পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

২৬৯ আয়াত

১০৭ ) তার মধ্যে তোমরা কোন উঁচু নিচু ও ভাঁজ দেখতে পাবে না। ৮৩
لَّا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًۭا وَلَآ أَمْتًۭا ١٠٧
১০৮ ) --সেদিন সবাই নকীবের আহবানে সোজা চলে আসবে, কেউ সামান্য দর্পিত ভংগীর প্রকাশ ঘটাতে পারবে না এবং করুণাময়ের সামনে সমস্ত আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে যাবে, মৃদু খসখস শব্দ ৮৪ ছাড়া তুমি কিছুই শুনবে না।
يَوْمَئِذٍۢ يَتَّبِعُونَ ٱلدَّاعِىَ لَا عِوَجَ لَهُۥ ۖ وَخَشَعَتِ ٱلْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَـٰنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًۭا ١٠٨
১০৯ ) সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি করুণাময় কাউকে অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করেন। ৮৫
يَوْمَئِذٍۢ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَـٰعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحْمَـٰنُ وَرَضِىَ لَهُۥ قَوْلًۭا ١٠٩
১১০ ) -তিনি লোকদের সামনের পেছনের সব অবস্থা জানেন এবং অন্যেরা এর পুরো জ্ঞান রাখে না। ৮৬
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِۦ عِلْمًۭا ١١٠
১১১ ) -লোকদের মাথা চিরঞ্জীব ও চির প্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে ঝুঁকে পড়বে, সে সময় যে জুলুমের গোনাহের ভার বহন করবে সে ব্যর্থ হবে।
۞ وَعَنَتِ ٱلْوُجُوهُ لِلْحَىِّ ٱلْقَيُّومِ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًۭا ١١١
১১২ ) আর যে ব্যক্তি সৎকাজ করবে এবং সেই সাথে সে মুমিনও হবে তার প্রতি কোন জুলুম বা অধিকার হরণের আশঙ্কা নেই। ৮৭
وَمَن يَعْمَلْ مِنَ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًۭا وَلَا هَضْمًۭا ١١٢
১১৩ ) আর হে মুহাম্মাদ! এভাবে আমি একে আরবী কুরআন বানিয়ে নাযিল করেছি ৮৮ এবং এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সতর্কবাণী করেছি হয়তো এরা বক্রতা থেকে বাঁচবে বা এদের মধ্যে এর বদৌলতে কিছু সচেতনতার নিদর্শন ফুটে উঠবে। ৮৯
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَـٰهُ قُرْءَانًا عَرَبِيًّۭا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ ٱلْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًۭا ١١٣
১১৪ ) কাজেই প্রকৃত বাদশাহ আল্লাহ‌ হচ্ছেন উন্নত ও মহান। ৯০ আর দেখো, কুরআন পড়ার ব্যাপারে দ্রুততা অবলম্বন করো না যতক্ষণ না তোমার প্রতি তার অহী পূর্ণ হয়ে যায় এবং দোয়া করো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও। ৯১
فَتَعَـٰلَى ٱللَّهُ ٱلْمَلِكُ ٱلْحَقُّ ۗ وَلَا تَعْجَلْ بِٱلْقُرْءَانِ مِن قَبْلِ أَن يُقْضَىٰٓ إِلَيْكَ وَحْيُهُۥ ۖ وَقُل رَّبِّ زِدْنِى عِلْمًۭا ١١٤
১১৫ ) আমি ৯২ এর আগে আদমকে একটি হুকুম দিয়েছিলাম ৯৩ কিন্তু সে ভুলে গিয়েছে এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ় সংকল্প পাইনি। ৯৪
وَلَقَدْ عَهِدْنَآ إِلَىٰٓ ءَادَمَ مِن قَبْلُ فَنَسِىَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُۥ عَزْمًۭا ١١٥
১১৬ ) স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা করো, তারা সবাই সিজদা করলো কিন্তু একমাত্র ইবলীস অস্বীকার করে বসলো।
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِـَٔادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ أَبَىٰ ١١٦
৮৩.
পরকালীন জগতে পৃথিবী যে নতুন রূপ নেবে কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ইনশিকাকে বলা হয়েছে إِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ ”যখন পৃথিবী বিস্তৃত করে দেয়া হবে।” সূরা ইনফিতারের বলা হয়েছে إِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ “যখন সাগর চিরে ফেলা হবে।” এর অর্থ সম্ভবত এই যে, সমুদ্রের তলদেশ ফেটি যাবে এবং সমস্ত পানি পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে চলে যাবে। সূরা তাকবীররে বলা হয়েছেঃ إِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ ”যখন সমুদ্র ভরে দেয়া হবে বা সমান করে দেয়া হবে।” এখানে বলা হচ্ছে যে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করে সারা পৃথিবীকে একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে। মনের পাতায় এর যে আকৃতি গড়ে উঠে তা হচ্ছে এই যে, পরকালীন দুনিয়ায় সমস্ত সমুদ্র ভরাট করে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে উঁচু নীচু সমান করে, বন-জংগল সাফ করে পুরোপুরি একটি বলের গাত্রাবরণের মতো সমান ও মসৃণ করে দেয়া হবে। এ আকৃতি সম্পর্কে সূরা ইবরাহীমের ৪৮আয়াতে বলা হয়েছে يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ “এমন দিন যখন পৃথিবীকে পরিবর্তিত করে ভিন্ন কিছু করে দেয়া হবে।” এ আকৃতির পৃথিবীর ওপর হাশর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ‌ সেখানে আদালত তথা ন্যায়বিচার কায়েম করবেন। তারপর সবশেষে তাকে যে আকৃতি দান করা হবে সূরা যুমারের ৭৪ আয়াতে তা এভাবে বলা হয়েছেঃ

وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي صَدَقَنَا وَعْدَهُ وَأَوْرَثَنَا الْأَرْضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَاءُ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ

অর্থাৎ মুত্তাকীরা “বলবে, সেই আল্লাহর শোকর যিনি আমাদের দ্বারা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা এ জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা নিজেদের জায়গা বানিয়ে নিতে পারি। কাজেই সৎকর্মশীলদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।”

এ থেকে জানা যায়, সবশেষে এ সমগ্র পৃথিবীটিকেই জান্নাতে পরিণত করা হবে এবং আল্লাহর মুত্তাকী ও সৎকর্মশীল বান্দারা হবে এর উত্তরাধিকারী। সে সময় সারা পৃথিবী একটি দেশে পরিণত হবে। পাহাড়-পর্বত, সাগর, নদী, মরুভূমি আজ পৃথিবীকে অসংখ্য দেশে বিভক্ত করে রেখেছে এবং এ সাথে বিশ্বমানবতাকেও বিভক্ত করে দিয়েছে। এগুলোর সেদিন কোন অস্তিত্বই থাকবে না। (উল্লেখ্য, সাহাবা ও তাবেঈদের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা.) ও কাতাদাহও এ মত পোষন করতেন যে জান্নাত এ পৃথিবীতেই প্রতিষ্ঠিত হবে। সূরা নাজম এর عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى - عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى আয়াতের ব্যাখ্যা তারা এভাবে করেন যে, এখানে এমন জান্নাতের কথা বলা হয়েছে যেখানে এখন শহীদদের রূহ রাখা হয়।)

৮৪.
মূলে ‘হাম্স’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি পায়ের আওয়াজ, চুপিচুপি কথা বলার আওয়াজ, উটের চলার আওয়াজ এবং আরো এ ধরনের হালকা আওয়াজের জন্য বলা হয়। এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে, সেখানে চলাচলকারীদের পায়ের আওয়াজ ছাড়া চুপিচুপি গুনগুন করে কথা বলার কোন আওয়াজ শোনা যাবে না। চতুর্দিকে একটি ভয়ংকর ভীতিপ্রদ পরিবেশ বিরাজ করবে।
.
৮৫.
এ আয়াতের দু’টি অনুবাদ হতে পারে। একটি অনুবাদ আমরা অবলম্বন করেছি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, “সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি কারো পক্ষে করুণাময় এর অনুমতি দেন এবং তার জন্য কথা শুনতে রাজি হয়ে যান।” এখানে এমন ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর প্রকৃত ব্যাপারও এই যে, কিয়ামতের দিন কারো সুপারিশ করার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মুখ খোলা তো দূরের কথা, টুঁশব্দটি করারও কারোর সাহস হবে না। আল্লাহ‌ যাকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র সেই-ই সুপারিশ করতে পারবে। এ দু’টি কথা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। একদিকে বলা হয়েছেঃ

مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ

“কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে সুপারিশ করতে পারে? ” (আল বাকারাহ, ২৫৫ আয়াত)

আরো বলা হয়েছেঃ

يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا لَا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا

“সেদিন যখন রূহ ও ফেরেশতারা সবাই কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াবে, একটুও কথা বলবে না, শুধুমাত্র সে-ই বলতে পারবে যাকে করুণাময় অনুমতি দেবেন এবং যে ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।” (আন নাবা, ৩৮ আয়াত)

অন্যদিকে বলা হয়েছেঃ

لَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ

“আর তারা কারোর সুপারিশ করে না সেই ব্যক্তির ছাড়া যার পক্ষে সুপারিশ শোনার জন্য (রহমান) রাজী হবেন এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে থাকে।” (আল আম্বিয়া, ২৮ আয়াত)

আরো বলা হয়েছেঃ

وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى

“কত ফেরেশতা আকাশে আছে, তাদের সুপারিশ কোনই কাজে লাগবে না, তবে একমাত্র তখন যখন আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নেবার পর সুপারিশ করা হবে এবং এমন ব্যক্তির পক্ষে করা হবে যার জন্য তিনি সুপরিশ শুনতে চান এবং পছন্দ করেন। (আন নাজম, ২৬ আয়াত)

৮৬.
সুপারিশের প্রতি এ বিধি-নিষেধ আরোপিত কেন, এর কারণ এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। ফেরেশতা, আম্বিয়া বা আউলিয়া যে-ই হোন না কেন কারো রেকর্ড সম্পর্কে এদের কারো কিছুই জানা নেই এবং জানার কোন ক্ষমতাও এদের নেই। দুনিয়ায় কে কি করতো এবং আল্লাহর আদালতে কে কোন ধরনের ভূমিকা ও কার্যাবলী এবং কেমন দায়িত্বের বোঝা নিয়ে এসেছে তাও কেউ জানে না। অপরদিকে আল্লাহ‌ প্রত্যেকের অতীতের ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড জানেন। তার বর্তমান ভূমিকাও তিনি জানেন। সে সৎ হলে কেমন ধরনের সৎ। অপরাধী হলে কোন পর্যায়ের অপরাধী। তার অপরাধ ক্ষমা যোগ্য কি না। সে কি পূর্ণ শাস্তি লাভের অধিকারী অথবা কম শাস্তির। এহেন অবস্থায় কেমন করে ফেরেশতা, নবী ও সৎলোকদেরকে তাদের ইচ্ছা মতো যার পক্ষে যে কোন ধরনের সুপারিশ তারা চায় তা করার জন্য তাদেরকে অবাধ অনুমতি দেয়া যেতে পারে? একজন সাধারণ অফিসার তার নিজের ক্ষুদ্রতম বিভাগে যদি নিজের প্রত্যেকটি বন্ধু ও আত্মীয়ের সুপারিশ শুনতে শুরু করে দেন তাহলে মাত্র চারদিনেই সমগ্র বিভাগটিকে ধ্বংস করে ছাড়বেন। তাহলে আকাশ ও পৃথিবীর শাসনকর্তার কাছ থেকে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, তার দরবারে ব্যাপকভাবে সুপারিশ চলতে থাকবে এবং প্রত্যেক বুযর্গ সেখানে গিয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করিয়ে আনবেন। অথচ তাদের কেউই যাদের সুপারিশ তারা করছেন তাদের কার্যকলাপ কেমন তা জানেন না। দুনিয়ায় যে কর্মকর্তা দায়িত্বের সামান্যতম অনুভূতিও রাখেন তার কর্মনীতি এ পর্যায়েরই হয়ে থাকে যে, যদি তার কোন বন্ধু তার কোন অধস্তন কর্মচারীর সুপারিশ নিয়ে আসে তাহলে সে তাকে বলে, আপনি জানেন না এ ব্যক্তি কত বড় ফাঁকিবাজ, দায়িত্বহীন, ঘুষখোর ও অত্যাচারী। আমি এর যাবতীয় কীর্তিকলাপের খবর রাখি। কাজেই আপনি মেহেরবানী করে অন্তত আমার কাছে তার সুপারিশ করবেন না। এ ছোট্ট উদাহরণটির ভিত্তিতে অনুমান করা যেতে পারে যে, এ আয়াতে সুপারিশ সম্পর্কে যে নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে তা কতদূর সঠিক, যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়ভিত্তিক। আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার দরজা বন্ধ হবে না। আল্লাহর সৎ বান্দারা, যারা দুনিয়ায় মানুষের সাথে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিলেন তাদেরকে আখেরাতেও সহানুভূতির অধিকার আদায় করার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু তারা সুপারিশ করা আগে অনুমতি চেয়ে নেবেন। যার পক্ষে আল্লাহ‌ তাদেরকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র তার পক্ষেই তারা সুপারিশ করতে পারবেন। আবার সুপারিশ করার জন্যও শর্ত হবে যে, তা সঙ্গত এবং ন্যায়ভিত্তিক হতে হবে যেমন وَقَالَ صَوَابًا এবং ঠিক কথা বলবে) আল্লাহর এ উক্তিটি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, সেখানে আজেবাজে সুপারিশ করার কোন সুযোগ থাকবে না। যেমন একজন দুনিয়ায় শত শত হাজার হাজার লোকের অধিকার গ্রাস করে এসেছে কিন্তু কোন এক বুযুর্গ হঠাৎ উঠে তার পক্ষে সুপারিশ করে দিলেন যে, হে আল্লাহ! তাকে পুরস্কৃত করুন কারণ সে আমার বিশেষ অনুগ্রহ ভাজন।
.
৮৭.
কারণ সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত গুণাবলীর () ভিত্তিতে ফয়সালা হবে। যে ব্যক্তি কোন জুলুমের গোনাহের বোঝা বহন করে নিয়ে আসবে, সে আল্লাহর অধিকারের বিরুদ্ধে জুলুম করুক বা আল্লাহর বান্দাদের অধিকারের বিরুদ্ধে অথবা নিজের নফসের বিরুদ্ধে জুলুম করুন না কেন যে কোন অবস্থায়ই এগুলো তাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে না। অন্যদিকে যারা ঈমান ও সৎকাজ (নিছক সৎকাজ নয় বরং ঈমান সহকারে সৎকাজ এবং নিছক ঈমানও নয় বরং সৎকাজ সহকারে ঈমান) নিয়ে আসবে তাদের ওপর সেখানে জুলুম হবার কোনআশঙ্কা নেই অর্থাৎ নিরর্থক তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না এবং তাদের যাবতীয় কার্যাবলী একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হবে এবং সমস্ত অধিকার গ্রাস করে নেয়া হবে এমন কোনআশঙ্কাও সেখানে থাকবে না।
৮৮.
অর্থাৎ তা এমনিতর বিষয়বস্তু, শিক্ষাবলী ও উপদেশমালায় পরিপূর্ণ। এখানে শুধুমাত্র ওপরের আয়াতগুলোতে বর্ণিত নিকটবর্তী বিষয়বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি। বরং কুরআনের যেসব বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে সেসব দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবার কুরআন সম্পর্কে সূরার সূচনায় এবং তারপর মূসার কাহিনীর শেষ পর্যায়ের আয়াতগুলোতে যা বলা হয়েছে এর বর্ণনা পরম্পরা সেগুলোর সাথে সম্পর্কিত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, তোমার প্রতি যে “স্মারক” পাঠানো হয়েছে এবং আমার কাছ থেকে বিশেষভাবে আমি যে “স্মরণ” তোমাকে দিয়েছি তা এ ধরনের মর্যাদাসম্পন্ন স্মারক ও স্মরণ।
৮৯.
অর্থাৎ এরা নিজেদের গাফলতি থেকে সজাগ হবে, ভুলে যাওয়া শিক্ষাকে কিছুটা স্মরণ করবে এবং পথ ভুলে কোন পথে যাচ্ছে আর এই পথ ভুলে চলার পরিণাম কি হবে সে সম্পর্কে এদের মনে বেশ কিছুটা অনুভূতি জাগবে।
৯০.
কুরআনে সাধারণত একটি ভাষণ শেষ করতে গিয়ে এ ধরনের বাক্য বলা হয়ে থাকে এবং আল্লাহর কালামের সমাপ্তি তাঁর প্রশংসা বাণীর মাধ্যমে করাই হয় এর উদ্দেশ্য। বর্ণনাভংগী ও পূর্বাপর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে পরিষ্কার বুঝা যায় যে এখানে একটি ভাষণ শেষ হয়ে গেছে এবং وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَى آدَمَ থেকে দ্বিতীয় ভাষণ শুরু হচ্ছে। বেশীর ভাগ সম্ভাবনা এটাই যে, এ দু’টি ভাষণ বিভিন্ন সময় নাযিল হয়ে থাকবে এবং পরে নবী ﷺ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী দু’টিকে এক জায়গায় একত্র করে দিয়ে থাকবেন। একত্র করার কারণ উভয় ভাষণের বিষয়গত সাদৃশ্য। এ বিষয়টি আমি পরবর্তী আলোচনায় সুস্পষ্ট করে দেবো।
৯১.
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ বাক্যেই ভাষণ খতম হয়ে গেছে। এরপর বিদায় নেবার সময় ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একটি ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছেন। অহী নাযিল করার সময় এটা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে সংশোধন করে দেয়া সঙ্গত মনে করা হয়নি। তাই বাণী পাঠানোর কাজ শেষ হবার পর এখন তার এ সংশোধনী দিচ্ছেন। সতর্কবাণীর শব্দাবলী থেকে একথা প্রকাশ হচ্ছে যে, কি ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল। অহীর বাণী গ্রহণ করার সময় নবী ﷺ তা স্মরণ রাখার এবং মুখে পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করে থাকবেন। এ প্রচেষ্টার কারণে তাঁর মনোযোগ বারবার সরে গিয়ে থাকবে। ফলে অহী গ্রহণের ধারাবাহিকতার মধ্যে বাধার সৃষ্টি হয়ে থাকবে। বাণী শোনার প্রতি মনোযোগ পুরোপুরি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। এ অবস্থা দেখে এ প্রয়োজন অনুভব করা হয়েছে যে, তাঁকে অহীর বাণী গ্রহণ করার সঠিক পদ্ধতি বুঝাতে হবে এবং মাঝখানে মাঝখানে স্মরণ রাখার জন্য যে চেষ্টা তিনি করেন তা থেকে তাঁকে বিরত রাখতে হবে।

এ থেকে জানা যায়, সূরা “ত্ব-হা”র এ অংশটি প্রথম যুগের অহীর অন্তর্ভুক্ত। প্রথম যুগে তখনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে অহী গ্রহণ করার অভ্যাস ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় কয়েকবার তিনি এ কাজ করেছেন। প্রত্যেকবার এ ব্যাপারে তাকে সতর্ক করে দেবার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন না কোন বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে। সূরা “কিয়ামাহ” নাযিলের সময়ও এমনটিই হয়েছিল। তাই তখন বাণীর ধারাবাহিকতা ছিন্ন করে তাঁকে এই বলে সতর্ক করা হয়েছিলঃ

لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ - إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ - فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ - ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ –

“কুরআনকে দ্রুত স্মরণ করার জন্য তোমার জিহবা বার বার সঞ্চালন করো না। তা স্মরণ করিয়ে ও পড়িয়ে দেবার দায়িত্ব আমার। কাজেই যখন আমি তা শুনাচ্ছি তখন তুমি গভীর মনোযোগ সহকারে তা শুনতে থাকো, তারপর তার অর্থ বুঝিয়ে দেবার দায়িত্বও আমার।”

সূরা আ’লায়েও তাঁকে এ নিশ্চিন্ততা দেয়া হয়েছে যে,”আমি তা পড়িয়ে দেবো এবং তুমি তা ভুলে যাবে না।” سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسَى -পরে যখন তিনি অহীর বাণী গ্রহণ করার ব্যাপারে ভালো মতো পারদর্শিতা লাভ করেন তখন তিনি আর এ ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হননি। এ কারণে পরবর্তী সূরাগুলোয় এ ধরনের কোন সতর্কবাণী আমরা দেখি না।

৯২.
যেমন এর আগে বলা হয়েছে, এখান থেকে আর একটা আলাদা ভাষণ শুরু হয়েছে। সম্ভবত ওপরের ভাষণের পর কোন এক সময় এটি নাযিল হয়েছিল এবং বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্যের কারণে এর সাথে মিলিয়ে একই সূরার মধ্যে উভয়কে একত্র করা হয়েছে। বিষয়বস্তুর সাদৃশ্য একাধিক। যেমনঃ

একঃ কুরআন যে ভুলে যাওয়া শিক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তা সেই একই শিক্ষা যা মানব জাতিকে তার সৃষ্টির সূচনায় দেয়া হয়েছিল, আল্লাহ‌ যা মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন এবং যা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য কুরআনের পূর্বে বারবার “স্মারক” আসতে থেকেছে।

দুইঃ শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ বারবার এ শিক্ষা ভুলে যায় এবং সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই বারবার সে এ দুর্বলতা দেখিয়ে আসছে। তাই মানুষ বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে থাকার মুখাপেক্ষী।

তিনঃ মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য পুরোপুরি নির্ভর করে তার এমন আচরণের ওপর যা আল্লাহ‌ প্রেরিত এই “স্মারকের” সাথে সে করবে। সৃষ্টির সূচনালগ্নে একথা পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছিল। আজ এটা কোন নতুন কথা বলা হচ্ছে না যে, এর অনুসরণ করলে গোমরাহী ও দুর্ভাগ্য থেকে সংরক্ষিত থাকবে অন্যথায় দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে বিপদে পড়বে।

চারঃ একটি জিনিস হচ্ছে, ভুল, সংকল্পের অভাব ও ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতা। এরই কারণে মানুষ তার চিরন্তন শত্রুশয়তানের পরোচনায় পড়ে এবং ভুল করে বসে। মানুষের মনে ভুলের অনুভূতি জাগার সাথে সাথেই সে যদি নিজের দৃষ্টিভংগী ও কর্মনীতি সংশোধন করে নেয় এবং অবাধ্যতা পরিহার করে আনুগত্যের সাথে ফিরে আসে তাহলেই সে ক্ষমা লাভ করতে পারে। দ্বিতীয় জিনিসটি হচ্ছে, বিদ্রোহ ও সীমালঙ্ঘন এবং ভালোভাবে ভেবে চিন্তে আল্লাহর মোকাবিলায় শয়তানের দাসত্ব করা। ফেরাউন ও সামেরী এ কাজ করেছিল। এর ক্ষমার কোন সম্ভাবনা নেই। ফেরাউন ও সামেরী নিজেদের যে পরিণতি ভোগ করেছে এর পরিণতিও তাই হবে। যে ব্যক্তি এ কর্মনীতি অবলম্বন করবে সে-ই এ পরিণতির শিকার হবে।

৯৩.
আদম আলাইহিস সালামের ঘটনা এর আগে সূরা বাকারাহ, সূরা আ’রাফে (দুজায়গায়), সূরা হিজর, সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা কাহফে আলোচিত হয়েছে। এখানে সপ্তমবার এর পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। প্রত্যেক জায়গায় বর্ণনা পরম্পরার সাথে এর সম্পর্কে ভিন্নতর এবং প্রত্যেক জায়গায় এ সম্পর্কের ভিত্তিতেই এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা করা হয়েছে। যে জায়গায় আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘটনার যে অংশের সম্পর্ক রয়েছে সে জায়গায় সেটুকুই বর্ণনা করা হয়েছে, অন্য জায়গায় তা পাওয়া যাবে না অথবা বর্ণনাভংগী সামান্য আলাদা হবে। পুরো ঘটনাটি বা এর পূর্ণ তত্ত্ব অনুধাবন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গাগুলোই পড়ে নেয়া উচিত। আমি সব জায়গায়ই এর সম্পর্ক ও সম্বন্ধ এবং এর ফলাফল টীকায় বর্ণনা করে দিয়েছি।
৯৪.
অর্থাৎ তিনি পরবর্তী পর্যায়ে এ নির্দেশের সাথে যে আচরণ করেন তা অহংকার ও ইচ্ছাকৃত বিদ্রোহের ভিত্তিতে ছিল না বরং গাফলতি ও ভুলের শিকার হবার এবং সংকল্প ও ইচ্ছার দুর্বলতার কারণে ছিল। তিনি এ ধরনের কোন চিন্তা ও সংকল্পের ভিত্তিতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করেননি যে, আমি আল্লাহর পরোয়া করতে যাবো কেন, তাঁর হুকুম হয়েছে তাতে কি হয়েছে, আমার মন যা চাইবে আমি তা করবো, আল্লাহ‌ আমার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন কেন? এর পরিবর্তে বরং তাঁর আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণ এই ছিল যে, তিনি আল্লাহর হুকুম মনে রাখার চেষ্টা করেননি, তিনি তাঁকে কি বুঝিয়েছিলেন তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছাশক্তি খুব বেশী মজবুত ছিল না যার ফলে যখন শয়তান তাঁকে প্ররোচিত করতে এলো তখন তিনি পূর্বাহ্ণে প্রদত্ত আল্লাহর সতর্কবাণী ও উপদেশ (যার আলোচনা এখনই সামনে আসছে) স্মরণ করতে পারলেন না এবং শয়তান প্রদত্ত লোভ ও লালসার কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হলেন না।

“আমি তার মধ্যে সংকল্প পাইনি” এ বাক্যের অর্থ কেউ কেউ এরূপ নিয়েছেন যে, “আমি তার মধ্যে নাফরমানীর সংকল্প পাইনি” অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেছেন ভুল করে করেছেন, নাফরমানী করার সংকল্প নিয়ে করেননি। কিন্তু খামাখা এ ধরনের সংকোচ করার কোন প্রয়োজন নেই। একথা বলতে হলে لَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا عَلَى الْعِصْيَان বলা হতো, শুধুমাত্র لَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا বলা হতো না। আয়াতের শব্দাবলী পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, সংকল্পের অভাব মানে হুকুম মেনে চলার সংকল্পের অভাব, নাফরমানী করার সংকল্পের অভাব নয়। তাছাড়া পরিবেশ পরিস্থিতি ও পূর্বাপর বক্তব্যের প্রতি নজর দিলে পরিষ্কার অনুভূত হয় যে, এখানে আল্লাহ‌ আদম আলাইহিস সালামের ভূমিকা ও মর্যাদা কালিমামুক্ত করার উদ্দেশ্যে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন না বরং তিনি একথা বলতে চান যে, তিনি যে মানবিক দুর্বলতা প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন এবং যে কারণে শুধু তিনি একাই নন বরং তাঁর সন্তানরাও আল্লাহর আগাম সতর্কবাণী সত্ত্বেও নিজের শত্রুর ফাঁদে পা দিয়েছিল এবং পরবর্তীকালে দিয়েই চলেছে সেটি কি ছিল। উপরন্তু যে ব্যক্তিই খোলা মনে এ আয়াতটি পড়বে তার মনে প্রথমে অর্থটিই ভেসে উঠবে যে, “আমি তার মধ্যে হুকুমের আনুগত্য করার সংকল্প বা মজবুত ইচ্ছাশক্তি পাইনি।” দ্বিতীয় অর্থটি তার মনে ততক্ষণ আসবে না যতক্ষণ না সে আদম আলাইহিস সালামের সাথে গোনাহের সম্পর্কে স্থাপন করা অসঙ্গত মনে করে আয়াতের অন্য কোন অর্থ খোঁজা শুরু করে দেবে। এ অবস্থায় এ অভিমত আল্লামা আলুসীও তাঁর তাফসীরে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ

لكن لا يخفى عليك ان هذا التفسير غير متبادر ولاكثير المناسبة للمقام-

“একথা তোমার কাছে গোপন থাকা উচিত নয় যে, আয়াতের শব্দাবলী শুনে এ ব্যাখ্যা সঙ্গে সঙ্গেই মনে উদয় হয় না এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথেও এটা তেমন কোন সম্পর্ক রাখে না।” (দেখুন রুহুল মা’আনী, ১৬ খন্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা)

.
অনুবাদ: