পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

১৩৭ আয়াত

৬ ) হে লোকজন যারা ঈমান এনেছো, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততিকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো মানুষ এবং পাথর হবে যার জ্বালানী। ১৬ সেখানে রুঢ় স্বভাব ও কঠোর হৃদয় ফেরেশতারা নিয়োজিত থাকবে যারা কখনো আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে না এবং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাই পালন করে। ১৭ (তখন বলা হবে,)
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ قُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًۭا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَـٰٓئِكَةٌ غِلَاظٌۭ شِدَادٌۭ لَّا يَعْصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ٦
৭ ) হে কাফেরগণ! আজ ওযর প্রকাশ করো না। তোমরা যেমন আমল করছিলে তেমনটি প্রতিদানই দেয়া হচ্ছে। ১৮
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَا تَعْتَذِرُوا۟ ٱلْيَوْمَ ۖ إِنَّمَا تُجْزَوْنَ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٧
৮ ) হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর কাছে তাওবা করো, প্রকৃত তাওবা। ১৯ অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তোমাদের দোষ-ত্রুটিসমুহ দূর করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। ২০ সেটি হবে এমন দিন যেদিন আল্লাহ‌ তাঁর নবী এবং নবীর সঙ্গী ঈমানদারদের লাঞ্ছিত করবেন না। ২১ তাদের ‘নূর’ তাদের সামনে ও ডান দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে থাকবে এবং তারা বলতে থাকবে, হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের ‘নূর’ পূর্ণাঙ্গ করে দাও ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। তুমি সব কিছু করতে সক্ষম। ২২
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ تُوبُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ تَوْبَةًۭ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّـَٔاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ يَوْمَ لَا يُخْزِى ٱللَّهُ ٱلنَّبِىَّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ ۖ نُورُهُمْ يَسْعَىٰ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَـٰنِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَٱغْفِرْ لَنَآ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ٨
৯ ) হে নবী, কাফের ও মুনাফিকরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের প্রতি কঠোরতা দেখাও। ২৩ তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তা অত্যন্ত মন্দ ঠিকানা।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ جَـٰهِدِ ٱلْكُفَّارَ وَٱلْمُنَـٰفِقِينَ وَٱغْلُظْ عَلَيْهِمْ ۚ وَمَأْوَىٰهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ ٩
১০ ) আল্লাহ কাফেরদের ব্যাপারে নূহ এবং লুতের স্ত্রীদেরকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন। তারা আমার দুই নেক্‌কার বান্দার স্ত্রী ছিল। কিন্তু তারা তাদের স্বামীর সাথে খেয়ানত ২৪ করেছিল। তারা আল্লাহর মোকাবিলায় তাদের কোন কাজেই আসতে পারেনি। দু’জনকেই বলে দেয়া হয়েছেঃ যাও, আগুনে প্রবেশকারীদের সাথে তুমিও প্রবেশ কর।
ضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلًۭا لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ٱمْرَأَتَ نُوحٍۢ وَٱمْرَأَتَ لُوطٍۢ ۖ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَـٰلِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًۭٔا وَقِيلَ ٱدْخُلَا ٱلنَّارَ مَعَ ٱلدَّٰخِلِينَ ١٠
১১ ) আর ঈমানদারদের ব্যাপারে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করছেন। যখন সে দোয়া করলো, হে আমার রব, আমার জন্য তোমার কাছে জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও। আমাকে ফেরাউন ও তার কাজকর্ম থেকে রক্ষা করো ২৫ এবং জালেম কওমের হাত থেকে বাঁচাও।
وَضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلًۭا لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱمْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ٱبْنِ لِى عِندَكَ بَيْتًۭا فِى ٱلْجَنَّةِ وَنَجِّنِى مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِۦ وَنَجِّنِى مِنَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ ١١
১২ ) ইমরানের কন্যা ২৬ মারয়ামের উদাহরণও পেশ করছেন, যে তাঁর লজ্জাস্থানকে হিফাজত করেছিল। ২৭ অতঃপর আমি আমার পক্ষ থেকে তার মধ্যে রূহ ফুঁৎকার করছিলাম। ২৮ সে তার বাণীসমুহ এবং কিতাবসমুহের সত্যতা প্রতিপন্ন করেছে। সে ছিল আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ২৯
وَمَرْيَمَ ٱبْنَتَ عِمْرَٰنَ ٱلَّتِىٓ أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَـٰتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِۦ وَكَانَتْ مِنَ ٱلْقَـٰنِتِينَ ١٢
১৬.
এ আয়াত থেকে প্রকাশ পায় যে, আল্লাহর আযাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোন মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রকৃতির বিধান যে পরিবারটির নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে স্থাপন করেছে তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমত সে শিক্ষা দীক্ষা দেয়াও তার কাজ। তারা যদি জাহান্নামের পথে চলতে থাকে তাহলে যতটা সম্ভব তাদেরকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। তার সন্তান-সন্ততি পৃথিবীতে সুখী হোক তার শুধু এই চিন্তা হওয়া উচিত নয়। বরং এর চেয়েও তার বড় চিন্তা হওয়া উচিত এই যে, তারা যেন আখেরাতে জাহান্নামের ইন্ধন না হয়। বুখারীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল এবং তাকে তার অধীনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও রাখাল। তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।

পাথর হবে জাহান্নামের জ্বালানী। এর অর্থ পাথরের কয়লা। [ইবনে মাসউদ (রা.), ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ (রা.), ইমাম বাকের (র) ও সুদ্দীর মতে, এর অর্থ গন্ধকের পাথর।]

১৭.
অর্থাৎ কোন অপরাধীকে যে কোন শাস্তি দেয়ার নির্দেশই তাদের দেয়া হবে তা তারা হুবহু কার্যকরী করবে এবং কোন প্রকার দয়া মায়া দেখাবে না।
.
১৮.
এ দু’টি আয়াতের বাচনভঙ্গির মধ্যে মুসলমানদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারী বিদ্যমান। প্রথম আয়াতে মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, নিজেকে এবং নিজের পরিবার পরিজনকে এই ভয়ানক আযাব থেকে রক্ষা করো। দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, জাহান্নামে শাস্তি দিতে গিয়ে কাফেরদেরকে এ কথাটি বলা হবে। এভাবে স্বতঃই যে বিষয়টি প্রতিভাত হয় তা হচ্ছে, পৃথিবীতে মুসলমানদেরকে জীবনযাপনে এমন পদ্ধতি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে যার কারণে আখেরাতে তাদের পরিণাম কাফেরদের সাথে যুক্ত হবে।
১৯.
মূল আয়াতে تَوْبَةً نَصُوحًا শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষায় نصح শব্দের অর্থ নিষ্কলুষতা ও কল্যাণকামিতা। খাঁটি মধু যা মোম ও অন্যান্য আবর্জনা থেকে মুক্ত করা হয়েছে তাকে আরবীতে عسل ناصح বলা হয়। ছেঁড়া কাপড় সেলাই করে দেয়া এবং ফাঁটা ফাঁটা কাপড় ঠিক করে দেয়া বুঝাতে আরবী يصاحة الثوب শব্দ ব্যবহার করা হয়। অতএব, তাওবা শব্দের সাথে يصوح বিশেষণ যুক্ত করলে হয় তার আভিধানিক অর্থ হবে এমন তাওবা যার মধ্যে প্রদর্শনী বা মুনাফিকীর লেশমাত্র নেই। অথবা তার অর্থ হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজের কল্যাণ কামনা করবে এবং গোনাহ থেকে তাওবা করে নিজেকে মন্দ পরিণাম থেকে রক্ষা করবে। অথবা তার অর্থ হবে গোনাহর কারণে তার দ্বীনদারীর মধ্যে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে তাওবা দ্বারা তা সংশোধন করবে। অথবা সে তাওবা করে নিজের জীবনকে এমন সুন্দর করে গড়ে তুলবে যে, অন্যের জন্য সে উপদেশ গ্রহণের কারণ হবে এবং তাকে দেখে অন্যরাও তার মত নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে। ‘তাওবায়ে নাসূহ’ --এর আভিধানিক অর্থ থেকে এ অর্থসমূহই প্রতিভাত হয়। এরপর অবশিষ্ট থাকে তাওবায়ে নাসূহ এর শরয়ী অর্থ। আমরা এর শরয়ী অর্থের ব্যাখ্যা পাই যির ইবনে হুবাইশের মাধ্যমে ইবনে আবী হাতেম কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীসে। যির ইবনে হুবাইশ বলেনঃ আমি উবাই ইবনে কা’বের (রাঃ) কাছে ‘তাওবায়ে নাসূহ’ ---এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একই প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেনঃ এর অর্থ হচ্ছে, কখনো তোমার দ্বারা কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তুমি নিজের গোনাহর জন্য লজ্জিত হবে। তারপর লজ্জিত হয়ে সেজন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং ভবিষ্যতে আর কখনো ঐ কাজ করো না। হযরত উমর (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকেও এ অর্থই উদ্ধৃত হয়েছে। অন্য একটি বর্ণনা অনুসারে হযরত উমর (রাঃ) ‘তাওবায়ে নাসূহ’র সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবেঃ তাওবার পরে পুনরায় গোনাহ করা তো দূরের কথা তা করার আকাঙ্ক্ষা পর্যন্ত করবে না। (ইবনে জারীর)। হযরত আলী (রাঃ) একবার এক বেদুঈনকে মুখ থেকে ঝটপট করে তাওবা ও ইসতিগফারের শব্দ উচ্চারণ করতে দেখে বললেন, এতো মিথ্যাবাদীদের তাওবা। সে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে সত্যিকার তাওবা কি? তিনি বললেন সত্যিকার তাওবার সাথে ছয়টি জিনিস থাকতে হবে (১) যা কিছু ঘটেছে তার জন্য লজ্জিত হও। (২) নিজের যে কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে গাফলতি করছো তা সম্পাদন কর। (৩) যার হক নষ্ট করেছ তা ফিরিয়ে দাও। (৪) যাকে কষ্ট দিয়েছ তার কাছে মাফ চাও। (৫) প্রতিজ্ঞা করো ভবিষ্যতে এ গোনাহ আর করবে না এবং (৬) নফসকে এতদিন পর্যন্ত যেভাবে গোনাহর কাজে অভ্যস্ত করেছ ঠিক তেমনি ভাবে আনুগত্যে নিয়োজিত করো। এতদিন পর্যন্ত নফসকে যেভাবে আল্লাহর অবাধ্যতার মজায় নিয়োজিত রেখেছিলে এখন তাকে তেমনি আল্লাহর আনুগত্যের তিক্ততা আস্বাদন করাও (কাশ্শাফ)।

তাওবা সম্পর্কিত বিষয়ে আরো কয়েকটি জিনিস ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার। প্রথমত, প্রকৃতপক্ষে তাওবা হচ্ছে কোন গোনাহের কারণে এজন্য লজ্জিত হওয়া যে, তা আল্লাহর নাফরমানী। কোন গোনাহর কাজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বদনামের কারণ অথবা আর্থিক ক্ষতির কারণ হওয়ায় তা থেকে বিরত থাকার সংকল্প করা তাওবার সংজ্ঞায় পড়ে না। দ্বিতীয়ত, যখনই কেউ বুঝতে পারবে যে, তার দ্বারা আল্লাহর নাফরমানী হয়েছে, তার উচিত তৎক্ষনাৎ তাওবা করা এবং যেভাবেই হোক অবিলম্বে তার ক্ষতিপূরণ করা কর্তব্য, তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। তৃতীয়ত, তাওবা করে বারবার তা ভঙ্গ করা, তাওবাকে খেলার বস্তু বানিয়ে নেয়া এবং যে গোনাহ থেকে তাওবা করা হয়েছে বার বার তা করতে থাকা তাওবা মিথ্যা হওয়ার প্রমাণ। কেননা, তাওবার প্রাণ সত্তা হচ্ছে, কৃত গোনাহ সম্পর্কে লজ্জিত হওয়া। কিন্তু বার বার তাওবা ভঙ্গ করা প্রমাণ করে যে, তার মধ্যে লজ্জার অনুভূতি নেই। চতুর্থত, যে ব্যক্তি সরল মনে তাওবা করে পুনরায় ঐ গোনাহ না করার সংকল্প করেছে মানবিক দুর্বলতার কারণে যদি পুনরায় তার দ্বারা সেই গোনাহর পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে এক্ষেত্রে পূর্বের গোনাহ পুনরুজ্জীবিত হবে না তবে পরবর্তী গোনাহর জন্য তার পুনরায় তাওবা করা উচিত। পঞ্চমত, যখনই গোনাহর কথা মনে পড়বে তখনই নতুন করে তাওবা করা আবশ্যক নয়। কিন্তু তার প্রবৃত্তি যদি পূর্বের পাপময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে আনন্দ পায় তাহলে গোনাহর স্মৃতিচারণ তাকে আনন্দ দেয়ার পরিবর্তে লজ্জাবোধ সৃষ্টির কারণ না হওয়া পর্যন্ত তার বার বার তাওবা করা উচিত। কারণ, যে ব্যক্তি সত্যিই আল্লাহর ভয়ে গোনাহ থেকে তাওবা করেছে সে অতীতে আল্লাহর নাফরমানী করেছে এই চিন্তা করে কখনো আনন্দ অনুভব করতে পারে না। তা থেকে মজা পাওয়া ও আনন্দ অনুভব করা প্রমাণ করে যে, তার মনে আল্লাহর ভয় শিকড় গাড়তে পারেনি।

২০.
এ আয়াতের কথাটি ভেবে দেখার মত। এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, তাওবা করলে তোমাদের অবশ্যই মাফ করে দেয়া হবে এবং তোমাদেরকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। বরং তাদের এই প্রত্যাশা দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমরা সরল মনে তাওবা করো তাহলে অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ‌ তোমাদের সাথে এই আচরণ করবেন। এর অর্থ হলো, গোনাহগার বান্দার তাওবা কবুল করা এবং তাকে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে জান্নাত দান করা আল্লাহর জন্য ওয়াজিব নয়। বরং তিনি যদি মাফ করে দেন এবং পুরস্কারও দেন তাহলে তা হবে সরাসরি তাঁর দয়া ও মেহেরবানী। বান্দার তাঁর ক্ষমালাভের আশা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু তাওবা করলে ক্ষমা পাওয়া যাবে এই ভরসায় গোনাহ করা উচিত নয়।
২১.
অর্থাৎ তার উত্তম কার্যাবলীর পুরস্কার নষ্ট করবেন না। কাফের মুনাফিকদের এ কথা বলার সুযোগ মোটেই দেবেন না যে, আল্লাহর বন্দেগী করে এসব লোক কি প্রতিদান লাভ করেছে? লাঞ্ছনা ও অপমান পড়বে বিদ্রোহী ও নাফরমানদের ভাগে, বিশ্বাসী ও অনুগতদের ভাগে তা পড়বে না।
২২.
এ আয়াতটি সূরা হাদীদের ১২ ও ১৩ নং আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়লে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, ঈমানদারগণ যখন হাশরের ময়দান থেকে জান্নাতের দিকে যেতে থাকবেন তখনই তাদের আগে আগে ‘নূর’ অগ্রসর হওয়ার এই ঘটনা ঘটবে। সেখানে চারদিকে থাকবে নিকষ কালো অন্ধকার। যাদের জন্য দোযখের ফায়সালা হবে তারাই কেবল সেখানে অন্ধকারে ঠোকর খেতে থাকবে। আলো কেবল ঈমানদারদের সাথেই থাকবে। সেই আলোর সাহায্যে তারা পথ অতিক্রম করতে থাকবে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে অন্ধকারে হাতড়িয়ে বেড়ানো লোকদের আর্তনাদ ও বিলাপ শুনে শুনে ঈমানদারদের ওপর হয়তো ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে থাকবে এবং নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা স্মরণ করে তারাও আশঙ্কা করতে থাকবে যে, তাদের ‘নূর’ আবার ছিনিয়ে নেয়া না হয় এবং দুর্ভাগাদের মত তাদেরকেও অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরতে না হয়। তাই তারা দোয়া করতে থাকবে, হে আমাদের রব, আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দাও এবং জান্নাতে না পৌঁছা পর্যন্ত আমাদের ‘নূর’ কে অবশিষ্ট রাখ। ইবনে জারীর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রাঃ) উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, رَبَّنَا اَتْمِمَ لَنَا نُوْرَنَا এর অর্থ হচ্ছে, যতক্ষণ তারা সহী সালামতে পুলসেরাত অতিক্রম করে না যায় ততক্ষণ যেন তাদের নূর অবশিষ্ট থাকে এবং নিভে না যায়। হযরত হাসান বসরী, মুজাহিদ এবং দাহহাকের তাফসীরও প্রায় অনুরূপ। ইবনে কাসীর তাদের এই উক্তি উদ্ধৃত করেছেন, ঈমানদারগণ যখন দেখবেন মুনাফিকরা ‘নূর’ থেকে বঞ্চিত হয়ে গিয়েছে তখন তারা নিজেদের ‘নূরের’ পূর্ণতার জন্য দোয়া করতে থাকবে (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল হাদীদ, টীকা ১৭)।
২৩.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আত তাওবা, টীকা-৮২।
.
২৪.
এখানে খেয়ানতের অর্থ এ নয় যে, তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল। এখানে খেয়ানতের অর্থ হচ্ছে তারা হযরত নূহ (আঃ) ও লূতের (আঃ) সাথে ঈমানের পথে চলেনি, বরং তাদের বিরুদ্ধে দ্বীন ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করে এসেছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ কোন নবীর স্ত্রী কখনো ব্যভিচারী ছিল না। প্রকৃতপক্ষে এ দু’জন মহিলার খেয়ানত ছিল দ্বীনের ব্যাপারে। তারা হযরত নূহ (আঃ) ও লূতের (আঃ) দ্বীন গ্রহণ করেনি। হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রী তার কওমের জালেমদের কাছে ঈমান গ্রহণকারী সম্পর্কে খবর পৌঁছাত এবং হযরত লূতের (আঃ) স্ত্রী তার স্বামীর কাছে আগত লোকদের খবর তার কওমের দুশ্চরিত্র লোকদের কাছে পৌঁছে দিত। (ইবনে জারীর)
.
২৫.
অর্থাৎ ফেরাউন যেসব খারাপ কাজ-কর্ম করে আমাকে তার মন্দ পরিণামের অংশীদার করো না।
.
২৬.
হয়তো হযরত মারয়ামের বাপের নাম ইমরান ছিল, অথবা তাঁকে ইমরানের কন্যা বলার কারণ হচ্ছে, তিনি ইমরানের বংশধর ছিলেন।
২৭.
এটা ইহুদীদের অপবাদের জবাব। ইহুদীদের অপবাদ ছিল, তাঁর গর্ভে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম (নাউযুবিল্লাহ) কোন গোনাহর ফল ছিল। সূরা নিসার ১৫৬ আয়াতে এই জালেমদের এই অপবাদকে بُهْتَان عَظِيم মারাত্মক অপবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আন নিসা, টীকা-১৯০)।
২৮.
অর্থাৎ কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই তার গর্ভাশয়ে নিজের পক্ষ থেকে একটি প্রাণ সৃষ্টি করা হয়েছিল। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আন-নিসা, টীকা ২১২ ও ২১৩; সূরা আল-আম্বিয়া, টীকা-৮৯)।
২৯.
যে উদ্দেশ্যে এই তিন শ্রেণীর নারীর উদাহরণ পেশ করা হয়েছে এই সূরার ভূমিকায় তার ব্যাখ্যা করেছি। তাই এখানে তা পুনরালোচনার প্রয়োজন নেই।
অনুবাদ: