পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

১১১ আয়াত

২১২ ) যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবন বড়ই প্রিয় ও মনোমুগ্ধকর করে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের লোকেরা ঈমানের পথ অবলম্বনকারীদেরকে বিদ্রূপ করে। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকওয়া অবলম্বনকারীরাই তাদের মোকাবিলায় উন্নত মর্যাদার আসীন হবে। আর দুনিয়ার জীবিকার ক্ষেত্রে আল্লাহ‌ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত দান করে থাকেন।
زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا وَيَسْخَرُونَ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ۘ وَٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ فَوْقَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۗ وَٱللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍۢ ٢١٢
২১৩ ) প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল। (তারপর এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকেনি, তাদের মধ্যে মতভেদের সূচনা হয়) তখন আল্লাহ‌ নবী পাঠান। তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী। আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়।---(এবং প্রথমে তাদেরকে সত্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়নি বলে এ মতভেদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল, তা নয়) মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের জ্ঞান দান করা হয়েছিল। তারা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে। ২৩০ --- কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ‌ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দিয়েছেন, যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল। আল্লাহ‌ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন।
كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةًۭ وَٰحِدَةًۭ فَبَعَثَ ٱللَّهُ ٱلنَّبِيِّـۧنَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ بِٱلْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ ٱلنَّاسِ فِيمَا ٱخْتَلَفُوا۟ فِيهِ ۚ وَمَا ٱخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا ٱلَّذِينَ أُوتُوهُ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ ٱلْبَيِّنَـٰتُ بَغْيًۢا بَيْنَهُمْ ۖ فَهَدَى ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لِمَا ٱخْتَلَفُوا۟ فِيهِ مِنَ ٱلْحَقِّ بِإِذْنِهِۦ ۗ وَٱللَّهُ يَهْدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍ ٢١٣
২১৪ ) তোমরা ২৩১ কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি। তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চীৎকার করে বলে উঠেছিল, আল্লাহ‌র সাহায্য কবে আসবে? তখন তাদেরকে এই বলে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল, অবশ্যই আল্লাহ‌র সাহায্য নিকটেই।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ ٱلَّذِينَ خَلَوْا۟ مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ ٱلْبَأْسَآءُ وَٱلضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوا۟ حَتَّىٰ يَقُولَ ٱلرَّسُولُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ مَتَىٰ نَصْرُ ٱللَّهِ ۗ أَلَآ إِنَّ نَصْرَ ٱللَّهِ قَرِيبٌۭ ٢١٤
২১৫ ) লোকেরা জিজ্ঞেস করছে, আমরা কি ব্যয় করবো? জবাব দাও, যে অর্থই তোমরা ব্যয় কর না কেন তা নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো। আর যে সৎকাজই তোমরা করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ‌ অবগত হবেন।
يَسْـَٔلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ ۖ قُلْ مَآ أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍۢ فَلِلْوَٰلِدَيْنِ وَٱلْأَقْرَبِينَ وَٱلْيَتَـٰمَىٰ وَٱلْمَسَـٰكِينِ وَٱبْنِ ٱلسَّبِيلِ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌۭ ٢١٥
২১৬ ) তোমাদের যুদ্ধ করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর। হতে পারে কোন জিনিস তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর অথচ তা তোমাদের জন্য ভালো। আবার হতে পারে কোন জিনিস তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমাদের জন্য খারাপ। আল্লাহ‌ জানেন, তোমরা জানো না।
كُتِبَ عَلَيْكُمُ ٱلْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌۭ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكْرَهُوا۟ شَيْـًۭٔا وَهُوَ خَيْرٌۭ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّوا۟ شَيْـًۭٔا وَهُوَ شَرٌّۭ لَّكُمْ ۗ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ٢١٦
২১৭ ) লোকেরা তোমাকে হারাম মাসে যুদ্ধ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে। বলে দাওঃ ঐ মাসে যুদ্ধ করা অত্যন্ত খারাপ কাজ। কিন্তু আল্লাহ‌র পথ থেকে লোকদেরকে বিরত রাখা, আল্লাহ‌র সাথে কুফরী করা, মসজিদে হারামের পথ আল্লাহ‌ – বিশ্বাসীদের জন্য বন্ধ করে দেয়া এবং হারাম শরীফের অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহ‌র নিকট তার চাইতেও বেশী খারাপ কাজ। আর ফিত্‌না হত্যাকান্ডের চাইতেও গুরুতর অপরাধ। ২৩২ তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেই যাবে, এমন কি তাদের ক্ষমতায় কুলোলে তারা তোমাদেরকে এই দ্বীন থেকেও ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। (আর একথা খুব ভালোভাবেই জেনে রাখো), তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই এই দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়ায় ও আখেরাতে উভয় স্থানে তার সমস্ত কর্মকান্ড ব্যর্থ হয়ে যাবে। এই ধরনের সমস্ত লোকই জাহান্নামের বাসিন্দা এবং তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। ২৩৩
يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلشَّهْرِ ٱلْحَرَامِ قِتَالٍۢ فِيهِ ۖ قُلْ قِتَالٌۭ فِيهِ كَبِيرٌۭ ۖ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَكُفْرٌۢ بِهِۦ وَٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِۦ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ ٱللَّهِ ۚ وَٱلْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ ٱلْقَتْلِ ۗ وَلَا يَزَالُونَ يُقَـٰتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ ٱسْتَطَـٰعُوا۟ ۚ وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌۭ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَـٰلُهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ ۖ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ٢١٧
২১৮ ) বিপরীত পক্ষে যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে বাড়ি-ঘর ত্যাগ করেছে ও জিহাদ করেছে ২৩৪ তারা সঙ্গতভাবেই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ‌ তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদের প্রতি নিজের করুণাধারা বর্ষণ করবেন।
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَاجَرُوا۟ وَجَـٰهَدُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أُو۟لَـٰٓئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَتَ ٱللَّهِ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٢١٨
২১৯ ) তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছেঃ মদও জুয়ার ব্যাপারে নির্দেশ কি? বলে দাওঃ ঐ দু’টির মধ্যে বিরাট ক্ষতিকর বিষয় রয়েছে যদিও লোকদের জন্য তাতে কিছুটা উপকারিতাও আছে, কিন্তু তাদের উপকারিতার চেয়ে গোনাহ অনেক বেশী। ২৩৫
۞ يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلْخَمْرِ وَٱلْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَآ إِثْمٌۭ كَبِيرٌۭ وَمَنَـٰفِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَآ أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ وَيَسْـَٔلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ ٱلْعَفْوَ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ٢١٩
২২০ ) তোমাকে জিজ্ঞেস করছেঃ আমরা আল্লাহর পথে কি ব্যয় করবো? বলে দাওঃ যা কিছু তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়। এভাবে আল্লাহ‌ তোমাদের জন্য দ্ব্যর্থহীন সুস্পষ্ট বিধান বর্ণনা করেন, হয়তো তোমরা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানের জন্য চিন্তা করবে। জিজ্ঞেস করছেঃ এতিমদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে? বলে দাওঃ যে কর্মপদ্ধতি তাদের জন্য কল্যাণকর তাই অবলম্বন করা ভালো। ২৩৬ তোমরা যদি তোমাদের নিজেদের ও তাদের খরচপাতি ও থাকা-খাওয়া যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাখো তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। তারা তো তোমাদের ভাই। অনিষ্টকারী ও হীতকারী উভয়ের অবস্থা আল্লাহ‌ জানেন। আল্লাহ‌ চাইলে এ ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ও পরাক্রমের অধিকারী হবার সাথে সাথে জ্ঞান ও হিকমতের অধিকারী।
فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ ۗ وَيَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلْيَتَـٰمَىٰ ۖ قُلْ إِصْلَاحٌۭ لَّهُمْ خَيْرٌۭ ۖ وَإِن تُخَالِطُوهُمْ فَإِخْوَٰنُكُمْ ۚ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ ٱلْمُفْسِدَ مِنَ ٱلْمُصْلِحِ ۚ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ لَأَعْنَتَكُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌۭ ٢٢٠
২২১ ) মুশরিক নারীদেরকে কখনো বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একটি সম্ভ্রান্ত মুশরিক নারী তোমাদের মনহরণ করলেও একটি মু’মিন দাসী তার চেয়ে ভালো। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে নিজেদের নারীদের কখনো বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন সম্ভ্রান্ত মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও একজন মুসলিম দাস তার চেয়ে ভালো। তারা তোমাদের আহবান জানাচ্ছে আগুনের দিকে ২৩৭ আর আল্লাহ‌ নিজ ইচ্ছায় তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। তিনি নিজের বিধান সুস্পষ্ট ভাষায় লোকদের সামনে বিবৃত করেন। আশা করা যায়, তারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করবে।
وَلَا تَنكِحُوا۟ ٱلْمُشْرِكَـٰتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌۭ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌۭ مِّن مُّشْرِكَةٍۢ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنكِحُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا۟ ۚ وَلَعَبْدٌۭ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌۭ مِّن مُّشْرِكٍۢ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ۗ أُو۟لَـٰٓئِكَ يَدْعُونَ إِلَى ٱلنَّارِ ۖ وَٱللَّهُ يَدْعُوٓا۟ إِلَى ٱلْجَنَّةِ وَٱلْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِۦ ۖ وَيُبَيِّنُ ءَايَـٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ٢٢١
.
২৩০.
অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ লোকেরা আন্দাজ ও অনুমানের ভিত্তিতে “ধর্মের” ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে বলেঃ মানুষের জীবনের সূচনা হয়েছে শিরকের অন্ধকারের মধ্য দিয়ে। তারপর ক্রমিক বিবর্তন ও ক্রম-উন্নতির মাধ্যমে অন্ধকার অপসৃত হতে ও আলোকমালা বাড়তে থেকেছে। এভাবে অবশেষে একদিন মানুষ তৌহীদের দ্বারপ্রান্তের পৌঁছেছে। বিপরীতপক্ষে কুরআন বলছেঃ পরিপূর্ণ আলোর মধ্যেই দুনিয়ায় মানুষে জীবনকালের সূচনা হয়েছে। মহান আল্লাহ‌ সর্বপ্রথম যে মানুষটিকে সৃষ্টি করেছিলেন তাকে প্রকৃত সত্যের জ্ঞান দান করেছিলেন এবং তার জন্য সঠিক পথ কোন্‌টি তাও বলে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত বনী আদম সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তখন তারা একটি উম্মাত ও একই দলভুক্ত ছিল। অতঃপর লোকেরা নতুন নতুন পথ ও বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে থাকে। তাদের প্রকৃত সত্যের জ্ঞান ছিল না বলে তারা এমনটি করেছিল তা নয় বরং প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত থাকার পরও তাদের কেউ কেউ নিজেদের বৈধ অধিকারের চাইতে বেশী মর্যাদা, স্বার্থ ও লাভ অর্জন করতে চাইতো। এজন্য তারা পরস্পরের ওপর যুলুম, উৎপীড়ন ও বাড়াবাড়ি করার ইচ্ছা পোষণ করতো। এই গলদ ও অনিষ্টকারিতা দূর করার জন্য মহান আল্লাহ‌ নবী পাঠাতে শুরু করেন। নবীদেরকে এজন্য পাঠানো হয়নি যে, তাঁরা প্রত্যেকে একটি পৃথক ধর্মের ভিত গড়ে তুলবেন এবং প্রত্যেকের পৃথক উম্মাত গড়ে উঠবে। বরং মানুষের সামনে তাদের হারানো সত্যপথ সুস্পষ্ট করে তুলে ধরে তাদেরকে পুনরায় একই উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত করাই ছিল তাঁদের পাঠাবার উদ্দেশ্য।
.
২৩১.
ওপরের আয়াত ও আয়াতের মাঝখান একটি পূর্ণাংগ কাহিনী অবর্ণিত রয়ে গেছে। আয়াতে এদিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে এবং কুরআনের মক্কী সূরাগুলোয় (যেগুলো সূরা বাকারার পূর্বে নাযিল হয়েছে) এ কাহিনী বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়ার যে কোন দেশে যখনই নবীদের আর্বিভাব ঘটেছে তখনই তাঁরা ও তাঁদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী গোষ্ঠী আল্লাহদ্রোহী মানব সমাজের কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা কোন অবস্থায়ই নিজেদের প্রাণের পরোয়া করেননি। বাতিল পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে তাঁরা আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এ দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ইসলামের প্রতি ঈমান আনার পর কেউ দু’দণ্ডের জন্য নিশ্চিন্তে আরামে বসে থাকতে পারেনি। প্রতি যুগে ইসলামের প্রতি ঈমান আনার স্বাভাবিক দাবী হিসেবে ঈমানদার গোষ্ঠীকে ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। যে শয়তানী ও বিদ্রোহী শক্তি এ সংগ্রামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার শক্তির দর্প চূর্ণ করার জন্য ঈমানদারদের পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করতে হয়েছে।
.
.
.
২৩২.
এ বিষয়টি একটি ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। নবী ﷺ দ্বিতীয় হিজরীর রজব মাসে মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী ‘নাখ্‌লা’ নামক স্থানে আট জনের একটি বাহিনী পাঠান। কুরাইশদের গতিবিধি ও তাদের সংকল্প সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করেন। যুদ্ধ করার কোন অনুমতি তাদেরকে দেননি। কিন্তু পথে তারা কুরাইশদের একটি ছোট বাণিজ্যিক কাফেলার মুখোমুখি হয়। কাফেলার ওপর আক্রমণ চালিয়ে তারা একজনকে হত্যা করে এবং বাদবাকি সবাইকে গ্রেফতার করে অর্থ ও পণ্য সম্ভারসহ তাদেরকে মদীনায় নিয়ে আসে। তাদের এ পদক্ষেপটি এমন এক সময় গৃহীত হয় যখন রজব শেষ হয়ে শাবান মাস শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাদের এ আক্রমণটি রজব মাসে (অর্থাৎ হারাম মাসে) সংঘটিত হয়েছিল কি না ব্যাপারটি সম্পর্কে সন্দেহ জাগে। কিন্তু কুরাইশরাও পর্দান্তরালে তাদের সাথে যোগসাজশকারী ইহুদী ও মদীনার মুনাফিকরা মুসলমানদের বিরুদ্দে প্রচারণা চালাবার জন্য এ ঘটনাটির কথা চারদিকে ব্যাপকভাবে ছড়াতে থাকে। তারা কঠিন আপত্তি জানিয়ে অপ্রচার করতে থাকে হ্যাঁ, এরা বড়ই আল্লাওয়ালা হয়েছে। অথচ হারাম মাসেও রক্তপাত করতে কুন্ঠিত হয় না। এ আয়াতে তাদের এ আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। জবাবের সার নির্যাস হচ্ছেঃ হারাম মাসে লড়াই করা নিঃসন্দেহে বড়ই গর্হিত কাজ। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা তাদের জন্য শোভা পায় না, যারা শুধুমাত্র এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনার কারণে তেরো বছর ধরে তাদের অসংখ্য ভাইয়ের ওপর যুলুম নির্যাতন চালিয়ে এসেছে। তাদেরকে এমনভাবে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত করেছে যে, তারা স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তারপর এখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তাদের ঐ ভাইদের মসজিদে হারামে যাবার পথও বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ মসজিদে হারাম কারোর নিজস্ব সম্পত্তি নয়। গত দু’হাজার বছর থেকে কোন দিন কাউকে এ ঘরের যিয়ারতে বাধা দেয়া হয়নি। কাজেই এ ধরনের কলঙ্কিত চরিত্রের অধিকারী জালেমরা কোন্‌ মুখে সামান্য একটি সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে এত বড় হৈচৈ করে বেড়াচ্ছে এবং আপত্তি ও অভিযোগ উত্থাপন করে চলছে? অথচ এ সংঘর্ষে নবীর অনুমতি ছাড়াই সবকিছু ঘটেছে। এ ঘটনাটিকে বড় জোর এভাবে বলা যেতে পারে, একটি ইসলামী জামায়াতের কয়েকজন লোক একটি দায়িত্বহীন কাজ করে বসেছে।

এ প্রসঙ্গে একথা মনে রাখা দরকার যে, এ তথ্য সংগ্রহাক বাহিনীটি বন্দী ও গনীমাতের মাল নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে হাযির হবার সাথে সাথেই তিনি বলেন, আমি তো তোমাদের যুদ্ধ করার অনুমতি দেইনি। তাছাড়া তারা যে গনীমাতের মাল এনেছিল তা থেকে তিনি বাইতুল মালের অংশ নিতেও অস্বীকৃতি জানান। তাদের এ লুন্ঠন অবৈধ ছিল, এটি তারই প্রমাণ। সাধারণ মুসলমানরাও এ পদক্ষেপের কারণে এর সাথে সংশ্লিষ্ট নিজেদের লোকদেরকে কাঠোরভাবে তিরস্কার করে। মদীনার একটি লোকও তাদের এ কাজের প্রশংসা করেনি।

২৩৩.
সততা ও সৎপ্রবণতার ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে মুসলমানদের কোন কোন সরলমনা ব্যক্তি মক্কার কাফের ও ইহুদিদের উপরোল্লিখিত অভিযোগে প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন। এই আয়াতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যে, তোমাদের এসব কথায় তোমাদের ও তাদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে যাবে, একথা মনে করো না। তারা বোঝাপড়ার জন্য অভিযোগ করছে না। তারা তো আসলে কাঁদা ছুঁড়তে চায়। তোমরা কেন এই দ্বীনের প্রতি ঈমান এনেছো এবং কেন দুনিয়াবাসীর সামনে এর দাওয়াত পেশ করে চলেছো-একথা তাদের মনে কাঁটার মতো বিঁধছে। কাজেই যতদিন তারা নিজেদের কুফরীর ওপর অটল রয়েছে এবং তোমরাও এই দ্বীন ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছো ততদিন তোমাদের ও তাদের মধ্যে কোন প্রকার বোঝাপড়া ও সমঝোতা হতে পারে না। আর এই ধরনের শত্রুদেরকে তোমরা মামুলি শত্রু মনে করো না। যারা তোমাদের অর্থ-সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে চায় তারা অপেক্ষাকৃত ছোট পর্যায়ের শত্রু। কিন্তু যারা তোমাদেরকে আল্লাহর সত্য দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিতে চাই তারাই তোমাদের নিকৃষ্টতম শত্রু। কারণ প্রথম শত্রুটি তোমাদের বৈষয়িক ক্ষতি করতে চাই কিন্তু দ্বিতীয় শত্রুটি চায় তোমাদেরকে আখেরাতের চিরন্তন আযাবের মধ্যে ঠেলে দিতে এবং এজন্য সে তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
২৩৪.
জিহাদ অর্থ হচ্ছে, কোন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনে নিজের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এটি নিছক যুদ্ধের সমার্থক কোন শব্দ নয়। যুদ্ধের জন্য আরবীতে ‘কিতাল’ (রক্তপাত) শব্দ ব্যবহার করা হয়। জিহাদের অর্থ তার চাইতে ব্যাপক। সব রকমের প্রচেষ্টা ও সাধনা এর অন্তর্ভুক্ত। মুজাহিদ এমন এক ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সর্বক্ষণ নিজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাধনে নিমগ্ন, যার মস্তিষ্ক সবসময় ঐ উদ্দেশ্য সম্পাদনের উপায় ও কৌশল উদ্ভাবনে ব্যস্ত। যার কণ্ঠ ও লেখনি নিজের উদ্দেশ্যের প্রচারণায় নিয়োজিত। মুজাহিদের হাত, পা ও শরীরের প্রতিটি অংগ প্রত্যংগ জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সারাক্ষন প্রচেষ্টা, সাধনা ও পরিশ্রম করে চলছে। জিহাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সে নিজের সম্ভাব্য সমস্ত উপায়-উপকরণ নিয়োগ করে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে এই পথের সমস্ত বাঁধার মোকাবিলা করে, এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন প্রাণ উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। এর নাম ‘জিহাদ।’ আর আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছেঃ এ সবকিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করতে হবে। এই দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহর দ্বীন তথা আল্লাহ‌ প্রদত্ত জীবন বিধান প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহর বাণী ও বিধান দুনিয়ার সমস্ত মতবাদ, চিন্তা ও বিধানের ওপর বিজয় লাভ করবে। মুজাহিদের সামনে এছাড়া আর দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকবে না।
.
২৩৫.
এটি হচ্ছে মদ ও জুয়া সম্পর্কে প্রথম নির্দেশ। এখানে শুধুমাত্র অপছন্দের কথা ব্যক্ত করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, যাতে মন ও মস্তিষ্ক তার হারাম হবার বিষয়টি গ্রহণ করে নিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। পরে মদ পান করে নামায পড়া নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। তারপর সবশেষে মদ ও জুয়া এবং এই পর্যায়ের সমস্ত বস্তুকে চিরতরে হারাম ঘোষণা করা। (দেখুন সুরা নিসা, ৪৩ আয়াত এবং সূরা মা-য়েদাহ, ৯০ আয়াত)।
২৩৬.
এই আয়াত নাযিল হবার আগে এতিমদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে কুরআনে বারবার কঠোর নির্দেশ এসে গিয়েছিল। সে নির্দেশগুলোয় এতদূর বলে দেয়া হয়েছিল যে, “এতিমদের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না” এবং “যারা যুলুম নির্যাতন চালিয়ে এতিমদের সম্পদ খায় তারা আগুনের সাহায্যে নিজেদের পেট ভরে।” এই কঠোর নির্দেশের ভিত্তিতে এতিম ছেলে মেয়েদের লালন পালনকারীরা এতদূর ভীত এ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল যে, তারা এতিমদের খাওয়া পরার ব্যবস্থা নিজেদের থেকে আলাদা করে দিয়েছিল। এই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করার পরও তারা এতিমদের সম্পদের কিছু অংশ তাদের নিজেদের সাথে মিশে যাবার ভয় করছিল। তাই তারা এই এতিম ছেলে মেয়েদের সাথে লেনদেন ও আচরণের সঠিক পদ্ধতি কি হতে পারে সে সম্পর্ক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন।
.
২৩৭.
মুশরিকদের সাথে বিয়ে-শাদীর সম্পর্ক না রাখার ব্যাপারে ওপরে যে কথা বলা হয়েছে এটি হচ্ছে তার মূল কারণ ও যুক্তি। নারী ও পুরুষের মধ্যে বিয়েটা নিছক একটি যৌন সম্পর্ক মাত্র নয়। বরং এটি একটি গভীর তামাদ্দুনিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও মানসিক সম্পর্ক। মু’মিন ও মুশরিকের মধ্যে যদি মানসিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাহলে যেখানে একদিকে মু’মিন স্বামী বা স্ত্রীর প্রভাবে মুশরিক স্ত্রী বা স্বামী এবং তার পরিবার ও পরবর্তী বংশধররা ইসলামী আকীদা –বিশ্বাস ও জীবন ধারায় গভীরভাবে আকৃষ্ট ও প্রভাবিত হয়ে যেতে পারে, সেখানে অন্যদিকে মুশরিক স্বামী বা স্ত্রীর ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ও আচার-ব্যবহারে কেবলমাত্র মু’মিন স্বামীর বা স্ত্রীরই নয় বরং তার সমগ্র পরিবার ও পরবর্তী বংশধরদেরও প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রুতিতে ইসলাম কুফর ও শিরকের এমন একটি মিশ্রিত জীবন ধারা সেই গৃহে ও পরিবারে লালিত হবার সম্ভাবনাই বেশী, যাকে অমুসলিমরা যতই পছন্দ করুক না কেন ইসলাম তাকে পছন্দ করতে এক মুহূর্তের জন্যও প্রস্তুত নয়। কোন খাঁটি ও সাচ্চা মু’মিন নিছক নিজের যৌন লালসা পরিতৃপ্তির জন্য কখনো নিজ গৃহে ও পরিবারে কাফেরী ও মুশরিকী চিন্তা-আচার-আচরণ লালিত হবার এবং নিজের অজ্ঞাতসারে নিজের জীবনের কোন ক্ষেত্রে কুফর ও শিরকে প্রভাবিত হয়ে যাবার বিপদ ডেকে আনতে পারে না। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, কোন মু’মিন কোন মুশরিকের প্রেমে পড়ে গেছে তাহলেও তার ঈমানের দাবী হচ্ছে এই যে, সে নিজের পরিবার, বংশধর ও নিজের দ্বীন, নৈতিকতা ও চরিত্রের স্বার্থে নিজের ব্যক্তিগত আবেগকে কুরবানী করে দেবে।
.
অনুবাদ: