যমে একথা প্রমাণ করে দিয়েছের যে, তারা যথার্থই লজ্জিত হয়েছেন এবং নিজেদের গোনাহ মাফ করাবার জন্য অত্যন্ত অস্থির ও উদ্ধিগ্ন।
এখানে আলোচ্য আয়াতটিতে আর একটি মূল্যবান কথা বলা হয়েছে। সে কথাটি হচ্ছে, গোনাহ মাফের জন্য মুখ ও অন্তর দিয়ে তাওবা করার সাথে সাথে বাস্তব কাজের মাধ্যমেও তাওবা করতে হবে। আর আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ দান করা হচ্ছে বাস্তব তাওবার একটি পদ্ধতি। এভাবে নফসের মধ্যে যে দূষিত ময়লা আবর্জনা লালিত হচ্ছিল এবং যার কারণে মানুষ গোনাহে লিপ্ত হয়েছিল তা দূর হয়ে যায় এবং ভালো ও কল্যাণের দিকে ফিরে যাবার যোগ্যতা বেড়ে যায়। গোনাহ করার পর তা স্বীকার করার ব্যাপারটি এমন যেমন এক ব্যক্তি গর্তের মধ্যে পড়ে যায় এবং নিজের পড়ে যাওয়াটা সে অনুভব করতে পারে। তারপর নিজের গোনাহের ওপর তার লজ্জিত হওয়াটা এ অর্থ বহন করে যে, এ গর্তকে সে নিজের অবস্থানের জন্য বড়ই খারাপ জায়গা মনে করে এবং
ঈসায়ী রাহেব আবু আমেরের এ ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় তার সাথে শরীক ছিল মদীনার মুনাফিক গোষ্ঠির একটি দল। আবু আমেরকে তার ধর্মীয় প্রভাব ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে রোমের কাইসার ও উত্তরাঞ্চলের খৃস্টান আরব রাজ্যগুলোর সামরিক সাহায্য লাভ করতেও এ মুনাফিকরা তাকে পরামর্শ দেয় ও মদদ যোগায়। যখন সে রুমের পথে রওয়ানা হচ্ছিল তখন তার ও এ মুনাফিকদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হলো। এ চুক্তি অনুযায়ী স্থির হলো, যে মদীনায় তারা নিজেদের একটি পৃথক মসজিদ তৈরী করে নেবে। এভাবে সাধারণ মুসলমানদের থেকে আলাদা হয়ে মুনাফিক মুসলমানদের এমন একটি স্বতন্ত্র জোট গড়ে উঠবে যা ধর্মীয় আলখেল্লায় আবৃত থাকবে। তার প্রতি সহজে কোন প্রকার সন্দেহ করা যাবে না। সেখানে শুধু যে, মুনাফিকরাই সংঘটিত হবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য পরামর্শ করবে তা নয়। বরং আবু আমেরের কাছ থেকে যেসব এজেন্ট খবর ও নির্দেশ নিয়ে আসবে তারাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে নিরীহ ফকীর ও মুসাফিরের বেশে এ মসজিদে অবস্থান করতে থাকবে। এ ন্যাক্করজনক ষড়যন্ত্রটির ভিত্তিতেই এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল এবং এরই কথা এ আয়াতে বলা হয়েছে।
মদীনায় এ সময় দু’টি মসজিদ ছিল। একটি মসজিদে কুবা। এটি ছিল নগর উপকণ্ঠে। অন্যটি ছিল মসজিদে নববী। শহরের অভ্যন্তরে ছিল এর অবস্থান। এ দু’টি মসজিদ বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় একটি মসজিদ নির্মাণ করার কোন প্রয়োজনই ছিল না। আর এটা কোন যুক্তিহীন ধর্মীয় আবেগের যুগ ছিল না যে, প্রয়োজন থাকুক ব না থাকুক মসজিদ নামে নিছক একটি ইমারত তৈরী করে দিলেই তখন নেকীর কাজ বলে মনে করা হবে। বরং একটি নতুন মসজিদ তৈরী করার অর্থই ছিল মুসলমানদের জামায়াতের মধ্যে অনর্থক বিভেদ সৃষ্টি করা। একটি সত্যনিষ্ঠা ইসলামী ব্যবস্থা কোন ক্রমেই এটা বরদাশত করতে পারে না। তাই তারা নিজেদের পৃথক মসজিদ তৈরী কারার আগে তার প্রয়োজনের বৈধতা, প্রমাণ করতে বাধ্য ছিল। এ উদ্দেশ্যে তারা নবী (সা.) এর সামনে এ নতুন নির্মাণ কাজের প্রয়োজন পেশ করে। এ প্রসঙ্গে তারা বলে, বৃষ্টি বাদলের জন্য এবং শীতের রাতে সাধারণ লোকদের বিশেষ করে উল্লেখিত দু’টি মসজিদ থেকে দূরে অবস্থানকারী বৃদ্ধ, দুর্বল ও অক্ষম লোকদের প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে হাজিরা দেয়া কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই আমরা শুধুমাত্র নামাযীদের সুবিধার্থে এ নতুন মসজিদটি নির্মাণ করতে চাই।
মুখে এ পবিত্র ও কল্যাণমূলক বাসনার কথা উচ্চারণ করে যখন এ “দ্বিরার”, (ক্ষতিকর) মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হলো তখন এ দুর্বৃত্তরা নবী (সা.) এর দরবারে হাযির হলো এবং সেখানে একবার নামায পরিয়ে মসজিদটির উদ্বোধন করার জন্য তার কাছে আবেদন জানালো। কিন্তু আমি এখন যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আছি এবং শীঘ্রই আমাকে একটি বড় অভিযানে বের হতে হবে, সেখান থেকে ফিরে এসে দেখা যাবে, একথা বলে তিনি তাদের আবেদন এড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাবুক রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং তার রওয়ানা হওয়ার পর এ মুনাফিকরা এ মসজিদে নিজেদের জোট গড়ে তূলতে এবং ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগলো।
এমন কি তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল ওদিকে রোমানদের হাতে মুসলমানদের মুলোৎপাটনের সাথে সাথেই এদিকে এরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মাথায় রাজ মুকূট পরিয়ে দেবে। কিন্তু তবুকের যা ঘটলো তাতে তাদের সে আশার গুড়ে বালি পড়লো। ফেরার পথে নবী (সা.) যখন মদীনার নিকটবর্তী “যী আওয়ান” নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন এ আয়াত নাযিল হলো। তিনি তখনই কয়েকজন লোককে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন। তাদেরকে দায়িত্ব দিলেন, তার মদীনায় পৌঁছার আগেই যেন তারা দ্বিরার মসজিদটি ভেঙ্গে ধুলিস্মাত করে দেয়।
নিরেট সত্যের আলোকে বিচার করলে বলা যায় মানুষের ধন-প্রাণের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। কারণ তিনিই তার কাছে যা কিছু আছে সব জিনিসের স্রষ্টা। সে যা কিছু ভোগ ও ব্যবহার করেছে তাও তিনিই তাকে দিয়েছেন। কাজেই এদিক দিয়ে তো কেনাবেচার কোন প্রশ্নেই ওঠে না। মানুষের এমন কিছু নেই, যা সে বিক্রি করবে। আবার কোন জিনিস আল্লাহর মালিকানার বাইরেও নেই, যা তিনি কিনবেন। কিন্তু মানুষের মধ্যে এমন একটি জিনিস আছে, যা আল্লাহ পুরোপুরি মানুষের হাতে সোর্পদ করে দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে তার ইখতিয়ার অর্থাৎ নিজের স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতা ও স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (Free will and freedom of choice)। এ ইখতিয়ারের কারণে অবশ্যই প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু মানুষ এ মর্মে স্বাধীনতা লাভ করে যে, সে চাইলে প্রকৃত সত্যকে মেনে নিতে পারে এবং চাইলে তা অস্বীকার করতে পারে। অন্য কথায় এ ইখতিয়ারের মানে এ নয় যে মানুষ প্রকৃত পক্ষে তার নিজের প্রাণের নিজের বুদ্ধিবৃত্তি ও শারীরিক শক্তির এবং দুনিয়ায় সে যে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা লাভ করেছে, তার মালিক হয়ে গেছে। এ সঙ্গে এ জিনিসগুলো সে যেভাবে চাইবে সেভাবে ব্যবহার করার অধিকার লাভ করেছে, একথাও ঠিক নয়। বরং এর অর্থ কেবল এতটুকুই যে, তাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, আল্লাহর পক্ষে থেকে কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি ছাড়াই সে নিজেরই নিজের সত্তার ও নিজের প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর আল্লাহর মালিকানা ইচ্ছা করলে স্বীকার করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে নিজেই নিজের মালিক হয়ে যেতে পারে এবং নিজেই একথা মনে করতে পারে যে, সে আল্লাহ থেকে বেপরোয়া হয়ে নিজের ইখতিয়ার তথা স্বাধীন কর্মক্ষমতার সীমানার মধ্যে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার অধিকার রাখে। এখানেই কেনা-বেচার প্রশ্নটা দেখা দেয়। আসলে এ কেনা-বেচা এ অর্থে নয় যে, মানুষের একটি জিনিস আল্লাহ কিনতে চান, বরং প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি আল্লাহর মালিকানাধীন যাকে তিনি আমানত হিসেবে মানুষের হাতে সোর্পদ করেছেন এবং যে ব্যাপারে বিশ্বস্ত থাকার বা অবিশ্বস্ত হবার স্বাধীনতা তিনি মানুষকে দিয়ে রেখেছেন সে ব্যাপারে তিনি মানুষের দাবী করেন, আমার জিনিসকে তুমি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে (বাধ্য হয়ে নাও)। এ সঙ্গে খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছি তা তুমি নিজেই প্রত্যাহার করো। এভাবে যদি তুমি দুনিয়ার বর্তমান অস্থায়ী জীবনে নিজের স্বাধীনতাকে (যা তোমার অর্জিত নয় বরং আমার দেয়া) আমার হাতে বিক্রি করে দাও তাহলে আমি পরবর্তী চিরন্তন জীবনে এর মূল্য জান্নাতের আকারে তোমাকে দান করবো। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কেনা-বেচার এ চুক্তি সম্পাদন করে সে মু’মিন। ঈমান আসলে এ কেনা-বেচার আর এক নাম। আর যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে অথবা অঙ্গীকার করার পরও এমন আচরণ করবে যা কেবলমাত্র কেনা-বেচা না করার অবস্থায় করা যেতে পারে সে কাফের। আসলে এ কেনা-বেচাকে পাস কাটিয়ে চলার পারিভাষিক নাম কুফরী। কেনা-বেচার এ তাৎপর্য ও স্বরূপটি অনুধাবন করার পর এবার তার অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করা যাকঃ
এক এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ মানুষকে দু’টি বড় বড় পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন। প্রথম পরীক্ষাটি হচ্ছে, তাকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবার পর সে মালিকাকে মালিক মনে করার এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহের পর্যায়ের নেমে না আসার মতো সৎ আচরণ করে কিনা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নিজের প্রভু ও মালিক আল্লাহর কাছ থেকে আজ নগদ যে মূল্য পাওয়া যাচ্ছে, না বরং মরার পর পরকালীন জীবনে যে মূল্য আদায় করার ওয়াদা তার পক্ষ থেকে করা হয়েছে তার বিনিময়ে নিজের আজকের স্বাধীনতা ও তার যাবতীয় স্বাদ বিক্রি করতে স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে রাজী হয়ে যাবার মত আস্থা তার প্রতি আছে কিনা।
দুইঃ যে ফিকাহর আইনের ভিত্তিতে দুনিয়ার ইসলামী সমাজ গঠিত হয় তার দৃষ্টিতে ঈমান শুধুমাত্র কতিপয় বিশ্বাসের স্বীকৃতির নাম। এ স্বীকৃতির পর নিজের স্বীকৃতি ও অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে মিথ্যুক হবার সুস্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত শরীয়াতের কোন বিচারক কাউকে অমু’মিন বা ইসলামী মিল্লাত বহির্ভূত ঘোষণা করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ঈমানের তাৎপর্য ও স্বরূপ হচ্ছে, বান্দা তার চিন্তা ও কর্ম উভয়ের স্বাধীনতা ও স্বাধীন ক্ষমতা আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দিবে এবং নিজের মালিকানার দাবী পুরোপুরি তার সপক্ষে প্রত্যাহার করবে। কাজেই যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের কালেমার স্বীকৃতি দেয় এবং নামায-রোযা ইত্যাদির বিধানও মেনে চলে, কিন্তু নিজেকে নিজের দেহ ও প্রাণের নিজের মন, মস্তিষ্ক ও শারীরিক শক্তির নিজের ধন-সম্পদ, উপায়, উপকরণ ইত্যাদির এবং নিজের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত জিনিসের মালিক মনে করে এবং সেগুলোকে নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করার স্বাধীনতা নিজের জন্য সংরক্ষিত রাখে, তাহলে হয়তো দুনিয়ায় তাকে মু’মিন মনে করা হবে কিন্তু আল্লাহর কাছে সে অবশ্যই অমু’মিন হিসেবে গণ্য হবে। কারণ কুরআনের দৃষ্টিতে কেনা-বেচার ব্যাপারে ইমানের আসল তাৎপর্য ও স্বরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সে আল্লাহর সাথে আদতে কোন কেনা-বেচার কাজই করেননি। যেখানে আল্লাহ চান সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ না করা এবং যেখানে তিনি চান না সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ ও ব্যবহার করা-এ দু’টি কার্য ধারাই চূড়ান্তভাবে ফয়সালা করে দেয় যে, ইমানের দাবীদার ব্যক্তি তার ধন প্রাণ আল্লাহর হাতে বিক্রি করেইনি অথবা বিক্রির চুক্তি করার পরও সে বিক্রি করা জিনিসকে যথারীতি নিজের মনে করেছে।
তিনঃ ঈমানের এ তাৎপর্য ও স্বরূপ ইসলামী জীবনাচরণকে কাফেরী জীবনাচরণ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়। যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক অর্থে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে সে জীবনের সকল বিভাগে আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে কাজ করে। তার আচরণে কোথাও স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটতে পারে না। তবে কোন সময় সাময়িকভাবে সে গাফলতির শিকার হতে পারে এবং আল্লাহর সাথে নিজের কেনা-বেচার চুক্তির কথা ভুলে গিয়ে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা অবলম্বন করাও তার পক্ষে সম্ভব। এটা অবশ্যই ভিন্ন ব্যাপার। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের সমন্বয়ে গঠিত কোন দল বা সমাজ সমষ্টিগতভাবেও আল্লাহর ইচ্ছা ও তার শরয়ী আইনের বিধিনিষেধ মুক্ত হয়ে কোন নীতি পদ্ধতি রাষ্ট্রীয় নীতি, তামাদ্দুনিক ও সাংস্কৃতিক পদ্ধতি এবং কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক আচরণ অবলম্বন করতে পারে না। কোন সাময়িক গাফলতির কারণে যদি সেটা অবলম্বন করেও থাকে তাহলে যখনই সে এ ব্যাপারে জানতে পারবে তখনই স্বাধীন ও স্বৈরাচারী আচরণ ত্যাগ করে পুনরায় বন্দেগীর আচরণ করতে থাকবে। আল্লাহর আনুগত্য মুক্ত হয়ে কাজ করা এবং নিজের ও নিজের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নিজে নিজেই কি করবোনা করবো, সিদ্ধান্ত নেয়া অবশ্যই একটি কুফরী জীবনাচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। যাদের জীবন যাপন পদ্ধতি এ রকম তারা মুসলমান নামে আখ্যায়িত হোক বা অমুসলিম নামে তাতে কিছু যায় আসে না।
চারঃ এ কেনা-বেচার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর যে ইচ্ছার আনুগত্য মানুষের জন্য অপরিহার্য হয় তা মানুষের নিজের প্রস্তাবিত বা উদ্ভাবিত নয় বরং আল্লাহ নিজে যেমন ব্যক্ত করেন তেমন। নিজে নিজেই কোন জিনিসকে আল্লাহর ইচ্ছা বলে ধরে নেয়া এবং তার আনুগত্য করতে থাকা মূলত আল্লাহর ইচ্ছা নয় বরং নিজেরই ইচ্ছার আনুগত্য করার শামিল। এটি এ কেনাবেচার চুক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী। যে ব্যক্তি ও দল আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর হেদায়াত থেকে নিজের সমগ্র জীবনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে একমাত্র তাকেই আল্লাহর সাথে কৃত নিজের কেনা-বেচার চুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করা হবে।
এ হচ্ছে এ কেনা-বেচার অন্তনিহিত বিষয়। এ বিষয়টি অনুধাবন করার পর এ কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বর্তমান পার্থিব জীবনের অবসানের পর মূল্য (অর্থাৎ জান্নাত।) দেবার কথা বলা হয়েছে কেন তাও আপনা আপনিই বুঝে আসে। বিক্রেতা নিজের প্রাণ ও ধন-সম্পদ আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দেবে কেবলমাত্র এ অঙ্গীকারের বিনিময়েই যে জান্নাত পাওয়া যাবে তা নয়। বরং বিক্রেতা নিজের পার্থিব জীবনে এ বিক্রি করা জিনিসের ওপর নিজের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার প্রত্যাহার করবে এবং আল্লাহ প্রদত্ত আমানতের রক্ষক হয়ে তার ইচ্ছা অনুযায়ী হস্তক্ষেপ করবে। এরূপ বাস্তব ও সক্রিয় তৎপরতার বিনিময়েই জান্নাত প্রাপ্তি নিশ্চিত হতে পারে। সুতরাং বিক্রেতার পার্থিব জীবনকাল ও শেষ হবার পর যখন প্রমাণিত হবে যে, কেনা-বেচার চুক্তি করার পর সে নিজের পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তির শর্তসমূহ পুরোপুরি মেনে চলেছে একমাত্র তখনই এ বিক্রি সম্পূর্ণ হবে। এর আগে পর্যন্ত ইনসাফের দৃষ্টিতে সে মূল্য পাওয়ার অধিকারী হতে পারে না।
এ বিষয় গুলো পরিষ্কারভাবে বুঝে নেবার সাথে সাথে এ বর্ণনার ধারাবাহিকতায় কোন প্রেক্ষাপটে এ বিষয়বস্তুটির অবতারণা হয়েছে তাও জেনে নেয়া উচিত। ওপর থেকে যে ধারাবাহিক ভাষণ চলে আসছিল তাতে এমন সব লোকের কথা ছিল যারা ঈমান আনার অঙ্গীকার করেছিল ঠিকই কিন্তু পরীক্ষার কঠিন সময় সমুপস্থিত হলে তাদের অনেকে গাফলতির কারণে, অনেকে আন্তরিকতার অভাবে এবং অনেকে চূড়ান্ত মুনাফিকীর পথ অবলম্বন করার ফলে আল্লাহর ও তার দ্বীনের জন্য নিজের সময় ধন সম্পদ স্বার্থ ও প্রাণ দিতে ইতস্তত করেছিল। কাজেই এ বিভিন্ন ব্যক্তি ও শ্রেণীর আচরণের সমালোচনা করার পর এখন তাদেরকে পরিষ্কার বলে দেয়া হচ্ছে, তোমরা যে ঈমান গ্রহণ করার অঙ্গীকার করেছো তা নিছক আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ব মেনে নেবার নাম নয়। বরং একমাত্র আল্লাহই যে তোমাদের জান ও তোমাদের ধন-সম্পদের মালিক ও অকাট্য ও নিগূঢ় তত্ত্ব মেনে নেয়া ও এর স্বীকৃতি দেয়ার নামই ঈমান। কাজেই এ অঙ্গীকার করার পর যদি তোমরা এ প্রাণ ও ধন-সম্পদ আল্লাহর হুকুমে কুরবানী করতে ইতস্তত করো এবং অন্যদিকে নিজের দৈহিক ও আত্মিক শক্তিসমূহ এবং নিজের উপায়-উপকরণ সমূহ আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে থাকো তাহলে এ থেকে একথাই প্রমাণিত হবে যে, তোমাদের অঙ্গীকার মিথ্যা। সাচ্চা ঈমানদার একমাত্র তারাই যারা যথার্থই নিজেদের জান-মাল আল্লাহর হাতে বিকিয়ে দিয়েছে এবং তাকেই এ সবের মালিক মনে করেছে। তিনি এগুলো যেখানে ব্যয় করার নির্দেশ দেন সেখানে নির্দ্বিধায় এগুলো ব্যয় করে এবং যেখানে তিনি নিষেধ করেন সেখানে দেহ ও আত্মার সামান্যতম শক্তিও এবং আর্থিক উপকরণের নগন্যতম অংশও ব্যয় করতে রাজী হয় না।
ধন্য যাহারা ধার্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বর্গরাজ্য তাহাদেরই। (মথি ৫: ১০)
যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহা হারাইবে এবং যে কেহ আমার নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা রক্ষা করিবে। (মথি ১০: ৩৯)
আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী কি ভ্রাতা, কি ভাগিনী কি পিতা ও মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শতগুণ পাইবে এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে। (মথি ১৯: ২৯)
তবে তাওরাত বর্তমানে যে অবস্থায় পাওয়া যায় তাতে অবশ্যই এ বিষয়বস্তুটি পাওয়া যায় না। শুধু এটি কেন, সেখানে তো মৃত্যুর পরবর্তী জীবন, শেষ বিচারের দিন ও পরকালীন পুরস্কার ও শাস্তির ধারণাই অনুপস্থিত। অথচ এ আকীদা সবসময় আল্লাহর সত্য দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান তাওরাতে এ বিষয়টির অস্তিত্ব না থাকার ফলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও ঠিক নয় যে, যথার্থই তাওরাতের এ অস্তিত্ব ছিল না। আসলে ইহুদীরা তাদের অবনতির যুগে এতই বস্তুবাদী ও দুনিয়াবি সমৃদ্ধির মোহে এমন পাগল হয়ে গিয়েছিলো যে, তাদের কাছে নিয়ামত ও পুরস্কার এ দুনিয়ায় লাভ করা ছাড়া তার আর কোন অর্থই ছিলো না। এ কারণে আল্লাহর কিতাবে বন্দেগী ও আনুগত্যের বিনিময়ে তাদেরকে যেসব পুরস্কার দেবার ওয়াদা করা হয়েছিল সে সবকে তারা দুনিয়ার এ মাটিতেই নামিয়ে এনেছিল এবং জান্নাতের প্রতিটি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যকে তারা তাদের আকাংঙ্খিত ফিলিস্তিনের ওপর প্রয়োগ করেছিল। তাওরাতের বিভিন্ন স্থানে আমরা এ ধরনের বিষয়বস্তু দেখতে পাই। যেমনঃ
হে ইসরায়েল শুন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদা প্রভু, তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদা প্রভুকে প্রেম করিবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬: ৪, ৫)
আরো দেখিঃ
তিনি কি তোমার পিতা নহেন, যিনি তোমাকে লাভ করিলেন। তিনিই তোমার নির্মাতা ও স্থিতি কর্তা। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২: ৬)
কিন্তু আল্লাহর সাথে এ সম্পর্কের যে পুরস্কার বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, তোমরা এমন একটি দেশের মালিক হয়ে যাবে যেখানে দুধ ও মধুর নহর প্রবাহিত হচ্ছে অর্থাৎ ফিলিস্তিন। এর আসল কারণ হচ্ছে, তাওরাত বর্তমানে যে অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে তা প্রথমত সম্পূর্ণ নয়, তাছাড়া নির্ভেজাল আল্লাহর বাণী সম্বলিত ও নয়। বরং তার মধ্যে আল্লাহর বানীর সাথে অনেক ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য ও সংযোজিত করে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ইহুদীদের জাতীয় ঐতিহ্য, বংশ প্রীতি, কুসংস্কার আশা-আকাঙ্ক্ষা ভুল ধারণাও ফিকাহ ভিত্তিক ইজতিহাদের একটি বিরাট অংশ একই ভাষণ ও বানী পরস্পরার মধ্যে এমন ভাবে মিশ্রিত হয়ে গেছে যে, অধিকাংশ স্থানে আল্লাহর আসল কালামকে তার মধ্যে থেকে পৃথক করে বের করে নিয়ে আসা একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। (এ প্রসঙ্গে আরো দেখুন সূরা আলে ইমরানের ২ টীকা।)
আবার এ প্রসঙ্গে মু’মিনের গুণাবলীর মধ্যে সবার আগে তাওবার কথা বলার আর একটি উপযোগিতাও রয়েছে। আগে থেকে যে ধারাবাহিক বক্তব্য চলে আসছে তাতে এমনসব লোকের উদ্দেশ্যে কথা বলা হয়েছে যাদের থেকে ঈমান বিরোধী কার্যকলাপের প্রকাশ ঘটেছিল। কাজেই তাদেরকে ঈমানের তাৎপর্য ও তার মৌলিক দাবী জানিয়ে দেবার পর এবার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, মু’মিনের যে অপরিহার্য গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে তার মধ্যে প্রথম ও প্রধান গুণ হচ্ছেঃ যখনই বন্দেগীর পথ থেকে তাদের পা পিছলে যায় তারা যেন সঙ্গে সঙ্গেই আবার সেদিকে ফিরে আসে। নিজেদের সত্য বিচ্যুতির ওপর যেন অবিচল হয়ে দাড়িয়ে না থাকে এবং পিছনের দিকে বেশী দূরে চলে না যায়।