আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
মুশরিকরা নির্জলা সংশয়, কল্পনা ও অনুমানের ওপর নিজেদের অনুসন্ধানের ভিত গড়ে তুলেছে।
ইশরাকী সাধক ও যোগীরা যদিও মুরাকাবা তথা ধ্যানযোগের ভড়ৎ সৃষ্টি করেছেন এবং দাবী করেছেন যে, তারা বহিরিঙ্গের পেছনে উকি দিয়ে অভ্যন্তরের চেহারা দেখে নিয়েছেন কিন্তু আসলে তারা নিজেদের এ অনুসন্ধানের ভিত রেখেছেন আন্দাজ অনুমানের ওপর। তারা আসলে নিজেদের আন্দাজ অনুমানের বিষয় নিয়েই ধ্যান করেন। আর তারা এই যে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এটা আসলে এছাড়া আর কিছুই নয় যে, অনুমানের ভিত্তিতে যে ধারণাটা তারা দাঁড়া করিয়েছিল তারি ওপর তাদের চিন্তাভাবনা কে কেন্দ্রীভূত করেছেন। তারপর তার ওপর মস্তিস্কের চাপ সৃষ্টি করেছেন, ফলে সেই একই ধারণাকে নিজেদের সমানে চলমান দেখতে পেয়েছেন।
দার্শনিকগণ যুক্তির সাহায্যে গৃহীত সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুসন্ধানের ভিত রূপে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আসলে তা আন্দাজ-অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এ আন্দাজ অনুমান ভিত্তিক যুক্তি যে একেবারেই খোড়া যুক্তি, সে কথা উপলব্ধির করে তারা তর্কশাস্ত্র সম্মত যুক্তি প্রদান ও কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তিক যষ্ঠির ওপর ভর দিয়ে তাকে চালাবার চেষ্টা করেছেন এবং এর নাম দিয়েছেন যুক্তি ভিত্তিক সিদ্ধান্ত।
বিজ্ঞানীগণ যদিও বিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য তাত্ত্বিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তবুও অতিপ্রাকৃতের সীমানায় পা ফেলার সাথে সাথেই তারাও তাত্ত্বিক পদ্ধতি পরিহার করে আন্দাজ অনুমান ও ধারণা কল্পনার পেছনে চলেছেন।
আবার এ দলগুলোর আন্দাজ-অনুমান সংকীর্ণ দল প্রীতি, অন্ধ বিদ্বেষ ও স্বার্থ প্রীতি রোগেও আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তারা অন্যের কথা না শোনার জিদ ধরে বসেছে এবং নিজেদের প্রিয় পথের ওপর হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
কুরআন এ ধরনের অনুসন্ধান পদ্ধতিকে আগাগোড়াই ভুল গণ্য করে। কুরআন বলে, তোমাদের পথভ্রষ্টতার আসল কারণ হচ্ছে এই যে, তোমরা সত্যানুসন্ধানের ভিত্তি রাখো আন্দাজ-অনুমান ও ধারণা-কল্পনার ওপর। আবার অন্ধ দল প্রীতি ও সংকীর্ণ স্বার্থ বিদ্বেষের শিকার হয়ে অন্যের যুক্তিসঙ্গত কথাও শুনতে রাজী হও না। এ দ্বিবিধ ভুলের কারণে তোমাদের পক্ষে সত্যের সন্ধান লাভ অসম্ভব তো ছিলই এমন কি নবীগণ যে দান পেশ করেছেন তাকে যাচাই পর্যালোচনা করে সঠিক পথে অগ্রসর হওয়াও অসম্ভব হয়ে গেছে।
এর মোকাবিলায় কুরআন দার্শনিক অনুসন্ধান গবেষণার জন্য যে সঠিক তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পথের সন্ধান দিয়েছে তা হচ্ছে এই যে, যারা দাবী করছে, আমরা ধারণা-কল্পনা, আন্দাজ-অনুমান ও ধ্যান-তপস্যার মাধ্যমে নয় বরং প্রথমে তাদের বর্ণনা সকল প্রকার সংকীর্ণ দল প্রীতি ও স্বার্থ বিদ্বেষ মুক্ত হয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনা। তারপর বিশ্বজাহানে যেসব নিদর্শন (কুরআনের পরিভাষায় আয়াত সমূহ) তোমাদের দৃষ্টিগোচর ও অভিজ্ঞতা লব্ধ হয় সেগুলো সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করো, সেগুলোর সাক্ষ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করো এবং অনুসন্ধান করতে থাকো যে, এ বাহ্যিক অবয়বের পেছনে যে সত্যের প্রতি এরা আঙ্গুলই নির্দেশ করেছেন তার প্রতি ইঙ্গিতকারী আলামত তোমরা ঐ বাহ্যিক অবয়বেই পাচ্ছো কিনা? যদি ও ধরনের আলামত দৃষ্টিগোচর হয় এবং তাদের ইঙ্গিতও সুস্পষ্ট হয় তাহলে যাদের বর্ণনা নিদর্শনসমূহের সাক্ষ্য অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে অযথা মিথ্যুক বলার আর কোন কারণ নেই। এ দর্শণ পদ্ধতিই ইসলামের ভিত্তি। দুঃখের বিষয় এ পদ্ধতি পরিত্যাগ করে মুসলিম দার্শনিকগণও প্লেটো ও এরিস্টটলের পদাংক অনুসরণ করেছেন।
কুরআনের বিভিন্ন স্থানে শুধুমাত্র এ পদ্ধতি অবলম্বনের নির্দেশ দেয়াই হয়নি বরং বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনসমূহ পেশ করে তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার এবং প্রকৃত সত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছার যথারীতি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এভাবে চিন্তা ভাবান ও অনুসন্ধান করার এ পদ্ধতি মন মস্তিস্কে বদ্ধমূল হবে। এখানে এ আয়াতেও উদাহরণস্বরূপ শুধুমাত্র দু’টি নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ রাত ও দিন। আসলে সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্বের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশৃংখল পরিবর্তনের কারণে রাত দিনের ওলটপালট ও বিপ্লব সাধিত হয়। এটি একজন বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক এবং সমগ্র বিশ্ব জগতের ওপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশালী শাসকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট আলামত। এর মধ্যে সুস্পষ্ট কুশলতা, নৈপুণ্য, বিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতাও দেখা যায়। কারণ দুনিয়ার সমস্ত বস্তুর অসংখ্য প্রয়োজন ও অভাব পূরণ এ দিন রাতের আবর্তনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে প্রভুত্ব, কৃপাশীলতা ও প্রতিপালনের সুস্পষ্ট আলামতও পাওয়া যায়। কারণ এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি পৃথিবীর বুকে এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই তাদের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোও সরবরাহ করেন। এ থেকে এও জানা যায় যে, এ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক মাত্র, একজন, তিনি কোন ক্রীড়ামোদী বা তামাসা প্রিয় নন, খেলাচ্ছলে এ বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেননি এবং সেভাবে একে চালাচ্ছেনও না বরং তিনি প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞানময় এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি কাজ করেছেন। এ থেকে এও জানা যায় যে, অনুগ্রহকারী ও পালনকারী হিসেবে তিনিই ইবাদাত লাভের হকদার এবং দিন রাতের আবর্তনের অধীন কোন সত্তাই রব ও প্রভু নয় বরং রবের অধিনস্থ দাস। এইসব নিদর্শনগত সুস্পষ্ট সাক্ষ্যের মোকাবিলায় মুশরিকরা আন্দাজ অনুমান ও ধারণা-কল্পনার ভিত্তিতে যে ধর্ম উদ্ভাবন করেছে তা কিভাবে সঠিক হতে পারে?
পুত্র দুই রকমের হতে পারে। ঔরসজাত অথবা পালিত। তারা যদি কাউকে ঔরসজাত অর্থে আল্লাহর পুত্র গণ্য করে তাহলে এর মানে হবে যে, তারা আল্লাহকে এমন এক জীবের মত মনে করে, যে স্বভাব-প্রকৃতির দিক দিয়ে মরণশীল এবং যার অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য তার কোন স্বজাতি থাকতে হবে আবার এ স্বজাতি থেকে তার একজন স্ত্রী হতে হবে এবং তাদের দুজনের যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে তার সন্তান উৎপন্ন হবে। এ সন্তান তার প্রজাতীয় সত্তা এবং তার কাজ টিকিয়ে রাখবে। এছাড়া তার অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা হতে পারে না। আর যদি কাউকে দত্তক অর্থে আল্লাহর পুত্র গণ্য করে তাহলে এর দু’টি অর্থ হবে। এক, তারা আল্লাহকে এমন এক মানুষের মতো মনে করে, যে নিঃসন্তান হবার কারণে নিজের উত্তারাধিকারী করার এবং সন্তানহীনতার দরুন তার যে ক্ষতি হচ্ছে নামমাত্র হলেও তার কিছুটা প্রতিকার করার উদ্দেশ্য নিজের প্রজাতির কোন একজনকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করে। দুই, তারা মনে করে আল্লাহ ও মানবিক আবেগের অধিকারী। এ কারণে নিজের অসংখ্য বান্দাদের মধ্য থেকে কোন একজনের প্রতি তার স্নেহ ভালোবাসা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তাকে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন।
এ তিনটি অবস্থার যে কোনটিই সঠিক হোক না কেন, সর্বাবস্থায়ই এ বিশ্বাসের মৌল তত্ত্বের মধ্যে আল্লাহর প্রতি আরোপিত হবে বহু দোষ-ত্রুটি, দুর্বলতা ও অভাব। এ কারণে প্রথমে বাক্যাংশে বলা হয়েছে তোমরা আল্লাহর ওপর যেসব দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা আরোপ করছো সে সব থেকে তিনি মুক্ত। দ্বিতীয় বাক্যাংশে বলা হয়েছে, তিনি এমন ধরনের অভাব থেকেও মুক্ত যার কারণে মরণশীল মানুষদের সন্তানদের দত্তক নেবার প্রয়োজন হয়। তৃতীয় বাক্যাংশে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে যে পৃথিবীতে ও আকাশে সবাই আল্লাহর বান্দা ও তার দাস। তাদের কারোর সাথে আল্লাহর এমন কোন বিশেষ বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই যার ফলে সবাইকে বাদ দিয়ে তিনি তাকেই নিজের পুত্র বা একমাত্র পুত্র অথবা উত্তরাধিকারী মনোনীত করবেন। বান্দার গুণের কারণে অবশ্যই আল্লাহ একজনের তুলনায় আর একজনকে বেশী ভালোবাসেন। কিন্তু এ ভালবাসার অর্থ এ নয় যে, কোন বান্দাকে বন্দেগী পর্যায় থেকে উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অংশীদার করার পর্যায়ে উন্নীত করবেন। বড়জোর এ ভালোবাসার দাবী ততটুকুই হতে পারে যা এর আগের একটি আয়াত বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করেছে তাদের কোন ভয় ও মর্মযাতনা নেই। দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই তাদের জন্য আছে শুধু সুসংবাদ।