পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

১৯০ আয়াত

১ ) মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় কাছে এসে গেছে, অথচ সে গাফলতির মধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আছে।
ٱقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِى غَفْلَةٍۢ مُّعْرِضُونَ ١
২ ) তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে যে উপদেশ আসে, তা তারা দ্বিধাগ্রস্তভাবে শোনে এবং খেলার মধ্যে ডুবে থাকে,
مَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍۢ مِّن رَّبِّهِم مُّحْدَثٍ إِلَّا ٱسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ ٢
৩ ) তাদের মন (অন্য চিন্তায়) আচ্ছন্ন। আর জালেমরা পরস্পরের মধ্যে কানাকানি করে যে, “এ ব্যক্তি মূলত তোমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কি, তাহলে কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর ফাঁদে পড়বে?”
لَاهِيَةًۭ قُلُوبُهُمْ ۗ وَأَسَرُّوا۟ ٱلنَّجْوَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ هَلْ هَـٰذَآ إِلَّا بَشَرٌۭ مِّثْلُكُمْ ۖ أَفَتَأْتُونَ ٱلسِّحْرَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُونَ ٣
৪ ) রসূল বললো, আমার রব এমন প্রত্যেকটি কথা জানেন যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে বলা হয়, তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
قَالَ رَبِّى يَعْلَمُ ٱلْقَوْلَ فِى ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ ۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ ٤
৫ ) তারা বলে, “বরং এসব বিক্ষিপ্ত স্বপ্ন, বরং এসব তার মনগড়া বরং এ ব্যক্তি কবি। নয়তো সে আনুক একটি নিদর্শন যেমন পূর্ববর্তীকালের নবীদেরকে পাঠানো হয়েছিল নিদর্শন সহকারে।”
بَلْ قَالُوٓا۟ أَضْغَـٰثُ أَحْلَـٰمٍۭ بَلِ ٱفْتَرَىٰهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌۭ فَلْيَأْتِنَا بِـَٔايَةٍۢ كَمَآ أُرْسِلَ ٱلْأَوَّلُونَ ٥
৬ ) অথচ এদের আগে আমি যেসব জনবসতিকে ধ্বংস করেছি, তাদের কেউ ঈমান আনেনি। এখন কি এরা ঈমান আনবে?
مَآ ءَامَنَتْ قَبْلَهُم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـٰهَآ ۖ أَفَهُمْ يُؤْمِنُونَ ٦
৭ ) আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম। তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো। ১০
وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًۭا نُّوحِىٓ إِلَيْهِمْ ۖ فَسْـَٔلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ٧
৮ ) সেই রসূলদেরকে আমি এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খেতো না এবং তারা চিরজীবিও ছিল না।
وَمَا جَعَلْنَـٰهُمْ جَسَدًۭا لَّا يَأْكُلُونَ ٱلطَّعَامَ وَمَا كَانُوا۟ خَـٰلِدِينَ ٨
৯ ) তারপর দেখে নাও আমি তাদের সাথে আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছি এবং তাদেরকে ও যাকে যাকে আমি চেয়েছি রক্ষা করেছি এবং সীমালংঘনকারীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। ১১
ثُمَّ صَدَقْنَـٰهُمُ ٱلْوَعْدَ فَأَنجَيْنَـٰهُمْ وَمَن نَّشَآءُ وَأَهْلَكْنَا ٱلْمُسْرِفِينَ ٩
১০ ) হে লোকেরা! আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদেরই কথা আছে, তোমরা কি বুঝ না? ১২
لَقَدْ أَنزَلْنَآ إِلَيْكُمْ كِتَـٰبًۭا فِيهِ ذِكْرُكُمْ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ١٠
১.
এর অর্থ হচ্ছে, কিয়ামত নিকটবর্তী। অর্থাৎ লোকদের নিজেদের কাজের হিসেব দেবার জন্য তাদের রবের সামনে হাজির হবার সময় আর দূরে নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন একথারই আলামত যে, মানবজাতির ইতিহাস বর্তমানে তার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে। এখন সে তার সূচনাকালের পরিবর্তে পরিণামের বেশী নিকটবর্তী হয়ে গেছে। সূচনা ও মধ্যবর্তীকালীন পর্যায় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং এবার শেষ পর্যায় শুরু হয়ে গেছে। নবী ﷺ তাঁর একটি হাদীসে একথাই বলেছেন। তিনি নিজের হাতের দু’টি আঙ্গুল পাশাপাশি রেখে বলেনঃ

بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ

“আমার আগমন এমন সময়ে ঘটেছে যখন আমি ও কিয়ামত এ দু’টি আঙ্গুলের মতো অবস্থান করছি।”

অর্থাৎ আমার পরে শুধু কিয়ামতই আছে, মাঝখানে অন্য কোন নবীর আগমনের অবকাশ নেই। যদি সংশোধিত হয়ে যেতে চাও তাহলে আমার দাওয়াত গ্রহণ করে সংশোধিত হও। আর কোন সুসংবাদদানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী আসবেন না।

২.
অর্থাৎ কোন সতর্ক সংকেত ও সতর্কবাণীর প্রতি দৃষ্টি দেয় না। নিজেরাও পরিণামের কথা ভাবে না, আর যে নবী তাদেরকে সতর্ক করার চেষ্টা করছেন তাঁর কথাও শোনে না।
৩.
অর্থাৎ কুরআনের যে নতুন সূরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিল হয় এবং তাদেরকে শুনানো হয়।
৪.
وَهُمْ يَلْعَبُونَ ---এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ ওপরে অনুবাদে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে খেলা মানে হচ্ছে এই জীবনের খেলা। আল্লাহ ও আখেরাতের ব্যাপারে গাফেল লোকেরা এ খেলা খেলছে। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে এই যে, তারা গুরুত্ব ও মনোযোগ সহকারে তা শোনে না বরং খেলা, ঠাট্রা-তামাসা ও কৌতুকচ্ছলে তা শুনে থাকে।
৫.
“পড়ে যেতে থাকবে” ---ও অনুবাদ হতে পারে এবং দু’টি অর্থই সঠিক। মক্কার যেসব বড় বড় কাফের সরদাররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের মোকাবিলা করার চিন্তায় বড়ই পেরেশান হয়ে পড়েছিল তারাই পরস্পর বসে বসে এই কানাকানি করতো। তারা বলতো, এ ব্যক্তি তো কোনক্রমে নবী হতেই পারে না। কারণ এতো আমাদেরই মতো মানুষ, খায় দায়, বাজারে ঘুরে বেড়ায়, স্ত্রী-সন্তানও আছে। কাজেই এর মধ্যে এমন নতুন কথা কি আছে যা তাঁকে আমাদের থেকে বিশিষ্ট করে এবং আমাদের মোকাবিলায় তাঁকে আল্লাহর সাথে একটি অস্বাভাবিক সম্পর্কের অধিকারী করে? তবে কিনা এ ব্যক্তির কথাবার্তায় এবং এর ব্যক্তিত্বের মধ্যে যাদু আছে। ফলে যে ব্যক্তি এর কথা কান লাগিয়ে শোনে এবং এর কাছে যায়, সে এর ভক্ত হয়ে পড়ে। কাজেই যদি নিজের ভালো চাও তাহলে এর কথায় কান দিয়ো না এবং এর সাথে মেলামেশা করো না। কারণ এর কথা শোনা এবং এর নিকটে যাওয়া সুস্পষ্ট যাদুর ফাঁদে নিজেকে আটকে দেয়ার মতই।

যে কারণে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে “যাদু”র অভিযোগ আনতো তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত প্রাচীন সীরাত লেখক মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (মৃত্যু ১৫২ হিঃ) তাঁর সীরাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, একবার উতবা ইবনে আবী রাবীআহ (আবু সুফিয়ানের শ্বশুর এবং কলিজা খাদক হিন্দার বাপ) কুরাইশ সরদারদেরকে বললো, যদি আপনারা পছন্দ করেন তাহলে আমি গিয়ে মুহাম্মাদের সাথে সাক্ষাত করি এবং তাকে বুঝাবার চেষ্টা করি। এটা ছিল হযরত হামযার (রা.) ইসলাম গ্রহণের পরবর্তীকালের ঘটনা। তখন নবী করীমের ﷺ সাহাবীগণের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছিল এবং এ অবস্থা দেখে কুরাইশ সরদাররা বড়ই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিল। লোকেরা বললো, হে আবুল ওলীদ! তোমার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তুমি অবশ্যি গিয়ে তার সাথে কথা বলো। সে নবী করীমের ﷺ কাছে গিয়ে বললো, “হে ভাতিজা! আমাদের এখানে তোমার যে মর্যাদা ছিল তা তুমি নিজেই জানো এবং বংশের দিক দিয়েও তুমি একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তুমি নিজের জাতির ওপর একটি বিপদ চাপিয়ে দিয়েছো? তুমি সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করেছো। সমগ্র জাতিকে বোকা ঠাউরেছো। তার ধর্ম ও উপাস্যদের দুর্নাম করেছো। মৃত বাপ-দাদাদের সবাইকে তুমি পথভ্রষ্ট ও কাফের বানিয়ে দিয়েছো। হে ভাতিজা! যদি এসব কথা ও কাজের মাধ্যমে দুনিয়ায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করাই তোমার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এসো আমরা সবাই মিলে তোমাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ দিয়ে দেবো যে, তুমি সবচেয়ে বড় ধনী হয়ে যাবে। নেতৃত্ব চাইলে আমরা তোমাকে নেতা মেনে নিচ্ছি। বাদশাহী চাইলে তোমাকে বাদশাহ বানিয়ে দিচ্ছি। আর যদি তোমার কোন রোগ হয়ে থাকে যে কারণে সত্যিই তুমি শয়নে-জাগরণে কিছু দেখতে পাচ্ছো, তাহলে আমরা সবাই মিলে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকের সহায়তায় তোমার রোগ নিরাময় করবো।” এসব কথা সে বলতে থাকলো এবং নবী ﷺ নীরবে সব শুনতে থাকলেন। যখন সে যথেষ্ট বলে ফেলেছে তখন নবী করীম ﷺ বললেন, “আবুল ওলীদ! আপনি যা কিছু বলতে চান সব বলে শেষ করেছেন, নাকি এখনো কিছু বলার বাকি আছে?” সে বললো, হ্যাঁ আমার বক্তব্য শেষ। তখন তিনি বললেন, আচ্ছা, তাহলে এখন আপনি আমার কথা শুনুন,

حم - تَنْزِيلٌ مِنَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ,

এরপর কিছুক্ষণ পর্যন্ত তিনি একনাগাড়ে সূরা হা-মীম আস সাজদাহ তেলাওয়াত করতে থাকলেন এবং উতবা পেছনে মাটির ওপর হাত ঠেকিয়ে দিয়ে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকলো। আটতিরিশ আয়াতে পৌঁছে তিনি সিজদা করলেন এবং তারপর মাথা উঠিয়ে উতবাকে বললেন, “হে আবুল ওলীদ! আমার যা কিছু বলার ছিল তা আপনি শুনে নিয়েছেন, এখন আপনার যা করার আপনি করবেন।”

উতবা এখান থেকে উঠে কুরাইশ সরদারদের কাছে ফিরে যেতে লাগলো। লোকেরা তাকে দূর থেকে আসতে দেখে বললো, “আল্লাহর কসম, আবুল ওলীদের চেহারা পাল্টে গেছে। যে চেহারা নিয়ে সে এখান থেকে গিয়েছিল এটা সে চেহারা নয়। তার ফিরে আসার সাথে সাথেই লোকেরা প্রশ্ন করলো, “বলো, হে আবুল ওলীদ! তুমি কি করে এলে? ” সে বললো, আল্লাহর কসম, আজ আমি এমন কালাম শুনেছি যা এর আগে কখনো শুনিনি। আল্লাহর কসম এ কবিতা নয়, যাদুও নয়, গণৎকারের ভবিষ্যদ্বাণীও নয়। হে কুরাইশ জনতা! আমার কথা মেনে নাও এবং এ ব্যক্তিকে এর অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। এর যেসব কথা আমি শুনেছি তা একদিন স্বরূপে প্রকাশিত হবেই। যদি আরবরা তার ওপর বিজয়ী হয় তাহলে তোমাদের ভাইয়ের রক্তপাতের দায় থেকে তোমরা মুক্ত থাকবে, অন্যেরা তার দায়ভার বহন করবে। আর যদি সে আরবদের ওপর বিজয়ী হয় তাহলে তার শাসন কর্তৃত্ব হবে তোমাদেরই শাসন কর্তৃত্ব এবং তার সম্মান তোমাদেরই সম্মানে রূপান্তরিত হবে।” লোকেরা বললো, “আল্লাহর কসম, হে আবুল ওলীদ! তুমিও তার যাদুতে আক্রান্ত হয়েছো।” সে বললো, “এটা আমার ব্যক্তিগত মত। এখন তোমরা নিজেরাই তোমাদের সিদ্ধান্ত নেবে। (ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, ৩১৩-১১৪পৃঃ) ইমাম বায়হাকী এ ঘটনা সম্পর্কে যেসব বর্ণনা সংগ্রহ করেছেন তার একটিতে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয়েছে যে, যখন নবী করীম ﷺ সূরা হা-মীম সাজদাহ তেলাওয়াত করতে করতে এ আয়াতে পৌঁছে গেলেন-

فَإِنْ أَعْرَضُوا فَقُلْ أَنْذَرْتُكُمْ صَاعِقَةً مِثْلَ صَاعِقَةِ عَادٍ وَثَمُودَ

(তবুও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলে দাও, আমি তো তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি এমন একটি আকস্মিক আযাবে পতিত হওয়া থেকে, যেমন আযাবে পতিত হয়েছিল আদ ও সামূদ।) তখন উতবাহ স্বতস্ফূর্তভাবে সামনের দিকে এগিয়ে এসে তাঁর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলে উঠলো, আল্লাহর দোহাই নিজের জাতির প্রতি করুণা করো।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ইবনে ইসহাক এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ একবার আরাশ গোত্রের একজন লোক কিছু উট নিয়ে মক্কায় এলো। আবু জেহেল তার উটগুলো কিনে নিলো। যখন সে দাম চাইলো তখন আবু জেহেল টালবাহানা করতে লাগলো। আরাশী ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত একদিন কা’বার হারামে কুরাইশ সরদারদেরকে ধরলো এবং প্রকাশ্য সমাবেশে ফরিয়াদ করতে থাকলো। অন্যদিকে হারাম শরীফের অন্য প্রান্তে নবী ﷺ বসে ছিলেন। কুরাইশ সরদাররা তাকে বললো, “আমরা কিছুই করতে পারবো না। দেখো, ঐ দিকে ঐ কোণে যে ব্যক্তি বসে আছে তাকে গিয়ে বলো। সে তার কাছ থেকে তোমার টাকা আদায় করে দেবে।” আরাশী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কুরাইশ সরদাররা পরস্পর বলতে লাগলো, “এবার মজা হবে।” আরাশী গিয়ে নবী করীমের ﷺ কাছে নিজের অভিযোগ পেশ করলো, তিনি তখনই উঠে দাঁড়ালেন এবং তাকে নিয়ে আবু জেহেলের গৃহের দিকে রওয়ানা দিলেন। সরদাররা তাদের পেছনে একজন লোক পাঠিয়ে দিল। আবু জেহেলের বাড়ীতে কি ঘটে তা সে সরদারদেরকে জানাবে। নবী ﷺ সোজা আবু জেহেলের দরজায় পৌঁছে গেলেন এবং শিকল ধরে নাড়া দিলেন। সে জিজ্ঞেস করলো “কে? ” তিনি জবাব দিলেন, “মুহাম্মাদ।” সে অবাক হয়ে বাইরে বের হয়ে এলো। তিনি তাকে বললেন, “এ ব্যক্তির পাওনা দিয়ে দাও।” সে কোন দ্বিরুক্তি না করে ভেতরে চলে গেলো এবং উটের দান এনে তার হাতে দিল। এ অবস্থা দেখে কুরাইশদের প্রতিবেদক হারাম শরীফের দিকে দৌড়ে গেলো এবং সরদারদেরকে সমস্ত ঘটনা শুনাবার পর বললো, আল্লাহর কসম, আজ এমন বিস্ময়কর ব্যাপার দেখলাম, যা এর আগে কখনো দেখিনি। হাকাম ইবনে হিশাম (অর্থাৎ আবু জেহেল) যখন গৃহ থেকে বের হয়ে মুহাম্মাদকে দেখলো তখনই তার চেহারার রং ফিকে হয়ে গেলো এবং যখন মুহাম্মাদ তাকে বললো, তার পাওনা দিয়ে দাও তখন এমন মনে হচ্ছিল যেন হাকাম ইবনে হিশামের দেহে প্রাণ নেই। (ইবনে হিশাম, ২ খণ্ড ২৯-৩০ পৃঃ)

এ ছিল ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের প্রভাব। আবার অন্যদিকে ছিল কালাম ও বাণীর প্রভাব, যাকে তারা যাদু মনে করতো এবং অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ লোকদেরকে এ বলে ভয় দেখাতো যে, এ লোকটির কাছে যেয়ো না, কাছে গেলেই তোমাদেরকে যাদু করে দেবে।

৬.
অর্থাৎ নবী কখনো মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব রটনার এই অভিযানের (Whispering Campaign) জবাবে এছাড়া অন্য কোন কথা বলেননি যে, “তোমরা যেসব কথা তৈরী করো, সেগুলো জোরে জোরে বলো বা চুপিসারে কানে কানে বলো, আল্লাহ সবই শোনেন ও জানেন। তিনি কখনো অন্যায়পন্থী শত্রুর সাথে মুখোমুখি বিতর্ক করেন না।
৭.
এর পটভূমি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের প্রভাব যখন ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, মক্কার সরদাররা পরস্পর পরামর্শ করে এ সিদ্দান্তে পৌঁছলো যে, তাঁকে মোকাবিলা করার জন্য একটি জোরদার প্রচারাভিযান চালাতে হবে। মক্কায় যিয়ারত করার জন্য যে ব্যক্তিই আসবে তার মনে পূর্বাহ্ণেই তাঁর বিরুদ্ধে এত বেশী কুধারণা সৃষ্টি করে দিতে হবে যার ফলে সে তার কোন কথায় কান দিতে রাজিই হবে না। এমনিতে এ অভিযান বছরের বারো মাসই জারি থাকতো কিন্তু বিশেষ করে হজ্জের মওসুমে বিপুল সংখ্যক লোক চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হতো, তারা বাইর থেকে আগত সকল যিয়ারতকারীর তাঁবুতে গিয়ে তাদেরকে এই বলে সতর্ক করে দিতো যে, এখানে এমন এমন ধরনের একজন লোক আছে, তার ব্যাপারে সাবধান থেকো। এসব আলোচনার সময় নানান ধরনের কথা বলা হতো। কখনো বলা হতো, এ ব্যক্তি যাদুকর। কখনো বলা হতো, সে নিজেই একটা বাণী রচনা করে বলছে এটা আল্লাহর বাণী। কখনো বলা হতো, আরে হ্যাঁ তা আবার এমন কি বাণী! ডাহা পাগলের প্রলাপ এবং অগোছালো চিন্তার একটা আবর্জনা স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। কখনো বলা হতো, কিছু কবিত্বমূলক ভাব-কল্পনা ও ছন্দ-গাঁথাকে সে আল্লাহর বাণী নাম দিয়ে রেখেছে। যেনতেনভাবে লোকদেরকে প্রতারিত করাই ছিল উদ্দেশ্য। কোন একটি কথার ওপর অবিচল থেকে একটি মাপাজোকা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা পেশ করছিল না। কারণ সত্যের কোন প্রশ্নই তাদের সামনে ছিল না। কিন্তু এ মিথ্যা প্রচারণার ফল যা হলো তা হচ্ছে এই যে, তারা নিজেরাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম দেশের সবর্ত্র ছড়িয়ে দিল। মুসলমানদের বছরের পর বছরের প্রচেষ্টায় তার যে প্রচার ও পরিচিত হওয়া সম্ভবপর ছিল না কুরাইশদের এ বিরোধিতার অভিযানে তা মাত্র সামান্য কিছু সময়ের মধ্যেই হয়ে গেলো। প্রত্যেক ব্যক্তির মনে একটি প্রশ্ন জাগলো, যার বিরুদ্ধে এ বিরাট অভিযান, এ মারাত্মক অভিযোগ, কে সেই ব্যক্তি? আবার অনেকে ভাবলো, তার কথা তো শোনা উচিত। আমরা তো আর দুধের শিশু নই যে, অযথা তার কথায় পথভ্রষ্ট হবো।

এর একটি মজার দৃষ্টান্ত হচ্ছে তোফাইল ইবনে আমর দাওসীর ঘটনা। ইবনে ইসহাক বিস্তারিত আকারে তাঁর নিজের মুখেই এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলছেনঃ আমি দাওস গোত্রের একজন কবি ছিলাম। কোন কাজে মক্কায় গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছতেই কুরাইশদের কয়েকজন লোক আমাকে ঘিরে ফেললো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে আমাকে অনেক কথা বললো। ফলে তাঁর সম্পর্কে আমার মনে খারাপ ধারণা জন্মালো। আমি স্থির করলাম, তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকবো। পরদিন আমি হারাম শরীফে গেলাম। দেখলাম তিনি কা’বা গৃহের কাছে নামায পড়ছেন। তাঁর মুখ নিঃসৃত কয়েকটি বাক্য আমার কানে পড়লো। আমি অনুভব করলাম, বড় চমৎকার বাণী। মনে মনে বললাম, আমি কবি, যুবক, বুদ্ধিমান। আমি কোন শিশু নই যে, ঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবো না। তাহলে এ ব্যক্তি কি বলেন, এঁর সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করি না কেন। তাই নবী ﷺ যখন নামায শেষ করে চলে যেতে লাগলেন তখন আমি তাঁর পিছু নিলাম। তাঁর গৃহে পৌঁছে তাঁকে বললাম, আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার সম্পর্কে আমাকে এসব কথা বলেছিল, ফলে আমি আপনার ব্যাপারে এতই খারাপ ধারণা পোষণ করেছিলাম যে, নিজের কানে তুলো ঠেসে দিয়েছিলাম, যাতে আপনার কথা শুনতে না পাই। কিন্তু এখনই যে কয়েকটি বাক্য আমি আপনার মুখ থেকে শুনেছি তা আমার কাছে বড়ই চমৎকার মনে হয়েছে। আপনি কি বলেন, আমাকে একটু বিস্তারিতভাবে জানান। জবাবে নবী ﷺ আমাকে কুরআনের একটি অংশ শুনালেন। তাতে আমি এত বেশী প্রভাবিত হয়ে পড়লাম যে, তখনই ইসলাম গ্রহণ করে ফেললাম। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে আমি নিজের পিতা ও স্ত্রীকে মুসলমান করলাম। এরপর নিজের গোত্রের মধ্যে অবিরাম ইসলাম প্রচারের কাজ করতে লাগলাম। এমন কি খন্দকের যুদ্ধের সময় পর্যন্ত আমার গোত্রের সত্তর আশিটি পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে ফেললো। (ইবনে হিশাম, ২ খণ্ড, ২২-২৪ পৃঃ)

ইবনে ইসহাক যে আর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা থেকে জানা যায় যে, কুরাইশ সরদাররা নিজেদের মাহফিলগুলোতে নিজেরাই একথা স্বীকার করতো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে তারা যেসব কথা তৈরী করে সেগুলো নিছক মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি লিখেছেনঃ একটি মজলিসে নযর ইবনে হারেস বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলে, “তোমরা যেভাবে মুহাম্মাদের মোকাবিলা করছো তাতে কোন কাজ হবে না। সে যখন যুবক ছিল তখন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সদাচারী ব্যক্তি ছিল। সবচেয়ে বড় সত্যনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বেশী বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত ছিল। আর এখন তার চুল সাদা হতে যাচ্ছে, এখন তোমরা বল কিনা সে যাদুকর, গণক, কবি, পাগল। আল্লাহর কসম সে যাদুকর নয়। আমি যাদুকরদের দেখেছি এবং তাদের ঝাড়ফুঁক সম্পর্কেও জানি। আল্লাহর কসম, সে গণক নয়। আমি গণকদের তন্ত্রমন্ত্র শুনেছি, তারা যেসব রহস্যময় ও বহুমুখী কথা বলে থাকে তা আমি জানি। আল্লাহর কসম, সে কবিও নয়। কবিতার বিভিন্ন প্রকারের সাথে আমি পরিচিত। তাঁর বাণী এর কোন প্রকারের মধ্যেই পড়ে না। আল্লাহর কসম, সে পাগলও নয়। পাগল যে অবস্থায় থাকে এবং সে যে প্রলাপ বকে সে ব্যাপারে কি আমরা কেউ অনভিজ্ঞ? হে কুরাইশ সরদাররা! অন্য কিছু চিন্তা করো। তোমরা যে বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছো এসব ঠুনকো কথায় তাঁকে পরাজিত করবে, ব্যাপারটা অতটা সহজ নয়।” এরপর সে এই প্রস্তাব পেশ করলো, আরবের বাহির থেকে রুস্তম ও ইসফিনদিয়ারের কাহিনী এনে ছড়াতে হবে। লোকেরা সেদিকে আকৃষ্ট হবে এবং তা তাদের কাছে কুরআনের চাইতেও বেশী বিস্ময়কর মনে হবে। সেই অনুসারে কিছুদিন এই পরিকল্পনা কার্যকর করার কাজ চলতে লাগলো এবং নযর নিজেই গল্প বলার কাজ শুরু করে দিল। (ইবনে হিশাম, ১ খণ্ড, ৩২০-৩২১পৃঃ)

.
৮.
এ সংক্ষিপ্ত বাক্যে নিদর্শন দেখাবার দাবীর যে জবাব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে তিনটি বিষয় রয়েছে। এক, পূর্ববর্তী রসূলদেরকে যে ধরনের নিদর্শন দেয়া হয়েছিল তোমরা তেমনি ধরনের নিদর্শন চাচ্ছো? কিন্তু তোমরা ভুলে যাচ্ছো হঠকারী লোকেরা সেসব নিদর্শন দেখেও ঈমান আনেনি। দুই, তোমরা নিদর্শনের দাবী তো করছো কিন্তু একথা মনে রাখছো না যে, সুস্পষ্ট মু’জিযা স্বচক্ষে দেখে নেবার পরও যে জাতি ঈমান আনতে অস্বীকার করেছে তারা এরপর শুধু ধ্বংসই হয়ে গেছে। তিন, তোমাদের চাহিদা মতো নিদর্শনাবলী না পাঠানো তো তোমাদের প্রতি আল্লাহর একটি বিরাট মেহেরবানী। কারণ এ পর্যন্ত তোমরা আল্লাহর হুকুম শুধুমাত্র অস্বীকারই করে আসছো কিন্তু এজন্য তোমাদের ওপর আযাব পাঠানো হয়নি। এখন কি তোমরা নিদর্শন এজন্য চাচ্ছো যে, যেসব জাতি নিদর্শন দেখার পরও ঈমান আনেনি এবং এজন্য তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তোমরাও তাদের মতো একই পরিণতির সম্মুখীন হতে চাও?
৯.
এটি হচ্ছে, “এ ব্যক্তি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ” তাদের এ উক্তির জবাব। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মানবিক সত্তাকে তাঁর নবী না হওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে পেশ করতো। জবাব দেয়া হয়েছে যে, পূর্ব যুগের যেসব লোককে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে বলে তোমরা মানো তাঁরা সবাই-ই মানুষ ছিলেন এবং মানুষ থাকা অবস্থায়ই তাঁরা আল্লাহর অহী লাভ করেছিলেন। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইয়াসীন, ১১ টীকা)
১০.
অর্থাৎ যে ইহুদীরা ইসলাম বৈরিতার ক্ষেত্রে আজ তোমাদের সাথে গলা মিলিয়ে চলছে এবং তোমাদেরকে বিরোধিতা করার কায়দা কৌশল শেখাচ্ছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, মূসা ও বনী ইসরাঈলের অন্যান্য নবীগণ কী ছিলেন? মানুষ ছিলেন, না অন্য কোন জীব?
.
১১.
অর্থাৎ পূর্ববর্তী ইতিহাসের শিক্ষা শুধুমাত্র এতটুকু কথা বলে না যে, পূর্বে যেসব রসূল পাঠানো হয়েছিল তারা মানুষ ছিলেন বরং একথাও বলে যে, তাদের সাহায্য ও সমর্থন করার এবং তাদের বিরোধিতাকারীদেরকে ধ্বংস করে দেবার যতগুলো অঙ্গীকার আল্লাহ তাদের সাথে করেছিলেন সবই পূর্ণ হয়েছে এবং যেসব জাতি তাদের প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছিল তারা সবাই ধ্বংস হয়েছে। কাজেই এখন নিজেদের পরিণতি তোমরা নিজেরাই চিন্তা করে নাও।
১২.
মক্কার কাফেররা কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অবিন্যস্তভাবে যেসব কথা বলে চলছিল যে, তিনি যা এনেছেন তা কবিত্ব, যাদু, বিভ্রান্ত স্বপ্ন, মনগড়া কাহিনী ইত্যাদি। এটি হচ্ছে সেগুলোর একটি সম্মিলিত জবাব। এতে বলা হচ্ছে, এ কিতাবে এমন কি অভিনব কথা বলা হচ্ছে যা তোমরা বুঝতে পারছো না, যে কারণে সে সম্পর্কে তোমরা এত বেশী বিপরীতধর্মী মত গঠন করছো? এর মধ্যে তো তোমাদের নিজেদের কথাই বলা হয়েছে। তোমাদেরই মনস্তত্ব ও তোমাদেরই ব্যবহারিক জীবনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদেরই স্বভাব, প্রকৃতি, গঠনাকৃতি এবং সূচনা ও পরিণামের কথা বলা হয়েছে। তোমাদেরই পরিবেশ থেকে এমনসব নিদর্শন বাছাই করে করে পেশ করা হয়েছে যা প্রকৃত সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে। তোমাদেরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ থেকে দোষ-গুণের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখানো হচ্ছে, যা সঠিক বলে তোমাদের নিজেদের বিবেকই সাক্ষ্য দেয়। এসব কথার মধ্যে কী এমন জটিল বিষয় আছে, যা বুঝতে তোমাদের বুদ্ধিবৃত্তি অক্ষম?
অনুবাদ: