পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

১৫৯ আয়াত

৯৮ ) অথবা তারা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, আমাদের মজবুত হাত কখনো দিনের বেলা তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা খেলাধুলায় মেতে থাকবে?
أَوَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًۭى وَهُمْ يَلْعَبُونَ ٩٨
৯৯ ) এরা কি আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে নির্ভীক হয়ে গেছে? ৭৮ অথচ যে সব সম্প্রদায়ের ধ্বংস অবধারিত তারা ছাড়া আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে আর কেউ নির্ভীক হয় না।
أَفَأَمِنُوا۟ مَكْرَ ٱللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْقَوْمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ ٩٩
১০০ ) পৃথিবীর পূর্ববর্তী অধিবাসীদের পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি এ বাস্তবতা থেকে ততটুকুও শেখেনি যে, আমি চাইলে তাদের অপরাধের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করতে পারি। ৭৯ (কিন্তু তারা শিক্ষণীয় বিষয়াবলীর ব্যাপারে অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করে থাকে। ) আর আমি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেই। ফলে তারা কিছুই শোনে না। ৮০
أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِ أَهْلِهَآ أَن لَّوْ نَشَآءُ أَصَبْنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمْ ۚ وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ ١٠٠
১০১ ) যেসব জাতির কাহিনী আমি তোমাদের শুনাচ্ছি (যাদের দৃষ্টান্ত তোমাদের সামনে রয়েছে) তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তাদের কাছে আসে, কিন্তু যে জিনিসকে তারা একবার মিথ্যা বলেছিল তাকে আবার মেনে নেবার পাত্র তারা ছিল না। দেখো, এভাবে আমি সত্য অস্বীকারকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই। ৮১
تِلْكَ ٱلْقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنۢبَآئِهَا ۚ وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلْكَـٰفِرِينَ ١٠١
১০২ ) তাদের অধিকাংশের মধ্যে আমি অঙ্গীকার পালনের মনোভাব পাইনি। বরং অধিকাংশকেই পেয়েছি ফাসেক ও নাফরমান। ৮২
وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍۢ ۖ وَإِن وَجَدْنَآ أَكْثَرَهُمْ لَفَـٰسِقِينَ ١٠٢
১০৩ ) তারপর এ জাতিগুলোর পর (যাদের কথা ওপরে বলা হয়েছে) আমার নিদর্শনসমূহ সহকারে মূসাকে পাঠাই ফেরাউন ও তার জাতির প্রধানদের কাছে। ৮৩ কিন্তু তারাও আমার নিদর্শনসমূহের ওপর জুলুম করে। ৮৪ ফলতঃ এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল একবার দেখো।
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنۢ بَعْدِهِم مُّوسَىٰ بِـَٔايَـٰتِنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَإِي۟هِۦ فَظَلَمُوا۟ بِهَا ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ ١٠٣
১০৪ ) মূসা বললোঃ “হে ফেরাউন! ৮৫ আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট থেকে প্রেরিত।
وَقَالَ مُوسَىٰ يَـٰفِرْعَوْنُ إِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ ١٠٤
১০৫ ) আমার দায়িত্বই হচ্ছে, আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবো না। আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিযুক্তির সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছি। কাজেই তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।” ৮৬
حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ ۚ قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَرْسِلْ مَعِىَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ١٠٥
১০৬ ) ফেরাউন বললোঃ “তুমি যদি কোন প্রমাণ এনে থাকো এবং নিজের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও, তাহলে তা পেশ করো।”
قَالَ إِن كُنتَ جِئْتَ بِـَٔايَةٍۢ فَأْتِ بِهَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ ١٠٦
১০৭ ) মূসা নিজের লাঠিটি ছুড়ে দিল। অমনি তা একটি জ্বলজ্যান্ত অজগরের রূপ ধারণ করলো।
فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِىَ ثُعْبَانٌۭ مُّبِينٌۭ ١٠٧
.
৭৮.
মূলে مكر (মকর) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবীতে এর অর্থ হচ্ছে, গোপনে গোপনে কোন চেষ্টা-তদবীর করা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমনভাবে গুটি চালানো, যার ফলে তার ওপর চরম আঘাত না আসা পর্যন্ত সে জানতেই পারে না যে, তার ওপর এক মহা বিপদ আসন্ন। বরং বাইরের অবস্থা দেখে সে একথাই মনে করতে থাকে যে, সব কিছু ঠিকমতই চলছে।
.
৭৯.
অর্থাৎ একটি পতিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির স্থানে অন্য যে জাতিটির উত্থান ঘটে তার জন্য নিজের পূর্ববর্তী জাতির পতনের মধ্যে যথেষ্ট পথনির্দেশনা থাকে। কিছুকাল পূর্বে যে জাতিটি এ স্থানে বিলাস ব্যসনে লিপ্ত ছিল এবং যাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরবের ঝাণ্ডা এখানে পত্ পত্ করে উড়তো, চিন্তা ও কর্মের কোন ধরনের ত্রুটি ও ভ্রান্তি তাদেরকে ধ্বংস করেছে, নিজেদের বিবেক-বুদ্ধির যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে তারা একথা সহজেই অনুধাবন করতে পারে। তারা এটাও অনুভব করতে পারে, যে উচ্চতর শক্তি পূর্ববর্তী জাতিদেরকে তাদের অপরাধের কারণে ইতিপূর্বে পাকড়াও করেছিল এবং তাদেরকে এ স্থান থেকে সরিয়ে দিয়ে স্থানটি শূন্য করেছিল, সে শক্তি এখনো যথা স্থানে বহাল আছে এবং তার কাছ থেকে এ ক্ষমতাও কেউ ছিনিয়ে নেয়নি যে, এ স্থানের পূর্ববর্তী অধিবাসীরা যে ধরনের ভুল করে আসছিল সেই ধরনের ভুল যদি এ স্থানের বর্তমান অধিবাসীরা করতে থাকে, তাহলে পূর্ববর্তীদেরকে যেমন এ জায়গা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তেমনি এদেরকে সরিয়ে দেয়া যেতে পারবে না।
৮০.
অর্থাৎ যখন তারা ইতিহাস জেনে এবং শিক্ষণীয় ধ্বংসস্তূপ প্রত্যক্ষ করেও শিক্ষা গ্রহণ করে না এবং নিজেরাই নিজেদেরকে বিস্মৃতির মধ্যে নিক্ষেপ করে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের চিন্তা করার বুঝার ও কোন উপদেশ দাতার উপদেশ শুনার সুযোগ মেলে না। যে ব্যক্তি নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়, প্রখর সূর্যালোকও তার চোখে আলো ছড়াতে পারে না এবং যে ব্যক্তি নিজে শুনতে চায় না তাকে আর কেউ শুনাতে পারে না, এটিই আল্লাহর অমোঘ প্রাকৃতিক আইন।
৮১.
আগের আয়াতে বলা হয়েছিলঃ “আমি তাদের দিলে মোহর মেরে দেই, তারপর তারা কিছুই শুনতে পায় না"-এর ব্যাখ্যা আল্লাহ‌ নিজেই এ আয়াতটিতে করে দিয়েছেন। এ ব্যাখ্যা থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, দিলে মোহর মারার অর্থ হচ্ছেঃ মানবিক বুদ্ধিবৃত্তির এমন একটি মনস্তাত্বিক নিয়মের আওতাধীন হয়ে যাওয়া, যার দৃষ্টিতে একবার জাহেলী বিদ্বেষ বা হীন ব্যক্তি স্বার্থের ভিত্তিতে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার পর মানুষ নিজের জিদ ও হঠকারিতার শৃংখলে এমনভাবে আবদ্ধ হয়ে যেতে থাকে যে, তারপর কোন প্রকার যুক্তি-প্রমাণ, প্রত্যক্ত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাই সত্যকে গ্রহণ করার জন্য তার মনের দুয়ার খুলে দেয় না।
৮২.
কারোর মধ্যে অঙ্গীকার পালনের মনোভাব পাইনি"-অর্থাৎ কোন ধরনের অঙ্গীকার পালনের পরোয়াই তাদের নেই। আল্লাহর পালিত বান্দা হবার কারণে জন্মগতভাবে প্রত্যেকটি মানুষ আল্লাহর সাথে যে অঙ্গীকারে আবদ্ধ, তা প্রতিপালনের কোন পরোয়াই তাদের নেই। তারা সামাজিক অঙ্গীকার পালনেরও কোন পরোয়া করে না। মানব সমাজের একজন সদস্য হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তি যার সাথে একটি সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ, অন্যদিকে নিজের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টের মুহূর্তগুলোতে অথবা কোন সদিচ্ছা ও মহৎ বাসনা পোষনের মুহূর্তে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর সাথে যে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়, তাও তারা পালন করে না। এ তিন ধরনের অঙ্গীকার ভঙ্গ করাকে এখানে ফাসেকী বলা হয়েছে।
৮৩.
ওপরের বর্ণিত ঘটনাগুলোর উদ্দেশ্যে হচ্ছে একথা ভালভাবে মানসপটে গেঁথে দেয়া যে, যে জাতি আল্লাহর পয়গাম পাওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করে, ধ্বংসই তার অনিবার্য পরিণতি। এরপর এখন মূসা, ফেরাউন ও বনী ইসরাঈলের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ধারাবাহিকভাবে কয়েক রুকূ' পর্যন্ত। এর মধ্যে কুরাইশ বংশীয় কাফের, ইহুদী ও মু’মিনদের কে উপরোক্ত বিষয়বস্তুটি ছাড়াও আরো কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

এ কাহিনীর মাধ্যমে কুরাইশ বংশোদ্ভুত কাফেরদেরকে একথা বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে যে, সত্যের দাওয়াতের প্রাথমিক স্তরে সত্য ও মিথ্যার শক্তির যে অনুপাত ব্যাহ্যত দেখা যায় তাতে প্রতারিত না হওয়া উচিত। সত্যের সমগ্র ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয় যে, সূচনা বিন্দুতে তার সংখ্যা এত কম থাকে যে, শুরুতে সারা দুনিয়ার মোকাবিলায় মাত্র এক ব্যক্তি সত্যের অনুসারী এবং কোন প্রকার সাজ-সরঞ্জাম ছাড়াই সে মিথ্যার বিরুদ্ধে একাকী যুদ্ধ শুরু করে দেয়। এমন এক মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দেয় যার পেছনে রয়েছে বড় বড় জাতি ও রাষ্ট্রের বিপুল শক্তি। তারপরও শেষ পর্যন্ত সত্যই বিজয় লাভ করে। এছাড়াও এ কাহিনীতে তাদের একথাও জানানো হয়েছে যে, সত্যের আহবায়কের মোকাবেলায় যেসব কৌশল অবলম্বন করা হয় এবং যেসব পন্থায় তার দাওয়াতকে দাবিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয় তা কিভাবে বুমোরাং হয়ে যায়। এ সঙ্গে তাদেরকে একথাও জানানো হয় যে, সত্যের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারীদের ধ্বংসের শেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সর্বশক্তিমান আল্লাহ‌ তাদের সংশোধিত হবার ও সঠিক পথ অবলম্বন করার জন্য কত দীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন এবং এরপরও যখন কোন প্রকার সতর্ক বাণী, কোন শিক্ষণীয় ঘটনা এবং কোন উজ্জ্বল নিদর্শন থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে না ও প্রভাবিত হয় না তখন তিনি তাদেরকে কেমন দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দান করেন।

যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছিল এ কাহিনীর মাধ্যমে তাদেরকে দ্বিবিধ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এক, নিজেদের সংখ্যাল্পতা ও দুর্বলতা এবং সত্য বিরোধীদের বিপুল সংখ্যা ও শক্তি যেন তাদেরকে হিম্মতহারা না করে এবং আল্লাহর সাহায্য বিলম্বিত হতে দেখে যেন তাদের মনোবল ভেঙ্গে না পড়ে। দুই, ঈমান আনার পর যে দলই ইহুদিদের মত আচরণ করে, তারা অবশ্যি ইহুদিদের মতই আল্লাহর লানতের শিকার হয়।

বনী ইসরাঈলের সামনে তাদের শিক্ষণীয় ইতিহাস পেশ করে তাদেরকে মিথ্যার পূজারী সাজার ক্ষতিকর পরিণাম থেকে সাবধান করা হয়েছে। তাদেরকে এমন এক নবীর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। যিনি পূর্বের নবীগণের প্রচলিত দ্বীনকে নব রকমের মিশ্রণ মুক্ত করে আবার তার আসল আকৃতিতে পেশ করেছিলেন।

৮৪.
“নিদর্শনসমূহের সাথে জুলুম করে।” অর্থাৎ সেগুলো মানে না এবং যাদুকরের কারসাজি গণ্য করে সেগুলো এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। যেমন কোন উচ্চাঙ্গের কবিতাকে কবিতাই নয় বরং তাকে দুর্বল বাক্য বিন্যাস গণ্য করা এবং তা নিয়ে বিদ্রূপ করা কেবল সেই কবিতাটির প্রতিই নয় বরং সমগ্র কাব্যজগত ও কাব্যচিন্তার প্রতিই জুলুমের নামান্তর। অনুরূপভাবে যেসব নিদর্শন নিজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে হবার ব্যাপারে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করে এবং যেগুলোর ব্যাপারে যাদুর সাহায্যে এমনি ধরনের নিদর্শনের প্রকাশ ঘটতে পারে বলে কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি ধারণাও করতে পারে না বরং যাদুবিদ্যা বিশারদগণ যেগুলো সম্পর্কে তাদের বিদ্যার সীমানার আওতায় অনেক উর্ধ্বের বলে সাক্ষ্য দেয় সেগুলোকেও যাদু গণ্য করা কেবল ঐ নিদর্শনগুলোর প্রতিই নয় বরং সুস্থ বিবেক বুদ্ধি ও প্রকৃত সত্যের প্রতিও বিরাট জুলুম।
.
৮৫.
ফেরাউন শব্দের অর্থ “সূর্য দেবতার সন্তান।” প্রাচীন কালে মিসরীয়রা সূর্যকে তাদের মহাদেব বা প্রধান দেবতা মনে করতো। এ অর্থে তারা তাকে বলতো (রাও)। ফেরাউন এ ‘রাও’ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। মিসরীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী কোন শাসনকর্তার সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হতে হলে তাকে ‘রাও’ এর শারীরিক অবতার এবং তার দুনিয়াবী প্রতিনিধি হওয়া অপরিহার্য ছিল। এ জন্যই যতগুলো রাজ পরিবার মিসরের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে সূর্য বংশীয় হিসেবে পেশ করেছে। শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর প্রত্যেকটি শাসক নিজেদের জন্য ফেরাউন (ফারাও) উপাধি গ্রহণ করে দেশবাসীর সামনে একথা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে যে, আমি-ই তোমাদের প্রধান রব বা মহাদেব।

এখানেও একথাটিও মনে রাখতে হবে যে, কুরআন মজীদে হযরত মূসার ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে দুজন ফেরাউনের কথা বলা হয়েছে। একজন ফেরাউনের আমলে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন এবং তার গৃহে প্রতিপালিত হন। আর দ্বিতীয় জনের কাছে তিনি ইসলামের দাওয়াত ও বনী ইসরাঈলের মুক্তির দাবী নিয়ে উপস্থিত হন এবং এ দ্বিতীয় ফেরাউনই অবশেষে জলমগ্ন হয়। বর্তমান যুগের গবেষকদের অধিকাংশের মতে, প্রথম ফেরাউন ছিল দ্বিতীয় রামেসাস। তার শাসনকাল ছিল ১২৯২ থেকে ১২২৫ খৃষ্টপূর্বাব্দে। আর এখানে উল্লেখিত দ্বিতীয় ফেরাউন ছিল “মিনফাতা” বা “মিনফাতাহ।” পিতা দ্বিতীয় রামেসাসের জীবনকালেই সে শাসন কর্তৃত্বে অংশগ্রহণ করে এবং পিতার মৃত্যুর পর পুরোপুরি রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী হয়। এ ধারণা বাহ্যত সন্দেহযুক্ত মনে হচ্ছে। কারণ ইসরাঈলী ইতিহাসের হিসেব অনুযায়ী হযরত মূসা (আ) ইন্তিকাল করেন ১২৭২ খৃস্টপূর্বাব্দে। তবুও যা হোক আমাদের মনে রাখতে হবে, এগুলো নেহাত ঐতিহাসিক ধারণা ও আন্দাজ-অনুমান আর মিসরীয়, ইসরাঈলী ও খৃস্টীয় পঞ্জিকার সাহায্যে একেবারে নির্ভুল সময়কালের হিসেব করা কঠিন।

.
৮৬.
হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে দু’টি জিনিসের দাওয়াত সহকারে ফেরাউনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এক, আল্লাহর বন্দেগী তথা ইসলাম গ্রহণ করো। দুই, বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়, যারা আগে থেকেই মুসলমান ছিল, তাদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। কুরআনের কোথাও এ দু’টি দাওয়াতের উল্লেখকরা হয়েছে এক সাথে আবার কোথাও স্থান-কাল বিশেষ আলাদা আলাদা ভাবে এদের উল্লেখ এসেছে।
.
.
অনুবাদ: