পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

১৮৫ আয়াত

৫১ ) অথবা তার চেয়েও বেশী কঠিন কোন জিনিস, যার অবস্থান তোমাদের ধারণায় জীবনীশক্তি লাভ করার বহুদূরে (তবুও তোমাদের ওঠানো হবেই)।” তারা নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে, “কে আমাদের আবার জীবনের দিকে ফিরিয়ে আনবে?” জবাবে বলো, “তিনিই, যিনি প্রথমবার তোমাদের পয়দা করেন।” তারা মাথা নেড়ে নেড়ে জিজ্ঞেস করবে, ৫৫ “আচ্ছা, তাহলে এটা কবে হবে?” তুমি বলে দাও, অবাক হবার কিছুই নেই, সে সময়টা হয়তো নিকটেই এসে গেছে।
أَوْ خَلْقًۭا مِّمَّا يَكْبُرُ فِى صُدُورِكُمْ ۚ فَسَيَقُولُونَ مَن يُعِيدُنَا ۖ قُلِ ٱلَّذِى فَطَرَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍۢ ۚ فَسَيُنْغِضُونَ إِلَيْكَ رُءُوسَهُمْ وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هُوَ ۖ قُلْ عَسَىٰٓ أَن يَكُونَ قَرِيبًۭا ٥١
৫২ ) যেদিন তিনি তোমাদের ডাকবেন, তোমরা তাঁর প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে করতে তাঁর ডাকের জবাবে বের হয়ে আসবে এবং তখন তোমাদের এ ধারণা হবে যে, তোমরা অল্প কিছুক্ষণ মাত্র এ অবস্থায় কাটিয়েছ। ৫৬
يَوْمَ يَدْعُوكُمْ فَتَسْتَجِيبُونَ بِحَمْدِهِۦ وَتَظُنُّونَ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًۭا ٥٢
৫৩ ) আর হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে ৫৭ বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে যা সর্বোত্তম। ৫৮ আসলে শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। ৫৯
وَقُل لِّعِبَادِى يَقُولُوا۟ ٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ كَانَ لِلْإِنسَـٰنِ عَدُوًّۭا مُّبِينًۭا ٥٣
৫৪ ) তোমাদের রব তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে বেশী জানেন। তিনি চাইলে তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং চাইলে তোমাদের শাস্তি দেন। ৬০ আর হে নবী! আমি তোমাকে লোকদের ওপর হাবিলদার করে পাঠাইনি। ৬১
رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِكُمْ ۖ إِن يَشَأْ يَرْحَمْكُمْ أَوْ إِن يَشَأْ يُعَذِّبْكُمْ ۚ وَمَآ أَرْسَلْنَـٰكَ عَلَيْهِمْ وَكِيلًۭا ٥٤
৫৫ ) তোমার রব পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টিসমূহকে বেশী জানেন। আমি কতক নবীকে কতক নবীর ওপর মর্যাদা দিয়েছি ৬২ এবং আমি দাউদকে যাবুর দিয়েছিলাম। ৬৩
وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِمَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ ٱلنَّبِيِّـۧنَ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۖ وَءَاتَيْنَا دَاوُۥدَ زَبُورًۭا ٥٥
৫৬ ) এদেরকে বলো, ডাক দিয়ে দেখো তোমাদের সেই মাবুদদেরকে, যাদেরকে তোমরা আল্লাহ ছাড়া (নিজেদের কার্যোদ্ধারকারী) মনে করো, তারা তোমাদের কোন কষ্ট দূর করতে পারবে না ৬৪ এবং তা পরিবর্তন করতেও পারবে না।
قُلِ ٱدْعُوا۟ ٱلَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا ٥٦
৫৭ ) এরা যাদেরকে ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত। ৬৫ আসলে তোমার রবের শাস্তি ভয় করার মতো।
أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُۥٓ ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًۭا ٥٧
৫৮ ) আর এমন কোন জনপদ নেই, যা আমি কিয়ামতের আগে ধ্বংস করে দেবো না ৬৬ অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেবো না, আল্লাহর লিখনে এটা লেখা আছে।
وَإِن مِّن قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًۭا شَدِيدًۭا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِى ٱلْكِتَـٰبِ مَسْطُورًۭا ٥٨
৫৯ ) আর এদের পূর্ববর্তী লোকেরা নিদর্শনসমূহ ৬৭ অস্বীকার করেছে বলেই তো আমি নিদর্শন পাঠানো থেকে বিরত রয়েছি। (যেমন দেখে নাও) সামূদকে আমি প্রকাশ্যে উটনী এনে দিলাম এবং তারা তার ওপর জুলুম করলো। ৬৮ আমি নিদর্শন তো এজন্য পাঠাই যাতে লোকেরা তা দেখে ভয় পায়। ৬৯
وَمَا مَنَعَنَآ أَن نُّرْسِلَ بِٱلْـَٔايَـٰتِ إِلَّآ أَن كَذَّبَ بِهَا ٱلْأَوَّلُونَ ۚ وَءَاتَيْنَا ثَمُودَ ٱلنَّاقَةَ مُبْصِرَةًۭ فَظَلَمُوا۟ بِهَا ۚ وَمَا نُرْسِلُ بِٱلْـَٔايَـٰتِ إِلَّا تَخْوِيفًۭا ٥٩
৬০ ) স্মরণ করো হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে বলে দিয়েছিলাম, তোমার রব এ লোকদেরকে ঘিরে রেখেছেন। ৭০ আর এই যা কিছু এখনই আমি তোমাকে দেখিয়েছি ৭১ একে এবং কুরআনে অভিশপ্ত গাছকে ৭২ আমি এদের জন্য একটি ফিতনা বানিয়ে রেখে দিয়েছি। ৭৩ আমি এদেরকে অনবরত সতর্ক করে যাচ্ছি কিন্তু প্রতিটি সতর্ক সংকেত এদের অবাধ্যতা বাড়িয়ে চলছে।
وَإِذْ قُلْنَا لَكَ إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِٱلنَّاسِ ۚ وَمَا جَعَلْنَا ٱلرُّءْيَا ٱلَّتِىٓ أَرَيْنَـٰكَ إِلَّا فِتْنَةًۭ لِّلنَّاسِ وَٱلشَّجَرَةَ ٱلْمَلْعُونَةَ فِى ٱلْقُرْءَانِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَـٰنًۭا كَبِيرًۭا ٦٠
৫৫.
“ইন্গাদ” মানে হচ্ছে, ওপর থেকে নিচের দিকে এবং নিচে থেকে ওপরের দিকে মাথা নাড়া। এভাবে মাথা নেড়ে বিস্ময় প্রকাশ বা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়।
.
৫৬.
অর্থাৎ দুনিয়ায় মৃত্যুকাল থেকে নিয়ে কিয়ামতের দিনে উত্থান পর্যন্তকার সময়কলটা মাত্র কয়েক ঘণ্টার বেশী বলে মনে হবে না। তোমরা তখন মনে করবে, আমরা সমান্য একটু সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তার মধ্যে হঠাৎ এ কিয়ামতের শোরগোল আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে।

আর “তোমরা আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে উঠে আসবে।” একথা বলার মাধ্যমে একটি মহাসত্যের দিকে সূক্ষ্মতম ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মু’মিন ও কাফের প্রত্যেকের মুখে সে সময় থাকবে আল্লাহর প্রশংসা বাণী। মু’মিনের কন্ঠে এ ধ্বনি হবার কারণ, পূর্ববর্তী জীবনে এরই ওপর ছিল তার বিশ্বাস এবং এটিই ছিল তার জপতপ। আর কাফেরের কন্ঠে এ ধ্বনি উচ্চারিত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তার প্রকৃতিতে এ জিনিসটি গচ্ছিত রাখা হয়েছিল কিন্তু নিজের বোকামির কারণে সে এর ওপর আবরণ দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। এখন নতুন জীবন লাভ করার সাথে সাথেই সমস্ত কৃত্রিম আবরণ খসে পড়বে এবং তার আসল প্রকৃতির সাক্ষ্য স্বতস্ফূর্তভাবে তার কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হবে।

৫৭.
অর্থাৎ ঈমানদারদেরকে।
৫৮.
অর্থাৎ কাফের ও মুশরিক এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক করার সময় কড়া কথা, বাড়াবাড়ি ও বাহুল্য বর্জন করবে। বিরোধী পক্ষ যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন মুসলামানদের মুখ থেকে কোন ন্যায় ও সত্য বিরোধী কথা বের হওয়া উচিত নয়। ক্রোধে আত্মহারা হয়ে তাদের আজে বাজে বথা বলা শোভা পায় না। ঠাণ্ডা মাথায় তাদের এমন সব কথা বলতে হবে, যা যাচাই বাছাই করা, মাপাজোকা, ওজন করা, সত্য এবং তাদের দাওয়াতের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিশীল।
৫৯.
যখনই তোমরা বিরোধীদের কথার জবাব দিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠছে বলে মনে করবে এবং মন-মেজাজ আকস্মিকভাবে আবেগ-উত্তেজনায় ভরে যেতে দেখতে পাবে তখনই তোমাদের বুঝতে হবে, তোমাদের বুঝতে হবে, তোমাদের দ্বীনের দাওয়াতের কাজ নষ্ট করার জন্য এটা শয়তানের উস্কানী ছাড়া আর কিছুই নয়। তার চেষ্টা হচ্ছে, তোমরাও নিজেদের বিরোধীদের মতো সংস্কারের কাজ ত্যাগ করে সে যেভাবে মানব গোষ্ঠীকে বিতর্ক-কলহ ও ফিতনা-ফাসাদে মশগুল করে রাখতে চায় সেভাবে তোমরাও তার মধ্যে মশগুল হয়ে যাও।
৬০.
অর্থাৎ আমরা জান্নাতী এবং অমুক ব্যক্তি বা দল জাহান্নামী এ ধরনের দাবী কখনো ঈমানদারদের মুখে উচ্চারিত হওয়া উচিত নয়। এ বিষয়টির ফায়সালা একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। তিনিই সকল মানুষের ভিতর-বাইর এবং বর্তমান-ভবিষ্যত জানেন। কার প্রতি অনুগ্রহ করতে হবে এবং কাকে শাস্তি দিতে হবে--- এ ফায়সালা তিনিই করবেন। আল্লাহর কিতাবের দৃষ্টিতে কোন্ ধরনের মানুষ রহমত লাভের অধিকার রাখে এবং কোন্ ধরনের মানুষ শাস্তি লাভের অধিকারী নীতিগত দিক দিয়ে মানুষ অবশ্যি একথা বলার অধিকার রাখে। কিন্তু অমুক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে এবং অমুককে মাফ করে দেয়া হবে, একথা বলার অধিকার কারোর নেই।

সম্ভবত এ উপদেশ বাণী এজন্য করা হয়েছে যে, কখনো কখনো কাফেরদের জুলুম ও বাড়াবাড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে মুসলমানদের মুখ থেকে এ ধরনের কথা বের হয়ে যেতো যে, তোমরা জাহান্নামে যাবে অথবা আল্লাহ তোমাদের শাস্তি দেবেন।

৬১.
অর্থাৎ নবীর কাজ হচ্ছে দাওয়াত দেয়া। লোকদের ভাগ্য নবীর হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি যে, তিনি কারোর ভাগ্যে রহমত এবং কারোর ভাগ্যে শাস্তির ফায়সালা দিয়ে যেতে থাকবেন। এর অর্থ এ নয় যে, নবী ﷺ এ ধরনের কোন ভুল করেছিলেন এবং সে কারণে আল্লাহ তাঁকে এভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বরং এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে সতর্ক করে দেয়াই আসল উদ্দেশ্য। তাদেরকে বলা হচ্ছে, নবীই যখন এ মর্যাদার অধিকারী নন তখন তোমরা কিভাবে জান্নাত ও জাহান্নামের ঠিকেদার হয়ে গেলে?
৬২.
এ বাক্যটি আসলে মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, যদিও আপাতদৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। যেমন সমকালীন লোকদের সাধারণ নিয়ম হয়ে থাকে ঠিক সেই একই নিয়মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন ও সমগোত্রীয় লোকেরা তাঁর মধ্যে কোন শ্রেষ্টত্ব ও মহত্ব দেখতে পাচ্ছিল না। তারা তাঁকে নিজেদের জনপদের একজন সাধারণ মানুষ মনে করছিল। আর যেসব খ্যাতনামা ব্যক্তি কয়েক শতাব্দী আগে অতীত হয়ে গিয়েছিলেন তাদের সম্পর্কে মনে করতো যে, শ্রেষ্টত্ব ও মহত্ব কেবল তাদের মধ্যেই ছিল। তাই তাঁর মুখে নবুওয়াতের দাবী শুনে তারা এ বলে আপত্তি জানাতো যে, এ লোকাটি তো বেশ লম্ফ ঝম্প মারছে। না জানি নিজেকে কী মনে করে বসেছে। বড় বড় পয়গম্বররা, যাদের শ্রেষ্ঠত্ব সারা দুনিয়ার লোকেরা মানে, তাদের সাথে এ ব্যক্তির কি কোন তুলানাই করা যেতে পারে? আল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে বলছেনঃ পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত সৃষ্টি আমার চোখের সামনে আছে। তোমরা জানো না তাদেরকে কোন্ পর্যায়ের এবং কে কোন্ ধরনের মর্যাদার অধিকারী। নিজের শ্রেষ্ঠত্বের মালিক আমি নিজেই এবং ইতিপূর্বেও আমি বহু নবী পয়দা করেছি যাদের একজন অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা সম্পন্ন।
৬৩.
এখানে বিশেষভাবে দাউদ আলাইহিস সালামকে যাবুর দান করার কথা সম্ভবত এজন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, দাউদ আলাইহিস সালাম বাদশাহ ছিলেন এবং বাদশাহ সাধারণত আল্লাহর কাছ থেকে বেশী দূরে অবস্থান করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন লোকেরা যে কারণে তাঁর পয়গম্বরী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার বিষয়টি মেনে নিতে অস্বীকার করতো তা তাদের নিজেদের বর্ণনা অনুযায়ী এ ছিল যে, সাধারণ মানুষের মতো তাঁর স্ত্রী-সন্তান ছিল, তিনি পানাহার করতেন, হাটে বাজারে চলাফেরা করে কেনাবেচা করতেন এবং একজন দুনিয়াদার ব্যক্তি নিজের দুনিয়াবী প্রয়োজনাদি পূরণ করার জন্য যেসব কাজ করতো তিনি তা সব করতেন। মক্কার কাফেরদের বক্তব্য ছিল, তুমি একজন দুনিয়াদার ব্যক্তি, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সাথে তোমার কি সম্পর্ক? আল্লাহর নৈকট্য লাভকারীরা তো হচ্ছে এমন সব লোক, নিজেদের দৈহিক ও মানসিক চাহিদার ব্যাপারে যাদের কোন জ্ঞান থাকে না। তারা তো একটি নির্জন জায়গায় বসে দিনরাত আল্লাহর ধ্যানে ও স্মরণে মশগুল থাকে। ঘর সংসারের চাল-ডালের কথা ভাববার সময় ও মানসিকতা তাদের কোথায়! এর জবাবে বলা হচ্ছে, পুরোপুরি একটি রাজ্যের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করার চাইতে বড় দুনিয়াদারী আর কি হতে পারে, কিন্তু এরপরও হযরত দাউদ আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত ও কিতাবের নিয়ামত দান করা হয়েছিল।
৬৪.
এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, কেবল গায়রুল্লাহকে (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তা) সিজদা করাই শির্ক নয় বরং আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তার কাছে দোয়া চাওয়া বা তাকে সাহায্য করার জন্য ডাকাও শির্ক। দোয়া ও সাহায্য চাওয়া ও মূলতাত্বিক বিচারে ইবাদতেরই অন্তর্ভুক্ত। কাজেই গায়রুল্লাহর কাছে প্রার্থনাকরী একজন মূর্তি পূজকের সমান অপরাধী। তাছাড়া এ থেকে একথাও জানা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া কারোরও কোন সামান্যতম ইখতিয়ার নেই। অন্য কেউ কোন আপদ-বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে না এবং কোন খারাপ অবস্থাকে ভাল অবস্থায় পরিবর্তিত করে দিতেও পারে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোন সত্তার সম্পর্কে এ ধরনের বিশ্বাস রাখা একটি মুশরিকী বিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
.
৬৫.
এ শব্দগুলো নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মুশরিকদের যেসব মাবুদ ও ত্রাণকর্তার কথা এখানে বলা হচ্ছে তারা পাথরের মূর্তি নয় বরং তারা হচ্ছে ফেরেশতা বা অতীত যুগের আল্লাহর প্রিয় নেক বান্দা। এর অর্থ পরিষ্কার। অর্থাৎ নবী হোক বা আউলিয়া অথবা ফেরেশতা, কারোই তোমাদের প্রার্থনা শুনার এবং তোমাদের সাহায্য করার ক্ষমতা নেই। তোমরা নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য তাদেরকে অসিলায় পরিণত করছো কিন্তু তাদের অবস্থা এই যে, তারা নিজেরাই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী, তাঁর আযাবের ভয়ে ভীত এবং তাঁর বেশী বেশী নিকটবর্তী হবার জন্য অসিলা ও উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে।
.
৬৬.
অর্থাৎ কারোর চিরন্তন স্থায়িত্ব নেই। প্রত্যেকটি জনপদকে হয় স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করতে হয় আর নয়তো আল্লাহর আযাবের মাধ্যমে ধ্বংস হতে হবে। তোমাদের এ জনপদগুলো চিরকাল এমনি প্রাণবন্ত ও জীবন্ত থাকবে এই ভুল ধারণা তোমরা কেমন করে পোষণ করতে পারলে?
.
৬৭.
অর্থাৎ ইন্দ্রিয় মু’জিযাসমূহ, যেগুলো সংঘটিত করা বা পাঠানো হয় নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে। মক্কার কাফেররা বারবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এগুলোর দাবী জানিয়ে আসছিল।
৬৮.
এখানে বক্তব্য হচ্ছে এই যে, এ ধরনের মু’জিযা দেখার পর যখন লোকেরা একে মিথ্যা বলতে থাকে তখন তাদের ওপর আযাব নাযিল হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং তখন এ জাতিকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। মানবজাতির অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে, বিভিন্ন জাতি সুস্পষ্ট মু’জিযা দেখে নেবার পরও সেগুলোকে মিথ্যা বলেছে, ফলে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন এটা পুরোপুরি আল্লাহর রহমত যে, তিনি এমন ধরনের কোন মু’জিযা আর পাঠাচ্ছেন না। কিন্তু তোমরা এমনি নির্বোধ যে, মু’জিযার দাবী জানিয়ে সামূদ জাতির পরিণাম ভোগ করতে চাচ্ছো।
৬৯.
অর্থাৎ কোন ম্যাজিক বা দর্শনীয় খেলা দেখানোর উদ্দেশ্যে কখনো মু’জিযা দেখানো হয় না। সব সময় মু’জিযা এ উদ্দেশ্যে দেখানো হয়েছে যে, লোকেরা তা দেখে সাবধান হয়ে যাবে, তারা বুঝতে পারবে নবীর পেছনে আছে এক সর্বময় শক্তিশালী সত্তার অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর নাফরমানীর পরিণাম কি হতে পারে তাও তারা জানতে পারবে।
৭০.
অর্থাৎ তোমার নবুওয়াতী দাওয়াতের সূচনালগ্নেই যখন মক্কার এ কাফেররা তোমার বিরোধিতা করতে এবং তোমার পথে প্রতিবন্ধকতা দাঁড় করাতে শুরু করেছিল তখনই আমি পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছিলাম, আমি এ লোকদেরকে ঘিরে রেখেছি, এরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে দেখে নিক, কোনভাবেই এরা তোমার দাওয়াতের পথ রোধ করতে পারবে না এবং তুমি যে কাজে হাত দিয়েছো সব রকমের বাধা-বিপত্তি সত্বেও সে কাজ সম্পন্ন হবেই। এখন যদি এ লোকদেরকে মু’জিযা দেখিয়ে সতর্ক করতে হয় তাহলে এ মু’জিযা তাদেরকে আগেই দেখানো হয়ে গেছে অর্থাৎ শুরুতে যা কিছু বলা হয়েছিল তা পুরা হয়ে গেছে, এদের কোন বিরোধিতাই ইসলামী দাওয়াতের অগ্রগতি রুখে দিতে পারেনি এবং এদের এ প্রচেষ্টা তোমার এক চুল পরিমাণও ক্ষতি করতে পারেনি। এদের দেখার মতো চোখ থাকলে এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে এরা নিজেরাই বুঝতে পারে যে, নবীর এ দাওয়াতের পেছনে আল্লাহর হাত সক্রিয় রয়েছে। আল্লাহ বিরোধীদেরকে ঘিরে রেখেছেন এবং নবীর দাওয়াত আল্লাহর হেফাজতে রয়েছে---একথা মক্কার প্রাথমিক যুগের সূরাগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে। যেমন সূরা বুরুজে বলা হয়েছেঃ

আরবী-------------------

“কিন্তু এ কাফোররা মিথ্যা বলার ও অস্বীকার করার কাজে লেগেই আছে এবং আল্লাহ সবদিক থেকে তাদেরকে ঘেরাও করে রেখেছেন।” (আয়াতঃ ১৯-২০)

৭১.
মি’রাজের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই এখানে রু’ইয়া শব্দটি ব্যবহৃত হলেও এর মানে এখানে স্বপ্ন নয় বরং এখানে এর মানে হচ্ছে চোখে দেখা। এটা নিছক স্বপ্ন হলে এবং নবী ﷺ কাফেরদের সামনে এটাকে স্বপ্ন হিসেবেই বর্ণনা করলে এটা তাদের জন্য ফিতনা হবার কোন কারণই ছিল না। একটার চাইতে একটা বেশী অদ্ভূত স্বপ্ন দেখা হয় এবং লোকদের সামনে বর্ণনাও করা হয় কিন্তু তা কখনো কারো জন্য এমন সমস্যা হয়ে দেখা দেয় না যে, লোকেরা এজন্য যে স্বপ্ন দেখেছে তাকে বিদ্রূপ করতে থেকেছে এবং তার প্রতি মিথ্যাচার ও পাগলপনার অপবাদ দিয়েছে।
৭২.
অর্থাৎ “যাক্কুম।” এ সম্পর্কে কুরআনে খবর দেয়া হয়েছে, এ গাছটি জাহান্নামের তলদেশে উৎপন্ন হবে এবং জাহান্নামীদের তা খেতে হবে। একে অভিশপ্ত করার মানে হচ্ছে এই যে, আল্লাহর রহমত থেকে এ গাছটি দূরে থাকবে। অর্থাৎ এটি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন নয়। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে লোকদের আহারের সংস্থান করার জন্য এ গাছটি উৎপন্ন করবেন না বরং এটি হবে তাঁর লানতের নিদর্শন। অভিশপ্ত লোকদের জন্য তিনি এটি উৎপন্ন করবেন। তারা ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে একেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবে। ফলে তাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। সূরা “দুখান”--এ এ গাছের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, জাহান্নামীরা যখন তা খাবে, তাদের পেটে আগুন লেগে যাবে, মনে হবে যেন তাদের পেটের মধ্যে পানি টগবগ করে ফুটছে।
৭৩.
অর্থাৎ এদের কল্যাণের জন্য আমি তোমাকে মি’রাজের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস সরাসরি দেখিয়েছি, যাতে তোমার মতো সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে এ লোকেরা যথার্থ সত্যের জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং এভাবে সতর্ক হয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এরা উল্টো এ ঘটনার ভিত্তিতে তোমাকে বিদ্রূপ করেছে। আমি তোমার মাধ্যমে এদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দিয়েছি যে, এখানে হারাম খাওয়ার পরিণামে তোমাদের যাক্কুম খেতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু তারা এ বক্তব্যকে বিদ্রূপ করে বলেছেঃ দেখো, দেখো, এ ব্যক্তির অবস্থা দেখো, একদিকে বলছে, জাহান্নামের আগুন দাউদাউ করে জ্বলবে আবার অন্যদিকে খবর দিচ্ছে, সেখানে গাছ জন্মাবে!
.
অনুবাদ: