আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
প্রথম অর্থ হচ্ছে, মানুষ পৃথিবীতে যাদেরকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছে তারা কেউই আল্লাহর কাছে শাফায়াতকারী নয়। তাদের মধ্যে যারা পথভ্রষ্ট ও দুষ্কর্মশীল তারা নিজেরাই তো সেখানে অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হবে। তবে যারা জ্ঞানের ভিত্তিতে (না জেনে শুনে নয়) ন্যায় ও সত্যের সাক্ষ্য দিয়েছিলো তাদের কথা ভিন্ন।
দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, যারা শাফায়াত করার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার লাভ করবে তারাও কেবল সেই সব লোকের জন্যই শাফায়াত করতে পারবে যারা পৃথিবীতে জেনে শুনে (গাফলতিতে ও অজান্তে নয়) ন্যায় ও সত্যের সাক্ষ্য দিয়েছে। যে ব্যক্তি পৃথিবীতে ন্যায় ও সত্যের প্রতি রুষ্ঠ ছিল কিংবা না বুঝে শুনে أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ও বলতো এবং অন্যান্য উপাস্যদের উপাসনাও করতো এমন কোন ব্যক্তির শাফায়াত না তারা নিজেরা করবে না তা করার অনুমতি পাবে।
তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি বলে, সে যাদের উপাস্য বানিয়ে রেখেছে তারা অবশ্যই শাফায়াতের ক্ষমতা ও এখতিয়ার রাখে এবং আল্লাহর কাছে তাদের এমন ক্ষমতা ও আধিপত্য আছে যে, আকীদা-বিশ্বাস যাই হোক না কেন তারা যাকে ইচ্ছা মাফ করিয়ে নিতে পারে, তাহলে সে মিথ্যা বলে। আল্লাহর কাছে কারোরই এই মর্যাদা নেই। যে ব্যক্তি কারো জন্য এমন শাফায়াতের দাবী করে সে যদি জ্ঞানের ভিত্তিতে একথা সত্য হওয়ার প্রমাণ পেশ করতে পারে তাহলে সাহস করে এদিকে আসুক। কিন্তু সে যদি এরূপ প্রমাণ পেশ করার মত পজিশনে না থাকে--- এবং নিশ্চিতভাবেই নেই---তাহলে অযথা শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে কিংবা শুধু অনুমান, সংস্কার ও ধারণার বশবর্তী হয়ে এরূপ একটি আকীদা পোষণ করা একেবারেই অর্থহীন আর এই খেয়ালীপনার ওপর নির্ভর করে নিজেদের পরিণামকে বিপদগ্রস্ত করা চরম নির্বুদ্ধিতা।
এ আয়াত থেকে আনুসাঙ্গিকভাবে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি পাওয়া যায়। এক, এ থেকে জানা যায়, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে জ্ঞানবিহীন সাক্ষ্য দুনিয়াতে গ্রহণযোগ্য হলেও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। দুনিয়াতে যে ব্যক্তিই মুখে কালেমা শাহাদাত উচ্চারণ করবে আমরা তাকে মুসলমান হিসেবে মেনে নেবো এবং যতক্ষণ না সে প্রকাশ্যে সুস্পষ্ট কুফরী করবে ততক্ষণ আমরা তার সাথে মুসলমানদের মতই আচরণ করতে থাকবো। কিন্তু আল্লাহর কাছে শুধু সেই ব্যক্তিই ঈমানদার হিসেবে গণ্য হবে যে তার জ্ঞান ও বুদ্ধির সীমা অনুসারে জেনে বুঝে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলেছে এবং সে একথা বুঝে যে এভাবে সে কি কি বিষয় অস্বীকার করেছে এবং কি কি বিষয় স্বীকার করে নিচ্ছে।
দুই, এ থেকে সাক্ষ্য আইনের এই সূত্রটিও পাওয়া যায় যে, সাক্ষ্যের জন্য জ্ঞান থাকা শর্ত। সাক্ষী যে ঘটনার সাক্ষ্য দান করছে তার যদি সে সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে তাহলে তার সাক্ষ্য অর্থহীন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের একটি ফায়সালা থেকেও এ বিষয়টি জানা যায়। তিনি একজন সাক্ষীকে বলেছিলেনঃ
اذا رايت مثل الشمس فاشهد والافدع (احكام القران للجصاص)
“যদি তুমি নিজ চোখে ঘটনা এমনভাবে দেখে থাকো যেমন সূর্যকে দেখছো তা হলে সাক্ষ্য দাও। তা না হলে দিও না।”
“রসূলের এই বাণীর শপথ যে, হে রব! এরাই সেই সব লোক যারা মানছে না” কী বিস্ময়কর এদের প্রতারিত হওয়া। এরা নিজেরাই স্বীকার করছে যে, এদের ও এদের উপাস্যদের স্রষ্টাও আল্লাহ। তা সত্ত্বেও স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টি উপাসনার জন্য গোঁ ধরে আছে।
রসূলের এই কথাটির শপথ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের এই আচরণ স্পষ্ট প্রমাণ করছিলো যে, তারা প্রকৃতই হঠকারী লোক। কারণ, তাদের নিজেদের স্বীকৃতি অনুসারে তাদের আচরণের অযৌক্তিকতা প্রকাশ পাচ্ছে। এ ধরনের অযৌক্তিকতা আচরণ শুধু সেই ব্যক্তিই করতে পারে যে, না মানার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। অন্য কথায় এ শপথের অর্থ হচ্ছে, রসূল অতীব সত্য কথাই বলেছেন। প্রকৃতই এরা মেনে নেয়ার মত লোক নয়।