পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

১৮৫ আয়াত

১০১ ) আমি মূসাকে নয়টি নিদর্শন দিয়েছিলাম, সেগুলো সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ১১৩ এখন নিজেরাই তোমরা বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখে নাও যখন সেগুলো তাদের সামনে এলো তখন ফেরাউন তো একথাই বলেছিল, “হে মূসা! আমার মতে তুমি অবশ্যই একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি।” ১১৪
وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَىٰ تِسْعَ ءَايَـٰتٍۭ بَيِّنَـٰتٍۢ ۖ فَسْـَٔلْ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِذْ جَآءَهُمْ فَقَالَ لَهُۥ فِرْعَوْنُ إِنِّى لَأَظُنُّكَ يَـٰمُوسَىٰ مَسْحُورًۭا ١٠١
১০২ ) মূসা এর জবাবে বললো, “তুমি খুব ভাল করেই জানো এ প্রজ্ঞাময় নিদর্শনগুলো আকাশ ও পৃথিবীর রব ছাড়া আর কেউ নাযিল করেননি ১১৫ আর আমার মনে হয় হে ফেরাউন! তুমি নিশ্চয়ই একজন হতভাগা ব্যক্তি। ১১৬
قَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ مَآ أَنزَلَ هَـٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ بَصَآئِرَ وَإِنِّى لَأَظُنُّكَ يَـٰفِرْعَوْنُ مَثْبُورًۭا ١٠٢
১০৩ ) শেষ পর্যন্ত ফেরাউন মূসা ও বনী ইস্রাঈলকে দুনিয়ার বুক থেকে উৎখাত করার সংকল্প করলো। কিন্তু আমি তাকে ও তার সঙ্গী-সাথীদেরকে এক সাথে ডুবিয়ে দিলাম
فَأَرَادَ أَن يَسْتَفِزَّهُم مِّنَ ٱلْأَرْضِ فَأَغْرَقْنَـٰهُ وَمَن مَّعَهُۥ جَمِيعًۭا ١٠٣
১০৪ ) এবং এরপর বনী ইস্রাঈলকে বললাম, এখন তোমরা পৃথিবীতে বসবাস করো, ১১৭ তারপর যখন আখেরাতের প্রতিশ্রুতির সময় এসে যাবে তখন আমি তোমাদের সবাইকে এক সাথে হাযির করবো।
وَقُلْنَا مِنۢ بَعْدِهِۦ لِبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱسْكُنُوا۟ ٱلْأَرْضَ فَإِذَا جَآءَ وَعْدُ ٱلْـَٔاخِرَةِ جِئْنَا بِكُمْ لَفِيفًۭا ١٠٤
১০৫ ) এ কুরআনকে আমি সত্য সহকারে নাযিল করেছি এবং সত্য সহকারেই এটি নাযিল হয়েছে। আর হে মুহাম্মাদ! তোমাকে আমি এছাড়া আর কোন কাজে পাঠাইনি যে, (যে মেনে নেবে তাকে) সুসংবাদ দিয়ে দেবে এবং (যে মেনে নেবে না তাকে) সাবধান করে দেবে। ১১৮
وَبِٱلْحَقِّ أَنزَلْنَـٰهُ وَبِٱلْحَقِّ نَزَلَ ۗ وَمَآ أَرْسَلْنَـٰكَ إِلَّا مُبَشِّرًۭا وَنَذِيرًۭا ١٠٥
১০৬ ) আর এ কুরআনকে আমি সামান্য সামান্য করে নাযিল করেছি, যাতে তুমি থেমে থেমে তা লোকদেরকে শুনিয়ে দাও এবং তাকে আমি (বিভিন্ন সময়) পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি। ১১৯
وَقُرْءَانًۭا فَرَقْنَـٰهُ لِتَقْرَأَهُۥ عَلَى ٱلنَّاسِ عَلَىٰ مُكْثٍۢ وَنَزَّلْنَـٰهُ تَنزِيلًۭا ١٠٦
১০৭ ) হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলে দাও, তোমরা একে মানো বা না মানো, যাদেরকে এর আগে জ্ঞান দেয়া হয়েছে ১২০ তাদেরকে যখন এটা শুনানো হয় তখন তারা আনত মস্তকে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে
قُلْ ءَامِنُوا۟ بِهِۦٓ أَوْ لَا تُؤْمِنُوٓا۟ ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْعِلْمَ مِن قَبْلِهِۦٓ إِذَا يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًۭا ١٠٧
১০৮ ) এবং বলে ওঠে, “পাক-পবিত্র আমাদের রব, আমাদের রবের প্রতিশ্রুতি তো পূর্ণ হয়েই থাকে।” ১২১
وَيَقُولُونَ سُبْحَـٰنَ رَبِّنَآ إِن كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًۭا ١٠٨
১০৯ ) এবং তারা নত মুখে কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং তা শুনে তাদের দ্বীনতা আরো বেড়ে যায়। ১২২
وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًۭا ۩ ١٠٩
১১০ ) হে নবী! এদেরকে বলে দাও, আল্লাহ‌ বা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন, তাঁর জন্য সবই ভাল নাম। ১২৩ আর নিজের নামায খুব বেশী উচ্চ কণ্ঠেও পড়বে না, বেশী ক্ষীণ কণ্ঠেও না, বরং এ দু’য়ের মাঝামাঝি মধ্যম পর্যায়ের কণ্ঠস্বর অবলম্বন করবে। ১২৪
قُلِ ٱدْعُوا۟ ٱللَّهَ أَوِ ٱدْعُوا۟ ٱلرَّحْمَـٰنَ ۖ أَيًّۭا مَّا تَدْعُوا۟ فَلَهُ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ ۚ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَٱبْتَغِ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًۭا ١١٠
১১৩.
এখানে আবার মক্কার কাফেরদের মু’জিযা পেশ করার দাবীর জাবাব দেয়া হয়েছে এবং এটি তৃতীয় জবাব। কাফেররা বলতো, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো না যতক্ষণ না তুমি অমুক অমুক কাজগুলো করে দেখাবে। জবাবে তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমাদের পূর্বে ফেরাউনকে এমনিতর সুস্পষ্ট মু’জিযা এক দু’টি নয় পরপর ৯টি দেখানো হয়েছিল। তারপর তোমরা জানো মেনে নেবার প্রবণতাই যার ছিল না সে এগুলো দেখে কি বললো? আর এটাও জানো যে, মু’জিযা দেখার পরও যখন সে নবীকে অস্বীকার করলো তখন তার পরিণতি কি হলো?

এখানে যে ন’টি নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে এর আগে সূরা আ’রাফেও সেগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ (১) লাঠি, যা সাপে পরিণতি হতো। (২) সাদা হাত, যা বগলের ভেতর থেকে বের করার পর সূর্যের মতো চমকাতে থাকতো। (৩) যাদুকরদের যাদুকে প্রকাশ্য জনসম্মুখে পরাভূত করা। (৪) এক ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশ দুর্ভিক্ষ কবলিত হওয়া এবং তারপর একের পর এক (৫) তুফান, (৬) পংগপাল, (৭) শস্যকীট, (৮) ব্যাং এবং (৯) রক্তের আপদ নাযিল হওয়া।

১১৪.
মক্কার মুশরিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে উপাধি দিতো এটি সেই একই উপাধি। এ সূরার ৫ রুকূ’তে এদের এ উক্তিও এসেছেঃ

(আরবী-----------------------) (তোমরা তো একজন যাদুগ্রস্ত লোকের পেছনে ছুটে চলছো।) এখন এদেরকে বলা হচ্ছে, ঠিক এ একই উপাধিতে ফেরাউন মূসা আলাইহিস সালামকে ভূষিত করেছিল।

এখানে আর একটি আনুসঙ্গিক বিষয়ও রয়েছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে দেয়া আমি জরুরী মনে করি। বর্তমান যুগে হাদীস অস্বীকারকারী গোষ্ঠী হাদীসের বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি উঠিয়েছে তার মধ্যে একটি আপত্তি হচ্ছে এই যে, হাদীসের বক্তব্য মতে একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যাদুর প্রভাব পড়েছিল। অথচ কুরআনের দৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম যে, একজন যাদু প্রভাবিত ব্যক্তি এটা ছিল কাফেরদের একটি মিথ্যা অপবাদ। হাদীস অস্বীকারকারীরা বলেন, এভাবে হাদীস বর্ণনাকারীগণ কুরআনকে মিথ্যুক এবং মক্কার কাফেরদেরকে সত্যবাদী প্রতিপন্ন করেছেন। কিন্তু এখানে দেখুন কুরআনের দৃষ্টিতে হযরত মূসার ওপরও ফেরাউনের এ একই মিথ্যা দোষারোপ ছিল যে, আপনি একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি। আবার কুরআন নিজেই সূরা ত্ব-হা’য় বলছেঃ

আরবী---------------------------------

“যখন যাদুকররা নিজেদের দড়াদড়ি ছুঁড়ে দিল তখন অকস্মাৎ তাদের যাদুর ফলে মূসার মনে হতে লাগলো যে তাদের লাঠি ও দড়িগুলো দৌড়ে চলেছে। কাজেই মূসা মনে মনে ভয় পেয়ে গেলো।”

এ শব্দগুলো কি সুস্পষ্টভাবে একথা প্রকাশ করছে না যে, হযরত মূসা সে সময় যদিও প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন? হাদীস অস্বীকারকারীগণ কি এ প্রসঙ্গেও বলতে প্রস্তুত আছেন যে, কুরআন নিজেই মিথ্যা এবং ফেরাউনের মিথ্যা অপবাদকে সত্য প্রতিপন্ন করেছে?

আসলে এ ধরনের আপত্তি উত্থাপনকারীরা জানেন না যে, মক্কার কাফেররা ও ফেরাউন কোন্ অর্থে মুহাম্মাদ ﷺ ও হযরত মূসাকে ‘যাদুগ্রস্ত’ বলতো। তাদের বক্তব্য ছিল, কোন শত্রু যাদু করে তাঁদেরকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে এবং এ পাগলামির প্রভাবে তারা নবুওয়াতের দাবী করছেন এবং একটি সম্পূর্ণ অভিনব বাণী শুনাচ্ছেন। কুরআন তাদের এ অপবাদকে মিথ্যা গণ্য করেছে। তাবে সাময়িকভাবে কোন ব্যক্তির শরীরে বা শরীরের কোন অনুভূতিতে যাদুর প্রভাবে পড়ার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। এটা ঠিক এ রকম ব্যাপার যেমন কারোর গায়ে পাথর মারলে সে আহত হয়। কাফেরদের অপবাদ এ ধরনের ছিল না। কুরআনও এ ধরনের অপবাদের প্রতিবাদ করেনি। এ ধরনের কোন সাময়িক প্রতিক্রিয়ায় নবীর মর্যাদা প্রভাবিত হয় না। নবীর ওপর যদি বিষের প্রভাব পড়তে পারে, নবী যদি আহত হতে পারেন, তাহলে তাঁর ওপর যাদুর প্রভাবও পড়তে পারে। এর ফলে নবুওয়াতের মর্যাদা বিনষ্ট হতে পারে কি কারণে? নবীর মন-মস্তিষ্ক যদি যাদুর প্রভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ে, এমনকি তিনি যাদুর প্রভাবাধীনেই কথা বলতে ও কাজ করতে থাকেন তাহলেই এর ফলে নবুওয়াতের মর্যাদা বিনষ্ট হতে পারে। সত্য বিরোধীরা হযরত মূসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে এ অপবাদ দিতো এবং কুরআন এরই প্রতিবাদ করেছে।

১১৫.
একথা হযরত মূসা (আ) এজন্য বলেন যে, কোন দেশে দুর্ভিক্ষ লাগা বা লাখো বর্গকিলোমিটার বিস্তৃতি এলাকায় ধ্বংসের বিভীষিকা নিয়ে পংগপালের মতো ব্যাঙ বের হয়ে আসা অথবা শস্য গুদামগুলোর ব্যাপকভাবে পোকা লেগে যাওয়া এবং এ ধরনের অন্যান্য জাতীয় দুর্যোগ দেখা দেয়া কোন যাদুকরের যাদুর বলে বা কোন মানুষের ক্ষমতায় সম্ভবপর ছিল না। তারপর যখন প্রত্যেকটি দুর্যোগ শুরু হওয়ার পূর্বে হযরত মূসা ফেরাউনকে এ বলে নোটিশ দিতেন যে, তোমার হঠকারিতা থেকে বিরত না হলে এ দুর্যোগটি তোমার রাজ্যে চেপে বসবে এবং ঠিক তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী সেই দুর্যোগটি সমগ্র রাজ্যকে গ্রাস করে ফেলতো, তখন এ অবস্থায় কেবলমাত্র একজন পাগল ও চরম হঠকারী ব্যক্তিই একথা বলতে পারতো যে, এ বিপদ ও দুর্যোগগুলো পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলীর একচ্ছত্র অধিপতি ছাড়া অন্য কেউ নাযিল করেছে।
১১৬.
অর্থাৎ আমি তো যাদুগ্রস্ত নই, তবে তোমার ওপর নিশ্চয়ই দুর্ভাগ্যের পদাঘাত হয়েছে। আল্লাহর এ নিদর্শনগুলো একের পর এক দেখার পরও তোমার নিজের হঠকারিতার ওপর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা একথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে, তোমার কপাল পুড়েছে।
.
১১৭.
এটিই হচ্ছে এ কাহিনীটি বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য। মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদেরকে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরবের মাটি থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল। তাই তাদেরকে শুনানো হচ্ছে, ফেরাউন এসব কিছু করতে চেয়েছিল মূসা ও বনী ইসরাঈলের সাথে। কিন্তু কার্যত হয়েছে যে, ফেরাউন ও তার সাথীদেরকে নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে এবং পৃথিবীতে মূসা ও তাঁর অনুসারীদেরকে বসবাস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন তোমরাও যদি এ একই পথ অবলম্বন করো তাহলে তোমাদের পরিণামও এর থেকে ভিন্ন কিছু হবে না।
.
১১৮.
অর্থাৎ তোমাদের একথা বলা হয়নি যে, যারা কুরআনের শিক্ষাবলী যাচাই করে হক ও বাতিলের ফায়সালা করতে প্রস্তুত নয় তাদেরকে তোমরা ঝরণাধারা প্রবাহিত করে, বাগান তৈরী করে এবং আকাশ চিরে কোন না কোনভাবে মু’মিন বানাবার চেষ্টা করবে। বরং তোমাদের কাজ শুধুমাত্র এতটুকুইঃ তোমরা লোকদের সামনে হক কথা পেশ করে দাও, তারপর তাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দাও, যে একথা মেনে নেবে সে ভাল কাজ করবে এবং যে মেনে নেবে না সে খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে।
১১৯.
এটি বিরোধীদের একটি সংশয়ের জবাব। তারা বলতো, আল্লাহর পয়গাম পাঠাবার দরকার হলে সম্পূর্ণ পয়গাম এক সঙ্গে পাঠান না কেন? এভাবে থেমে থেমে সামান্য সামান্য পয়গাম পাঠানো হচ্ছে কেন? আল্লাহকেও কি মানুষের মতো ভেবে-চিন্তে কথা বলতে হয়? এ সংশয়ী বক্তব্যের বিস্তারিত জবাব সূরা নাহলের ১৪ রুকূ’র প্রথম দিকের আয়াতগুলোতে দেয়া হয়েছে। সেখানে আমি এর ব্যাখ্যা করেছি। তাই এখানে এর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন বোধ করছি না।
১২০.
অর্থাৎ যে আহলি কিতাব গোষ্ঠী আসমানী কিতাবসমূহের শিক্ষা সম্পর্কে অবগত এবং যারা তার বাচনভংগীর সাথে পরিচিত।
.
১২১.
অর্থাৎ কুরআন শুনার সাথে সাথেই তারা বুঝতে পারে, যে নবীর আগমনের প্রতিশ্রুতি পূর্ববর্তী নবীগণের সহীফাসমূহে দেয়া হয়েছিল তিনি এসে গেছেন।
১২২.
আহিল কিতাবদের সত্যনিষ্ঠ ও সৎকর্মশীল লোকদের এ মনোভাব ও প্রতিক্রিয়ার কথা কুরআন মজীদের বহু জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন আলে ইমরান ১২ ও ২০ রুকূ’ এবং আল মায়েদার ১১ রুকূ’ দেখুন।
১২৩.
এটি মুশরিকদের একটি আপত্তির জবাব। তারা এ মর্মে আপত্তি জানিয়েছিল যে, স্রষ্টার নাম “আল্লাহ” এটা আমরা শুনেছিলাম কিন্তু এ “রহমান” নাম কোথায় থেকে আনলে? তাদের মধ্যে যেহেতু আল্লাহর এ নামের প্রচলন ছিল না তাই তারা তাঁর রহমান নাম শুনে নাক সিটকাতো।
১২৪.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মক্কায় যখন নবী ﷺ অথবা সাহাবীগণ নামায পড়ার সময় উচ্চকণ্ঠে কুরআন পড়তেন তখন কাফেররা শোরগোল করতো এবং অনেক সময় এক নাগাড়ে গালিগালাজ করতো। এজন্য হুকুম দেয়া হলো, এমন উচ্চস্বরে পড়ো না যাতে কাফেররা শুনে হৈ-হুল্লোড় করতে পারে আবার এমন নিচ স্বরেও পড়ো না যা তোমাদের নিজেদের সাথীরাও শুনতে না পায়। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট অবস্থার সাথে এ হুকুম সম্পৃক্ত ছিল। মদীনায় যখন অবস্থা বদলে গেলো তখন আর এ হুকুম কার্যকর থাকেনি। তবে হ্যাঁ, মুসলমানরা যখনই মক্কার মতো অবস্থার সম্মুখীন হয় তখনই তাদের এ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
অনুবাদ: