আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
مثل الذى تعمل ويحتسب فى صنعته الخير كمثل ام موسى ترضع وادها وتاخذها-
“যে ব্যক্তি নিজের রুজি রোজগারের জন্য কাজ করে এবং সে কাজে লক্ষ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তার দৃষ্টান্ত হযরত মূসার মায়ের মতোঃ তিনি নিজেরই সন্তানকে দুধ পান করান আবার তার বিনিময়ও লাভ করেন।” অর্থাৎ এ ধরনের লোক যদিও নিজের এবং নিজের সন্তানদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেয়ার জন্য কাজ করে কিন্তু যেহেতু সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ঈমানদারীর সাথে কাজ করে, যার সাথেই কাজ কারবার করে তার হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং হালাল রিজিকের মাধ্যামে নিজের এবং নিজের পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণকে আল্লাহর ইবাদাত মনে করে, তাই নিজের জীবিকা উপার্জনের জন্যও সে আল্লাহর কাছে পুরস্কার লাভের অধিকারী হয়। অর্থাৎ একদিকে জীবিকাও উপার্জন করা হয় এবং অন্যদিকে আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব ও প্রতিদানও লাভ করা হয়।
এ রাজপুত্র থাকাকালীন সময়ের শিক্ষাদীক্ষা সম্পর্কে বাইবেলের নূতন নিয়মের প্রেরিতদের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছেঃ “ আর মোশি মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যায় শিক্ষিত হইলেন, এবং তিনি বাক্যে ও কার্যে পরাক্রমী ছিলেন।” (৭:২২) তালমূদের বর্ণনা মতে মূসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের গৃহে একজন সুদর্শন যুবা পুরুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠেন। রাজপুত্রদের মতো পোশাক পরতেন। রাজপুত্রের মতো বসবাস করতেন। লোকেরা তাঁকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো। তিনি প্রায়ই জুশান এলাকায় যেতেন। সেখানে ছিল ইসরাঈলীদের বসতি, তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের সাথে কিবতী সরকারের কর্মচারীরা যেসব দুর্ব্যবহার ও বাড়াবাড়ি করতো সেসব নিজের চোখে দেখতেন। তাঁরই প্রচেষ্টাই ফেরাউন ইসরাঈলীদের জন্য সপ্তাহে একদিন ছুটির বিধান করে। তিনি ফেরাউনকে বলেন, চিরকাল দিনের পর দিন অবিশ্রান্ত কাজ করতে থাকলে এরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এর ফলে সরকারেরই কাজের ক্ষতি হবে। এদের শক্তির পুনর্বহালের জন্য সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থা করা দরকার। এভাবে নিজের বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তিনি এমনই আরও বহু কাজ করেছিলেন যার ফলে সারা মিসর দেশে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। (তালমূদের বিবরণ ১২৯ পৃঃ)
“শহরে প্রবেশ করলো” এ শব্দগুলো থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাজপ্রাসাদ সাধারণ জনবসতি থেকে দূরে অবস্থিত ছিল। হযরত মূসা যেহেতু রাজপ্রাসাদে থাকতেন তাই শহরে বের হলেন, না বলে বলা হয়েছে, শহরে প্রবেশ করলেন।
মুসলিম আলেমগণ সাধারণভাবে হযরত মূসার এ অঙ্গীকার থেকে একথা প্রমাণ করেছেন যে, একজন মু’মিনের কোন জালেমকে সাহায্য করা থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা উচিত। সে জালেম কোন ব্যক্তি, দল, সরকার বা রাষ্ট্র যেই হোক না কেন। প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহর কাছে এক ব্যক্তি বলে, আমার ভাই বনী উমাইয়া সরকারের অধীনে কূফার গভর্নরের কাতিব (সচিব), বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালা করা তার কাজ নয়, তবে যেসব ফায়সালা করা হয় সেগুলো তার কলমের সাহায্যেই জারী হয়। এ চাকুরী না করলে সে ভাতে মারা যাবে। আতা জবাবে এ আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেন, তোমার ভাইয়ের নিজের কলম ছুঁড়ে ফেলে দেয়া উচিত, রিযিকদাতা হচ্ছেন আল্লাহ।
আর একজন কাতিব আমের শা’বীকে জিজ্ঞেস করেন, “হে আবু আমর! আমি শুধুমাত্র হুকুমনামা লিখে তা জারী করার দায়িত্ব পালন করি মূল ফায়সালা করার দায়িত্ব আমার নয়। এ জীবিকা কি আমার জন্য বৈধ?” তিনি জবাব দেন, “হতে পারে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যার ফায়সালা করা হয়েছে এবং তোমার কলম দিয়ে তা জারী হবে। হতে পারে, কোন সম্পদ নাহক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অথবা কারো গৃহ ধ্বসানোর হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমার কলম দিয়ে জারী হচ্ছে।” তারপর ইমাম এ আয়াতটি পাঠ করেন। আয়াতটি শুনেই কাতিব বলে ওঠেন, “আজকের পর থেকে আমার কলম বনী উমাইয়ার হুকুমনামা জারী হবার কাজে ব্যবহৃত হবে না। ” ইমাম বললেন, “তাহলে আল্লাহও তোমাকে রিযিক থেকে বঞ্চিত করবেন না।”
আবদুর রহমান ইবনে মুসলিম যাহহাককে শুধুমাত্র বুখারায় গিয়ে সেখানকার লোকদের বেতন বণ্টন করে দেবার কাজে পাঠাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি সে দায়িত্ব গ্রহণ করতেও অস্বীকার করেন। তাঁর বন্ধুরা বলেন, এতে ক্ষতি কি? তিনি বলেন, আমি জালেমদের কোন কাজেও সাহায্যকারী হতে চাই না। (রুহুল মা’আনি ৩ খণ্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা)
ইমাম আবু হানীফার একটি ঘটনা তাঁর নির্ভরযোগ্য জীবনীকারগণ আল মুওয়াফফাক আল মক্কী, ইবনুল বাযযার আল কারওয়ারী, মুল্লা আলী কারী প্রমূখ সবাই তাঁদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছে, তারই পরামর্শক্রমে বাদশাহ মনসূরের প্রধান সেনাপতি হাসান ইবনে কাহতুবাহ একথা বলে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন যে, আজ পর্যন্ত এতটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু এ যদি জুলুমের পথে হয়ে থাকে তাহলে আমার আমল নামায় আমি আর কোন অপরাধের সংখ্যা বাড়াতে চাই না।
এ কাহিনীটি যে ভিত্তিহীন এর একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে যে, এতে একথাও বলা হয়েছে যে, এসময় আসিরীয়ায় (উত্তর ইরাক) হাবশার শাসন চলছিল এবং আসিরীয়বাসীদের বিদ্রোহ দমন করার জন্য হযরত মূসা ও তাঁর পূর্ববতি বাদশহরাও সামরিক অভিযান চালান। সামান্যতম ইতিহাস-ভূগোল জ্ঞান যার আছ সে পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে একটু নজর দিলেই দেখতে পাবে যে, আসিরীয়ার উপর হাবশার শাসন বা হাবশি সেনাদলের আক্রমণের ব্যাপারটি কেবলমাত্র তখনই ঘটতে পারতো যখন মিসর, ফিলিস্তীন ও সিরিয়া তার দখলে থাকতো অথবা সমগ্র আরব দেশ তার কর্তৃত্বাধীন হতো কিংবা হাবশার নৌবাহিনী এতই শক্তিশালী হতো যে, তা ভারত মহাসাগর ও পারস্য উপসাগর অতিক্রম করে ইরাক দখল করতে সক্ষম হতো। এদেশগুলোয় কখনো হাবশীদের কতৃর্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অথবা তাদের নৌশক্তি কখনো এত বিপুল শক্তির অধিকারী ছিল এ ধরণের কোন কথা ইতিহাসে নেই। এ থেকে বুঝা যায় যে, নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে বনী ইসরাঈলের জ্ঞান কতটা অপরিপক্ব ছিল এবং কুরআন তাদের ভুলগুলো সংশোধন করে কেমন সুস্পষ্ট আকারে সঠিক ঘটনাবলী পেশ করছে। কিন্তু ইহুদী খৃস্টান প্রাচ্যবিদগণ একথা বলতে লজ্জা অনুভব করেন না যে, কুরআন এসব কাহিনী বনী ইসরাঈল থেকে সংগ্রহ করেছে।