পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

১৭০ আয়াত

৫৬ ) আমার ভরসা আল্লাহর ওপর, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব। তিনিই প্রতিটি প্রাণীর ভাগ্য নিয়ন্তা। নিঃসন্দেহে আমার রব সরল পথে আছেন। ৬৩
إِنِّى تَوَكَّلْتُ عَلَى ٱللَّهِ رَبِّى وَرَبِّكُم ۚ مَّا مِن دَآبَّةٍ إِلَّا هُوَ ءَاخِذٌۢ بِنَاصِيَتِهَآ ۚ إِنَّ رَبِّى عَلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ٥٦
৫৭ ) যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তাহলে ফিরিয়ে নাও, কিন্তু যে পয়গাম দিয়ে আমাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল তা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। এখন আমার রব তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে বসাবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। ৬৪ অবশ্যি আমার রব প্রতিটি জিনিসের সংরক্ষক।
فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَقَدْ أَبْلَغْتُكُم مَّآ أُرْسِلْتُ بِهِۦٓ إِلَيْكُمْ ۚ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّى قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّونَهُۥ شَيْـًٔا ۚ إِنَّ رَبِّى عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ حَفِيظٌۭ ٥٧
৫৮ ) তারপর যখন আমার হুকুম এসে গেলো তখন নিজের রহমতের সাহায্যে হূদ ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি রক্ষা করলাম এবং একটি কঠিন আযাব থেকে বাঁচালাম।
وَلَمَّا جَآءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا هُودًۭا وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ بِرَحْمَةٍۢ مِّنَّا وَنَجَّيْنَـٰهُم مِّنْ عَذَابٍ غَلِيظٍۢ ٥٨
৫৯ ) এ হচ্ছে আদ, নিজের রবের নিদর্শন তারা অস্বীকার করেছে, নিজের রসূলদের কথাও অমান্য করেছে। ৬৫ এবং প্রত্যেক স্বৈরাচারী সত্যের দুশমনের আদেশ মেনে চলেছে।
وَتِلْكَ عَادٌۭ ۖ جَحَدُوا۟ بِـَٔايَـٰتِ رَبِّهِمْ وَعَصَوْا۟ رُسُلَهُۥ وَٱتَّبَعُوٓا۟ أَمْرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍۢ ٥٩
৬০ ) শেষ পর্যন্ত এ দুনিয়ায় তাদের ওপর লানত পড়েছে এবং কিয়ামতের দিনেও। শোনো! আদ তাদের রবের সাথে কুফরী করেছিল। শোনো! দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছে হূদের জাতি আদকে।
وَأُتْبِعُوا۟ فِى هَـٰذِهِ ٱلدُّنْيَا لَعْنَةًۭ وَيَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۗ أَلَآ إِنَّ عَادًۭا كَفَرُوا۟ رَبَّهُمْ ۗ أَلَا بُعْدًۭا لِّعَادٍۢ قَوْمِ هُودٍۢ ٦٠
৬১ ) আর সামূদের কাছে আমি তাদের ভাই সালেহকে পাঠালাম ৬৬ সে বললো, “হে আমার কওমের লোকেরা! আল্লাহর বন্দেগী করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই তোমাদের যমীন থেকে পয়দা করেছেন এবং এখানেই তোমাদের বসবাস করিয়েছেন। ৬৭ কাজেই তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাও ৬৮ এবং তাঁর দিকে ফিরে এসো। ৬৯ নিশ্চয়ই আমার রব নিকটে আছেন তিনি ডাকের জবাব দেন।
۞ وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَـٰلِحًۭا ۚ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ ٱلْأَرْضِ وَٱسْتَعْمَرَكُمْ فِيهَا فَٱسْتَغْفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوٓا۟ إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّى قَرِيبٌۭ مُّجِيبٌۭ ٦١
৬২ ) তারা বললো, “হে সালেহ! এর আগে তুমি আমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি ছিলে যার কাছে ছিল আমাদের বিপুল প্রত্যাশা। ৭০ আমাদের বাপ-দাদারা যেসব উপাস্যের পূজা করতো তুমি কি তাদের পূজা করা থেকে আমাদের বিরত রাখতে চাচ্ছো? ৭১ তুমি যে পথের দিকে আমাদের ডাকছো সে ব্যাপারে আমাদের ভীষণ সন্দেহ, যা আমাদের পেরেশানির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।” ৭২
قَالُوا۟ يَـٰصَـٰلِحُ قَدْ كُنتَ فِينَا مَرْجُوًّۭا قَبْلَ هَـٰذَآ ۖ أَتَنْهَىٰنَآ أَن نَّعْبُدَ مَا يَعْبُدُ ءَابَآؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِى شَكٍّۢ مِّمَّا تَدْعُونَآ إِلَيْهِ مُرِيبٍۢ ٦٢
৬৩ ) সালেহ বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা কি কখনো একথাটিও চিন্তা করেছো যে, যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে একটি অকাট্য প্রমাণ পেয়ে থাকি এবং তারপর তিনি তাঁর অনুগ্রহও আমাকে দান করে থাকেন, আর এরপরও যদি তাঁর নাফরমানী করি তাহলে আল্লাহর পাকড়াও থেকে কে আমাকে বাঁচাবে? আমাকে আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়া তোমরা আমার আর কোন্ কাজে লাগতে পারো? ৭৩
قَالَ يَـٰقَوْمِ أَرَءَيْتُمْ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّى وَءَاتَىٰنِى مِنْهُ رَحْمَةًۭ فَمَن يَنصُرُنِى مِنَ ٱللَّهِ إِنْ عَصَيْتُهُۥ ۖ فَمَا تَزِيدُونَنِى غَيْرَ تَخْسِيرٍۢ ٦٣
৬৪ ) আর হে আমার কওমের লোকরা! দেখো, এ আল্লাহর উটনীটি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। একে আল্লাহর যমীনে স্বাধীনভাবে চরে বেড়াবার জন্য ছেড়ে দাও। একে পীড়া দিয়ো না। অন্যথায় তোমাদের ওপর আল্লাহর আযাব আসতে বেশী দেরী হবে না।”
وَيَـٰقَوْمِ هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمْ ءَايَةًۭ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِىٓ أَرْضِ ٱللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٍۢ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌۭ قَرِيبٌۭ ٦٤
৬৫ ) কিন্তু তারা উটনীটিকে মেরে ফেললো। এর ফলে সালেহ তাদেরকে সাবধান করে দিলো এই বলে, “ব্যাস, আর তিন দিন তোমাদের গৃহে অবস্থান করে নাও। এটি এমন একটি মেয়াদ, যা মিথ্যা প্রমাণিত হবে না।”
فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُوا۟ فِى دَارِكُمْ ثَلَـٰثَةَ أَيَّامٍۢ ۖ ذَٰلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوبٍۢ ٦٥
৬৩.
অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেন ঠিকই করেন। তাঁর প্রত্যেকটি কাজই সহজ-সরল। তিনি অন্ধকার ও অন্যায়ের রাজত্বে বাস করেন না। তিনি পূর্ণ সত্য ও ন্যায়ের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব করে যাচ্ছেন। তুমি পথভ্রষ্ট ও অসৎ কর্মশীল হবে এবং তারপরও আখেরাতে সফলকাম হবে আর আমি সত্য-সরল পথে চলবো ও সৎকর্মশীল হবো এবং তারপর ক্ষতিগ্রস্ত ও অসফল হবো, এটা কোনক্রমেই সম্ভবপর হতে পারে না।
৬৪.
‘আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনছি না’ তাদের একথার জবাবে এ উক্তি করা হয়েছে।
.
.
৬৫.
তাদের কাছে মাত্র একজন রসূলই এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি তাদেরকে এমন এক বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন যে দাওয়াত সব সময় সব যুগে ও সকল জাতির মধ্যে আল্লাহর নবীগণ পেশ করতে থেকেছেন, তাই এক রসূলের কথা না মানাকে সকল রসূলের প্রতি নাফরমানী গণ্য করা হয়েছে।
.
.
৬৬.
এক্ষেত্রে সূরা আ’রাফের দশম রুকূ’র টীকাগুলো সামনে রাখুন।
৬৭.
প্রথম বাক্যাংশে যে দাবী করা হয়েছিল যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, এটি হচ্ছে সেই দাবীর সপক্ষে যুক্তি। মুশরিকরা নিজেরাও স্বীকার করতো যে, আল্লাহই তাদের স্রষ্টা। এ স্বীকৃত সত্যের ওপর যুক্তির ভিত্তি করে হযরত সালেহ (আ) তাদেরকে বুঝানঃ পৃথিবীর নিষ্প্রাণ উপাদানের সংমিশ্রণে যখন আল্লাহই তোমাদের এ পার্থিব অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তিনিই যখন এ পৃথিবীর বুকে জীবন ধারণের ব্যবস্থা করেছেন তখন সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকার সেই আল্লাহ ছাড়া আর কার থাকতে পারে? তিনি ছাড়া আর কে বন্দেগী, পূজা-উপাসনা লাভের অধিকার পেতে পারে?
৬৮.
অর্থাৎ এতদিন পর্যন্ত তোমরা অন্যের বন্দেগী ও পূজা-অর্চনা করে এসেছো। সে অপরাধের জন্য তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও।
৬৯.
এখানে মুশরিকদের একটি মস্ত বড় বিভ্রান্তির প্রতিবাদ করা হয়েছে। সাধারণভাবে প্রায় তাদের প্রত্যেকেই এর শিকার। যেসব মারাত্মক বিভ্রান্তি প্রতি যুগে মানুষকে শিরকে লিপ্ত করেছে, এটি তাদের অন্যতম। তারা আল্লাহকে দুনিয়ার অন্যান্য রাজা, মহারাজা ও বাদশাহদের সমান মনে করে। অথচ এ রাজা-বাদশাহরা প্রজাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে নিজেদের প্রসাদসমূহে বিলাসী জীবন যাপন করে। তাদের দরবারে সাধারণ প্রজারা পৌঁছতে পারে না এবং সেখানে কোন আবেদন পৌঁছাতে হলে ঐ রাজাদের প্রিয়পাত্রদের কারো শরণাপন্ন হতে হয়। এরপর আবার সৌভাগ্যক্রমে কারো আবেদন যদি তাদের সুউচ্চ বালাখানায় পৌঁছে যায়ও তাহলেও প্রভুত্বের অহমিকায় মত্ত হয়ে তারা নিজেরা এর জবাব দিতে পছন্দ করে না। বরং প্রিয়পাত্রদের মধ্য থেকে কারো ওপর এর জবাব দেবার দায়িত্ব অর্পণ করে। এ ভুল ধারণার কারণে তারা মনে করে এবং ধুরন্ধর লোকেরা তাদের একথা বুঝাবার চেষ্টাও করেছে যে, বিশ্ব-জাহানের অধিপতি মহাশক্তিধর আল্লাহর মহিমান্বিত দরবার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে বহুদূরে অবস্থিত। কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে তাঁর দরবারে পৌঁছে যাওয়া কেমন করে সম্ভবপর হতে পারে! মানুষের দোয়া ও প্রার্থনা সেখানে পৌঁছে যাওয়া এবং সেখান থেকে তার জওয়াব আসা তো কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ যদি পবিত্র আত্মাসমূহের ‘অসিলা’ ধরা হয় এবং যেসব ধর্মীয় পদাধিকারীরা ওপর তলায় নযর-নিয়ায ও আবেদন-নিবেদন পেশ করার কায়দা জানেন তাদের সহায়তা গ্রহণ করা হয় তাহলে এটা সম্ভব হতে পারে। এ বিভ্রান্তিটিই বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে বহু ছোট বড় মাবুদ এবং বিপুল সংখ্যক সুপারিশকারী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আর এই সাথে পুরোহিতগিরির (Priesthood) এক সুদীর্ঘ ধারা চালু হয়ে গেছে, যার মাধ্যমে ছাড়া জাহেলী ধর্মসমূহের অনুসারীরা তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানও পালন করতে সক্ষম নয়।

হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম জাহেলিয়াতের এ গোটা ধুম্রজালকে শুধুমাত্র দু’টি শব্দের সাহায্যে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। শব্দ দু’টির একটি হচ্ছে ‘কারীব ---আল্লাহ নিকটবর্তী এবং দ্বিতীয়টি ‘মুজীব’ ---আল্লাহ জবাব দেন। অর্থাৎ তিনি দূরে আছেন, তোমাদের এ ধারণা যেমন ভুল তেমনি তোমরা সরাসরি তাঁকে ডেকে নিজেদের আবেদন-নিবেদনের জবাব হাসিল করতে পারো না, এ ধারণাও একই রকম ভুল। তিনি যদিও অনেক উচ্চস্থানের অধিকারী ও অনেক উচ্চ মর্যাদাশালী তবুও তিনি তোমাদের নিকটেই থাকেন। তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তিই তাঁকে নিজের ঘনিষ্ঠতম সান্নিধ্যে পেতে পারে এবং তাঁর সাথে সঙ্গোপনে কথা বলতে পারে। প্রকাশ্য জনসমক্ষে এবং একান্ত গোপনে একাকী অবস্থায়ও নিজের আবেদন নিবেদন তাঁর কাছে পেশ করতে পারে। তারপর তিনি সরাসরি প্রত্যেক বান্দার আবেদনের জবাব নিজেই দেন। কাজেই বিশ্ব-জাহানের বাদশাহর সাধারণ দরবার যখন সব সময় সবার জন্য খোলা আছে এবং তিনি সবার কাছাকাছি রয়েছেন তখন তোমরা বোকার মতো এজন্য মাধ্যম ও অসীলা খুঁজে বেড়াচ্ছো কেন? (এছাড়া দেখুন সূরা বাকারার ১৮৮ টীকা)

.
৭০.
অর্থাৎ তোমার বুদ্ধিমত্তা, বিচারবুদ্ধি, বিচক্ষণতা, গাম্ভীর্য, দৃঢ়তা ও মর্যাদাশালী ব্যক্তিত্ব দেখে আমরা আশা করেছিলাম তুমি ভবিষ্যতে একজন বিরাট নামী-দামী ব্যক্তি হবে। একদিকে যেমন তুমি বিপুল বৈষয়িক ঐশ্বর্যের অধিকারী হবে তেমনি অন্যদিকে আমরাও অন্য জাতি ও গোত্রের মোকাবিলায় তোমার প্রতিভা ও যোগ্যতা থেকে লাভবান হবার সুযোগ পাবো। কিন্তু তুমি এ তাওহীদ ও আখেরাতের নতুন ধূয়া তুলে আমাদের সমস্ত আশা-আকাংখা বরবাদ করে দিয়েছো। উল্লেখ্য, মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কেও এ ধরনের কিছু চিন্তা তাঁর স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যেও পাওয়া যেতো। তারাও নবুওয়াত লাভের পূর্বে তাঁর উন্নত যোগ্যতা ও গুণাবলীর স্বীকৃতি দিতো। তারা মনে করতো এ ব্যক্তি ভবিষ্যতে একজন বিরাট ব্যবসায়ী হবে এবং তার বিচক্ষণতা ও বিপুল বুদ্ধিমত্তা আমাদেরও অনেক কাজে লাগবে। কিন্তু তাদের প্রত্যাশার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যখন তিনি তাওহীদ ও আখেরাত এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর দাওয়াত দিতে থাকলেন তখন তারা তাঁর ব্যাপারে কেবল নিরাশই হলো না বরং তাঁর প্রতি হয়ে উঠলো অসন্তুষ্ট। তারা বলতে লাগলো, বেশ ভালো কাজের লোকটি ছিল কিন্তু কি জানি তাকে কি পাগলামিতে পেয়ে বসলো, নিজের জীবনটাও বরবাদ করলো এবং আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাও ধূলায় মিশিয়ে দিল।
৭১.
এ মাবুদগুলো ইবাদাত লাভের হকদার কেন এবং কেন এদের পূজা করা উচিত--- এর যুক্তি হিসেবে একথা বলা হয়েছে। এখানে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের যুক্তি উপস্থাপন পদ্ধতির পার্থক্য একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হযরত সালেহ (আ) বলেছিলেন, আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীতে বসবাস করিয়েছেন। এর জবাবে এ মুশরিকরা বলছে, আমাদের এ মাবুদরাও ইবাদাত লাভের হকদার এবং এদের ইবাদাতও পরিত্যাগ করা যেতে পারে না। কারণ বাপ-দাদাদের আমল থেকে এদের ইবাদাত চলে আসছে। অর্থাৎ গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলা উচিত। কারণ শুরুতে একটি নির্বোধ এ পথে চলেছিল। তাই এখন এ পথে চলার জন্য আর এর চেয়ে বেশী কোন যুক্তির প্রয়োজন নেই যে, দীর্ঘকাল ধরে বহু বেকুফ এ পথেই চলছে।
৭২.
এ সন্দেহ ও সংশয় কোন্ বিষয়ে ছিল? এখানে একথা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। এর কারণ, সবাই সন্দেহের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেকের সন্দেহের ধরন ছিল আলাদা। সত্যের দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ দাওয়াত দেবার পর লোকদের মানসিক প্রশান্তি খতম হয়ে যায় এবং একটি ব্যাপক অস্থিরতা জন্ম নেয়। যদিও প্রত্যেকের অনুভূতি অন্যের থেকে ভিন্নতর হয় কিন্তু এ অস্থিরতার অংশ প্রত্যেকেই কিছু না কিছু পেয়ে যায়। ইতিপূর্বে লোকেরা যেমন নিশ্চিন্ত মনে গোমরাহীতে লিপ্ত থাকতো এবং নিজেরা কি করে যাচ্ছে একথা একবার চিন্তা করার প্রয়োজন অনুভব করতো না, ঠিক এ ধরনের নিশ্চিন্ততা এ সত্যের দাওয়াত দানের পর আর অব্যাহত থাকতো না এবং থাকতে পারে না। জাহেলী ব্যবস্থার দুর্বলতার ওপর সত্যের আহবায়কের নির্দয় সমালোচনা, সত্যকে প্রমাণ করার জন্য তাঁর শক্তিশালী ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তি, তারপর তাঁর উন্নত চরিত্র, দৃঢ় সংকল্প, ধৈর্য-স্থৈর্য ও ব্যক্তিগত চরিত্র মাধুর্য, তাঁর অত্যন্ত স্পষ্ট সরল ও সত্যনিষ্ঠ ভূমিকা এবং তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা, যার প্রভাব তাঁর চরম হঠকারী ও কট্টর বিরুদ্ধবাদীরও মনের গভীরে শিকড় গেড়ে বসে, সর্বোপরি সমকালীন সমাজের সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গের তাঁর কথায় প্রভাবিত হতে থাকা এবং তাদের জীবনে সত্যের দাওয়াতের প্রভাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন সূচিত হওয়া--- এসব জিনিস মিলেমিশে একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর ফলে যারা সত্যের আগমনের পরও পুরাতন জাহেলিয়াতের ঝাণ্ডা উঁচু করে রাখতে চায় তাদের মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে যায়।
৭৩.
অর্থাৎ যদি আমি নিজের অন্তরদৃষ্টির বিরুদ্ধে এবং আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান দান করেছেন সেই জ্ঞানের বিরুদ্ধে নিছক তোমাদের খুশী করার জন্য গোমরাহীর পথ অবলম্বন করি তাহলে শুধু আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমরা আমাকে বাঁচাতে পারবে না তাই নয় বরং তোমাদের কারণে আমার অপরাধ আরো বেশী বেড়ে যাবে। উপরন্তু আমি তোমাদের সোজা পথ বাতলে দেবার পরিবর্তে উল্টো আরো জেনে বুঝে তোমাদের গোমরাহ করেছি এ অপরাধে আল্লাহ আমাকে আরো অতিরিক্ত শাস্তি দেবেন।
.
.
অনুবাদ: