পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

১২৪ আয়াত

১২৪ ) আর যে ব্যক্তি কোন সৎকাজ করবে, সে পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন, তবে যদি সে মুমিন হয়, তাহলে এই ধরনের লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের এক অণু পরিমাণ অধিকারও হরণ করা হবে না।
وَمَن يَعْمَلْ مِنَ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًۭا ١٢٤
১২৫ ) সেই ব্যক্তির চাইতে ভালো আর কার জীবনধারা হতে পারে, যে আল্লাহর সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে, সৎনীতি অবলম্বন করেছে এবং একনিষ্ট হয়ে ইবরাহীমের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে? সেই ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে আল্লাহ‌ নিজের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলেন।
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًۭا مِّمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌۭ وَٱتَّبَعَ مِلَّةَ إِبْرَٰهِيمَ حَنِيفًۭا ۗ وَٱتَّخَذَ ٱللَّهُ إِبْرَٰهِيمَ خَلِيلًۭا ١٢٥
১২৬ ) আসমান ও যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। ১৫০ আর আল্লাহ‌ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। ১৫১
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍۢ مُّحِيطًۭا ١٢٦
১২৭ ) লোকেরা মেয়েদের ব্যাপারে তোমার কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করছে। ১৫২ বলে দাও, আল্লাহ‌ তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে ফতোয়া দেন এবং একই সাথে সেই বিধানও স্মরণ করিয়ে দেন, যা প্রথম থেকে এই কিতাবে তোমাদের শুনানো হচ্ছে। ১৫৩ অর্থাৎ এই এতিম মেয়েদের সম্পর্কিত বিধানসমূহ, যাদের হক তোমরা আদায় করছো না ১৫৪ এবং যাদেরকে বিয়ে দিতে তোমরা বিরত থাকছো (অথবা লোভের বশবর্তী হয়ে নিজেরাই যাদেরকে বিয়ে করতে চাও) । ১৫৫ আর যে শিশুরা কোন ক্ষমতা রাখে না তাদের সম্পর্কিত বিধানসমূহ। ১৫৬ আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, এতিমদের সাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ইনসাফের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং যে কল্যাণ তোমরা করবে তা আল্লাহর অগোচর থাকবে না।
وَيَسْتَفْتُونَكَ فِى ٱلنِّسَآءِ ۖ قُلِ ٱللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ وَمَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فِى ٱلْكِتَـٰبِ فِى يَتَـٰمَى ٱلنِّسَآءِ ٱلَّـٰتِى لَا تُؤْتُونَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُونَ أَن تَنكِحُوهُنَّ وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ ٱلْوِلْدَٰنِ وَأَن تَقُومُوا۟ لِلْيَتَـٰمَىٰ بِٱلْقِسْطِ ۚ وَمَا تَفْعَلُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِهِۦ عَلِيمًۭا ١٢٧
১২৮ ) যখনই ১৫৭ কোন স্ত্রীলোক নিজের স্বামীর কাছ থেকে অসদাচরণ অথবা উপেক্ষা প্রদর্শনের আশঙ্কা করে, তারা দু’জনে (কিছু অধিকারের কমবেশীর ভিত্তিতে) যদি পরস্পর সন্ধি করে নেয়, তাহলে এতে কোন দোষ নেই। যে কোন অবস্থায়ই সন্ধি উত্তম। ১৫৮ মন দ্রুত সংকীর্ণতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ১৫৯ কিন্তু যদি তোমরা পরোপকার করো ও আল্লাহভীতি সহকারে কাজ করো, তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখো, আল্লাহ‌ তোমাদের এই কর্মনীতি সম্পর্কে অনবহিত থাকবেন না। ১৬০
وَإِنِ ٱمْرَأَةٌ خَافَتْ مِنۢ بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًۭا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَآ أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًۭا ۚ وَٱلصُّلْحُ خَيْرٌۭ ۗ وَأُحْضِرَتِ ٱلْأَنفُسُ ٱلشُّحَّ ۚ وَإِن تُحْسِنُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًۭا ١٢٨
১২৯ ) স্ত্রীদের মধ্যে পুরোপুরি ইনসাফ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তোমরা চাইলেও এ ক্ষমতা তোমাদের নেই। কাজেই (আল্লাহর বিধানের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, ) এক স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অন্য স্ত্রীর প্রতি ঝুঁকে পড়বে না। ১৬১ যদি তোমরা নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, তাহলে আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ১৬২
وَلَن تَسْتَطِيعُوٓا۟ أَن تَعْدِلُوا۟ بَيْنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا۟ كُلَّ ٱلْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلْمُعَلَّقَةِ ۚ وَإِن تُصْلِحُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًۭا رَّحِيمًۭا ١٢٩
১৩০ ) কিন্তু স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পর থেকে আলাদা হয়েই যায়, তাহলে আল্লাহ‌ তার বিপুল ক্ষমতার সাহায্যে প্রত্যেককে অন্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ‌ ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি মহাজ্ঞানী।
وَإِن يَتَفَرَّقَا يُغْنِ ٱللَّهُ كُلًّۭا مِّن سَعَتِهِۦ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ وَٰسِعًا حَكِيمًۭا ١٣٠
১৩১ ) আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছিলাম তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও আল্লাহর ভয় করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তোমরা না মানতে চাও না মানো, কিন্তু আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি অভাব মুক্ত ও সমস্ত প্রংশসার অধিকারী।
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ وَصَّيْنَا ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ وَإِن تَكْفُرُوا۟ فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدًۭا ١٣١
১৩২ ) হ্যাঁ, আল্লাহ‌ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক। আর কার্যসম্পাদনের জন্য তিনিই যথেষ্ট।
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلًا ١٣٢
১৩৩ ) তিনি চাইলে তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়ে তোমাদের জায়গায় অন্যদেরকে নিয়ে আসবেন এবং তিনি এ ব্যাপারে পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।
إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ أَيُّهَا ٱلنَّاسُ وَيَأْتِ بِـَٔاخَرِينَ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ ذَٰلِكَ قَدِيرًۭا ١٣٣
.
.
১৫০.
অর্থাৎ আল্লাহর সামনে আনুগত্যের মাথা নত করে দেয়া এবং আত্মম্ভরিতা ও স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বিরত থাকা প্রকৃত সত্যের সাথে যথার্থ সামঞ্জস্যশীল হবার কারণে সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ‌ যখন পৃথিবী, আকাশ ও এর মধ্যকার যাবতীয় বস্তুর মালিক তখন তার আনুগত্য ও বন্দেগী করতে প্রস্তুত হওয়া এবং বিদ্রোহী মনোভাব পরিহার করাই হচ্ছে মানুষের জন্য সঠিক পন্থা।
১৫১.
অর্থাৎ মানুষ যদি আল্লাহর সামনে আনুগত্যের মাথা নত না করে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহমূলক আচরণ থেকে বিরত না হয় তাহলে আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিজেকে রক্ষা করে সে কোথাও পালিয়ে যেতে পারে না। আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও কুদরাত চারদিক থেকে তাকে বেষ্টনকরে আছে।
১৫২.
একথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি যে, মেয়েদের ব্যাপারে লোকেরা কি জিজ্ঞেস করে। তবে পরে যে ফতোয়া দেয়া হয়েছে তা থেকে প্রশ্নের ধরন স্বতস্ফূর্তভাবে সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
১৫৩.
এটা আসল প্রশ্নের জওয়াব নয়। তবে লোকদের প্রশ্নের প্রতিদৃষ্টি নিক্ষেপ করার পূর্বে আল্লাহ‌ এই সূরার শুরুতে বিশেষ করে এতিম মেয়েদের সম্পর্কে এবং সাধারণভাবে এতিম শিশুদের ব্যাপারে যেসব বিধি-বিধান বর্ণনা করেছিলেন সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন। আল্লাহর দৃষ্টিতে এতিমদের অধিকারের গুরুত্ব যে কত বেশী এ থেকে তা সহজেই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথম দুই রুকূ’তে তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য জোর তাগীদ করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে যথেষ্ট মনে করা হয়নি। কাজেই এখন সামাজিক প্রসঙ্গের আলোচনা আসতেই লোকদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেয়ার পূর্বেই আল্লাহ‌ নিজেই এতিমদের স্বার্থের প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
১৫৪.
সেই আয়াতটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যাতে বলা হয়েছেঃ ‌‌“যদি এতিমদের সাথে বে-ইনসাফী করতে ভয় পাও তাহলে যেসব মেয়েদের তোমরা পছন্দ করো-------” (সূরা-আননিসা-৩)
১৫৫.
-----------------এর অর্থও হতে পারেঃ “তোমরা তাদেরকে বিয়ে করার আগ্রহ পোষণ করো।” আবার এ অর্থও হতে পারে, “তোমরা তাদেরকে বিয়ে করা পছন্দ কর না।” হযরত আয়েশা (রা.) এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ কিছু লোকের অভিভাবকত্বে এমন কিছু এতিম মেয়ে ছিল, যাদের কাছে কিছু পৈতৃক ধন-সম্পত্তি ছিল। তারা এই মেয়েগুলোর ওপর নানাভাবে জুলুম করতো। মেয়েরা সম্পদশালিনী হবার সাথে সাথে সুন্দরী হলে তারা তাদের বিয়ে করতে চাইতো এবং মোহরানা ও খোরপোষ আদায় না করেই তাদের সম্পদ ও সৌন্দর্য উভয়টিই ভোগ করতে চাইতো। আর তারা অসুন্দর বা কুৎসিত হলে নিজেরা তাদের বিয়ে করতো না এবং অন্য কারো সাথে তাদের বিয়ে দিতেও চাইতো না। কারণ অন্য কারো সাথে বিয়ে দিলে এমন কোন শক্ত মালিক পক্ষ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিল, যে তাদের থেকে এতিমদের হক বুঝে নেয়ার দাবী করতো।
১৫৬.
এই সূরার প্রথম ও দ্বিতীয় রুকূ’তে এতিমদের অধিকার সম্পর্কে যে সমস্ত বিধান বর্ণিত হয়েছে এখানে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
.
১৫৭.
আসল প্রশ্নের জবাব এখান থেকে শুরু হচ্ছে। এ জবাবটি বুঝতে হলে প্রথমে প্রশ্নটি ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। জাহেলী যুগে এক ব্যক্তি অসংখ্য বিয়ে করতে পারতো। এ ব্যাপারে তার অবাধ স্বাধীনতা ছিল। আর এই অসংখ্য স্ত্রীদের জন্য কোন অধিকারও সংরক্ষিত ছিল না। সূরা নিসার প্রাথমিক আয়াতগুলো নাযিল হবার পর এই স্বাধীনতার ওপর দু’ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়। এক, স্ত্রীদের সংখ্যা সর্বাধিক চারের মধ্যে সীমিত করে দেয়া হয়। দুই, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার জন্য ‘আদল’ (অর্থাৎ সবদিক দিয়ে সমান ব্যবহার) এর শর্ত আরোপ করা হয়। এখানে প্রশ্ন ওঠে, যদি কোন ব্যক্তির স্ত্রী বন্ধা হয় বা চিররুগ্না হয় অথবা কোন ক্রমেই তার স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্ক বজায় রাখার যোগ্যতা না থাকে এবং এ অবস্থায় স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে কি উভয়ের প্রতি সমান আকর্ষণ অনুভব করা, সমান ভালোবাসা পোষণ করা এবং উভয়ের সাথে সমান দৈহিক সম্পর্ক রাখা তার জন্য অপরিহার্য গণ্য হবে? আর যদি সে এমনটি না করে, তাহলে আদলের শর্ত কি এটাই দাবী করে যে, দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করার পূর্বে সে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেবে? এছাড়াও প্রথম স্ত্রী নিজেই যদি বিচ্ছিন্ন হতে না চায় তাহলে কি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা বোঝাপড়ার মাধ্যমে যে স্ত্রী আকর্ষণহীন হয়ে পড়েছে সে স্বেচ্ছায় নিজের কিছু অধিকার ত্যাগ করে তাকে তালাক দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য স্বামীকে রাজী করতে পারে? এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা কি আদলের বিরোধী হবে? সংশ্লিষ্ট আয়াতটিতে উপরোল্লিখিত প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়া হয়েছে।
১৫৮.
অর্থাৎ তালাক ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে যে স্ত্রী তার জীবনের একটি অংশ এক স্বামীর সাথে অতিবাহিত করেছে এভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও চুক্তির মাধ্যমে বাকি জীবনটা তারই সাথে অবস্থান করাটাই উত্তম।
১৫৯.
স্ত্রী যদি নিজের মধ্যে স্বামীর জন্য আকর্ষণহীনতার কারণ অনুভব করতে থাকে এবং এরপরও সে স্বামীর কাছে থেকে একজন আকর্ষণীয় স্ত্রীর প্রতি ব্যবহার প্রত্যাশা করে তাহলে এটিই হবে সেই স্ত্রীর মনের সংকীর্ণতা। আর স্বামী যদি এমন কোন স্ত্রীকে সীমাতিরিক্তভাবে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে এবং তার অধিকার অসহনীয় পর্যায়ে ছিনিয়ে নিতে চায়, যে স্ত্রী স্বামীর মনরাজ্যে সকল প্রকার আকর্ষণ হারিয়ে বসার পরও তার সাথে অবস্থান করতে চায়, তাহলে এটি হবে স্বামীর পক্ষ থেকে মনের সংকীর্ণতার পরিচয়।
১৬০.
এখানে আল্লাহ‌ আবার পুরুষেরই উদার মনোবৃত্তির প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। এ ধরনের ব্যাপারে এটিই আল্লাহর রীতি। তিনি সকল প্রকার আকর্ষণহীনতাসত্ত্বেও মেয়েটির সাথে অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহার করার জন্য পুরুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। কেননা মেয়েটি বছরের পর বছর ধরে তার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেছে। এই সঙ্গে আল্লাহকে ভয় করারও নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা কোন মানুষের ভুল-ত্রুটির কারণে তিনি তার দিক থেকে যদি নিজের কৃপাদৃষ্টি ফিরিয়ে নেন এবং তারভাগ্যের অংশ হ্রাস করে দেন, তাহলে দুনিয়ায় তার আশ্রয়লাভ করার আর কোন স্থানইথাকে না।
১৬১.
এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ সব অবস্থায় একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সব দিক দিয়ে পূর্ণ সাম্য কায়েম করতে পারে না। একটি স্ত্রী সুন্দরী রুপসী এবং অন্যটি কুৎসিত। একজন যুবতী এবং অন্যজন বিগত যৌবনা। একজন চির রুগ্না ও অন্যজন সবল স্বাস্থ্যবতী। একজন কর্কশ স্বভাবের ও কটূভাষিণী এবং অন্যজন মধুর প্রকৃতির ও মিষ্টভাষিণী। স্ত্রীদের মধ্যে এ ধরনের আরো বিভিন্ন প্রকৃতিগত পার্থক্য থাকতে পারে। এর ফলে স্বভাবতই এক স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ বেশী ও অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হতে পারে। এহেন অবস্থায় আইন এ দাবী করে না যে, ভালোবাসা, আকর্ষণ ও দৈহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে পরিপূর্ণ সমতা কায়েম রাখা অপরিহার্য। বরং আইন কেবল এতটুকু দাবী করে, যখন তুমি আকর্ষণহীনতা সত্ত্বেও একটি মেয়েকে তালাক দিচ্ছো না এবং নিজে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বা তার কামনা অনুযায়ী তাকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত রাখছো, তখন তার সাথে অবশ্যি এতটুকু সম্পর্ক রাখো যার ফলে সে কার্যত স্বামীহীনা হয়ে না পড়ে। এ অবস্থায় এক স্ত্রীর তুলনায় অন্য স্ত্রীর প্রতি বেশী ঝুকে পড়া ও তার প্রতিবেশী অনুরক্ত হওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অন্য স্ত্রীর প্রতি যেন এমনভাবে অবহেলা ও অনীহা প্রদর্শিত না হয় যার ফলে মনে হতে থাকে যে, তার কোন স্বামীই নেই।

এ আয়াত থেকে কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কুরআন একদিকে আদলের শর্ত সহকারে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয় আবার অন্যদিকে আদলকে অসম্ভব গণ্য করে এই অনুমতিকে কার্যত বাতিল করে দেয়। কিন্তু আসলে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন অবকাশই এ আয়াতে নেই। কুরআন যদি কেবল এতটুকু বলেই ক্ষান্ত হতো যে, “তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে আদল কায়েম করতে পারবে না,” তাহলে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু এর পরপরই বলা হয়েছে, “কাজেই এক স্ত্রীর প্রতি সম্পূর্ণরুপে ঝুঁকে পড়ো না।” এ বাক্যটি উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন সুযোগই এখানে রাখেনি। খৃস্টবাদী ইউরোপের কিছু নকলনবিশ এ ব্যাপারে নিতান্ত উদ্ভট সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন।

১৬২.
অর্থাৎ যদি তোমরা যথাসম্ভব ইচ্ছা করে জুলুম না করো এবং ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠার পরিচয় দিতে থাকো, তাহলে স্বাভাবিক অক্ষমতার কারণে ইনসাফ ও ন্যায়নীতির ব্যাপারে সামান্য যা ভুলচুক তোমরা করবে আল্লাহ তা মা‌‌‌’ফ করে দেবেন।
.
.
.
.
অনুবাদ: