পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

১৯৫ আয়াত

১১ ) যারা মানতে অস্বীকার করেছে তারা মু’মিনদের সম্পর্কে বলে, এই কিতাব মেনে নেয়া যদি কোন ভাল কাজ হতো তাহলে এ ব্যাপারে এসব লোক আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হতে পারতো না। ১৫ যেহেতু এরা তা থেকে হিদায়াত লাভ করেনি তাই তারা অবশ্যই বলবে, এটা পুরনো মিথ্যা। ১৬
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَوْ كَانَ خَيْرًۭا مَّا سَبَقُونَآ إِلَيْهِ ۚ وَإِذْ لَمْ يَهْتَدُوا۟ بِهِۦ فَسَيَقُولُونَ هَـٰذَآ إِفْكٌۭ قَدِيمٌۭ ١١
১২ ) অথচ এর পূর্বে মূসার কিতাব পথ-প্রদর্শক ও রহমত হয়ে এসেছিলো। আর এ কিতাবে তার সত্যায়নকারী, আরবী ভাষায় এসেছে যাতে জালেমদের সাবধান করে দেয় ১৭ এবং সৎ আচরণ গ্রহণ-কারীদের সুসংবাদ দান করে।
وَمِن قَبْلِهِۦ كِتَـٰبُ مُوسَىٰٓ إِمَامًۭا وَرَحْمَةًۭ ۚ وَهَـٰذَا كِتَـٰبٌۭ مُّصَدِّقٌۭ لِّسَانًا عَرَبِيًّۭا لِّيُنذِرَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ وَبُشْرَىٰ لِلْمُحْسِنِينَ ١٢
১৩ ) যারা ঘোষণা করেছে আল্লাহই আমাদের রব, অতঃপর তার ওপরে স্থির থেকেছে নিশ্চয়ই তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা মন মরা ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে না। ১৮
إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُوا۟ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسْتَقَـٰمُوا۟ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ١٣
১৪ ) এ ধরনের সব মানুষ জান্নাতে যাবে। তারা সেখানে চিরদিন থাকবে, তাদের সেই কাজের বিনিময়ে যা তারা পৃথিবীতে করেছিলো।
أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ خَـٰلِدِينَ فِيهَا جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١٤
১৫ ) আমি মানুষকে এই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছি যে, তারা যেন পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে। তার মা কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছিলো এবং কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছিলো। তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধপান করাতে ত্রিশ মাস লেগেছে। ১৯ এমন কি যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌঁছেছে এবং তারপর চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়েছে তখন বলেছেঃ “হে আমার রব, তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যেসব নিয়ামত দান করেছো আমাকে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর এমন সৎ কাজ করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ করো। ২০ আমার সন্তানদেরকে সৎ বানিয়ে আমাকে সুখ দাও। আমি তোমার কাছে তাওবা করছি। আমি নির্দেশের অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।”
وَوَصَّيْنَا ٱلْإِنسَـٰنَ بِوَٰلِدَيْهِ إِحْسَـٰنًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُۥ كُرْهًۭا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًۭا ۖ وَحَمْلُهُۥ وَفِصَـٰلُهُۥ ثَلَـٰثُونَ شَهْرًا ۚ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةًۭ قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَـٰلِحًۭا تَرْضَىٰهُ وَأَصْلِحْ لِى فِى ذُرِّيَّتِىٓ ۖ إِنِّى تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّى مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ ١٥
১৬ ) এ ধরনের মানুষের কাছে থেকে তাদের উত্তম আমলসমূহ আমি গ্রহণ করে থাকি, তাদের মন্দ কাজসমূহ ক্ষমা করে দিই। ২১ যে প্রতিশ্রুতি তাদের দিয়ে আসা হয়েছে তা ছিলো সত্য প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে এরা জান্নাতী লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ نَتَقَبَّلُ عَنْهُمْ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا۟ وَنَتَجَاوَزُ عَن سَيِّـَٔاتِهِمْ فِىٓ أَصْحَـٰبِ ٱلْجَنَّةِ ۖ وَعْدَ ٱلصِّدْقِ ٱلَّذِى كَانُوا۟ يُوعَدُونَ ١٦
১৭ ) আর যে ব্যক্তি তার পিতা মাতাকে বললো : “আহ! তোমরা বিরক্তির একশেষ করে দিলে। তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাচ্ছো যে, মৃত্যুর পর আমি আবার কবর থেকে উত্তোলিত হবো? আমার পূর্বে তো আরো বহু মানুষ চলে গেছে। (তাদের কেউ তো জীবিত হয়ে ফিরে আসেনি) ।” মা-বাপ আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলেঃ “আরে হতভাগা, বিশ্বাস কর। আল্লাহর ওয়াদা সত্য।” কিন্তু সে বলে, “এসব তো প্রাচীনকালের বস্তাপচা কাহিনী”
وَٱلَّذِى قَالَ لِوَٰلِدَيْهِ أُفٍّۢ لَّكُمَآ أَتَعِدَانِنِىٓ أَنْ أُخْرَجَ وَقَدْ خَلَتِ ٱلْقُرُونُ مِن قَبْلِى وَهُمَا يَسْتَغِيثَانِ ٱللَّهَ وَيْلَكَ ءَامِنْ إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّۭ فَيَقُولُ مَا هَـٰذَآ إِلَّآ أَسَـٰطِيرُ ٱلْأَوَّلِينَ ١٧
১৮ ) এরাই সেই সব লোক যাদের ব্যাপারে আযাবের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এদের পূর্বে জ্বীন ও মানুষদের মধ্য থেকে (এই প্রকৃতির) যেসব ক্ষুদ্র দল অতীত হয়েছে এরাও গিয়ে তাদের সাথে মিলিত হবে। নিশ্চয়ই এরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লোক। ২২
أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلْقَوْلُ فِىٓ أُمَمٍۢ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِم مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ خَـٰسِرِينَ ١٨
১৯ ) উভয় দলের প্রত্যেক মানুষের মর্যাদা হবে তাদের কর্ম অনুযায়ী। যাতে আল্লাহ‌ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেন। তাদের প্রতি মোটেই জুলুম করা হবে না। ২৩
وَلِكُلٍّۢ دَرَجَـٰتٌۭ مِّمَّا عَمِلُوا۟ ۖ وَلِيُوَفِّيَهُمْ أَعْمَـٰلَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ١٩
২০ ) অতঃপর এসব কাফেরদের যখন আগুনের সামনে এনে দাঁড় করানো হবে তখন তাদের বলা হবে, ‘তোমরা নিজের অংশের নিয়ামতসমূহ দুনিয়ার জীবনেই ভোগ করে নিঃশেষ করে ফেলেছো এবং তা ভোগ করেছো এবং যে নাফরমানি করেছো সে কারণে আজ তোমাদের লাঞ্ছনাকর আযাব দেয়া হবে’। ২৪
وَيَوْمَ يُعْرَضُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ عَلَى ٱلنَّارِ أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَـٰتِكُمْ فِى حَيَاتِكُمُ ٱلدُّنْيَا وَٱسْتَمْتَعْتُم بِهَا فَٱلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ ٱلْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَبِمَا كُنتُمْ تَفْسُقُونَ ٢٠
১৫.
কুরাইশ নেতারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য যেসব যুক্তি কাজে লাগাতো এটা তার একটা। তারা বলতো, ‘এ কুরআন যদি সত্য হতো এবং মুহাম্মাদ ﷺ যদি একটি সঠিক জিনিসের দাওয়াত দিতেন তাহলে কওমের নেতারা, গোত্রসমূহের অধিপতিরা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অগ্রসর হয়ে তা গ্রহণ করতো। এটা কী করে হতে পারে যে, কতিপয় অনভিজ্ঞ বালক এবং কিছু সংখ্যক নীচু পর্যায়ের ক্রীতদাস একটি যুক্তিসঙ্গত কথা মেনে নেবে কিন্তু কওমের গণ্যমান্য ব্যক্তি যারা জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ এবং আজ পর্যন্ত কওম যাদের জ্ঞান-বুদ্ধি ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে আসছে তারা তা প্রত্যাখ্যান করবে? নতুন এই আন্দোলনে মন্দ কিছু অবশ্যই আছে। তাই কওমের গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তা মানছে না। অতএব, তোমরাও তা থেকে দূরে সরে যাও, এই প্রতারণামূলক যুক্তি খাড়া করে তারা সাধারণ মানুষকে শান্ত করে রাখার চেষ্টা করতো।
১৬.
অর্থাৎ এসব লোক নিজেরাই নিজেদেরকে হক ও বাতিলের মানদণ্ড গণ্য করে রেখেছে। এরা মনে করে, এরা যে হিদায়াতকে গ্রহণ করবে না তাকে অবশ্যই গোমরাহী ও পথভ্রষ্ট হতে হবে। কিন্তু এরা একে নতুন মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করার সাহস রাখে না। কারণ, এর আগের যুগের নবী-রসূলগণ এ শিক্ষাই পেশ করেছেন এবং আহলে কিতাবদের কাছে যেসব আসমানী কিতাব আছে তার সবই এ আকীদা-বিশ্বাস ও নির্দেশনায় ভরপুর। এ কারণে এরা একে পুরনো মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করে। যারা হাজার হাজার বছর ধরে এসব সত্য পেশ করে এসেছে এবং মেনেছে এদের মতে তারা সবাই জ্ঞান-বুদ্ধি থেকে বঞ্চিত। সমস্ত জ্ঞান শুধু এদের অংশেই পড়েছে।
১৭.
অর্থাৎ সেই সব লোককে খারাপ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেবেন যারা আল্লাহর সাথে কুফরী এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজের এবং ন্যায় ও সত্যের প্রতি জুলুম করছে এবং নিজের এই গোমরাহীর কারণে নৈতিক চরিত্র ও কর্মের এমন সব ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ডুবে আছে যার ফলে মানব সমাজ নানা প্রকার জুলুম-অত্যাচার ও বে-ইনসাফীতে ভরে উঠেছে।
.
১৮.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা হা-মীম আস-সাজদা, টীকা ৩৩ থেকে ৩৫।
.
১৯.
সন্তানদের যদিও মা-বাপ উভয়েরই সেবা করতে হবে কিন্তু গুরুত্বের দিক দিয়া মায়ের অধিকার এ কারণে বেশী যে, সে সন্তানের জন্য বেশী কষ্ট স্বীকার করে। এ আয়াত এ দিকই ইঙ্গিত করে। একটি হাদীস থেকেও এ বিষয়টি জানা যায়। কিছুটা শাব্দিক পার্থক্যসহ হাদীসটি বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ এবং ইমাম বুখারীর আদাবুল মুফরাদে উল্লেখিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি নবীকে ﷺ জিজ্ঞেস করলো, আমার ওপর কার খেদমতের হক সবচেয়ে বেশি? নবী (সা.) বললেনঃ তোমার মা’র; সে বললোঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। সে বললোঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। সে আবারো জিজ্ঞেস করলোঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার বাপ। নবীর ﷺ এই বাণী হুবহু এ আয়াতেরই ব্যাখ্যা। কারণ, এতেও মায়ের তিনগুণ বেশী অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছেঃ (১) কষ্ট করে মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। (২) কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছে এবং (৩) গর্ভধারণ ও দুধ পান করাতে ৩০ মাস লেগেছে।

এ আয়াতে সূরা লোকমানের ১৪ আয়াত এবং সূরা বাকারার ২৩৩ আয়াতে থেকে আরো একটি আইনগত বিষয় পাওয়া যায়। একটি মামলায় হযরত আলী ও হযরত ইবনে আব্বাস সেই বিষয়টিই তুলে ধরেছিলেন এবং তার ওপর ভিত্তি করে হযরত উসমান (রা:) তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন। ঘটনাটা হচ্ছে, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত যুগে এক ব্যক্তি জুহায়না গোত্রের একটি মেয়েকে বিয়ে করে এবং বিয়ের ছয় মাসের মধ্যেই তার গর্ভ থেকে একটি সুস্থ ও ত্রুটিহীন শিশু ভুমিষ্ঠ হয়। লোকটি হযরত উসমানের কাছে ঘটনাটা পেশ করে। তিনি উক্ত মহিলাকে ব্যভিচারিণী ঘোষণা করে তাকে রজম করার নির্দেশ দেন। হযরত আলী (রা.) এই ঘটনা শোনা মাত্র হযরত উসমানের (রা.) কাছে পৌঁছেন এবং বলেনঃ আপনি এ কেমন ফয়সালা করলেন? জবাবে হযরত উসমান বললেন, বিয়ের ছয় মাস পরেই সে জীবিত ও সুস্থ সন্তান প্রসব করেছে। এটা কি তার ব্যভিচারিণী হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ নয়? হযরত আলী (রা.) বললেনঃ না, এর পর তিনি কুরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াত তিনটি ধারাবাহিভাবে পাঠ করলেন। সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেছেনঃ “যে পিতা দুধ পানের পূর্ণ সময় পর্যন্ত দুধ পান করাতে চায় মায়েরা তার সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে।” সূরা লোকমানে বলেছেনঃ “তার দুধ ছাড়তে দুই বছর লেগেছে। সূরা আহক্বাফে বলেছেনঃ “তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধ পান করাতে ত্রিশ মাস লেগেছে।” এখন ত্রিশ মাস থেকে যদি দুধ পানের দুই বছর বাদ দেয়া হয় তাহলে গর্ভে ধারণকাল ছয় মাস মাত্র অবশিষ্ট থাকে। এ থেকে জানা যায়, গর্ভ ধারণের স্বল্পতম মেয়াদ ছয় মাস। এই সময়ের মধ্যে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হতে পারে। অতএব, যে মহিলা বিয়ের ছয় মাস পরে সন্তান প্রসব করেছে তাকে ব্যভিচারিণী বলা যায় না। হযরত আলীর (রা.) এই যুক্তি-প্রমাণ শুনে হযরত উসমান বললেনঃ আমার মন-মস্তিষ্কে এ বিষয়টি আদৌ আসেনি। এরপর তিনি মহিলাটিকে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁর সিদ্ধান্ত পরবর্তন করলেন। একটি বর্ণনাতে আছে, হযরত ইবনে আব্বাসও এ বিষয়ে হযরত আলীর মতকে সমর্থন করেছিলেন এবং তারপর হযরত উসমান তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন। (ইবনে জারীর, আহকামুল কুরআন জাসসাস, ইবনে কাসীর)।

এ তিনটি আয়াতে একত্রিত করে পাঠ করলে যেসব আইনগত বিধান পাওয়া যায় তা হচ্ছেঃ

একঃ যে মহিলা বিয়ের পর ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করবে (অর্থাৎ তা যদি গর্ভপাত না হয়, বরং স্বাভাবিক প্রসব হয়) সে ব্যভিচারিণী সাব্যস্ত হবে এবং এবং তার স্বামীর বংশ পরিচয় তার সন্তান পরিচিত হবে না।

দুইঃ যে মহিলা বিয়ের ছয় মাস পর বা তার চেয়ে বেশী সময় পর জীবিত ও সুস্থ সন্তান প্রসব করবে শুধু এই সন্তান প্রসব করার কারণে তাকে ব্যভিচারের অভিযুক্ত করা যাবে না। তার স্বামীকে তার প্রতি অপবাদ আরোপের অধিকার দেয়া যেতে পারে না এবং তার স্বামী ঐ সন্তানের বংশ পরিচয় অস্বীকার করতে পারে না। সন্তান তারই বলে স্বীকার করা হবে এবং মহিলাকে শাস্তি দেয়া যাবে না।

তিনঃ দুধপান করানোর সর্বাধিক মেয়াদ দুই বছর। এই বয়সের পর যদি কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করে তাহলে সে তার দুধ মা হবে না এবং সূরা নিসার ২৩ আয়াতে দুধ পানের যে বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে তাও এই ধরনের দুধ পানের বেলায় প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা অধিক সতর্কতার জন্য দুই বছরের পরিবর্তে আড়াই বছরের মেয়াদ নির্ধারণ করেছেন যাতে দুধপান করানোর কারণে যে সব বিষয় হারাম হয় সেই সব নাজুক বিষয়ে ভুল করার সম্ভাবনা না থাকে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা লোকমান, টীকা ২৩)

এখানে এ বিষয়টির অবগতি বে-ফায়েদা হবে না যে, সর্বাধুনিক মেডিকেল গবেষণা অনুসারে একটি শিশুকে পরিপুষ্টি ও পরিবৃদ্ধি লাভ করে জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হওয়ার উপযোগী হতে হলে কমপক্ষে ২৮ সপ্তাহ মাতৃগর্ভে অবস্থান প্রয়োজন। এটা সাড়ে ছয় মাস সময়ের সামান্য বেশী। ইসলামী আইনে আরো প্রায় অর্ধ মাস সুযোগ দেয়া হয়েছে। কারণ, একজন মহিলার ব্যভিচারিণী প্রমাণিত হওয়া এবং একটি শিশুর বংশ পরিচয় থেকে বঞ্চিত হওয়া বড় গুরুতর ব্যাপার। মা ও শিশুকে আইনগত এই কঠিন পরিণাম থেকে রক্ষা করার জন্য বিষয়টির নাজুকতা আরো বেশি সুযোগ পাওয়ার দাবী করে। তাছাড়া গর্ভ কোন্ সময় স্থিতি লাভ করেছে তা কোন ডাক্তার, কোন বিচারক এবং এমনকি মহিলা নিজে এবং তাকে গর্ভদানকারী পুরুষও সঠিকভাবে জানতে পারে না। এ বিষয়টিও গর্ভধারণেরা স্বল্পতম আইনগত মেয়াদ নির্ধারণে আরো কয়েক দিনের অবকাশ দাবী করে।

২০.
অর্থাৎ আমাকে এমন সৎ কাজ করার তাওফীক দান করো যা বাহ্যিক দিক দিয়েও অবিকল তোমার বিধান মোতাবেক হবে এবং বাস্তবেও তোমার কাছে গৃহিত হওয়ার উপযুক্ত হবে। কোনো কাজ যদি দুনিয়ার মানুষের দৃষ্টিতে খুব ভালও হয়, কিন্তু তাতে যদি আল্লাহর আইনের আনুগত্য না করা হয়, তাহলে দুনিয়ার মানুষ তার যত প্রশংসাই করুক না কেন আল্লাহর কাছে তা আদৌ কোন প্রশংসার যোগ্য হতে পারে না। অপরদিকে একটা কাজ যদি অবিকল শরীয়ত মোতাবেক হয় এবং তার বাহ্যিক রূপ ও অহংকার এবং স্বার্থ লোভ তাকে ভেতর থেকে অন্তঃসারশূন্য করে দেয়, এমন কাজও আল্লাহর কাছে গৃহিত হওয়ার যোগ্য থাকে না।
.
২১.
অর্থাৎ তারা পৃথিবীতে যত বেশী ভাল কাজ করেছে আখেরাতে সেই অনুপাতের তাদের মর্যাদা নিরূপণ করা হবে। তবে তাদেরকে পদস্খলন, দুর্বলতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য পাকড়াও করা হবে না। এটা ঠিক তেমনি যেমন কোন মহৎ হৃদয়, উদার ও মর্যাদাবোধ সম্পন্ন মনিব তার অনুগত ও বিশ্বস্ত চাকরকে ছোট ছোট সেবা ও খেদমতের নিরিখে মূল্যায়ন করে না বরং তার এমন কোনো কাজের বিচারে মূল্যায়ন করে যে ক্ষেত্রে সে বড় কোন কৃতিত্ব দেখিয়েছে কিংবা জীবনপাত ও বিশ্বস্ততার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছে। এ রকম খাদেমের ছোট ছোট ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে সে তার সমস্ত সেবাকে খাটো করে দেখানোর মত আচরণ করে না।
.
.
২২.
এখানে দুই রকম চরিত্র পাশাপাশি রেখে শ্রোতাদেরকে যেন নিঃশব্দ এই প্রশ্ন করা হয়েছে যে, বলো, এ দু’টি চরিত্রের মধ্যে কোনটি উত্তম? সমাজে সেই সময় পাশাপাশি এই দু’টি চরিত্রই বিদ্যমান ছিল। প্রথম প্রকার চরিত্রের অধিকারী কারা এবং দ্বিতীয় প্রকার চরিত্রের অধিকারী কারা তা জানা মানুষের জন্য আদৌ কঠিন ছিল না। এটা কুরাইশ নেতাদের এই উক্তির জবাব যে, এই কিতাব মেনে নেয়া যদি কোন ভাল কাজ হতো তাহলে এই কতিপয় যুবক ও ক্রীতদাস এ ব্যাপারে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হতে পারতো না। এই জবাবের আলোকে প্রতিটি মানুষ নিজেই বিচার করে দেখতে পারতো কিতাব মান্যকারীদের চরিত্র কী এবং অমান্যকারীদের চরিত্র কী?
২৩.
অর্থাৎ না ভাল লোকদের ত্যাগ ও কুরবানী নষ্ট হবে, না মন্দ লোকদেরকে তাদের প্রকৃত অপরাধের অধিক শাস্তি দেয়া হবে। সৎ ব্যক্তি যদি তার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত থাকে কিংবা প্রকৃত প্রাপ্যের চেয়ে কম পুরস্কার পায় তাহলে তা জুলুম। আবার খারাপ লোক যদি তার কৃত অপরাধের শাস্তি না পায় কিংবা যতটা অপরাধ সে করেছে তার চেয়ে বেশী শাস্তি পায় তাহলে সেটাও জুলুম।
২৪.
তারা যেমন বড়াই ও গর্ব করেছে লাঞ্ছনাকর আযাব হবে সেই অনুপাতে। তারা নিজেদের বড় একটা কিছু বলে মনে করতো। তাদের ধারণা ছিল রসূলের প্রতি ঈমান এনে গরীব ও অভাবী মু’মিনদের দলে শামিল হওয়া তাদের মর্যাদার চেয়ে নীচু মানের কাজ। তারা ভেবেছিলো, কতিপয় ক্রীতদাস ও সহায় সম্বলহীন মানুষ যে জিনিষ বিশ্বাস করেছে আমাদের মত গণ্যমান্য লোকরো যদি তা বিশ্বাস করে তাহলে তাতে আমাদের মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হবে। এ কারণে আখেরাতে আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন এবং তাদের গর্ব ও অহংকার মাটিতে মিশিয়ে দেবেন।
অনুবাদ: