পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

১৭১ আয়াত

২৫ ) আর সে বললো, ৪১ “তোমরা দুনিয়ার জীবনের তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোকে নিজেদের মধ্যে প্রীতি- ভালোবাসার মাধ্যমে পরিণত করে নিয়েছো। ৪২ কিন্তু কিয়ামতের দিন তোমরা পরস্পরকে অস্বীকার এবং পরস্পরের প্রতি অভিসম্পাত করবে ৪৩ আর আগুন তোমাদের আবাস হবে এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী হবে না।”
وَقَالَ إِنَّمَا ٱتَّخَذْتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ أَوْثَـٰنًۭا مَّوَدَّةَ بَيْنِكُمْ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ ثُمَّ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُم بِبَعْضٍۢ وَيَلْعَنُ بَعْضُكُم بَعْضًۭا وَمَأْوَىٰكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن نَّـٰصِرِينَ ٢٥
২৬ ) সে সময় লূত তাকে মেনে নেয় ৪৪ এবং ইবরাহীমকে বলে, আমি আমার রবের দিকে হিজরত করছি, ৪৫ তিনি পরাক্রমশালীও জ্ঞানী। ৪৬
۞ فَـَٔامَنَ لَهُۥ لُوطٌۭ ۘ وَقَالَ إِنِّى مُهَاجِرٌ إِلَىٰ رَبِّىٓ ۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ٢٦
২৭ ) আর আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকুব (এর মতো সন্তান) দান করি ৪৭ এবং তার বংশধরদের মধ্যে রেখে দিই নবুওয়াত ও কিতাব ৪৮ এবং তাকে দুনিয়ায় এর প্রতিদান দিই আর আখেরাতে সে নিশ্চিতভাবেই সৎকর্মশালীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ৪৯
وَوَهَبْنَا لَهُۥٓ إِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ وَجَعَلْنَا فِى ذُرِّيَّتِهِ ٱلنُّبُوَّةَ وَٱلْكِتَـٰبَ وَءَاتَيْنَـٰهُ أَجْرَهُۥ فِى ٱلدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُۥ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ٢٧
২৮ ) আর আমি লূত কে পাঠাই ৫০ যখন সে তার সম্প্রদায়কে বললো, “তোমরা তো এমন অশ্লীল কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্ববাসীদের মধ্যে কেউ করেনি।
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ ٱلْفَـٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍۢ مِّنَ ٱلْعَـٰلَمِينَ ٢٨
২৯ ) তোমাদের অবস্থা কি এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তোমরা পুরুষদের কাছে যাচ্ছো, ৫১ রাহাজানি করছো এবং নিজেদের মজলিসে খারাপ কাজ করছো? ৫২ তারপর তার সম্প্রদায়ের কাছে এছাড়া আর কোন জবাব ছিল না যে, তারা বললো, “নিয়ে এসো আল্লাহর আযাব যদি তুমি সত্যবাদী হও।”
أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ ٱلرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ ٱلسَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِى نَادِيكُمُ ٱلْمُنكَرَ ۖ فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ ٱئْتِنَا بِعَذَابِ ٱللَّهِ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ ٢٩
৩০ ) লূত বললো, “হে আমার রব! এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী লোকদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো।”
قَالَ رَبِّ ٱنصُرْنِى عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْمُفْسِدِينَ ٣٠
৩১ ) আর যখন আমার প্রেরিতগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে পৌঁছলো, ৫৩ তারা তাকে বললো, “আমরা এ জনপদের লোকদেরকে ধ্বংস করে দেবো, ৫৪ এর অধিবাসীরা বড়ই জালেম হয়ে গেছে।”
وَلَمَّا جَآءَتْ رُسُلُنَآ إِبْرَٰهِيمَ بِٱلْبُشْرَىٰ قَالُوٓا۟ إِنَّا مُهْلِكُوٓا۟ أَهْلِ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ ۖ إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوا۟ ظَـٰلِمِينَ ٣١
৩২ ) ইবরাহীম বললো, “সেখানে তো লূত আছে।” ৫৫ তারা বললো, “আমরা ভালোভাবেই জানি সেখানে কে কে আছে, আমরা তাকে ও তার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবো তার স্ত্রীকে ছাড়া;” সে ছিল পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ৫৬
قَالَ إِنَّ فِيهَا لُوطًۭا ۚ قَالُوا۟ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَن فِيهَا ۖ لَنُنَجِّيَنَّهُۥ وَأَهْلَهُۥٓ إِلَّا ٱمْرَأَتَهُۥ كَانَتْ مِنَ ٱلْغَـٰبِرِينَ ٣٢
৩৩ ) তারপর যখন আমার প্রেরিতগণ লূতের কাছে পৌঁছলো তাদের আগমনে সে অত্যন্ত বিব্রত ও সংকুচিত হৃদয় হয়ে পড়লো। ৫৭ তারা বললো, “ভয় করো না এবং দুঃখও করো না। ৫৮ আমরা তোমাকে ও তোমার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবো, তোমার স্ত্রীকে ছাড়া, সে পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
وَلَمَّآ أَن جَآءَتْ رُسُلُنَا لُوطًۭا سِىٓءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًۭا وَقَالُوا۟ لَا تَخَفْ وَلَا تَحْزَنْ ۖ إِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا ٱمْرَأَتَكَ كَانَتْ مِنَ ٱلْغَـٰبِرِينَ ٣٣
৩৪ ) আমরা এ জনপদের লোকদের ওপর আকাশ থেকে আযাব নাযিল করতে যাচ্ছি তারা যে পাপাচার করে আসছে তার কারণে।”
إِنَّا مُنزِلُونَ عَلَىٰٓ أَهْلِ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ رِجْزًۭا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ ٣٤
৪১ .
বক্তব্যের ধারাবাহিকতা থেকে বুঝা যায়, আগুনের মধ্য থেকে নিরাপদ বের হয়ে আসার পর হযরত ইবরাহীম (আ) লোকদেরকে একথা বলেন।
৪২ .
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তে মূর্তিপূজার ভিত্তিতে নিজেদের সামাজিক জীবন গড়ে তুলেছো। এ ব্যবস্থা দুনিয়ার জীবনের সীমানা পর্যন্ত তোমাদের জাতীয় সত্ত্বাকে একত্র করে রাখতে পারে। কারণ এখানে সত্য-মিথ্যা নির্বিশেষে যে কোন আকীদার ভিত্তিতে লোকেরা একত্র হতে পারে। আর যত বড় মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর আকীদার ভিত্তিতেই যে কোন ঐক্য ও সমাজ গড়ে উঠুক না কেন তা পারস্পরিক বন্ধত্ব, আত্মীয়তা, ভ্রাতৃত্ব ও অন্যান্য সকল ধর্মীয়, সামাজিক, তামাদ্দুনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হতে পারে।
৪৩.
অর্থাৎ মিথ্যা আকীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তোমাদের এ সামাজিক কাঠামোর আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি-ভালোবাসা, সহযোগিতা, আত্মীয়তা এবং আকীদা-বিশ্বাস ও কামনা-বাসনার কেবলমাত্র এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকতে পারে যা দুনিয়ায় এক আল্লাহর বন্দেগী এবং সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফরী ও শিরক এবং ভুল পথ ও কুপথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক সেখানে ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালোবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রূপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, পীর-মুরীদ পর্যন্ত একে অন্যেও ওপর লানত বর্ষণ করবে এবং প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই জালেম আমাকে ধ্বংস করেছে, কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক। একথা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। যেমন সূরা যুখরুফে বলা হয়েছেঃ

الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ

“বন্ধুরা সেদিন পরস্পরের শত্রুহয়ে যাবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।”

সূরা আ’রাফে বলা হয়েছেঃ

كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَعَنَتْ أُخْتَهَا حَتَّى إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِنَ النَّارِ

“প্রত্যেকটি দল যখন জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন তার কাছের দলের প্রতি লানত বর্ষণ করতে করতে প্রবেশ করবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন সবাই সেখানে একত্র হয়ে যাবে তখন প্রত্যেক পরবর্তী দল পূর্ববর্তী দলের পক্ষে বলবেঃ হে আমাদের রব! এ লোকেরাই আমাদের পথভ্রষ্ট করে, কাজেই এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দিন।” (আয়াতঃ৩৮)

সূরা আহযাবে বলা হয়েছেঃ

وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا - رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا

“আর তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের সরদারদেরও বড়দের আনুগত্য করেছি এবং তারা আমাদের বিপথগামী করেছে। হে আমাদের রব! তুমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের ওপর বড় রকমের লানত বর্ষণ করো।”

.
৪৪.
বক্তব্যের বিন্যাস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আগুন থেকে বের হয়ে আসেন এবং তিনি ওপরে উল্লেখিত কথাগুলো বলেন, তখন সমগ্র সমবেত জনতার মধ্য থেকে একমাত্র হযরত লূত (আ) তার আনুগত্য গ্রহণ করার ঘোষণা করেন। হতে পারে সে সময় আরো বহুলোক মনে মনে হযরত ইবরাহীমের সত্যতা স্বীকার করে থাকবে। কিন্তু সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইবরাহীমের দ্বীনের বিরুদ্ধে যে ক্রোধ ও আক্রোশ প্রবণতার প্রকাশ সে সময় সবার চোখের সামনে হয়েছিল তা প্রত্যক্ষ করেকোন ব্যক্তি এ ধরনের ভয়ঙ্কর সত্য মেনে নেবার এবং তার সাথে সহযোগিতা করার সাহস করতে পারেনি। এ সৌভাগ্য মাত্র এক ব্যক্তিরই হয়েছিল এবং তিনি হচ্ছেন হযরত ইবরাহীমেরই ভাতিজা হযরত লূত (আ)। শেষে তিনি হিজরাতকালেও নিজের চাচা ও চাচীর (হযরত সারাহ) সহযোগী হয়েছিলেন।

এখানে একটি সন্দেহ দেখা দেয় এবং এ সন্দেহটি নিরসন করার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ এক ব্যক্তি প্রশ্ন করতে পারে যে, তাহলে এ ঘটনার পূর্বে কি হযরত লূত (আ) কাফের ও মুশরিক ছিলেন এবং আগুন থেকে হযরত ইবরাহীমের নিরাপদে বের হয়ে আসার অলৌকিক কাণ্ড দেখার পর তিনি ঈমানের নিয়ামত লাভ করেন? যদি একথা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে নবুয়তের আসনে কি এমনকোন ব্যক্তি সমাসীন হতে পারেন যিনি পূর্বে মুশরিক ছিলেন? এর জবাব হচ্ছে, কুরআন এখানে فَآمَنَ لَهُ لُوطٌ এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছে। এ থেকে অনিবার্য হয়ে উঠে না যে, ইতিপূর্বে হযরত লুত বিশ্ব-জাহানের প্রভু আল্লাহকে না মেনে থাকবেন বা তার সাথে অন্য মাবুদদেরকেও শরীক করে থাকবেন বরং এ থেকে কেবলমাত্র এতটুকুই প্রমাণিত হয় যে, এ ঘটনার পর তিনি হযরত ইবরাহীমের রিসালাতের সত্যতা স্বীকার করেন এবং তার আনুগত্য গ্রহণ করেন। ঈমানের সাথে (لام) শব্দ ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয়কোন ব্যক্তির কথা মেনে নেয়া এবং তার আনুগত্য করা। হতে পারে হযরত লূত (আ) তখন ছিলেন একজন উঠতি বয়সের তরুণ এবং সচেতনভাবে নিজের চাচার শিক্ষার সাথে তিনি এ প্রথমবার পরিচিত হবার এবং তার রিসালাত সম্পর্কে জানার সুযোগ লাভ করে থাকবেন।

৪৫ .
অর্থাৎ তিনি আমার রবের জন্য হিজরত করছি। এখন আমার রব আমাকে যেখানে নিয়ে যাবেন আমি সেখানে যাব।
৪৬ .
অর্থাৎ তিনি আমাকে সহায়তা দান ও হেফাজত করার ক্ষমতা রাখেন এবং আমার পক্ষে তিনি যে ফয়সালা করবেন তা বিজ্ঞজনোচিত হবে।
৪৭.
হযরত ইসহাক (আ) ছিলেন তার পুত্র এবং হযরত ইয়াকুব ছিলেন পৌত্র। এখানে হযরত ইবরাহীমের (আ) অন্যান্য পুত্রদের উল্লেখ না করার কারণ হচ্ছে এই যে, ইবরাহীম সন্তানদের মাদয়ানী শাখায় কেবলমাত্র হযরত শো’আইব আলাইহিস সালামই নবুয়ত লাভ করেন এবং ইসমাঈলী শাখায় মুহাম্মাদ ﷺ এর নবুয়ত লাভ পর্যন্ত আড়াই হাজার বছরে আর কোন নবী আসেননি। পক্ষান্তরে হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম থেকে যে শাখাটি চলে তার মধ্যে একের পর এক হযরত ঈসা (আ) পর্যন্ত নবুয়ত ও কিতাবের নিয়ামত প্রদত্ত হতে থাকে।
৪৮.
হযরত ইবরাহীমের (আ) পরে যেসব নবীর আবির্ভাব হয় সবাই এর মধ্যে এসে গেছেন।
৪৯.
এখানে একথা বলাই উদ্দেশ্য যে, ব্যবিলনেরর যেসব শাসক, পণ্ডিত ও পুরোহিত হযরত ইবরাহীম (আ) এর দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল এবং সেখানকার যে সকল মুশরিক অধিবাসী চোখ বন্ধ করে ঐ জালেমদের আনুগত্য করেছিল তারা সবাই দুনিয়ার বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং এমনভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে যে, আজ দুনিয়ার কোথাও তাদের কোন নাম নিশানাও নেই। কিন্তু যে ব্যক্তিকে আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার অপরাধে তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে চেয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত যাকে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় স্বদেশভূমি ত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে আল্লাহ‌ এমন সফলতা দান করেন যে, চার হাজার বছর থেকে দুনিয়ার বুকে তার নাম সমুজ্জ্বল রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। দুনিয়ার সকল মুসলমান, খৃস্টান ও ইহুদী রব্বুল আলামীনের সেই খলিল তথা বন্ধুকে একযোগে নিজেদের নেতা বলে স্বীকার করে। এ চল্লিশ’শ বছরে দুনিয়া একমাত্র সেই পাক-পবিত্র ব্যক্তি এবং তার সন্তানদের থেকেই যা কিছু হিদায়াতের আলোকবর্তিকা লাভ করতে পেরেছে। আখেরাতে তিনি যে মহাপুরস্কার লাভ করবেন তাতো তার জন্য নির্ধারিত হয়েই আছে কিন্তু এ দুনিয়ায়ও তিনি যে মর্যাদা লাভ করেছেন তা দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধার প্রচেষ্টায় জীবনপাতকারীদের একজনও লাভ করতে পারেনি।
৫০ .
তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা আল আ’রাফ ১০; হূদ ৭; আল হিজর ৪-৫; আল আম্বিয়া ৫; আশ শু’আরা ৯; আন নামল৪; আস সাফ্‌ফাত ৪ ও আল কামার ২ রুকু।
.
৫১.
অর্থাৎ তাদের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হচ্ছো, যেমন সূরা আ’রাফে বলা হয়েছেঃ

إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ

“তোমরা যৌন কামনা পূর্ণ করার জন্য মহিলাদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে গিয়ে থাকো।”

৫২.
অর্থাৎ এ অশ্লীল কাজটি লুকিয়ে চাপিয়েও করো না বরং প্রকাশ্যে নিজেদের মজলিসে পরস্পরের সামনে বসে করে থাকো। একথাটিই সূরা আন নামলে এভাবে বলা হয়েছেঃ

أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ وَأَنْتُمْ تُبْصِرُونَ

“তোমরা কি এমনই বিগড়ে গিয়েছো যে, প্রকাশ্যে দর্শকমণ্ডলীর সম্মুখেই অশ্লীল কাজ করে থাকো? ”

.
.
৫৩ .
সূরা হূদ ও সূরা হিজরে এর যে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে তা হচ্ছে এই যে, লূতের জাতির ওপর আযাব নাযিল করার জন্য যেসব ফেরেশতাকে পাঠানো হয়েছিল তারা প্রথমে হযরত ইবরাহীমের কাছে হাজির হন এবং তাকে হযরত ইসহাকের এবং তার পর হযরত ইয়াকূবের জন্মেও সুসংবাদ দেন তারপর বলেন, লূতের জাতিকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের পাঠানো হয়েছে।
৫৪ .
“এ জনপদ” বলে লূত জাতির সমগ্র এলাকাকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ) এ সময় ফিলিস্তিনের জাবরুন (বর্তমান আল খলীল) শহরে থাকতেন। এ শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কয়েক মাইল দূরে মরুসাগরে (Dead Sea) অংশ রয়েছে। সেখানে পূর্বে বাস করতো লূত জাতির লোকেরা এবং বর্তমানে এ সমগ্র এলাকা রয়েছে সাগরের পানির তলায়। এ এলাকাটি নিম্নভূমির দিকে অবস্থিত এবং জাবরুনের উঁচু উঁচু পর্বতগুলো থেকে পরিষ্কার দেখা যায়। তাই ফেরেশতারা সেদিকে ইঙ্গিত করে হযরত ইবরাহীমকে বলেন, “আমরা এ জনপদটি ধ্বংস করে দেবো।”(দেখুন সূরা আশ শু’আরাঃ ১১৪ টীকা)
.
৫৫.
সূরা হূদে এ কাহিনীর প্রারম্ভিক অংশ এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, প্রথমে হযরত ইবরাহীম (আ) ফেরেশতাদেরকে মানুষের আকৃতিতে দেখে ভয় পেয়ে যান। কারণ এ আকৃতিতে ফেরেশতাদের আগমন কোন ভয়াবহ অভিযানের পূর্বাভাস দেয়। তারপর যখন তারা তাকে সুসংবাদ দান করেন এবং তার ভীতি দূর হয়ে যায় তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, লূতের জাতি হচ্ছে এ অভিযানের লক্ষ। তাই সে জাতির জন্য তিনি করুণার আবেদন জানাতে থাকেনঃ

فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ الرَّوْعُ وَجَاءَتْهُ الْبُشْرَى يُجَادِلُنَا فِي قَوْمِ لُوطٍ - إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّاهٌ مُنِيبٌ

“কিন্তু তার এ আবেদন গৃহীত হয়নি এবং বলা হয় এ ব্যাপারে এখন আর কিছু বলো না। তোমার রবের ফয়সালা হয়ে গেছে এ আযাবকে এখন আর ফেরানো যাবে না।”

يَا إِبْرَاهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا إِنَّهُ قَدْ جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ وَإِنَّهُمْ آتِيهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُودٍ

এ জবাবের মাধ্যমে হযরত ইবরাহীম (আ) যখন বুঝতে পারেন লূত জাতির জন্য আর কোন অবকাশের আশা নেই তখনই তার মনে জাগে হযরত লূতের চিন্তা। তিনি যা বলেন তা এখানে উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেন “সেখানে তো লূত রয়েছে।” অর্থাৎ এ আযাব যদি লূতের উপস্থিতিতে নাযিল হয় তাহলে তিনিও তার পরিবারবর্গ তা থেকে কেমন করে নিরাপদ থাকবেন।

৫৬ .
এ মহিলা সম্পর্কে সূরা তাহরীমের ১০ আয়াতে বলা হয়েছেঃ হযরত লূতের এই স্ত্রী তার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না। এ জন্য তার ব্যাপারে এ ফয়সালা করা হয় যে, একজন নবীর স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে।

সম্ভবত হিজরত করার পর হযরত লূত জর্দান এলাকায় বসতি স্থাপন করে থাকবেন এবং তখনই তিনি এ জাতির মধ্যে বিয়ে করে থাকবেন। কিন্তু তার সাহচর্যে জীবনের একটি বিরাট অংশ পার করে দেবার পরও এ মহিলা ঈমান আনেনি এবং তার সকল সহানুভূতি ও আকর্ষণ নিজের জাতির ওপরই কেন্দ্রীভূত থাকে। যেহেতু আল্লাহর কাছে আত্মীয়তা ও রক্ত সম্পর্কেও কোন গুরুত্ব নেই, প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাপারে ফয়সালা হয় তার ঈমান ও চরিত্রের ভিত্তিতে, তাই নবীর স্ত্রী হওয়ায় তার কোন লাভ হয়নি। তার পরিণাম তার স্বামীর অনুরূপ হয়নি বরং যে জাতির ধর্ম ও চরিত্র সে গ্রহণ করে রেখেছিল তার অনুরূপ হয়।

৫৭ .
এ বিব্রতবোধ ও সংকুচিত হৃদয় হবার কারণ এই ছিল যে, ফেরেশতারা উঠতি বয়সের সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী রূপ ধরে এসেছিলেন। হযরত লূত নিজের জাতির চারিত্রিক ও নৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাই তাদের আসা মাত্রই পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন এ জন্য যে, তিনি যদি এ মেহমানদেরকে অবস্থান করতে দেন তাহলে ঐ ব্যভিচারী জাতির হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে আর যদি অবস্থান করতে না দেন তাহলে সেটা হবে বড়ই অভদ্র আচরণ। তাছাড়া এআশঙ্কাও আছে, তিনি যদি এ মুসাফিরদেরকে আশ্রয় না দেন তাহলে অন্য কোথাও তাদের রাত কাটাতে হবে এবং এর অর্থ হবে যেন তিনি নিজেই তাদেরকে নেকড়ের মুখে ঠেলে দিলেন। এর পরের ঘটনা আর এখানে বর্ণনা করা হয়নি। সূরা হূদ ও কামারে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এ কিশোরদের আগমন সংবাদ শুনে শহরের বহু লোক হযরত লূতের গৃহে এসে ভীড় জমালো। তারা ব্যভিচার কর্মে লিপ্ত হবার উদ্দেশ্যে মেহমানদেরকে তাদের হাতে সোপর্দ করার জন্য চাপ দিতে লাগলো।
৫৮.
অর্থাৎ আমাদের ব্যাপারে। এরা আমাদের কোন ক্ষতি করবে এ ভয়ও করো না এবং এদের হাত থেকে কিভাবে আমাদের বাঁচাবে সে চিন্তাও করো না। এ সময়ই ফেরেশতারা হযরত লূতের কাছে এ রহস্য ফাঁস করেন যে, তারা মানুষ নন বরং ফেরেশতা এবং এ জাতির ওপর আযাব নাযিল করার জন্য তাদেরকে পাঠানো হয়েছে। সূরা হূদে এর বিস্তারিত বিবরণ এভাবে দেয়া হয়েছে, লোকেরা যখন একনাগাড়ে লূতের গৃহে প্রবেশ করে চলছিল এবং তিনি অনুভব করছিলেন এখন আর কোন ক্রমেই নিজের মেহমানদেরকে তাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন না তখন তিনি পেরেশান হয়ে চিৎকার করে বলেনঃ

لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ

“হায়! আমার যদি শক্তি থাকতো তোমাদের সোজা করে দেবার অথবা কোন শক্তিশালী সহায়তা আমি লাভ করতে পারতাম।”

এ সময় ফেরেশতারা বলেনঃ

يَا لُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ يَصِلُوا إِلَيْكَ

“হে লূত! আমরা তোমার রবের প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখ্‌খনো তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না।”

.
.
অনুবাদ: