আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
১. এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন লেখকের “রাসায়েল ও মাসায়েল” ২য় খণ্ডের “দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরে মুসলমানদের মধ্যে উত্তরাধিকার ও বিয়ে-শাদির সম্পর্ক” নিবন্ধনটি।-অনুবাদক
তাছাড়া এ আয়াতটি ইসলামী রাষ্ট্রের বিদেশ নীতির ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। এর দৃষ্টিতে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে যেসব মুসলমান অবস্থান করে, তাদের দায়িত্বই ইসলামী রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। বাইরের মুসলমানদের কোন দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের ওপর বার্তায় না। একথাটিই নবী (সা.) তার নিম্নোক্ত হাদীসে বলেছেনঃ أَنَا بَرِىءٌ مِنْ كُلِّ مُسْلِمٍ بَيْنَ أَظْهُرِ نى الْمُشْرِكِينَ অর্থাৎ “আমার ওপর এমন কোন মুসলমানের সাহায্য-সমর্থন ও হেফাজতের দায়িত্ব নেই যে মুশরিকদের মধ্যে বসবাস করে।” এভাবে সাধারণত যেসব বিবাদের কারণে আন্তর্জাতিক জটিলতা দেখা দেয়, ইসলামী আইন তার শিকড় কেটে দিয়েছে। কারণ যখনই কোন সরকার নিজের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে অবস্থানকারী কিছু সংখ্যালঘুর দায়িত্ব নিজের মাথায় নিয়ে নেয়, তখনই এর কারণে এমন সব জটিলতা দেখা দেয়, বার বার যুদ্ধের পরও যার কোন মীমাংসা হয় না।
আয়াতে চুক্তির জন্য (مِيثُاق) (মীসাক) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মূল হচ্ছে (وُثُوق) ‘ওসুক’। এর মানে আস্থা ও নির্ভরতা। এমন প্রত্যেকটি জিনিসকে “মীসাক” বলা হবে যার ভিত্তিতে কোন জাতির সাথে আমাদের সুস্পষ্ট যুদ্ধ নয় চুক্তি না থাকলেও তারা প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী আমাদের ও তাদের মধ্যে কোন যুদ্ধ নেই এ ব্যাপারে যথার্থ আস্থাশীল হতে পারে।
তারপর আয়াতে বলা হয়েছে بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ অর্থাৎ তোমাদের ও তাদের মধ্যে চুক্তি থাকে এ থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে, ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার কোন অমুসলিম সরকারের সাথে যে চুক্তি স্থাপন করে তা শুধুমাত্র দু’টি সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক নয় বরং দু’টি জাতির সম্পর্কও। মুসলমান সরকারের সাথে সাথে মুসলিম জাতি ও তার সদস্যরাও এর নৈতিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। মুসলিম সরকার অন্য দেশ বা জাতির সাথে যে চুক্তি সম্পাদন করে ইসলামী শরীয়াত তার নৈতিক দায়িত্ব থেকে মুসলিম জাতি বা তার ব্যক্তিবর্গকে মুক্ত থাকার আদৌ বৈধ গণ্য করে না। তবে দারুল ইসলাম সরকারের চুক্তিগুলো মেনে চলার দায়িত্ব একমাত্র তাদের ওপর বর্তাবে যারা এ রাষ্ট্রের কর্মসীমার মধ্যে অবস্থান করবে। এ সীমার বাইরে বসবাসকারী সারা দুনিয়ার মুসলমানরা কোনক্রমেই এ দায়িত্বে শামিল হবে না। এ কারণেই হোদাইবিয়ায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার কাফেরদের সাথে যে চুক্তি করেছিলেন হযরত আবু বুসাইর ও আবু জানদাল এবং অন্যান্য মুসলমানদের ওপর তার কোন দায়িত্ব অর্পিত হয়নি, যারা মদীনার দারুল ইসলামের প্রজা ছিলেন না।
এ প্রসঙ্গে জানা থাকা দরকার, মক্কা বিজয়ের পর ইসলামী যুগে প্রথম হজ্জ অনুষ্ঠিত হয় ৮ হিজরীতে প্রাচীন পদ্ধতিতে। ৯ হিজরীতে মুসলমানরা এ দ্বিতীয় হজ্জটি সম্পন্ন করে নিজস্ব পদ্ধতিতে এবং অন্যদিকে মুশরিকরা করে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে। এরপর ১০ হিজরীতে তৃতীয় হজ্জ অনুষ্ঠিত হয় খালেস ইসলামী পদ্ধতিতে। এটিই বিখ্যাত বিদায় হজ্জ। নবী ﷺ প্রথম দু'বছর হজ্জ করতে যাননি। তৃতীয় বছর শিরকের পুরোপুরি অবসান ঘটার পর তিনি হজ্জ আদায় করেন।
এ এ দায়িত্ব মুক্তি ও স্পর্কচ্ছেদ সংক্রান্ত ঘোষণার ফলে আরবে শিরক ও মুশরিকদের অস্তিত্বই যেন কার্যত আইন বিরোধী (Out of Law) হয়ে গেলো। এখন আর তাদের জন্য সারাদেশে কোন আশ্রয়স্থল রইল না। কারণ দেশের বেশীরভাগ এলাকা ইসলামী শাসন কর্তৃত্বের আওতাধীন হয়ে গিয়েছিল। এরা নিজেদের জায়গায় বসে অপেক্ষা করছিল, রোম ও পারস্যের পক্ষ থেকেই ইসলামী সালতানাত কখন বিপদের সম্মুখীন হবে অথবা নবী (সা.) কখন ইন্তেকাল করবেন। তখনই এরা অকস্মাৎ চুক্তি ভঙ্গ করে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করে দেবে। কিন্তু আল্লাহ তার ও তার রসূল ﷺ তাদের প্রতীক্ষিত সময় আসার আগেই তাদের পরিকল্পনার ছক উল্টে দিলেন এবং তাদের থেকে দায়িত্ব মুক্তির কথা ঘোষণা করে তাদেরকে তিনটি পথের একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করলেন। এক, তাদের যুদ্ধ করার জন্য তৈরী হতে হবে এবং ইসলামী শক্তির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে। দুই, তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তিন, তাদের ইসলাম গ্রহণ করতে হবে এবং দেশের বৃহত্তর অংশ আগেই যে শাসন ব্যবস্থার আওতাধীন চলে এসেছে তারই আয়ত্বে নিজেদেরকে ও নিজেদের এলাকাকে সোপর্দ করে দিতে হবে।
এ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রকৃত ও যথার্থ যৌক্তিকতা অনুধাবন করার জন্য আমাদেরকে পরবর্তীকালে উদ্ভূত ইসলাম বর্জন আন্দোলনের দিকে ফেরাতে হবে। আলোচ্য ঘটনার দেড় বছর পরে নবী (সা.) ইন্তেকালের পরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ অশুভ তৎপরতা ও গোলযোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠার ফলে ইসলামের নব নির্মিত প্রাসাদটি আকস্মিকভাবে নড়ে ওঠে। ৯ হিজরীর এ সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার মাধ্যমে যদি শিরকের সংগঠিত শক্তিকে খতম করে না দেয়া হতো এবং সারাদেশে ইতিমধ্যেই সলামের নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা প্রধান্য বিস্তার না করতো, তাহলে হযরত আবু বকর (রা.) খিলাফত আমলের শুরুতেই মুরতাদ হওয়ার যে হিড়িক লেগে গিয়েছিল তার চেয়ে অনন্ত দশগুণ বেশী শক্তি নিয়ে বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধের ভয়াবহ তাণ্ডব শুরু হয়ে যেতো। এ অবস্থায় ইসলামের ইতিহাসের চেহারাই হয়তো সম্পূর্ণ পাল্টে যেতো।