পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

১৭৮ আয়াত

২৭ ) তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তার পুনরাবর্তন করবেন এবং এটি তাঁর জন্য সহজতর। ৩৮ আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে তাঁর গুণাবলী শ্রেষ্ঠ মর্যাদাসম্পন্ন এবং তিনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী।
وَهُوَ ٱلَّذِى يَبْدَؤُا۟ ٱلْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ ۚ وَلَهُ ٱلْمَثَلُ ٱلْأَعْلَىٰ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ٢٧
২৮ ) তিনি নিজেই তোমাদের জন্য ৩৯ তোমাদের আপন সত্তা থেকে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। তোমাদের যেসব গোলাম তোমাদের মালিকানাধীন আছে তাদের মধ্যে কি এমন কিছু গোলাম আছে যারা আমার দেয়া ধন-সম্পদে তোমাদের সাথে সমান অংশীদার এবং তোমরা তাদেরকে এমন ভয় করো যেমন পরস্পরের মধ্যে সমকক্ষদেরকে ভয় করে থাকো? ৪০ -যারা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে তাদের জন্য আমি এভাবে আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি।
ضَرَبَ لَكُم مَّثَلًۭا مِّنْ أَنفُسِكُمْ ۖ هَل لَّكُم مِّن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُم مِّن شُرَكَآءَ فِى مَا رَزَقْنَـٰكُمْ فَأَنتُمْ فِيهِ سَوَآءٌۭ تَخَافُونَهُمْ كَخِيفَتِكُمْ أَنفُسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍۢ يَعْقِلُونَ ٢٨
২৯ ) কিন্তু এ জালেমরা না জেনে বুঝে নিজেদের চিন্তা-ধারণার পেছনে ছুটে চলছে। এখন আল্লাহ‌ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন কে তাকে পথ দেখাতে পারে? ৪১ এ ধরনের লোকদের কোন সাহায্যকারী হতে পারে না।
بَلِ ٱتَّبَعَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓا۟ أَهْوَآءَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍۢ ۖ فَمَن يَهْدِى مَنْ أَضَلَّ ٱللَّهُ ۖ وَمَا لَهُم مِّن نَّـٰصِرِينَ ٢٩
৩০ ) কাজেই ৪২ (হে নবী এবং নবীর অনুসারীবৃন্দ) একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারা এ দ্বীনের ৪৩ দিকে স্থির নিবদ্ধ করে দাও। ৪৪ আল্লাহ মানুষকে যে প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন তার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও। ৪৫ আল্লাহর তৈরি সৃষ্টি কাঠামো পরিবর্তন করা যেতে পারে না। ৪৬ এটিই পুরোপুরি সঠিক ও যথার্থ দ্বীন। ৪৭ কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًۭا ۚ فِطْرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِى فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ ٱللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ٣٠
৩১ ) (প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও একথার ওপর) আল্লাহ‌ অভিমুখী হয়ে ৪৮ এবং তাকে ভয় করো, ৪৯ আর নামায কায়েম করো ৫০ এবং এমন মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেয়ো না,
۞ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَٱتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَلَا تَكُونُوا۟ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ٣١
৩২ ) যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দ্বীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রত্যেক দলের কাছে যা আছে তাতেই তারা মশগুল হয়ে আছে। ৫১
مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُوا۟ دِينَهُمْ وَكَانُوا۟ شِيَعًۭا ۖ كُلُّ حِزْبٍۭ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ٣٢
৩৩ ) লোকদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যখন তারা কোন কষ্ট পায় তখন নিজেদের রবের দিকে ফিরে তাকে ডাকতে থাকে ৫২ তারপর যখন তিনি নিজের দয়ার কিছু স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান তখন সহসা তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক শিরকে লিপ্ত হয়ে যায়, ৫৩
وَإِذَا مَسَّ ٱلنَّاسَ ضُرٌّۭ دَعَوْا۟ رَبَّهُم مُّنِيبِينَ إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَآ أَذَاقَهُم مِّنْهُ رَحْمَةً إِذَا فَرِيقٌۭ مِّنْهُم بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ ٣٣
৩৪ ) যাতে আমার অনুগ্রহের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। বেশ, ভোগ করে নাও, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।
لِيَكْفُرُوا۟ بِمَآ ءَاتَيْنَـٰهُمْ ۚ فَتَمَتَّعُوا۟ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ ٣٤
৩৫ ) আমি কি তাদের কাছে কোন প্রমাণপত্র ও দলীল অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের শিরকের সত্যতার সাক্ষ্য দেয়। ৫৪
أَمْ أَنزَلْنَا عَلَيْهِمْ سُلْطَـٰنًۭا فَهُوَ يَتَكَلَّمُ بِمَا كَانُوا۟ بِهِۦ يُشْرِكُونَ ٣٥
৩৬ ) যখন লোকদের দয়ার স্বাদ আস্বাদন করাই তখন তারা তাতে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে এবং যখন তাদের নিজেদের কৃতকর্মের ফলে তাদের ওপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন সহসা তারা হতাশ হয়ে যেতে থাকে। ৫৫
وَإِذَآ أَذَقْنَا ٱلنَّاسَ رَحْمَةًۭ فَرِحُوا۟ بِهَا ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌۢ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ إِذَا هُمْ يَقْنَطُونَ ٣٦
৩৮.
প্রথমবার সৃষ্টি করাটা যদি তাঁর জন্য কঠিন না হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা কেমন করে ধারণা করতে পারলে যে, দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা তাঁর জন্য কঠিন হবে? প্রথমবারের সৃষ্টির মধ্যে তো তোমরা সশরীরেই উপস্থিত আছো। তাই এটা যে কঠিন নয় তা তো সুস্পষ্ট। এখন এটি একটি সহজ বুদ্ধির ব্যাপার যে, একবার যিনি কোনো একটি জিনিস তৈরি করেন সে জিনিসটি পুনর্বার তৈরি করা তাঁর জন্য তুলনামূলকভাবে আরো অনেক বেশি সহজ হওয়ার কথা।
.
৩৯.
এ পর্যন্ত তওহীদ ও আখিরাতের বর্ণনা মিলেমিশে চলছিল। এর মধ্যে যেসব নিদর্শনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে তওহীদের প্রমাণও রয়েছে এবং এ প্রমাণগুলো আখেরাতের আগমন যে অসম্ভব নয় সে কথা প্রমাণ করে। এরপর সামনের দিকে নির্ভেজাল তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনা আসছে।
৪০.
পৃথিবী ও আকাশ এবং তাদের মধ্যকার যাবতীয় জিনিসের স্রষ্টা ও মালিক হচ্ছেন আল্লাহ, মুশরিকরা একথা স্বীকার করার পর তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহর সার্বভৌম সত্ত্বার গুণাবলী ও ক্ষমতার অংশীদার গণ্য করতো। তাদের কাছে প্রার্থনা করতো তাদের সামনে মানত ও নযরানা পেশ করতো এবং বন্দেগী ও পূজার অনুষ্ঠান করতো। এসব বানোয়াট শরীকদের ব্যাপারে তাদের মূল আকীদার সন্ধান পাওয়া যায় তাদের কা’বা ঘর তাওয়াফ করার সময় পঠিত “তালবীয়াহ” থেকে। এসময় তারা বলতোঃ

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ إِلاَّ شَرِيكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ

“আমি হাজির আছি, হে আমার আল্লাহ‌ আমি হাজির আছি। তোমার কোনো শরীক নেই, তোমার নিজের শরীক ছাড়া। তুমি তারও মালিক এবং যা কিছু তার মালিকানায় আছে তারও মালিক তুমি।” (তাবারানীঃ ইবনে আব্বাস বর্ণিত)

এ আয়াতটিতে মহান আল্লাহ‌ এ শিরকটিই খণ্ডন করছেন। এখানে দৃষ্টান্তটির অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ‌ প্রদত্ত সম্পদে কখনো আল্লাহরই সৃষ্টি যে মানুষ ঘটনাক্রমে তোমার দাসত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে তোমার অংশীদার গণ্য হতে পারে না। কিন্তু তোমরা অদ্ভূত ধান্দাবাজী শুরু করেছো, আল্লাহর সৃষ্ট বিশ্ব-জাহানে আল্লাহর সৃষ্টিকে নির্দ্ধিধায় তাঁর সাথে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক গণ্য করছো। এ ধরনের নির্বোধ জনোচিত কথাগুলো চিন্তা করার সময় তোমাদের বুদ্ধি-জ্ঞান কি একেবারে বিনষ্ট হয়ে যায়? (আরো বেশি ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন সূরা আন নাহল, ৬২ টীকা।)

.
৪১.
অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি সহজ-সরল বুদ্ধির কথা নিজেও চিন্তা করে না এবং অন্যের বুঝাবার পরও বুঝতে চায় না তখন তার বুদ্ধির ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হয়। এরপর এমন প্রত্যেকটি জিনিস, যা কোন নিষ্ঠাবান ও বিবেকবান ব্যক্তিকে সত্য কথা পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে, তা এ হঠকারী মূর্খতাপ্রিয় ব্যক্তিকে আরো বেশি গোমরাহীতে লিপ্ত করতে থাকে। এ অবস্থাটিকেই প্রকাশ করা হয়েছে “পথ ভ্রষ্টতা” শব্দের মাধ্যমে। সত্যপ্রিয় মানুষ যখন আল্লাহর কাছে সঠিক পথনির্দেশ লাভের সুযোগ চায় তখন আল্লাহ‌ তার সত্য আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী তার জন্য বেশি করে সঠিক পথনির্দেশের কার্যকারণসমূহ সৃষ্টি করে দেন। আর গোমরাহী প্রিয় মানুষ যখন গোমরাহীর ওপর টিকে থাকার জন্য জোর দিতে থাকে তখন আল্লাহ‌ তার জন্য আবার এমন সব কার্যকারণ সৃষ্টি করে যেতে থাকেন যা তাকে বিপথগামী করে দিনের পর দিন সত্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।
.
৪২.
এখানে “কাজেই” শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা হচ্ছে, সত্য যখন তোমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে এবং তোমরা যখন জানতে পেরেছো এ বিশ্ব-জাহানের ও মানুষের স্রষ্টা, মালিক ও সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন শাসনকর্তা এক আল্লাহ‌ ছাড়া আর কেউ নয় তখন এরপর অপরিহার্য ভাবে তোমাদের কার্যধারা এ ধরনের হওয়া উচিত।
৪৩.
কুরআন “দ্বীন” শব্দটিকে যে বিশেষ অর্থে পেশ করছে “দ্বীন” শব্দটি এখানে সেই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে বন্দেগী, ইবাদাত ও আনুগত্য লাভের অধিকার একমাত্র লা-শরীক আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো নেই। এতে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, গুণাবলী ক্ষমতা ও অধিকারে কাউকে তাঁর সাথে সামান্যতমও শরীক করা যায় না। এখানে মানুষ নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহ সহকারে একথা মেনে নেয় যে, সে তার সমস্ত জীবনে আল্লাহর পথনির্দেশ এবং তাঁর আইন মেনে চলবে।
৪৪.
“একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারা এদিকে স্থির নিবদ্ধ করো” অর্থাৎ এরপর আবার অন্যদিকে ফিরো না। জীবনের জন্য এ পথটি গ্রহণ করে নেবার পর অন্য কোন পথের দিকে দৃষ্টি ও দেয়া যাবে না। তারপর তোমাদের চিন্তা-ভাবনা হবে মুসলমানের মতো এবং তোমাদের পছন্দ অপছন্দও হবে মুসলমানদের মতো। তোমাদের মূল্যবোধ ও মানদণ্ড হবে তাই যা ইসলাম তোমাদের দেয়। তোমাদের স্বভাব-চরিত্র এবং জীবন ও কার্যক্রমের ছাঁচ ইসলামের চাহিদা অনুযায়ী হবে। ইসলাম যে পথে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনধারা চালাবার বিধান দিয়েছে তোমাদের সে পথেই নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন পরিচালিত করতে হবে।
৪৫.
অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতিকে এ প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ‌ ছাড়া তাদের আর কোন স্রষ্টা, রব, মাবুদ ও আনুগত্য গ্রহণকারী নেই। এ প্রকৃতির ওপর তোমাদের প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া উচিত। যদি স্বেচ্ছাচারীভাবে চলার নীতি অবলম্বন করো তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করবে। আর যদি অন্যের বন্দেগীর শিকল নিজের গলায় পরে নাও তাহলেও নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করবে। এ বিষয়টি নবী ﷺ বহু হাদীসে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ

مَا مِنْ مَوْلُودٍ يُولَدُ إِلاَّ عَلَى الْفِطْرَةِ ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ ، كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ

“মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভকারী প্রত্যেকটি শিশু আসলে মানবিক প্রকৃতির ওপরই জন্ম লাভ করে। তারপর তার মা-বাপই তাকে পরবর্তীকালে ইহুদী, খৃস্টান ও অগ্নিপূজারী হিসেবে গড়ে তোলে।”

এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন প্রত্যেকটি পশুর পেট থেকে পুরোপুরি নিখুঁত ও সুস্থ পশুই বের হয়ে আসে। কোন একটা বাচ্চাও কান কাটা অবস্থায় বের হয়ে আসে না। পরে মুশরিকরা নিজেদের জাহিলী কুসংস্কারের কারণে তার কান কেটে দেয়।

মুসনাদে আহমাদ ও নাসায়ীতে আর একটি হাদীস আছে, তাতে বলা হয়েছেঃ এক যুদ্ধে মুসলমানরা শত্রুদের শিশু সন্তানদেরকেও হত্যা করে। নবী (সা.) এর কাছে এ খবর পৌঁছে যায়। তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং বলেনঃ

مَا بَالُ أَقْوَامٍ جَاوَزَهُمُ الْقَتْلُ الْيَوْمَ حَتَّى قَتَلُوا الذُّرِّيَّةَ

“লোকদের কি হয়ে গেছে, আজ তারা সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং শিশুদেরকেও হত্যা করেছে? ”

একজন জিজ্ঞেস করলো, এরা কি মুশরিকদের সন্তান ছিল না। জবাবে তিনি বলেনঃ

إِنَّها خِيَارَكُمْ أَبْنَاءُ الْمُشْرِكِينَ

“তোমাদের সর্বোত্তম লোকেরা তো মুশরিকদেরই আওলাদ।” তারপর বলেনঃ

كُلُّ نَسَمَةٍ تُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ حَتَّى يُعْرِبَ عَنْهَ لِسَانُهَا فَأَبَوَاهَا يُهَوِّدَانِهَا اوَيُنَصِّرَانِهَا-

“প্রত্যেক প্রাণসত্ত্বা প্রকৃতির ওপর জন্ম নেয়, এমনকি যখন কথা বলতে শেখে তখন তার বাপ-মা তাকে ইহুদী খৃস্টানে পরিণত করে।”

অন্য একটি হাদীসে ইমাম আহমাদ (রা.) ঈযায ইবনে হিমার আল মুজাশি’য়ী থেকে উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, একদিন নবী ﷺ নিজের ভাষণের মাঝখানে বলেনঃ

ان ربى يقول إِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِيَ حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُم أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاضْلَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا-

“আমার রব বলেন, আমার সমস্ত বান্দাদেরকে আমি একনিষ্ঠ সত্যপথাশ্রয়ী করে সৃষ্টি করেছিলাম, তারপর শয়তানরা এসে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিপথগামী করে এবং তাদের জন্য আমি যা কিছু হালাল করে দিয়েছিলাম সেগুলোকে হারাম করে নেয় এবং তাদেরকে হুকুম দেয়, আমার সাথে এ জিনিসগুলোকে শরীক গণ্য করো, যেগুলোকে শরীক করার জন্য আমি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি।”

৪৬.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ মানুষকে নিজের বান্দায় পরিণত করেছেন। কেউ চাইলেও এ কাঠামোয় কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারে না। মানুষ বান্দা থেকে অ-বান্দা হতে পারে না এবং আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানিয়ে নিলেও প্রকৃতপক্ষে সে মানুষের ইলাহ হতে পারে না। মানুষ নিজের জন্য যতগুলো উপাস্য তৈরি করে নিক না কেন, মানুষ যে, এক আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো বান্দা নয় এ বাস্তব সত্যটি অকাট্য ও অবিচল রয়ে গেছে। মানুষ নিজের মূর্খতা ও অজ্ঞতার কারণে যাকে ইচ্ছা আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার ধারক গণ্য করতে পারে এবং যাকে চায় তাকে নিজের ভাগ্য ভাঙা-গড়ার মালিক মনে করতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ও বাস্তব সত্য এটিই যে, সার্বভৌম কর্তৃত্বের গুণাবলীর অধিকারী একমাত্র আল্লাহ‌ ছাড়া আর কেউ নয়। কেউ তাঁর মতো ক্ষমতার অধিকারী নয় এবং মানুষের ভাগ্য ভাঙা-গড়ার শক্তিও আল্লাহ‌ ছাড়া কারো নেই।

এ আয়াতটির আর একটি অনুবাদ এও হতে পারেঃ “আল্লাহর তৈরি কাঠামোয় পরিবর্তন করা যাবে না।” অর্থাৎ আল্লাহ‌ যে প্রকৃতির ওপর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাকে বিকৃত করা ও ভেঙ্গে ফেলা উচিত নয়।

৪৭ .
অর্থাৎ শান্ত সমাহিত ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই সঠিক ও সহজ পথ।
.
৪৮.
আল্লাহ অভিমুখী হওয়ার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তিই স্বেচ্ছাচারীতার নীতি অবলম্বন করে নিজের প্রকৃত মালিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অথবা যে ব্যক্তিই অন্যের বন্দেগীর পথ অবলম্বন করে নিজের রবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তার এ নীতি পরিহার করতে হবে এবং প্রকৃতপক্ষে যে আল্লাহর বান্দা হিসেবে সে জন্মলাভ করেছে সেই এক আল্লাহর বন্দেগীর দিকে তাকে ফিরে যেতে হবে।
৪৯.
অর্থাৎ তোমাদের মনে এ ভয় জাগরুক থাকতে হবে যে, যদি আল্লাহর জন্মগত বান্দা হওয়া সত্ত্বেও তোমরা তাঁর মোকাবিলায় স্বাধীনতার নীতি অবলম্বন করে থাকো, অথবা তাঁর পরিবর্তে অন্য কারো বন্দেগী করে থাকো, তাহলে এ বিশ্বাসঘাতকতা ও নিমকহারামির জন্য তোমাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই তোমাদের এমন নীতি ও মনোভাব থেকে দূরে থাকা উচিত যা তোমাদের জন্য আল্লাহর আযাব ভোগ করাকে অবধারিত করে তোলে।
৫০.
আল্লাহর দিকে ফেরা এবং তাঁর গযবের ভয় করা-এ দু’টিই মানসিক কর্ম। এ মানসিক অবস্থাটির প্রকাশ এবং এর সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠার জন্য অনিবার্যভাবে এমন কোনো দৈহিক কর্মের প্রয়োজন যার মাধ্যমে বাইরেও প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে অমুক ব্যক্তি যথার্থই এ লা-শারীক আল্লাহর বন্দেগীর দিকে ফিরে এসেছে। মানুষের নিজের মনের মধ্যেও এ আল্লাহ‌ ভীতির দিকে ফিরে আসার অবস্থাটি একটি কার্যকর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনবরত বিকাশ লাভ করতে থাকে। তাই মহান আল্লাহ‌ এই মানসিক পরিবর্তনের হুকুম দেবার পর সাথে সাথেই এ দৈহিক কর্ম অর্থাৎ নামায কায়েম করার হুকুম দেন। মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো চিন্তা নিছক চিন্তার পর্যায়েই থাকে ততক্ষণ তার মধ্যে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয় না। এ চিন্তা ভাটা পড়ে যাওয়ার চিন্তা থাকে এবং এ চিন্তার পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সে সেই অনুযায়ী কাজ করতে থাকে তখন তার মধ্যে এ চিন্তা শিকড় গেড়ে বসে যেতে থাকে এবং যতই সে তদনুযায়ী কাজ করতে থাকে ততই তা শক্তিমত্তা ও দৃঢ়তা বেড়ে যেতে পেতে থাকে। এমন কি এ আকীদা ও চিন্তা পরিবর্তিত হওয়া এবং এতে ভাটা পড়ে যাওয়া ক্রমেই দুষ্কর হয়ে যেতে থাকে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে আল্লাহ‌ অভিমুখী হওয়া এবং আল্লাহ‌ ভীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার চাইতে বেশি কার্যকর আর কোনো কাজ নেই। কারণ অন্য যে কোনো কাজই হোক না কেন তা বিলম্বে আসে অথবা নামায এমন একটি কাজ যা নিয়মিতভাবে কয়েক ঘণ্টা পরপর একটি নির্দিষ্ট আকৃতিতে মানুষকে স্থায়ীভাবে পালন করতে হয়। কুরআন ঈমান ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ যে পাঠ মানুষকে দিয়েছে তা যাতে সে ভুলে না যায় এ জন্য বারবার তার পুনরাবৃত্তি করতে হয়। তাছাড়া মানবগোষ্ঠীর মধ্য থেকে কারা বিদ্রোহের নীতি পরিহার করে রবের প্রতি আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করেছে, কাফের ও মু’মিনদের কাছে একথা এ জন্য প্রকাশ হওয়া দরকার যে, এর ফলে একটি সমাজ ও দল গঠিত হতে পরে। তারা আল্লাহর পথে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। ঈমান ও ইসলামের সাথে যখনই তাদের দলেরকোন ব্যক্তির সম্পর্ক ঢিলা হয়ে যেতে থাকে তখনই কোন আলামত সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র মু’মিন সমাজকে তার অবস্থা জানিয়ে দেয়। কাফেরদের কাছে এর প্রকাশ হওয়া এ জন্য প্রয়োজন যে, এর ফলে তাদের হৃদয় অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃতি তার নিজের শ্রেণীর মানুষদেরকে আসল ইলাহ রব্বুল আলামীনের দিকে বার বার ফিরে আসতে দেখে জেগে উঠবে এবং যতক্ষণ তারা জাগবে না ততক্ষণ আল্লাহর অনুগতদের কর্ম তৎপরতা দেখে তাদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হতে থাকবে। এ দু’টি উদ্দেশ্যর জন্যও নামাজ কায়েম করাই হবে সব চেয়ে বেশি উপযোগী মাধ্যম।

এ প্রসঙ্গে একথাটিও সামনে রাখতে হবে যে, নামায কায়েম করার এ হুকুমটি মক্কা মু’আয্‌যমায় এমন এক যুগে দেয়া হয় যখন মুষ্টিমেয় কয়েক জন মুসলমানের ক্ষুদ্র দলটি কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের জুলম ও নিপীড়নের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছিল এবং এরপরও ন’বছর পর্যন্ত এ নিষ্পেষণের ধারা অব্যাহত ছিল। সে সময় দূরের কোথাও ইসলামী রাষ্ট্রের নাম নিশানা ছিল না। যদি ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া নামায অর্থহীন হয়ে থাকে, যেমন কতিপয় নাদান মনে করে থাকেন, অথবা ইকামাতে সালাত অর্থ আদতে নামায কায়েম করা না থাকে বরং “রবুবিয়াত ব্যবস্থা” পরিচালনা হয়ে থাকে, যেমন হাদীস অস্বীকারকারীরা দাবী করে থাকেন, তাহলে এ অবস্থায় কুরআন মজীদের এ ধরনের হুকুম দেয়ার অর্থ কী? আর এ হুকুম আসার পর ৯ বছর পর্যন্ত নবী ﷺ ও মুসলমানরা এ হুকুমটি কিভাবে পালন করতে থাকেন?

.
৫১ .
ওপরে যে প্রাকৃতিক দ্বীনের কথা বলা হয়েছে মানব জাতির আসল দ্বীনই হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক দ্বীন, এখানে এদিকেই ইশারা করা হয়েছে। এ দ্বীন মুশরিকী ধর্ম থেকে ক্রম-বিবর্তনের মাধ্যমে তাওহীদ পর্যন্ত পৌঁছে নি। যেমন আন্দাজ অনুমানের মাধ্যমে একটি ধর্মীয় দর্শন রচনাকারীরা মনে করে থাকেন। বরং দুনিয়ায় যতগুলো ধর্ম পাওয়া যায় এ সবেরই উৎপত্তি হয়েছে এ আসল দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি সাধনের মাধ্যমে। এ বিকৃতি আসার কারণ হলো এই যে, বিভিন্ন ব্যক্তি প্রাকৃতিক সত্যের ওপর নিজেদের নতুন নতুন কথা বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের জন্য এক একটি আলাদা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই মূল সত্যের পরিবর্তে এ বর্ধিত জিনিসেরই ভক্ত অনুরক্ত হয়ে গেছে। যার ফলে তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ফিরকায় পরিণত হয়েছে। এখন সঠিক পথনির্দেশনা লাভ করতে চাইলে যে প্রকৃত সত্য ছিল দ্বীনের মূল ভিত্তি, প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সেদিকে ফিরে যেতে হবে। পরবর্তীকালের যাবতীয় বর্ধিত অংশ থেকে এবং তাদের ভক্ত-অনুরক্তদের দল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে একেবারেই আলাদা হয়ে যেতে হবে। তাদের সাথে তারা যে সম্পর্ক সূত্রই কায়েম রাখবে সেটিই তাদের দ্বীনের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণ হবে।
৫২.
তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে যে তাওহীদের প্রমাণ রয়ে গেছে একথাটিই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। যেসব সহায়কের ভিত্তিতে আশার প্রাসাদ গড়ে উঠেছিল যখনই সেগুলো ভেঙে পড়তে থাকে তখনি তাদের অন্তর ভেতর থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, বিশ্ব-জাহানের মালিকই আসল শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী এবং তাঁরই সাহায্যে তারা নিজেদের ধ্বংসরোধ ও ক্ষতিপূরণ করতে পারে।
৫৩.
অর্থাৎ অন্যান্য উপাস্যদেরকে মানত ও নযরানা পেশ করার কাজ শুরু হয়ে যায়। এই সঙ্গে একথাও বলা হতে থাকে যে, অমুক হযরতের বদৌলতে এবং অমুক মাজারের অনুগ্রহে এ বিপদ সরে গেছে।
.
৫৪.
অর্থাৎ কোন যুক্তির ভিত্তিতে তারা একথা জানতে পারলো যে, আপদ-বিপদ থেকে আল্লাহ‌ রক্ষা করেন না বরং এসব বানোয়াট উপাস্যরা রক্ষা করে থাকে? বুদ্ধিবৃত্তি কি এর সাক্ষ্য দেয়? অথবা আল্লাহর এমন কোন কিতাব আছে কি যার মধ্যে তিনি বলেছেন, আমি আমার সার্বভৌম কর্তৃত্ব অমুক অমুক ব্যক্তিকে দিয়ে দিয়েছি, এখন থেকে তারাই তোমাদের সমস্ত কাজ করে দেবে?
৫৫.
ওপরের আয়াতে মানুষের মূর্খতা ও অজ্ঞতা এবং তার অকৃতজ্ঞতা ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তাকে পাকড়াও করা হয়েছিল। এ মানুষের হীন প্রবৃত্তি ও তার সংকীর্ণমনতার জন্য তাকে পাকড়াও করা হয়েছে। এ হীনচেতা কাপুরুষটি যখন দুনিয়ায় কিছু ধন-সম্পদ, শক্তি ও মর্যাদা লাভ করে এবং দেখে তার কাজ খুব ভালোভাবে চলছে তখন এ সবকিছু যে মহান আল্লাহর দান, একথা আর তার একদম মনে থাকে না। তখন সে মনে করতে থাকে তার মধ্যে এমন অসাধারণ কিছু আছে যার ফলে সে এমন কিছু লাভ করেছে যা থেকে অন্যরা বঞ্চিত হয়েছে। এ বিভ্রান্তির মধ্যে অহংকার ও আত্মগরিমার নেশায় সে এমনই বিভোর হয়ে যায় যার ফলে সে আল্লাহ‌ ও সৃষ্টি কাউকেও ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য করে না। কিন্তু যখনই সৌভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে হিম্মত হারিয়ে ফেলে এবং দুর্ভাগ্যের একটিমাত্র আঘাতই তার হৃদয়াবৃত্তি ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। তখন এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, হীনতম কাজ করতেও সে কুণ্ঠিত হয় না, এমন কি শেষ পর্যন্ত সে আত্মহত্যাও করে বসে।
অনুবাদ: