পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

১৭৫ আয়াত

২৭ ) মূসা বললো, যেসব অহংকারী হিসেবের দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে না, তাদের প্রত্যেকের মোকাবিলায় আমি আমার ও তোমাদের রবের আশ্রয় গ্রহণ করেছি। ৪৪
وَقَالَ مُوسَىٰٓ إِنِّى عُذْتُ بِرَبِّى وَرَبِّكُم مِّن كُلِّ مُتَكَبِّرٍۢ لَّا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ ٱلْحِسَابِ ٢٧
২৮ ) এ সময় ফেরাউনের দরবারের এক ব্যক্তি যে তার ঈমান গোপন রেখেছিলো- বললোঃ তোমরা কি এক ব্যক্তিকে শুধু এ কারণে হত্যা করবে যে, সে বলে, আল্লাহ‌ আমার রব? অথচ সে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। ৪৫ সে মিথাবাদী হয়ে থাকলে তার মিথ্যার দায়-দায়িত্ব তারই। ৪৬ কিন্তু সে যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে তাহলে যেসব ভয়ানক পরিণামের কথা সে বলছে তার কিছুটা তো অবশ্যই তোমাদের ওপর আসবে। আল্লাহ‌ কোন সীমালংঘনকারী মিথ্যাবাদী লোককে হিদায়াত দান করেন না। ৪৭
وَقَالَ رَجُلٌۭ مُّؤْمِنٌۭ مِّنْ ءَالِ فِرْعَوْنَ يَكْتُمُ إِيمَـٰنَهُۥٓ أَتَقْتُلُونَ رَجُلًا أَن يَقُولَ رَبِّىَ ٱللَّهُ وَقَدْ جَآءَكُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ مِن رَّبِّكُمْ ۖ وَإِن يَكُ كَـٰذِبًۭا فَعَلَيْهِ كَذِبُهُۥ ۖ وَإِن يَكُ صَادِقًۭا يُصِبْكُم بَعْضُ ٱلَّذِى يَعِدُكُمْ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَنْ هُوَ مُسْرِفٌۭ كَذَّابٌۭ ٢٨
২৯ ) হে আমার কওমের লোকেরা, আজ তোমরা বাদশাহীর অধিকারী এবং ভূ-ভাগের বিজয়ী শক্তি। কিন্তু আল্লাহর আযাব যদি আমাদের ওপর এসে পড়ে তাহলে আমাদেরকে সাহায্য করার মতো কে আছে? ৪৮ ফেরাউন বললো, আমি যা ভাল মনে করছি সে মতামতই তোমাদের সামনে পেশ করছি। আর আমি তোমাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনাই দিচ্ছি। ৪৯
يَـٰقَوْمِ لَكُمُ ٱلْمُلْكُ ٱلْيَوْمَ ظَـٰهِرِينَ فِى ٱلْأَرْضِ فَمَن يَنصُرُنَا مِنۢ بَأْسِ ٱللَّهِ إِن جَآءَنَا ۚ قَالَ فِرْعَوْنُ مَآ أُرِيكُمْ إِلَّا مَآ أَرَىٰ وَمَآ أَهْدِيكُمْ إِلَّا سَبِيلَ ٱلرَّشَادِ ٢٩
৩০ ) যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিলো, বললোঃ হে আমার কওমের লোকেরা, আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের ওপরও সেদিনের মতো দিন এসে না যায়, যা এর আগে বহু দলের ওপর এসেছিলো।
وَقَالَ ٱلَّذِىٓ ءَامَنَ يَـٰقَوْمِ إِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُم مِّثْلَ يَوْمِ ٱلْأَحْزَابِ ٣٠
৩১ ) যেমন দিন এসেছিলো নূহ (আ), আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তী কওমসমূহের ওপর। আর এটা সত্য যে, আল্লাহ‌ তার বান্দাদের ওপর জুলুম করার কোন ইচ্ছা রাখেন না। ৫০
مِثْلَ دَأْبِ قَوْمِ نُوحٍۢ وَعَادٍۢ وَثَمُودَ وَٱلَّذِينَ مِنۢ بَعْدِهِمْ ۚ وَمَا ٱللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًۭا لِّلْعِبَادِ ٣١
৩২ ) হে কওম, আমার ভয় হয়, তোমাদের ওপর ফরিয়াদ ও অনুশোচনা করার দিন না এসে পড়ে,
وَيَـٰقَوْمِ إِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ ٱلتَّنَادِ ٣٢
৩৩ ) যখন তোমরা একে অপরকে ডাকতে থাকবে এবং দৌঁড়িয়ে পালাতে থাকবে। কিন্তু সেখানে আল্লাহর হাত থেকে বাঁচানোর কেউ থাকবে না। সত্য কথা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ‌ যাকে পথভ্রষ্ট করে দেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না।
يَوْمَ تُوَلُّونَ مُدْبِرِينَ مَا لَكُم مِّنَ ٱللَّهِ مِنْ عَاصِمٍۢ ۗ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِنْ هَادٍۢ ٣٣
৩৪ ) এর আগে ইউসুফ তোমাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসূমহ নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু তোমরা তাঁর আনীত শিক্ষার ব্যাপারে সন্দেহই পোষণ করেছো। পরে তাঁর ইন্তিকাল হলে তোমরা বললেঃ এখন আর আল্লাহ‌ কোন রসূল পাঠাবেন না। ৫১ এভাবে ৫২ আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকদের গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেন যারা সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ প্রবণ হয়।
وَلَقَدْ جَآءَكُمْ يُوسُفُ مِن قَبْلُ بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَمَا زِلْتُمْ فِى شَكٍّۢ مِّمَّا جَآءَكُم بِهِۦ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا هَلَكَ قُلْتُمْ لَن يَبْعَثَ ٱللَّهُ مِنۢ بَعْدِهِۦ رَسُولًۭا ۚ كَذَٰلِكَ يُضِلُّ ٱللَّهُ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌۭ مُّرْتَابٌ ٣٤
৩৫ ) এবং আল্লাহ‌র আয়াতসমূহের ব্যাপারে ঝগড়া করে। অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন সনদ বা প্রমাণ আসেনি। ৫৩ আল্লাহ ও ঈমানদারদের কাছে এ আচরণ অত্যন্ত ক্রোধ উদ্রেককারী। এভাবে আল্লাহ‌ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বেচ্ছাচারীর মনে মোহর লাগিয়ে দেন। ৫৪
ٱلَّذِينَ يُجَـٰدِلُونَ فِىٓ ءَايَـٰتِ ٱللَّهِ بِغَيْرِ سُلْطَـٰنٍ أَتَىٰهُمْ ۖ كَبُرَ مَقْتًا عِندَ ٱللَّهِ وَعِندَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ۚ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍۢ جَبَّارٍۢ ٣٥
৩৬ ) ফেরাউন বললোঃ “হে হামান, আমার জন্য একটি সুউচ্চ ইমরাত নির্মাণ করো যাতে আমি রাস্তাসমূহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারি
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَـٰهَـٰمَـٰنُ ٱبْنِ لِى صَرْحًۭا لَّعَلِّىٓ أَبْلُغُ ٱلْأَسْبَـٰبَ ٣٦
৪৪.
এখানে দু’টি সমান সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ দু’টি সম্ভাবনার কোনটিকেই অগ্রাধিকার দেয়ার কোন ইঙ্গিত এখানে নেই। একটি সম্ভাবনা হচ্ছে, হযরত মূসা নিজেই সে সময় দরবারে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতেই ফেরাউন তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং হযরত মূসা (আ) তাকে ও তার সভাসদদের উদ্দেশ্য করে তখনই সবার সামনে প্রকাশ্যে এ জবাব দেন। অপর সম্ভাবনাটি হচ্ছে, ফেরাউন হযরত মূসার (আ) অনুপস্থিতিতে তার সরকারের দায়িত্বশীল লোকদের কোন মজলিসে একথা প্রকাশ করে এবং হযরত মূসাকে (আ) তার এ আলোচনার খবর কিছু সংখ্যক ঈমানদার লোক পৌঁছিয়ে দেয়, আর তা শুনে তিনি তাঁর অনুসারীদের একথা বলেন। এ দু’টি অবস্থার যেটিই বাস্তবে ঘটে থাকুক না কেন হযরত মূসার (আ) কথায় স্পষ্টত প্রকাশ পাচ্ছে যে, ফেরাউনের হুমকি তাঁর মনে সামান্যতম ভীতিভাবও সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার হুমকির জবাব তার মুখের ওপরেই দিয়ে দিয়েছেন। যে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কুরআন মজীদে এ ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে আপনা আপনি একথা প্রকাশ পায় যে, “হিসেবের দিন” সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে যেসব জালেমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিলো তাদের জন্যও সে একই জবাব।
৪৫.
অর্থাৎ সে তোমাদেরকে এমন সব সুস্পষ্ট নির্দশন দেখিয়েছে যে, সে যে তোমাদের রবের রসূল তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ফেরাউনের সভাসদদের মধ্যকার ঈমানদার ব্যক্তির ইঙ্গিত ছিল সে নিদর্শনসমূহের প্রতি যার বিস্তারিত বিবরণ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। (তাফহীমুল কুরআন, আল আ’রাফ, টীকা ৮৭, ৮৯, ৯০, ৯১ এবং ৯৪ থেকে ৯৬; বনী ইসরাঈল, টীকা ১১৩ থেকে ১১৬; ত্বা-হা, টীকা ২৯ থেকে ৫০; আশ শু’রা টীকা ২৬ থেকে ৩৯; আন নামল, টীকা ১৬)।
৪৬.
অর্থাৎ এরূপ সুস্পষ্ট নিদর্শন সত্ত্বেও তোমরা যদি তাঁকে মিথ্যাবাদী মনে করো, সে ক্ষেত্রেও তোমাদের জন্য উচিত তাঁকে তাঁর মতো চলতে দেয়া। কারণ, অপর সম্ভাবনা এবং অত্যন্ত জোরদার সম্ভাবনা হচ্ছে, সে সত্যবাদী। আর সেক্ষেত্রে তাঁকে হত্যা করে আল্লাহর আযাবে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই তোমরা যদি তাঁকে মিথ্যাবাদীও মনে করো তবুও তাঁকে বাঁধা দিও না। সে যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা কথা বলে থাকে তাহলে আল্লাহ‌ নিজেই তাঁর সাথে বুঝা পড়া করবেন। এর আগে হযরত মূসা আলাইহিস সালামও প্রায় অনুরূপ কথাই ফেরাউনকে বলেছিলেনঃ

وَإِنْ لَمْ تُؤْمِنُوا لِي فَاعْتَزِلُونِ (الدخان : 21)

“তোমরা যদি কথা না মানো তাহলে আমাকে আমার মত চলতে দাও।”

এখানে এ বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ফেরাউনের সভাসদদের মধ্যকার মু’মিন ব্যক্তি তার বক্তব্যের শুরুতে স্পষ্ট করে একথা বলেনি যে, সে হযরত মূসার (আ) প্রতি ঈমান এনেছে। ‌ প্রথম দিকে সে এমনভাবে তার বক্তব্য পেশ করেছে যাতে মনে হয় সে ফেরাউনের গোষ্ঠীরই একজন লোক এবং তার জাতির কল্যাণের জন্যই সে এ কথা বলছে। কিন্তু যখন সে দেখছে ফেরাউন ও সভাসদরা কোনক্রমেই সঠিক পথ অনুসরণ করতে চাচ্ছে না তখন শেষ মুহূর্তে সে তার ঈমানের গোপনীয়তা প্রকাশ করছে। পঞ্চম রুকূ’তে তার বক্তব্য থেকে তা প্রকাশ পাচ্ছে।

৪৭.
এ আয়াতাংশের দু’টি অর্থ সম্ভব। ফেরাউনের সভাসদদের মধ্যকার ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তি হয়তো ইচ্ছা করেই এ দ্ব্যর্থবোধক শব্দটি এজন্য বলেছিলো যে, তখনো সে তার ধ্যান-ধারণা খোলাখুলি প্রকাশ করতে চাচ্ছিলো না। এর একটি তাৎপর্য হচ্ছে, একই ব্যক্তির মধ্যে সত্যবাদিতার মত গুণ এবং মিথ্যা ও অপবাদের মত দোষের সমাবেশ ঘটতে পারে না। তোমরা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছো, মূসা ﷺ একজন অতীব পবিত্র চরিত্র এবং অত্যন্ত উন্নত স্বভাবের মানুষ। তোমাদের মন-মগজে একথা কি করে স্থান পায় যে, এক দিকে সে এত বড় মিথ্যাবাদী যে আল্লাহর নাম নিয়ে নবুওয়াতের ভিত্তিহীন দাবী করছে, অন্যদিকে তা সত্ত্বেও আল্লাহ‌ তাঁকে এরূপ উন্নত স্বভাব চরিত্র দান করেছেন। এর আরেকটি তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা যদি সীমালংঘনের মাধ্যমে মূসার (‌আ) প্রাণনাশের জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তোমাদের দূরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে তৎপর হও তাহলে মনে রেখো, আল্লাহ‌ কখনো তোমাদেরকে সফল হতে দেবেন না।
৪৮.
অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া এ ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিরূপ নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে নিজেদের জন্য তাঁর গযব ডেকে আনছো কেন?
৪৯.
ফেরাউনের এ জবাব থেকে বুঝা যায় তার দরবারের এ সভাসদ যে মনে মনে ঈমান এনেছে, তা সে তখনো পর্যন্ত জানতে পারেনি। এ কারণে সে তার কথায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেনি বটে তবে একথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তার মতামত ও চিন্তা-ভাবনা শোনার পরও সে নিজের মত পাল্টাতে প্রস্তুত নয়।
.
৫০.
অর্থাৎ বান্দার সাথে আল্লাহর কোন শত্রুতা নেই যে, তিনি অযথা তাদের ধ্বংস করবেন। তিনি তাদের ওপর আযাব কেবল তখনই পাঠান যখন তারা সীমালঙ্ঘন করে। আর সে সময় তাদের ওপর আযাব তাঁর ন্যায় ও ইনসাফের দাবী হয়ে দাঁড়ায়।
.
.
৫১.
অর্থাৎ তোমাদের গোমরাহী এবং সে গোমরাহীর ব্যাপারে তোমাদের হঠকারিতার অবস্থা এই যে, মূসা আলাইহিস সাল্লামের পূর্বে তোমাদের দেশে ইউসুফ আলাইহিস সালাম নবী হয়ে এসেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে তোমরা নিজেরাও স্বীকার করো যে, তিনি অত্যন্ত উন্নত স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, একথাও তোমরা স্বীকার করো যে, সে সময়ে তোমাদের ওপর যে দুর্ভিক্ষ এসেছিলো তৎকালীন বাদশাহর স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা বলে দিয়ে সাত বছর ব্যাপী সে ভয়ানক দুর্ভিক্ষের ধ্বংসকারিতা থেকে তিনি তোমাদের রক্ষা করেছিলেন। তোমাদের গোটা জাতি একথাও স্বীকার করে যে, তাঁর শাসনামলের চেয়ে অধিক ন্যায় ও ইনসাফ এবং কল্যাণ ও বরকতের যুগ মিসরে আর কখনো আসেনি। কিন্তু তাঁর এসব গুণাবলী জানা ও মানা সত্ত্বেও তোমরা তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর ওপর কখনো ঈমান আনো নাই। তাঁর মৃত্যু হলে তোমরা বলতে শুরু করলে, তাঁর মত লোক কি আর কখনো জন্ম নিতে পারে? তোমরা তাঁর গুণাবলী স্বীকার করলেও পরবর্তী কালেও সেটিকেই যেন তোমরা পরবর্তী সমস্ত নবীকে অস্বীকার করার একটা স্থায়ী বাহানা বানিয়ে নিয়েছো। এর অর্থ, কোন অবস্থায়ই তোমরা হিদায়াত গ্রহণ করবে না।
৫২.
বাহ্যত মনে হয়, ফেরাউনের সভাসদদের মধ্যকার ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তির বক্তব্যের ব্যাখ্যা ও সংযোজনা হিসেবে আল্লাহ‌ তা’আলা পরবর্তী বাক্যগুলো বলেছেন।
.
৫৩.
অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে সেসব লোককেই গোমরাহীতে নিক্ষেপ করা হয় যাদের মধ্যে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এক, তারা কুকর্মে সীমা লংঘন করে এবংস গোনাহ ও পাপাচারে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে যে, নৈতিক চরিত্র সংশোধনের কোন আহবানই গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয় না। দুই, নবী-রসূলদের (আলাইহিমুস সালাম) ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত থাকা হয় তাদের স্থায়ী আচরণ। আল্লাহর নবী তাদের সামনে যত সুস্পষ্ট নিদর্শনই পেশ করুন না কেন, তারা তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করে। তাছাড়া তাওহীদ ও আখেরাত সম্পর্কে তারা যেসব সত্য ও বাস্তবতা পেশ করেছেন তারা সেগুলোকেও সবসময় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। তিন, তারা আল্লাহর‌ কিতাবের বাণীসমূহ সম্পর্কে যুক্তি গ্রাহ্য পন্থায় চিন্তা-ভাবনা করার পরিবর্তে কূট তর্কের দ্বারা তার মোকাবিলার চেষ্টা করে। তাদের এ কূট তর্কের ভিত্তি কোন জ্ঞানগত যুক্তি বা আসমানী কিতাবের সনদ নয় বরং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের জিদ ও হঠকারিতাই তার একমাত্র ভিত্তি। যখন কোন গোষ্ঠীর মধ্যে এ তিনটি দোষ দেখা দেয় আল্লাহ‌ তখন তাদেরকে গোমরাহীর গহবরে নিক্ষেপ করেন। দুনিয়ার কোন শক্তিই তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে পারে না।
৫৪.
অর্থাৎ বিনা কারণে কারো মনে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয় না। যার মধ্যে অহংকার ও স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি হয় লা’নতের এ মোহর কেবল তার মনের ওপরেই লাগানো হয়। ‘তাকাববুর’ অর্থ ব্যক্তির মিথ্যা অহংকার যার কারণে ন্যায় ও সত্যের সামনে মাথা নত করাকে সে তার মর্যাদার চেয়ে নীচু কাজ বলে মনে করে। স্বেচ্ছাচারিতা অর্থ আল্লাহর সৃষ্টির ওপর জুলুম করা। এ জুলুমের অবাধ লাইসেন্স লাভের জন্য ব্যক্তি আল্লাহর শরীয়াতের বাধ্য-বাধকতা মেনে নেয়া থেকে দূরে থাকে।
.
অনুবাদ: