পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

১২৭ আয়াত

৪১ ) আর তোমরা জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু গনীমাতের মাল লাভ করেছো তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ আল্লাহ, তাঁর রসূল, আত্মীয়স্বজন, এতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত। ৩২ যদি তোমরা ঈমান এনে থাকো আল্লাহর প্রতি এবং ফায়সালার দিন অর্থাৎ উভয় সেনাবাহিনীর সামনা-সামনি মোকাবিলার দিন আমি নিজের বান্দার ওপর যা নাযিল করেছিলাম তার প্রতি, ৩৩ (অতএব সানন্দে এ অংশ আদায় করো) আল্লাহ‌ প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর শক্তিশালী।
۞ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّمَا غَنِمْتُم مِّن شَىْءٍۢ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُۥ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْيَتَـٰمَىٰ وَٱلْمَسَـٰكِينِ وَٱبْنِ ٱلسَّبِيلِ إِن كُنتُمْ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ وَمَآ أَنزَلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا يَوْمَ ٱلْفُرْقَانِ يَوْمَ ٱلْتَقَى ٱلْجَمْعَانِ ۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌ ٤١
৪২ ) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন তোমরা উপত্যকার এদিকে ছিলে এবং তারা ছিল অন্যদিকে শিবির তৈরী করে, আর কাফেলা ছিল তোমাদের থেকে নিচের (উপকূল) দিকে। যদি আগেভাগেই তোমাদের ও তাদের মধ্যে মোকাবিলার চুক্তি থাকতো, তাহলে তোমরা অবশ্যি এ সময় পাশ কাটিয়ে যেতে। কিন্তু যা কিছু সংঘটিত হয়েছে তা এ জন্য ছিল যে, আল্লাহ‌ যে বিষয়ের ফায়সালা করে ফেলেছিলেন তা তিনি কার্যকর করবেনই। এভাবে যাকে ধ্বংস হতে হবে সে সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে ধ্বংস হবে এবং যাকে জীবিত থাকতে হবে সে সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে জীবিত থাকবে। ৩৪ অবশ্যি আল্লাহ‌ সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। ৩৫
إِذْ أَنتُم بِٱلْعُدْوَةِ ٱلدُّنْيَا وَهُم بِٱلْعُدْوَةِ ٱلْقُصْوَىٰ وَٱلرَّكْبُ أَسْفَلَ مِنكُمْ ۚ وَلَوْ تَوَاعَدتُّمْ لَٱخْتَلَفْتُمْ فِى ٱلْمِيعَـٰدِ ۙ وَلَـٰكِن لِّيَقْضِىَ ٱللَّهُ أَمْرًۭا كَانَ مَفْعُولًۭا لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنۢ بَيِّنَةٍۢ وَيَحْيَىٰ مَنْ حَىَّ عَنۢ بَيِّنَةٍۢ ۗ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَسَمِيعٌ عَلِيمٌ ٤٢
৪৩ ) আর স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন হে নবী, আল্লাহ‌ তোমার স্বপ্নের মধ্যে তাদেরকে সামান্য সংখক দেখাচ্ছিলেন। ৩৬ যদি তিনি তোমাকে তাদের সংখ্যা বেশী দেখিয়ে দিতেন তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং যুদ্ধ করার ব্যাপারে ঝগড়া শুরু করে দিতে। কিন্তু আল্লাহই তোমাদের এ থেকে রক্ষা করেছেন। অবশ্যি তিনি মনের অবস্থাও জানেন।
إِذْ يُرِيكَهُمُ ٱللَّهُ فِى مَنَامِكَ قَلِيلًۭا ۖ وَلَوْ أَرَىٰكَهُمْ كَثِيرًۭا لَّفَشِلْتُمْ وَلَتَنَـٰزَعْتُمْ فِى ٱلْأَمْرِ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ سَلَّمَ ۗ إِنَّهُۥ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ٤٣
৪৪ ) আর স্মরণ করো, যখন সামনাসামনি যুদ্ধের সময় আল্লাহ‌ তোমাদের দৃষ্টিতে শত্রুদের সামান্য সংখ্যক দেখিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টিতেও তোমাদের কম করে দেখিয়েছেন, যাতে যে বিষয়টি অনিবার্য ছিল তাকে আল্লাহ‌ প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন এবং শেষ পর্যন্ত সমস্ত বিষয় আল্লাহর দিকেই ফিরে যায়।
وَإِذْ يُرِيكُمُوهُمْ إِذِ ٱلْتَقَيْتُمْ فِىٓ أَعْيُنِكُمْ قَلِيلًۭا وَيُقَلِّلُكُمْ فِىٓ أَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِىَ ٱللَّهُ أَمْرًۭا كَانَ مَفْعُولًۭا ۗ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ ٤٤
৪৫ ) হে ঈমানদারগণ! যখন কোন দলের সাথে তোমাদের মোকাবিলা হয়, তোমরা দৃঢ়পদ থাকো এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো বেশী বেশী করে। আশা করা যায়, এতে তোমরা সাফল্য অর্জন করবে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةًۭ فَٱثْبُتُوا۟ وَٱذْكُرُوا۟ ٱللَّهَ كَثِيرًۭا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ٤٥
৪৬ ) আর আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দেবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তির দিন শেষ হয়ে যাবে। সবরের পথ অবলম্বন করো, ৩৭ অবশ্যি আল্লাহ‌ সবরকারীদের সাথে রয়েছেন।
وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَـٰزَعُوا۟ فَتَفْشَلُوا۟ وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَٱصْبِرُوٓا۟ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ ٤٦
৪৭ ) আর তোমরা এমন লোকদের মত আচরণ করো না, যারা অহংকার করতে করতে ও লোকদেরকে নিজেদের মাহাত্ম্য দেখাতে দেখাতে ঘর থেকে বের হয়েছে এবং যারা আল্লাহর পথ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখে। ৩৮ তারা যা কিছু করছে তা আল্লাহর নাগালের বাইরে নয়।
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ خَرَجُوا۟ مِن دِيَـٰرِهِم بَطَرًۭا وَرِئَآءَ ٱلنَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ وَٱللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌۭ ٤٧
৪৮ ) সেই সময়ের কথা একটু মনে করো, যখন শয়তান এদের কার্যকলাপকে এদের চোখে ঔজ্জ্বল্যময় করে দেখিয়েছিল এবং এদেরকে বলেছিল, আজ তোমাদের ওপর কেউ বিজয়ী হতে পারে না এবং আমি তোমাদের সাথে আছি। কিন্তু যখন উভয় বাহিনীর সামানাসামনি মোকাবিলা শুরু হলো তখনই সে পিছনের দিকে ফিরে গেলো এবং বলতে লাগলোঃ তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখছি যা তোমরা দেখো না। আমি আল্লাহকে ভয় পাচ্ছি। আল্লাহ‌ বড় কঠোর শাস্তিদাতা।
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ أَعْمَـٰلَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ ٱلْيَوْمَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَإِنِّى جَارٌۭ لَّكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَآءَتِ ٱلْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّى بَرِىٓءٌۭ مِّنكُمْ إِنِّىٓ أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّىٓ أَخَافُ ٱللَّهَ ۚ وَٱللَّهُ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ ٤٨
৪৯ ) যখন মুনাফিকরা এবং যাদের দিলে রোগ আছে তারা সবাই বলছিল, এদের দ্বীনই তো এদের মাথা বিগড়ে দিয়েছে। ৩৯ অথচ যদি কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাহলে আল্লাহ‌ অবশ্যি বড়ই পরাক্রান্ত ও জ্ঞানী।
إِذْ يَقُولُ ٱلْمُنَـٰفِقُونَ وَٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ غَرَّ هَـٰٓؤُلَآءِ دِينُهُمْ ۗ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى ٱللَّهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌۭ ٤٩
৫০ ) হায়, যদি তোমরা সেই অবস্থা দেখতে পেতে যখন ফেরেশতারা নিহত কাফেরদের রূহ কবয করেছিল। তারা তাদের চেহারায় ও পিঠে আঘাত করছিল এবং বলে চলছিল “নাও এবং জ্বালাপোড়ার শাস্তি ভোগ করো।
وَلَوْ تَرَىٰٓ إِذْ يَتَوَفَّى ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۙ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَـٰرَهُمْ وَذُوقُوا۟ عَذَابَ ٱلْحَرِيقِ ٥٠
৩২.
এ ভাষণটির শুরুতেই গনীমাতের মাল সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার এবং তার ব্যাপারে ফয়সালা করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলই রাখেন। এখানে এ গনীমাতের মাল বন্টনের আইন-কানুন বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে এ ফায়সালাটিও শুনিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যুদ্ধের পরে সকল সৈনিকের সব ধরনের গনীমতের মাল এনে আমীর বা ইমামের কাছে জমা দিতে হবে। কোন একটি জিনিসও তারা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। তারপর এ সম্পদ থেকে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বের করে নিতে হবে। আয়াতে যে উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে এ দিয়ে তা পূর্ণ করতে হবে। বাকী চার অংশ যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। কাজেই এ আয়াত অনুযায়ী নবী ﷺ হামেশা যুদ্ধের পর ঘোষনা দিতেনঃ

إِنَّ هَذِهِ غَنَائِمِكُمْ وَإِنَّهُ لَيْسَ لِى فِيهَا إِلاَّ نَصِيبِى مَعَكُمْ الْخُمُسُ وَالْخُمُسُ مَرْدُودٌ عَلَيْكُمْ فَأَدُّوا الْخَيْطَ وَالْمَخِيطَ وَأَكْبَرَ مِنْ ذَلِكَ وَأَصْغَرَ وَلاَ تَغُلُّوا فَإِنَّ الْغُلُولَ عَارٌ وَنَارٌ-

“এ গনীমাতের সম্পদগুলো তোমাদের জন্যই। এক পঞ্চমাংশ ছাড়া এর মধ্যে আমার নিজের কোন অধিকার নেই। আর এই এক পঞ্চমাংশ ও তোমাদেরই সামগ্রিক কল্যাণার্থেই ব্যয়িত হয়। কাজেই একটি সুঁই ও একটি সূতা পর্যন্তও এনে রেখে দাও। কোন ছোট বা বড় জিনিস লুকিয়ে রেখো না। কারণ এমনটি করা কলঙ্কের ব্যাপার এবং এর পরিণাম জাহান্নাম।”

এ বন্টনে আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের অংশ একটিই। এ অংশটিকে আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করা এবং সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করাই মূল লক্ষ্য।

আত্মীয়-স্বজন বলতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় তো তাঁর আত্মীয়-স্বজনই বুঝোতো। কারণ তিনি নিজের সবটুকু সময় দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করতেন। নিজের অন্ন সংস্থানের জন্য কোন কাজ করা তাঁর পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। এ কারনে তাঁর নিজের, তাঁর পরিবারের লোকদের এবং যেসব আত্মীয়ের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ছিল, তাদের সবার প্রয়োজন পূরণ করার কোন একটা ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন ছিল। তাই ‘খুমুস’ তথা এক পঞ্চমাংশে তাঁর আত্মীয়ের অংশ রাখা হয়েছে। কিন্তু নবী (সা.) এর ইন্তেকালের পর ‘আত্মীয়-স্বজনদের’ এ অংশটি কাদেরকে দেয়া হবে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এক দলের মতে, নবী (সা.) এর পরে এ অংশটি বাতিল হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দলের মতে, নবী (সা.) এর পরে যে ব্যক্তি তাঁর খেলাফতের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত হবেন তার আত্মীয়-স্বজনরা এ অংশটি পাবে। তৃতীয় দলটির মতে, এ অংশটি নবীর বংশের ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বণ্টন করা হতে থাকবে। আমার নিজস্ব গবেষনা-অনুসন্ধানের ফলে যেটুকু আমি জানতে পেরেছি, তাতে দেখা যায় যে, খোলাফায়ের রাশেদীনের যামানায় এ তৃতীয় মতটিই কার্যকর হতে থেকেছে।

৩৩.
অর্থাৎ যে সাহায্য-সমর্থনের মাধ্যমে তোমরা বিজয় অর্জন করেছো।
.
৩৪.
অর্থাৎ প্রমাণ হয়ে যাবে যে, যে জীবিত আছে তার জীবিত থাকাই উচিত ছিল এবং যে ধ্বংস হয়ে গেছে তার ধ্বংস হয়ে যাওয়াই সমীচীন ছিল। এখানে জীবিত থাকা ও ধ্বংস হওয়া বলতে ব্যক্তিদেরকে নয় বরং ইসলাম ও জাহেলিয়াতকে বুঝানো হয়েছে।
৩৫.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ অন্ধ, বধির ও বেখবর নন। বরং তিনি জ্ঞানী-সবকিছু জানেন এবং সবকিছু দেখেন। তাঁর রাজত্বে অন্ধের মত আন্দাজে কাজ-কারবার হচ্ছে না।
৩৬.
এটা এমন এক সময়ের কথা, যখন নবী (সা.) মুসলমানদের নিয়ে মদীনা থেকে বের হচ্ছিলেন অথবা পথে কোন মনযিলে অবস্থান করছিলেন তখন কাফেরদের যথার্থ সৈন্য সংখ্যা জানা যায়নি। এ সময় নবী (সা.) স্বপ্নে কাফেরদের সেনাবাহিনী দেখলেন। তাঁর সামনে যে দৃশ্যপট পেশ করা হয় তাতে শত্রু সেনাদের সংখ্যা খুব বেশী নয় বলে তিনি অনুমান করতে পারলেন। এ স্বপ্নের বিবরণ তিনি মুসলমানদের শুনালেন। এতে মুসলমানদের হিম্মত বেড়ে গেলো এবং তারা তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখলো।
.
.
.
৩৭.
অর্থাৎ নিজেদের আবেগ-অনুভূতি ও কামনা-বাসনাকে সংযত রাখো। তাড়াহুড়ো করো না। ভীত-আতঙ্কিত হওয়া, লোভ-লালসা পোষণ করা এবং অসঙ্গত উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রকাশ থেকে দূরে থাকো। স্থির মস্তিস্কে এবং ভারসাম্যপূর্ণ ও যথার্থ পরিমিত বিচক্ষণতা ও ফয়সালা করার শক্তি সহকারে কাজ করে যাও। বিপদ-আপদ ও সংকট-সমস্যার সম্মুখীন হলেও যেন তোমাদের পা না টলে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দিলে, ক্রোধ ও ক্ষোভের তরঙ্গে ভেসে গিয়ে তোমরা যেন কোন অর্থহীন কাজ করে না বসো। বিপদের আক্রমণ চলতে থাকলে এবং অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে মোড় নিয়েছে দেখতে পেলে, মানসিক অস্থিরতার কারণে তোমাদের চেতনাশক্তি বিক্ষিপ্ত ও বিশৃংখল না হয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য সফল হবার আনন্দে অধীর হয়ে অথবা কোন আধা-পরিপক্ক ব্যবস্থাপনাকে আপাতদৃষ্টিতে কার্যকর হতে দেখে তোমাদের সংকল্প যেন তাড়াহুড়োর শিকার না হয়ে পড়ে। আর যদি কখনো বৈষয়িক স্বার্থ, লাভ ও ইন্দ্রিয় সুখভোগের প্ররোচনা তোমাদের লোভাতুর করে তোলে, তাহলে তাদের মোকাবিলায় তোমাদের নফস যেন দূর্বল হয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সেদিকে এগিয়ে যেতে না থাকে। এ সমস্ত অর্থ শুধু একটি মাত্র শব্দ ‘সবর’ এর মধ্যে নিহিত রয়েছে। আল্লাহ‌ বলেছেন, এসব দিক দিয়ে যারা সবরকারী হবে, তারাই আমার সাহায্য ও সমর্থন পেয়ে ধন্য হবে।
.
৩৮.
এখানে কুরাইশ গোত্রভুক্ত কাফেরদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাদের সেনাবাহিনী মক্কা থেকে বের হয়েছিল অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে। বাদ্য-গীত পারদর্শীনী ক্রীতদাসী পরিবেষ্টিত হয়ে তারা চলছিল। পথের মাঝখানে বিভিন্ন জায়গায় থেমে তারা নাচ-গান, শরাব পান ও আনন্দ উল্লাসের মাহফিল জমিয়ে তুলেছিল। পথে যেসব গোত্র ও জনবসতির ওপর দিয়ে তারা যাচ্ছিল, তাদের ওপর নিজেদের শান-শওকত, সংখ্যাধিক্য ও শক্তির দাপট এবং যুদ্ধ সরঞ্জামের ভীতি ও প্রভাব বিস্তার করে চলছিল। তারা এমনভাবে বাহাদুরী দেখাচ্ছিল, যেন তাদের সামনে দাঁড়াবার মত কেউ নেই। এমনি একটা উৎকট অহংকারের ভাব তাদের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠছিল। এ ছিল তাদের নৈতিক অবস্থা। আর যে উদ্দেশ্যে তারা ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা ছিল তাদের এ নৈতিক অবস্থার চাইতেও আরো বেশী নোংরা ও অপবিত্র এবং তা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল অতিরিক্ত অভিশাপের বোঝা। তারা সত্য, সততা ও ইনসাফের ঝাণ্ডা যাতে বুলন্দ করার জন্য ধন ও প্রাণ উৎসর্গ করতে এগিয়ে আসেনি। বরং এ ঝাণ্ডা বুলন্দ না হয় এবং যে একটি মাত্র দল সত্যের এ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য এগিয়ে এসেছে, তাকেও যাতে খতম করা যায় সেই উদ্দেশ্যেই তারা বের হয়েছিল। তারা চাইছিল, দুনিয়ায় এ ঝাণ্ডা বহনকারী আর কেউ থাকবে না। এ ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা এমনটি হয়ে যেয়ো না। আল্লাহ‌ তোমাদের ঈমান ও সত্যপ্রিয়তার যে নিয়ামত দান করেছেন তার দাবী অনুযায়ী তোমাদের চরিত্র যেমন পাক-পবিত্র হতে হবে, তেমনি তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যও হতে হবে মহৎ। এ নির্দেশ শুধুমাত্র সেই যুগের জন্য নির্দিষ্ট ছিল না। আজকের জন্যও এবং চিরকালের জন্য এ নির্দেশ প্রযোজ্য। সেদিন কাফেরদের সেনাবাহিনীর যে অবস্থা ছিল আজো তার মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি। বেশ্যালয়, ব্যভিচারের আড্ডা ও মদের পিপা যেন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের মত তাদের সাথে জড়িয়ে আছে। গোপনে নয়, প্রকাশ্যে তারা অত্যন্ত নির্লজ্জতার সাথে মেয়ে ও মদের বেশী বেশী বরাদ্দ দাবী করে। তাদের সৈন্যরা নিজেদের জাতির কাছে যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নিজেদের সমাজের বেশী সংখ্যক যুবতী মেয়েদেরকে তাদের হাতে তুলে দেবার দাবী জানাতে লজ্জাবোধ করে না। এ অবস্থায় অন্য জাতিরা এদের থেকে কি আশা করতে পারে যে, এরা নিজেদের নৈতিক আবর্জনার ফাঁকে তাদেরকে ডুবিয়ে দেবার ব্যাপারে কোন প্রকার চেষ্টার ত্রুটি করবে না? আর এদের দম্ভ ও অহংকারের ব্যাপারে বলা যায়, এদের প্রত্যেকটি সৈনিক ও অফিসারের চাল-চলন ও কথাবার্তার ধরন থেকে তা একেবারে পরিষ্কার দেখা যেতে পারে। আর এদের প্রত্যেক জাতির নেতৃস্থানীয় পরিচালকবৃন্দের বক্তৃতাবলীতে لاغالب لكم اليوم (আজ তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারে দুনিয়াতে এমন কেউ নেই) এবং من اشد منا قوة (কে আমাদের চেয়ে শক্তিশালী? ) ধরনের দম্ভোক্তিই শ্রুত হয়ে থাকে। এদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, এ নৈতিক পূতিগন্ধময় আবর্জনা থেকেও বেশী কুৎসিত ও নোংরা। এদের প্রত্যেকেই অত্যন্ত প্রতারণাপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করে দুনিয়াবাসীকে একথার নিশ্চয়তা দিয়ে যায় যে, মানবতার কল্যাণ ছাড়া তার সামনে আর কোন লক্ষ্য নেই। কিন্তু আসলে শুধুমাত্র মানবতার কল্যাণটাই তাদের লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়, বাকী সবকিছুই সেখানে আছে। এদের যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ‌ তাঁর এ পৃথিবীতে সমগ্র মানবজাতির জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার জাতি একাই হবে তার ওপর দখলদার এবং অন্যদের তার চাকর ও কৃপাপ্রার্থী হয়ে থাকতে হবে। কাজেই এখানে ঈমানদারদেরকে কুরআন এ স্থায়ী নির্দেশ দিয়েছে যে, এ ফাসেক ও ফাজেরদের আচার-আচরণ থেকেও দূরে থাকো। আবার যেসব অপবিত্র ও পূতিগন্ধময় উদ্দেশ্য নিয়ে এরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়, সেই ধরনের উদ্দেশ্যে নিজেদের ধন-প্রাণ উৎসর্গ করতে উদ্যোগী হয়োনা।
.
.
৩৯.
অর্থাৎ মদীনার মুনাফীক গোষ্ঠি এবং বৈষয়িক স্বার্থ পূজায় ও আল্লাহর প্রতি গাফিলতির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ, যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামহীন মুষ্টিমেয় লোকের একটি দলকে কুরাইশদের মত বিরাট শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করতে দেখে নিজেদের মধ্যে এ মর্মে বলাবলি করছিল যে, এরা আসলে নিজেদের ধর্মীয় আবেগে উন্মাদ হয়ে গেছে। এ যুদ্ধে এদের ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু এই নবী (সা.) এদের কানে এমন মন্ত্র ফুঁকে দিয়েছে, যার ফলে এরা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং সামনে মৃত্যুগূহা দেখেও তার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
.
.
অনুবাদ: