পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

১৫১ আয়াত

৮৪ ) মুসা তার কওমকে বললো, হে লোকেরা! যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে থাকো তাহলে তার ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা মুসলিম আত্মসমর্পণকারী হও। ৮১
وَقَالَ مُوسَىٰ يَـٰقَوْمِ إِن كُنتُمْ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوٓا۟ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ ٨٤
৮৫ ) তারা জবাব দিল, আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালেমদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না। ৮২
فَقَالُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةًۭ لِّلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ ٨٥
৮৬ ) এবং তোমার রহমতের সাহায্যে কাফেরদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো।" ৮৩
وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ ٨٦
৮৭ ) আর আমি মূসা ও তার ভাইকে ইশারা করলাম এই বলে যে, "মিসরে নিজের কওমের জন্য কতিপয় গৃহের সংস্থান করো, নিজেদের ঐ গৃহগুলোকে কিবলায় পরিণত করো এবং নামায কায়েম করো। ৮৪ আর ঈমানদারদেরকে সুখবর দাও।" ৮৫
وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّءَا لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًۭا وَٱجْعَلُوا۟ بُيُوتَكُمْ قِبْلَةًۭ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٨٧
৮৮ ) মুসা ৮৬ দোয়া করলো, "হে আমাদের রব! তুমি ফেরাউন ও তার সরদারদেরকে দুনিয়ার জীবনের শোভা-সৌন্দর্য ৮৭ ও ধন-সম্পদ ৮৮ দান করেছো। হে আমাদের রব! একি এ জন্য যে, তারা মানুষকে তোমার পথ থেকে বিপথে সরিয়ে দেবে? হে আমাদের রব! এদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং এদের অন্তরে এমনভাবে মোহর মেরে দাও যাতে মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত যেন এরা ঈমান না আনে।" ৮৯
وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَآ إِنَّكَ ءَاتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُۥ زِينَةًۭ وَأَمْوَٰلًۭا فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا۟ عَن سَبِيلِكَ ۖ رَبَّنَا ٱطْمِسْ عَلَىٰٓ أَمْوَٰلِهِمْ وَٱشْدُدْ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا۟ حَتَّىٰ يَرَوُا۟ ٱلْعَذَابَ ٱلْأَلِيمَ ٨٨
৮৯ ) আল্লাহ জবাবে বললেন, "তোমাদের দু’জনের দোয়া কবুল করা হলো। তোমরা দু’জন অবিচল থাকো এবং মূর্খদের পথ কখনো অনুসরণ করো না।" ৯০
قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا فَٱسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَآنِّ سَبِيلَ ٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ٨٩
৯০ ) আর আমি বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করে নিয়ে গেলাম। তারপর ফেরাউন ও তার সেনাদল জুলুম নির্যাতন ও সীমালঙ্ঘন করার উদ্দেশ্য তাদের পেছনে চললো। অবশেষে যখন ফেরাউন ডুবতে থাকলো তখন বলে উঠলো, আমি মেনে নিলাম, নবী ইসরাঈল যার উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই এবং আমিও আনুগত্যের শির নতকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ৯১
۞ وَجَـٰوَزْنَا بِبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱلْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُۥ بَغْيًۭا وَعَدْوًا ۖ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَدْرَكَهُ ٱلْغَرَقُ قَالَ ءَامَنتُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا ٱلَّذِىٓ ءَامَنَتْ بِهِۦ بَنُوٓا۟ إِسْرَٰٓءِيلَ وَأَنَا۠ مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ ٩٠
৯১ ) (জবাব দেয়া হলো) "এখন ঈমান আনছো! অথচ এর আগে পর্যন্ত তুমি নাফরমানী চালিয়ে এসেছো এবং তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন ছিলে।
ءَآلْـَٔـٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ ٱلْمُفْسِدِينَ ٩١
৯২ ) এখন তো আমি কেবল তোমার লাশটাকেই রক্ষা করবো যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য শিক্ষণীয় নিদর্শন হয়ে থাকো। ৯২ যদিও অনেক মানুষ এমন আছে যারা আমার নিদর্শনসমূহ থেকে উদাসীন।" ৯৩
فَٱلْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ ءَايَةًۭ ۚ وَإِنَّ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلنَّاسِ عَنْ ءَايَـٰتِنَا لَغَـٰفِلُونَ ٩٢
৯৩ ) বনী ইসরাঈলকে আমি খুব ভালো আবাসভূমি দিয়েছি ৯৪ এবং অতি উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ তাদেরকে দান করেছি। তারপর যখন তাদের কাছে জ্ঞান এসে গেলো, তখনই তারা পরস্পরে মতভেদ করলো ৯৫ নিশ্চয়ই তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সেই জিনিসের ফায়সালা করে দেবেন, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত ছিল।
وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ مُبَوَّأَ صِدْقٍۢ وَرَزَقْنَـٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَـٰتِ فَمَا ٱخْتَلَفُوا۟ حَتَّىٰ جَآءَهُمُ ٱلْعِلْمُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِى بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ فِيمَا كَانُوا۟ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ٩٣
৮১.
এ ধরনের কথা কখনো কোন কাফের জাতিকে সম্বোধন করে বলা যেতে পারে না। হযরত মূসার এ বক্তব্য পরিষ্কার ঘোষণা করছে যে, সমগ্র বনী ইসরাঈল জাতিই তখন মুসলমান ছিল এবং হযরত মূসা তাদেরকে এ উপদেশ দিচ্ছিলেন যে, তোমরা যদি সত্যিই মুসলমান হয়ে থাকো যেমন তোমরা দাবী করে থাকো তাহলে ফেরাউনের শক্তি দেখে ভয় করো না বরং আল্লাহর শক্তির ওপর আস্থা রাখো।
৮২.
যেসব নওজোয়ান মূসা (আ) এর সাথে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছিলেন এটা ছিল তাদের জবাব। এখানে قَالُوا(তারা বললো) শব্দের মধ্যে তারা সর্বনামটি জাতির বা কওমের সাথে যুক্ত না হয়ে ذُرِّيَّةٌ বা সন্তান সন্ততি তথা নওজোয়ানদের সাথে যুক্ত হয়েছে যেমন পরবর্তী বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে।
৮৩.
“আমাদেরকে জালেম লোকদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না"-উক্তি সাচ্চা ঈমানদার নওজোয়ানদের এ দোয়া বড়ই ব্যাপক অর্থ ও তাৎপর্যবোধক। গোমরাহীর সর্বব্যাপী প্রাধান্য ও আধিপত্যের মধ্যে যখন কিছু লোক সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য কোমর বেঁধে লাগে তখন তারা বিভিন্ন ধরনের জালেমদের মুখোমুখি হয়। একদিকে থাকে বাতিলের আসল ধারক ও বাহক। তারা পূর্ণ শক্তিতে এ সত্যের আহবায়কদের বিধ্বস্ত ও পর্যুদস্ত করতে চায়। দ্বিতীয় দিকে থাকে তথাকথিত সত্যপন্থীদের একটি বেশ বড়সড় দল। তারা সত্যকে মেনে চলার দাবী করে কিন্তু মিথ্যার পরাক্রান্ত শাসন ও দোর্দণ্ড প্রতাপের মোকাবিলায় সত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ও সংগ্রামকে অনাবশ্যক বা নির্বুদ্ধিতা মনে করে। সত্যের সাথে তারা যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাকে কোন না কোন প্রকারে সঠিক ও বৈধ প্রমাণ করার জন্য তারা চরম প্রচেষ্টা চালায়। এ সঙ্গে উল্টা তাদেরকে মিথ্যার ধারক গণ্য করে নিজেদের বিবেকের মর্মমূলে জমে উঠা ক্লেশ ও জ্বালা মেটায়। সত্যপন্থীদের সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার দাওয়াতের ফলে তাদের মনের গভীরে, সুস্পষ্ট বা অস্পষ্টভাবে এ ক্লেশ জমে উঠে। তৃতীয় দিকে থাকে সাধারণ জন মানুষ। তারা নিরপেক্ষভাবে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে থাকতে। যার পাল্লা ভারী হয় - সে সত্য হোক বা মিথ্যা - তাদের ভোট শেষ পর্যন্ত তারই পাল্লায় পড়ে। এমতাবস্থায় এ সত্যের আহবায়কের প্রতিটি ব্যর্থতা বিপদ-আপদ, ভুল-ভ্রান্তি, দুর্বলতা ও দোষ ত্রুটি বাতিল পন্থী বা নিরপেক্ষ বিভিন্ন দলের জন্য বিভিন্নভাবে উৎপীড়ন ও উত্যক্ত করণের সুযোগ ও উপলক্ষ হয়ে দেখা দেয়। তাদেরকে বিধ্বস্ত ও পর্যুদস্ত করে দেয়া হলে অথবা তারা যদি পরাজিত হয়ে যায় তাহলে প্রথম দলটি বলে, আমরাই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলাম। যে নির্বোধরা পরাজিত হয়ে গেছে তারা সত্যপন্থী ছিল না। দ্বিতীয় দলটি বলে, দেখলে তো! আমরা না বলেছিলাম, এসব বড় বড় শক্তির সাথে বিবাদ ও সংঘর্ষের ফল নিছক কয়েকটি মূল্যবান প্রাণের বিনাশ ছাড়া আর কিছুই হবে না। শরীয়াত কবেই বা নিজেদেরকে এ ধ্বংসের গর্তে নিক্ষেপ করার দায়-দায়িত্ব আমাদের ওপর চাপিয়েছিল? সমকালীন ফেরাউনরা তথা স্বৈরাচারী শাসকেরা যেসব ধ্যাণ ধারণা পোষণ ও কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল তার মাধ্যমেই তো দ্বীনের সর্বনিম্ন প্রয়োজনীয় দাবীগুলো পূরণ হচ্ছিল। তৃতীয় দলটি তার সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দেয়, যে বিজয়ী হয়েছে সে-ই সত্য। এভাবে যদি সে তার দাওয়াতের কাজে কোন প্রকার ভুল করে বসে অথবা বিপদ ও সংকটকালে কোন সাহায্য সহায়তা না পাওয়ার কারণে দুর্বলতা দেখায় কিংবা তার বা তার কোন সদস্যের কোন নৈতিক ত্রুটির প্রকাশ ঘটে তাহলে বহু লোকের জন্য মিথ্যার পক্ষাবলম্বনের হাজারো বাহানা সৃষ্টি হয়ে যায়। আর তারপর এ দাওয়াতের ব্যর্থতার পর সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত সত্যের দাওয়াতের উত্থানের আর কোন সম্ভবনাই থাকে না। কাজেই মুসা (আ) এর সাথীরা যে দোয়া করেছিলেন তা ছিল বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া। তারা দোয়া করেছিলেন, "হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি এমন অনুগ্রহ বর্ষণ করো যাতে আমরা জালেমদের জন্য ফিৎনায় তথা উৎপীড়নের অসহায় শিকারে পরিণত না হই।" অর্থাৎ আমাদের ভুল-ভ্রান্তি, দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে রক্ষা করো এবং আমাদের প্রচেষ্টাকে দুনিয়ায় ফলদায়ক করো, যাতে আমাদের অস্তিত্ব তোমার সৃষ্টির জন্য কল্যাণপ্রদ হয়, জালেমদের দুরাচারের কারণে না হয়।
৮৪.
এ আয়াতটির অর্থের ব্যাপারে মুফাস্সিরদের মধ্যে মতভেদ ঘটেছিল। এর শব্দাবলী এবং যে পরিবেশে এ শব্দাবলী উচ্চারিত হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করে আমি একথা বুঝেছি যে, সম্ভবত মিসরে সরকারের কঠোর নীতি ও নির্যাতন এবং বনী ইসরাঈলের নিজের দুর্বল ঈমানের কারণে ইসরাঈলী ও মিসরীয় মুসলমানদের মধ্যে জামায়াতের সাথে নামায পড়ার ব্যবস্থা খতম হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে তাদের ঐক্যগ্রন্থী ছিন্নভিন্ন এবং তাদের দ্বীনি প্রাণসত্তার মৃত্যু ঘটেছিল। এ জন্য এ অবস্থাটিকে নতুন কর কায়েম করার জন্য হযরত মূসাকে হুকুম দেয়া হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল, জামায়াতবদ্ধভাবে নামায পড়ার জন্য মিসরে কয়েকটি গৃহ নির্মাণ করো অথবা গৃহের ব্যবস্থা করে নাও। কারণ একটি বিকৃত ও বিক্ষিপ্ত মুসলিম জাতির দ্বীনি প্রাণসত্তার পুনরুজ্জীবন এবং তার ইতস্তত ছড়ানো শক্তিকে নতুন করে একত্র করার উদ্দেশ্যে ইসলামী পদ্ধতিতে যে কোন প্রচেষ্টাই চালানো হবে তার প্রথম পদক্ষেপেই অনিবার্যভাবে জামায়াতের সাথে নামায কায়েম করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ গৃহগুলোকে কিবলাহ গণ্য করার যে অর্থ আমি বুঝেছি তা হচ্ছে এই যে, এ গৃহগুলোকে সমগ্র জাতির জন্য কেন্দ্রীয় গুরুত্বের অধিকারী এবং তাদের কেন্দ্রীয় সম্মিলন স্থলে পরিণত করতে হবে। আর এরপরই "নামায কায়েম করো" কথাগুলো বলার মানে হচ্ছে এই যে, পৃথক পৃথকভাবে যার যার জায়গায় নামায পড়ে নেয়ার পরিবর্তে লোকদের এ নির্ধারিত স্থানগুলোয় জামায়েত হয়ে নামায পড়তে হবে। কারণ কুরআন পরিভাষায় যাকে "ইকামাতে সালাত" বলা হয় জামায়াতের সাথে নামায পড়া অনিবার্যভাবে তার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
৮৫.
অর্থাৎ বর্তমান ঈমানদারদের ওপর যে হতাশা, ভীতি-বিহ্বলতা ও নিস্তেজ-নিস্পৃহা ভাব ছেয়ে আছে তা দূর করে দাও। তাদেরকে আশান্বিত করো। তাদেরকে উৎসাহিত ও উদ্যমশীল করো। "সুখবর দাও" বাক্যটির মধ্যে এসব অর্থ রয়েছে।
৮৬ .
ওপরের আয়াতগুলো হযরত মূসার দাওয়াতের প্রথম যুগের সাথে সম্পর্ক রাখে। এ দোয়াটি হচ্ছে মিসরে অবস্থানকালের একেবারে শেষ সময়ের। মাঝখানে কয়েক বছরের দীর্ঘ ব্যবধান। এ সময়কার বিস্তারিত বিবরণ এখানে নেই। তবে কুরান মজীদের অন্যান্য স্থানে এ মাঝখানের যুগেরও বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।
৮৭.
অর্থাৎ আড়ম্বর শান-শওকত ও সাংস্কৃতিক জীবনের এমন চিত্তাকর্ষক চাকচিক্য, যার কারণে দুনিয়ার মানুষ তাদের ও তাদের রীতি-নীতির মোহে মত্ত হয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের পর্যায়ে পৌঁছার আকাঙ্খা করতে থাকে।
৮৮.
অর্থাৎ উপায়-উপকরণ, যেগুলোর প্রাচুর্যের কারণে নিজেদের কলা-কৌশলসমূহ কার্যকর করা তাদের জন্য সহজসাধ্য ছিল এবং যেগুলোর অভাবে সত্যপন্থীরা নিজেদের যাবতীয় কর্মসূচী কার্যকর করতে অক্ষম ছিল।
৮৯.
যেমন একটু আগেই আমি বলেছি, এ দোয়াটি হযরত মূসা (আ) করেছিলেন তার মিসরে অবস্থানের একবারে শেষ সময়ে। এটি তিনি এমন সময় করেছিলেন যখন একের পর এক সকল নিদর্শন দেখে নেবার এবং দ্বীনের সাক্ষ্য প্রমাণ পূর্ণ হয়ে যাবার পরও ফেরাউন ও তার রাজসভাসদরা সত্যের বিরোধিতায় চরম হঠকারিতার সাথে অবিচল ছিল এহেন পরিস্থিতিতে পয়গম্বর যে বদদোয়া করেন তা কুফরীর ওপর অবিচল থাকার ব্যাপারে হঠকারিতার ভূমিকা অবলম্বনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহর নিজের ফায়সালারই অনুরূপ হয়ে থাকে। অর্থাৎ তাদেরকে আর ঈমান আনার সুযোগ দেয়া হয় না।
৯০.
যারা প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত নয় এবং আল্লাহর মহৎ উদ্দেশ্যে ও মানব কল্যাণ নীতি বুঝে না, তারা মিথ্যার মোকাবিলায় সত্যের দুর্বলতা, সত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টাকারীদের অনবরত ব্যর্থতা এবং বাতিল মতাদর্শের নেতৃবৃন্দের বাহ্যিক আড়ম্বর ঐশ্বর্য ও তাদের পার্থিব সাফল্য দেখে ধারণা করতে থাকে, হয়তো মহান আল্লাহ‌ তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণকারীদেরকে এ দুনিয়ার ওপর কর্তৃত্বশীল দেখতে চান। তারা মনে করে হয়তো আল্লাহ‌ স্বয়ং মিথ্যার মোকাবিলায় সত্যকে সমর্থন করতে চান না, তারপর এ মূর্খের দল শেষ পর্যন্ত নিজেদের বিভ্রান্তিকর অনুমানের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম আসলে অর্থহীন এবং এ অবস্থায় কুফরী ও ফাসেকী শাসনের আওতায় দ্বীনের পথে চলার যে সামান্যতম অনুমতিটুকু পাওয়া যাচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এ আয়াতে মহান আল্লাহ‌ হযরত মূসা ও তার অনুসারীদেরকে এ ভ্রান্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করার তাগিদ করেছেন। এখানে আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সবরের সাথে নিজেদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কাজ করে যাও। সাধারণত মূর্খ ও অজ্ঞরা ও ধরনের অবস্থায় যে বিভ্রান্তির শিকার হয় তোমরাও যেন তেমনি বিভ্রান্ত না হও।
৯১.
বাইবেলে এ ঘটনার কোন উল্লেখ নেই। তবে তালমূদে বলা হয়েছে, ডুবে যাওয়ার সময় ফেরাউন বলেছিলঃ "আমি তোমার ওপর ঈমান আনছি। হে প্রভু! তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।"
.
৯২.
সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম সাগর তীরে সেখানে ফেরাউনের লাশ সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল আজো সে জায়গায়টি অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমান সময়ে এ জায়গাটির নাম জাবালে ফেরাউন বা ফেরাউন পর্বত। এরই কাছাকাছি আছে একটি গরম পানির ঝর্ণা। স্থানীয় লোকেরা এর নাম দিয়েছে হাম্মামে ফেরাউন। এর অবস্থান স্থল হচ্ছে আবু যানীমর কয়েক মাইল ওপরে উত্তরের দিকে। স্থানীয় লোকেরা এ জায়গাটি চিহ্নিত করে বলে, ফেরাউনের লাশ এখানে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

এ ডুবন্ত ব্যক্তি যদি মিনফাতাহ ফেরাউন হয়ে থাকে, যাকে আধুনিক গবেষণার মূসার আমলের ফেরাউন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাহলে এর লাশ এখনো কায়রোর যাদু ঘরে রয়েছে। ১৯০৭ সালে স্যার গ্রাফটিন এলিট স্মিথ তার মমির ওপর থেকে যখন পট্রি খুলেছিলেন তখন লাশের ওপর লবনের একটি স্তর জমাটবাঁধা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এটি লবণাক্ত পানিতে তার ডুবে যাওয়ার একটি সুস্পষ্ট আলামত ছিল।

৯৩.
অর্থাৎ আমি তো শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক নিদর্শনসমূহ দেখিয়েই যেতে থাকবো, যদিও বেশীর ভাগ লোকদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, বড় বড় শিক্ষণীয় নিদর্শন দেখেও তাদের চোখ খোলে না।
৯৪ .
অর্থাৎ মিসর থেকে বের হবার পর ফিলিস্তিন।
৯৫.
এর অর্থ হচ্ছে, পরবর্তী পর্যায়ে তারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে যে দলাদলি শুরু করে এবং নতুন নতুন মাযহাব তথা ধর্মীয় চিন্তা গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটায় তার কারণ এ ছিল না যে, তারা প্রকৃত সত্য জানতো না এবং না জানার কারণে তার বাধ্য হয়ে এমনটি করে। বরং আসলে এসব কিছুই ছিল তাদের দুর্বৃত্তসুলভ চরিত্রের ফসল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছিলঃ এ হচ্ছে সত্য দ্বীন, এ হচ্ছে তার মূলনীতি, এগুলো-এর দাবী ও চাহিদা, এগুলো হচ্ছে কুফর ও ইসলামের পার্থক্য সীমা, একে বলে আনুগত্য। আর এর নাম হচ্ছে গোনাহ, এসব জিনিসের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং এসব নিয়মনীতির ভিত্তিতে দুনিয়ায় তোমার জীবন প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কিন্তু এ সুস্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও তারা একটি দ্বীনকে অসংখ্য দ্বীনে পরিণত করে এবং আল্লাহর দেয়া বুনিয়াদগুলো বাদ দিয়ে অন্য বুনিয়াদের ওপর নিজেদের ধর্মীয় ফেরকার প্রাসাদ নির্মাণ করে।
.
অনুবাদ: