পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

৩৫৭ আয়াত

৩৮ ) আর সূর্য, সে তার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চলছে। ৩৩ এটি প্রবল পরাক্রমশালী জ্ঞানী সত্তার নিয়ন্ত্রিত হিসেব।
وَٱلشَّمْسُ تَجْرِى لِمُسْتَقَرٍّۢ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ ٱلْعَزِيزِ ٱلْعَلِيمِ ٣٨
৩৯ ) আর চাঁদ, তার জন্য আমি মঞ্জিল নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, সেগুলো অতিক্রম করে সে শেষ পর্যন্ত আবার খেজুরের শুকনো ডালের মতো হয়ে যায়। ৩৪
وَٱلْقَمَرَ قَدَّرْنَـٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلْعُرْجُونِ ٱلْقَدِيمِ ٣٩
৪০ ) না সূর্যের ক্ষমতা আছে চাঁদকে ধরে ফেলে ৩৫ এবং না রাত দিনের ওপর অগ্রবর্তী হতে পারে, ৩৬ সবাই এক একটি কক্ষপথে সন্তরণ করছে। ৩৭
لَا ٱلشَّمْسُ يَنۢبَغِى لَهَآ أَن تُدْرِكَ ٱلْقَمَرَ وَلَا ٱلَّيْلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِ ۚ وَكُلٌّۭ فِى فَلَكٍۢ يَسْبَحُونَ ٤٠
৪১ ) এদের জন্য এটিও একটি নিদর্শন যে, আমি এদের বংশধরদেরকে ভরা নৌকায় চড়িয়ে দিয়েছি ৩৮
وَءَايَةٌۭ لَّهُمْ أَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِى ٱلْفُلْكِ ٱلْمَشْحُونِ ٤١
৪২ ) এবং তারপর এদের জন্য ঠিক তেমনি আরো নৌযান সৃষ্টি করেছি যেগুলোতে এরা আরোহণ করে। ৩৯
وَخَلَقْنَا لَهُم مِّن مِّثْلِهِۦ مَا يَرْكَبُونَ ٤٢
৪৩ ) আমি চাইলে এদেরকে ডুবিয়ে দেই, এদের কোন ফরিয়াদ শ্রবণকারী থাকবে না এবং কোনভাবেই এদেরকে বাঁচানো যেতে পারে না।
وَإِن نَّشَأْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنقَذُونَ ٤٣
৪৪ ) ব্যস, আমার রহমতই এদেরকে কূলে ভিড়িয়ে দেয় এবং একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত জীবনের দ্বারা লাভবান হবার সুযোগ দিয়ে থাকে। ৪০
إِلَّا رَحْمَةًۭ مِّنَّا وَمَتَـٰعًا إِلَىٰ حِينٍۢ ٤٤
৪৫ ) এদেরকে যখন বলা হয়, তোমাদের সামনে যে পরিণাম আসছে এবং যা তোমাদের পেছনে অতিক্রান্ত হয়েছে তার হাত থেকে বাঁচো, ৪১ হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হবে (তখন এরা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়) ।
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّقُوا۟ مَا بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَمَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ٤٥
৪৬ ) এদের সামনে এদের রবের আয়াতসমূহের মধ্য থেকে যে আয়াতই আসে এরা সেদিকে দৃষ্টি দেয় না ৪২
وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ ءَايَةٍۢ مِّنْ ءَايَـٰتِ رَبِّهِمْ إِلَّا كَانُوا۟ عَنْهَا مُعْرِضِينَ ٤٦
৪৭ ) এবং যখন এদেরকে বলা হয়, আল্লাহ‌ তোমাদের যে রিযিক দান করেছেন তার মধ্য থেকে কিছু আল্লাহ‌র পথে খরচ করো তখন এসব কুফরীতে লিপ্ত লোক মু’মিনদেরকে জবাব দেয় “আমরা কি তাদেরকে খাওয়াবো, যাদেরকে আল্লাহ‌ চাইলে নিজেই খাওয়াতেন? তোমরা তো পরিষ্কার বিভ্রান্তির শিকার হয়েছো।” ৪৩
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ أَنفِقُوا۟ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ قَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَنُطْعِمُ مَن لَّوْ يَشَآءُ ٱللَّهُ أَطْعَمَهُۥٓ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍۢ ٤٧
৩৩.
অবস্থান বলতে এমন জায়গাও বুঝানো যেতে পারে যেখানে গিয়ে সূর্যকে সবশেষে থেমে যেতে ও অবস্থান করতে হবে আবার এমন সময়ও হতে পারে যখন সে থেমে যাবে। এ আয়াতের সঠিক অর্থ মানুষ তখনই নির্ধারণ করতে পারে যখন বিশ্ব-জাহানের নিগুঢ় তত্ত্ব সম্পর্কে সে সঠিক ও নির্ভুল জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু মানুষের জ্ঞানের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তা প্রত্যেক যুগে পরিবর্তনশীল ছিল এবং বর্তমানে বাহ্যত সে যা কিছু জানে যে কোন সময় তা পরিবর্তিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাচীন যুগের লোকেরা তাদের চাক্ষুষ দর্শনের ভিত্তিতে সূর্য সম্পর্কে এ নিশ্চিত বিশ্বাস পোষন করতো যে, সূর্য পৃথিবীর চারদিক ঘুরছে। তারপর আরো গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের পরে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এবং সৌর জগতের গ্রহসমূহ তার চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু এ মতবাদও স্থায়ী প্রমাণিত হয়নি। পরবর্তীকালের পর্যবেক্ষণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কেবলমাত্র সূর্যই নয় বরং সমস্ত তারকারাজি, যাদেরকে অনঢ় (Fixed Stars) মনে করা হতো, একদিকে ছুটে চলছে। তাদের চলার গতি প্রতি সেকেণ্ডে ১০ থেকে ১০০ মাইল বলে অনুমান করা হয়েছে। আর আধুনিক আকাশ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞগণ সূর্য সম্পর্কে বলেন যে, সে তার সমগ্র সৌরজগত নিয়ে প্রতি সেকেণ্ডে ২০ কিলোমিটার (অর্থাৎ প্রায় ১২ মাইল) গতিতে এগিয়ে চলছে। (দেখুন ইনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা, ‘স্টার’ ও ‘সান’ শব্দ)
.
৩৪.
অর্থাৎ মাসের মধ্যে চাঁদের আবর্তন প্রতিদিন পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রথম দিন সে ‘হেলাল’ আকারে উদিত হয়। তারপর প্রতিদিন তার দেহ বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চতুর্দশীর রাতে সে পূর্ণ চন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। তারপর প্রতিদিন তার দেহ হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আবার হেলালের আকারে ফিরে আসে। লাখো-লাখো বছর থেকে এ প্রক্রিয়া চলছে এবং চাঁদের এ নির্ধারিত মঞ্জিলগুলো পরিভ্রমণের মধ্যে কখনো কোন ব্যতিক্রম দেখা দেয়নি। এ কারণে মানুষ হিসেব করে সবসময় বলতে পারে চাঁদ কোন্ দিন কোন্ মঞ্জিলে থাকবে। চাঁদের আবর্তন যদি কোন নিয়মের অধীন না হতো, তাহলে এ ধরনের হিসেব করা সম্ভব হতো না।
৩৫.
এ বাক্যের দু’টি অর্থ হতে পারে এবং দু’টি অর্থই সঠিক। একটি হচ্ছে, চাঁদকে ধরে নিজের দিকে টেনে নেবার অথবা তার গতিপথে প্রবেশ করে তার সাথে সংঘাত বাঁধাবার ক্ষমতা সূর্যের নেই। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, চাঁদের উদয়ের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সূর্য কখনো তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। রাতে চাঁদ আকাশে আলো ছড়াচ্ছে এ সময় হঠাৎ দিগন্তে সূর্যের উদয় সম্ভব নয়।
৩৬.
অর্থাৎ দিনের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাবার আগে কখনো রাত এসে যাওয়া এবং দিনের আলোর জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে তার মধ্যে অকস্মাৎ নিজের অন্ধকার নিয়ে তার উপস্থিত হওয়া কখনো সম্ভব নয়।
৩৭.
মুলে “ফালাক” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় “ফালাক” মানে গ্রহ-নক্ষত্রের কক্ষপথ (Orbit) এবং এর অর্থ আকাশের অর্থ থেকে ভিন্ন। “সবাই একটি কক্ষপথে সাঁতরাচ্ছে” এ উক্তি চারটি সত্যের প্রতি আঙ্গুলি নির্দেশ করছে। এক, কেবলমাত্র সূর্য ও চন্দ্র নয় বরং সমস্ত তারকা ও গ্রহ এবং সমগ্র আকাশ জগত আবর্তন করছে। দুই, এদের প্রত্যেকের আকাশ অর্থাৎ প্রত্যকের আবর্তন পথ বা কক্ষপথ আলাদা। তিন, আকাশসমূহ তারকারাজিকে নিয়ে আবর্তন করছে না বরং তারকারাজি আকাশসমূহে আবর্তন করছে। চার, আকাশসমূহে তারকাদের আবর্তন এমনভাবে হচ্ছে যেমন কোন তরল পদার্থে কোন জিনিস ভেসে চলে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোচনা এ আয়াতগুলোর মুল উদ্দেশ্য নয় বরং মানুষকে একথা বুঝানোই এর উদ্দেশ্য যে, যদি সে চোখ মেলে তাকায় এবং নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে তাহলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত যেদিকেই তাকাবে সেদিকেই তার সামনে আল্লাহ‌র অস্তিত্ব এবং তাঁর একত্বের অসংখ্য ও অগণিত যুক্তি-প্রমাণের সমাবেশ দেখতে পাবে। এ অবস্থায় সে কোথাও নাস্তিক্যবাদ ও শিরকের সপক্ষে একটি যুক্তি-প্রমাণও পাবে না। আমাদের এ পৃথিবী যে সৌরজগতের (Solar System) অন্তর্ভুক্ত তার বিশালত্বের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার কেন্দ্রীয় সূর্যটি পৃথিবীর তিন লক্ষ গুণ বড় এবং তার সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ নেপচুনের দূরত্ব সূর্য থেকে কমপক্ষে ২শ’ ৭৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল । বরং যদি প্লুটোকে দূরবর্তী গ্রহ ধরা হয় তাহলে সূর্য থেকে তার দূরত্ব ৪শ’ ৬০ কোটি মাইলে গিয়ে পৌঁছে। এ বিশালত্ব সত্ত্বেও এ সৌরজগত একটি বিরাট বিশাল ছায়াপথের নিছক একটি ছোট অংশ মাত্র। আমাদের এ সৌরজগত যে ছায়াপথটির (Galaxy) অন্তর্ভুক্ত তার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন (৩শ’ কোটি) সূর্য রয়েছে এবং তার নিকটবর্তী সূর্যটি আমাদের পৃথিবী থেকে এত দূরে অবস্থান করছে যে, তার আলো এখানে পৌঁছতে ৪ বছর সময় লাগে। তারপর এ ছায়াপথই সমগ্র বিশ্ব-জাহান নয়। বরং এতদিনকার পর্যবেক্ষণ থেকে অনুমান করা হয়েছে যে, প্রায় ২০ লক্ষ নীহারিকাপুঞ্জের মধ্যে এটিও একটি এবং এদের নিকটতম নীহারিকা আমাদের থেকে এত বেশী দূরত্বে অবস্থিত যে, তার আলো আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছতে ১০ লক্ষ বছর লাগে। আর আমাদের অত্যাধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সবচেয়ে দূরের যে নীহারিকা দৃষ্টিগোচর হয় তার আলো দুনিয়ায় পৌঁছতে ১০ কোটি বছর লাগে। এরপরও মানুষ সমগ্র বিশ্ব-জাহান দেখে নিয়েছে, একথা বলা যায় না। আল্লাহ‌র সার্বভৌম কর্তৃত্বের সামান্যতম অংশমাত্র এতদিন পর্যন্ত মানুষ পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছে। সামনের দিকে আরো অত্যাধুনিক পর্যবেক্ষণ উপকরণ উদ্ভাবিত ও সংগৃহীত হলে আরো কতো ব্যাপকতা মানুষের সামনে উন্মুক্ত হবে তা বলা সম্ভব নয়।

বিশ্ব-জাহান সম্পর্কে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে তা থেকে প্রমাণিত হয়, আমাদের এ ক্ষুদ্র পৃথিবীটি যেসব উপাদানে গঠিত এ সমগ্র বিশ্ব-জাহান সে একই উপাদানে গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে আমাদের পৃথিবীর মতো একই নিয়ম সক্রিয় রয়েছে। নয়তো এ পৃথিবীতে বসে আমরা যে অতি দূরবর্তী বিশ্বগুলো পর্যবেক্ষণ করছি, তাদের দূরত্ব পরিমাপ করছি এবং তাদের গতির হিসেব কষছি এসব কোনক্রমেই সম্ভবপর হতো না। এসব কি একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এ সমস্ত বিশ্ব-জাহান একই আল্লাহ‌র সৃষ্টি এবং একই শাসকের রাজ্য? তারপর যে নিয়ম-শৃংখলা, প্রজ্ঞা-কলাকৌশল, দক্ষতা-শিল্পকারিতা ও সম্পর্ক-সম্বন্ধ এসব লাখো লাখো ছায়াপথ ও তাদের মধ্যে সঞ্চরণশীল শত শত কোটি গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে পাওয়া যায় তা দেখে কি কোন বুদ্ধিমান মানুষ একথা কল্পনা করতে পারে যে, এসব কিছু আপনা-আপনিই হয়ে গেছে? এ নিয়ম-শৃংখলার পেছনে কি কোন ব্যবস্থাপক, এ কলা-কৌশলের পেছনে কোন জ্ঞানী কৌশলী, এ শিল্পকর্মের পেছনে কোন শিল্পী এবং এ সমন্বয় ও সম্পর্কের পেছনে কোন পরিকল্পনাকারী নেই?

৩৮.
ভরা নৌযান মানে নূহ আলাইহিস সালামের নৌযান। আর মানব বংশধরদেরকে তাতে আরোহণ করিয়ে দেবার অর্থ হচ্ছে এই যে, এ নৌযানে বাহ্যত হযরত নূহের কয়েকজন সাথীই বসেছিলেন ঠিকই কিন্তু আসলে তাতে আরোহণ করেছিল কিয়ামত পর্যন্ত জন্মলাভকারী সমস্ত মানুষ। কারণ নূহের তুফানে তাদেরকে ছাড়া বাকি সমস্ত মানুষকে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল এবং পরবর্তী মানব বংশধারা এ নৌযানে আরোহীদের থেকে শুরু হয়েছিল।
৩৯.
এ থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ইতিহাসে হযরত নূহ আলাইহিস সালামের নৌকাটিই ছিল প্রথম নৌকা। এর পূর্বে নদী ও সাগর পার হবার কোন উপায় মানুষ জানতো না। মহান আল্লাহ‌ সর্বপ্রথম হযরত নূহকে (আঃ) এ উপায়টি শেখান। তাঁর তৈরী করা নৌকায় চড়ে যখন আল্লাহ‌র কিছু বান্দা প্লাবন ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পায় তখন পরবর্তীকালে তাদের বংশধররা সামূদ্রিক সফরের জন্য নৌযান তৈরী করতে থাকে।
.
৪০.
আগের নিদর্শনগুলো উল্লেখ করা হয়েছিল তাওহীদের সপক্ষে যুক্তি-প্রমাণ হিসেবে, আর এখানে এ নিদর্শনটির উল্লেখ করা হয়েছে এ ধারণা দান করার জন্য যে, প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহার করার যে ক্ষমতাও মানুষকে দেয়া হয়েছে তা সবই আল্লাহ‌ প্রদত্ত, মানুষ নিজেই সেগুলো অর্জন করেনি। আর এ শক্তিগুলো ব্যবহার করার যে পদ্ধতি সে উদ্ভাবন করেছে তাও আল্লাহ‌র পথনির্দেশনার মাধ্যমেই তার জ্ঞানের আওতাধীন হয়েছে, এগুলো তার নিজের উদ্ভাবন নয়। নিজ শক্তিতে এ বিশাল শক্তিগুলোকে বিজিত করার ক্ষমতা মানুষের ছিল না। প্রকৃতির রহস্য সন্ধান করা এবং শক্তিগুলোকে কাজে লাগাবার যোগ্যতাও তার ছিল না, তারপর যে শক্তিগুলোর ওপর আল্লাহ‌ তাকে কর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ আল্লাহ‌ তাদেরকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। অন্যথায় আল্লাহ‌র ইচ্ছা যখন ভিন্নতর হয় তখন যেসব শক্তি মানুষের সেবা করে চলছিল সেগুলো অকস্মাৎ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মানুষ নিজেকে তাদের সামনে সম্পূর্ণ অসহায় দেখতে পায়। এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করার জন্য আল্লাহ‌ সামূদ্রিক সফরের ব্যাপারটিকে নিছক নমুনা হিসেবে পেশ করেছেন। আল্লাহ‌ হযরত নূহকে যদি নৌকা তৈরী করার পদ্ধতি না শিখিয়ে দিতেন এবং তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তারা তাতে আরোহণ না করতো তাহলে প্লাবনে সমগ্র মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যেতো। তারপর আল্লাহ‌র কাছ থেকে নৌকা নির্মাণের কায়দা-কানুন শিখে নিয়ে লোকেরা নদী ও সাগর অতিক্রম করার যোগ্যতা অর্জন করে। এর ফলে মানবজাতি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়। কিন্তু এ প্রথম পর্ব থেকে আজকের বিশাল আকার জাহাজ নির্মাণ পর্যন্ত মানুষ যতদূর উন্নতি সাধন করেছে এবং নৌযান পরিচালনার ক্ষেত্রে যতটুকুই নিপুণতা ও দক্ষতা অর্জন করেছে তা সত্ত্বেও সে এ দাবী করতে পারে না যে, নদী ও সাগর সবই তার নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে এবং তাদের ওপর সে পুরোপুরি বিজয় লাভ করেছে। আজো আল্লাহ‌র পানি আল্লাহ‌রই কুদরতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং যখনই তিনি চান মানুষকে তার জাহাজসহ তার বুকে ডুবিয়ে দেন।
৪১.
অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিরা যা দেখেছে।
.
৪২.
আয়াত বলতে আল্লাহ‌র কিতাবের আয়াতই বুঝানো হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষকে উপদেশ দেয়া হয় আবার এমন নিদর্শনাবলীও বুঝানো হয়েছে যেগুলো প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ও মানুষের নিজের অস্তিত্ব ও তার ইতিহাসের মধ্যে পাওয়া যায়। এসব মানুষকে শিক্ষা দান করে। তবে এজন্য অবশ্যই মানুষের শিক্ষা গ্রহণ করার মানসিকতা থাকা জরুরী।
৪৩.
এর মাধ্যমে একথা বলাই উদ্দেশ্য যে, কুফরী কেবল তাদের দৃষ্টিশক্তিকেই অন্ধ করে দেয়নি বরং তাদের নৈতিক অনুভূতিকেও নির্জীব করে দিয়েছে। তারা আল্লাহ‌র ব্যাপারেও সঠিক চিন্তা-ভাবনা করে না এবং আল্লাহ‌র সৃষ্টির সাথেও যথার্থ ব্যবহার করে না। তাদের কাছে রয়েছে প্রত্যেক উপদেশের উল্টা জবাব। প্রত্যেক পথভ্রষ্টতা ও অসদাচরণের জন্য একটি বিপরীত দর্শন। প্রত্যেক সৎকাজ থেকে দূরে থাকার জন্য একটি মনগড়া বাহানা তাদের কাছে তো রয়েছেই।
অনুবাদ: