পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

১২৬ আয়াত

৪৭ ) একথা শুনে মারয়াম বললোঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান কেমন করে হবে? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শও করেনি।” জবাব এলোঃ “এমনটিই হবে। ৪৪ আল্লাহ্‌ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কেবল এতটুকুই বলেন, হয়ে যাও, তাহলেই তা হয়ে যায়।”
قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى وَلَدٌۭ وَلَمْ يَمْسَسْنِى بَشَرٌۭ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ ٱللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ ۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًۭا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٤٧
৪৮ ) (ফেরেশতারা আবার তাদের আগের কথার জের টেনে বললোঃ) “আর আল্লাহ‌ তাকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন, তাওরাত ও ইনজীলের জ্ঞান দান করবেন
وَيُعَلِّمُهُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ ٤٨
৪৯ ) এবং নিজের রসূল বানিয়ে ইসরাঈলদের কাছে পাঠাবেন।” <p>(আর বনী ইসরাঈলদের কাছে রসূল হিসেবে এসে সে বললোঃ) “আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নিশানী নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের সামনে মাটি থেকে পাখির আকৃতি বিশিষ্ট একটি মূর্তি তৈরী করছি এবং তাতে ফুৎকার দিচ্ছি, আল্লাহ‌র হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আল্লাহ‌র হুকুমে আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করি এবং মৃতকে জীবিত করি। আমি তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি, তোমরা নিজেদের গৃহে কি খাও ও কি মজুদ করো। এর মধ্যে তোমাদের জন্য যথেষ্ট নিশানী রয়েছে, যদি তোমরা ঈমানদার হও। ৪৫
وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنِّى قَدْ جِئْتُكُم بِـَٔايَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ أَنِّىٓ أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۖ وَأُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ وَأُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِى بُيُوتِكُمْ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَةًۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ٤٩
৫০ ) আমি সেই শিক্ষা ও হিদায়াতের সত্যতা ঘোষণা করার জন্য এসেছি, যা বর্তমানে আমার যুগে তাওরাতে আছে। ৪৬ আর তোমাদের জন্য যেসব জিনিস হারাম ছিল তার কতকগুলো হালাল করার জন্য আমি এসেছি। ৪৭ দেখো, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে আমি নিশানী নিয়ে এসেছি। কাজেই আল্লাহ‌কে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
وَمُصَدِّقًۭا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ ٱلَّذِى حُرِّمَ عَلَيْكُمْ ۚ وَجِئْتُكُم بِـَٔايَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ٥٠
৫১ ) আল্লাহ্‌ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। কাজেই তোমরা তাঁর বন্দেগী করো। এটিই সোজাপথ।” ৪৮
إِنَّ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ ۗ هَـٰذَا صِرَٰطٌۭ مُّسْتَقِيمٌۭ ٥١
৫২ ) যখন ঈসা অনুভব করলো, ইসরাঈল কুফরী ও অস্বীকার করতে উদ্যোগী হয়েছে, সে বললোঃ “কে হবে আল্লাহ‌র পথে আমার সাহায্যকারী? হাওয়ারীগণ ৪৯ বললোঃ আমরা আল্লাহ‌র সাহায্যকারী। ৫০ আমরা আল্লাহ‌র প্রতি ঈমান এনেছি। সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম (আল্লাহ্‌র সামনে আনুগত্যের শির নতকারী) ।
۞ فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنْهُمُ ٱلْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِىٓ إِلَى ٱللَّهِ ۖ قَالَ ٱلْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ ٥٢
৫৩ ) হে আমাদের মালিক! তুমি যে ফরমান নাযিল করেছ, আমরা তা মেনে নিয়েছি এবং রসূলের আনুগত্য কবুল করে নিয়েছি। সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে আমাদের নাম লিখে নিয়ো।”
رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلْتَ وَٱتَّبَعْنَا ٱلرَّسُولَ فَٱكْتُبْنَا مَعَ ٱلشَّـٰهِدِينَ ٥٣
৫৪ ) তারপর বনী ইসরাঈল (ঈসার বিরুদ্ধে) গোপন চক্রান্ত করতে লাগলো। জবাবে আল্লাহ‌ও তাঁর গোপন কৌশল খাটালেন। আর আল্লাহ‌ শ্রেষ্ঠতম কুশলী।
وَمَكَرُوا۟ وَمَكَرَ ٱللَّهُ ۖ وَٱللَّهُ خَيْرُ ٱلْمَـٰكِرِينَ ٥٤
৫৫ ) (এটি আল্লাহ‌রই একটি গোপন কৌশল ছিল) যখন তিনি বললেনঃ “হে ঈসা! এখন আমি তোমাকে ফিরিয়ে নেবো ৫১ এবং তোমাকে আমার নিজের দিকে উঠিয়ে নেবো। আর যারা তোমাকে অস্বীকার করেছে তাদের থেকে (অর্থাৎ তাদের সঙ্গ এবং তাদের পূতিগন্ধময় পরিবেশে তাদের সঙ্গে থাকা থেকে) তোমাকে পবিত্র করে দেবো এবং তোমাকে যারা অস্বীকার করেছে ৫২ তাদের ওপর তোমার অনুসারীদের কিয়ামত পর্যন্ত প্রাধান্য দান করবো। তারপর তোমাদের সবাইকে অবশেষে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। সে সময় আমি তোমাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর মীমাংসা করে দেবো।
إِذْ قَالَ ٱللَّهُ يَـٰعِيسَىٰٓ إِنِّى مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَىَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَجَاعِلُ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوكَ فَوْقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۖ ثُمَّ إِلَىَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ ٥٥
৫৬ ) যারা কুফরী ও অস্বীকার করার নীতি অবলম্বন করেছে তাদেরকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে উভয় স্থানে কঠোর শাস্তি দেবো এবং তারা কোন সাহায্যকারী পাবে না।
فَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فَأُعَذِّبُهُمْ عَذَابًۭا شَدِيدًۭا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّـٰصِرِينَ ٥٦
৪৪.
অর্থাৎ কোন পুরুষ তোমাকে স্পর্শ না করলেও তোমার সন্তান হবে। এখানে যে ‘এমনটি হবে’ (كذلك) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের জবাবেও এই একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে এর যে অর্থ ছিল এখানেও সেই একই অর্থ হওয়াই উচিত। তা ছাড়া পরবর্তী বাক্য বরং পূর্বাপর সমস্ত বর্ণনাই এই অর্থ সমর্থন করে যে, কোনো প্রকার যৌন সংযোগ ছাড়াই হযরত মারয়ামকে সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। আর আসলে এভাবেই হযরত ঈসার (আঃ) জন্ম হয়েছিল। নয়তো দুনিয়ার আর দশটি স্ত্রীলোক যেভাবে সন্তান জন্ম দেয় সেভাবে পরিচিত স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যদি হযরত মারয়ামের গর্ভে সন্তান জন্ম নেবার ব্যাপারটি ঘটে থাকতো এবং যদি প্রকৃতপক্ষে হযরত ঈসা (আঃ) ঐভাবেই জন্মগ্রহণ করে থাকতেন, তাহলে ৪ রুকূ’ থেকে ৬ রুকূ’ পর্যন্ত যে বর্ণনা চলে আসছে তা পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে যায় এবং ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম সংক্রান্ত আর যে সমস্ত বর্ণনা আমরা কুরআনের আরো বিভিন্ন স্থানে পাই তাও নিরর্থক হয়ে পড়ে। পিতার ঔরস ছাড়াই অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে হযরত ঈসার (আঃ) জন্ম হয়েছিল বলেই না খৃস্টানরা তাঁকে ‘আল্লাহ্‌র পুত্র’ ও ইলাহ মনে করেছিল। আর একজন কুমারী মেয়ে সন্তান প্রসব করেছে, এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেই তো ইহুদীরা তাঁর প্রতি দোষারোপ করেছিল। যদি এটা আদতে কোন সত্য ঘটনাই না হয়ে থাকে, তাহলে ঐ দু’টি দলের চিন্তার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে কেবল এতটুকু বলে দেয়াই যথেষ্ট হতো যে, তোমরা ভুল বলছো, সে মেয়েটি ছিল বিবাহিতা, অমুক ব্যক্তি ছিল তার স্বামী এবং তারই ঔরসে ঈসার জন্ম হয়েছিল। এই সংক্ষিপ্ত চুম্বক কথা ক’টি বলার পরিবর্তে এতো দীর্ঘ ভূমিকা ফাঁদার, পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার এবং সোজাসুজি উমুক ব্যক্তির পুত্র ঈসা বলার পরিবর্তে মারয়ামের পুত্র ঈসা বলার কি প্রয়োজন ছিল? এর ফলে তো বিষয়টি সহজে মীমাংসা হওয়ার পরিবর্তে আরো জটিল হয়ে পড়েছে। কাজেই যারা কুরআনকে আল্লাহ‌র কালাম বলে মানে এবং এরপর ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, স্বাভাবিকভাবে মাতা পিতার মিলনের ফলে তাঁর জন্ম হয়েছিল, তারা আসলে একথা প্রমাণ করেন যে, মনের কথা প্রকাশ করা ও নিজের বক্তব্য সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার যতটুকু ক্ষমতা তাদের আছে, আল্লাহ‌র ততটুকু নেই (মা’আযাল্লাহ)।
.
.
৪৫.
অর্থাৎ যদি তোমরা হককে মেনে নিতে প্রস্তুত হয়ে যাও এবং হঠধর্মী না হও, তাহলে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ‌ যে আমাকে পাঠিয়েছেন, এ বিষয়টি মেনে নেবার এবং এ ব্যাপারে তোমাদের নিশ্চিন্ত করার জন্য এই নিশানীগুলোই যথেষ্ট।
৪৬.
অর্থাৎ আমি যে আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি এটি তার আর একটি প্রমাণ। যদি আমি তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত না হতাম বরং একজন মিথ্যা দাবীদার হতাম, তাহলে আমি নিজেই একটি ধর্ম তৈরী করে ফেলতাম এবং দক্ষতা সহকারে তোমাদের আগের পুরাতন ধর্ম থেকে বিচ্যুত করে নিজের নতুন উদ্ভাবিত ধর্মের দিকে টেনে আনার প্রচেষ্টা চালাতাম। কিন্তু আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে তাঁর নবীরা আমার পূর্বে যেসব দ্বীন এনেছিলেন আমি তো সেই আসল দ্বীনকে মানি এবং তার শিক্ষাকে সঠিক গণ্য করি।

বর্তমানে প্রচলিত ইঞ্জিল থেকেও একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মূসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য নবীগণ যে দ্বীনের প্রচার করেছিলেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামও সেই একই দ্বীনের প্রচারক ছিলেন। যেমন মথির বর্ণনা মতে পাহাড় থেকে প্রদত্ত ভাষণে ঈসা আলাইহিস সালাম পরিষ্কার বলেনঃ

“একথা মনে করো না যে, আমি তাওরাত বা নবীদের কিতাব রহিত করতে এসেছি। রহিত করতে নয় বরং সম্পূর্ণ করতে এসেছি।” (৫: ১৭)।

একজন ইহুদী আলেম হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলেন, দ্বীনের বিধানের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য হুকুম কোনটি? জবাবে তিনি বললেনঃ

“তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করবে। এটি মহৎ ও প্রথম হুকুম। আর দ্বিতীয়টি এর তুল্য; তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসবে। এই দু’টি হুকুমের ওপরই সমস্ত তাওরাত ও নবী রসূলদের সহীফা ও গ্রন্থসমূহ নির্ভরশীল।” (মথি ২২: ৩৭-৪০)

আবার হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর শিষ্যদের বলেনঃ

‍‍“ধর্মগুরু ও ফরীসীরা মূসার আসনে বসেছে। তারা তোমাদের যা কিছু বলে তা পালন করো ও মানো। কিন্তু তাদের মতো কাজ করো না। কারণ তারা বলে কিন্তু করে না।” (মথি ২৩: ২-৩)।

৪৭.
অর্থাৎ তোমাদের মূর্খদের কাল্পনিক বিশ্বাস, ফকীহদের আইনের চুলচেরা বিশ্লেষণ, বৈরাগ্যবাদীদের কৃচ্ছ্রসাধনা এবং অমুসলিম জাতিদের তোমাদের ওপর প্রাধান্য ও শাসন প্রতিষ্ঠার কারণে তোমাদের আল্লাহ‌ প্রদত্ত আসল শরীয়াতের ওপর যেসব বিধি বন্ধনের বাড়তি বোঝা আরোপিত হয়েছে, আমি সেগুলো রহিত করবো এবং আল্লাহ‌ যেগুলো হালাল বা হারাম গণ্য করেছেন সেগুলোই আমি তোমাদের জন্য হালাল ও হারাম গণ্য করবো।
.
৪৮.
এ থেকে জানা গেল অন্যান্য সকল নবীদের মতো হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের দাওয়াতেরও তিনটি মৌলিক বিষয়বস্তু ছিলঃ

একঃ সার্বভৌম কর্তৃত্ব, যার দাসত্ব ও বন্দেগী করতে হবে এবং যার প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে নৈতিক ও তামাদ্দুনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত বলে স্বীকার করতে হবে।

দুইঃ ঐ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারীর প্রতিনিধি হিসেবে নবীর নির্দেশের আনুগত্য করতে হবে।

তিনঃ মানুষের জীবনকে হালাল ও হারাম এবং বৈধতা ও অবৈধতার বিধিনিষেধে আবদ্ধকারী আইন ও বিধিবিধান একমাত্র আল্লাহ‌ দান করবেন। অন্যদের চাপানো সমস্ত আইন ও বিধিবিধান বাতিল করতে হবে।

কাজেই হযরত ঈসা (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত মুহাম্মাদ ﷺ ও অন্যান্য নবীদের মিশনের মধ্যে আসলে সামান্যতম পার্থক্যও নেই। যারা বিভিন্ন নবীর মিশন বিভিন্ন বলে গণ্য করেছেন এবং তাদের মিশনের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতির মধ্যে পার্থক্য দেখিয়েছেন, তারা মারাত্মক ভুল করেছেন। বিশ্ব-জাহানের সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারীর পক্ষ থেক তাঁর প্রজাদের দিকে যে ব্যক্তিই নিযুক্ত হয়ে আসবেন তাঁর আসার উদ্দেশ্য এছাড়া আর দ্বিতীয় কিছুই হতে পারে না যে, তিনি প্রজাদেরকে নাফরমানী, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিরক (অর্থাৎ সার্বভৌম প্রভুত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বিশ্ব-জাহানের একচ্ছত্র মালিক ও প্রভু আল্লাহ‌র সাথে আর কাউকে অংশীদার করা এবং নিজের বিশ্বস্ততা ও ইবাদাত বন্দেগীকে তাদের মধ্যে বিভক্ত করে দেয়া) থেকে বিরত রাখবেন এবং আসল ও প্রকৃত মালিকের নির্ভেজাল আনুগত্য, দাসত্ব, পূজা, আরাধনা ও বন্দেগী করার আহ্বান জানাবেন।

দুঃখের বিষয়, ঈসা আলাইহিস সালামের মিশনকে ওপরে কুরআনে যেমন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে বর্তমান ইনজীলে তেমনটি করা হয়নি। তবুও উপরে যে তিনটি মৌলিক বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে তা বিক্ষিপ্তভাবে ইশারা ইংগিতের আকারে হলেও বর্তমানে ইনজীলে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, হযরত ঈসা (আ) একমাত্র আল্লাহ‌র বন্দেগীর দাওয়াত দিয়েছিলেন, একথা ইনজীলের নিম্নোক্ত ইংগিত থেকে সুস্পষ্ট হয়ঃ

‘‘তোমার ঈশ্বর প্রভূকে প্রণিপাত (সিজদা) করো এবং একমাত্র তাঁরই আরাধনা করো।’’ (মথি ৪: ১০)।

তিনি যে কেবল এরই দাওয়াত দিয়েছিলেন তা নয় বরং তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যই ছিল, আকাশ রাজ্যে যেমন সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন আল্লাহ‌র নিরংকুশ আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনুরূপভাবে পৃথিবীতেও একমাত্র তাঁরই শরিয়াতী বিধানের আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

“তোমার রাজ্য আসুক। তোমার ইচ্ছা যেমন আকাশে পূর্ণ হয় তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক।” (মথি ৬:১০)

আবার ঈসা আলাইহিস সালাম নিজেকে নবী ও আসমানী রাজত্বের প্রতিনিধি হিসেবে পেশ করতেন এবং এ হিসেবেই লোকদেরকে নিজের আনুগত্য করার দাওয়াত দিতেন। তাঁর ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্যগুলো থেকে জানা যায়, তিনি নিজের জন্মভূমি ‘নাসেরা’ (নাজারাথ)-তে নিজের দাওয়াতের সূচনা করলে তাঁর আত্মীয়স্বজন ও শহরবাসীরাই তাঁর বিরোধিতায় নেমে পড়ে। এ সম্পর্কে মথি, মার্ক ও লুক একযোগে বর্ণনা করেছেন যে, “নবী তাঁর স্বদেশে জনপ্রিয় হন না।” তারপর জেরুসালেমে যখন তাঁর হত্যার চক্রান্ত চলতে লাগলো এবং লোকেরা তাঁকে অন্য কোথাও চলে যাবার পরামর্শ দিল তখন তিনি জবাব দিলেনঃ “নবী জেরুসালেমের বাইরে মৃত্যুবরণ করবে, এটা সম্ভব নয়।” (লুক ১৩: ৩৩) শেষবার যখন তিনি জেরুসালেম প্রবেশ করেছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যবর্গ উচ্চস্বরে বলতে লাগলোঃ “ ধন্য সেই রাজা যিনি প্রভূর নামে আসছেন।” একথায় ইহুদী আলেমরা অসন্তুষ্ট হলেন এবং তারা হযরত ঈসাকে বললেন, “আপনার শিষ্যদের মুখ বন্ধ করুন।” হযরত ঈসা বললেনঃ “ওরা যদি মুখ বন্ধ করে তাহলে পাথরগুলো চীৎকার করে উঠবে।” (লুক ১৯: ৩৮-৪০) আর একবার তিনি বললেনঃ

“হে শ্রমজীবীরা! হে ভারবহনে পিষ্টলোকেরা! সবাই আমার কাছে এসো। আমি তোমাদের বিশ্রাম দান করবো। আমার জোয়াল তোমাদের কাঁধে উঠিয়ে নাও। ...... আমার জোয়াল সহজে বহনীয় এবং আমার বোঝা হালকা।” (মথি ১১: ২৮-৩০)।

এ ছাড়া ঈসা আলাইহিস সালাম মানব রচিত আইনের পরিবর্তে আল্লাহ‌ প্রদত্ত আইনের আনুগত্য করতে চাইতেন একথাও মথি ও মার্কের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়। তাদের বর্ণনার সারনির্যাস হচ্ছেঃ ইহুদী আলেমগণ অভিযোগ করলেন, আপনার শিষ্যরা পূর্ববর্তী সম্মানীয় বুযুর্গের ঐতিহ্যের বিপরীত হাত না ধূয়েই আহার করে কেন? হযরত ঈসা (আঃ) এর জবাবে বললেনঃ তোমাদের মতো রিয়াকারদের অবস্থা হচ্ছে ঠিক তেমনি যেমন হযরত ইয়াসইয়া নবীর কন্ঠে এ তিরস্কার করা হয়েছেঃ “এই উম্মত মুখে আমার প্রতি মর্যাদার বাণী উচ্চারণ করে কিন্তু তাদের হৃদয় আমার থেকে দূরে। কারণ এরা মানবিক বিধানের শিক্ষা দেয়।” তোমরা আল্লাহ‌র হুকুমকে বাতিল করে থাক এবং নিজেদের বানোয়াট আইনকে প্রতিষ্ঠিত রাখো। আল্লাহ‌ তাওরাতের মাধ্যমে তোমাদের হুকুম দিয়েছিলেন, মা-বাপের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং যে ব্যক্তি মা-বাপকে সম্মান করবে না তার প্রাণনাশ করো। কিন্তু তোমরা বলছো যে ব্যক্তি মা-বাপকে একথা বলে দেয়, আমার যে খেদমত তোমার কাজে লাগতে পারে তাকে আমি আল্লাহ‌র জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছি, তার জন্য মা-বাপের খেদমত না করা সম্পূর্ণ বৈধ। (মথি ১৫: ৩-৯, মার্ক ৭: ৫-১৩)

৪৯.
‘হাওয়ারী’ শব্দটি আমাদের এখানে ‘আনসার’ শব্দের কাছাকাছি অর্থ বহন করে। বাইবেলে সাধারণভাবে হাওয়ারীর পরিবর্তে ‘শিষ্যবৃন্দ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কোন কোন স্থানে তাদের ‘রসূল’ও বলা হয়েছে। কিন্তু রসূল এই অর্থে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে দ্বীন প্রচারের জন্য পাঠাতেন। আল্লাহ‌ তাদেরকে রসূল হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, এই অর্থে রসূল বলা হয়নি।
৫০.
ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে অংশ গ্রহণকে কুরআন মজীদের অধিকাংশ স্থানে “আল্লাহ্‌কে সাহায্য করা” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি অবশ্যি একটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বিষয়। জীবনের যে পরিসরে আল্লাহ‌ মানুষকে ইচ্ছা ও সংকল্পের স্বাধীনতা দান করেছেন সেখানেই তিনি নিজের খোদায়ী শক্তি ব্যবহার করে কুফর বা ঈমান, বিদ্রোহ বা আনুগত্যের মধ্য থেকে কোন একটির পথ অবলম্বন করার জন্য মানুষকে বাধ্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি যুক্তি ও উপদেশের সাহায্য নিয়েছেন। এভাবে তিনি মানুষের কাছ থেকে এই স্বতষ্ফুর্ত স্বীকৃতি আদায় রতে চেয়েছেন যে, অস্বীকৃতি, নাফরমানী ও বিদ্রোহ করার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও তার জন্য নিজের স্রষ্টার দাসত্ব, আনুগত্য ও বন্দেগীর পথ অবলম্বন করাই প্রকৃত সত্য এবং এটিই তার সাফল্য ও নাজাতের পথ। এভাবে প্রচার, উপদেশ ও নসীহতের সাহায্যে মানুষকে সত্য সঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই আল্লাহ‌র কাজ। আর যেসব লোক এই কাজে আল্লাহ‌কে সাহায্য করে তাদেরকেই আল্লাহ‌র সাহায্যকারী গণ্য করা হয়। আল্লাহ‌র কাছে মানুষের এটিই সর্বোচ্চ মর্যাদা। নামায, রোযা এবং অন্যান্য যাবতীয় ইবাদাত বন্দেগীতে মানুষ নিছক বান্দা ও গোলামদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত থাকে। কিন্তু দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম-সাধনার মাধ্যমে সে আল্লাহ‌র সাহায্যকারী ও সহযোগীর মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। এই দুনিয়ার রূহানী ও আধ্যাত্মিক উন্নতির শিখরে অভিষিক্ত হবার এটিই উচ্চতম মর্যাদা ও মকাম।
.
.
.
৫১.
এখানে কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে, মুতাওয়াফ্ফীকা (مُتَوَفِّيكُ) মূল তাওয়াফ্ফা (تَوَفَّى) শব্দের আসল মানে হচ্ছেঃ নেয়া ও আদায় করা। “প্রাণবায়ু বের করে নেয়া” হচ্ছে এর গৌণ ও পরোক্ষ অর্থ, মূল আভিধানিক অর্থ নয়। এখানে এ শব্দটি ইংরেজী To Recall -এর অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হয়, কোন পদাধিকারীকে তার পদ থেকে ফিরিয়ে ডেকে নেয়া। যেহেতু বনী ইসরাঈল শত শত বছর ধরে অনবরত নাফরমানী করে আসছিল, বার বার উপদেশ দান ও সতর্ক করে দেয়ার পরও তাদের জাতীয় মনোভাব ও আচরণ বিকৃত হয়েই চলছিল, একের পর এক কয়েকজন নবীকে তারা হত্যা করেছিল এবং যেকোন সদাচারী ব্যক্তি তাদেরকে নেকী, সততা ও সৎবৃত্তির দাওয়াত দিতো তাকেই তারা হত্যা করতো। তাই আল্লাহ‌ তাদের মুখ বন্ধ করার ও তাদেরকে শেষবারের মতো সুযোগ দেবার জন্য হযরত ঈসা ও হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালামের মতো দু’জন মহান মর্যাদা সম্পন্ন পয়গম্বর পাঠালেন। আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে তাদের নিযুক্তির প্রমাণ স্বরূপ তাদের সাথে এমন সব সুস্পষ্ট নিশানী ছিল যেগুলো একমাত্র তারাই অস্বীকার করতে পারতো, যারা ন্যায়, সত্য ও সততার সাথে চরম শত্রুতা পোষণ করতো এবং যাদের সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করার দুঃসাহস ও নির্লজ্জতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু বনী ঈসরাইলরা এই শেষ সুযোগও হাত ছাড়া করেছিল। তারা কেবল এই দু’জন পয়গম্বরের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং এই সঙ্গে তাদের একজন প্রধান ব্যক্তি নিজের নর্তকীর ফরমায়েশ অনুযায়ী প্রকাশ্যে হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালামের শিরচ্ছেদ করেছিল এবং তাদের আলেম ও ফকীহগণ ষড়যন্ত্র জাল বিস্তার করে রোমান শাসকের সাহায্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে মৃত্যুদন্ড দেবার চেষ্টা চালিয়েছিল। এরপর আর বনী ইসলাঈলদের উপদেশ দেবার জন্য বেশী সময় ও শক্তি ব্যয় করা ছিল অর্থহীন। তাই মহান আল্লাহ‌ তাঁর নবীকে ফিরিয়ে নিজের কাছে ডেকে নিলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত বনী ইসলাঈলদের জন্য লিখে দিলেন লাঞ্ছনার জীবন।

এখানে অবশ্যই একথা অনুধাবন করতে হবে যে, কুরআনের এ সমগ্র ভাষণ আসলে খৃস্টানদের ঈসার খোদা হওয়ার আকীদার প্রতিবাদ ও সংশোধনের উদ্দেশ্যেই ব্যক্ত হয়েছে। খৃস্টানদের মধ্যে এই আকীদার জন্মের মূলে ছিল তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণঃ

একঃ হযরত ঈসার অলৌকিক জন্ম।

দুইঃ তাঁর সুস্পষ্ট অনুভূত মুজিযাসমূহ।

তিনঃ তাঁর আকাশের দিকে উঠিয়ে নেয়া। তাদের বই পত্রে পরিষ্কার ভাষায় এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।

কুরআন প্রথম কথাটিকে সত্য বলে ঘোষণা করেছে। কুরআনের বক্তব্য হচ্ছে, হযরত ঈসার (আঃ) পিতা ছাড়াই জন্মগ্রহণ নিছক আল্লাহ‌র কুদরাতের প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ‌ যাকে যেভাবে ইচ্ছা সৃষ্টি করে থাকেন। এই অস্বাভাবিক জন্মের কারণে একথা প্রমাণ হয় না যে, হযরত ঈসা (আঃ) খোদা ছিলেন বা খোদায়ী কর্তৃত্বে তাঁর কোন অংশীদারীত্ব ছিল।

দ্বিতীয় কথাটিকেও কুরআন সত্য বলে ঘোষণা করেছে। কুরআন হযরত ঈসার মুজিযাগুলো একটি একটি করে গণনা করে বর্ণনা করেছে। কিন্তু এখানে সুস্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, এই সমস্ত কাজই তিনি আল্লাহ‌র হুকুমে সম্পাদন করেছিলেন। তিনি নিজে অথবা নিজের শক্তিতে কিছুই করেননি। কাজেই এগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি ভিত্তিতেই এই ফল লাভ করা যেতে পারে না যে, খোদায়ী কর্তৃত্ব ও কার্যকলাপে হযরত ঈসার কোন অংশ ছিল।

এখন তৃতীয় কথাটি সম্পর্কে খৃস্টানদের বর্ণনাগুলো যদি একবারেই ভুল বা মিথ্যা হতো, তাহলে তাদের ঈসার খোদা হবার আকীদাটির প্রতিবাদ করার জন্য পরিষ্কারভাবে একথা বলে দেয়া অপরিহার্য ছিল যে, যাকে তোমরা খোদার পুত্র বা খোদা বলছো সে তো কবে মরে মাটির সাথে মিশে গেছে। আর যদি এজন্য অধিকতর নিশ্চিন্ত হতে চাও, তাহলে উমুক স্থানে গিয়ে তার কবরটি দেখো। কিন্তু একথা না বলে কুরআন কেবল তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারটি অস্পষ্ট রেখেই থেমে যায়নি এবং তার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া সম্পর্কে কেবল এমন শব্দ ব্যবহার করেনি যার ফলে কমপক্ষে তাঁকে জীবিত উঠিয়ে নেয়ার অর্থের সম্ভাবনা থেকে যায় বরং খৃস্টানদের সুস্পষ্টভাবে একথা বলে দেয় যে, ঈসাকে আদতে শূলে চড়ানোই হয়নি। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শেষ সময়ে “এইলী এইলী লিমা শাবাকতানী” (অর্থাৎ ঈশ্বর আমার! কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছো? ) বলেছিল এবং যার শুলে চড়াবার দৃশ্যের ছবি নিয়ে তোমরা ঘুরে বেড়াও, সে ঈসা ছিল না। ঈসাকে আল্লাহ‌ তার আগেই উঠিয়ে নিয়েছিলেন।

এ ধরনের বক্তব্য পেশ করার পর যে ব্যক্তি কুরআনের আয়াত থেকে হযরত ঈসার (আঃ) মৃত্যুর অর্থ বের করার চেষ্টা করে সে আসলে একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, আল্লাহ‌ পরিষ্কার ভাষায় নিজের বক্তব্য প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখেন না, নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক।

৫২.
অস্বীকারকারী বলতে এখানে ইহুদীদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে ঈমান আনার দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। বিপরীত পক্ষে তাঁর অনুসারী বলতে যদি সঠিক, যথার্থ নির্ভুল অনুসারী ধরা হয় তাহলে কেবল মুসলমানরাই তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর যদি এর অর্থ হয় মোটামুটি যারা তাঁকে মেনে নিয়েছিল, তাহলে এর মধ্যে খৃস্টান ও মুসলমান উভয়ই শামিল হবে।
.
.
অনুবাদ: