পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

৩৩৯ আয়াত

৩১ ) হে মুহাম্মাদ! আমিতো এভাবে অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রুতে পরিণত করেছি ৪২ এবং তোমার জন্য তোমার রবই পথ দেখানোর ও সাহায্য দানের জন্য যথেষ্ট। ৪৩
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِىٍّ عَدُوًّۭا مِّنَ ٱلْمُجْرِمِينَ ۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيًۭا وَنَصِيرًۭا ٣١
৩২ ) অস্বীকারকারীরা বলে, “এ ব্যক্তির কাছে সমগ্র কুরআন একই সাথে নাযিল করা হলো না কেন?” ৪৪ ---হ্যাঁ, এমন করা হয়েছে এজন্য, যাতে আমি একে ভালোভাবে তোমার মনে গেঁথে দিতে থাকি ৪৫ এবং (এ উদ্দেশ্যে) একে একটি বিশেষ ক্রমধারা অনুযায়ী আলাদা আলাদা অংশে সাজিয়ে দিয়েছি।
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَوْلَا نُزِّلَ عَلَيْهِ ٱلْقُرْءَانُ جُمْلَةًۭ وَٰحِدَةًۭ ۚ كَذَٰلِكَ لِنُثَبِّتَ بِهِۦ فُؤَادَكَ ۖ وَرَتَّلْنَـٰهُ تَرْتِيلًۭا ٣٢
৩৩ ) আর (এর মধ্যে এ কল্যাণকর উদ্দেশ্যও রয়েছে যে) যখনই তারা তোমার সামনে কোন অভিনব কথা (অথবা অদ্ভূত ধরনের প্রশ্ন) নিয়ে এসেছে তার সঠিক জবাব যথাসময়ে আমি তোমাকে দিয়েছি এবং সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছি। ৪৬
وَلَا يَأْتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئْنَـٰكَ بِٱلْحَقِّ وَأَحْسَنَ تَفْسِيرًا ٣٣
৩৪ ) ---যাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া হবে তাদের অবস্থান বড়ই খারাপ এবং তাদের পথ সীমাহীন ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। ৪৭
ٱلَّذِينَ يُحْشَرُونَ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ أُو۟لَـٰٓئِكَ شَرٌّۭ مَّكَانًۭا وَأَضَلُّ سَبِيلًۭا ٣٤
৩৫ ) আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ৪৮ এবং তাঁর সাথে তাঁর ভাই হারুনকে সাহায্যকারী হিসেবে লাগিয়েছিলাম
وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَى ٱلْكِتَـٰبَ وَجَعَلْنَا مَعَهُۥٓ أَخَاهُ هَـٰرُونَ وَزِيرًۭا ٣٥
৩৬ ) আর তাদের বলেছিলাম, যাও সেই সম্প্রদায়ের কাছে যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছে। ৪৯ শেষ পর্যন্ত তাদের আমি ধ্বংস করে দিলাম।
فَقُلْنَا ٱذْهَبَآ إِلَى ٱلْقَوْمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا فَدَمَّرْنَـٰهُمْ تَدْمِيرًۭا ٣٦
৩৭ ) একই অবস্থা হলো নূহের সম্প্রদায়েরও যখন তারা রসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো, ৫০ আমি তাদের ডুবিয়ে দিলাম এবং সারা দুনিয়ার লোকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত করলাম, আর এ জালেমদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ঠিক করে রেখেছি। ৫১
وَقَوْمَ نُوحٍۢ لَّمَّا كَذَّبُوا۟ ٱلرُّسُلَ أَغْرَقْنَـٰهُمْ وَجَعَلْنَـٰهُمْ لِلنَّاسِ ءَايَةًۭ ۖ وَأَعْتَدْنَا لِلظَّـٰلِمِينَ عَذَابًا أَلِيمًۭا ٣٧
৩৮ ) এভাবে আদ ও সামূদ এবং আসহাবুর রস্ ৫২ ও মাঝখানের শতাব্দীগুলোর বহু লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
وَعَادًۭا وَثَمُودَا۟ وَأَصْحَـٰبَ ٱلرَّسِّ وَقُرُونًۢا بَيْنَ ذَٰلِكَ كَثِيرًۭا ٣٨
৩৯ ) তাদের প্রত্যেককে আমি (পূর্বে ধ্বংস প্রাপ্তদের) দৃষ্টান্ত দিয়ে দিয়ে বুঝিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে ধ্বংস করে দিয়েছি।
وَكُلًّۭا ضَرَبْنَا لَهُ ٱلْأَمْثَـٰلَ ۖ وَكُلًّۭا تَبَّرْنَا تَتْبِيرًۭا ٣٩
৪০ ) আর সেই জনপদের ওপর দিয়ে তো তারা যাতায়াত করেছে যার ওপর নিকৃষ্টতম বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল। ৫৩ তারা কি তার অবস্থা দেখে থাকেনি? কিন্তু তারা মৃত্যুর পরের জীবনের আশাই করে না। ৫৪
وَلَقَدْ أَتَوْا۟ عَلَى ٱلْقَرْيَةِ ٱلَّتِىٓ أُمْطِرَتْ مَطَرَ ٱلسَّوْءِ ۚ أَفَلَمْ يَكُونُوا۟ يَرَوْنَهَا ۚ بَلْ كَانُوا۟ لَا يَرْجُونَ نُشُورًۭا ٤٠
৪২.
অর্থাৎ আজ তোমার সাথে যে শত্রুতা করা হচ্ছে এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়। আগেও এমনটি হয়ে এসেছে। যখনই কোন নবী সত্য ও সততার দাওয়াত নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তখনই অপরাধজীবী লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে আদাপানি খেয়ে লেগেছে। এ বিষয়বস্তুটি সূরা আন’আমের ১১২-১১৩ আয়াতে আলোচিত হয়েছে। আর “আমি তাদের শত্রুতে পরিণত করে দিয়েছি।” মর্মে এ কথাটি বলা হয়েছে তার অর্থ হচ্ছে এই যে, আমার প্রাকৃতিক আইন এ রকমই। কাজেই আমার এ ইচ্ছার ওপর সবর করো এবং প্রাকৃতিক আইনের আওতায় যেসব অবস্থার সম্মুখীন হওয়া অপরিহার্য ঠাণ্ডা মাথায় দৃঢ় সংকল্প সহকারে সেগুলোর মোকাবিলা করতে থাকো। একদিকে তুমি সত্যের দাওয়াত দেবার সাথে সাথেই দুনিয়ার বিরাট অংশ তা গ্রহণ করার জন্য দৌঁড়ে আসবে এবং সকল দুস্কৃতিকারী নিজের যাবতীয় দুষ্কৃতি যোগ করে সত্যের দাওয়াতকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরবে এমনটি আশা করো না।

৪৩.
পথ দেখানো অর্থ কেবলমাত্র সত্যজ্ঞান দান করাই নয় বরং ইসলামী আন্দোলনকে সাফল্যের সাথে চালানো এবং শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ করার জন্য যথাসময়ে সঠিক ব্যবস্থা অবলম্বন করার পথও দেখিয়ে দেয়া বুঝায়। আর সাহায্য মানে হচ্ছে সব ধরনের সাহায্য। যতগুলো ময়দানে হক ও বাতিলের সংঘাত হয় তার প্রত্যেকটিতে হকের সমর্থনে সাহায্য পৌঁছানো আল্লাহর কাজ। যুক্তির লড়াই হলে তিনিই সত্যপন্থীদেরকে সঠিক ও পূর্ণশক্তিশালী যুক্তি সরবরাহ করেন। নৈতিকতার লড়াই হলে তিনিই সবদিক থেকে সত্যপন্থীদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সংগঠন-শৃংখলার মোকাবিলা হলে তিনিই বাতিলপন্থীদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন এবং হকপন্থীদের হৃদয় সংযুক্ত করেন। মানবিক শক্তির মোকাবেলা হলে তিনিই প্রতিটি পর্যায়ে যোগ্য ও উপযোগী ব্যক্তিবর্গ ও গ্রুপসমূহ সরবরাহ করে হকপন্থীদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করেন। বস্তুগত উপকরণের প্রয়োজন হলে তিনিই সত্যপন্থীদের উপকরণের প্রাচুর্য তার মোকাবিলায় নিছক একটি প্রতারণাই প্রমাণিত হয়। মোটকথা সাহায্য দেয়া ও পথ দেখানোর এমন কোন দিক নেই যেখানে সত্যপন্থীদের জন্য আল্লাহ‌ যথেষ্ট নন এবং তাদের অন্য কারো সাহায্য-সহায়তা নেবার প্রয়োজন দেখা দেয়। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, আল্লাহর তাদের জন্য যথেষ্ট হওয়ার ওপর তাদের বিশ্বাস ও আস্থা থাকতে হবে এবং তারা কোন প্রকার প্রচেষ্টা না চালিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকতে পারবে না। বরং তৎপরতা সহকারে বাতিলের মোকাবিলায় হকের মাথা উঁচু রাখার জন্য লড়ে যেতে হবে।

একথা মনে রাখতে হবে, আয়াতের এ দ্বিতীয় অংশটি না হলে প্রথম অংশ হতো বড়ই হতাশাব্যঞ্জক। এক ব্যক্তিকে বলা হচ্ছে, আমি জেনে বুঝে তোমাকে এমন একটি কাজের দায়িত্ব দিয়েছি যা শুরু করার সাথে সাথেই দুনিয়ার যত কুকুর ও নেকড়ে তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে---এর চেয়ে বড় উৎসাহ ভঙ্গকারী জিনিস তার জন্য আর কী হতে পারে! কিন্তু এ ঘোষণার সমস্ত ভীতি এ সান্ত্বনাবাণী শুনে দূর হয়ে যায় যে, এ প্রাণান্তকর সংঘাতের ময়দানে নামিয়ে দিয়ে তোমাকে আমি একাকী ছেড়ে দেইনি বরং তোমার সাহায্যার্থে আমি নিজেই রয়েছি। অন্তরে ঈমান থাকলে এর চেয়ে বেশী সাহস সঞ্চারী কথা আর কি হতে পারে যে, সারা বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহ‌ নিজেই আমাদের সাহায্যদান ও পথ দেখাবার দায়িত্ব নিচ্ছেন। এরপর তো শুধুমাত্র একজন হতোদ্যম কাপুরুষই ময়দানে এগিয়ে যেতে ইতস্তত করতে পারে।

৪৪.
এই আপত্তিটাই ছিল মক্কার কাফেরদের খুবই প্রিয় ও যুৎসই। তাদের মতে এ আপত্তিটি খুবই শক্তিশালী। এজন্য বারবার তারা এর পুনরাবৃত্তি করতো। কুরআনেও বিভিন্ন স্থানে এটি উদ্ধৃত করে এর জবাব দেয়া হয়েছে। (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আন নমল ১০১-১০৬ ও বনী ইসরাঈল ১১৯ টীকা) তাদের প্রশ্নের অর্থ ছিল, যদি ব্যক্তি নিজে চিন্তা-ভাবনা করে অথবা কারো কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে এবং বিভিন্ন কিতাব থেকে নকল করে এসব বিষয়বস্তু না এনে থাকে বরং যদি সত্যি সত্যিই এটি আল্লাহর কিতাব হয়, তাহলে সমগ্র কিতাবটি একই সময়ে একই সঙ্গে নাযিল হচ্ছে না কেন? আল্লাহ‌ যা বলতে চান তা তো তিনি ভালো করেই জানেন। যদি তিনি এগুলোর নাযিলকারী হতেন তাহলে সব কথা এক সাথেই বলে দিতেন। এই যে চিন্তা-ভাবনা করে বিভিন্ন সময় কিছু কিছু বিষয় আনা হচ্ছে এগুলো একথার সুস্পষ্ট আলামত যে, অহী উপর থেকে নয় বরং এখানেই কোথাও থেকে আহরণ করা হচ্ছে অথবা নিজেই তৈরী করে সরবরাহ করার কাজ চলছে।
৪৫.
অন্য অনুবাদ এও হতে পারেঃ “এর মাধ্যমে আমি তোমার অন্তরকে শক্তিশালী করি” অথবা “তোমার বুকে হিম্মত সঞ্চার করি।” শব্দগুলোর মধ্যে উভয় অর্থই রয়েছে এবং উভয় অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এভাবে একই বাক্যে কুরআন পর্যায়ক্রমে নাযিল করার বহুতর কারণ বর্ণনা করা হয়েছেঃ

একঃ স্মৃতির ভাণ্ডারে একে হুবহু ও অক্ষরে অক্ষরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। লেখার আকারে নয় বরং একজন নিরক্ষর নবীর মাধ্যমে নিরক্ষর মানব গোষ্ঠীর মধ্যে মৌখিক ভাষণের আকারে এর প্রচার ও প্রসার হচ্ছে।

দুইঃ এর শিক্ষাগুলো ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যেতে পারে। এজন্য থেমে থেমে সামান্য সামান্য কথা বলা এবং একই কথা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা করাই বেশী উপযোগী হয়।

তিনঃ এ কিতাব যে জীবন পদ্ধতির কথা বলেছে তার উপর মন স্থির হয়ে যেতে থাকে। এজন্য নির্দেশ ও বিধানসমূহ পর্যায়ক্রমে নাযিল হওয়াটাই বেশী যুক্তিসঙ্গত। অন্যথায় যদি সমস্ত আইন-কানুন এবং সমগ্র জীবন ব্যবস্থা একই সঙ্গে বর্ণনা করে তা প্রতিষ্ঠিত করার হুকুম দেয়া হতো তা হলে চেতনা বিশৃংখল হয়ে যেতো। তাছাড়া এটাও বাস্তব সত্য যে, প্রত্যেকটি হুকুম যদি যথাযথ ও উপযুক্ত সময়ে দেয়া হয় তাহলে তার জ্ঞানবত্তা ও প্রাণসত্তা বেশী ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়। অন্যদিকে সমস্ত বিধান, ধারা ও উপধারা অনুসারে সাজিয়ে একই সঙ্গে দিয়ে দিলে এ ফল পাওয়া যেতে পারে না।

চারঃ ইসলামী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যখন হক ও বাতিলের লাগাতার সংঘাত চলে সে সময় নবী ও তাঁর অনুসারীদের মনে সাহস সঞ্চার করে যেতে হবে। এজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একবার একটি লম্বা-চওড়া নির্দেশনামা পাঠিয়ে দিয়ে সারা জীবন সমগ্র দুনিয়ার যাবতীয় বাঁধা-বিপত্তির মোকাবিলা করার জন্য তাদেরকে এমনিই ছেড়ে দেবার তুলনায় বার বার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের কাছে পয়গাম আসা বেশী কার্যকর হয়ে থাকে। প্রথম অবস্থায় মানুষ মনে করে সে প্রবল বাত্যা বিক্ষুব্ধ তরংগের মুখে পড়ে গেছে। আর দ্বিতীয় অবস্থায় মানুষ অনুভব করে, যে আল্লাহ‌ তাকে এ কাজে নিযুক্ত করেছেন তিনি তার প্রতি দৃষ্টি রেখেছেন। তার কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তার অবস্থা দেখছেন, তার সমস্যা ও সংকটে তাকে পথ দেখাচ্ছেন এবং প্রত্যেকটি প্রয়োজনের সময় তাকে তাঁর সামনে হাজির হবার ও সম্বোধন করার সৌভাগ্য দান করে তার সাথে নিজের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে থেকেছেন। এ জিনিসটি তার উৎসাহ বৃদ্ধি এবং সংকল্প সুদৃঢ় করে।

.
৪৬.
এটি হচ্ছে পর্যায়ক্রমে কুরআন নাযিল করার পদ্ধতি অবলম্বনের আর একটি কারণ। কুরআন মজীদ নাযিল করার কারণ এ নয় যে, আল্লাহ‌ “বিধানাবলী” সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করতে চান এবং এর প্রচারের জন্য নবীকে তাঁর এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। আসল ব্যাপার যদি এটাই হতো, তাহলে পুরো বইটি লেখা শেষ করে একই সময় এজেন্টের হাতে সম্পূর্ণ বইটি তুলে দেবার দাবী যথার্থ হতো। কিন্তু আসলে এর নাযিলের কারণ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ‌ কুফরী, জাহিলীয়াত ও ফাসেকীর মোকাবিলায় ঈমান, ইসলাম, আনুগত্য ও আল্লাহভীতির একটি আন্দোলন পরিচালনা করতে চান এবং এ উদ্দেশ্যে তিনি একজন নবীকে আহবায়ক ও নেতা হিসেবে সামনে এনেছেন। এ আন্দোলন চলাকালে একদিকে যদি তিনি আহবায়ক ও তার অনুসারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা ও নির্দেশনা দেয়া নিজের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ে থাকেন তাহলে অন্যদিকে এটাও নিজ দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছেন যে, বিরোধীরা যখনই কোন আপত্তি বা সন্দেহ অথবা জটিলতা পেশ করবে তখনই তিনি তার সঠিক ব্যাখ্যা করে দেবেন এবং যখনই তারা কোন কথার ভুল অর্থ করবে তখনই তিনি তার সঠিক ব্যাখ্যা করে দেবেন। এরূপ রকমারি প্রয়োজনের জন্য যেসব ভাষণ আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হচ্ছে সেগুলোর সমষ্টির নাম কুরআন। এটি কোন আইন, নৈতিকতা বা দর্শনের কিতাব নয় বরং একটি আন্দোলনের কিতাব। আর এর প্রতিষ্ঠার সঠিক প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকে তা শুরু হবে এবং শেষ পর্ব পর্যন্ত যেভাবে আন্দোলন চলতে থাকবে এও সাথে সাথে সুযোগ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নাযিল হতে থাকবে। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, ১ম খন্ড, ভূমিকা, ৯-২০ পৃষ্ঠা)

৪৭.
অর্থাৎ যারা সোজা কথাকে উল্টোভাবে চিন্তা করে এবং উল্টো ফলাফল বের করে তাদের বুদ্ধি উল্টোমুখো হয়েছে। এ কারণেই তারা কুরআনের সত্যতা প্রমাণ পেশকারী প্রকৃত সত্যগুলোকে তাদের মিথ্যা হবার প্রমাণ গণ্য করছে। আর এজন্যই তাদেরকে নিম্নমুখী করে মুখের উপর জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে।
৪৮.
এখানে কিতাব বলে সম্ভবত তাওরাত নামে পরিচিতি গ্রন্থটিকে বুঝানো হচ্ছে না, যা মিসর থেকে বনী ইসরাঈলদের নিয়ে বের হবার সময় হযরত মূসাকে দেয়া হয়েছিল। বরং এখানে এমন সব নির্দেশের কথা বলা হচ্ছে, যেগুলো নবুওয়াতের দায়িত্বে নিয়োজিত হবার সময় থেকে নিয়ে মিসর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত হযরত মূসাকে দেয়া হয়েছিল। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ফেরাউনের দরবারে হযরত মূসা যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি এবং ফেরাউনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাবার সময় যে সব নির্দেশ তাঁকে দেয়া হয়েছিল সেগুলোও। কুরআন মজীদের বিভিন্নস্থানে এগুলোর উল্লেখ আছে। কিন্তু যতদূর মনে হয় তাওরাতে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দশটি বিধানের মাধ্যমে তাওরাতের সূচনা হয়েছে। বনী ইসলাঈলকে নিয়ে মিসর ত্যাগ করার সময় সিনাই এলাকার তূর পাহাড়ে প্রস্তর ফলকে লিখিত আকারে তাঁকে এগুলো দেয়া হয়েছিল।

.
৪৯.
অর্থাৎ হযরত ইয়াকুব (আ) ও হযরত ইউসূফের (আ) মাধ্যমে যেসব আয়াত তাদের কাছে পৌঁছেছিল এবং পরবর্তীকালে বনী ইসরাঈলের সংকর্মশীলরা তাদের কাছে যেগুলো প্রচার করেছিলেন।

.
৫০.
যেহেতু মানুষ কখনো নবী হতে পারে একথা মেনে নিতে তারা অস্বীকার করেছিল, তাই তাদের এ মিথ্যাচার কেবলমাত্র নূহের বিরুদ্ধেই ছিল না বরং মূলত নবুওয়াতের পদকেই তারা অস্বীকার করেছিল।
৫১.
অর্থাৎ আখেরাতের শাস্তি।
৫২.
আসহাবুর রস্ কারা ছিল, এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়নি। তাফসীরকারগণ এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাদের কোন বর্ণনাই সন্তোষজনক নয়। বড় জোর এতটুকু বলা যেতে পারে, তারা এমন এক সম্প্রদায় ছিল যারা তাদের নবীকে কূয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে বা ঝুলিয়ে রেখে হত্যা করেছিল। আরবী ভাষায় “রাসস” বলা হয় পুরাতন বা অন্ধ কূপকে।
.
.
৫৩.
অর্থাৎ লূত জাতির জনপদ। নিকৃষ্টতম বৃষ্টি মানে পাথর বৃষ্টি। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় একথা বলা হয়েছে। হিজায বাসীদের বাণিজ্য কাফেলা ফিলিস্তিন ও সিরিয়া যাবার পথে এ এলাকা অতিক্রম করতো। সেখানে তারা কেবল ধ্বংসাবশেষ দেখতো না বরং আশপাশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মুখে লূত জাতির শিক্ষণীয় ধ্বংস কাহিনীও শুনতো।
৫৪.
অর্থাৎ যেহেতু তারা পরকাল বিশ্বাস করে না তাই নিছক একজন দর্শক হিসেবে এ ধ্বংসাবশেষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ থেকে কোন শিক্ষা নেয়নি। এ থেকে জানা যায়, পরকাল বিশ্বাসী ও পরকাল অবিশ্বাসীর দৃষ্টির মধ্যে রয়েছে কত বড় ফারাক। একজন নিছক ঘটনা বা কীর্তিকলাপ দেখে অথবা বড়জোড় ইতিহাস রচনা করে। কিন্তু অন্যজন ঐসব জিনিস থেকেই নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এবং জীবনের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন প্রকৃত সত্যের নাগাল পায়।
অনুবাদ: