পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

২৬৯ আয়াত

৭৭ ) আমি ৫২ মূসার কাছে অহী পাঠালাম যে, এবার রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে পড়ো এবং তাদের জন্য সাগরের বুকে শুকনা সড়ক বানিয়ে নাও। ৫৩ কেউ তোমাদের পিছু নেয় কিনা সে ব্যাপারে একটুও ভয় করো না এবং (সাগরের মাঝখান দিয়ে পার হতে গিয়ে) শংকিত হয়ো না।
وَلَقَدْ أَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِى فَٱضْرِبْ لَهُمْ طَرِيقًۭا فِى ٱلْبَحْرِ يَبَسًۭا لَّا تَخَـٰفُ دَرَكًۭا وَلَا تَخْشَىٰ ٧٧
৭৮ ) পিছন থেকে ফেরাউন তার সেনাবাহিনী নিয়ে পৌঁছলো এবং তৎক্ষণাত সমুদ্র তাদের উপর ছেয়ে গেলো যেমন ছেয়ে যাওয়া সমীচীন ছিল। ৫৪
فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُودِهِۦ فَغَشِيَهُم مِّنَ ٱلْيَمِّ مَا غَشِيَهُمْ ٧٨
৭৯ ) ফেরাউন তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করেছিল, কোন সঠিক পথ দেখায়নি। ৫৫
وَأَضَلَّ فِرْعَوْنُ قَوْمَهُۥ وَمَا هَدَىٰ ٧٩
৮০ ) হে বনী ইসরাঈল! ৫৬ আমি তোমাদের শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি এবং তূরের ডান পাশে ৫৭ তোমাদের উপস্থিতির জন্য সময় নির্ধারণ করেছি ৫৮ আর তোমাদের প্রতি মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করেছি ৫৯
يَـٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ قَدْ أَنجَيْنَـٰكُم مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَٰعَدْنَـٰكُمْ جَانِبَ ٱلطُّورِ ٱلْأَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ ٱلْمَنَّ وَٱلسَّلْوَىٰ ٨٠
৮১ ) --খাও আমার দেওয়া পবিত্র রিযিক এবং তা খেয়ে সীমালংঘন করো না, অন্যথায় তোমাদের ওপর আমার গযব আপতিত হবে। আর যার ওপর আমার গযব আপতিত হয়েছে তার পতন অবধারিত।
كُلُوا۟ مِن طَيِّبَـٰتِ مَا رَزَقْنَـٰكُمْ وَلَا تَطْغَوْا۟ فِيهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِى ۖ وَمَن يَحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِى فَقَدْ هَوَىٰ ٨١
৮২ ) তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তারপর সোজা-সঠিক পথে চলতে থাকে তার জন্য আমি অনেক বেশী ক্ষমাশীল। ৬০
وَإِنِّى لَغَفَّارٌۭ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَـٰلِحًۭا ثُمَّ ٱهْتَدَىٰ ٨٢
৮৩ ) আর ৬১ কোন জিনিসটি তোমাকে তোমার সম্প্রদায়ের আগে নিয়ে এলো হে মূসা” ৬২
۞ وَمَآ أَعْجَلَكَ عَن قَوْمِكَ يَـٰمُوسَىٰ ٨٣
৮৪ ) সে বললো, “তারা তো ব্যস আমার পেছনে এসেই যাচ্ছে। আমি দ্রুত তোমার সামনে এসে গেছি, হে আমার রব! যাতে তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও।”
قَالَ هُمْ أُو۟لَآءِ عَلَىٰٓ أَثَرِى وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ ٨٤
৮৫ ) তিনি বললেন, “ভালো কথা, তাহলে শোনো, আমি তোমার পেছনে তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছি এবং সামেরী ৬৩ তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে।”
قَالَ فَإِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِنۢ بَعْدِكَ وَأَضَلَّهُمُ ٱلسَّامِرِىُّ ٨٥
৮৬ ) ভীষণ ক্রোধ ও মর্মজ্বালা নিয়ে মূসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলো। সে বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমাদের রব কি তোমাদের সাথে ভালো ভালো ওয়াদা করেননি? ৬৪ তোমাদের কি দিনগুলো দীর্ঘতর মনে হয়েছে? ৬৫ অথবা তোমরা নিজেদের রবের গযবই নিজেদের ওপর আনতে চাচ্ছিলে, যে কারণে তোমরা আমার সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করলে? ৬৬
فَرَجَعَ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ قَوْمِهِۦ غَضْبَـٰنَ أَسِفًۭا ۚ قَالَ يَـٰقَوْمِ أَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًا ۚ أَفَطَالَ عَلَيْكُمُ ٱلْعَهْدُ أَمْ أَرَدتُّمْ أَن يَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَخْلَفْتُم مَّوْعِدِى ٨٦
৫২.
এরপর দীর্ঘদিন মিসরে অবস্থানকালে যা কিছু ঘটেছিল সেসব আলোচনা মাঝখানে বাদ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনাবলী বিস্তারিত জানার জন্য সূরা আ’রাফ ১৫-১৬, সূরা ইউনুস ৯, সূরা মু’মিন ৩-৫ এবং সূরা যুখরুফ ৫ রুকু দেখুন।
৫৩.
এ সংক্ষিপ্ত কথাটির বিস্তারিত বিবরণ হচ্ছে এই যে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ‌ একটি রাত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এ রাতে সমস্ত ইসরাঈলী ও অইসরাঈলী মুসলমানদের (যাদের জন্য ব্যাপক অর্থবোধক আমার বান্দাদের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে) মিসরের সকল এলাকা থেকে হিজরত করে বের হয়ে পড়ার কথা ছিল। তারা সবাই একটি পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হয়ে একটি কাফেলার আকারে রওয়ানা হলো। এ সময় সুয়েজ খালের অস্তিত্ব ছিল না। লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত সমস্ত এলাকাটাই উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু সে এলাকার সকল পথেই ছিল সেনানিবাস। ফলে সেখান দিয়ে নিরাপদে অতিক্রম করা সম্ভবপর ছিল না। তাই হযরত মূসা লোহিত সাগরের পথ ধরলেন। সম্ভবত তাঁর পরিকল্পনা ছিল, সাগরের তীরে ধরে এগিয়ে গিয়ে সিনাই উপদ্বীপের দিকে চলে যাবেন। কিন্তু সেদিক থেকে ফেরাউন একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে পশ্চাদ্ধাবন করতে করতে ঠিক এমন সময় পৌঁছে গেলো যখন এ কাফেলা সবেমাত্র সাগরের তীরেই উপস্থিত হয়েছিল। সূরা শূ’আরায় বলা হয়েছে, মুহাজিরদের কাফেলা ফেরাউনের সেনা দল ও সমুদ্র দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ঘেরাও হয়ে গিয়েছিল। ঠিক এমনি সময় মহান আল্লাহ‌ হযরত মূসাকে হুকুম দিলেন اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ সমুদ্রের ওপর তোমার লাঠি মারো।”

فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ

তখনই সাগর ফেটে গেলো এবং তার প্রত্যেকটি টুকরা একটি বড় পর্বত শৃংগের মতো দাঁড়িয়ে গেলো।”

আর মাঝখান দিয়ে শুধু কাফেলার পার হয়ে যাবার পথ তৈরী হয়ে গেলো না বরং উপরের আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী মাঝখানের এ অংশ শুকিয়ে খটখটে সড়কের আকার ধারণ করলো। এটি সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য মু’জিযার বর্ণনা। এ থেকে যারা একথা বলে থাকেন যে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বা জোয়ার ভাটার ফলে সমুদ্রের পানি সরে গিয়েছিল তাদের কথার গলদ সহজেই ধরে পড়ে। কারণ, এভাবে যে পানি সরে যায় তা দু’দিকে পর্বত শৃংগের মতো খাড়া হয়ে থাকে না এবং মাঝখানের পানি বিহীন অংশ শুকিয়ে রাস্তা তৈরী হয়ে যায় না। (আরো বেশী জানার জন্য তাফহীমুল কুরআন, সূরা শূ’আরা ৪৭ টীকা দেখুন)।

.
৫৪.
সূরা শূ’আরায় বলা হয়েছে, মুহাজিরদের সাগর অতিক্রম করার পর পরই ফেরাউন তার সৈন্য সামন্তসহ সমুদ্রের বুকে তৈরী হওয়া এ পথে নেমে পড়লো। (৬৩-৬৪ আয়াত) এখানে বলা হয়েছে, সমুদ্র তাকে ও তার সেনাদেরকে ডুবিয়ে মারলো। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈল সমুদ্রের অন্য তীর থেকে ফেরাউন ও তার সেনাদলকে ডুবে যেতে দেখেছিল। (৫০ আয়াত) অন্যদিকে সূরা ইউনুসে বলা হয়েছে, ডুবে যাবার সময় ফেরাউন চিৎকার করে উঠলোঃ

آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ

“আমি মেনে নিয়েছি যে আর কোন ইলাহ নেই সেই ইলাহ ছাড়া যাঁর প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমিও মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত।”

কিন্তু এ শেষ মুহূর্তের ঈমান গৃহীত হয়নি এবং জবাব দেয়া হলোঃ

آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ - فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً

“এখন ঈমান আনছো? আর ইতিপূর্বে এমন অবস্থা ছিল যে, নাফরমানীতেই ডুবে ছিলে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করেই চলেছিলে। বেশ, আজ আমি তোমার লাশটাকে রক্ষা করেছি, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।” (৯০-৯২আয়াত)

৫৫.
অতি সূক্ষ্মভাবে মক্কার কাফেরদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে এই মর্মে যে, তোমাদের সরদার ও নেতারাও তোমাদের সেই একই পথে নিয়ে যাচ্ছে যে পথে ফেরাউন তার জাতিকে নিয়ে যাচ্ছিল। এখন তোমরা নিজেরাই দেখে নাও যে, এটা কোন সঠিক পথ নির্দেশন ছিল না।

এ কাহিনী শেষ করতে গিয়ে মনে হয় বাইবেলের বর্ণনাবলীও পর্যালোচনা করা দরকার। এভাবে যারা বলে থাকে কুরআনের এ কাহিনী বনী ইসরাঈলের থেকে নকল করা হয়েছে তাদের মিথ্যার হাটে হাঁড়ি ভেঙে যাবে। বাইবেলের যাত্রা পুস্তক () এ কাহিনীর যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তার নিন্মোক্ত অংশগুলো প্রণিধানযোগ্যঃ

একঃ ৪ অধ্যায়ের ২-৫ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ লাঠির মু’জিযা হযরত মূসাকে দেয়া হয়েছিল। আবার ১৭ শ্লোকে তাঁকেই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর তুমি এ ষষ্টি হস্তে করিবে, ইহা দ্বারাই তোমাকে সেই সকল চিহ্ন-কার্য করিতে হইবে।” কিন্তু সামনের দিকে গিয়ে জানা গেলো না কেমন করে এ লাঠি হযরত হারুনের হাতে চলে গেলো এবং তিনিই এর সাহায্যে মু’জিযা দেখাতে থাকলেন। ৭ অধ্যায় থেকে নিয়ে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা অনবরত হযরত হারুনকেই লাঠির মু’জিযা দেখাতে দেখি।

দুইঃ ৫ অধ্যায়ে ফেরাউনের সাথে হযরত মূসার প্রথম সাক্ষাতেরই অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আল্লাহর একত্ব ও রবুবিয়াত সম্পর্কে হযরত মূসা ও ফেরাউনের মধ্যে যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল আদতে তার কোন উল্লেখই নেই। ফেরাউন বললো, সদা প্রভু কে যে, আমি তাহার কথা শুনিয়া ইসরাঈলকে ছাড়িয়া দিব? আমি সদা প্রভুকে জানি না।” কিন্তু মূসা ও হারুন এর এছাড়া আর কোন জবাব দিলেন না, “ইব্রীয়দের ঈশ্বর আমাদিগকে দর্শন দিয়াছেন।” (৫: ২-৩)

তিনঃ যাদুকরদের সাথে প্রতিযোগিতার সমগ্র কাহিনী নিচের মাত্র এই ক’টি বাক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছেঃ

“পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোনকে কহিলেন, ফরৌন যখন তোমাদিগকে বলে, তোমরা আপনাদের পক্ষে অদ্ভুত লক্ষণ, দেখাও, তখন তুমি হারোনকে বলিও, তোমার যষ্টি লইয়া ফরৌনের সামনে নিক্ষেপ কর, তাহাতে তাহা সর্প হইবে। তখন মোশি ও হারোন ফেরাউনের নিকট গিয়ে সদা প্রভুর আজ্ঞানুসারে কর্ম করিলেন, হারোন ফরৌনের ও তাঁহার দাসগণের সম্মুখে আপন যষ্টি নিক্ষেপ করিলেন, তাহাতে তাহা সর্প হইল। তখন ফরৌনও বিদ্বানদিগকে ও গুণীদিগকে ডাকিলেন, তাহাতে তাহারা অর্থাৎ মিস্রীয় মন্ত্রবেত্তারাও আপনাদের মায়াবলে সেই রূপ করিল। ফলত তাহারা আপন আপন যষ্টি নিক্ষেপ করিলে সে সকল সর্প হইল, কিন্তু হারোনের যষ্টি তাহাদের সকল যষ্টিকে গ্রাস করিল।” (৭: ৮-১২)

কুরআনের বর্ণনার সাথে এ বর্ণনা মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। মূল কাহিনীর সমগ্র প্রাণশক্তি কি মারাত্মকভাবে এখানে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, উৎসবের দিন খোলা ময়দানে যথারীতি চ্যালেঞ্জের পর প্রতিযোগিতা হওয়া এবং তারপর পরাজয়ের পর যাদুগরদের ঈমান আনা ছিল মূলত এ কাহিনীর প্রাণ। কিন্তু এখানে তার কোন উল্লেখই করা হয়নি।

চারঃ কুরআন বলছে, বনী ইসরাঈলদের মুক্তি ও স্বাধীনতাই ছিল হযরত মূসার দাবী। বাইবেল বলছে, তাঁর দাবী কেবল এতটুকুই ছিলঃ “আমরা বিনয় করি, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করণার্থে আমাদিগকে তিন দিনের পথ প্রান্তরে যাইতে দিউন, (যাত্রা পুস্তক ৫: ৩)

পাঁচঃ মিসর থেকে বের হওয়া এবং ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার ঘটনা ১১ থেকে ১৪ অধ্যায়ের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বহু প্রয়োজনীয় তথ্য ও কুরআনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনার বিস্তারিত রূপও আমরা দেখতে পাই। আবার এই সঙ্গে অনেকগুলো অদ্ভুত কথাও জানা যায়। যেমন ১৪ অধ্যায়ের ১৫-১৬ শ্লোকে হযরত মূসাকে হুকুম দেয়া হচ্ছেঃ তুমি আপন যষ্টি (জি, হাঁ এখন যষ্টি হযরত হারুনের হাত থেকে নিয়ে হযরত মূসার হাতে দেয়া হয়েছে) তুলিয়া সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার কর, সমুদ্রকে দুই ভাগ কর; তাহাতে ইস্রায়েল সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্র মধ্যে প্রবেশ করিবে।” কিন্তু সামনের দিকে গিয়ে ২১-২২ শ্লোকে বলা হচ্ছেঃ “মোশি (মূসা)-সমুদ্রের উপর আপন হস্ত বিস্তার করিলেন, তাহাতে সদা প্রভু সেই সমস্ত রাত্রি ব্যাপী প্রবল পূর্বীয় বায়ু দ্বারা সমুদ্রকে সরাইয়া দিলেন ও তাহা শুষ্ক ভূমি করিলে, তাহাতে জল দুই ভাগ হইল। আর ইস্রায়েল সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্র মধ্যে প্রবেশ করিল এবং তাহাদের দক্ষিণে ও বামে জল প্রাচীর স্বরূপ হইল। বুঝতে পারা গেল না যে, এটা মুজিযা ছিল, না ছিল প্রাকৃতিক ঘটনা? যদি মুজিযা থেকে থাকে তাহলে তা লাঠির আঘাতেই সৃষ্ট হয়ে থাকবে, যেমন কুরআনে বলা হয়েছে। আর যদি সত্যি প্রাকৃতিক ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে পূর্বীয় বায়ু সমুদ্রকে মাঝখান থেকে ফেড়ে পানিকে দু’দিকে দেয়ালের মতো দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং মাঝখানে শুকনো পথ বানিয়ে দিয়েছে, এটা তো দস্তুর মতো বিস্ময়ের ব্যাপার। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাতাস কি কখনো এমনি ধরনের কোন আযব কাণ্ড ঘটিয়েছে?

তালমূদের বর্ণনা বাইবেল থেকে তুলনামূলকভাবে বিভিন্ন এবং কুরআনের অনেকটা কাছাকাছি। কিন্তু উভয়ের মোকাবিলা করলে পরিষ্কার অনুভূত হয়, এক জায়গায় সরাসরি অহী জ্ঞানের ভিত্তিতে ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে এবং অন্য জায়গায় শত শত বছরের জনশ্রুতির মাধ্যমে প্রচলিত বর্ণনাই ঘটনার রূপ নিয়েছে। যার ফলে তা যথেষ্ট বিকৃত হয়েছে। দেখুনঃ The Talmud Selection, H. Polano, Pp, 150-54

৫৬.
মাঝখানে সমুদ্র পার হওয়া থেকে নিয়ে সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছে যাওয়ার ঘটনা বলা হয়নি। সূরা আ'রাফের ১৬-১৭ রুকূ’তে এর বিস্তারিত বিবরণ এসে গেছে। সেখানে একথাও বলা হয়েছে যে, মিসর থেকে বের হয়েই সিনাই উপদ্বীপে একটি মন্দির দেখে বনী ইসরাঈল নিজেদের জন্য একজন কৃত্রিম খোদার দাবী করে বসেছিল। (তাফহীমুল কুরআন, সূরা আ’রাফ, ৯৮ টীকা)।
৫৭.
অর্থাৎ তূর পাহাড়ের পূর্ব পাদদেশে।
৫৮.
সূরা বাকারার ৬ রুকূ’ ও সূরা আ’রাফের ১৭ রুকূ’তে) বলা হয়েছে, আল্লাহ‌ বনী ইসরাঈলকে শরীয়াতের নির্দেশনা দেবার জন্য চল্লিশ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন। এর পর মূসা আলাইহিস সালামকে পাথরের ফলকে লিখিত বিধান দেয়া হয়েছিল।
৫৯.
মান্না ও সালওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা বাকারাহ ৭৩ ও সূরা আ’রাফ ১১৯ টীকা। বাইবেলের বর্ণনা মতে মিসর থেকে বের হবার পর যখন বনী ইসরাঈল সীন মরুভূমিতে ইলীম ও সীনাইর মাঝখান দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল এবং মজুদ খাদ্য খতম হয়ে গিয়ে অনাহার অর্ধাহারের পালা শুরু হয়ে গিয়েছিল তখনই মান্না ও সালওয়ার অবতরণ শুরু হয় এবং ফিলিস্তীনের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত পুরো চল্লিশ বছর ধরে এ ধারাবাহিক কার্যক্রম চলতে থাকে। (যাত্রা পুস্তক ১৬ অধ্যায়, গণনা পুস্তক ১১: ৭-৯, যিহেশূয়৫: ১২) যাত্রা পুস্তকে মান্না ও সালওয়ার নিম্নোক্ত অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছেঃ

“পরে সন্ধ্যাকালে ভারুই পক্ষী উড়িয় আসিয়া শিবির স্থান আচ্ছাদান করিল এবং প্রাতঃকালে শিবিরের চারিদিকে শিশির পড়িল। পরে পতিত শিশির উর্দ্ধগত হইলে দেখ ভূমিস্থিত নীহারের ন্যায় সরু বীজাকার সূক্ষ্ম বস্তু বিশেষ প্রান্তরের উপর পড়িয়া রহিল। আর তাহা দেখিয়া ইস্রায়েল সন্তানগণ পরস্পর কহিল উহা কি? কেননা তাহা কি, তাহারা জানিল না।” (১৬: ১৩-১৫)

“আর ইস্রায়েল কুল ঐ খাদ্যের মান্না রাখিল, তাহা ধনিয়া বীজের মত, শুক্ল বর্ণ এবং তাহার আস্বাদ মধুমিশ্রিত পিষ্টকের ন্যায় ছিল।” (১৬: ৩১)

গণনা পুস্তকে আরো বেশী বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছেঃ

“লোকেরা ভ্রমণ করিয়া তাহা কুড়াইত এবং যাঁতায় পিষিয়া কিংবা উখলিতে চূর্ণ করিয়া বহুগুণাতে সিদ্ধ করিত ও তদ্বারা পিষ্টক পুস্তক করিত; তৈলপক্ক পিষ্টকের ন্যায় তাহার আস্বাদ ছিল। রাত্রিতে শিবিরের উপরে শিশির পড়িলে ঐ মান্না তাহার উপরে পড়িয়া থাকিত।” (১১: ৮-৯)

এটাও ছিল একটি মু’জিযা। কারণ চল্লিশ বছর পরে বনী ইসরাঈল যখন খাদ্যের প্রাকৃতিক উপায়-উপকরণ লাভ করলো তখন খাদ্য সরবরাহের এ ধারাটি বন্ধ করে দেয়া হলো। এখন ঐ এলাকায় বাবুই পাখির প্রাচুর্য নেই এবং মান্নাও কোথাও পাওয়া যায় না। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী বনী ইসরাঈল যে এলাকায় চল্লিশ বছর মরুচারী জীবন যাপন করেছিল গবেষক ও অনুসন্ধানকারীরা সেই সমগ্র এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন। কোথাও তারা মান্নার সাক্ষাত পাননি। তবে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদেরকে বোকা বানাবার জন্য অবশ্যি মান্নার হালুয়া বিক্রি করে থাকে।

.
৬০.
অর্থাৎ মাগফিরাতের জন্য রয়েছে চারটি শর্ত। এক, তওবা। অর্থাৎ বিদ্রোহ, নাফরমানী অথবা শিরক ও কুফরী থেকে বিরত থাকা। দুই, ঈমান। অর্থাৎ আল্লাহ‌ ও রসূল এবং কিতাব ও আখেরাতকে সাচ্চা দিলে মেনে নেয়া। তিন, সৎকাজ। অর্থাৎ আল্লাহ‌ ও রসূলের বিধান অনুযায়ী ভালো কাজ করা। চার, সত্যপথাশ্রয়ী হওয়া। অর্থাৎ সত্য-সঠিক পথে অবিচল থাকা এবং তারপর ভুল পথে না যাওয়া।
৬১.
এই মাত্র উপরে যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে এখান থেকে তার সাথে আলোচনা সম্পৃক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ বনী ইসরাঈলকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা তূর পাহাড়ের ডান দিকে অবস্থান করো এবং চল্লিশ দিনের মেয়াদ শেষ হলে তোমাদের নির্দেশনামা দেয়া হবে।
৬২.
এ বাক্য থেকে বুঝা যাচ্ছে, নিজ সম্প্রদায়কে পেছনে রেখে হযরত মূসা আল্লাহর সাথে মোলাকাতের আগ্রহের আতিশয্যে আগে চলে গিয়েছিলেন। তূরের ডান পাশের যেখানকার ওয়াদা বনী ইসরাঈলদের সাথে করা হয়েছিল সেখানে তখনো কাফেলা পৌঁছুতে পারেনি। ততক্ষণ হযরত মূসা একাই রওয়ানা হয়ে গিয়ে আল্লাহর সামনে হাজিরা দিলেন। এ সময় আল্লাহ‌ ও বান্দার সাথে যা ঘটে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে সূরা আ'রাফের ১৭ রুকূ’তে)। হযরত মূসার আল্লাহর সাক্ষাতের আবেদন জানানো এবং আল্লাহর একথা বলা যে, তুমি আমাকে দেখতে পারবে না তারপর আল্লাহর একটি পাহাড়ের ওপর সামান্য তাজাল্লি নিক্ষেপ করে তাকে ভেঙে গুঁড়ো করে দেয়া এবং হযরত মূসার বেহুশ হয়ে পড়ে যাওয়া, আর তারপর পাথরের তখতিতে লেখা বিধান লাভ করা-এসব সেই সময়েরই ঘটনা। এখানে এ ঘটনার শুধুমাত্র বনী ইসরাঈলের গো-বৎস পূজার সাথে সম্পর্কিত অংশটুকুই বর্ণনা করা হচ্ছে। একটি জাতির মধ্যে মূর্তি পূজার সূচনা কিভাবে হয় এবং আল্লাহর নবী এ ফিতনাটি দেখে কেমন অস্থির হয়ে পড়েন, মক্কার কাফেরদেরকে এ কথা জানানোই এ বর্ণনার উদ্দেশ্য।
.
৬৩.
এটা ঐ ব্যক্তির নাম নয়। বরং শব্দের শেষে সম্বন্ধসূচক ইয়া (ى) ব্যবহারের সুস্পষ্ট আলামত থেকে একথা জানা যায় যে, এটা গোত্র, বংশ বা স্থানের সাথে সম্পর্কিত কোন শব্দ। তারপর আবার কুরআন যেভাবে আসসামেরী বলে তার উল্লেখ করছে তা থেকে একথাও অনুমান করা যায় যে, সে সময় সামেরী গোত্র, বংশ বা স্থানের বহু লোক ছিল এবং তাদের এক বিশেষ ব্যক্তি ছিল বনী ইসরাঈলের মধ্যে স্বর্ণ নির্মিত গো-বৎস পূজার প্রচলনকারী এ সামেরী। কুরআনের এ জায়গার ব্যাখ্যার জন্য প্রকৃতপক্ষে এর চাইতে বেশী কিছু বর্ণনার দরকার নেই। কিন্তু এ জায়গায় যা বলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে খৃস্টান মিশনারীরা বিশেষ করে পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদরা কুরআনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আপত্তি উত্থাপন করেছেন। তারা বলেন, (নাউযুবিল্লাহ) এটা কুরআন রচয়িতার মারাত্মক অজ্ঞতার প্রমাণ। কারণ এ ঘটনার কয়েকশ’ বছর পর খৃস্টপূর্ব ৯২৫ অব্দের কাছাকাছি সময় ইসরাঈলী সাম্রাজ্যের রাজধানী “সামেরীয়া” নির্মিত হয়। তারপর এরও কয়েকশ’ বছর পর ইসরাঈলী ও অইসরাঈলীদের সমন্বয়ে শংকর প্রজন্মের উদ্ভব হয়, যারা “সামেরী” নামে পরিচিত হয়। তাদের মতে এই সামেরীদের মধ্যে অন্যান্য মুশরিকী বিদআতের সাথে সাথে সোনালী বাছুর পূজার রেওয়াজও ছিল এবং ইহুদীদের মাধ্যমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের একথা শুনে নিয়ে থাকবেন, তাই তিনি একে নিয়ে হযরত মূসার যুগের সাথে জুড়ে দিয়েছেন এবং এ কাহিনী তৈরী করেছেন যে, সেখানে সোনার বাছুর পূজার প্রচলনকারী সামেরী নামে এক ব্যক্তি ছিল। এ ধরনের কথা এরা হামানের ব্যাপারেও বলেছে। কুরআন এই হামানকে ফেরাউনের মন্ত্রী হিসেবে পেশ করেছে। অন্যদিকে খৃস্টান মিশনারী ও প্রাচ্যবিদরা তাকে ইরানের বাদশাহ আখসোয়ার্সের সভাসদ ও উমরাহ “হামান” এর সাথে মিলিয়ে দিয়ে বলেন, এটা কুরআন রচয়িতার অজ্ঞতার আর একটা প্রমাণ। সম্ভবত এ জ্ঞান ও গবেষণার দাবীদারদের ধারণা প্রাচীন যুগে এক নামের একজন লোক, একটি গোত্র অথবা একটি স্থানই হতো এবং এক নামের দুজন লোক, গোত্র বা দু’টি স্থান হবার আদৌ কোন সম্ভাবনাই ছিল না। অথচ প্রাচীনকালের একটি অতি পরিচিত জাতি ছিল সুমেরী। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যুগে ইরাক ও তার আশপাশের এলাকায় এ জাতিটি বসবাস করতো। আর এ জাতির বা এর কোন শাখার লোকদেরকে মিসরে সামেরী বলা হতে পারে এর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর এই সামেরীয়ার মূলের দিকেও নজর দিন। এরই সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতেই তো পরবর্তীকালে উত্তর ফিলিস্তীনের লোকদেরকে সামেরী বলা হতে থাকে। বাইবেলের বর্ণনা মতে ইসরাঈল রাজ্যের শাসক উমরী “সামেরী” (বা শেমর) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি পাহাড় কিনেছিলেন যার ওপর পরে তিনি নিজের রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। যেহেতু পাহাড়ের সাবেক মালিকের নাম সামর ছিল তাই এ শহরের নাম রাখা হয় সামেরিয়া(বা শামরিয়া) (১-রাজাবলী ১৬-২৪) এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, সামেরিয়ার অস্তিত্ব লাভের পূর্বে “সামর” নামক লোকের অস্তিত্ব ছিল এবং তার সাথে সম্পর্কিত হয়ে তার বংশ বা গোত্রের নাম সামেরী এবং স্থানের নাম সামেরীয়া হওয়া অবশ্যই সম্ভবপর ছিল।
.
৬৪.
এর অনুবাদ “ভালো ওয়াদা করেননি” ও হতে পারে। মূল ইবারতের যে অনুবাদ আমি করেছি তার অর্থ হচ্ছে, আজ পর্যন্ত তোমাদের রব তোমাদের সাথে যেসব কল্যাণের ওয়াদা করেছেন তার সবই তোমরা লাভ করতে থেকেছো। তোমাদের নিরাপদে মিসর থেকে বের করেছেন। দাসত্ব মুক্ত করেছেন। তোমাদের শত্রুকে তছনছ করে দিয়েছেন। তোমাদের জন্য তাই মরুময় ও পার্বত্য অঞ্চলে ছায়া ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ সমস্ত ভালো ওয়াদা কি পূর্ণ হয়নি? দ্বিতীয় অনুবাদের অর্থ হবে, তোমাদেরকে শরীয়াত ও আনুগত্যনামা দেবার যে ওয়াদা করা হয়েছিল তোমাদের মতে তা কি কোন কল্যাণ ও হিতসাধনের ওয়াদা ছিল না?
৬৫.
দ্বিতীয় অনুবাদ এও হতে পারে,”ওয়াদা পূর্ণ হতে কি অনেক বেশী সময় লাগে যে, তোমরা অধৈর্য হয়ে পড়েছো? ” প্রথম অনুবাদের অর্থ হবে, তোমাদের প্রতি আল্লাহ‌ তা’আলা এই মাত্র যে বিরাট অনুগ্রহ করেছেন, এর পর কি অনেক বেশী সময় অতীত হয়ে গেছে যে, তোমরা তাঁকে ভুলে গেলে? তোমাদের বিপদের দিনগুলো কি সুদীর্ঘকাল আগে শেষ হয়ে গেছে যে, তোমরা পাগলের মতো বিপথে ছুটে চলেছো? দ্বিতীয় অনুবাদের পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, পথনির্দেশনা দেবার যে ওয়াদা করা হয়েছিল তা পূর্ণ হতে তো কোন প্রকার বিলম্ব হয়নি, যাকে তোমরা নিজেদের জন্য ওজর বা বাহানা হিসেবে দাঁড় করাতে পারো।
৬৬.
প্রত্যেক জাতি তার নবীর সাথে যে ওয়াদা করে তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। এ ওয়াদা হচ্ছেঃ তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর দেওয়া নির্দেশের ওপর অবিচল থাকা এবং আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো বন্দেগী না করা।
অনুবাদ: