আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
এ ভাষণটির বর্ণনাভংগী বড়ই বৈশিষ্ট্যময়। ওহোদ যুদ্ধের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তার প্রত্যেকটির ওপর পৃথক পৃথকভাবে কয়েকটি মাপাজোখা শব্দ সমন্বিত ভারসাম্যপূর্ণ বাক্যের মাধ্যমে শিক্ষণীয় মন্তব্য করা হয়েছে। এগুলো বুঝতে হলে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর পটভূমি জানা একান্ত অপরিহার্য।
তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের শুরুতে মক্কার কুরাইশরা প্রায় তিন হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণ করে। সংখ্যায় বেশী হবার পরও অস্ত্রশস্ত্রও তাদের কাছে ছিল মুসলমানদের চাইতে অনেক বেশী। এর ওপর ছিল তাদের বদর যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবার তীব্র আকাংখা। নবী ﷺ ও অভিজ্ঞ সাহাবীগণ মদীনায় অবরুদ্ধ হয়ে প্রতিরক্ষার লড়াই চালিয়ে যাবার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি এমন কতিপয় শাহাদাতের আকাংখায় অধীরভাবে প্রতীক্ষারত তরুণ সাহাবী শহরের বাইরে বের হয়ে যুদ্ধ করার ওপর জোর দিতে থাকেন। অবশেষে তাদের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে নবী ﷺ বাইরে বের হবার ফয়সালা করেন। এক হাজার লোক তাঁর সাথে বের হন। কিন্তু ‘শওত’ নামক স্থানে পৌঁছে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার তিন'শো সঙ্গী নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে তার এহেন আচরণে মুসলিম সেনাদলে বেশ বড় আকারের অস্থিরতা ও হতাশার সঞ্চার হয়। এমন কি বনু সাল্মা ও বনু হারেসার লোকরা এত বেশী হতাশ হয়ে পড়ে যে, তারাও ফিরে যাবার সংকল্প করে ফেলেছিল।
কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ী সাহাবীগণের প্রচেষ্টায় তাদের মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা দূর হয়ে যায়। এই অবশিষ্ট সাত'শো সৈন্য নিয়ে নবী ﷺ সামনের দিকে এগিয়ে যান এবং ওহোদ পর্বতের পাদদেশে (মদীনা থেকে প্রায় চার মাইল দূরে) নিজের সেনাবাহিনীকে এমনভাবে বিন্যস্ত করেন যার ফলে পাহাড় থাকে তাদের পেছন দিকে এবং সামনের দিকে থাকে কুরাইশ সেনাদল। একপাশে এমন একটি গিরিপথ ছিল, যেখান থেকে আকস্মিক হামলা হবার আশঙ্কা ছিল। সেখানে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইরের নেতৃত্বে পঞ্চাশ জন তীরন্দাজের একটি বাহিনী মোতায়েন করেন। তাদেরকে জোর তাগীদ দিয়ে জানিয়ে দেনঃ “কাউকে আমাদের ধারে কাছে ঘেষঁতে দেবে না। কোন অবস্থায় এখান থেকে সরে যাবে না। যদি তোমরা দেখো, পাখিরা আমাদের গোশত ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে, তাহলেও তোমরা নিজেদের জায়গা থেকে সরে যাবে না।” অতঃপর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। প্রথম দিকে মুসলমানদের পাল্লা ভারী থাকে। এমনকি মুশরিকদের সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তারা বিচ্ছিন্ন –বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু এই প্রাথমিক সাফল্যকে পূর্ণ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দেবার পরিবর্তে গনীমতের মাল আহরণ করার লোভ মুসলমানদের বশীভূত করে ফেলে। তারা শত্রু সেনাদের ধন-সম্পদ লুট করতে শুরু করে।
ওদিকে যে তীরন্দাজদেরকে পেছন দিকের হেফাজতে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তারা যখন দেখতে পেলো শত্রুরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং গনীমতের মাল লুট করা হচ্ছে তখন তারাও নিজেদের জায়গা ছেড়ে গনীমতের মালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর তাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কড়া নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বার বার বাঁধা দিতে থাকেন। কিন্তু মাত্র কয়েকজন ছাড়া কাউকে থামানো যায়নি। কাফের সেনাদলের একটি বাহিনীর কমাণ্ডার খালেদ ইবনে অলীদ যথা সময়ে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। তিনি নিজের বাহিনী নিয়ে পাহাড়ের পেছন দিক থেকে এক পাক ঘুরে এসে গিরিপথে প্রবেশ করে আক্রমণ করে বসেন। আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর তাঁর মাত্র কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে এই আক্রমণ সামাল দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। গিরিপথের ব্যুহ ভেদ করে খালেদ তার সেনাদল দিয়ে অকস্মাৎ মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। খালেদের বাহিনীর এই আক্রমণ পলায়নপর কাফেরবাহিনীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করে। তারাও পেছন ফিরে মুসলমানদের ওপর একযোগে আক্রমণ করে বসে। এভাবে মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা বদলে যায়। হঠাৎ এই অপ্রত্যাশিত অবস্থার মুখোমুখি হয়ে মুসলমানরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তাদের একটি বড় অংশ বিক্ষিপ্ত হয়ে পলায়নমুখী হয়। তবুও কয়েক জন সাহসী সৈন্য তখনো যুদ্ধ ক্ষেত্রে বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। এমন সময় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, নবী ﷺ শহীদ হয়ে গেছেন। এ গুজবটি সাহাবায়ে কেরামের অবশিষ্ট বাহ্যিক জ্ঞানটুকুও বিলুপ্ত করে দেয়। এতক্ষণ যারা ময়দানে লড়ে যাচ্ছিলেন এবার তারাও হিম্মতহারা হয়ে বসে পড়েন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারপাশে ছিলেন মাত্র দশ বারো জন উৎসর্গীত প্রাণ মুজাহিদ। তিনি নিজেও আহত ছিলেন। পরিপূর্ণ পরাজয়ে আর কিছুই বাকি ছিল না। কিন্তু এই মুহূর্তে সাহাবীগণ জানতে পারলেন, নবী ﷺ জীবিত আছেন। কাজেই তারা সবদিক থেকে একে একে তাঁর চারদিকে সমবেত হতে থাকে। তারা তাঁকে নিরাপদে পর্বতের ওপরে নিয়ে যান। এ সময়ের এ বিষয়টি আজও দুর্ব্যেধ্য রয়ে গেছে এবং এ প্রশ্নটির জবাব আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি যে, কাফেররা তখন অগ্রবর্তী হয়ে ব্যাপকভাবে আক্রমণ না চালিয়ে কিসের তাড়নায় নিজেরাই মক্কায় ফিরে গিয়েছিল? মুসলমানরা এত বেশী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, তাদের পক্ষে পুনর্বার এক জায়গায় একত্র হয়ে যথারীতি যুদ্ধ শুরু করা কঠিন ছিল। কাফেররা তাদের বিজয়কে পূর্ণতার প্রান্তসীমায় পৌঁছাতে উদ্যোগী হলে তাদের সাফল্য লাভ অসম্ভব ব্যাপার ছিল না। কিন্তু তারা নিজেরাই বা কেন ময়দান ছেড়ে চলে গিয়েছিল তা আজও অজানা রয়ে গেছে।