আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
বর্তমান যুগের কোন কোন ব্যক্তি একথা প্রমাণ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন যে, জিন ও পাখি বলে আসলে জিন ও পাখির কথা বুঝানো হয়নি বরং মানুষের কথা বুঝানো হয়েছে। মানুষরাই হযরত সুলাইমানের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিল। তারা বলেন, জিন মানে পার্বত্য উপজাতি। এদের উপর হযরত সুলাইমান বিজয় লাভ করেছিলেন। তাঁর অধীনে তারা বিস্ময়কর শক্তি প্রয়োগের ও মেহনতের কাজ করতো। আর পাখি মানে অশ্বারোহী সেনাবাহিনী। তারা পদাতিক বাহিনীর তুলনায় অনেক বেশী দ্রুততা সম্পন্ন ছিল। কিন্তু এটি কুরআন মজীদের শব্দের অযথা বিকৃত অর্থ করার নিকৃষ্টতম প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআন এখানে জিন, মানুষ ও পাখি তিনটি আলাদা আলাদা প্রজাতির সেনাদলের কথা বর্ণনা করছে এবং তিনের ওপর ال (আলিফ লাম) বসানো হয়েছে তাদের পৃথক পৃথক প্রজাতিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে। তাই আল জিন (জিন জাতি) ও আত্ তাইর (পাখি জাত) কোনক্রমেই আল ইনস (মানুষ জাতি)-এর অর্ন্তভূক্ত হতে পারে না। বরং তারা তার থেকে আলাদা দু’টি প্রজাতিই হতে পারে। তাছাড়া যে ব্যক্তি সামান্য আরবী জানে সে-ও কখনো এ কথা কল্পনা করতে পারে না যে, এ ভাষায় নিছক জিন শব্দ বলে তার মাধ্যমে মানুষদের কোন দল বা নিছক পাখি (তাইর) শব্দ বলে তার মাধ্যমে অশ্বারোহী বাহিনী অর্থ করা যেতে পারে এবং কোন আরব এ শব্দগুলো শুনে তার এ অর্থ বুঝতে পারে। নিছক প্রচলিত বাগধারা অনুযায়ী কোন মানুষকে তার অস্বাভাবিক কাজের কারণে জিন অথবা কোন মেয়েকে তার সৌন্দর্যের কারণে পরী কিংবা কোন দ্রুতগতি সম্পন্ন পুরুষকে পাখি বলা হয় বলেই এর অর্থ এই হয় না যে, এখন জিন মানে শক্তিশালী লোক, পরী মানে সুন্দরী মেয়ে এবং পাখি মানে দ্রুতগতি সম্পন্ন মানুষই হবে। এ শব্দগুলোর অসেব অর্থ তো তাদের রূপক অর্থ, প্রকৃত অর্থ নয়। আর কোন ব্যক্যের মধ্যে কোন শব্দকে তার প্রকৃত অর্থ বাদ দিয়ে রূপক অর্থে তখনই ব্যবহার করা হয় বা শ্রোতা তার রূপক অর্থ তখনই গ্রহণ করে যখন আশেপাশে এমন কোন সুস্পষ্ট প্রসঙ্গ বা পূর্বাপর সামঞ্জস্য পাওয়া যায় যার ভিত্তিতে এ ধারণা করা যেতে পারে যে, জিন ও পাখি শব্দ দু’টি তাদের প্রকৃত অর্থে নয় বরং রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? বরং সামনের দিকে ঐ দু’টি দলের প্রত্যেক ব্যক্তির যে অবস্থা ও কাজ বর্ণনা করা হয়েছে তা এ পেঁচালো ব্যাখ্যার সম্পূর্ণ বিরোধী অর্থ প্রকাশ করছে। কুরআনের কথায় কোন ব্যক্তির মন যদি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পারে, তাহলে তার পরিষ্কার বলে দেয়া উচিত এ কথা আমি মানি না। কিন্তু মানুষ কুরআনের পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন শব্দগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে নিজের মনের মতো অর্থের ছাঁচে সেগুলো ঢালাই করবে এবং এ কথা প্রকাশ করতে থাকবে যে, সে কুরআনের বর্ণনা মানে, অথচ আসলে কুরআন যা কিছু বর্ণনা করেছে সে তাকে নয় বরং নিজের জোর করে তৈরী করা অর্থই মানে--- এটি মানুষের একটি মস্তবড় চারিত্রিক কাপুরুষতা ও তাত্ত্বিক খেয়ানত ছাড়া আর কী হতে পারে?
বনী ইসরাঈলের বর্ণনাসমূহেও এ কাহিনী পাওয়া যায়। কিন্তু তার শেষাংশ কুরআনের বর্ণনার বিপরীত এবং হযরত সুলাইমানের মর্যাদার বিরোধী। সেখানে বলা হয়েছে, হযরত সুলাইমান যখন এমন একটি উপত্যকা অতিক্রম করছিলেন যেখানে খুব বেশী পিঁপড়ে ছিল তখন তিনি শুনলেন একটি পিঁপড়ে চিৎকার করে অন্য পিঁপড়েদেরকে বলছে, “নিজেদের ঘরে ঢুকে পড়ো, নয়তো সুলাইমানের সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে।” একথা শুনে হযরত সুলাইমান (আ) সেই পিঁপড়ের সামনে বড়ই আত্মম্ভরিতা প্রকাশ করলেন। এর জবাবে পিঁপড়েটি তাঁকে বললো, তুমি কোথাকার কে? তুমি তো নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে তৈরী হয়েছো। একথা শুনে হযরত সুলাইমান লজ্জিত হলেন। (জুয়িশ ইনসাইকোপিডিয়া ১১ খণ্ড, ৪৪০ পৃষ্ঠা) এ থেকে অনুমান করা যায়, কুরআন কিভাবে বনী ইসরাঈলের বর্ণনাসমূহ সংশোধন করেছে এবং তারা নিজেদের নবীদের চরিত্রে যেসব কলঙ্ক লেপন করেছিল কিভাবে সেগুলো দূর করেছে। এসব বর্ণনা থেকে কুরআন সবকিছু চুরি করেছে বলে পশ্চিমী প্রাচ্যবিদরা নির্লজ্জভাবে দাবী করে।
একটি পিঁপড়ের পক্ষে নিজের সমাজের সদস্যদেরকে কোন একটি আসন্ন বিপদ থেকে সতর্ক করে দেয়া এবং এজন্য তাদের নিজেদের গর্তে ঢুকে যেতে বলা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোটেই অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এখন হযরত সুলাইমান একথাটি কেমন করে শুনতে পেলেন এ প্রশ্ন থেকে যায়। এর জবাবে বলা যায়, যে ব্যক্তির শ্রবণেন্দ্রিয় আল্লাহর কালামের মতো সূক্ষ্মতর জিনিস আহরণ করতে পারে তার পক্ষে পিঁপড়ের কথার মতো স্থুল (Crude) জিনিস আহরণ করা কোন কঠিন ব্যাপার হতে যাবে কেন?
যদি ‘আন নামল, মানে হয় মানুষের একটি উপজাতি এবং ‘নামলাহ্’ মানে হয় নামল উপজাতির এক ব্যক্তি তাহলে সুলাইমান আলাইহিস সালামের এ দোয়া এ সময় একেবারেই নিরর্থক হয়ে যায়। এক বাদশাহর পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীর ভয়ে কোন মানবিক গোত্রের এক ব্যক্তির নিজের গোত্রকে বিপদ সম্পর্কে সজাগ করা এমন কোন্ ধরণের অস্বাভাবিক কথা যে, এমন একজন সুমহান মর্যাদাশালী পরাক্রান্ত বাদশাহ এ জন্য আল্লাহর কাছে এ দোয়া চাইবেন। তবে এক ব্যক্তির দূর থেকে একটু পিঁপড়ের আওয়াজ শুনার এবং তার অর্থ বুঝার মতো জবরদস্ত শ্রবণ ও জ্ঞান শক্তির অধিকারী হওয়াটা অবশ্যই এমন একটি বিষয় যার ফলে মানুষের আত্মম্ভরিতায় লিপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ ধরণের অবস্থায় হযরত সুলাইমানের এ দোয়া যথার্থ ও যথাযথ।
প্রথমে বলা হয়, হযরত সুলাইমান আল্লাহর এ অনুগ্রহের জন্য এভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, “আমাকে পাখির ভাষার জ্ঞান দেয়া হয়েছে” এ বাক্যে তো প্রথমত পাখি শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যার ফলে প্রত্যেকটি আরব ও আরবী জানা লোক এ শব্দটিকে পাখি অর্থে গ্রহণ করবে। কারণ এখানে এমন কোন পূর্বাপর প্রসঙ্গ বা সম্পর্ক নেই যা এ শব্দটিকে রূপক বা অপ্রকৃত অর্থে ব্যবহার করার পথ সুগম করতে পারে।
দ্বিতীয়ত এ মূলে ব্যবহৃত “তাইর” শব্দের অর্থ পাখি না হয়ে যদি মানুষের কোন দল থাকে, তাহলে তার জন্য “মানতিক” (বুলি) শব্দ না বলে “লুগাত” বা “লিসান” (অর্থাৎ ভাষা) শব্দ বলা বেশী সঠিক হতো। আর তাছাড়া কোন ব্যক্তির অন্য কোন মানব গোষ্ঠীর ভাষা জানাটা এমন কোন বিরাট ব্যাপার নয় যে, বিশেষভাবে সে তার উল্লেখ করবে। আজকাল আমাদের মধ্যে হাজার হাজার লোক অনেক বিদেশী ভাষা জানে ও বোঝে। এটা এমন কি কৃতিত্ব যে জন্য একে মহান আল্লাহর অস্বাভাবিক দান ও অনুগ্রহ গণ্য করা যেতে পারে?
এরপর বলা হয়, “সুলাইমানের জন্য জিন, মানুষ ও পাখি সেনাদল সমবেত করা হয়েছিল।” এ বাক্যে প্রথমত জিন, মানুষ ও পাখি তিনটি পরিচিত জাতির নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় এ তিনটি শব্দ তিনটি বিভিন্ন ও সর্বজন পরিচিতি জাতির জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তারপর এ শব্দগুলো ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এদের কোনটির রূপক ও অপ্রকৃত অর্থে বা উপমা হিসেবে ব্যবহারের সপক্ষে কোন পূর্বাপর প্রাসাঙ্গিক সূত্রও নেই। ফলে ভাষার পরিচিত অর্থগুলোর পরিবর্তে অন্য অর্থে কোন ব্যক্তি এগুলোকে ব্যবহার করতে পারেনা। তাছাড়া “মানুষ” শব্দটি “জিন” ও “পাখি” শব্দ দু’টির মাঝখানে বসেছে, যার ফলে জিন ও পাখি আসলে মানুষ প্রজাতিরই দু’টি দল ছিল এ অর্থ গ্রহণ করার পথে কোন সুস্পষ্ট বাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। যদি এ ধরণের অর্থ গ্রহণ করা উদ্দেশ্য হতো তাহলে مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ وَالطَّيْرِ না বলে বলা হতো الْجِنِّ وَالطَّيْرِ مِنَ الْإِنْسِ সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে বলা হয়, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পাখির খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। এ সময় হুদহুদকে অনুপস্থিত দেখে তিনি একথা বলেন। যদি এ পাখি মানুষ হয়ে থাকে এবং হুদহুদও কোন মানুষের নাম হয়ে থাকে তাহলে কমপক্ষে তিনি এমন কোন শব্দ বলতেন যা থেকে বেচারা পাঠক তাকে প্রাণী মনে করতো না। দলের নাম বলা হচ্ছে পাখি এবং তার একজন সদস্যের নাম বলা হচ্ছে হুদহুদ , এরপরও আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকে মানুষ মনে করে নেব, আমাদের কাছে এ আশা করা হচ্ছে।
তারপর হযরত সুলাইমান বলেন, হুদহুদ হয় তার নিজের অনুপস্থিতির সঙ্গত কারণ বলবে নয়তো আমি তাকে কঠিন শাস্তি দেব অথবা তাকে জবাই করে ফেলবো। মানুষকে হত্যা করা হয়, ফাঁসি দেয়া হয়, মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, জবাই করে কে? কোন ভয়ংকর পাষাণ হৃদয় ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ প্রতিশোধ স্পৃহায় পাগল হয়ে গেলে হয়তো কাউকে জবাই করে ফেলে। কিন্তু আল্লাহর নবীর কাছেও কি আমরা এ আশা করবো যে, তিনি নিজের সেনাদলের এক সদস্যকে নিছক তার গরহাজির (Deserter) থাকার অপরাধে জবাই করার কথা ঘোষণা করে দেবেন এবং আল্লাহর প্রতি এ সুধারণা পোষণ করবো যে, তিনি এ ধরণের একটি মারাত্মক কথার উল্লেখ করে তার নিন্দায় একটি শব্দও বলবেন না?
আর একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে, হযরত সুলাইমান আলাহিস সালাম এ হুদহুদের কাছে সাবার রাণীর নামে পত্র দিয়ে পাঠাচ্ছেন এবং সেটি তাদের কাছে ফেলে দিতে বা নিক্ষেপ করতে বলছেন (القه اليهم) । বলা নিষ্প্রয়োজন, এ নির্দেশ পাখিদের প্রতি দেয়া যেতে পারে কিন্তু কোন মানুষকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠিয়ে তাকে এ ধরণের নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া একেবারে অসঙ্গত হয়। কেউ বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে থাকলে সে একথা মেনে নেবে যে, এক দেশের বাদশাহ অন্য দেশের রাণীর নামে পত্র দিয়ে নিজের রাষ্ট্রদূতকে এ ধরণের নির্দেশ সহকারে পাঠাতে পারে যে, পত্রটি নিয়ে রাণীর সামনে ফেলে দাও বা নিক্ষেপ করো। আমাদের মতো মামুলি লোকেরাও নিজেদের প্রতিবেশীর কাছে নিজের কোন কর্মচারীকে পাঠাবার ক্ষেত্রেও ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের যে প্রাথমিক রীতি মেনে চলি হযরত সুলাইমানকে কি তার চেয়েও নিম্নমানের মনে করতে হবে? কোন ভদ্রলোক কি কখনো নিজের কর্মচারীকে বলতে পারে, যা আমার এ পত্রটি অমুক সাহেবের সামনে ছুঁড়ে দিয়ে আয়?
এসব নিদর্শন ও চিহ্ন পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে, এখানে হুদহুদ অভিধানিক অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সে মানুষ নয় বরং একটি পাখি ছিল। এখন যদি কোন ব্যক্তি একথা মেনে নিতে প্রস্তুত না হয় যে, কুরআন হুদহুদের বলা যেসব কথা উদ্ধৃত করছে একটি হুদহুদ তা বলতে পারে, তাহলে তার পরিষ্কার বলে দেয়া উচিত আমি কুরআনের একথাটি মানি না। কুরআনের স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন শব্দগুলোর মনগড়া অর্থ করে তার আড়ালে নিজের অবিশ্বাসকে লুকিয়ে রাখা জঘন্য মুনাফিকী ছাড়া আর কিছুই নয়।
হুদহুদের একথা, “আমি এমন তথ্য সংগ্রহ করেছি যা আপনি জানেন না” বলার অর্থ এ নয় যে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম সাবার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। একথা সুস্পষ্ট ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার যে শাসকের রাজ্য লোহিত সাগরের দক্ষিণ কিনারে (ইয়ামন) বসবাসরত এমন একটি জাতি সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ থাকতে পারেন না যারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। তাছাড়া যাবুর থেকে জানা যায়, হযরত সুলাইমানেরও পূর্বে তাঁর মহান পিতা হযরত দাউদ (আ) সাবা সম্পর্কে জানতেন। যাবুরে আমরা তাঁর দোয়ার এ শব্দগুলো পাইঃ
“হে ইশ্বর, তুমি রাজাকে (অর্থাৎ স্বয়ং হযরত দাউদকে) আপনার শাসন, রাজপুত্রকে (অর্থাৎ সুলাইমানকে) তোমার ধর্মশীলতা প্রদান কর.................। তর্শীশ ও দ্বীপগণের রাজগণ নৈবেদ্য আনিবেন। শিবা (অর্থাৎ সাবার ইয়ামনী ও হাবশী শাখাসমূহ) সাবার রাজগণ উপহার দিবেন।” (গীত সংহিতা ৭২: ১-২, ১০-১১)
তাই হুদহুদের কথার অর্থ মনে হয় এই যে, সাবা জাতির কেন্দ্রস্থলে আমি স্বচক্ষে যা দেখে এসেছি তার কোন খবর এখনো পর্যন্ত আপনার কাছে পৌঁছেনি।
নমুনা হিসেবে মহান আল্লাহর এ দু’টি গুণ বর্ণনা করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন বুঝিয়ে দেয়া যে, যদি তারা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ না হতো তাহলে এ সোজা পথটি পরিষ্কার দেখতে পেতো যে, সূর্য নামের একটি জ্বলন্ত জড় পদার্থ, যার নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেই কোন অনুভূতি নেই, সে কোন ইবাদাতের হকদার নয় বরং একমাত্র সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী মহান সত্তা যাঁর অসীম শক্তি প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন অভাবনীয় কৃর্তির উদ্ভব ঘটাচ্ছেন, তিনিই এর হকদার।