পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

১৭০ আয়াত

১৩ ) বাপ বললো, “তোমরা তাঁকে নিয়ে যাবে, এটা আমাকে কষ্ট দেবে এবং আমার আশঙ্কা হয়, তোমরা তাঁর প্রতি অমনোযোগী থাকবে এবং নেকড়ে তাঁকে খেয়ে ফেলবে।”
قَالَ إِنِّى لَيَحْزُنُنِىٓ أَن تَذْهَبُوا۟ بِهِۦ وَأَخَافُ أَن يَأْكُلَهُ ٱلذِّئْبُ وَأَنتُمْ عَنْهُ غَـٰفِلُونَ ١٣
১৪ ) তারা জবাব দিল, “যদি আমাদের সংঘবদ্ধ দল থাকতে তাকে নেকড়ে খেয়ে ফেলে তাহলে তো আমরা হবো বড়ই অকর্মন্য।”
قَالُوا۟ لَئِنْ أَكَلَهُ ٱلذِّئْبُ وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّآ إِذًۭا لَّخَـٰسِرُونَ ١٤
১৫ ) এভাবে চাপ দিয়ে যখন তারা তাঁকে নিয়ে গেলো এবং সিদ্ধান্ত করলো তাঁকে একটি অন্ধ কূপে ফেলে দেবে তখন আমি ইউসুফকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলাম, “এক সময় আসবে যখন তুমি তাদেরকে তাদের এ কৃতকর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাদের কাজের ফলাফল সম্পর্কে তারা জানে না।” ১২
فَلَمَّا ذَهَبُوا۟ بِهِۦ وَأَجْمَعُوٓا۟ أَن يَجْعَلُوهُ فِى غَيَـٰبَتِ ٱلْجُبِّ ۚ وَأَوْحَيْنَآ إِلَيْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُم بِأَمْرِهِمْ هَـٰذَا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ ١٥
১৬ ) রাতে তারা কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার কাছে এসে
وَجَآءُوٓ أَبَاهُمْ عِشَآءًۭ يَبْكُونَ ١٦
১৭ ) বললো, “আব্বাজান! আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের জিনিসপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, ইতিমধ্যে নেকড়ে বাঘ এসে তাঁকে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।”
قَالُوا۟ يَـٰٓأَبَانَآ إِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوسُفَ عِندَ مَتَـٰعِنَا فَأَكَلَهُ ٱلذِّئْبُ ۖ وَمَآ أَنتَ بِمُؤْمِنٍۢ لَّنَا وَلَوْ كُنَّا صَـٰدِقِينَ ١٧
১৮ ) তারা ইউসুফের জামায় মিথ্যা রক্ত লাগিয়ে নিয়ে এসেছিল। একথা শুনে তাদের বাপ বললো, “বরং তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি বড় কাজকে সহজ করে দিয়েছে। ঠিক আছে, আমি সবর করবো এবং খুব ভালো করেই সবর করবো। ১৩ তোমরা যে কথা সাজাচ্ছো তার ওপর একমাত্র আল্লাহ‌র কাছেই সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।” ১৪
وَجَآءُو عَلَىٰ قَمِيصِهِۦ بِدَمٍۢ كَذِبٍۢ ۚ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًۭا ۖ فَصَبْرٌۭ جَمِيلٌۭ ۖ وَٱللَّهُ ٱلْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ ١٨
১৯ ) ওদিকে একটি কাফেলা এলো। তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে পানি নেবার জন্য পাঠালো। সে কূয়ার মধ্যে পানির ডোল নামিয়ে দিল। সে (ইউসুফকে দেখে) বলে উঠলো, “কী সুখবর! এখানে তো দেখছি একটি বালক।” তারা তাকে পণ্য দ্রব্য হিসেবে লুকিয়ে ফেললো। অথচ তারা যা কিছু করছিল সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত ছিলেন।
وَجَآءَتْ سَيَّارَةٌۭ فَأَرْسَلُوا۟ وَارِدَهُمْ فَأَدْلَىٰ دَلْوَهُۥ ۖ قَالَ يَـٰبُشْرَىٰ هَـٰذَا غُلَـٰمٌۭ ۚ وَأَسَرُّوهُ بِضَـٰعَةًۭ ۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِمَا يَعْمَلُونَ ١٩
২০ ) শেষে তারা তাঁকে সামান্য দামে কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিল। ১৫ আর তার দামের ব্যাপারে তারা বেশী আশা করছিল না।
وَشَرَوْهُ بِثَمَنٍۭ بَخْسٍۢ دَرَٰهِمَ مَعْدُودَةٍۢ وَكَانُوا۟ فِيهِ مِنَ ٱلزَّٰهِدِينَ ٢٠
২১ ) মিসরে যে ব্যক্তি তাঁকে কিনেছিল ১৬ সে তার স্ত্রীকে ১৭ বললো, “একে ভালোভাবে রাখো, বিচিত্র নয় সে আমাদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা আমরা তাকে পুত্র বানিয়ে নেবো।” ১৮ এভাবে আমি ইউসুফের জন্য সে দেশে প্রতিষ্ঠা লাভের পথ বের করে দিলাম এবং তাঁকে সমস্যা ও বিষয়াবলী অনুধাবন করার জন্য যথোপযোগী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করলাম। ১৯ আল্লাহ্‌ তাঁর কাজ সম্পন্ন করেই থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।
وَقَالَ ٱلَّذِى ٱشْتَرَىٰهُ مِن مِّصْرَ لِٱمْرَأَتِهِۦٓ أَكْرِمِى مَثْوَىٰهُ عَسَىٰٓ أَن يَنفَعَنَآ أَوْ نَتَّخِذَهُۥ وَلَدًۭا ۚ وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِى ٱلْأَرْضِ وَلِنُعَلِّمَهُۥ مِن تَأْوِيلِ ٱلْأَحَادِيثِ ۚ وَٱللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰٓ أَمْرِهِۦ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ٢١
২২ ) আর যখন সে তাঁর পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, আমি তাঁকে ফায়সালা করার শক্তি ও জ্ঞান দান করলাম। ২০ এভাবে আমি নেক লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُۥٓ ءَاتَيْنَـٰهُ حُكْمًۭا وَعِلْمًۭا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُحْسِنِينَ ٢٢
.
.
১২.
মূল ইবারতে وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ বাক্য এমনভাবে এসেছে যার ফলে তার তিনটি অর্থ হয় এবং তিনটি অর্থই এখানে মানানসই বলে মনে হয়। একটি অর্থ হচ্ছে, আমি ইউসুফকে এ সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম এবং তার ভাইয়েরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখবর ছিল যে, তাকে অহীর মাধ্যমে সবকিছু জানানো হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তুমি এমন অবস্থায় তাদের এ কর্ম সম্পর্কে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেবে যেখানে তোমার অবস্থানের ব্যাপারটি তারা কল্পনাও করতে পারবে না। তৃতীয় অর্থটি হচ্ছে, আজ এরা না জেনে বুঝে একটি কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে এর ফলাফল কি হবে তা এরা জানে না।

এ সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যে কি সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল বাইবেল ও তালমূদে এর কোন উল্লেখ নেই। বিপরীত পক্ষে তালমূদে যে বর্ণনা এসেছে তা হচ্ছে এই যে, ইউসুফকে যখন কূপে ফেলে দেয়া হলো তখন তিনি জোরে জোরে কাঁদতে থাকলেন এবং চিৎকার করে ভাইদের কাছে ফরিয়াদ করলেন। কুরআনের বর্ণনা পড়লে মনে হবে এমন এক যুবকের কথা বলা হচ্ছে যিনি আগামীতে ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। অন্যদিকে তালমূদ পড়লে যে ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠবে তা হচ্ছে এই যে, জনমানবশূন্য বিয়াবনে কয়েকজন বদ্দু একটি বালককে কূপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে এবং এ সময় একজন সাধারণ বালক যা করে সে-ও তাই করছে।

.
.
১৩.
কুরআনের ইবারতে صَبْرٌ جَمِيلٌ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর শাব্দিক অনুবাদ “ভালো সবর” হতে পারে। এর অর্থ হয় এমন সবর যার মধ্যে অভিযোগ, ফরিয়াদ, ভয়-ভীতি ও কান্নাকাটি নেই। একজন উচ্চ ও প্রশস্ত হৃদয়বত্তার অধিকারী মানুষের ওপর যে বিপদ আসে তাকে ধীর স্থির চিত্তে বরদাশত করে যাওয়াই এ সবরের প্রকৃতি।
১৪.
বাইবেল ও তালমূদ এখানে হযরত ইয়াকূবের প্রতিক্রিয়ার এমন ছবি এঁকেছে যা যে কোন সাধারণ বাপের প্রতিক্রিয়া থেকে কোন অংশেই ভিন্নতর নয়। বাইবেলের বর্ণনা হচ্ছে, “তখন ইয়াকূব নিজের জামা ফেড়ে ফেলেন, নিজের কোমরের সাথে চট জড়িয়ে নেন এবং বহুদিন পর্যন্ত ছেলের জন্য মাতম করতে থাকেন।” তালমূদে বলা হয়েছে, “ইয়াকূব ছেলের জামা চিনতে পেরেই উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে যান এবং দীর্ঘক্ষণ নিথর-নিস্পন্দ হয়ে পড়ে থাকেন। তারপর উঠে বিকট জোরে চিৎকার দিয়ে বলেন, হ্যাঁ এ আমার ছেলের জামা। এরপর তিনি বছরের পর বছর ধরে ইউসুফের জন্য মাতম করতে থাকেন।”

এ বর্ণনায় হযরত ইয়াকূবকে ঠিক তেমনটি করতে দেখা যাচ্ছে যেমনটি এ অবস্থায় প্রত্যেক বাপ করে থাকে। কিন্তু কুরআন এর যে বর্ণনা দিয়েছে তা আমাদের সামনে একটি অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ছবি তুলে ধরেছে। এ ব্যক্তি আপাদমস্তক ধৈর্য ও সহিষ্ণুতর প্রতিমূর্তি। এতবড় শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক খবর শুনেও তিনি নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন না। প্রখর বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিস্থিতির সঠিক চেহারা অনুমান করতে পারছেন। তিনি বুঝতে পারেন এটা একটা বানোয়াট কথা। তাঁর হিংসুটে ছেলেরা ঘটনাটা সাজিয়ে তাঁর সামনে পেশ করেছে। তারপর বিশাল হৃদয় ব্যক্তিদের মতো তিনি সবর করেন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করেন।

.
১৫.
ঘটনাটা সহজভাবে বলতে গেলে এরূপ বলা যায় যে, ইউসুফের ভাইয়েরা হযরত ইউসুফকে কূপের মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে কাফেলার লোকজন এসে তাঁকে সেখান থেকে বের করে আনে। তারা তাঁকে মিসরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে। কিন্তু বাইবেলের বর্ণনা হচ্ছে, ইউসুফের ভাইয়েরা পরে ইসমাঈলীদের একটি কাফেলা দেখে ইউসুফকে কূয়া থেকে বের করে তাদের হাতে বিক্রি করে দিতে চায়। কিন্তু তার আগেই মাদয়ানের সওদাগর তাঁকে কূয়া থেকে বের করে ফেলে। এ সওদাগরেরা বিশ দিরহামে ইউসুফকে ইসমাঈলীদের হাতে বিক্রি করে দেয়। সামনের দিকে গিয়ে বাইবেল লেখকরা একথা ভুলে যান যে, ইতিপূর্বে তারা ইউসুফকে ইসমাঈলীদের হাতে বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন। তাই তারা ইসমাঈলীদের পরিবর্তে আবার মাদয়ানের সওদাগরদের দ্বারা তাঁকে মিসরীয়দের হাতে বিক্রি করাচ্ছেন। (দেখুন, আদি পুস্তক ৩৭: ২৫-২৮ এবং ৩৬) অন্যদিকে তালমূদের বর্ণনা হচ্ছে, মাদয়ানের সওদাগরেরা ইউসুফকে কূয়া থেকে বের করে এনে নিজেদের গোলামে পরিণত করে। অবশেষে তারা বিশ দিরহাম মূল্য পরিশোধ করে ইউসুফের ভাইদেরকে রাজি করে। তারপর তারা বিশ দিরহামের বিনিময়েই ইউসুফকে ইসমাঈলীদের হাতে বিক্রি করে। আর ইসমাঈলীরা মিসরে গিয়ে তাঁকে বিক্রি করে। এখান থেকেই মুসলমানদের মধ্যে এ বর্ণনার প্রচলন হয়েছে যে, ইউসুফের ভাইয়েরা ইউসুফকে বিক্রি করে কিন্তু জানা উচিত, কুরআন এ সমস্ত বর্ণনা সমর্থন করেনি।
.
১৬.
বাইবেলে এ ব্যক্তির নাম লেখা হয়েছে “পোটীফর”। সামনের দিকে গিয়ে কুরআন মজীদ একে “আযীয” নামে উল্লেখ করেছে। তারপর আবার এক জায়গায় হযরত ইউসুফের জন্যও এ উপাধি ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন মিসরের কোন বড় অফিসার অথবা পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। কারণ “আযীয” মানে হচ্ছে এমন কর্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি যার ক্ষমতাকে প্রতিহত করা যেতে পারে না। বাইবেল ও তালমূদের বর্ণনা হচ্ছে, তিনি ছিলেন বাদশাহর রক্ষক সেনাপতি (দেহরক্ষী বাহিনীর প্রধান)। ইবনে জারীর হযরত আবুদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি ছিলেন রাজকীয় অর্থ বিভাগের প্রধান।
১৭.
তালমূদে এ মহিলাটিকে যালীখা (Zelicha) নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এখান থেকেই এ নামটি মুসলমানদের বর্ণনায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের এখানে সাধারণভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে যে, পরবর্তীকালে হযরত ইউসুফের সাথে মহিলাটির বিয়ে হয়ে যায়। একথাটির আসলে কুরআনে বা ইসরাঈলী ইতিহাসে কোন ভিত্তি নেই। একজন নবী এমন একটি মহিলাকে বিয়ে করবেন যার অসতিপনা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতায়ই ধরা পড়েছে--- এটা আসলে তাঁর নবী সুলভ মর্যাদার তুলনায় অনেক নিম্নমানের। কুরআন মজীদে এ ব্যাপারে যে সাধারণ নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যেঃ

الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ

“অসৎ মেয়েরা অসৎ পুরুষদের জন্য এবং অসৎ পুরুষরা অসৎ মেয়েদের জন্য আর পবিত্র মেয়েরা পবিত্র পুরুষদের জন্য এবং পবিত্র পুরুষরা পবিত্র মেয়েদের জন্য।”

১৮.
তালমূদের বর্ণনা মতে এ সময় হযরত ইউসুফের বয়স ছিল ১৮ বছর। পোটীফর তাঁর গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে, এ যুবক গোলাম নয় বরং কোন অভিজাত পরিবারের আদরের দুলাল এবং অবস্থার আবর্তন তাঁকে এখানে টেনে এনেছে। তাঁকে কেনার সময়ই তিনি সওদাগরদের বলেনঃ এ ছেলে তো কোন গোলাম বলে মনে হচ্ছে না, আমার সন্দেহ হচ্ছে তোমরা একে কোথাও থেকে চুরি করে এনেছো এ কারণে পোটীফর তাঁর সাথে দাস সুলভ ব্যবহার করেননি। বরং তাঁর ওপর নিজের গৃহের এবং নিজের যাবতীয় সম্পদ-সম্পত্তি পরিচালনার একচ্ছত্র দায়িত্ব অর্পণ করেন। বাইবেলের বর্ণনা মতে “তিনি নিজের সবকিছু ইউসুফের হাতে ছেড়ে দেন এবং শুধুমাত্র খাবার রুটি টুকু ছাড়া নিজের আর কোন জিনিসেরই তাঁর খবর ছিল না।” (আদি পুস্তক ৩৯: ৬)
১৯.
এ পর্যন্ত হযরত ইউসুফের জীবন গড়ে উঠেছিল বিজন মরু প্রান্তরে আধা যাযাবর ও পশু পালকদের পরিবেশে। কেনান ও উত্তর আরব এলাকায় সে সময় কোন সংগঠিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছিল না এবং সেখানকার সমাজ-সংস্কৃতি তেমন কোন ধরনের উন্নতি লাভ করেনি। সেখানে ছিল কিছু সংখ্যক স্বাধীন উপজাতির বাস। তারা মাঝে মাঝে এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বসবাস করতো। আবার কোন কোন উপজাতি বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে নিজেদের ছোট ছোট রাষ্ট্রও গঠন করে নিয়েছিল। মিসরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী এসব লোকের অবস্থা ছিল প্রায় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্বাধীন পাঠান উপজাতিদের মতো। এখানে হযরত ইউসুফ যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন তাতে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত ছিল বেদুইন জীবনের সৎগুণাবলী এবং ইবরাহিমী পরিবারের আল্লাহমুখী জীবন চিন্তা ও ধর্মচর্চা। কিন্তু মহান আল্লাহ সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে সুসভ্য ও উন্নত দেশ অর্থাৎ মিসরে তাঁর মাধ্যমে যে কাজ নিতে চাচ্ছিলেন এবং এ জন্য যে পর্যায়ের জানাশোনা, অভিজ্ঞতা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন ছিল তার বিকাশ সাধনের কোন সুযোগ বেদুইন জীবনে ছিল না। তাই আল্লাহ তাঁর সর্বময় ক্ষমতাবলে তাঁকে মিসর রাজ্যের একজন বড় সরকারী কর্মচারীর কাছে পৌঁছিয়ে দিলেন। আর তিনি তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা দেখে তাঁকে নিজের গৃহ ও ভূসম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব দান করলেন। এভাবে ইতিপূর্বে তাঁর যেসব যোগ্যতাকে কোন কাজে লাগনো হয়নি তা পূর্ণ বিকাশ লাভ করার সুযোগ পেয়ে গেলো। ছোট্ট একটি জমিদারী পরিচালনার মাধ্যমে তিনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করলেন তা আগামীতে একটি বড় রাষ্ট্রের আইন-শৃংখলা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল। এ আয়াতে এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
.
২০.
কুরআনের ভাষায় সাধারণভাবে এমন শব্দের মানে হয় “নবুওয়াত দান করা।” ফায়সালা করার শক্তিকে কুরআনের মূল ভাষ্যে বলা হয়েছে “হুকুম।” এ হুকুম অর্থ কর্তৃত্বও হয়। কাজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বান্দাকে হুকুম দান করার মানে হলো আল্লাহ তাঁকে মানব জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে ফায়সালা দান করার যোগ্যতা দান করেছেন আবার এজন্য ক্ষমতাও অর্পণ করেছেন। আর “জ্ঞান” বলতে এমন বিশেষ সত্যজ্ঞান বুঝানো হয়েছে যা নবীদেরকে অহীর মাধ্যমে সরাসরি দেয়া হয়।
.
অনুবাদ: