আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
امرو القيس حامل لواء شعراء الجاهلية الى النار
“কিয়ামতের দিন কবি ইমরাউল কয়েসের হাতে থাকবে জাহেলী কাব্যচর্চার ঝাণ্ডা এবং আরবের জাহেলিয়াত পন্থী সমস্ত কবি তার নেতৃত্বে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যাবে।”
এ দু’ধরনের শোভাযাত্রা কোন্ ধরনের জৌলুম ও জাঁক জমকের সাথে তাদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাবে তার চিত্র এখন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের চিন্তা ও কল্পনার পটে এঁকে নিতে পারে। যেসব নেতা দুনিয়ায় লোকদেরকে গোমরাহ করেছে এবং সত্য বিরোধী পথে চালিয়েছে তাদের অনুসারীরা যখন নিজেদের চোখে দেখে নেবে এ জালেমরা কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে তাদেরকে টেনে এনেছে তখন তারা নিজেদের সমস্ত বিপদ-মুসীবতের জন্য তাদেরকে দায়ী মনে করবে এবং তাদের শোভাযাত্রা তাদেরকে নিয়ে এমন অবস্থায় জাহান্নামের দিকে রওয়ানা দেবে যে, আগে আগে তাদের নেতারা চলবে এবং তারা পেছনে পেছনে তাদেরকে গালি দিতে দিতে এবং তাদের প্রতি লানত বর্ষণ করতে করতে চলতে থাকবে। অন্যদিকে যাদের নেতৃত্ব মানুষকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতের অধিকারী করবে তাদের অনুসারীরা নিজেদের শুভ পরিণাম দেখে তাদের নেতাদের জন্য দোয়া করতে থাকবে এবং তাদের ওপর প্রশংসা ও শুভেচ্ছার পুষ্প বর্ষণ করতে করতে এগিয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন থেকে যায়, ইতিহাসের সেই জিনিসটি কি, যাকে আখেরাত ও তার আযাবের আলামত বলা যেতে পারে? এর জবাবে বলা যায়, যে ব্যক্তি ইতিহাসকে শুধুমাত্র ঘটনার সমষ্টি মনে করে না বরং এ ঘটনার যুক্তি প্রমাণ নিয়েও মাথা ঘামায় এবং তা থেকে ফলাফল গ্রহণ করতেও অভ্যস্ত হয় সে সহজেই তা অনুধাবন করতে পারে। মানবজাতির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে যে ধারাবাহিকতা ও নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে জাতি, সম্প্রদায় ও দলের উত্থান ও পতন ঘটতে থেকেছে এবং এ উত্থান ও পতনে যেমন সুস্পষ্টভাবে কিছু নৈতিক কার্যকারণ সক্রিয় থেকেছে আর পতনশীল জাতিগুলো যে ধরনের মারাত্মক ও শিক্ষণীয় অবস্থার মধ্য দিয়ে পতন ও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে গেছে এসব কিছুই এ অকাট্য সত্যের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবহ যে, মানুষ এ বিশ্ব-জাহানে এমন একটি রাষ্ট্র শক্তির অধীন যে নিছক অন্ধ প্রাকৃতিক আইনের ওপর রাজত্ব করছে না বরং তার নিজের এমন একটি ন্যায়সঙ্গত নৈতিক বিধান আছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে সে নৈতিকতার একটি বিশেষ সীমানার ওপরে অবস্থানকারীদেরকে পুরস্কৃত করে, যারা এ সীমানার নীচে নেমে আসে তাদেরকে কিছুকালের জন্য ঢিল দিতে থাকে এবং যখন তারা এর অনেক নীচে নেমে যায় তখন তাদেরকে এমনভাবে ঠেলে ফেলে দেয় যে, তারা ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ইতিহাস হয়ে যায়। একটি ধারাবাহিক বিন্যাস সহকারে সবসময় এ ঘটনাবলীর প্রকাশ হতে থাকার ফলে এ ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহেরও অবকাশ থাকে না যে, পুরস্কার ও শাস্তি এবং প্রতিদান ও প্রতিবিধান এ বিশ্ব-জাহানের রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি স্থায়ী আইন।
তারপর বিভিন্ন জাতির ওপর যেসব আযাব এসেছে সেগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে অনুমান করা যায় যে আইনের দৃষ্টিতে পুরস্কার ও শাস্তির নৈতিক বাদী এ আযাবগুলোর মাধ্যমে কিছুটা অবশ্যি পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এখনো এ দাবীর বিরাট অংশ অপূর্ণ রয়েছে গেছে। কারণ দুনিয়ায় যে আযাব এসেছে তা কেবলমাত্র সমকালে দুনিয়ার বুকে যে প্রজন্ম বর্তমান ছিল তাদেরকেই পাকড়াও করেছে। কিন্তু যে প্রজন্ম অসৎকাজের বীজ বপন করে জুলুম-নির্যাতন ও অসৎকাজের ফসল তৈরী করে তা কাটার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিল এবং যাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হলো পরবর্তী প্রজন্মকে, তারা যেন প্রতিদান ও প্রতিশোধের আইনের কার্যকারিতা থেকে পরিষ্কার গা বাঁচিয়ে চলে গেছে। এখন যদি আমরা ইতিহাস অধ্যয়নের মাধ্যমে বিশ্ব-জাহানের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মেজাজ সঠিকভাবে বুঝতে পেরে থাকি। তাহলে আমাদের এ অধ্যয়নই একথার সাক্ষ্য দেবার জন্য যথেষ্ট যে, ইনসাফ ও বুদ্ধিবৃত্তির দৃষ্টিতে প্রতিদান ও প্রতিশোধের আইনের যে নৈতিক চাহিদাগুলো এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে সেগুলো পূর্ণ করার জন্য এ ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিশ্চয়ই আবার একটি দ্বিতীয় বিশ্বের জন্ম দেবে এবং সেখানে দুনিয়ার সমস্ত জালেমকে তাদের কৃতকর্মের পুরোপুরি বদলা দেয়া হবে। সেই বদলা দুনিয়ার এ আযাবগুলো থেকে হবে অনেক বেশী কঠিন ও কঠোর। (দেখুন সূরা আ’রাফ ৩০ এবং সূরা ইউনূস ১০ টীকা।)