আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
লুকের বর্ণনা অনুসারে হযরত ইয়াহইয়া (আ) ছিলেন, হযরত ঈসা (আ) চেয়ে ৬ মাসের বড়। তাঁর মাতা হযরত ঈসার (আ) মাতার নিকটাত্মীয়া ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর বয়সে তিনি কার্যকরভাবে নবুওয়াতের দায়িত্ব লাভ করেন। যোহনের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ট্রান্স জর্ডন এলাকায় আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেবার কাজ শুরু করেন। তিনি বলতেনঃ
“আমি প্রান্তরে এক জনের রব যে ঘোষণা করিতেছে তোমরা প্রভুর সরল পথ ধর।” (যোহন১: ২৩)
মার্কের বর্ণনা মতে তিনি লোকদের পাপের জন্য তাদের তাওবা করাতেন এবং তাওবাকারীদেরকে বাপ্তাইজ করতেন। অর্থাৎ তাওবা করার পর তাদেরকে গোসল করাতেন, যাতে আত্মা ও শরীর উভয়ই পবিত্র হয়ে যায়। ইয়াহুদিয়া (যিহূদা) ও জেরুসালেমের অধিকাংশ লোক তাঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর দ্বারা বাপ্তাইজিত হচ্ছিল। (মার্ক ১: ৪-৫) এ জন্য তিনি বাপ্তাইজক ইয়াহইয়া (Jhon The Baptist) নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন। সাধারণভাবে বনী ইসরাঈল তাঁর নবুওয়াত স্বীকার করে নিয়েছিল। (মথি২১: ২৬) ঈসা আলাইহিস সালামের উক্তি ছিল, “স্ত্রী লোকের গর্ভজাত সকলের মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক হইতে মহান কেহই উৎপন্ন হয় নাই।” (মথি ১১: ১১)।
তিনি উটের লোমের কাপড় পরতেন, চর্মপটুকা কোমরে বাঁধতেন এবং তার খাদ্য ছিল পঙ্গপাল ও বনমধু। (মথি৩: ৪) এই ফকিরী জীবন যাপনের সাথে সাথে তিনি প্রচার করে বেড়াতেনঃ “মন ফিরাও (অর্থাৎ তাওবা কর) কেননা স্বর্গ রাজ্য সন্নিকট হইল।” (মথি৩: ২) অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতের দাওয়াতের সূচনা হতে যাচ্ছে। এ কারণে তাঁকে সাধারণ হযরত ঈসার (আ) ‘আরহাস’ বলা হতো। কুরআন মজীদেও তাঁর সম্পর্কে একথাই এভাবে বলা হয়েছেঃ
مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِنَ اللَّهِ
অর্থাৎ “সে আল্লাহর বাণী সত্যতার সাক্ষ্যদানকারী”(আলে ইমরান ৩৯) তিনি লোকদের নামায পড়ার ও রোযা রাখার উপদেশ দিতেন (মথি ৯: ১৪, লুক, ৫: ৩৩, লুক১১: ১)
তিনি লোকদের বলতেন, “যাহার দুইটি আঙ্রাখা আছে, সে, যাহার নাই, তাহাকে একটি দিউক; আর যাহার কাছে খাদ্যদ্রব্য আছে সেও তদ্রূপ করুক।” কর গ্রাহীরাও তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, গুরু আমরা কি করবো? তাতে তিনি জবাব দেন, “তোমাদের জন্য যাহা নিরূপিত তাহার অধিক আদায় করিও না।” সৈনিকরা জিজ্ঞেস করলো, আমাদের প্রতি কি নির্দেশ? জবাব দেন, “কাহারও প্রতি দৌরাত্ম্য করিও না, অন্যায় পূর্বক কিছু আদায়ও করিও না এবং তোমাদের বেতনে সন্তুষ্ট থাকিও।” (লুক ৩: ১০-১৪) বনী ইসরাঈলদের বিপথগামী উলামা, ফরীশী ও সদ্দুকীরা তাঁর কাছে বাপ্তাইজ হবার জন্য এলে তিনি তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেন, “হে সর্পের বংশেরা আগামী কোপ হইতে পলায়ন করিতে তোমাদিগকে কে চেতনা দিল? . . . . . . . . . . . . . . . আর ভাবিও না যে, তোমরা মনে মনে বলিতে পার আব্রাহাম আমাদের পিতা, ……………… আর এখন গাছগুলোর মুলে কুড়াল লাগান আছে, অতএব যে কোন গাছে উত্তম ফল ধরে না তাহা কাটিয়া আগুনে ফেলিয়া দেওয়া যায়।” (মথি ৩: ৭-১০)
তাঁর যুগের ইহুদী শাসনকর্তা হীরোদ এন্টিপাসের রাজ্যে তিনি সত্যের দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই শাসনকর্তা ছিল আপাদমস্তক রোমীয় সভ্যতার প্রতিভূ। তারই কারণে সারাদেশে দুষ্কৃতি, নৈতিকতা বিরোধী ও আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতামূলক কার্যকলাপ প্রসার লাভ করছিল। সে নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হিরোদিয়াসকে নিজের গৃহে রক্ষিতা রেখেছিল। হযরত ইয়াহইয়াএ জন্য হিরোদকে ভর্ৎসনা করেন এবং তার পাপাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এ অপরাধে হিরোদ তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। তবুও সে তাঁকে একজন পবিত্রাত্মা ও সৎকর্মশীল মনে করে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতো এবং জনগণের মধ্যে তাঁর প্রভাবের কারণে তাঁকে ভয়ও করতো। কিন্তু হিরোদিয়াস মনে করতো, ইয়াহইয়া, আলাইহিস সালাম জনগণের মধ্যে যে নৈতিক চেতনা সঞ্চার করেছেন তার ফলে জনগণের দৃষ্টিতে তার মতো মেয়েরা ঘৃণিত হয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁর প্রাণ সংহারের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত হিরোদের জন্ম বার্ষিকী উৎসবে সে তার কাংখিত সুযোগ পেয়ে যান। উৎসবে তার মেয়ে মনোমুগ্ধকর নৃত্য প্রদর্শন করে হিরোদের চিত্ত জয় করে। হিরোদ সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বলে, কি পুরস্কার চাও বলো। মেয়ে তার ব্যভিচারী মাকে জিজ্ঞেস করে, কি চাইবো? মা বলে, ইয়াহিয়ার মস্তক চাও। তাই সে হিরোদের সামনে হাত জোড় করে বলে, জাহাঁপনা! আমাকে এখনি ইয়াহইয়া বাপ্তাইজকের মাথা একটি থালায় করে আনিয়ে দিন। হিরোদ একথা শুনে বড়ই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রিয়ার মেয়ের দাবী না মেনে উপায় ছিল না। সে তৎক্ষণাত কারাগার থেকে ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের মাথা কেটে আনলো এবং তা একটি থালায় রেখে নর্তকীকে নজরানা দিল। (মথি ১৪: ৩-১২, মার্ক ৬: ১৭-১৯ ও লুক ৩: ১৯-২০)