পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

১৭১ আয়াত

৩৫ ) আর আমি সে জনপদের একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি ৫৯ তাদের জন্য যারা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে। ৬০
وَلَقَد تَّرَكْنَا مِنْهَآ ءَايَةًۢ بَيِّنَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يَعْقِلُونَ ٣٥
৩৬ ) আর মাদইয়ানের দিকে আমি পাঠালাম তাদের ভাই শু’আইবকে। ৬১ সে বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর বন্দেগী করো, শেষ দিনের প্রত্যাশী হও ৬২ এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী হয়ে বাড়াবাড়ি করে বেড়িও না।”
وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًۭا فَقَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱرْجُوا۟ ٱلْيَوْمَ ٱلْـَٔاخِرَ وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ ٣٦
৩৭ ) কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো। ৬৩ শেষে একটি প্রচণ্ড ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করলো এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্যে ৬৪ মরে পড়ে থাকলো।
فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ ٣٧
৩৮ ) আর আদ ও সামূদ কে আমি ধ্বংস করেছি। তারা যেখানে থাকতো সেসব জায়গা তোমরা দেখেছো ৬৫ তাদের কার্যাবলীকে শয়তান তাদের জন্য সুদৃশ্য বানিয়ে দিল এবং তাদেরকে সোজা পথ থেকে বিচ্যুত করলো অথচ তারা ছিল বুদ্ধি সচেতন। ৬৬
وَعَادًۭا وَثَمُودَا۟ وَقَد تَّبَيَّنَ لَكُم مِّن مَّسَـٰكِنِهِمْ ۖ وَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ أَعْمَـٰلَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ ٱلسَّبِيلِ وَكَانُوا۟ مُسْتَبْصِرِينَ ٣٨
৩৯ ) আর কারূন, ফেরাঊন ও হামানকে আমি ধ্বংস করি। মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসে কিন্তু তারা পৃথিবীতে অহংকার করে অথচ তারা অগ্রগমনকারী ছিল না। ৬৭
وَقَـٰرُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَـٰمَـٰنَ ۖ وَلَقَدْ جَآءَهُم مُّوسَىٰ بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَٱسْتَكْبَرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ وَمَا كَانُوا۟ سَـٰبِقِينَ ٣٩
৪০ ) শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে আমি তার গুনাহের জন্য পাকড়াও করি। তারপর তাদের মধ্য থেকে কারোর ওপর আমি পাথর বর্ষণকারী বাতাস প্রবাহিত করি ৬৮ এবং কাউকে একটি প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ আঘাত হানে ৬৯ আবার কাউকে আমি ভূগর্ভে প্রোথিত করি ৭০ এবং কাউকে ডুবিয়ে দিই। ৭১ আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করছিল। ৭২
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنۢبِهِۦ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًۭا وَمِنْهُم مَّنْ أَخَذَتْهُ ٱلصَّيْحَةُ وَمِنْهُم مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ ٱلْأَرْضَ وَمِنْهُم مَّنْ أَغْرَقْنَا ۚ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَـٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ٤٠
৪১ ) যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে নিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত হলো মাকড়সা। সে নিজের একটি ঘর তৈরি করে এবং সব ঘরের চেয়ে বেশি দুর্বল হয় মাকড়সার ঘর। হায় যদি এরা জানতো! ৭৩
مَثَلُ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوْلِيَآءَ كَمَثَلِ ٱلْعَنكَبُوتِ ٱتَّخَذَتْ بَيْتًۭا ۖ وَإِنَّ أَوْهَنَ ٱلْبُيُوتِ لَبَيْتُ ٱلْعَنكَبُوتِ ۖ لَوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ ٤١
৪২ ) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে জিনিসকেই ডাকে আল্লাহ‌ তাকে খুব ভালোভাবেই জানেন এবং তিনিই পরাক্রান্ত ও জ্ঞানী। ৭৪
إِنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِۦ مِن شَىْءٍۢ ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ٤٢
৪৩ ) মানুষকে উপদেশ দেবার জন্য আমি এ দৃষ্টান্তগুলো দিয়েছি কিন্তু এগুলো একমাত্র তারাই বুঝে যারা জ্ঞান সম্পন্ন।
وَتِلْكَ ٱلْأَمْثَـٰلُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ ۖ وَمَا يَعْقِلُهَآ إِلَّا ٱلْعَـٰلِمُونَ ٤٣
৪৪ ) আল্লাহ আসমান ও যমীনকে সত্য-ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন, ৭৫ প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে একটি নিদর্শন রয়েছে মু’মিনদের জন্য। ৭৬
خَلَقَ ٱللَّهُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَةًۭ لِّلْمُؤْمِنِينَ ٤٤
৫৯.
এই সুস্পষ্ট নিদর্শনটি হচ্ছে মরুসাগর। একে লূত সাগরও বলা হয়। কুরআন মাজীদেও বিভিন্ন স্থানে মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, এই জালেম জাতিটির ওপর তার কৃতকর্মের বদৌলতে যে আযাব নাযিল হয়েছিল তার একটি চিহ্ন আজও প্রকাশ্য রাজপথে বর্তমান রয়েছে। তোমরা সিরিয়ার দিকে নিজেদের বাণিজ্য সফরে যাবার সময় দিনরাত এ চিহ্নটি দেখে থাকো। وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٍ مُقِيمٍ(الحجر)وَإِنَّكُمْ لَتَمُرُّونَ عَلَيْهِمْ مُصْبِحِينَ - وَبِاللَّيْلِ (الصافات) বর্তমান যুগে একথাটি প্রায় নিশ্চয়তা সহকারেই স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে যে, মরুসাগরের দক্ষিণ অংশটি একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পনজনিত ভূমিধ্বসের মাধ্যমে অস্তিত্বলাভ করেছে এবং এ ধ্বসে যাওয়া অংশেই অবস্থিত ছিল লূত জাতির কেন্দ্রীয় নগরী সাদোম (Sodom)। এ অংশে পানির মধ্যে কিছু ডুবন্ত জনপদের ধ্বংসাবশেষও দেখা যায়। সাম্প্রতিককালে অত্যাধুনিক ডুবুরী সরঞ্জামের সহায়তায় কিছু লোকের নীচে নেমে ঐসব ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো এ প্রচেষ্টাগুলোর ফলাফল জানা যায়নি। (আরো বেশি জানার জন্য দেখুন, সূরা আস শু’আরা ১১৪ টীকা।)
৬০.
লূতের জাতির কর্মেও শরীয়াতবিহিত শাস্তির জন্য দেখুন, সূরা আ’রাফ ৬৮ টীকা।
৬১ .
তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা আ’রাফ ১১; হূদ ৮; এবং আশ শু’আরা ১০ রুকু।
৬২ .
এর দু’ টো অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে আখেরাতের আগমন কামনা করো। একথা মনে করো না, যা কিছু আছে ব্যস এ দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই এবং এরপর আর এমন কোন জীবন নেই যেখানে তোমাদের নিজেদের যাবতীয় কাজ-কর্মেও হিসেব দিতে হবে এবং তার পুরস্কার ও শাস্তি লাভ করতে হবে। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এমন কাজ করো যার ফলে তোমরা আখেরাতে ভালো পরিণতি লাভের আশা করতে পারো।
.
৬৩.
অর্থাৎ একথা স্বীকার করলো না যে, আল্লাহর রসূল হযরত শু’আইব(আ), যে শিক্ষা তিনি দিচ্ছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং একে না মানলে তাদেরকে আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হতে হবে।
৬৪ .
ঘর বলতে এখানে এই জাতি যে এলাকায় বসবাস করতো সেই সমগ্র এলাকাকে বুঝানো হয়েছে। একথা সুস্পষ্ট, যখন পুরোপুরি একটি জাতির কথা আলোচনা করা হচ্ছে তখন তার দেশই তার ঘর হতে পারে।
.
৬৫ .
আরবের যেসব এলাকায় এ দু’ টি জাতির বসতি ছিল আরবের প্রতিটি শিশুও তা জানতো। দক্ষিণ আরবের যেসব এলাকা বর্তমানে আহকাফ, ইয়ামান ও হাদরা মাউত নামে পরিচিত প্রাচীনকালে সে এলাকাগুলোতে ছিল আদ জাতির বসবাস। আরবের লোকেরা একথা জানতো। হিজাযের দক্ষিণ অংশে রাবেগ থেকে আকাবাহ পর্যন্ত এবং মদিনা ও খাইবার থেকে তাইমা ও তাবুক পর্যন্ত সমগ্র এলাকা সামূদ জাতির ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ দেখা যায়। কুরআন নাযিল হবার যুগে এ ধ্বংসাবশেষগুলোর অবস্থা বর্তমানের তুলনায় আরো বেশি সু্‌স্পষ্ট থেকে থাকবে।
৬৬.
অর্থাৎ অজ্ঞ ও মূর্খ ছিল না। তারা ছিল তদানীন্তন যুগের শ্রেষ্ঠ সুসভ্য ও প্রগতিশীল লোক। নিজেদের দুনিয়ার কার্যাবলী সম্পাদন করার ব্যাপারে তারা পূর্ণ জ্ঞান বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতো। তাই একথা বলা যাবে না যে, শয়তান তাদের চোখে ঠুলি বেঁধে দিয়ে বুদ্ধি বিনষ্ট করে দিয়ে নিজের পথে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। বরঞ্চ তারা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে ও খোলা চোখে শয়তান যে পথে পাড়ি জমিয়েছিল এবং এমন পথ পরিহার করেছিল যা তাদের কাছে নীরস, বিস্বাদ এবং নৈতিক বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ হবার কারণে কষ্টকর মনে হচ্ছিল।
৬৭ .
অর্থাৎ পালিয়ে আল্লাহর পাকড়াও থেকে আত্মরক্ষা করার ক্ষমতা ছিল না। আল্লাহর কৌশল ব্যর্থ করে দেবার ক্ষমতা তাদের ছিল না।
৬৮.
অর্থাৎ আদ জাতি। তাদের ওপর অবিরাম সাত রাত ও আট দিন পর্যন্ত ভয়াবহ তুফান চলতে থাকে। (সূরা আল হাককাহ, ৭ আয়াত)
৬৯ .
অর্থাৎ সামূদ।
৭০ .
অর্থাৎ কারূন।
৭১ .
ফেরাউন ও হামান।
৭২.
এ পর্যন্ত যেসব বক্তব্য শুনানো হলো সেগুলোর বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল দুটি। একদিকে এগুলো মু’মিনদেরকে শোনানো হয়েছে, যাতে তারা হিম্মতহারা, ভগ্ন হৃদয় ও হতাশ না হয়ে পড়ে এবং বিপদ ও সংকটের কঠিন আবর্তেও ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তা সহকারে সত্য ন্যায়ের ঝাণ্ডা উঁচু করে রাখে যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর সাহায্য অবশ্যই এসে যাবে, তিনি জালেমদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং সত্যের ঝাণ্ডা উঁচু করে দেবেন। অন্যদিকে এগুলো এমন জালেমদেরকে শুনানো হয়েছে যারা তাদের ধারণামতে ইসলামী আন্দোলকে সমূলে উচ্ছেদ করে দেবার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিল। তাদেরকে সতর্ক দেয়া হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর সংযম ও সহিষ্ণুতার ভুল অর্থ গ্রহণ করছো। তোমরা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বকে একটি অরাজক রাজত্ব মনে করছো। তোমাদের যদি এখন পর্যন্ত বিদ্রোহ, সীমালংঘন, জুলুম, নিপীড়ন ও অসৎকাজের জন্য পাকড়াও না করা হয়ে থাকে এবং সংশোধিত হবার জন্য অনুগ্রহ করে দীর্ঘ অবকাশ দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা নিজে নিজেই একথা মনে করে বসো না যে, এখানে আদতে কোন ইনসাফকারী শক্তিই নেই এবং এ ভূখণ্ডে লাগামহীনভাবে অনন্তকাল পর্যন্ত যা ইচ্ছে তাই করে যেতে পারবে। এ বিভ্রান্তি শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে এমন পরিণতির সম্মুখীন করবেই ইতিপূর্বে নূহের জাতি, লূতের জাতি ও শু’আইবের জাতি যার সম্মুখীন হয়েছিল, আদ ও সামূদ জাতিকে যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং কারুন ও ফেরাউন যে পরিণতি স্বচক্ষে দেখে নিয়েছিল।
৭৩.
ওপরে যতগুলো জাতির কথা বলা হয়েছে তারা সবাই শিরকে লিপ্ত ছিল। নিজেদের উপাস্যের ব্যাপারে তাদের আকীদা ছিলঃ এরা আমাদের সহায়ক সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক এরা আমাদের ভাগ্য ভাঙ্গা গড়ার ক্ষমতা রাখে। এদের পূজা করে এবং এদেরকে মানত ও নজরানা পেশ করে যখন আমরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করবো তখন এরা আমাদের কাজ করে দেবে এবং সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে আমাদের বাঁচাবে। কিন্তু যেমন ওপরের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীতে দেখানো হয়েছে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন তাদের ধ্বংসের ফায়সালা করা হয় তখন তাদের উপরোল্লিখিত সমস্ত আকীদা-বিশ্বাস ও ধারণা-কল্পনা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। সে সময় তারা যেসব দেব-দেবী, অবতার, অলী, আত্মা, জ্বিন বা ফেরেশতাদের পূজা করতো তাদের একজনও তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি এবং নিজেদের মিথ্যা আশার ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে তারা মাটির সাথে মিশে গেছে। এসব ঘটনা বর্ণনা করার পর এখন মহান আল্লাহ‌ মুশরিকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, বিশ্ব-জাহানের প্রকৃত মালিক ও শাসনকর্তাকে বাদ দিয়ে একেবারে অক্ষম বান্দা ও সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপাস্যদের ওপর নির্ভর করে যে আশার আকাশ কুসুম তোমরা রচনা করেছো তার প্রকৃত অবস্থা মাকড়শার জালের চাইতে বেশি কিছু নয়। মাকড়শার জাল যেমন আঙ্গুলের সামান্য একটি টোকাও বরদাশত করতে পারে না তেমনি তোমাদের আশার অট্টালিকাও আল্লাহর ব্যবস্থার সাথে প্রথম সংঘাতেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। তোমরা যে কল্পনা বিলাসের এমন এক চক্করের মধ্যে পড়ে আছো, এটা নিছক তোমাদের মূর্খতার কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। সত্যের যদি সামান্যতম জ্ঞানও তোমাদের থাকতো, তাহলে তোমরা এসব ভিত্তিহীন সহায় ও নির্ভরের ওপর কখনো জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না। সত্য কেবলমাত্র এতটুকুই, এ বিশ্ব-জাহানে ক্ষমতার মালিক একমাত্র রব্বুল আলামীন ছাড়া আর কেউ নেই এবং একমাত্র তারই ওপর নির্ভর করা যেতে পারে।

فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

“যে ব্যক্তি তাগুতকে (আল্লাহ বিরোধী শক্তিকে) অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে সে মজবুত নির্ভরকে আঁকড়ে ধরেছে যা কখনো ছিন্ন হবার নয়। বস্তুত আল্লাহ‌ সব কিছু শোনেন ও জানেন।” (আল বাকারাহ ২৫৬ আয়াত।)

৭৪.
অর্থাৎ যেসব জিনিসকে এরা মাবুদে পরিণত করেছে এবং যাদেরকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করে তাদের প্রকৃত স্বরূপ আল্লাহ‌ ভালোভাবেই জানেন। তাদের কোন ক্ষমতাই নেই। একমাত্র আল্লাহই ক্ষমতার মালিক এবং তারই বিচক্ষণ কর্মকুশলতা ও জ্ঞান এ বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থা পরিচালনা করছে।

এ আয়াতের আর একটি অনুবাদ এও হতে পারে, “আল্লাহ খুব ভালোভাবেই জানেন, তাকে বাদ দিয়ে এরা যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই নয় (অর্থাৎ ভিত্তিহীন ও ক্ষমতাহীন) এবং একমাত্র তিনিই পরাক্রম ও জ্ঞানের অধিকারী।

.
৭৫.
অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের এ ব্যবস্থা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত, মিথ্যার ওপর নয়। পরিষ্কার মন-মানসিকতা নিয়ে যে ব্যক্তিই এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে তার কাছে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এ পৃথিবী ও আকাশ ধারণা কল্পনার ওপর নয় বরং প্রকৃত সত্য ও বাস্তব ঘটনার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু বুঝবে ও উপলব্ধি করবে এবং নিজের ধারণা ও কল্পনার ভিত্তিতে যে দর্শনই তৈরি করবে তা যে এখানে যথাযথভাবে খাপ খেয়ে যাবে, তার কোন সম্ভাবনা নেই। এখানে তো একমাত্র এমন জিনিসই সফলকাম হতে এবং স্থিরতা ও প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে, যা হয় প্রকৃত সত্য ও বাস্তব ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যশীল। বাস্তব ঘটনা বিরোধী ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে যে ইমারতই দাঁড় করানো হবে তা শেষ পর্যন্ত প্রকৃত সত্যের সাথে সংঘাত বাধিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বিশ্ব-জাহানের এ ব্যবস্থা পরিষ্কার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এক আল্লাহ‌ হচ্ছেন এর স্রষ্টা, এক আল্লাহই এর মালিক ও পরিচালক। এ বাস্তব বিষয়টির বিরুদ্ধে যদি কোন ব্যক্তি এ ধারণা নিয়ে কাজ করতে থাকে যে, এ দুনিয়ার কোন আল্লাহ‌ নেই অথবা এ ধারণা করে চলতে থাকে যে, এর বহু খোদা আছে, যারা মানত ও নজরানার জিনিস খেয়ে নিজেদের ভক্ত-অনুরক্তদের এখানে সবকিছু করার স্বাধীনতা এবং নিশ্চিন্তে নিরাপদে থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে দেয়, তাহলে তার এ ধারণার কারণে প্রকৃত সত্যের মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তন ঘটবে না বরং সে নিজেই যে কোন সময় একটি বিরাট আঘাতের সম্মুখীন হবে।
৭৬ .
পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টির মধ্যে তাওহীদের সত্যতা এবং শিরক ও নাস্তিক্যবাদের মিথ্যা হবার ওপর একটি পরিষ্কার সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু এ সাক্ষ্য প্রমাণের সন্ধান একমাত্র তারাই পায় যারা নবীগণের শিক্ষা মেনে নেয়। নবীগণের শিক্ষা অস্বীকারকারীরা সবকিছু দেখার পরও কিছুই দেখে না।
অনুবাদ: