পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

১৭৮ আয়াত

১৩ ) যখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল বললো, “হে ইয়াসরিববাসীরা! তোমাদের জন্য এখন অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই, ফিরে চলো।” ২৩ যখন তাদের একপক্ষ নবীর কাছে এই বলে ছুটি চাচ্ছিল যে, “আমাদের গৃহ বিপদাপন্ন,” ২৪ অথচ তা বিপদাপন্ন ছিল না ২৫ আসলে তারা (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) পালাতে চাচ্ছিল।
وَإِذْ قَالَت طَّآئِفَةٌۭ مِّنْهُمْ يَـٰٓأَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَٱرْجِعُوا۟ ۚ وَيَسْتَـْٔذِنُ فَرِيقٌۭ مِّنْهُمُ ٱلنَّبِىَّ يَقُولُونَ إِنَّ بُيُوتَنَا عَوْرَةٌۭ وَمَا هِىَ بِعَوْرَةٍ ۖ إِن يُرِيدُونَ إِلَّا فِرَارًۭا ١٣
১৪ ) যদি শহরের বিভিন্ন দিক থেকে শত্রুরা ঢুকে পড়তো এবং সেসময় তাদেরকে ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য আহবান জানানো হতো, ২৬ তাহলে তারা তাতেই লিপ্ত হয়ে যেতো এবং ফিতনায় শরীক হবার ব্যাপারে তারা খুব কমই ইতস্তত করতো।
وَلَوْ دُخِلَتْ عَلَيْهِم مِّنْ أَقْطَارِهَا ثُمَّ سُئِلُوا۟ ٱلْفِتْنَةَ لَـَٔاتَوْهَا وَمَا تَلَبَّثُوا۟ بِهَآ إِلَّا يَسِيرًۭا ١٤
১৫ ) তারা ইতিপূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্টপ্রদর্শন করবে না এবং আল্লাহর সাথে করা অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা তো হবেই। ২৭
وَلَقَدْ كَانُوا۟ عَـٰهَدُوا۟ ٱللَّهَ مِن قَبْلُ لَا يُوَلُّونَ ٱلْأَدْبَـٰرَ ۚ وَكَانَ عَهْدُ ٱللَّهِ مَسْـُٔولًۭا ١٥
১৬ ) হে নবী! তাদেরকে বলো, যদি তোমরা মৃত্যু বা হত্যা থেকে পলায়ন করো, তাহলে এ পলায়নে তোমাদের কোন লাভ হবে না। এরপর জীবন উপভোগ করার সামান্য সুযোগই তোমরা পাবে। ২৮
قُل لَّن يَنفَعَكُمُ ٱلْفِرَارُ إِن فَرَرْتُم مِّنَ ٱلْمَوْتِ أَوِ ٱلْقَتْلِ وَإِذًۭا لَّا تُمَتَّعُونَ إِلَّا قَلِيلًۭا ١٦
১৭ ) তাদেরকে বলো, কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে আল্লাহর হাত থেকে যদি তিনি তোমাদের ক্ষতি করতে চান? আর কে তাঁর রহমতকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে যদি তিনি চান তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করতে? আল্লাহর মোকাবিলায় তো তারা কোন পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী লাভ করতে পারে না।
قُلْ مَن ذَا ٱلَّذِى يَعْصِمُكُم مِّنَ ٱللَّهِ إِنْ أَرَادَ بِكُمْ سُوٓءًا أَوْ أَرَادَ بِكُمْ رَحْمَةًۭ ۚ وَلَا يَجِدُونَ لَهُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيًّۭا وَلَا نَصِيرًۭا ١٧
১৮ ) আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে তাদেরকে খুব ভালো করেই জানেন যারা (যুদ্ধের কাজে) বাঁধা দেয়, যারা নিজেদের ভাইদেরকে বলে, “এসো আমাদের দিকে,” ২৯ যারা যুদ্ধে অংশ নিলেও নিয়ে থাকে শুধুমাত্র নামকাওয়াস্তে।
۞ قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلْمُعَوِّقِينَ مِنكُمْ وَٱلْقَآئِلِينَ لِإِخْوَٰنِهِمْ هَلُمَّ إِلَيْنَا ۖ وَلَا يَأْتُونَ ٱلْبَأْسَ إِلَّا قَلِيلًا ١٨
১৯ ) যারা তোমাদের সাথে সহযোগিতা করার ব্যাপারে বড়ই কৃপণ। ৩০ বিপদের সময় এমনভাবে চোখ উলটিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে থাকে যেন কোন মৃত্যুপথযাত্রী মূর্ছিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিপদ চলে গেলে এই লোকেরাই আবার স্বার্থলোভী হয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় তোমাদেরকে বিদ্ধ করতে থাকে। ৩১ তারা কখনো ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ‌ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ধ্বংস করে দিয়েছেন ৩২ এবং এমনটি করা আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ। ৩৩
أَشِحَّةً عَلَيْكُمْ ۖ فَإِذَا جَآءَ ٱلْخَوْفُ رَأَيْتَهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ تَدُورُ أَعْيُنُهُمْ كَٱلَّذِى يُغْشَىٰ عَلَيْهِ مِنَ ٱلْمَوْتِ ۖ فَإِذَا ذَهَبَ ٱلْخَوْفُ سَلَقُوكُم بِأَلْسِنَةٍ حِدَادٍ أَشِحَّةً عَلَى ٱلْخَيْرِ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَمْ يُؤْمِنُوا۟ فَأَحْبَطَ ٱللَّهُ أَعْمَـٰلَهُمْ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًۭا ١٩
২০ ) তারা মনে করছে আক্রমণকারী দল এখনো চলে যায়নি। আর যদি আক্রমণকারীরা আবার এসে যায়, তাহলে তাদের মন চায় এ সময় তারা কোথাও মরুভূমিতে বেদুইনের মধ্যে গিয়ে বসতো এবং সেখান থেকে তোমাদের খবরাখবর নিতো। তবুও যদি তারা তোমাদের মধ্যে থাকেও তাহলে যুদ্ধে খুব কমই অংশ নেবে।
يَحْسَبُونَ ٱلْأَحْزَابَ لَمْ يَذْهَبُوا۟ ۖ وَإِن يَأْتِ ٱلْأَحْزَابُ يَوَدُّوا۟ لَوْ أَنَّهُم بَادُونَ فِى ٱلْأَعْرَابِ يَسْـَٔلُونَ عَنْ أَنۢبَآئِكُمْ ۖ وَلَوْ كَانُوا۟ فِيكُم مَّا قَـٰتَلُوٓا۟ إِلَّا قَلِيلًۭا ٢٠
২১ ) আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদর্শ ৩৪ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের আকাঙ্ক্ষী এবং বেশী করে আল্লাহকে স্মরণ করে। ৩৫
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌۭ لِّمَن كَانَ يَرْجُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلْيَوْمَ ٱلْـَٔاخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرًۭا ٢١
২২ ) আর সাচ্চা মু’মিনদের (অবস্থা সে সময় এমন ছিল,) ৩৬ ) যখন আক্রমণকারী সেনাদলকে দেখলো তারা চিৎকার করে উঠলো, “এতো সেই জিনিসই যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূল আমাদের দিয়েছিলেন, আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের কথা পুরোপুরি সত্য ছিল।” ৩৭ এ ঘটনা তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণ আরো বেশী বাড়িয়ে দিল। ৩৮
وَلَمَّا رَءَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْأَحْزَابَ قَالُوا۟ هَـٰذَا مَا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَصَدَقَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ ۚ وَمَا زَادَهُمْ إِلَّآ إِيمَـٰنًۭا وَتَسْلِيمًۭا ٢٢
২৩.
এ বাক্যটি দু’টি অর্থে বলা হয়েছে। এর বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে, খন্দকের সামনে কাফেরদের মোকাবিলায় অবস্থান করার কোন অবকাশ নেই। শহরের দিকে চলো। আর এর গূঢ় অর্থ হচ্ছে, ইসলামের ওপর অবস্থান করার কোন অবকাশ নেই। এখন নিজেদের পৈতৃক ধর্মে ফিরে যাওয়া উচিত। এর ফলে সমস্ত আরব জাতির শত্রুতার মুখে আমরা যেভাবে নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছি তা থেকে রক্ষা পেয়ে যাবো। মুনাফিকরা নিজ মুখে এসব কথা এজন্য বলতো যে, তাদের ফাঁদে যে পা দেবে তাকে নিজেদের গূঢ় উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দেবে এবং যে তাদের কথা শুনে সতর্ক হয়ে যাবে এবং তাদেরকে পাকড়াও করবে নিজেদের শব্দের বাহ্যিক আবরণের আড়ালে গিয়ে তাদের পাকড়াও থেকে বেঁচে যাবে।
২৪.
অর্থাৎ যখন বনু কুরাইযাও হানাদারদের সাথে হাত মিলালো তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেনাদল থেকে কেটে পড়ার জন্য মুনাফিকরা একটি চমৎকার বাহানা পেয়ে গেলো এবং তারা এই বলে ছুটি চাইতে লাগলো যে, এখন তো আমাদের ঘরই বিপদের মুখে পড়ে গিয়েছে, কাজেই ঘরে ফিরে গিয়ে আমাদের নিজেদের পরিবার ও সন্তানদের হেফাজত করার সুযোগ দেয়া উচিত। অথচ সেসময় সমগ্র মদীনাবাসীদের হেফাজতের দায়িত্ব ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। বনী কুরাইযার চুক্তি ভঙ্গের ফলে যে বিপদ দেখা দিয়েছিল তার হাত থেকে শহর ও শহরবাসীদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা ছিল রসূলের ﷺ কাজ, পৃথক পৃথকভাবে একেকজন সৈনিকের কাজ ছিল না।
২৫.
অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই তো এ বিপদ থেকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ ব্যবস্থাপনাও তাঁর প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল এবং সেনাপতি হিসেবে তিনি এ ব্যবস্থা কার্যকর করার কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। কাজেই সেসময় কোন তাৎক্ষণিক বিপদ দেখা দেয়নি। এ কারণে তাদের এ ধরনের ওজর পেশ করা কোন পর্যায়েও যুক্তিসঙ্গত ছিল না।
.
২৬.
অর্থাৎ যদি নগরে প্রবেশ করে কাফেররা বিজয়ীর বেশে এ মুনাফিকদেরকে এই বলে আহবান জানাতো, এসো আমাদের সাথে মিলে মুসলমানদেরকে খতম করো।
.
২৭.
অর্থাৎ ওহোদ যুদ্ধের সময় তারা যে দুর্বলতা দেখিয়েছিল তারপর লজ্জা ও অনুতাপ প্রকাশ করে তারা আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেছিল যে, এবার যদি পরীক্ষার কোন সুযোগ আসে তাহলে তারা নিজেদের এ ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবে। কিন্তু আল্লাহকে নিছক কথা দিয়ে প্রতারণা করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তিই তাঁর সাথে কোন অঙ্গীকার করে তাঁর সামনে তিনি পরীক্ষার কোন না কোন সুযোগ এনে দেন। এর মাধ্যমে তার সত্য ও মিথ্যা যাচাই হয়ে যায়। তাই ওহোদ যুদ্ধের মাত্র দু’বছর পরেই তিনি তার চাইতেও বেশী বড় বিপদ সামনে নিয়ে এলেন এবং এভাবে তারা তাঁর সাথে কেমন ও কতটুকু সাচ্চা অঙ্গীকার করেছিল তা যাচাই করে নিলেন।
২৮.
অর্থাৎ এভাবে পলায়ন করার ফলে তোমাদের আয়ু বেড়ে যাবে না। এর ফলে কখনোই তোমরা কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে এবং সারা দুনিয়া জাহানের ধন-দৌলত হস্তগত করতে পারবে না। পালিয়ে বাঁচলে বড় জোর কয়েক বছরই বাঁচবে এবং তোমাদের জন্য যতটুকু নির্ধারিত হয়ে আছে ততটুকুই জীবনের আয়েশ-আরাম ভোগ করতে পারবে।
.
২৯.
অর্থাৎ এ নবীর দল ত্যাগ করো। কেন তোমরা দ্বীন, ঈমান, সত্য ও সততার চক্করে পড়ে আছো? নিজেদেরকে বিপদ-আপদ, ভীতি ও আশঙ্কার মধ্যে নিক্ষেপ করার পরিবর্তে আমাদের মতো নিরাপদে অবস্থান করার নীতি অবলম্বন করো।
.
৩০.
অর্থাৎ সাচ্চা মু’মিনরা যে পথে তাদের সবকিছু উৎসর্গ করে দিচ্ছে সেপথে তারা নিজেদের শ্রম, সময়, চিন্তা ও সহায়-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় করতে প্রস্তুত নয়। প্রাণপাত করা ও বিপদ মাথা পেতে নেয়া তো দূরের কথা কোন কাজেও তারা নির্দ্বধায় মু’মিনদের সাথে সহযোগিতা করতে চায় না।
৩১.
আভিধানিক দিক দিয়ে আয়াতটির দু’টি অর্থ হয়। এক, যুদ্ধের ময়দান থেকে সাফল্য লাভ করে যখন তোমরা ফিরে আসো তখন তারা বড়ই হৃদ্যতা সহকারে ও সাড়ম্বরে তোমাদেরকে স্বাগত জানায় এবং বড় বড় বুলি আউড়িয়ে এই বলে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে যে, আমরাও পাক্কা মু’মিন এবং এ কাজ সম্প্রসারণে আমরাও অংশ নিয়েছি কাজেই আমরাও গনীমাতের মালের হকদার। দুই, বিজয় অর্জিত হলে গনীমাতের মাল ভাগ করার সময় তাদের কন্ঠ বড়ই তীক্ষ্ণ ও ধারাল হয়ে যায় এবং তারা অগ্রবর্তী হয়ে দাবী করতে থাকে, আমাদের ভাগ দাও, আমরাও কাজ করেছি, সবকিছু তোমরাই লুটে নিয়ে যেয়ো না।
৩২.
অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা যেসব নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে, যাকাত দিয়েছে এবং বাহ্যত যেসব সৎকাজ করেছে সবকিছুকে মহান আল্লাহ‌ নাকচ করে দেবেন এবং সেগুলোর কোন প্রতিদান তাদেরকে দেবেন না। কারণ আল্লাহর দরবারে কাজের বাহ্যিক চেহারার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয় না বরং এ বাহ্য চেহারার গভীরতম প্রদেশে বিশ্বাস ও আন্তরিকতা আছে কিনা তার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয়। যখন এ জিনিস আদতে তাদের মধ্যে নেই তখন এ লোক দেখানো কাজ একেবারেই অর্থহীন। এখানে এ বিষয়টি গভীরভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, যেসব লোক আল্লাহ‌ ও রসূলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নামায পড়ছিল, রোযা রাখছিল, যাকাতও দিচ্ছিল এবং মুসলমানদের সাথে তাদের অন্যান্য সৎকাজে শামিলও হচ্ছিল, তাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ফায়সালা শুনিয়ে দেয়া হলো যে, তারা আদতে ঈমানই আনেনি। আর এ ফায়সালা কেবলমাত্র এরই ভিত্তিতে করা হলো যে, কুফর ও ইসলামের দ্বন্দ্বে যখন কঠিন পরীক্ষার সময় এলো তখন তারা দো-মনা হবার প্রমাণ দিল, দ্বীনের স্বার্থের ওপর নিজের স্বার্থের প্রার্ধন্য প্রতিষ্ঠিত করলো এবং ইসলামের হেফাজতের জন্য নিজের প্রাণ, ধন-সম্পদ ও শ্রম নিয়োজিত করতে অস্বীকৃতি জানালো। এ থেকে জানা গেলো, ফায়সালার আসল ভিত্তি এসব বাহ্যিক কাজ-কর্ম নয়। বরং মানুষের বিশ্বস্ততা কার সাথে সম্পর্কিত তারই ভিত্তিতে এর ফায়সালা সূচিত হয়। যেখানে আল্লাহ‌ ও তাঁর দ্বীনের প্রতি বিশ্বস্ততা নেই সেখানে ঈমানের স্বীকৃতি এবং ইবাদাত ও অন্যান্য সৎকাজের কোন মূল্য নেই।
৩৩.
অর্থাৎ তাদের কার্যাবলীর কোন গুরুত্ব ও মূল্য নেই। ফলে সেগুলো নষ্ট করে দেয়া আল্লাহর কাছে মোটেই কষ্টকর হবে না। তাছাড়া তারা এমন কোন শক্তিই রাখে না যার ফলে তাদের কার্যাবলী ধ্বংস করে দেয়া তাঁর জন্য কঠিন হতে পারে।
.
৩৪.
যে প্রেক্ষাপটে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে সে দৃষ্টিতে বিচার করলে বলা যায়, যারা আহ্‌যাব যুদ্ধে সুবিধাবাদী ও পিঠ বাঁচানোর নীতি অবলম্বন করেছিল তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই নবী করীমের ﷺ কর্মধারাকে এখানে আদর্শ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা ছিলে ঈমান, ইসলাম ও রসূলের আনুগত্যের দাবীদার। তোমাদের দেখা উচিত ছিল, তোমরা যে রাসূলের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছো তিনি এ অবস্থায় কোন্ ধরনের নীতি অবলম্বন করেছিলেন। যদি কোন দলের নেতা নিজেদের নিরাপদ থাকার নীতি অবলম্বন করেন, নিজেই আরাম প্রিয় হন, নিজেই ব্যক্তিগত স্বার্থ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেন, বিপদের সময় নিজেই পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি করতে থাকেন, তাহলে তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে এ দুর্বলতাগুলোর প্রকাশ যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। কিন্তু এখানে তো রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থা এই ছিল যে, অন্যদের কাছে তিনি যে কষ্ট স্বীকার করার জন্য দাবী জানান তার প্রত্যেকটি কষ্ট স্বীকার করার ব্যাপারে তিনি সবার সাথে শরীক ছিলেন, সবার চেয়ে বেশী করে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এমন কোন কষ্ট ছিল না যা অন্যরা বরদাশ্‌ত করেছিল কিন্তু তিনি করেননি। খন্দক খননকারীরে দলে তিনি নিজে শামিল ছিলেন। ক্ষুধা ও অন্যান্য কষ্ট সহ্য করার ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মুসলমানের সাথে তিনি সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবরোধকালে তিনি সর্বক্ষণ যুদ্ধের ময়দানে হাজির ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও শত্রুদের সামনে থেকে সরে যাননি। বনী কুরাইযার বিশ্বাসঘাতকতার পরে সমস্ত মুসলমানদের সন্তান ও পরিবারবর্গ যে বিপদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল তাঁর সন্তান ও পরিবারবর্গও সেই একই বিপদের মুখে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। তিনি নিজের সন্তান ও পরিবারবর্গের হেফাজতের জন্যও এমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা করেননি যা অন্য মুসলমানের জন্য করেননি। যে মহান উদ্দেশ্যে তিনি মুসলমানদের কাছ থেকে ত্যাগ ও কুরবানীর দাবী করেছিলেন সে উদ্দেশ্যে সবার আগে এবং সবার চেয়ে বেশি করে তিনি নিজে নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তাই যে কেউ তাঁর অনুসরণের দাবীদার ছিল তাকে এ আর্দশ দেখে তারই অনুসরণ করা উচিত ছিল।

পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এ ছিল এ আয়াতের নির্গলিতার্থ। কিন্তু এর শব্দগুলো ব্যাপক অর্থবোধক এবং এর উদ্দেশ্যকে কেবলমাত্র এ অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার কোন কারণ নেই। আল্লাহ‌ এ কথা বলেননি যে, কেবলমাত্র এ দৃষ্টিতেই তাঁর রসূলের জীবন মুসলমানদের জন্য আর্দশ বরং শর্তহীন ও অবিমিশ্রভাবে তাঁকে আর্দশ গণ্য করেছেন। কাজেই এ আয়াতের দাবী হচ্ছে, মুসলমানরা সকল বিষয়েই তাঁর জীবনকে নিজেদের জন্য আর্দশ জীবন মনে করেবে এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের চরিত্র ও জীবন গড়ে তুলবে।

৩৫.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ‌ থেকে গাফিল তার জন্য এ জীবন আদর্শ নয়। কিন্তু তার জন্য অবশ্যই আদর্শ যে, কখনো ঘটনাক্রমে আল্লাহর নাম নেয় না বরং বেশী করে তাঁকে স্মরণ করে ও স্মরন রাখে। অনুরূপভাবে এ জীবন এমন ব্যক্তির জন্যও কোন আদর্শ নয় যে আল্লাহর কাছ থেকেও কিছু আশা করে না এবং আখেরাতের আগমনেরও প্রত্যাশা করে না। কিন্তু এমন ব্যক্তির জন্য তার অবশ্যই আদর্শ যে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দান আশা করে এবং যে একথা চিন্তা করে যে, একদিন আখেরাতের জীবন শুরু হবে যেখানে দুনিয়ার জীবনে তার মনোভাব ও নীতি আল্লাহর রসূলের ﷺ মনোভাব ও নীতির কতটুকু নিকটতর আছে তার ওপরই তার সমস্ত কল্যাণ নির্ভর করবে।
৩৬.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করার প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করার পর এবার আল্লাহ‌ সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারাকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরছেন, যাতে ঈমানের মিথ্যা দাবীদার এবং আন্তরিকতা সহকারে রসূলের আনুগত্যকারীদের কার্যাবলীকে পরস্পরের মোকাবেলায় পুরোপুরিভাবে সুস্পষ্ট করে দেয়া যায়। যদিও বাহ্যিক ঈমানের স্বীকারোক্তির ব্যাপারে তারা এবং এরা একই পর্যায়ভুক্ত ছিল, উভয়কেই মুসলমানদের দলভুক্ত গণ্য করা হতো এবং নামাযে উভয়ই শরীক হতো কিন্তু পরীক্ষার মুহূর্ত আসার পর উভয়ই পরস্পর থেকে ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যায় এবং পরিষ্কার জানা যায় আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঐকান্তিক বিশ্বস্ত কে এবং কে কেবল নিছক নামের মুসলমান?
৩৭.
এ প্রসঙ্গে ১২ আয়াতটি দৃষ্টিসমক্ষে রাখা উচিত। সেখানে বলা হয়েছিল, যারা ছিল মুনাফিক ও হৃদয়ের রোগে আক্রান্ত, তারা দশ বারো হাজার সৈন্যকে সামনে থেকে এবং বনী কুরাইযাকে পিছন থেকে আক্রমণ করতে দেখে চিৎকার করে বলতে থাকে, “আল্লাহ ও তাঁর রসূল ﷺ আমাদের সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন সেগুলো ডাহা মিথ্যা ও প্রতারণা প্রমাণিত হলো। আমাদের বলা তো হয়েছিল, আল্লাহর দ্বীনের প্রতি ঈমান আনলে আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থন পেছনে থাকবে, আরবে ও আজমে তোমাদের ডংকা বাজবে এবং রোম ও ইরানের সম্পদ তোমাদের করায়ত্ত হবে কিন্তু এখন দেখছি সমগ্র আরব আমাদের খতম করে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এবং আমাদেরকে এ বিপদ সাগর থেকে উদ্ধার করার জন্য কোথাও ফেরেশতাদের সৈন্যদলের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না।” এখন বলা হচ্ছে ঐ সব মিথ্যা ঈমানের দাবীদার আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের অঙ্গীকারের যে অর্থ বুঝেছিল এর একটি তাই ছিল। সাচ্চা ঈমানদাররা এর যে অর্থ বুঝেছে সেটি এর দ্বিতীয় অর্থ। বিপদের ঘনঘটা দেখে আল্লাহর অঙ্গীকারের কথা তাদেরও মনে পড়েছে কিন্তু এ অঙ্গীকার নয় যে, ঈমান আনার সাথে সাথেই কুটোটিও নাড়ার দরকার হবে না সোজা তোমরা দুনিয়ার শাসন কর্তৃত্ব লাভ করে যাবে এবং ফেরেশতারা এসে তোমাদের মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দেবে। বরং এ অঙ্গীকার যে, কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে, বিপদের পাহাড় তোমাদের মাথায় ভেঙ্গে পড়বে, তোমাদের চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, তবেই কোন পর্যায়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তোমাদের প্রতি বর্ষিত হবে এবং তোমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সব সাফল্য দান করা হবে যেগুলো দেবার অঙ্গীকার আল্লাহ‌ মু’মিন বান্দাদের সাথে করেছিলেনঃ

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ

“তোমরা কি একথা মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা জান্নাতে এমনিই প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছিল তারা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি। তারা কাঠিন্য ও বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তাদেরকে নাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, এমনকি রসূল ও তার সঙ্গী-সাথীরা চিৎকার করে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে!-শোনো, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই আছে।” (আল বাকারাহ্‌ ২১৪)

أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ - وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ

“লোকেরা কি একথা মনে করে নিয়েছে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ একথা বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ এদের আগে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবাইকে আমি পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে অবশ্যই দেখতে হবে কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যাবাদী” (আল আনকাবূত, ২-৩)

৩৮.
অর্থাৎ বিপদ আপদের এ পাহাড় দেখে তাদের ঈমান নড়ে যাবার পরিবর্তে আরো বেশি বেড়ে গেলো এবং আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে দূরে পালিয়ে যাবার পরিবর্তে তারা আরো বেশী প্রত্যয় ও নিশ্চিন্ততা সহকারে সবকিছু তাঁর হাতে সোপর্দ করতে উদ্যোগী হয়ে উঠলো।

এ প্রসঙ্গে একথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, ঈমান ও আত্মসমর্পণ আসলে মনের এমন একটি অবস্থা যা দ্বীনের প্রত্যেকটি হুকুম ও দাবীর মুখে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। দুনিয়ার জীবনে প্রতি পদে পদে মানুষ এমন অবস্থার মুখোমুখি হয় যখন দ্বীন কোন কাজের আদেশ দেয় অথবা তা করতে নিষেধ করে অথবা প্রাণ, ধন-সম্পদ, সময়, শ্রম ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা ত্যাগ করার দাবী করে। এ ধরনের প্রত্যেক সময়ে যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে সরে আসবে তার ঈমান ও আত্মসমর্পণ কমতি দেখা দেবে এবং যে ব্যক্তিই আদেশের সামনে মাথা নত করে দেবে তার ঈমান ও আত্মসমর্পণ বেড়ে যাবে যদিও শুরুতে মানুষ কেবলমাত্র ইসলাম গ্রহণ করতেই মু’মিন ও মুসলিম রূপে গণ্য হয়ে যায় কিন্তু এটা কোন স্থির ও স্থবির অবস্থা নয়। এ অবস্থা কেবল এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে না। বরং এর মধ্যে উন্নতি ও অবনতি উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে। আনুগত্য ও আন্তরিকতার অভাব ও স্বল্পতা এর অবনতির কারণ হয়। এমনকি এক ব্যক্তি পেছনে হটতে হটতে ঈমানের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়, যেখান থেকে চুল পরিমাণ পেছনে হটলেই সে মু’মিনের পরিবর্তে মুনাফিক হয়ে যায়। পক্ষান্তরে আন্তরিকতা যত বেশী হতে থাকে, আনুগত্য যত পূর্ণতা লাভ করে এবং আল্লাহর সত্য দ্বীনের ঝাণ্ডা বুলন্দ করার ফিকির, আকাঙ্ক্ষা ও আত্মনিমগ্নতা যত বেড়ে যেতে থাকে সেই অনুপাতে ঈমানও বেড়ে যেতে থাকে। এভাবে এক সময় মানুষ ‘সিদ্দীক’ তথা পূর্ণ সত্যবাদীর মর্যাদায় উন্নীত হয়। কিন্তু এই তারতম্য ও হ্রাসবৃদ্ধি কেবল নৈতিক মর্যাদার মধ্যেই সীমিত থাকে। আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো পক্ষে এর হিসেব করা সম্ভব নয়। বান্দাদের জন্য একটি স্বীকারোক্তি ও সত্যতার ঘোষণাই ঈমান। এর মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান ইসলামে প্রবেশ করে এবং যতদিন সে এর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে ততদিন তাকে মুসলমান বলে মেনে নেয়া হয়। তার সম্পর্কে আমরা এ কথা বলতে পারি না যে, সে আধা মুসলমান বা সিকি মুসলমান কিংবা দ্বিগুন মুসলমান বা ত্রিগুন মুসলমান। এ ধরনের আইনগত অধিকারের ক্ষেত্রে সকল মুসলমান সমান। কাউকে আমরা বেশী মু’মিন বলতে পারি না এবং তার অধিকারও বেশী হতে পারে না। আবার কাউকে কম মু’মিন গণ্য করে তার অধিকার কম করতে পারি না। এসব দিক দিয়ে ঈমান কম-বেশী হওয়ার কোন প্রশ্ন দেখা দেয় না। আসলে এ অর্থেই ইমাম আবু হানীফা (র) বলেছেনঃ

الايمان لايزيد ولاينقص

অর্থাৎ “ঈমান কম-বেশী হয় না” (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল আনফাল ২ এবং আল ফাতহ ৭ টীকা)

অনুবাদ: